হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_৯ #জান্নাত_সুলতানা

0
150

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“এতো রাতে ছাঁদে কেনো ডেকেছেন, সোহান ভাই?”

সোহান ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।
আরভীর প্রশ্ন পেছন ঘুরে। মেয়ে টা জড়সড় হয়ে সোহানের দেখে বেশ অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে।
সোহান হালকা হাসে। এগিয়ে গিয়ে চাদরের আড়ালে থাকা আরভীর ছোট হাত টা নিজের শক্ত দানবের হাতের মাঝে মুঠোয় পুরে নিয়ে নিজের পাশে এনে দাঁড় করায়।

-“প্রেম করতে ডেকেছি। ”

সোহান মুখ টিপে হেসে বলে।

-“রাত সাড়ে বারো টা বাজে, সোহান ভাই। ”

-“তো কি হয়েছে?”

-“কি হয়েছে মানে আপনি দেখেছেন বাহিরে কি পরিমাণ ঠান্ডা?
এর মধ্যে আপনি এসব বলছেন।”

-“হুম এবার কষ্ট করে শীত টা কাটিয়ে দে।
আগামী বছর এতো কষ্ট পেতে হবে না রে পিচ্চি।
আর শোন এমন শুটকি শরীর নিয়ে ভালোবাসলে হবে না ভালোবাসা বহন করার মতো শক্তি থাকা লাগবে।”

কথা শেষ সোহান নিজের বাম চোখ টিপে।

সপ্তদশী কন্যা আরভী।ওতো টাও চালাক নয় তবে এখন কার যোগে চালাক না হলেও উপায় নেই।
আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক তার সোহান ভাই যে ভালো কিছুর ইংগিত দিচ্ছে না তা বেশ বুঝলো আরভী। তবে কথা টা ততটা পাত্তা দিলো না।

-“কেন ডেকেছেন? ”

আবারও প্রশ্ন করে আরভী।

-“কাল তো চলে যাবো।
তোকে এক বার জড়িয়ে ধরি?
প্লিজ। ”

কি সুন্দর আবদার। আরভী কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না মেয়ে টা। কাল যে সোহান ভাই’রা চলে যাবে এটাও শুনেছে। সেই থেকে ওর কেমন মন টা খারাপ লাগছে। আজ চার দিন হয় ওদের এনগেজমেন্ট হয়েছে।
আরভীর নিজেরও কেমন মন টা চাইছে একবার জড়িয়ে ধরতে সোহান কে।
তবে কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে।

-“প্লিজ এবার।
বিয়ের আগে আর কিছু চাইবো না।”

এবার বেশ করুন শোনায় কণ্ঠ।
আরভী আর বেশি কিছু ভাবে না ঝাপটে গলা জড়িয়ে ধরে। আরভীর শরীর হতে চাদর ঝুলে পরে নিচে। কিন্তু সে দিকে খেয়াল নেই মেয়েটার।
সোহান আকস্মিক আক্রমনে দু পা পিছিয়ে যায়।তবে পরক্ষণেই মুখে হাসি ফোটে। মুচকি হেসে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নেয় প্রেয়সী কে।

—————–

সকাল আটটা বাজে। সবাই নাস্তা করছে। সায়রা আজ নিজে হাতে খাবার খাচ্ছে। সাদনান মির্জা সে তো গম্ভীর হয়ে খাবার মুখে পুরে টপাটপ গিলছে। মিশান নিজে খাচ্ছে তবে আঁড়চোখে বউ কে দেখছে।
নাস্তা করে সোহান রা আজ চলে যাবে।খাবার শেষ সবাই চলে গেলো যার যার রুমে। সোহান রা চলে যাওয়ার পর যে যার কাজে বেরোবে।
মাইশা প্রিয়তা টেবিল গুছিয়ে রাখছে। কম বেশ সবাই চলে গিয়েছে ডাইনিং ছেড়ে শুধু রুহি সোফায় মিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে টিভি দেখছে। আর মিশান এখনো খাবার টেবিলে চেয়ারে বসে।
যা দেখে মাইশা চৌধুরীর ভ্রু কুঁচকে আসে।
তবে কিছু বলে না। কিন্তু প্রিয়তা মির্জা কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে

-“তোর কি কিছু লাগবে?”

-“হ্যাঁ,আমার বউয়ের জন্য খাবার লাগবে।”

-“কিন্তু এই মাত্র তো নাস্তা করে গেলো।”

মাইশা বলে উঠে।
প্রিয়তা চুপ করে থাকে। সে নিজেও দেখেছে মেয়ে টা তার খাবার শুধু নড়াচড়া করছে। মুখে তুলে নি।তবে অভিমানের তাড়নায় কিছু বলে নি।
কিন্তু প্রিয়তার বেশ খুশি লাগছে কারণ তার মেয়ে খায় নি সেটা ও নিজে ছাড়াও আরও কেউ লক্ষ করছে।

-“মা ও খায় নি।
তুমি তো এখানে ছিল না তাই দেখো নি।”

-“হয়তো। আচ্ছা , তুই বস আমি খাবার দিচ্ছি।”

কথা শেষ করে মাইশা রান্না ঘরের দিকে ছুটে। প্রিয়তা মির্জা এক মনে টেবিল গুছাতে থাকে।

-“মনি ও ছোট।
তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না।
আর তাছাড়া ও তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ”

-“হুম তাই।
তবে ও যেটা করেছে। সেটা এতো তাড়াতাড়ি ভুলারও কথা নয়।”

বলেই তিনি রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সাদনান মির্জা ডাকছে ওনাকে। তিনি নিজের ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। তাই প্রিয়তা মির্জা চলে গেলো।
এর মধ্যে মাইশাও খাবার নিয়ে এসে মিশান আর প্রিয়তার কথা গুলো শোনে।

-“মা তুমি মনি কে বোঝাও।
ও কষ্ট পাচ্ছে।
বাড়ি এসছি আজ পাঁচ দিন হতে চলে। এর মধ্যে এক বারও বাবাই,মনি কেউ ওর সাথে কথা বলে না।”

-“আমি তো ওকে অনেক বার বুঝিয়েছি।
তবে তোর এক্সিডেন্ট এর বিষয় টা ওরা মানতে পারছে না। ”

-” মা আমার কিছু হয় নি তো।”

-“আচ্ছা তুই তোর বাবাই’র সাথে কথা বল।”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে এলো।
রুমে এসে সায়রা কে মিশান দেখতে পেলো না। কপাল বাজ পড়ে মিশানের।
হাতে থাকা খাবার প্লেট টা নিয়ে বারান্দায় দিকে এগিয়ে গেলো। সায়রা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

-“এদিকে আয়।”

সাইডে থাকা সোফায় এক পাশে বসে খাবার প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রাখে মিশান।
কিন্তু সায়রা কোনো হেলদুল নেই।এখন আগের স্থানে একই অবস্থা দাঁড়িয়ে।
মিশান ফুস করে শ্বাস টানে অতঃপর সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে টেনে এনে নিজের একটা উরুতে বসায়।

-“হা কর।”

আদেশের সুরে বলে মিশান। কিন্তু সায়রার চোখে জলে টলমল করছে।
মিশান জানে এই চোখের পানির কারণ।

-“সব ঠিক হয়ে যাবে, জান।
খাবার টা খেয়ে নে, প্লিজ। ”

কথা শেষ নিজের অধর ছুঁয়ে বউয়ের ললাটে।
সায়রা চোখ বন্ধ করে আর অমনি এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
মিশান বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্য তা মুছে দেয়।
তার পর সায়রা কে চোখ দিয়ে ইশারা করে নিজে হাতে থাকা খাবার টা নিতে বলে।অতঃপর খাবার টা মুখে পুরে নেয় সায়রা।

সায়রা মুচকি হাসে চুখে জল মুখে হাসি।বেশ আদুরে লাগছে দেখতে মিশানের কাছে।
মন চাইছে একটু আদর করে দিতে।তবে এখন আদর করা যাবে না।
সোহানদের এগিয়ে দিয়ে অফিস যেতে হবে আবার।
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা কে সব টা খাবার খাইয়ে এঁটো প্লেট রেখে রুমে এসে বেসিনে হাত ধুয়ে বউয়ের জন্য পানি নিয়ে বেলকনিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখলো সায়রা রুমে এসছে।
তাই মিশান আর ওদিকে গেলো না। পানি টা খেতে বলে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশ রুমে।
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে রেডি হয়ে বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে বউয়ের হাত ধরে নিচে চলে এলো। এর মধ্যে এক বার নিচ থেকে ডাক পরেছে সোহনা রা রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে।
মিশান আসতেই সোহান রা সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

———————-

-“বাবাই ও কষ্ট পাচ্ছে। ”

-“পাঁচ দিন মাত্র এটাই সহ্য হচ্ছে না।
আর আমাদের যে একুশ দিন কষ্ট দিলো।
আর বাকি সব ভুল গুলো তো বাদ দিলাম। তোর,,,

-“বাবাই প্লিজ আমার কিছু হয় নি তো।”

-“হতে পারতো মিশান।”

-“বাবাই ওর দিক থেকে ভাবলে কিন্তু ও নিজের স্থানে সত্যি টা জানার আগে পযন্ত ঠিক ছিল। ”

মিশানের এই কথায় সাদনান মির্জা চুপ করে গেলো।
সত্যি তো। কিন্তু প্রথম থেকে ভুল গুলো তো ও নিজে করে এসছে। তবে মনে মনে স্থির করলেন বাড়ি গিয়ে মেয়ে’র সাথে সব দূরত্ব আজ মিটিয়ে নেবে।
মিশানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সত্যি তার মেয়ে ভাগবতী। এতো এতো ভুল করার পরেও কত টা ভালোবাসে তার মেয়ে কে এই ছেলে টা ভেবে মন টায় বেশ আনন্দ অনুভব করলেন।

————–

সন্ধ্যা সাদনান মির্জা সহ মিশান আয়ান অফিস থেকে তারাতাড়ি ফিরে এলেন।
সাদনান মির্জা সাথে করে সব সময় এর মতো করে মেয়ে’র পছন্দের সব খাবার নিয়ে এসছে।
বাসায় এসেই হাঁক ছেড়ে মেয়ে’কে ডাকলে। সায়রা দৌড়ে নিচে আসে সাথে আসে রুহি,আরভী। মূলত ওদের সাথে বসে গল্প করছিল সায়রা। সায়রা বাবা কে দেখেই অবাক হয়ে গেলো।
সাথে খুশিও হলো।এটা ভেবে যে বাবা আর ওর উপর রাগ করে নেই।
অতঃপর সবাই মিলে আড্ডা খাওয়া শেষ করে রুমে চলে।
গেলো আজ সাদনান মির্জা মেয়ে কে আবার আগের মতো করে নিজ হাতে তোলে খাইয়ে দিয়েছে।
বাড়ি সবাই খুশি তবে প্রিয়তা মির্জা সব সময়ের মতো গম্ভীর হয়ে ছিলেন।
সায়রা জানে মা তার উপর বেশিখন রাগ করে থাকতে পারবে না তাই মন বেশি খারাপ হয় নি।
আর দোষ টা তো তারই নিজের। কেন সব টা না যেনো এরকম করলো।
সায়রা মা,আর বড় মনির সঙ্গে হাতে সব গুছিয়ে রাখছিল।
ঠিক তখনি উপর থেকে মিশানের ডাক পরে।কাজও প্রায় শেষ তাই মাইশা ওকে ঠেলেঠুলে উপর রুমে পাঠিয়ে দিলো।

#চলবে….

[[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here