হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১৬ #জান্নাত_সুলতানা

0
132

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“মিশা,,,

পুরোটা শেষ করার আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা টোলে পা বেঁধে সায়রা নিচে পরে যায়।মিশান মাত্র দরজার ছিটকিনি খোলতে যাচ্ছিল তবে আর খোলা হয় না।দৌড়ে এসে সায়রা কে নিচ থেকে কোলে তোলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে পাগলের মতো করে জিজ্ঞেস করতে থাকে কোথায় ব্যথা পেয়েছে পরে গেলো কি করে।
এসব জিজ্ঞেস করতে করতে মিশানের নজর গেলো সায়রার গলার কাছে হাড্ডি টার কাছে লাল হয়ে ফোলে উঠছে।
মূলত অতিরিক্ত চিকন হওয়ার কারণ গলার হাড্ডি গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সায়রা চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো

-“আমি ঠিক আছি।
পেটে ক্ষুধা। ”

-“তুই বস।”

কথা টা বলেই মিশান গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা মলম নিয়ে আসে তার পর সেটা খুব সাবধানের সহিতে সায়রার গলার কাছেটায় লাগিয়ে দিয়ে মলম টা আবার যথা স্থানে রেখে দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে সায়রা কে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো প্রতি বার সায়রা কে খাইয়ে দেওয়ার সময় নিজেও খেয়ে নেয়।কিন্তু আজ শুধু সায়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে।

-“আপনিও খেয়ে নিন না।”

মিনমিন করে বলে উঠে সায়রা। কিন্তু মিশান কিছু বলে না। তাই দেখে সায়রা এবার কান্না পায়।
অর্ধেক খাবার শেষ হয়েছে কেবল সায়রা তখন মিনমিন করে জানায়

-“আমি আর খাব না?”

মিশান বউয়ের দিকে একবার শান্ত চোখে তাকায়।তার পর কিছু না বলে খাবার থালাতে পাশে থাকা পানির গ্লাস হাতে পানি ঢালতে নিলেই সায়রা মিশানের হাত ধরে আটকে দেয়।
মিশান সে দিকে একবার তাকি সায়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

-“হাত সরা।”

-“না।”

কথা নাকচ করে সায়রা অতঃপর মিশানের হাতে থাকা খাবার থালা নিজে হাতে নিয়ে সে টা থেকে ভাত মেখে মিশানের মুখের সামনে ধরে বলে উঠে

-“খেয়ে নিন না, প্লিজ।

কণ্ঠে করুন। সাথে আবদার। এমব আবদার কি করে ফিরিয়ে দেওয়া যায় মিশান জানে না। ঘাঁটতে চায় না বেশি।
রাতও অনেক বেড়েছে বউয়ের রেস্ট দরকার। তাই কথা বাড়ায় না চুপ চাপ মুখ খুলে।
সায়রার ছোট ছোট হাতের সাহায্য খাবার পুরে দেয় মিশানের মুখে।

খাবার শেষ মিশান নিজে হাত ধুয়ে বউ কে হাত ধুয়ে দেয়।
বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট অন করে গিয়ে বউয়ের থেকে অনেক টা দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে।
সায়রার বুঝতে পারছে জামাই তার রাগ বেশি করেছে।সায়রা মিশানের দিকে ফিরে দু’হাতে সাহায্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান হাত সরিয়ে দেয়।কিন্তু সায়রা ফের রাখে।চার পাঁচ বার এমন করার পর মিশান এবার বিরক্ত হয়। হাত ধরে বউ কে নিয়ে নিজেও উঠে বসে দাঁত কটমট করে বলে উঠে

-“কি সমস্যা?
শান্তিতে ঘুমুতেও দিবি না?”

-“সরি।
আর কখনো এমন করবো না।
খাবার ঠিক মতো খাব।”

বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বলে উঠে সায়রা
বউয়ের এমন কথায় মিশানের রাগ তো পরে।
তবুও মুখে রাগি ভাব রেখে আবারও বলে উঠে

-“এটা তো রোজ বলিস।
কখনো মনে থাকে কি?”

-“এবার থেকে মনে থাকবে সত্যি।”

-“ঘুমিয়ে যা।”

কথা শেষ মিশান কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে।
কিন্তু সায়রা কম্বল এর নিচ দিয়ে মিশানের শরীরের উপর নিজের অর্ধেক শরীর এলিয়ে দেয়।
মিশান কোনো নড়াচড়া না করেই চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠে

-“আবার কি চাই?”

-“আদর।’

-“ডক্টর না করেছে।
শরীর দূর্বল।”

-“আমি পারবো।”

আর কিছু বলে না মিশান।
ঝট করে বউ কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিলো।
নিজের এক হাত বউয়ের গালে ঠেকিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে

-“সরি সুইটহার্ট।
আমি তখন ওভাবে বলতে চাই নি।
কিন্তু কি করবো বল?
তুই কেন বুঝিস না। তোর জন্য আমাদের সবার কতটা চিন্তা হয়।”

-“আ’ম সরি।
আর এমন করবো না। ”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান সায়রা কে আরও একটু টেনে নিজের কাছে এনে গলায় মুখ গুঁজে চুমু আঁকে সেখানে।
সায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।

——————

আরভী দাঁড়িয়ে আছে নিজের বেলকনিতে।সামনে দাঁড়িয়ে সোহান।

-“আপনি এতো রাতে পাইপ দিয়ে কেন আসতে গেলেন সোহান ভাই?
আমাকে বললে হতো দরজা খোলে দিতাম।”

ফিসফিস করে বলে আরভী।কারণ রুমে রুহি, ইনিয়া ঘুমিয়ে আছে।

আরভীর এমন বোকা বোকা কথায় সোহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।
এই মেয়ে কি সত্যি বোকা কিছু বোঝে না?
বিয়ের আগের দিন রাতে বর যদি বউয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য দরজা দিয়ে আসে তা হলে বাড়ি মানুষ আত্মীয় স্বজনরা কি চোখে দেখবে।

-“তোকে এতো কিছু ভাবতে বলেছি?
চুপ চাপ চাদর টা সরা।
আর হাত বের কর।”

সোহানের এমন কথায় আরভী চোখ বড় বড় করে বলে উঠে

-“আপনি পাগল কত ঠান্ডা বাহিরে দেখছেন।
আর আপনি কিছু পড়েন নি কেন?”

সোহান শুধু একটা কফি কালার সার্ট পড়ে আছে।
সোহান আরভীর কথায় কান দেয় না।
নিজে আরভীর হাত টেনে আনে চাদর এর নিচ থেকে।
নিজে পরিহিত ট্রাউজার এর পকেট হতে একটা মেহেদী বের করে আরভীর লাল টকটকে মেহেদী রাঙা হাতের মাঝ খানে গোল বৃত্ত টায় সুন্দর করে নিজের আর আরভীর নামের প্রথম অক্ষর লিখে দেয়।

-“এটা কেন ফাঁকা রেখেছিস?”

-“রুহি বলেছিল লিখে দিতে।
আমি না করেছি।”

সোহান ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরভী দিকে কৌতুহল নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে

-“কেন?”

-“আমি জানতাম আপনি আসবেন। ”

মুচকি হেসে বলে আরভী।
সোহান খুশি হয়। তার পিচ্চি বড় হয়ে গিয়েছে।
জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তবে নিজেই কোনো একদিন বলেছিল বিয়ের আগে আর কখনো কিছু চাইবে না।
কথার খেলাফ হয় এমন করতে চায় না সোহান।

-“ঘুমি পড়।
কাল তো আবার সারা দিন অনেক ধকল যাবে।”

কথা টা বলেই সোহান ফিরে যাবার জন্য পা বারাতে আরভী পেছন থেকে ঝাপটে ধরে সোহান কে।
সোহান স্তব্ধ। এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা?
নিজেই নিজের হাতে চুম টি কাটতে গিয়ে ভুল বসত আরভীর হাতে পরে যায়।
ব্যথাতুর শব্দ করে আরভী ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় আরভী।
অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে উঠে

-“এটা কি জড়িয়ে ধরার প্রতিদান?”

সোহান তড়িঘড়ি করে হাত টেনে ধরে আরভীর।
অস্তির হয়ে বলতে থাকে

-“ইস, আমি বুঝতে পারি নি ওটা তোর হাত ছিল।
সরি।”

-“হুম।
একটা? ”

-“হুম। ”

সোহান দেড়ি করে না আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আরভীর হাতের লাল হয়ে যাওয়া জায়গায়।

—————-

মিশান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
এতো সকালে তো তার বউ ঘুম থেকে উঠে না।
নামাজ শেষ আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।আর উঠে নাস্তা করার মিনিট খানেক আগে।
আর আজ সাত টা বাজে বিছানায় নেই।
ব্যাপার টা বড় অদ্ভুত।

এসব ভেবেই মিশান বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই কেউ খট করে দরজা খোলে রুমে আসে।
মিশান তো চোখ বড় বড় করে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু সামনের নারীর সে দিকে পাত্তা না দিয়ে খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে সোফা থেকে তোয়ালে এনে মিশানের হাতে দিয়ে কোমরে শাড়ীর আঁচল গুঁজে বিছানা গুছাতে গুছাতে বলে উঠে

-“এখনো বসে আছেন যে?
ওয়াশ রুমে গরম পানি রাখা আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ফ্রেশ হয়ে আসুন। ”

-“তুই?”

-“আপনার বউ।”

-“কিন্তু তুই তো আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠিস?”

-“এখন থেকে সকালে উঠবো।”

মিশান আর কিছু বলার আগেই সায়রা ওকে ঠেলেঠুলে ওয়াশ রুম পাঠিয়ে দেয়।

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here