হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১৫ #জান্নাত_সুলতানা

0
143

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুই শাড়ী পড়তে পারবি না।
অন্য কিছু পড়ে রেডি হয়ে নে।”

মিশান রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে পরিহিত ঘড়ি টা খুলতে খুলতে বলে

-“আপনি সাহায্য করলে পড়তে পারব,,,

আর বলা হয় না সায়রার মিশানের দিকে দৃষ্টি যেতে।মিশান শান্ত চোখ চেয়ে আছে।

বিকালে খাবার খাইয়ে দিয়ে মিশান সায়রা কে কোলে করে সায়রার বাবা-মায়ের রুম থেকে নিজেদের রুমে এনে গম্ভীর কন্ঠে আদেশ করে গিয়েছিল যেনো সায়রা বিছানা থেকে এক পা নড়াচড়া না করে।
আর যদি করে তার ফল ভালো হবে না। মিশান পুরো টা সময় চুপ ছিল শুধু এই একটা কথাই বলে ছিল যার কারণে সায়রা ভয়ে আর কোনো কথা বলে নি।
সায়রা কে কিছু বলতে না দেখে মিশান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে ছিল আর এখন সন্ধ্যায় এলো।

-“আ,,,

-“ফ্রেশ হবি?”

-“না।”

-“আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শাড়ী টা পড়িয়ে দিচ্ছি?”

-“হুম।”

অতঃপর মিশান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।সায়রাও আলমারি খোলে হলুদের মাঝে লাল পারের একটা শাড়ী বের করে।
হলুদে সব মেয়ে রা এক রকম পড়বে।আর পুরুষ সাদা পাঞ্জাবি।
সায়রা শাড়ী সহ প্রয়োজনীয় সব বের করে পড়ে নেয়।
সায়রা নিজে নিজেই শাড়ী টা কোনো রকম পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে একটু ঠিকঠাক করে।তার পর মিশান নিজেও রেডি হয় আর সায়রা হালকা করে সেজে নেয়।
মিশান একবার আঁড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তার পর বউকে নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সবাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে। নিচে একদম ফাঁকা।

-“শোন একদম লাফালাফি করবি না।
আর উপর অনেক বাহিরের লোক আছে। তাদের থেকে দূরে থাকবি।”

-“আচ্ছা।”

এখন আচ্ছা বলছে পরে দেখা যাবে কি না কি করে বসে আছে তার ঠিক নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে উপর এসে পরে
তার পর মিশান সায়রা কে রুহি আর ইনিয়ার কাছে বসিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
সোহান আর আরভী কে একসাথই বসানো হয়েছে। সব মহিলার আগে হলুদ দেবে তার পর পুরুষ রা দেবো এর পর তারা চলে গেলে মেয়েরা আর ছেলেরা মিলে সবাই যে যার মতো করে মজা করবে। রুহি সায়রা কে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কারান ওরা আজেকের যা প্ল্যান আছে সায়রা তার কিছুতেই ছিল না তাই সব জেনে নিচ্ছে।

সায়রা মনে যোগ সহকারে রুহির কথা শুনছে।মাঝে ইনিয়াও বলছে।
ওদের কথার মাঝেই ইনিয়াকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলে উঠে

-“ভাবি আপনি এখানে ভাইয়া আর মা আপনাকে ডাকছে। ”

ছেলেটার কথায় প্রহর সহ সবাই তাকায়।
ইনিয়া মুচকি হেসে বলে

-“আমি যাচ্ছি।”

বলেই ইনিয়া চলে যায়।রুহি ভদ্রতার খাতিরে ছেল টা কে বসতে বলে আর অমনি ছেলে টা রুহি আর সায়রার মাঝে ইনিয়া যেটায় বসে ছিল ওটায় ধপ করে বসে পড়ে।
ইনিয়ার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ওর নাম ইকবাল ওর বাবা নেই মা আর ছোট এক ভাই আছে।
ওনারও আজ বিকেলে এসে।

-“বেয়াইন কে তো পাওয়া যায় না।
কোথায় থাকো সারা দিন? ”

-“সারা দিন কই ভাইয়া আপনি তো এলেন বিকেলে।”

রুহির এমন কথায় এনামুল নামক ছেলে টা কেমন থমথমে খেয়ে গেলো। সায়রা আর প্রহর মুখ টিপে হাসে। ছেলে টা কেমন অসহায় লাগলো।
তবে নিজে কে সামলে নিয়ে সায়রার দিকে আড়চোখ তাকায়। তার পর রুহির দিকে তাকিয়ে ইশারা কিছু জিজ্ঞেস করে
রুহি বুঝতে পারে লম্বা চওড়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

-“এটা আমার মিশান ভাইয়ার বউ।
প্রহর ভাই এর বোন।
আর আমার মিষ্টি ভাবি।”

ব্যস ছেলেটার মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো যেনো বিরিয়ানির মাঝে এলাচি কামড় পড়ার মতো অবস্থা।
রুহি সায়রা দিকে তাকিয়ে সায়রা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“এটা আপুর দেবর এনামুল ভাইয়া।
তুমি তো বিকেলে নিচে ছিলে না তারা যখন এসছে। তাই পরিচয় হয় নি।
বাকি সবার সাথে হয়েছে।”

সায়রাও সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তার পর ছেলে টা চলে যায়।
আর রুহি হো হা করে হেসে উঠে। প্রহর আর সায়রা ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুহি এমন হাসির মানে ওরা ধরতে পারছে না।

-“এভাবে হাসছিস কেন তুই?”

-“তুমি দেখনি ছেলে টার কি অবস্থা হয়ে ছিল তুমি আমার ভাবি জেনে।”

বলেই আবার হেসে উঠে তবে সায়রার কথা রুহির লজ্জায় হাসি বন্ধ হয়ে গেলো

-“আমি তোর ভাবি না তুই আমার।”

কথা শেষ সায়রা উঠে মা, খালা,ফুপির কাছে চলে গেলো।

-“ছেলে টার সাথে বেশি কথা বলবা না।
বুঝতে পারছো?”

-“আপনি তো এখন এখানে ছিলেন।”

-“হুম তবুও।
মেয়ে মানুষ।”

কথা টা বলে প্রহরও চেয়ার ছেড়ে সোহান আর আরভীর দিকে এগিয়ে গেলো।
রুহি প্রহর এর কথা টা বুঝতে একটু সময় লাগলো
বুঝতে পেরে বসা ছেড়ে দৌড়ে এসে প্রহর কে নিজেও বলে উঠে

-“একেই বলে বেডা মানুষ।”

বলে মুখ ভেংচি কেটে প্রহর এর আগে গিয়ে রুহির পাশে বসে ছবি তুলতে লাগলো।
প্রহর ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এই মেয়ে কোনো কথা মাটিতে পড়তে দেবে না সব কথার উত্তর মুখে নিয়ে বসে থাকে।
এসব ভেবেই প্রহর ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে।

————

রাত দশ টা বাজে এখন। সায়রা কে মিশান টেনেটুনে জোর করে ঘরে নি এসছে।
হলুদ দেওয়া শেষ এখন সবাই মজা করে আরও পরে ঘুমাবে।
সায়রাও বায়না ধরেছে সেও থাকবে সবার সাথে। কিন্তু মিশান কিছু না বলে কটমট করে তাকিয়ে ছিল একবার।
ব্যস আহ্লাদী সায়রা তার বড় মনি কে গিয়ে নিচ থেকে ডেকে এনে বলেছিল যাতে মিশানের কাছে সুপারিশ করে তবে মিশান মার কথা শুনে নি। উল্টো মা কে সহ ঠেলেঠুলে নিচে পাঠিয়ে বউ কে সবার সামনে থেকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজে পাঞ্জাবি খোলে ওয়াশ রুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সায়রা সেভাবে পড়ে থাকে।মিশান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে খাবার আনতে চলে যায়।
সায়রা তখন উঠে গিয়ে শাড়ী পাল্টে রাতের পোষাক পড়ে ফেলে।
মিশান খাবার নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে দেখলো বউ তার কোমরের নিচে পড়ে চুল গুলো আঁচড়ে বেনুনি করতে ভাগ করছে।
মিশান খাবারের থালা সেন্টার টেবিলে রেখে চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
সায়রাও বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। মিশান কাজ শেষ সায়রা কে খাটে বসিয়ে নিজে বেসিন হতে হাত ধুয়ে এসে দেখলো সায়রা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে।যা দেখে সারা দিনের চেপে রাখা মিশানের রাগ সব বেরিয়ে এলো।
এক টানে শুয়া থেকে তুলে বসি খামচে ধরে সায়রা বাহু।
হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“মেরে ফেলতে চাস আমায়?
তুই কি বাচ্চা এমন অবুঝের মতো কেন আচরণ করিস?কই রুহি আরভীওরা তো এমন করে না।সব সময় কেন আমি তোকে সামলাতে হবে তুই নিজে পারিস না।ছোট বেলায়ও শান্তি দিস নি। বিদেশ থেকে আসার পড়েও দিচ্ছিস না।সেই প্রথম থেকে একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছিস। আচ্ছা সে সব বাঁধ তুই নিজের খাবার টা তে অন্তত খেতে পারিস। কিন্তু তুই সব সময় আমাকে টেনশনে কিভাবে রাখা যায়। সে সব করতে প্রস্তুত থাকিস।
কেন রে আমাকে তের মানুষ মনে হয় না। আমি কেন সব সময় তোর পেছন পেছন ঘুরবো?”

সায়রা বাকরূদ্ধ ও কি সত্যি এবার একটু বেশি বেশি করে ফেলেছে?
ওর মনের কোথাও একটা থেকে উত্তর এলো হ্যাঁ করেছিস এতো সেই প্রথম থেকে করে এসছি। আর প্রতি বার ছেলে টা তোকে আগলে আগলে রাখছে।
আর আজ তোর ভালোর জন্যেই তো ছাঁদ থেকে নিয়ে এসছে তাহলে কেন তুই ছেলে টার উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লি?
এখন যদি মিশান চলে যায় রুম থেকে। সায়রার এসব ভাবনার কালেই মিশাল ওকে বিছানা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।তবে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই সায়রা বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মিশান কে ডেকে উঠে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।

#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here