#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“তোর খুব শখ না আমার থেকে পালানোর?
তোর এই শখ আমি আজ মিটিয়ে দেবে, সুইটহার্ট। ”
কথা গুলো বলেই মিশান সায়রা কে পাঁজা কোলে তোলে।
সায়রা হাত পা ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলো। তবে মিশানের বলিষ্ঠ শরীরে কাছে সায়রা শরীর নিতান্তই পুঁটি মাছ। তাই পেরে উঠলো না।
মিশান মুনিয়ার বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে গাড়িতে দরজা টা এক হাত দ্বারা কোনো রকম খোলে সায়রা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ঘুরে এসে ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।
এদিকে সায়রা বকবক করেই যাচ্ছে।
মিশান সে সব পাত্তা না দিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে কাউকে কল লাগায়।
দু’বার রিং হওয়ার পর কল টা রিসিভ হলো।
-“হ্যাঁ, বাবাই আমি ওকে নিয়ে আমাদের বাগান বাড়িতে যাচ্ছি। হুম, হ্যাঁ কয় দিন ওখানেই থাকবো।
হ্যাঁ তুমি মনি কে আর মাকেও বলে দিও।”
ওপাশের ব্যক্তি টা আচ্ছা বলে কল কাটে
তবে মিশান কান হতে ফোন নামায় না।
সায়রার দিকে তাকিয়ে দৃষ্ট হেসে আবারও গাড়ি চালাতে চালাতে বলে
-“হ্যাঁ বাবাই তোমাকে খুব শীগগির নানা ডাকার মতো কাউ কে আনার জন্য মিশন আজ থেকেই শুরু করবো।”
সায়রা মিশানের এমন কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায়।
মিশান সে সব পাত্তা না দিয়ে ফোন টা সিটের পাশে রেখে গাড়ি চালাতে মন দেয়।
সায়রাও আর কিছু বলে না। কি বলবে এই অসভ্য মানুষ টা কে।
তবে সায়রা একটা জিনিস খেয়াল করেছে।
মিশান আগের চাইতে অনেক টা শুকিয়ে গিয়েছে।
মাথার চুল গুলো একদম ছোট ছোট।
আজ একুশ দিন পর দেখা কেমন অগোছালো লাগছ এই মানুষ টাকে।
সব সময় পরিপাটি গুছানো মানুষ টা কে আজ এমন কেন লাগছে?
কিন্তু উওর টা যে ওর কাছে নেই।
—————-
মিশান এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। সায়রা বাসা থেকে চলে এসছে আজ একুশ দিন হয়। সবাই সায়রার সাথে কম বেশি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে তবে প্রতি বারের মতো ফোন টা বন্ধ দেখাতো।
আগে সবার উপর সায়রার অভিমান ছিল। তবে এখন তা উল্টো হয়েছে সবাই এখন সায়রার উপর অভিমান করে আছে।
তবে মিশান কারোর উপর রাগ অভিমান আছে কি না তা কেউই বুঝতে পারছে না।
অবশ্য বুঝবে কি করে মিশান সেরকম কেনো আচরণ করে নি।
সাদনান মির্জা একটু অনুতপ্ত। দুই বাবা,মেয়ের পাল্লায় পড়ে মাঝে ছেলে টা কষ্ট পাচ্ছে। কেন না ওনি তো পাঁচ বছর আগে এরকম টা করতে মিশান কে বলেছিল।
সেই অনুযায়ী মিশান চলেছে।
সে টার অবশ্য যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল। পাঁচ বছর আগে সায়রা আচরণ ছিল কিছু টা ছন্নছাড়া। লেখা পড়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না।সব সময় মিশানের পিছু পিছু ঘুরতো। সবাই বিষয় টা তখন ততটা পাত্তা দেয় নি। ভেবেছে ছোট আর বাড়িতে তো এই দুই টা ছাড়া কোনো বাচ্চা নে তাই হয়তো সায়রা এমন করে।তবে বিপত্তি সৃষ্টি হলো তখন যখন মিশানের লন্ডন যাওয়ার সময় হলো।
পাগলামি টা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে ছিল।
সবাই বুঝিয়ে ছিল মিশান ফিরে আসবে কয়েক বছর পর।
কিন্তু এতো এতো বুঝানোর ভিড়েও মেয়ে টা মিশান কে কিছুতেই ছাড়তে রাজি ছিল না।
সবাই ভেবে ছিল বিয়ে দিলে হয়তো ঠিক হবে।
কিন্তু না সায়রা তখন মিশান কে ভালোবেসে এসব করেনি করে ছিল ও লেখা পড়া থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য। তবে আবেগও ছিল সব টা।
সাদনান মির্জা সে টা বুঝতে পারে।
আর মিশান কে বলেছিল যাতে করে সায়রার সাথে খারাপ আচরণ করে আর ওকে নিজের যোগ্য হতে বলে।
আর হলোও তাই মিশানের কথায় আজ জেদ করে এতটুকু।
কিন্তু আগে ভালো না বাসলেও অপেক্ষা করতে করতে তা আবেগ আর জেদ থেকে ভালোবাসা পরিণত হয়েছে।
কিন্তু তত দিনে মেয়েটার মনে মিশানের জন্য অভিমানের পাহাড় হয়ে গিয়েছে।
তখন সায়রার মনে হতো তখন একটু ভালো করে বুঝাইলে তো বুঝতো।
কিন্তু ও সে সব তো অনেক করেছিল সবাই।
কিন্তু তখন আবেগের বশে এসব কিছু তিক্ত খারাপ কথা মনে হতো।
কিন্তু মন টা মানতে নারাজ। সব দোষ মিশান কে দিতে বসে থাকে।
———-
-“আমি থাকবো না আপনার সাথে।
বাসায় যাব আমি। নামিয়ে দিন আমাকে।”
-“যাবো তো তবে কয় দিন পর।
তোর মতো আরও একটা সায়রা আনার ব্যবস্থা করে তার পর, সুইটহার্ট।
কথা টা বলেই মিশান সায়রা কে বিছানায় ধপ করে ফেলে দিলো।
সায়রা নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
মিশান সে সব উপেক্ষা করে গিয়ে দরজা টা লক করে দেয়। নিজের হাত ঘড়ি, ওয়ালেট, ফোন সব সেন্টার টেবিলে রাখে।
তার পর আলমারি খোলে একটা তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
সায়রা বিছানা হতে ওঠে গিয়ে কতখন দরজা টা টানাটানি করেও কোনো কিছু করতে পারলো না।
তাই ফিরে এসে রুমে বিছানায় ধপ করে বসে বিরবির করে মিশান কে আচ্ছা মতো বকতে লাগলো।
আর ঠিক তখনি সেন্টার টেবিলে উপর রাখা মিশানের ফোন টা আলো জ্বলে উঠলো। সাইলেন্ট করার সে জন্য কোনো শব্দ হচ্ছে না।
সায়রা একবার ওয়াশরুমের দরজায় তাকায় তো একবার ফোন টার দিকে।
ধরবে কি ধরবে না দ্বিধা আছে।
স্বামী হয় ওর অধিকার আছে, হুু। এসব ভাবতে ভাবতেই কল টা কেটে গেলো।
সায়রা তখন মাত্র ফোন টা হাতে নিয়েছে। দেখলো মনি দিয়ে এক টা নাম্বার সেভ করা আর সেটা থেকেই কল টা এসছে। ওর বুঝতে বাকি নেই ওর মা ফোন করেছে। ইশ কত দিন মা-বাবার সঙ্গে কথা হয় না। সায়রার ইচ্ছে হলো কল দিয়ে কথা বলতে
তবে লক না জানায় সেটা আর করতে পারে না।এসব ভেবেই ফোন টা আবার আগের স্থানে রাখতে যাবে তখনি আবার আলো জ্বলে ফোন টায়।
সায়রা দেড়ি করে না চট করে কল টা রিসিভ করে কানে দিতে ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো কি বলছে ওর মা এসব।
-“মিশান ওষুধ গুলো কিন্তু নিয়ম করে খাবি আর মলম গুলো ঠিক সময় ব্যবহার করবি।
আর শোন ও যদি তোকে কিছু বলে বা আবারও কিছু উল্টো পাল্টা কিছু করে তবে আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই ওকে,,,
-“মা তুমি কি বলছো এসব?
মিশান ভাই, কিসের ওষুধ? কিসের সত্যি?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ”
প্রিয়তা মির্জা ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ছাড়ে
পর পরই বলে উঠে
-“ওহ, তুমি।
-“মা তুমি রেগে আছো?”
প্রিয়তা মির্জা মেয়ের উপর রেগে থাকলে তুমি করে বলে।
সায়রা বুঝলো না মা কেন তার উপর রেগে আছে?
যেখানে সব দোষ মিশান ভাইয়ের।
-“রেগে থাকার কথা নয় কি?
দুই বাপ, মেয়ে মিলে ছেলে টা কে মেরে ফেলতে চাইছো তোমরা?”
-“আমি কি করেছি? তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে,,,
-“সময় হলে সব বুঝতে পারবে।
আর একটা কথা ছেলে টাকে দয়া করে আর কষ্ট দিও না।
মরতে মরতে বেঁচে এসেছে ছেলে টা আমার।”
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে প্রিয়তা লাইন কাটে।
সায়রা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
আর ঠিক তখনি ওয়াশরুমের দরজা টা খট করে খুলে মিশান বেড়িয়ে এলো।
গায়ে শুধু একটা তোয়ালে জড়িয়ে।
যার ফলে শরীরে বেশির ভাগ অংশ উন্মুক্ত।
যার ফলে শরীরে ক্ষত স্থান গুলো চোখে পরছে। সায়রা অন্য সময় হলে হয়তো মিশান কে এভাবে দেখলে লজ্জা রংধনু রং ধারণ করতো।
কিন্তু এখন ওর মনে একটাই প্রশ্ন মিশান ভাইয়ের এমন অবস্থা কেন?
-“এমন হা করে তাকানোর কি আছে?
এমন তো প্রথম দেখিস নি লন্ডন যাওয়ার আগেও অনেক বার এভাবে দেখেছিস।আসার পরেও দেখেছিস আর ভবিষ্যতেও দেখতে পারবি।
এখন ফ্রেশ হয়ে আয়।”
মিশান কথা গুলো বলতে বলতে আলমারি থেকে নিজের কাপড় খুঁজে বের করছিল।
কিন্তু পিঠে নরম হাতের স্পর্শ পেতে চট করে পেছন ফিরতে চোখে পরে প্রেয়সীর জলে টইটম্বুর করা আঁখি জোড়া।
-“এই জান কি হয়েছে?তুমি কাঁদছো,,,
আর কিছু বলতে পারে না মিশান সায়রা জড়িয়ে ধরে
শব্দ করে কেঁদে ফেলে মেয়ে টা।
-“এসব কি করে হয়েছে? ”
জড়িয়ে ধরে অবস্থায় জিজ্ঞেস করে সায়রা মিশান ওকে ধরে নিজের নিকট হতে আলগা করে।
ধীরে গলায় বলে
-“এক্সিডেন্ট।
তুই ওই দিন চলে যাওয়ার পর খুঁজতে গিয়ে যখন দেখেছিলাম তুই একটা মেয়ের হাত ধরে দৌড়ে চলে যাচ্ছিস তখন আমিও গাড়ি থেকে নামি।
তবে তোর কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলো।
তার পর আর কি।”
সায়রা বাকরূদ্ধ কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর জন্য সব সব দোষ ওর কি করে করতে পারলো এমনটা? ওতো ভালোবাসে মিশান ভাই কে।
আজ যদি বড় কোনো ক্ষতি হয় যেতো?
না আর কোথাও যাবে না মিশান ভাইকে ফেলে।
এসব ভেবেই আবারও মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে।
মিশানও প্রেয়সী কে দু হাতে আগলে নেয়।
যার ফলে মেয়ে টার পা কিছু টা মেঝে হতে উপরে উঠে
শূন্যে ঝুলে।
#চলবে…
[ ভাবছি কাল মিশানের বাসর টা করিয়ে দেবো😊। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]