হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১৮ #জান্নাত_সুলতানা

0
137

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“সায়রা?”

মিশান রুমে ঢুকে বউ কে রুমে না দেখে ডাকে সায়রা কে।
সায়রা ওয়াশ রুম থেকে উত্তর দেয়

-“হ্যাঁ, আসছি।”

মিশান আর কিছু বলে না কফির কাপে চুমুক বসাতে বসাতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে তাকায়।
বাড়ি টা শহর থেকে কিছু টা দূরে তবে অতো টাও দূরে নয়।
মাইশা চৌধুরী আর প্রিয়তা মির্জার আবদারেই নতুন বাড়ি শহর থেকে দূরে বানানো হয়েছে।চার দিকে সুন্দর করে বাউন্ডারি আর তার ভিতরে নানা রকমের গাছ।
আর তার মধ্যে এই দোতলায় একটা উপর নিচ মিলিয়ে দশ রুমের একটা বাড়ি। তার পেছনে রয়েছে গেস্ট হাউজ।
বাড়ি টা বেশ সুন্দর।
যে কারোর নজর এই বাড়ি টার উপর না চাইতেও পড়বে।
বাড়ি টার ঠিক সামনে রয়েছে শান বাধানো একটা পুকুর। দেখতে অনেক সুন্দর পুকুর টা।কিন্তু এখন মিশানের রুম
উপর থেকে চাঁদের আলোয়ে এখন আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
হাতের কফি তার ঠান্ডা হয়েছে অনেক আগেই।
মিশান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে দিকে।
কিন্তু দৃষ্টি তার সে দিকে থাকলে সে বেশ ভালো করেই টের পেয়েছে বউ তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে।
শীতের মৌসুম না হলে মিশান এখন বউ কে নিয়ে সত্যি বাগানে যেতো।

-“চাদর নিয়ে এসছিস তো?”

মিশান কথা টা বলার অনেকক্ষণ ধরে কোনো উত্তর আসছে না। মিশানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
শুধু জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার শব্দ হচ্ছে।
মনে হচ্ছে পেছনে দাঁড়ানো নারী টা বেশ ঘাবড়ে আছে।

মিশান এবার কফির মগ টা রেলিং এর উপর রেখে পেছন ফিরে তবে কিছু বোঝার আগেই সায়রা মিশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান স্তব্ধ।
কি ছিল একটু আগে ওটা।
আর ভাবতে পারে না মিশান।না চাইতেও সায়রার উন্মুক্ত পিঠে হাত রাখে।
আর সায়রা আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার বাঁধন।
যেনো নিজের শরীর টাকে লুকাতে চাইছে চোখ বন্ধ করে।
কিছু টা কাকের মতো। কাক যেমন কিছু লুকানোর সময় চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে আমি দেখতে পাচ্ছি না মানে কেউই দেখতে পাচ্ছে না।
সায়রার ঠিক সেই দশা।

-“তুই,,

-“প্লিজ কিছু বলবেন না।
আমার এমনিতেই কেমন লাগছে।”

-“আচ্ছা বলবো না।
তবে না হয় করে দেখাই।”

নেশাতুর কণ্ঠে কথা টা বলেই মিশান সায়রা কে আরও কিছু টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়।
সায়রা এখন শুধু মিশানের গলায় ঝুলে আছে।
মিশান এভাবে থেকেই সায়রা কে নিয়ে ধীরে পায়ে হেঁটে হেঁটে রুমের ভিতর প্রবেশ করে।

-“এক বার দেখবো?”
প্লিজ। ”

-“না।
লাইট অফ করুন। ”

মিশান শোনে না কিছু।
নিজের শরীর থেকে আলগা করে সায়রা কে মূহুর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বিছানায়।
সায়রা নিজে কে লুকাতে ব্যস্ত। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো মিশান বউয়ের এই রুপে পাগল, উন্মাদ। সায়রা ততক্ষণে আবারও এসে নিজের লজ্জা লুকাতে স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে।
তবে মিশান ভাবছে একটা সর্ট পাতলা ফতুয়া যে তার বউ কে এতো টা আকর্ষণীয় লাগবে মিশান কল্পনাও করে নি।
সুন্দর শরীরে কালো রং এর এই ড্রেস টা যে এতো টা মোহনীয় লাগবে।
মিশান এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠে

-“এতো সুন্দর মূহুর্তে কি লাইট টা অফ করলে সেটা উপলব্ধি করা যাবে?”

সায়রা কতক্ষণ চুপ থাকে।
তার পর জোরে জোরে কয়েক বার শ্বাস টেনে বলে উঠে

-“রাজি, যদি।
আপনিও আমার কথায় রাজি হন তবে।”

মিশানের চোয়াল শক্ত হয়।
সায়রার পিঠে থাকা হাত মুঠোবন্দি করে নামিয়ে নেয় সেখান থেকে।
শক্ত হাতে বাহু খামচে ধরে বউয়ের।

-“তুই ভালো করেই জানিস তোর শরীরের অবস্থা।”

তার পর একটু চুপ থেকে আবারও বলে উঠে

-“যা ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।
এই ঠান্ডায় এসব পড়তে হবে না।”

তার পর বউ কে ছাড়িয়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
সায়রারও অভিমান জমে মনে।
চুপ চাপ রাতের পোষাক পড়ে এসে লাইট অফ করে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
এক টা বাচ্চাই তো।এমন করার কি আছে সায়রা বুঝতে পারছে না।
কিন্তু ও তো আর জানে না।বাচ্চা নিলে হয় বাচ্চা নয় ও নিজে যে কোনো এক জন থাকবে।
সেই ভয়ে মিশান বাচ্চা নিতে রাজি না।

—————

সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে। শুধু সায়রা আর আরভী ছাড়া।সায়রা গিয়েছে আরভীর জন্য নাস্তা দিতে। সোহান হালকা নাস্তা করে ডাইনিং টেবিল ছাড়ে।
হন্তদন্ত হয়ে উপর চলে গেলো।
রুহি কলেজ যাবে তাই একবারে রেডি হয়ে এসছে।
প্রহর এর আজ এক টা পরীক্ষা আছে তাই সেও নাস্তা শেষ গাড়ি চাবি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু প্রিয়তা মির্জা আদেশে রুহি কেও সাথে নিতে হলো।
প্রহর মায়ের কথা মতো রুহি কে সাথে নিয়ে গেলো।

———-

-“তুই কি রে?
মেয়েটার কি অবস্থা করেছিস?”

-“তুই এসব রাখ বইন।
আগে বল ওর জন্য কি ডক্টর আনবো?
নাকি আমি গিয়ে ফার্মেসি থেকে ঔষুধ নেবো?”

সায়রা কে সোহান করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
সায়রার হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন অবস্থা থেকে তবে আরভীর দিকে নজর দিতেই দেখলো ও ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
তাই আবার হালকা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠে

-“আমার বোন টা ছোট তোর সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার ছিল।”

সায়রা কথা গুলো গম্ভীর কণ্ঠে বলেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। সোহান গিয়ে বউয়ের পাশে বসে নিজে আরভীর মুখে খাবার দেয়।
সোহান জানে সায়রা কিছু একটা ব্যবস্থা তো করবেই।ঠিক হলো সোহানের ভাবনা। সায়রা
ফিরে এলো মিনিট দুই এক এর মাথায় হাতে কিছু ঔষুধ।
ঔষুধ গুলো সেন্টার টেবিলে রাখে।

-“খাবার শেষ সব গুলো থেকে এক টা এক টা ওষুধ খাইয়ে দিবি।”

কথা শেষ আরভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।

সোহানের ভালোবাসা আরভী মন নিতে পারলেও দৈহিক গঠন দিয়ে সোহানের ভালোবাসা আরভী নিতে পারে নি।
প্রথম হয়তো তাই এতো টা কষ্ট পেয়েছে।
সোহানের সেই রাত থেকে দু চোখ এর পাতা আর এক করতে পারে নি।
তার ভালোবাসার মানুষ টা যে পাশে শুয়ে ছটফট করছে তাহলে সে কি করে ঘুমুবে।
আযানের সাথে সাথে বউ কে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে। সাথে নিজেও করেছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
কাকে বলবে।
প্রহর সে তো বিয়েই করে নি।
আর মিশান?
সে টা কি ভাবে বোনের এসব কথা ভাই কে কি করে বলবে।
আর সায়রা কেও ডাকতে পারে নি।
এতো সকালে সায়রা কে ডাকতে গেলে মিশান তো শুনতো সাথে বাড়ি সবাই।
এর মধ্যে আরভী একটু ঘুমিয়ে ছিল।
তাই নাস্তার টেবিলে ডাক পড়ার সাথে সাথে নিচে গিয়ে বলছে আরভী ঘুমিয়ে আছে।
আর নিজে সায়রা কে ফোনে মেসেজ দিয়ে বলেছিল যাতে আরভীর রুমে একবার আসে আর নিজেও অর্ধেক নাস্তা করে ছুটে আসে রুমে।

—————

-“কোনো ছেলের সাথে কথা বলবা না।
বুঝচ্ছো?”

-“একশ বার বলবো।
আপনার কি?”

-“এই মেয়ে বেশি বলছো কিন্তু।”

-“তো কি করবেন?
আমার যার সাথে ভালো লাগে তার সাথে কথা বলবো তাতে আপনার কি?”

কথা টা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে রুহির ঠোঁট প্রহর নিজের ঠোঁটের সাহায্য আঁকড়ে ধরে।
রুহির ব্যাপার টা বুঝতে একটু সময় লাগলো।
যখন বুঝতে পারলো ততক্ষণে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে প্রহর এর বুকে ধাক্কা দিতে সাথে থাপ্পড় তো আছে।
তবে প্রহর এর মতো সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষের কাছে এসব নিছক তুচ্ছ।
প্রহর আরও কিছু টা নিজের সন্নিকটে আনে রুহি কে মাথার পেছনে হাত দিয়ে।
অন্য হাত কোমরে।
নিজের ইচ্ছে মতো সময় নিয়ে ভালোবাসার মানুষটার অধরে ভালোবাসা পরশ দেওয়ার পর নিজ থেকে সরে আসে। রুহি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
যেনো আর কিছুক্ষণ থাকলে দম আটকে মরে যেতো।
চোখ চিকচিক করে।
প্রহর নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা রুহির ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলে উঠে

-“আর কখনো কোনো ছেলের কথা মুখে আনলে ঠিক এভাবে দম আটকে মেরে দেবো।
সাথে নিজেও।”

রুহি আর কিছু বলে না। চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে গেইট দিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
প্রহর গাড়ি নিয়ে নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্য চলে যায়।

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here