হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১২ #জান্নাত_সুলতানা

0
53

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

-“শোন বেশি লাফালাফি করবি না।
ঠিক আছে? ”

-“আমি ছোট নই।”

-“ছোট নয় তবে পাগল তুই।”

আর শোনে না সায়রা এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
মিশান ফুস করে শ্বাস ফেলে। কি লাভ হলো এতো করে বলে সেই তো দৌড়াদৌড়ি করছে।

মিশান বড় বড় কদম ফেলে ওয়াশ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
কত কাজ বাকি এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।

———

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গিয়েছে। আরভীর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে দশ কি বারো দিন হবে।
এ-র মধ্যেই সোহান তার বাবা মা কে আবারও আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে বলে বিয়ে ডেট ফাইনাল করে নিয়েছে।

আয়না রাহাতও দেশে এসছে বড় মেয়ে ইনিয়া কে নিয়ে। সামনে মাসে ইনিয়ারও বিয়ে। ছেলে ডক্টর। ছেলেরাও ঢাকাতেই থাকে। বিয়ের পর ইনিয়া দেশেই থাকবে।
আর আয়না রাহাতও আর লন্ডন যাবে না।রুহি কেও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি করা হয়েছে আরভীর কলেজ।
যদিও আরভীর সমানেই ছিল রুহি তবে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে।

———–

সামনে সাপ্তাহে বিয়ে। আজ সবাই শপিং এ যাবে। সবাই রেডি হয়ে চলে এসছে শুধু মিশান আর প্রহর বাড়ির ভিতরে থেকে এখনো আসে নি।
সাদনান মির্জা একটা গাড়ি ডাইভিং সিটে বসে আছে তার পাশে আয়ান চৌধুরী। পেছনে মাইশা,প্রিয়তা বসে আছে। আরও একজন বসা যাবে তবে রুহি, আরভী,সায়রা ওরা কেউ এখনো বসে নি গাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ওরা।
আয়ান চৌধুরী এবার বিরক্ত হলেন। ডাকলেন আরভী কে

-“ওদের ডেকে নিয়ে আয়তো।”

-“আচ্ছা।”

আরভী কথা শেষ বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মিনিট দুই এক এর মাথায় আরভী সহ মিশান প্রহর সবাই এলো।
আরভী সোজা গিয়ে মাইশার আর প্রিয়তা মাঝ খানে গিয়ে বসে পড়ে।

-“তুই ওদের নিয়ে আয়।”

সাদনান মির্জা মিশান কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে।
মিশান মাথা নাড়ে যার মানে আচ্ছা।
সাদনান মির্জাও গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে যায়।প্রহর গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে সায়রা পেছনে বসে আছে
মিশান এসে ধপ করে সায়রার পাশে বসে গাড়ির দরজা টা ধড়াম করে লাগিয়ে দেয়।
এদিকে রুহি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে পেছনে সায়রার পাশে বসবে না-কি সামনে প্রহরের পাশে।

-“কি এখনো দাড়িয়ে আছিস যে?”

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান। সায়রা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই মিশান সায়রা হাত চেপে ধরে রুহি কে আবারও বলে

-“সামনে বসে পড়।”

-“হুম।”

বলেই রুহি গিয়ে প্রহরের পাশে বসে পড়ে। প্রহর এক বার রুহির দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টাট দেয়।

সবাই কাপড় দেখছে। সবাই বললে ভুল হবে। ছেলেরা সবাই কেউ চেয়ারে বসে কেউ ফোনে কথা বলছে কেউ
বা গেমস খেলছে। শুধু মহিলারা সব পছন্দ করছে।
মিশান নেই এখানে মিশান কোথাও একটা গিয়েছে।
বারোটা নাগাদ সবাই মার্কেট এসছে আর এখন সন্ধ্যা ছয়টা র বেশি সময় বাজে। সব কেনাকাটা করা শেষ।
এখন সবাই রেস্টুরেন্টে এ যাবে খাবার খেয়ে তার পর বাসায় চলে যাবে।

————-

-“মা আমার কফি টা একটু কষ্ট করে কাউ কে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিও।”

প্রহর কথা টা বলার সময় রুহির দিকে তাকায় একবার।অতঃপর প্রহর সিঁড়ি দিয়ে উপর নিজের রুমে চলে যায়।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসছে রাতে আর কেউ খাবার খাবে না তাই এখন কিছু কিছু কাপড় এখন দেখে নিবে।
প্রহরের বলা কথায় মাইশা কিছু বুঝলো কি? হয়তো।

-“শোন রুহি।
একটা কফি করে প্রহর কে দিয়ে আয় না মা।”

প্রহর যখন কথা টা বলেছে তখনি রুহির আগমন ঘটেছে।

-“আচ্ছা।”

রুহির জোর পূর্বক হেসে বলে। প্রিয়তা মির্জা অবশ্য নিজে দিতে চে্য্য়ে ছিল তবে মাইশা যেতে দিলো না। রুহি নিজেও পারবে জানায়। তাই তিনিও বেশি ঘাটেঁ না। অতঃপর রুহি কিছু বিরবির করতে করতে রান্না ঘরে চলে যায়।
তার পর কফি বানিয়ে নিয়ে প্রহর এর রুমে এর উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়।তবে ওর ভিষণ ভয় করছে।
কারণ টা হলো ও কাল থেকে এক বারও প্রহর এর সাথে কথা বলে নি উল্টো কালকের আগের দিন কলেজে এক ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করছে।
আর সেই ছেলে ওকে এনে কালকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
আবার কাল ফোন দিয়ে ছিল রুহি ফোনে তখন কথা বলছিল আর ঠিক তখনি প্রহর ফোন দিয়ে মোবাইল ওয়েটিং এ পেয়েছিল।
প্রহর এটা নিয়ে ওকে কিছু বলে নি তবে রুহির নিজের ভয় সাথে কিছু টা অপরাধ বোধ করছে।
তাই নিজ থেকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।ছয় মাস আগে যখন প্রহর ওকে মেনে নিয়ে ছিল তখন ও নিজেই বলে ছিল কখনো কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানাবে না। কখনো প্রহর এর কষ্ট হয় এমন কিছু করবে না।
কিন্তু ও তো সে সব কথা রাখতে পারছে না।
ছেলে ফ্রেন্ডও বানিয়েছে।আবার আজ এক দিন এক রাত ধরে কথা না বলে প্রহর কে কষ্টও দিচ্ছে।
যদিও ছেলে টার সাথে ও ইচ্ছে করে ফ্রেন্ডশিপ করে নি। তবে ছেলে টার মা কিছু দিন আগে মা-রা গিয়েছে সেই জন্য ওর খারাপ লেগেছে এসব শুনে তাই ছেলেটার সাথে এমনি কথা বলে যাতে ছেলে টা একটু স্বভাবিক হয়।

রুহি এসব ভাবতে ভাবতে এসে প্রহর এর রুমে সামনে দাঁড়াল।

-“কফি।”

প্রহর বিছানায় বসা থেকেই বলে উঠে

-“রুমে এসে দিয়ে যাও।”

রুহি পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে কফি টা বিছানার পাশে থাকা টেবিলে রেখে দিয়ে চলে আসতে গিয়ে প্রহর এর কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

-“বলেছিলাম না।
সব তোমার আবেগ মিলল তো?”

কথা টা বলতে বলতে বিছানা হতে নেমে দাঁড়ায় প্রহর।
রুহি কিছু বলছে না। কারণ প্রহর যা বলছে সব টা মিথ্যা। প্রহর ওর আবেগ না ভালোবাসার,শখের।
তবে কিছু বলে না রুহি মন বাগানে অভিমান জমছে।
আজ দেড় বছর ধরে ওর পেছন পেছন ঘুরছে আর এই লোক এখনো বলছে আবেগ থেকে এসব করছে।
যদি আবেগ হতো তাহলে নিশ্চয়ই এতো দিন ওনার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে সব সময় ওনার দরজা এসে দাঁড়াতো না। ওনাকে ভালোবাসে, ভালোবাসে বলে পাগলামি করতো না।

-“তোমার আবেগ, মোহ যাই হই আমি।
কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসায় দিয়ে তোমাকে আমি আমার জীবনে আবদ্ধ করে নেবো।
আর সেটা তোমার ইচ্ছেকৃত হোক বা অনিচ্ছেকৃত। ”

প্রহরের কথা রুহির মন শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। সাথে অনেক টা অবাক হলো। কেন না প্রহর রুহির সাথে রিলেশনশিপ এ থাকলেও কেমন আলগা আলগা থাকতো।রুহি বেচারি বেশি বকবক করতো।
আর প্রহর আচার আচরণ দেখে কখনো মনে হয় নি প্রহর এমন ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ হতে পারে।

———-

-“এটা কিসের পেকেট ?আর এটা কখন নিয়েছেন আপনি?
আমি তো দেখলাম না।”

সায়রা সোফায় থাকা একটা পেকেট হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান কে।
মিশান ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“আগেই নিয়ে গাড়িতে পেছনে রেখে দিয়ে ছিলাম তাই দেখিস নি।
আর ভিতরে কি আছে সেটা না হয় নিজেই দেখ।”

সায়রা মিশানের অনুমতি পেয়ে ঝটপট পেকেট টা খুলেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
সাথে লজ্জাও পেলে তড়িঘড়ি করে আবারও আগের স্থানে রেখে দেয় পকেটে থাকা জিনিস গুলো। অতঃপর আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“আপনি মনে হয় ভুল করে করোর জিনিস নিয়ে এসছেন।”

মিশান বালিশ সহ ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে এসে সায়রার পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে নিজের বুকে আগলে ধরে।
গলায় নাক ঘঁষে জানায়

-“ভুল না ইচ্ছে করে এনেছি।
আর এটা তুই এখন পড়বি।”

-“না,প্লিজ।”

ফট করে না করে সায়রা।

তবে মিশান শোনে না বেশ আদুরে কণ্ঠে আবদার করে

-“জাস্ট একবার।
প্লিজ।”

ব্যস সায়রা গলে যায়।তবে এটা কি আদৌও পড়ে মিশানের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে ও?
কি অসভ্য আবদার। পরক্ষণেই সায়রা ভাবে পুরো মানুষটাই তো অসভ্য তো আবদার গুলো তো তেমন অসভ্যই হবে।
এসব ভেবেই সায়রা পেকেট থেকে মিশানের আনা ড্রেস টা নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।

#চলবে…

[ রিচ কমে গিয়েছে গল্পের😞 আগ্রহ পাইনা গল্প লিখতে।ভাবছি তাড়াতাড়ি সবার বিয়ে দিয়ে গল্প শেষ করে দেবো।😊 ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here