হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি #পর্ব_১৬ #জান্নাত_সুলতানা

0
155

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

সময় আর নদীর স্রোত কেউই বেঁধে রাখতে পারে না।
সময় চলমান এটা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না।এটা কারোর পরোয়া করে না।এটা এটার গতি বিধি সব সময় এক থাকে। বরং আমাদের এটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বছর, মাস, সাপ্তাহ,দিন ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড সব সময় মানুষ এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে।

আয়নরা সবাই ঢাকা শিফট করেছে। মাইশাকে ঢাকা শিফট করবার সাপ্তাহ খানিক বাঁধে নিয়ে গিয়েছে।
আয়না রাহাত,ইনিয়া সবাই লন্ডন গিয়েছে মাস হতে চললো। সময় তার নিজ কাঁটায় ঠিক একই ভাবে চলতে থাকে। শুধু সময় আমাদের মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দেয়।
ঠিক তেমন অপেক্ষা করতে করতে এখন প্রিয়তার, সারা পরীক্ষা সময়ও হয়ে গেলো। কাল থেকে ওদের পরীক্ষা শুরু। সাদনান ঢাকা থেকে আজ সন্ধা ফিরেছে।গিয়েছে অবশ্য সাপ্তাহ এখনো হয়নি। আজ্জম মির্জা ছেলে কে বলেছিল “এই সাপ্তাহ যেনো ঢাকা থাকে একটা জরুরি মিটিং আছে।” সাদনান এক কথা জানিয়ে দিয়ে ছিল “আমি আমার বউ কে ছাড়া থাকতে পাড়বো না । দরকার পরলে প্রতি দিন সে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসে অফিস সামলাবে।”
” কিন্তু সে তার বউ কে ছাড়া থাকতে পারে না। ”
ছেলের এমন বেহায়া কথা বার্তা শুনে আজ্জম কান হতে ফোন নামিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সালেহা বেগম ঠিক তার ছেলে কে সাই দিয়ে বলেছিল “আব্বা আপনার যা ভালো লাগে তাই করেন।”
ব্যাস আর কি তিনি আর কিছু বলবার মতো সাহস করেনি।কারণ বউ তার এক কথার মানুষ। আর ছেলে?সে তো থাক এই নির্লজ্জ ছেলের কথা না হয় নাই বা ভাবলেন।

————————-

রাত এগারো টা বেশি সময় বাজে এখন। খাবার সবাই দশটার দিকে খেয়ে নিয়েছে। তার পর ঘরে এসে প্রিয়তা বই নি বসেছে আর সাদনান লেপ্টপ নিয়ে বিছানায় বসে কিছু করছে?উঁহু, সাদনান তো বিছানায় বসে ওর ছোট্ট বউ টার পানে চেয়ে। কি সুন্দর করে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চেয়ারে বসে পড়ছে মেয়ে টা। এটা সাদনানের কাছে বেশ লাগছে। এই যে এখন মন চাইছে ঠুস ঠাস কটা চুমু খেয়ে নিতে।তবে তা এখন করা যাবে না দমন করতে হবে। কারণ এসব করলে তার বউয়ের পড়ায় সমস্যা হবে। আর পড়ায় সমস্যা হলে যে ফেল করবে।আর ফেল করলে যে তার শশুড় মশায় তাকে তার বউ দিবে না।

হাঠাৎ করে সাদনানের মনে হলো কাল তো পরীক্ষা। আর পরীক্ষার আগের দিন বেশি রাত জাগতে নেই।
সাদনান কোলের উপর থাকা লেপ্টপ সহ বালিশ সাইডে রেখে বিছানা হতে নেমে দাঁড়াল।

-“এখন আর পড়তে হবে না সোনা। চলো ঘুমুতে হবে।”
বেশ আদুরে কন্ঠে বলল

প্রিয়তা পড়া বাদ দিয়ে চাইলো তার একান্ত নিজের ব্যাক্তি টার পানে।

-“এখনো সব রিভিশন দেওয়া শেষ হয়নি। ”
আফসোস সুরে বলল প্রিয়তা।

সাদনান তার বউকে আচমকাই পাঁজা কোলে তোলে নিলো।

প্রিয়তা চমকে উঠলো। তবে নিজেকে সামলে মুচকি হেসে ছোট্ট ছোট্ট হাত জোড়া দিয়ে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরলো। তার পর কেমন আদুরে বাচ্চার মতো নাক গসে নিলো তার ব্যাক্তি গত পুরষ টার বুকে।সাদনান চোখে হাসলো।এটা আজ নতুন নয়। যে দিন প্রথম মেয়ে টাকে কোলে নিয়েছিল শুধু সে দিন বাদ গিয়েছে। আর নয়তো এর পর যতো বার কোলে নিয়েছে ঠিক তত বারই মেয়ে টা এমন কাজ করে সাদনানের বেশ লাগে ওর এই ছোট্ট বিষয় টা। ছোট্ট ক্যান হবে?একদম ছোট্ট নয় ভালোবাসার মানুষ গুলোর ভালেবাসা কখনো ছোট্ট হয় না। কোনো কিছু খারাপ বা বিরক্ত লাগে না।

প্রিয়তাকে বিছানায় শুয়ে দিতে দিতে সাদনান বলল
-“এখন আর কিছু পড়তে হবে না। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে বাকি টা কাল সকালে শেষ করে নিও বউ।”

বলতে বলতে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো।
তার পর নিজে শুয়ে প্রিয়তা কে টেনে বুকের উপর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
-“ঘুমি যাও সব ঠিক হবে।”

প্রিয়তা আলতো করে নিজের অধর জোড়া সাদনানের বুকে ছুঁয়ে দিল।
তার আবারও জড়িয়ে ধরে নিজেও প্রশান্তির হাসি হাসলো।

এই সুদর্শন পুরুষ টা ওর নিজের। ভাবতেই বেচারির এই ছোট্ট মন টা হাজার রংয়ের প্রজাপতি উড়ু উড়ি করে যায়।

————————————

-“শোনো একদম তাড়াহুড়ো করবে না সারু। মন দিয়ে প্রশ্নটা পড়ে তার পর ঠান্ডা মাথায় লেখা শুরু করবে। বুঝতে পেরেছো?”

ফোনের ওপাশে থাকা সারা শব্দহীন হাসলো। যেনো সে রাহান নামক প্রেমিক পুরষটির এমন কথায় বেশ মজা পাচ্ছে।অবশ্য মজা পাবারই কথা রাহান এ নিয়ে এই একটা কথাই না হলেও আট থেকে দশবার তো বলে ফেলেছে।

-“আচ্ছা আপনি এই একটা কথা আর কবার বলবেন? না মানি সেই কখন থেকে এটাই বলে যাচ্ছেন। আমি কি না ঘুমিয়ে আপনার এই একটা কথা শুনার জন্য রাত বারোটা অব্দি জেগে আছি?”
সারা কখনো রেগে কথা বলে না এমনকি কারোর সাথে রাগ করে বেশিখন থাকতেও পাড়ে না মেয়ে টা।
এই যে এতোখন অনেক বার রাহান এই কথা টা “একদম তাড়াহুড়ো করবে না” বলেই যাচ্ছে। কিন্তু সারা একটু বিরক্ত হচ্ছে না। বরং কতো সুন্দর মস্করা করছে এই মধ্যে রাতে।

-“তুমি কি মজা করছো?”
ভ্রুু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রাহান।

-“একদম না।”
বেশ শান্ত কন্ঠে বলল সারা

-“আমি জানি তুমি আমার কথা গুলো মজা মনে করে উড়িয়ে দিচ্ছো সারা। কিন্তু এমনটা করলে কিন্তু পরে সব দোষ আমার হবে জান।”
রাহানের কথায় ভ্রুু জোড়া কুঁচকে নিলো সারা।

-“আপনার দোষ ক্যান হবে?”
মেয়ে টার এমন বোকা বোকা প্রশ্ন রাহানের মনে হলো এই মেয়ের কথায় এই শীতের রাতেও একবার ওর গোসল করা দরকার। কে বলবে এই মেয়ের বয়স সতেরো। কি সব অবুঝের মতো প্রশ্ন করছে। তবে রাহান নিজেকে কনট্রোল করলো।রাগ করলে চলবে না। তার ছোট প্রিয়তমা সবকিছু এখনো বুঝে না। তাকে বুঝাতে হবে।বলতে হবে তবেই না মেয়ে টা বুঝতে পারবে।

-“এখন শুধু যা যা বলবো তার উত্তর দিবে ব্যাস।আচ্ছা তুমি এখন প্রেম করছো কার সাথে?
রাহানের এমন প্রশ্নে সারা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এটা আবার বলতে হয় না-কি? ওতো এই লোক টার সাথেই প্রেম করছে।
তবে মুখে বলল
-“আপনার সাথে। ”

-“রাত বিরেতে রাত জেগে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলো?”
-“আপনার সঙ্গে। ”
-“আর যদি পরীক্ষায় ফেল করো তো দোষ টাও আমার হবে জান।বুঝতে পেড়েছো?”
রাহানের এমন যুক্তির কথায় সারা বেশ অবাক হলো। শুধু অবাক নয়।অবাকের চরম পর্যায়ে মেয়ে টা।

সারা মুখে হাত দিয়ে বলল
-“সত্যি এ তো আমি একবারও ভেবে দেখিনি।এই আপনার মাথায় এতো বৃদ্ধি কোথা থেকে আসে?”

-“জান এটা বৃদ্ধির প্রশ্ন নয়। এটা একটা টেনশন। ”
একটা দীর্ঘ শাস টেনে বল রাহান

-“মানে? ”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সারা। মেয়ে টা রাহানের কথা বুঝতে পারেনি।

-“তুমি যদি পরীক্ষায় ফেল করো তো সাদনান ভাই মনে করবে তুমি আমার জন্য হয়তো ঠিক মতো পড়া লেখা করোনি।আর তার পর যদি আমরা সাথে তোমার বিয়ে না দেয়?”
রাহানের এমন কথায় সারা শব্দহীন হাসলো।

-“আপনি ভুল ভাবছেন। ভাইয়া এমন নয় সে টা আপনিও খুব ভালো করে জানেন রাহান ভাই।”
দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলল।

রাহান সারার কথায় নিজ ভাইয়ের প্রতি এক বুক ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা খুঁজে পেলো।

সারার কথায় রাহানের বুক শীতল হলো। এই মেয়ে ওকে সব সময় ভরসা দেয়। ভালোবাসার মানুষটার এই একটু ভরসা, দিবে এটায় তো অনেক শক্তি জোগায় অপর মানুষ টাকে। মানুষটাকে শক্ত থাকতে সাহায্য করে।

-“আমি জানি জান। তবে তুমি সম্পূর্ণ আমার না হওয়া পযন্ত আমি শান্ত হতে পারবো না। কবে বড় হবে আমার ছোট জান টা?”
রাহানের কথায় সারা বলল
-“আর কতো বড় হতে হবে আপনি আমাকে সম্পূর্ণ পেতে হলে?”

রাহান দুষ্ট হেসে বলল

-“যতো টা বড় হলে বিয়ের পর আমাদের পরিবারকে আমি আর তুমি মিলে ক্রিকেট টিমে পরিনত করতে পারবো।”

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here