#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“আচ্ছা আমি কি ঘুমিয়ে আছি?”
মিশান মুখের খাবার টা শেষ করে জিজ্ঞেস করে।
সায়রা মিশানের মুখের আবারও খাবার পুরে জবাব দেয়
-“না মিস্টার চৌধুরী।
আপনি জেগে আছেন।
আর বউয়ের হাতে খাবার খাচ্ছেন। ”
মিশান আর কিছু বলে না। বউয়ের হাতে চুপ চাপ খাবার খেয়ে নেয়।
মিশান বুঝতে পারছে কাল রাতের ডোজ টা ভালোই কাজে দিয়েছে।
-“শুনুন আমি এখন আরভীর কাছে যাচ্ছি।
রুমে কখন আসতে পারবো জানি না।
আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিস সোফায় রেখে দিয়েছি।”
মিশান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সায়রা এঁটো প্লেট নিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
মিশান আর বসে থাকে না।
নিজেও বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।
কাল রাতের পর আর একবারও ওই দিকে যাওয়া হয় নি। অবশ্য কাজের জন্য সব লোক আছে।
শুধু একটু আধটু দেখিয়ে দিলেই হয়।
আর তাছাড়া প্রহর, আয়ান চৌধুরী, সাদনান মির্জা সাথে প্রহর আর মিশানের কিছু ফ্রেন্ডও আছে।
ওরা অবশ্য কাল সকালেই এসছে।
যদিও এতো হুলস্থুলের মাঝে কারোর সাথেই তেমন কথা হয় নি।
আর বউ তার কোনো ছেলের সাথেই কথা বলে না।
সেই ছোট্ট বেলার কথা আজও রেখে দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান ছাঁদে চলে আসে।
অতঃপর সবার সাথে কাজে যোগ দেয়।
—————–
বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ। কেউ হাত গুটি বসে নেই।সোহানদের নিমন্ত্রিত মেহমানগন সবাই কম বেশ এসে পড়েছে।
সকলকেই নাস্তা পানি দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে উপর থেকে মিশানের ডাক এলো উপরেও কিছু নাস্তা দিয়ে আসার জন্য।
কারোর হাত ফাঁকা নেই প্রিয়তা মির্জা মেয়ে কে ডেকে এক টা ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন
-“এগুলো ছাঁদে একটু দিয়ে আয়।”
সায়রা কিছু বলে না চুপ চাপ মাথা নেড়ে উপর ছাঁদের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
কিন্তু ছাঁদে আর যেতে হয় না।
প্রহর নেমে এসে বোনের হাত থেকে ট্রে নিয়ে বোন কে আবার নিচে পাঠিয়ে দেয়।
মূলত মিশান পাঠিয়েছে প্রহর কে।
কারণ এখন নিচে কোনে মহিলা যে আসবে না তা বেশ আন্দাজ করতে পেড়ে প্রহর কে পাঠিয়েছে উপর তার বউ যে নো না আসে।
কারণ সেখানে কম বেশ অনেক ছেলে আছে বাহিরের।
————————
আরভী মিশান কে ঝাপটে ধরে কেঁদেই চলেছে।
বিয়ের কাজ একটু আগেই শেষ হয়েছে।
যদিও আরভী আজ কুমিল্লা যাবে না।
কিন্তু ওর কান্না কেন করছে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না।
এবার রুহি নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এলো ভিড় ঠেলে।
আরভীর হাতে চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলে
-“এই তুই কান্না কেন করছি?
তুই তো আজ শশুর বাড়ি যাচ্ছিস না তবুও কেন কান্না করছি?”
রুহি কথা টা ফিসফিস করে বললেও সায়রা আর ইনিয়া পাশ থেকে শুনে ফেলে।
ইনিয়া বোন কে টেনে নেয় সাইডে।
আরভীও ততক্ষণে কান্না বন্ধ করেছে। সাথে লজ্জাও পাচ্ছে সত্যি তো।
তবে কোনো এক অজানা কারণে মনে হচ্ছে আজ থেকে সে এ বাড়ির মেহমান।
আয়না মেয়ে কে বকাঝকা করে।
সায়রা আরভী কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।
————
-“শোন আরভী সোহান ভাইয়া এলে ওনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবি।”
-“এই তুই এসব কি বলছি?”
ইনিয়া রুহি কে শাড়ী পড়াতে পড়াতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
-“কেন তোমার শাশুড়ী আর কয়েকজন মহিলাও তো বলাবলি করছিল এটা নাকি নিয়ম।”
-“তুই চুপ করবি?
আর এসব আজগুবী কথা যেনো তোর মুখে না শুনি।”
দু বোনের কথার মাঝে সায়রা বলে উঠে
-“তুই বরং প্রহর এর পায়ে হাত দিয়ে,,,
-“তুমি চুপ করো।
আমাকে লজ্জা না দিলে তোমার পেটের খাবার হজম হয় না।”
সায়রার পুরো কথা না শুনেই বলে উঠে রুহি।
আরভী ফিক করে হেসে দেয় রুহির কথায়।
সায়রা আর ইনিয়াও হাসে। রুহি এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
————
সারা দিনের জমজমাট পরিবেশ টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে, বাড়ি একদম শান্ত কোনো সারা শব্দ নেই।কিছু মেহমান রয়েছে কিছু বিদায় নিয়েছে।
রাত এগারোটা বাজে এখন। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।
সোহান ফ্রেশ হয়ে এসে আরভী কে আদেশের সুরে বলল
-“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
নামাজ পড়তে হবে। ”
-“আচ্ছা।”
আরভী বাধ্য মেয়ের মতো বলে।
উঠে ওয়াশরুম চলে যায়।
সোহান মুচকি হাসে।
একটা জায়নামাজ তাই এটা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একটু সামনে এক পাশে।
আরভী ফ্রেশ হয়ে এলে বউ কে ডেকে এনে নিজের কিছু টা পেছনে দাঁড়াতে ইশারা করে।
আরভীও দাঁড়ায়।
নামাজ শেষ সোহান বিছানার এক পাশে পা ঝুলিয়ে বসে।
আরভী তখন জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের গহনা গুলো খোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে সব খোলে নিলেও কোমরে বিছা টা খোলতে সক্ষম নয়।
সোহান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে সেটা খোলে দেয়।
কিন্তু নিজের অবাধ্য চোখ জোড়া আটকে যায় আরভীর ঢেউ খেলানো কোমরে।
না চাইতেও চুমু আঁকে সেথায়।
আরভী খামচে ধরে সোহানের চুল।
সোহান কিছু একটা ভেবে ছেড়ে দেয় আরভী কে উঠে দাঁড়িয়ে।
ট্রাউজার এর পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট বক্স বের করে।
আরভীর সামনে খোলে ধরে।
একটা ডায়মন্ড এর রিং।
-“আমার এতটুকু সামর্থ্য রে পিচ্চি।
তবে তোর কাবিনের টাকা সব টা জোগাড় আছে।
কাল বাসায় গিয়ে দিয়ে দেবো।
আর এটা আজকের রাতের উপহার।
কিন্তু আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো জীবনে অর্থে দিক দিয়ে তোকে খুশি রাখার জন্য।”
সোহানের পুরো কথা শুনে না আরভী। তার আগেই নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।
-“আমার এসব চাই না।
শুধু আপনার ভালোবাসা পেলেই হবে সোহান ভাই।”
সোহান আরভীর বাম হাত টায় রিং টা পড়িয়ে দিচ্ছিল।
কিন্তু ভাই ডাক শোনে এক সেকেন্ড থেমে এক ধাক্কা সেটা অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে।
আরভী কে নিজের শরীর থেকে আলগা করে দিয়ে ঝট করে কোলে তোলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরভী উপর নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে নিজের বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা মুখের সাইডে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে উঠে
-“আজকের পর যেনো আর কখনো ভাই ডাকতে না পারিস তার ব্যবস্থা করি?
কি রাজি?”
আরভী এতোক্ষণে বুঝতে পারলো সোহন হুট করে এমন করার কারণ।
আরভীর হাত জোড়া সোহানের বুকে ঠেকানো ছিল।
তবে মূহুর্তের মাঝে তা পিঠে নিয়ে হালকা উঁচু হয়ে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।
সোহান যেনো তার উত্তর পেয়ে গেলো।
গলায় মুখ গুঁজে পাগলের মতো চুমু আঁকে সেখানে।
আরভী কাঁপছে ভীষণ বাজে ভাবে কাঁপছে।
চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের পাতা গুলো থেকে থেকে নড়ছে।
চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া কেমন শুকিয়ে আছে।
সোহানের আর এক সেকেন্ডও দেড়ি করে না।
আরভীর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাহায্য তা মুখে পুরে নেয়।
গভীর হয় স্পর্শ।
আরভী তলিয়ে যাচ্ছে সোহানের ভালোবাসার সমুদ্রের।
এই ভালোবাসার বাঁধন ভেঙ্গে চাইলো বেরোতে পারবে না তারা দুজন।
আর হয়তো চায়ও না তারা কেউ এতো শক্ত বাঁধন ভেঙ্গে ফেলতে।
———–
-“এই তুই ওখানে কি করছিস?”
মিশান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে সায়রা কে।
সায়রা মিশান কে দেখেই আলমারি থেকে তড়িঘড়ি করে কিছু একটা বের করতে নিয়েও আবার তা যথাস্থানে রেখে পেছনে ফিরে আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“কই কিছু না তো।
আপনি,,,
-“কফি লাগবে।”
সায়রা কে সবটা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আদেশের সুরে বলে উঠে মিশান।
সায়রা অসহায় ফেস করে তাকিয়ে মিশানের দিকে।
এখন কিছুতেই নড়বে না ও।
কিন্তু মিশান কে সেটা বুঝতে না দিয়ে মিনমিন করে জবাব দেয়
-“আপনি একটু কষ্ট করে আজ নিজে বানিয়ে নিন না।
প্লিজ। ”
কি সুন্দর আবদার ফেলে দেওয়া যায় কি।
মিশানও ফেলতে পারে না।
চুপচাপ তোয়ালে সোফায় ফেলে হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
সায়রা বুকে হাত দিয়ে ফুস করে শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর পেছন ফিরে আবারও আগের নেওয়া অতি গোপনীয় জিনিস টা হাতে নিয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“নিজে যেমন অসভ্য চিন্তা ভাবনাও তেমন।
কিন্তু অসভ্য জামাই আজ আপনার ঘুম আমি হারাম করে দেবো।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]