#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“কিরে তখন তো খুব বলছিলি আসবি না। তা আমার ভাই গিয়ে কি এমন করলো যে এখন এক্কেবারে বোরকা নেকাব পড়ে চলে এলি? ”
ফিসফিস করে টিটকারির সুরে বলল সারা।প্রিয়তা আর সারা এক সঙ্গে হাঁটছিল। সবাই আগে হাঁটছে। রাহান, রাহাত, আয়না গিয়েছে হলুদের জন্য কাপড় নিতে। মাইশা ইনিয়াকে নিয়ে হাঁটছে আর মাইশার পিছনে আয়ান এর একটু পিছনে সারা প্রিয়তা। আর ওদের দুজনের পিছনে সাদনান কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। হয়তো অফিসের কারোর সঙ্গে কথা বলছে। মুখের ভাবটা এমন মনে হচ্ছে সে মহা বিরক্ত। প্রিয়তা এতোখন এসব পর্যবেক্ষণ করছিল এর মধ্যে আবারও সারা হালকা করে মেয়েটার বাহুতে ধাক্কা মারলো যার মানি”কি হলো বল”
মেয়েটার ঠোঁটের কোনেও সাদনানের দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন। সাথে গলায়ও পড়েছে কিছু টা ছাপ এসব নিয়ে কি এমনি বের হওয়া যা?উঁহু, একদম নয়।এই জন্যই তো বোরকা নেকাব পড়া।কিন্তু এসব কথা কি এই মেয়েকে বলা যাবে? মোটেও নয়। এ মেয়ে যেই সব মাইশাকে বলে দিবে। তার পর দুজনে মিলে আচ্ছা মতো পঁচাবে।
প্রিয়তার এসব ভাবনার মাঝেই সাদনানের মা সারাকে ডাকলো সারা একটু সামনে চলে গেলো। সালেহা বেগমরা শাড়ীর দোকানে ঢুকেছে।আর ওনার হাতের অন্য জিনিসপত্র গুলো সারা হাতে ধরিয়েছে এই জন্য এখন সারাও তাদের সঙ্গে থাকা টা জরুরি। সাদনান পিছনে ছিলো। সারাকে সামনে এগোতে দেখে খট করে লাইনটা কেটে ফোনটা পকেটে নিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে সবার চাই একটু পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো। প্রিয়তা লজ্জা পেলো, মুচকি হাসলো।তবে হিজাবের নিচে তা চাপা পড়া।
——————————-
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলেই এলো। সকাল থেকে সবাই কাজে ব্যস্ত। সাদনানের বাবা বিকেলের দিকে চলে এসছে। বাড়িতে মুটামুটি আত্মীয়স্বজনরা সবাই চলে এসছে। প্রিয়তার এক মামা তিনিও ঢাকা থেকে আজ সকালেই ওনার দুই ছেলে বউ নিয়ে চলে এসছে। প্রিয়তার নানা নানি নেই ওনারা অনেক আগেই গত হয়েছে। মামা নাসির উদ্দীন খাঁন বড় ছেলে নাদিম খাঁন ছোট ছেলে নাফিজ খাঁন স্ত্রী নুর নাহার নাসির। ওনারা সবাই খুব ভালো। আগে প্রায় কুমিল্লা আসতেন ওনারা। কিন্তু বোনও চলে গেলো আবার নিজেদের কর্ম জীবন সব দিক দিয়ে মাঝখানে সময়টা কিছু টা দূরত্ব বাড়িয়েছে। প্রিয়তা রেডি হবে মাইশাকে রেডি করে এসছে। এখন আর সারা ওর সাথে আসেনি। আসবে কি করে এখন তো নিজের ভাইও থাকে এই রুমে এখন কি আর যখন তখন আসা যাবে?উঁহু, চাইলেও পারবে না। তাই আয়নার সাথে আয়নার রুমে চলে গেছে। প্রিয়তা গোসল সেরে একটা কুর্তি আর প্লাজু পড়ে বেড়িয়েছে। আজ সবাই মেয়েরা হলুদ শাড়ী পরবে আর ছেলেরা কলা পাতা রং এর পাঞ্জাবী আর হলুদ কুর্তি। কিন্তু প্রিয়তা শাড়ী পরতে পাড়ে না। এখন কি করবে। সারা নিশ্চয়ই এখন সাজুগুজু করতে বসে গেছে। আর কার কাছে যাবে সবাইতো কাজে ব্যস্ত। এসব ভেবেই প্রিয়তার মনটা খারাপ হলো।এখন কি করবে সে? সাদনান বিছানায় বসে লেপ্টে কিছু করছে। আর আঁড়চোখে তার ছোট্ট বউটার মুখ ভঙ্গিমা লক্ষ্য করছে কখন থেকে আয়নার সামনে বসে মেয়েটা এখনো রেডি হবার কোনো নামগন্ধও নেই। কি হয়েছে তার ছোট্ট পুচকে বউটার? হঠাৎ সাদনান কিছু মনে পড়ার মতো করে প্রশ্ন করলো
-“ওই দিন যে শাড়ী গুলো এনেছি?”
প্রিয়তা আলতো করে মাথা ঘুরিয়ে সাদনানের পানে চাইলো
-“হুম?”
নিজেও প্রশ্ন করলো
সাদনান উঠে এসে প্রিয়তার ছোট্ট মিনি ওয়ারড্রব টা খুলে ওখান থেকে একটা কলা পাতা রং এর শাড়ী নিলো। তার পর এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার পাশে দাঁড়ালো। মেয়েটা এখনো বসা ও এটা বুঝতে পারছে না। সাদনান ক্যান এই রং এর শাড়ী বের করেছে? মেয়েটার ভাবনার মাঝে সাদনান ওর গায়ে শাড়ী টা মেলে ধরলো
-“হলুদ শাড়ী না। আপনি এটা পড়বেন অনুষ্ঠানে। ”
সাদনান শাড়ী টা প্রিয়তার কোলের উপর রেখে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। প্রিয়তার মনটা একটু একটু খারাপ হলো।কারণ সবাই হলুদ শাড়ী পরবে আর ও একা এটা। কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
তার পর শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
এদিকে সাদনান অনেকখন যাবত সবাইকে দেখে যাচ্ছে। কেউ মনে হয় না আজ ওর বউকে শাড়ী পরিয়ে দিবে। এদের আশায় থাকলে নিজের বউকে আর শাড়ী পরতে হবে না। ভেবেই সাদনান সোফায় ছেড়ে উঠে আসতে নিলে সুফিয়া বেগম বলল
-“তুমি অনেক যাবত বসে আছো। ভাবি তো একটু কাজে। তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো।”
সাদনান কিছু বলবে ঠিক তখনই প্রিয়তা ‘সারা ‘বলে উপর নিজের রুম থেকে ডাকলো। সাদনান বুঝলো মেয়েটা ওকেই ডাকছে। তাই সাদনানের সেদিকে তাকিয়ে কাল বিলম্ব না করে উপরে চলে গেলো। সুফিয়া বেগম আর কিছু বলা হলো না।সুফিয়া মুচকি হাসলো। তিনি কি ভেবে মুচকি হাসলো তিনিই ভালো জানেন।
———————————-
-“কি হয়েছে জান এভাবে কেউ ডাকে?”
ঘরে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সাদনান
-“তো কি করবো কখন থেকে এভাবে বসে আছি। আর আপনি কখন গিয়েছেন?”
সাদনান এবার দৃষ্টি দিলো মেয়েটার পানে। মেয়েটা শাড়ীটা কোনো রকম পেচিয়ে দাঁড়িয়ে। গলায় ওর দেওয়া চিহ্ন গুলো এখনো জলজল করছে। আচ্ছা এমন অবস্থা কি মেয়েটা কে অন্য কারোর সন্নিকটে যেতে দেওয়া উচিত? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো সাদনান। উঁহু, একদমই নয়।নিজের বউকে আদর করছে তা ক্যান অন্য কেউ দেখবে? দরকার পড়লে নিজে পার্লারের কাজ শিখে নিবে।হুুঁ, ভেবেই সাদনান দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। প্রিয়তা ভাবছে সাদনান হয়তো কাউকে ডাকতে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার ভাবনা চিন্তা ভুল প্রমান করে সাদনান দরজাটা আটকে দিলো। প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে চাইলো। ছোট্ট দেহখানা বারোহাত শাড়ীটা দিয়ে আরো একটু আঁটিসাঁটি করে নিলো। সাদনান দরজাটা আটকে পিছনে ফিরলো।চাইল তার ছোট্ট বউটার পানে। চোখে হাসলো সাদনান। মেয়েটা এমনি ওকে ঠিকই ভালোবাসে। কিন্তু কখনো সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে।আবার কখনো ভয়ে। এখন কি লজ্জা না-কি ভয়?
-“আমি চাই না আমার ব্যক্তিগত সম্পদ কেউ দেখে।শাড়ী টা আমি পড়ি দিচ্ছি। আপনি চোখটা বন্ধ করে রাখবেন। কারণ আপনার ওই চোখ দেখে আমি আবারও কোনো সর্বনাশ হোক তা আমি এখন চাই না।”
বেশ গম্ভীরতা বজায় রেখে বল সাদনান।
সাদনানের কথার মানে বুঝতে না পাড়লেও প্রিয়তা এটা বুঝে গিয়েছে ওকে এখন শাড়ীটা সাদনান পড়িয়ে দিবে।এটা ভেবেই মেয়েটার গলা শুকিয়ে গেলো।
না চাইতেও মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো
-“পানি খাবো আমি।”
সাদনান যেনো জানতো এমন কিছু হবে।একটু এগিয়ে প্রিয়তার পিছনে সেন্টার টেবিলে রাখা পানির গ্লাস টা নিয়ে মেয়েটার সামনে ধরলো।মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হতে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক চুমুকে সবটা পানি শেষ করে নিলো।সাদনানের মন চাইলো জুড়ে জুড়ে হাসতে। গলা ফাটিয়ে হাসতে তবে তা আর করলো না মেয়েটা নয়তো ভয়+লজ্জা এখন বেহুশ হয়ে যাবে। সব চিন্তা ভাবনা সাইডে রেখে বল
-“চোখটা বন্ধ করোন।”
বাধ্য মেয়ের মতো প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে নিলো। সাদনানও প্রিয়তাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে নিজেও চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
———————————-
-“প্লিজ একবার শুধু একবার দেখবো। জান এমন করে না। আমি দেখে চলে যাবো। ”
দশমিনিটের বেশি সময় ধরে আয়ান বাগানে মাইশার রুমের বেলকনির নিচে দাঁড়িয়ে। এদিকটায় তেমন কেউ আসে না। রাহানকে নিয়ে অনেক কষ্ট বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে কিছু দরকার আছে বলে।মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে একবার দেখা বাড়িতে তো আর সরাসরি দেখা যাবে না তাই। এই পদ্ধতি অবলম্বন। কিন্তু এতো কষ্ট কার কি হলো এই মেয়েটায় তো আসছে না। উঁহু আসছে না বললে ভুল হবে।মেয়েটা আসতে চাইছে কিন্তু সবাই ওকে ঘিরে বসে ও আসবে কি করে?আর কি বলে এখন মেয়েটা বেলকনিতে আসবে? কনের প্রতি সবার একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে। সবার নজর এড়িয়ে আসাটাও চাট্টি খানি কথা নয়।
বেশ অনেকটা সময় পর মাইশা মেসেজের রিপ্লাই করলো
-“আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন আসছি।”
ব্যাস আয়ানের খুশি দেখে কে রাহানকে জড়িয়ে ধরলো খুশির ঠেলায়।পরক্ষনে ভাবলো ইস মেয়েটার নিশ্চয়ই এখন এখানে আসতে কতো কাঠখড় পোড়াতে হবে।কিন্তু ও কি করবে মনটা যে মানছে না একবার দেখার জন্য উতলা।
আয়ানের ভাবনার মাঝে কেউ ওকে জড়িয়ে ধরলো। আয়ান চমকালো হকচকিয়ে উঠলো। পর পর আয়ানের মনে হলো এই ছোঁয়া ওর পরিচিত খুব করে চেনে এই ছোঁয়া। হ্যাঁ,ওর ভালোবাসার মানুষটার ছোঁয়া। ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটি ওর বুকে এসেও আসে নি। মেয়েটা হাতের নাগালে পাচ্ছে না। পাবে কি করে এমন একটা বলিষ্ঠ পুরুষ কে এমন একটা পুচকে মেয়ের আয়াতে পুরোটা নিতে পারে নাকি?উঁহু, কিন্তু শরীরটা না পেলোও মনটা পুরো টাই মেয়েটার আয়াতে নিয়ে গেছে। ভেবেই আয়ানের মুখের হাসিটা আরও চওড়া হলো।ততক্ষণে সারা রাহান ওদের নিকট হতে কিছু টা দূরে।
-“আমিতো বলেছিলাম বেলকনিতে আসতে। তুই তো নিচে বাগানে চলে এসছিস দেখ,,,,
পিছনে ঘুরতে ঘুরতে কথা গুলো বলছিল। কিন্তু পিছনে ফিরে আর কিছু মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না। মেয়েটার অধর জোড়ার উপর দৃষ্টি যেতেই যেনো আয়ান কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না। ছেলেটার মনে এখন একটাই কথা ঘুরছে। আর সেটা হলো এই মূহুর্তে এই মেয়েটার ভালোবাসাময় নীল বিশ প্রাণ করতে হবে।
ব্যাস বলিষ্ঠ দু’হাতে মেয়েটার গাল আঁকড়ে ধরলো। মুহূর্তের মধ্যে মুখে পুড়ে নিলো মেয়েটার পাতলা অধর জোড়া।
মাইশা আকষ্মিক চমকে উঠলো তবে তা সামনের ব্যক্তিটার ভালোবাসার কাছে হারমানাল।
চুপ করে ভালবাসার গ্রহন করলো। বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান মাইশাকে ছেড়ে দু’হাতে আগলে নিলো।আলগোছে জানালো
-” যতদিন বেঁচে থাকবো। তোর এই ভালোবাসাময় নীল বিশ প্রাণ করে মরে গিয়েও বেঁচে থাকতে চাই জান। ভালোবাসি। ”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]