হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_২ #জান্নাত_সুলতানা

0
68

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি রুমে যাচ্ছি মনি। ফ্রেশ হতে।
আমার কফি টা কাউ কে দিয়ে একটু রুমে পাঠিয়ে দিও।”

প্রিয়তা মির্জা কে উদ্দেশ্য করে বলে মিশান।

-“আচ্ছা। ”

প্রিয়তা মির্জা ছোট করে বলে।

মিশান সোফায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনো দিকে না তাকিয়ে গটগট পায়ে হনহনিয়ে সিড়ি দিয়ে উপর নিজের রুমে চলে গেলো।
সায়রা নির্বিকার। কোনো রকম নড়াচড়া নেই।

-“তোমার শরীর কি এখনো খারাপ লাগছে? ”

সোফায় বসে থাকা রুহি কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে রাহান আহামেদ।
রুহি মাথা নাড়ায়। যার অর্থ “না”।

-” আচ্ছা রুহি চল তোকে আমি রুমে দিয়ে আসি।”

আরভী কথা গুলো বলেই রুহির এক হাত ধরে। আরভী রুহির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল।
রুহিও মুচকি হাসে। তার পর আরভীর সাহায্যে সে রুমে চলে গেলো।
সবাই বসার ঘর ছেড়ে যে যার মতো করে চলে গেলো।

কি সুন্দর মিষ্টি দেখতে মেয়ে টা। হাসলে এক গালে টোল পরে। সায়রা মেয়ে হয়েও মনে মনে মেয়ে টার হাসির প্রশংসা করছে।
ছেলেরা তো নিশ্চয়ই সে হাসিতে প্রেম এ পড়বে।
আসলে মেয়ে টাই দেখতে অনেক সুন্দর। গায়ের রংটা বেশি সাদা নয়।কিন্তু তবুও মেয়ে টার চেয়ারায় একটা অদ্ভুত রকম মায়া আছে।
যে কেউ নিঃসন্দেহে মেয়ে টার মায়া পড়বে।
কিন্তু সায়রার মেয়ে টা কে এখন ওর কাছে আস্ত রাক্ষসীর মতো লাগছে। মেয়ে টার হাসিটাও ওর গায়ে কাঁটার মতো বিঁধেছে। কারণ ক্ষুন্ন পূর্বে মেয়ে টা তার ভালোবাসার মানুষটার কোলে ছিল।
সায়রার ভাবনার মাঝেই
সাদনান মির্জা মেয়ের কপালে চুমু আঁকে।
সায়রা বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
বিনিময় সাদনান মির্জা নিজেও হাসে।

-“আমার মা কি আজ শাড়ী পড়ে থাকবে?
খাবার খেতে হবে না?”

-“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

বাবার প্রশ্নে সায়রা জানায়।
সাদনান সম্মতি দেয়।
অতঃপর মেয়ে কে ছেড়ে দিয়ে নিজেও কক্ষের দিকে চলে গেলো।
সায়রাও সোফা হতে উঠে রুমে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই পেছন থেকে প্রিয়তা মির্জার ডাক পড়ে

-“শোন তুই তো উপরে যাচ্ছিস।
কফি টা নিয়ে যা। মিশান কে দিয়ে দিস।
আমার অনেক কাজ।কেউ ফ্রী নেই।”

কথা গুলো বলেই সায়রা’র হাতে কফির মগ টা দিয়ে সায়রা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়তা মির্জা হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
কারণ সারা আহামেদ তাকে ডাকছে।

অগত্যা সায়রা কেও বাধ্য হয়ে কফি নিয়ে মিশান নামক ব্যক্তিটার কক্ষের দিকে পা বাড়াতে হলো।

——————-

সায়রা যখন দরজা খুলে তখন মিশান আরভীর বয়সী এক টা মেয়ে কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়ে টাকে সায়রা চিনে, আয়না ফুফির মেয়ে। তবে অবাক হয়ে ছিল। শুধু অবাক হয়নি অবাকের চরমপন্থী ছিল সায়রা। মিশান কে এমন অবস্থা দেখে।
মিশানের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল সোহান।
তার থেকে কিছু টা দূরে ছিল আয়ান,সাদনান,রাহান।
মেয়ে টা চোখ বন্ধ করে মিশানের গলা জড়িয়ে ছিল।
মেয়ে টার চোখ মুখ শুকিয়ে ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মেয়ে টা বেশ ক্লান্ত।
হয়তো এই প্রথম এতো টা পথ জার্নি করে মেয়ে টা ক্লান্ত।
এয়ারপোর্টে থেকে বেরিয়ে মিশানদের বাড়িতে আসতে ঘন্টা সময়ের এর মতো লাগে।
এই রাস্তা টা আসার সময় মেয়ে টা বেশ কয়েক বার বমিও করেছে।
আগেও কিছু খায়নি আর শুধু বমি করার কারণ মেয়েটা একদম নেতিয়ে পড়েছিল।
গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করার মতো অবস্থায় ছিল না মেয়ে টা।
তাই তো বাধ্য হয়ে মিশান কে কোলে নিতে হয়ছে।
যদিও সাথে সোহান ছিল। তবুও হুট করে তো আর নিজের খালাতো বোন কে কোনো ছেলের কোলে দিতে পারে না। যতই ফুফাত ভাই হোক তবে মেয়ে টা তো সোহান কে চিনে না।

রুহি আয়নার ছোট মেয়ে। ওর জন্ম লন্ডন যাওয়ার পর হয়েছে।

———–

সায়রা মিশান এর রুমে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভিতরে যাওয়ার জন্য সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
বহু দিন, উঁহু দিন নয় পাঁচ বছর পর এই কক্ষের সামনে এলো। মিশানের রুম টা উপরে একদম শেষের দিকে হওয়াতে এদিক টায় কম আসা হয় প্রায় সবার।
তবে মিশানের অনুপস্থিতিতে রুম টা কে মাইশা চৌধুরী নয়তো প্রিয়তা মির্জা দুজনের এক জন কয়েক দিন পর পর রুম টাকে গুছিয়ে রেখেছে।
মিশান সুদূর লন্ডন যাওয়ার আগের দিন যে মেয়ে টা কান্না করতে করতে এই রুমের সামনে থেকে বিদায় নিয়ে ছিল। তার পর আর আসা হয়নি।
আজ আবার এসছে।
কোনো এক অজানা ভয়ে রুম টার ভিতর পা দুটি যেনো যেতে যাচ্ছে না।
মন টা কেমন বিষন্ন হয়ে আসছে।
না এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। যেতে তো হবে।
যেখান দায়িত্ব টা তার মা দিয়েছে। আর যেখানে মিশান কে তিনি বোনের ছেলে কম নিজের ছেলে মানে বেশি। আর কফি টা সেখানে মিশানের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আর যদি কোনো গন্ডগোল হয় তবে তার মা তাকে আজ বাড়ি ছাড়া করবে।
এসব ভেবেই সায়রা দরজা টা হালকা করে নিজের ছোট্ট হাত টা রাখে।
আর অমনি দরজা টা কে’র কে’র আওয়াজ তুলে এতটুকু ফাক হলো। যতটুকু দিয়ে মিশান এর ঘরের সবটাই অতি সহজেই সব টা অবলোকন করা যাবে।
সায়রা সেই ফাঁকের সাহায্যে ঘরের সব টা পর্যবেক্ষণ করে নিলো।
না, ঘরে কেউ নেই।
সায়রা লম্বা একটা দম নিলো। অতঃপর ভাবলো কফির মগ টা রেখে মিশান রুমে আসার আগে চলে যাবে।
কিন্তু সায়রার কপাল কি আর এতো ভালো?
উঁহু, মোটেও নয়।
কফির মগ বিছানায় পাশে টেবিলে রেখে যেই না পেছন ফিরতে যাবে তখনি খট করে ওয়াশরুমের দরজা টা খুলে মিশান বেড়িয়ে এলো।
ঘরে শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে যার কারনে রুমে পর্যাপ্ত আলো নেই। আর সায়রা কে মিশান খেয়াল করে নি।
আর এদিকে সায়রা চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। এদিক ওদিকে কোনো দিক নড়াচড়া করছে না।
ওর মনে হচ্ছে পেছন ফিরলেই কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
মিশান ভাই নিশ্চয়ই আবার আগের মতো করে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
এসব ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে করে পেছন ফিরে।
কিন্তু না কেউ নেই।
চার দিকে চোখ বুলায় সায়রা।
অতঃপর মিশানের দেখা মিলে।
আলমারির সামনে মেঝেতে
বসে। নিজা আনা সাথে ব্যাগ হাতরে কিছু খোঁজে বেড়াচ্ছে। সায়রা খুশি হলো এটা ভেবে যে মিশান তাকে দেখতে পায় নি তা হলে।
এসব ভেবেই আস্তে করে এগিয়ে গেলো দরজা নিকট।
তবে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যাবার আগেই এক টা শক্ত দানবের হাত তার ছোট নরম তুলতুলে হাত টা টেনে ধরলো।

সায়রা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। যা ভয়ে পাচ্ছিল তাই হবে।
এখন নিশ্চিত মিশান আবার আগের নেয় এক গাদা অপমান করবে।
এ-সব মাথায় আসতেই সায়রার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
ওর খুব করে এখন পানির পিপাসা পেলো।তবে এখন পানি গিলার সময় নয়।
মিশান ভাইয় অপমান গিলার সময়। এসব ভেবেই সায়রা ফাঁকা এক টা ঢোক গিলে নিলো।
কয়েক ঘন্টা আগে লাগানো হালকা গোলাপী লিপস্টিক আবৃত ওষ্ঠ জোড়া জ্বি হা দ্বারা ভিজিয়ে নিলো।

-“ছোট বেলার স্বভাব টা এখনো ছাড়তে পারিস নি?”

মিশানের এমন গম্ভীর কন্ঠে করা প্রশ্নে সায়রার চোখ বড় বড় করে তাকাতেই করিডর ওপাশে থাকা পিলার টা নজরে পড়লো।
এই ব্যক্তি ওর সাথে এভাবে এতো সহজ সাবলীল গলায় কিভাবে কথা বলছে?
যেখান মিশান নামক ব্যক্তি টাকে দেখলেই ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
সায়রার ভাবনার মাঝেই মিশান এক টানে ওর দিকে ঘুরিয়ে মেয়ে টার কোমর জড়িয়ে ধরে।
মিশান সাওয়ার নেওয়ার কারণে ওর হাতের স্পর্শ বরফের মতো ঠান্ডা মনে হলো সায়রার কাছে।
সে স্পর্শে সায়রা নামক রমণীর ছোট্ট দেহপিঞ্জর কেঁপে উঠল।
মিশান সায়রার শরীর দিকে তাকিয়ে উপর হতে নিচ পযন্ত চোখ ঘুরিয়ে চাইলো।
সায়রা এখন দৃষ্টি নত।
মিশান চোখে হাসে।সায়রার আড়ালে।

অতঃপর কেমন নাক মুখ কুঁচকে বলে

-” বড় হয়ে দেখতে এতো টা খারাপ হবি ভাবি নি।

মিশান এক হাত সায়রার কোমরে রেখে আর হাতের তর্জনি আঙ্গুল দ্বারা নিজের গোলাপি ওষ্ঠ ছুঁয়ে কিছু ভাবে। অতঃপর
ভ্রু কুঁচকে মেয়ে টার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দেয়।
পর পরই শক্ত কন্ঠে কিছু বাক্য প্রয়োগ করে

-“বিয়ের আগে যদি কখনো আর শাড়ী পড়তে দেখেছি।
তবে বাসর রাতে ব’স্তু ছা’ড়া’ই সারা রাত দাঁড় করিয়ে রাখবো,ইডিয়েট।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here