হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১১ #জান্নাত_সুলতানা

0
52

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাসায় যেতে হবে না?”

সায়রা মিশানের গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। মিশান কখন থেকে উঠতে বলছে কিন্তু এই মেয়ের কোনো রকম প্রতিক্রিয়া নেই।
মিশান এবার মহা বিরক্ত। ভ্রু কুঁচকে আসে ওর।একটা মানুষ এতো কি করে ঘুমুতে পারে ও ভেবে পায় না। সকাল ন’টা বাজতে চলে এই মেয়ের কি সে খেয়াল আছে।
মিশান আবারও মাথায় হাত বুলিয়ে বউয়ের।
বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠে

-“আচ্ছা বাসায় যাব না।
তাহলে তোকে আদর করি।”

মিশান দুষ্ট কন্ঠে বলে উঠে।
সায়রা মিশানের বুক হতে মাথা তুলে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে ধরে আসা গলায় বলে

-“আমি জানি আপনি এটা কিছুতেই আজ করতে পারবেন না। ”

কথা শেষ মুচকি হেসে আবারও আগের স্থানে মাথা এলিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় সায়রা।
মিশান আর কিছু বলে না। কি বা বলবে।যাই একটা বুদ্ধি বের করে ছিল। তবে সেটাও কাজে দিলো না।
তাই চুপ করে নিজেও প্রেয়সীর শরীরের গন্ধ নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে।
এক সময় মিশান নিজেও আবার ঘুমি পরে।
সায়রা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যেতে গিয়ে পারলো না।
পেটে ক্ষুধা অনুভব করে।ঝট করে চোখ খোলে অতঃপর মিশানের চাপ দাঁড়ি ফাঁকে ঠোঁট জোড়া নজর পরে।
কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ লাগছে।
এসব ভেবেই সায়রা
আস্তে ধিরে বালিশের পাশে থাকে মিশানের ফোন টা হাতে নিয়ে টাইম দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।
ফোন বিছানায় ফেলে মিশান কে ডাকতে লাগলো

-“বারো টা বজে বাসায় যাব না? উঠুন। ”

মিশান নড়েচড়ে উঠে বসে। তার পর আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে উঠে

-“তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।”

সায়রা আর কিছু বলে না উঠে গিয়ে কাল রাতে বাসা থেকে পড়ে আসা কাপড় গুলো শপিং থেকে বেড় করে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
মিশানও ফোন হাতে কাউ কে কল লাগায়। ফোনে কথা শেষ করে মিশান সোফায় বসে অপেক্ষা করে সায়রা বেড়িয়ে আসার।সায়রা সাত কি আট মিনিটের এর মধ্যে বেড়িয়ে আসে।
শুধু কাপড় পাল্টে এসছে।
মিশান একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ফোন টা সোফায় রাখে।
সায়রা কাল পড়ে আসা চাদর টা নিয়ে সেটা ওর শরীরে জড়িয়ে দিতে দিতে বলে উঠে

-“দরজা কেউ নক করলে একটু ফাঁক করে খাবার টা রেখে দিবি।
ঠিক আছে?”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়রাও আর কি করবে বিছানায় পা গুটি কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকে।
এর মিনিট দুই এক এর মাথায় দরজা কেউ নক। সায়রা গায়ে চাদর টা পেচিয়ে দরজা টা হালকা খোলে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাবার এর ট্রে।সায়রা ছেলে টার হাত থেকে একটা ট্রে নেয়।আর মেয়ে টাকে বলে ওর সাথে আসার জন্য।
মেয়ে টা ভিতরে আসে সায়রা খাবার গুলো রেখে পেছনে ফিরে মেয়ে টা কে বলে রাখতে। ঠিক তখনি ওয়াশরুমের দরজা খোলে মিশান বেড়িয়ে আসে।
আর মেয়ে টা হা করে তাকিয়ে থাকে। এদিকে সায়রা রাগে ফুঁসছে। মেয়েটা কে মনে মনে একশ’রও বেশি গালি দিয়ে ফেলে।আর এদিকে
মিশান সায়রার দিকে কটমট করে তাকিয়ে মেয়ে টা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“আপনি আসতে পারেন।”

মেয়ে টা লজ্জা পায়।তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই মিশান শব্দ করে দরজা টা লাগিয়ে ঝড়ে বেগে এসে সায়রার বাহু খামচে খাবলে ধরে।

অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে

-“বলেছিলাম না দরজা টা একটু ফাঁক করে খাবার টা নিতে?
তাও কেন শুনলি না আমার কথা?”

সায়রা ভয় পায় না নিজেও উল্টো বলে উঠে

-“আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।”

মিশান অবাক হয়।তবে বুঝতে পারে বউ তার রেগে আছে। এখন নিজেও রাগলে ভালোর চাই খারাপ এ হবে বেশি।
আর দুজনেই আগুন হলে কি করে হবে। লোহা পেটানোর জন্য তো কাউকে হাতুড়ি হতে হবে।

-“আচ্ছা আপনাকে এতো সুন্দর কে হতে বলেছে?
একটু কম সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো।”

মিশানের ভাবনার মাঝেই সায়রা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে।

মিশান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
এই মেয়ে এসব কি বলছে। মিশান আর বেশি ঘাঁটে না।

সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে টেবিলে রাখা খাবার গুলো পেকেট থেকে বের করে নিয়ে সায়রা কে ডাকে

-“এদিকে আয়।”

-“খাব না আমি বাসায় যাবো।”

-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে আমার পাশে এসে না বসলে তোর খবর আছে।”

ব্যস আর কি মিশানের এই চাপা ধমকে সুর সুর করে সায়রা মিশানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
মিশানও ওকে খাইয়ে দেয়।
সাথে নিজেও খায়।

-“কাল রাতেও মেয়ে টা খাবার দিতে এসে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।
তাই তোকে আজ দরজা টা বেশি খুলতে না করেছিলাম।
কিন্তু তুই তো তুই। নিজে খাল কেটে কুমির এনে এখন আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছি।
যেখানে আমি তোকে আগেই থেকেই সাবধানে করেছিলাম।”

-“আমি অতো কিছু ভাবিনি। ”

-“তা ভাববি কেন।
শুধু আমার সাথে কিভাবে রাগ দেখাবি অভিমান করবি।
এই তো তোর কাজ।”

মিশানের এই কথা টা সায়রার বেশ খারাপ লাগলো।
সত্যি তো ও নিজে সব সময় মিশান কে ভুল বুঝে।

—————–

সায়রা আর মিশান বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখলো পুরো বাড়ি অন্ধকার। এখন বিকেল হয়ে গিয়েছে কিন্তু এমন সময় বাড়ির এমন অবস্থা সায়রা ভয় পেলো তবে মিশান ঠাঁই দাঁড়িয়ে যেনো এসব কিছুই না।

-“Happy birthday”

সবাই এক সাথে বলে উঠে আর ঠিক তখনি পুরো বাড়ি আলোকিত হয়।
সায়রা এসব দেখে অবাক হয়।কিন্তু মনে অনেক খুশি হয়।
তার পর সবাই একে একে শুভেচ্ছা জানায় সায়রা কে।
সবাই অনেক সুন্দর করে সাজুগুজু করে আছে।
আর শুধু সায়রা রাতের পোষাক পড়ে উপর চাদর জড়িয়ে। সায়রার মনে মনে হেসেছে। তবে মুখে তা প্রকাশ করে নি।
তার পর কেক কেটে আড্ডা দিয়ে রাতে খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
এর মধ্যে অবশ্য মিশান একবার রুমে গিয়েছে তবে সায়রা একবারে এখন এসছে রুমে।
কিন্তু রুমে এসেই সায়রার চোখ চড়কগাছ।
মিশান সত্যি সত্যি ওই দিনের বলা কথা রেখেছে। ওই দিনের পিক টা বাঁধিয়ে এনেছে।ছিঃ কি অশ্লীল অসভ্য মানুষ।
সায়রা ধুপধাপ পা ফেলে ছবি টার সামনে গিয়ে যেই না ছবি টা ধরতে যাবে আর অমনি মিশান এসে এক ঝটকায় ওকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
সায়রা ভয়ে খামচে ধরে মিশানের পিঠ।

-“অসভ্য লোক।
এটা কেউ দেখলে কি হবে আপনি এক বারও ভেবেছেন? ”

জড়িয়ে থাকা অবস্থা বলে উঠে সায়রা।
মিশান হাসে হো হা করে হাসে। অতঃপর সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে বলে

-“তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আমাদের রুমে কেউ আসে না।
আর আমি তোর হাসবেন্ড।”

সায়রা আর কিছু বলে না। চুপ চাপ ওয়াশরুমে চলে যায়। বলে কিছু লাভ নেই এই অসভ্য মানুষ কে।
আর মিশান ছবি টার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
ছবিটায় সায়রা শরীরের কাপড় ঠিক নেই যার ফলে শরীরের বেশির ভাগ অংশ উন্মুক্ত। আর ও মিশানের গলায় মুখ গুঁজে আছে। তবে মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মিশান নিজেও সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তবে মিশান নিজেও একদম উন্মুক্ত।
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে এসে সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে

-“বেশি খারাপ লাগছে? ”

জিজ্ঞেস করে মিশান।সায়রা মুচকি হেসে মিশানের বুকে নাক মুখ ঘঁষে জানায়

-“হুম একটু একটু লাগছে।”

-“আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর আমি বিলি কেটে দিচ্ছি। ”

সায়রা কিছু বলে না চোখ বন্ধ করে।
মিশানও প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

——-

-“আপনি কেন আমায় ভালোবাসেন না,প্রহর ভাই?”

রুহির করা প্রশ্নে প্রহর মোটেও অবাক হয় না।এটা হওয়ারই ছিল।

প্রহার বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বেশ শান্ত কন্ঠে বলে

-“আড়াই মাস হয়েছে এখানে এসছো।
এর মধ্যে তুমি আমায় ভালোবাসো বলছো। কিন্তু সত্যি কি তুমি আমায় ভালোবাসো? ”

প্রহরের প্রশ্নে রুহি মাথা নুইয়ে নেয়। আসলেই তো ওতো একবারও এটা ভাবে নি। কিন্তু ওর মনে মাথায় সব সময় প্রহরের কথা ঘুরে। প্রহর এর সব দিক ভাবতে ভালো লাগে।

-“আমি জানি না।
তবে আপনার কথা ভাবতে আমার ভালে লাগে।”

-“আমার প্রশ্নের উত্তর যখন জানবে তখন না হয় ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসো।
সে দিন ফিরিয়ে দেবো না।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here