#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“ভাইয়া আপু কে না কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”
আরভী হন্তদন্ত হয়ে উপর থেকে সায়রার রুম হতে এসে মিশান কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে
-“দেখ হয়তো রুমে শুয়ে আছে।
ওতো বলে গেলো ওর মাথা ব্যথা করছে।”
সারা আহমেদ জানায়।
কিন্তু মিশান কারোর কথা আর শুনে না। সোফা ছেড়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সায়রার রুমে গিয়ে ওকে পাগলের মতো ডাকতে থাকে।
তবে সায়রা রুমে কোথাও নেই।
ততক্ষণে বাড়ির সব সদস্যরা সায়রার রুমে উপস্থিত হয়েছে।
ঘন্টা খানিক আগেই সায়রা আর মিশানের বিয়ের কাজ টা ঘরোয়া ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন রাত আটটা। বিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। বেশি কেউ ছিল না তাদের পরিবারের মানুষ জন ছাড়া। বিয়ের পর সবাই গল্প করছিল। কিন্তু সায়রা হঠাৎ করে বলে ওর না-কি মাথা ব্যথা করছে।
তাই ও উপরে চলে গিয়ে ছিল। মিশান বিয়ের পর কোথাও একটা গিয়েছিল। ফিরেছে মিনিট পাঁচ এক হবে হয়তো।
সায়রা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি ছিল না।
কিন্তু সবার খুশির কথা ভেবে আর না করে নি।
তবে মেয়ে টা মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
-“মিশান এদিকে আয়।”
প্রিয়তা মির্জা বেলকনি হতে মিশান কে ডাকে।
মিশান সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো তার মনি বেলকনির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিশান নিচে তাকাতেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো।
একে একে সবাই এসে দেখলো।আর অবাক হলো।
সাদনান মির্জা যেনো বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু ভাবতে পারছেনা।
মেয়ে টা এমন একটা কাজ করতে পাড়ে কারোর মাথাতেই আসে নি এমন চিন্তা।
দুইটা শাড়ী ঝুলছে আর সেই শাড়ী বেয়ে সায়রা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে।
-“কোথায় যাচ্ছিস?”
সারা জিজ্ঞেস করে।
-“মনি ও হয়তো বেশি দূর যেতে পারে নি। আমি খুঁজলে পেয়ে যাব।”
কথা টা বলেই মিশান আর এক দন্ড দাঁড়ায় না দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়ি নিয়ে শাঁই শাঁই করে মেইন রোডের চলে গেলো।
ঘটনা এতো দূরত্ব ঘটেছে যে সবাইর এখন কিছু বোধগম্য হচ্ছে না।
প্রিয়তা মির্জা সাদনানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
-“আপনিও যান না।
ছেলে মেয়ে দুটি কোথায় একটু দেখুন না।”
প্রিয়তার কথা সবটা না শুনেই সাদনান হাঁটা ধরলো।
আর ওর পেছন পেছন সোহান,প্রহর, আয়ানও চলে গেলো।
রাহান আর গেলো না বাড়িতেও তো একটা পুরুষ মানুষ থাকা দরকার। তাই রাহান থেকে গেলো।
———
মিশান গাড়ি চালাতে চালাতে সায়রা কে চার দিকে খুঁজে চলেছে। বাড়ি থেকে এইখানে হেঁটে আসতে দশ মিনিট লাগে। আর মিশান গাড়ি এতো জোরে চালাচ্ছে যে চার মিনিটে এখানে চলে এসছে।
কিন্তু এতো মানুষ জন গাড়ি সব মিলি সায়রা কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ মিশান রাস্তার অপর পাশে চোখ পড়তেই দেখলো দু’টা মেয়ে হাত ধরে অনেক তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালাচ্ছে।
মিশানের বুঝতে বাকি থাকে না একটা সায়রা।
আর সে মেয়ে টাকে মিশান এতো দূর হওয়াতে চিন্তে পারলো না।
মিশান তৎক্ষনাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দরজা খোলে কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটতে লাগলো।
তবে বেশি দূর আগাতে পারলো না।
একটা গাড়ি এসে মিশানকে ধাক্কা দিলো।
যার ফলে মিশান ছিটকে গিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পরে হাত পায়েও মাথায়ও চোট পেলো।
কিন্তু ততক্ষণে সায়রা এই স্থান হতে অনেক টা দূরে চলে গিয়েছে।
গাড়ি মালিক দূরত্ব নেমে আসে।
এর মধ্যে আশে পাশের মানুষ জন এম্বুলেন্স ফোন করে দিয়েছে।
ঠিক তখনি একটা গাড়ি এসে এখানে থামে। আর গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষ গুলো সাদনানরা। সাদনান রা সবাই যেনো মিশান কে এভাবে দেখে কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না।ভিড় ঠেলে দূরত্ব পায়ে এগিয়ে আসে প্রহর, সোহান, সাদনান, আয়ান। আয়ানের চোখ দিয়ে টুপটাপ জল গড়িয়ে পরছে।এই ছেলের কিছু হলে যে তার ভালোবাসার স্ত্রী পাগল হয়ে যাবে। সাদনান কোনো এক কারণে নিজে কেই এসবের জন্য দায়ি করে বসলো।
অতঃপর সোহান আর প্রহর আরোও কিছু আশেপাশের লোক মিলে এসে মিশান কে ধরাধরি করে ওদের গাড়িতে করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এখন এম্বুলেন্স এর জন্য অপেক্ষা করার মতো বোকামির কোনো মানি হয় না।
মিশানের তখনও হালকা হালকা হুস আছে। মাথার বাম সাইড হতে লাল তরল রক্ত গড়িয়ে পরছে।
মিশান বিরবির করে কিছু বলছে।
প্রহর সেটা লক্ষ করে নিজের কানটা মিশানের মুখের কাছে নেয়
-“ও চলে যাচ্ছে।
আমি দেখেছি। ”
ব্যস এটুকু বলতে বলতে মিশান চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
প্রহর যেনো অবাকের চরমপন্থী। তার বোন কতটা ভাগবতী ভাবতেই অবাক লাগছে।
একটা মানুষ মৃত্যু পথ যাত্রী কিন্তু সে তার ভালোবাসার মানুষটার কথা চিন্তা করছে।
কতটা ভালোবাসলে এমনটা সম্ভব। প্রহর সে টা জানে না তবে তার বোনের প্রতি এক রাশ রাগ জন্ম নিলো।
সোহান গাড়ি চালাচ্ছে আয়ান মিশানের পা কোলে নিয়ে বসে আর সাদনান সামনে বসে।
————
সায়রা ওর এক ফ্রেন্ড নাম মুনিয়া ওর বাসায় এসেছে। মূলত ওর সাথে কথা বলে আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখে ছিল।
মুনিয়ার স্বামী বিদেশে থাকে।
এখন আপাতত এখানে থাকবে আর দুটা টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছে মুনিয়া।
এতে ওর ভালোই চলে যাবে দিন। তবে এখানে থাকবে না সায়রা ভাবছে।
সায়রা মুনিয়ার সঙ্গে কথা বলছে। ঠিক তখনি ওর হাতে থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে। প্রহর ফোন দিয়েছে।
সায়রা কল টা কেটে দিয়ে ফোন টা বন্ধ করে দিলো।
অতঃপর আবারও কথা বলায় মত্ত হলো। তবে ওর মন টা যেনো কেমন অশান্ত লাগছে।
বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে।
সায়রা পরক্ষণেই ভাবে হয়তো বাড়ি থেকে না বলে চলে এসছে তাই এমন লাগছে।
এসব ভেবেই নিজে কে নিজে শান্তা দিচ্ছে।
ও হয়তো কল্পনাতেও ভাবে নি ওর কারণেই ওর ভালোবাসার মানুষটা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।
——–
দেড় ঘন্টার বেশি সময় ধরে সবাই ওটি’র সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অপেক্ষা করছে কখন লাল বাতি টা বন্ধ হবে।
আর দোয়া করছে যেনো খারাপ কিছু না হয়।
মাইশা চৌধুরী কে পাশের কেবিনে রাখা হয়েছে সাথে রুহি আছে।
মাইশা এসব শুনে কান্না করতে করতে প্রেশার কমে গিয়েছে।
শরীর দূর্বলের কারণে বেহুশ হয়ে গিয়েছে।
ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত প্রায় দশ টার কোঠা ছাড়িয়ে।
কিন্তু সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। কারোর খাওয়া নাওয়া কিছুই নেই। অথচ ঘন্টা তিনেক আগেও একটা বিয়ে বাড়িতে যা যা তৈরি করা হয় তার সব কিছু করেছিল।
আর সে সব খাবার গুলোও এভাবে পড়ে আছে।
-“বাবা?”
লাল লাইট টা অফ হয়েছে। দরজা ঠেলে দুজন ডক্টর কে বেড়িয়ে আসতে দেখেই আরভী আয়ান চৌধুরী কে ইশারা করে।
সাদনান, রাহান এগিয়ে গিয়ে ডক্টর কে কিছু বলার আগেই ডক্টর হাসি হাসি মুখ করে জানায়
-“পেশেন্ট এখন বিপদ মুক্ত।
তবে সব সময় খেয়াল রাখবেন। আমি কাল সকালে এসে আরও একবার চেকাপ করে যাবো।”
-“ধন্যবাদ ডক্টর। ”
সাদনান বলে।
-“মির্জা সাহেব এটা আমাদের ডিউটি।
এক ঘন্টা পর দেখা করতে পারবেন।”
ডক্টর মুচকি হেসে বলে।
তার পর ডক্টর চলে গেলো।
আরভী গিয়েছে মাইশা চৌধুরীর কাছে।
মাইশা চৌধুরী এখন সুস্থ আছে।
তাই ওনিও এসে সবার সাথে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ছেলের সাথে দেখা করব,একটু ছুঁয়ে দেখবে সে আশায়।
————
-“এখন কেমন লাগছে বাবা?”
মিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে মাইশা।
মিশান পিটপিট করে চোখ খুলে মার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হালকা হাসে।
অতঃপর মায়ের সঙ্গে কথা বলে।
ঠোঁটের কোনেও ফোলা।মাথায় বেন্ডেজ।
পায়েও বেন্ডেজ করা।
হাতে শরীরে বিভিন্ন জায়গা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে।
একে একে সবাই এসে দেখা করে যায়।
কিন্তু তার প্রেয়সীর দেখা নেই।
ডক্টর বলেছে তিন দিন পর রিলিজ দেওয়া হবে মিশান কে।
কিন্তু আয়ান, সাদনান কিছুতেই মিশান কে হসপিটালে রাখবে না।
বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে তারা।
সেই জন্য কাল সকালেই তারা মিশান কে বাড়িতে নিয়ে যাবে।
এরমধ্যে কেউ আর সায়রার খুঁজ করে নি। কেন করবে?
কি করে করতে পারলো এমন একটা কাহিনি।
আবারও পাঁচ বছর আগের সেই ছন্নছাড়া সায়রা কি করে হতে পারলো মেয়ে টা?
তবে প্রহর,রুহি, আরভী,সোহান ওরা অনেক বার করে কল দিয়েছে সায়রা কে তবে প্রতি বারই ফোন টা বন্ধ দেখাচ্ছে।
————–
মিশান কে বাড়ি নিয়ে গিয়েছে আজ দু দিন হয়।
সাদনান মির্জা খবর নিয়ে জানতে পেরেছে ওই দিন রাতে সায়রা কে দেখার পর মিশান গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট টা হয়েছে।
সেই থেকে তিনি মেয়ের প্রতি এক রাশ অভিমান জমা হয়েছে।
তিনি খবর নিয়ে এটা জানতে পেরেছে সায়রা এখন ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় আছে।
তিনি চাইলে মেয়ে কে নিয়ে আসতে পারে তবে মিশান না করেছে।
সবাই চাইছিল যেনো মিশানের এক্সিডেন্ট এর খবর টা সায়রা কে দেওয়া হয়। আর ওকেও যেনো ফিরে আনা হয়।
কিন্তু বাঁধ সাধলো মিশান।
সে সবাই কে কিছু করতে বা বলতে না করে দিয়েছে।
বলেছে নিজে সুস্থ হয়ে তার পর যা করার দরকার হয় করবে।
#চলবে…
[ মিশান কি করতে পারে বলে মনে হচ্ছে?বেচারা মিশান বিয়ে তো করল কিন্তু বাসর টা আর করতে পারলো না🙂। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]