হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_১৯ #জান্নাত_সুলতানা

0
24

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

-” কি শুরু করেছিস তুই?
আজ সারা দিন রুমে কেন আসিস নি?”

-“ছাড়ুন তো।
বিরক্ত করবেন।”

মিশান চোখ বড় বড় করে সায়রার দিকে তাকালো।
কি বলছে এই মেয়ে মিশান নিজে ওকে বিরক্ত করছে নাকি ও নিজেই ছোট বেলা থেকে মিশান কে বিরক্ত করছে?

-“থাপ্পড়ে তোর সব বিরক্তি আমি ছুটিয়ে দেবো, ইডিয়েট।”

-“ভয় দেখাচ্ছেন?”

কথা শেষ করার আগেই মিশান ওর কোমর টেনে নিজের কাছে আনে।
গালে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে

-“ভয় তোকে?
না আমি তো শুধু আদর করবো।”

-“এই দূরে সরেন।
একদম এখন নেকামি করতে আসবেন না।”

সায়রা মিশানের থেকে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো।
আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো।
সেটা খোলে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বিরবির করে

-“এখন ঢং করতে এসছে, হু।
যখন একটা জিনিস চাইলাম আর অমনি না করে দিলো।
হনুমান, টিকটিকি।”

-“সব তোর বর।”

সায়রা মিশানের কথা শুনে পেছন ফিরে ধাক্কা খেলো মিশান এর শক্ত চওড়া শরীর টার সঙ্গে।
তৎক্ষনাৎ নাকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
ব্যথা পেয়েছে।
তবে মিশানের বুকে আরেক হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলল

-“আপনি এখানে কি করছেন?
যখন তখন যেখানে সেখানে চলে আসেন।”

-“হু, ধাক্কাই এই অবস্থা।
নিজেই এখনো বাচ্চা।
আবার বাচ্চা নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছে।”

মিশান কিছু টা তাচ্ছিল্যের সুরে কথা টা বলে।
সায়রা একটু খারাপ লাগে। কিন্তু তা প্রকাশ করে না।
নিজেও তেজ নিয়ে বলে উঠে

-“দেখুন,,

-“এখন দেখার সময় নেই, সুইটহার্ট।
একটু বের হচ্ছি।
ফিরতে রাত হবে। রাতে এসে সব দেখবো।
ঠিক আছে?”

কথা শেষ মিশান নিজের প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
সায়রা মুখ ভেংচি কেটে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
রুহির কাছে যাবে আর রাতেও আজ সেখানে থাকবে বলে মনে মনে ঠিক করে নিলো।
কিন্তু করিডর সবটা শেষ করে রুহির রুমে যাওয়ার আগেই মিশান এসে ওকে ঝট করে পেছন থেকে কোলে তুলে নিল।
সায়রা হকচকিয়ে উঠলো। ভয় চোখ বন্ধ করে মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে।

-“এই আপনি না ফ্রেশ হতে গিয়েছিলেন?
ফ্রেশ না হয়ে আবার আমাকে কেন কোলে নিয়েছেন?”

-“উফ,আমি তো বলতেই ভুলে গিয়েছি আমি একা না।
তুইও যাচ্ছিস আমার সাথে। ”

-“আম,,,

-“চুপ আর একটাও কথা না।
বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নে।”

সায়রা কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজেও আবার ফ্রেশ হতে যায়।
সায়রা বিছানায় সে ভাবে বসে থাকে।
মিশান মিনিট পাঁচের মাথায় বেরিয়ে আসে।
কিন্তু সায়রা কে এখনো আগের যায়গায় বসে থাকতে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়ে এক টানে বসা থেকে টেনে তুলে।

-“কি সমস্যা তোর?
এমন কেন করছি?”

দাঁতে দাঁত চেপে বাহু ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে।
সায়রা ব্যথা পায়।
নিজের হাত দিয়ে মিশানের হাত সরানোর চেষ্টা করে।
চোখ চিকচিক করে।
মিশানের মন বউয়ের চোখে পানি দেখে গলে।
আস্তে করে হাতের বাঁধন হালকা করে।
চোখ বন্ধ করে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে।
রাগ কমানোর চেষ্টা করে।
অতঃপর নিজের দু হাতের আঁজলে বউয়ের মুখ নিয়ে নেয়।

-“আজ ডক্টর এর কাছে যাব।
ওনি বলেছে একটা টেস্ট করবে।
যদি দেখে সমস্যা পজিটিভ হয়েছে তবে আমরা বেবি নিতে পারবো।
তুই,,,

-“আর যদি নেগেটিভ আসে?”

মিশানের সব টা কথা না শুনেই প্রশ্ন করে বসে সায়রা।
মিশান হাসে আলতো করে হেসে জবাব দেয়

-“তোর ইচ্ছে আমি পূরণ করে দেবো।”

সায়রা বিস্ময় নিয়ে তাকায় মিশানের দিকে পরক্ষণে মুচকি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।
মিশান নিজেও হাত রাখে বউয়ের পিঠে।
আর মনে মনে ভাবে”আল্লাহ যেনো তোর ইচ্ছে পূরণ করে জান। আমিও চাই একটা বেবি যে তোকে মা আর আমাকে বাবা ডাকবে আদো আদো কণ্ঠে। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। কিন্তু তোর কিছু হয় গেলে আমি কি করে বাঁচব। তুই থাকলে আমার আর কিছু চাই না”।

-“যা রেডি হ।”

সায়রা মিশান কে ছেড়ে দেয়।তার পর আলমারি থেকে বোরকা বের করে পড়ে নেয়।
তার পর রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।
প্রিয়তা মির্জা মাইশা চৌধুরী দুবোন মিলে রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।
রুহি, আরভী, সোহান,প্রহর লিভিং রুমে বসে টিভিতে কাটুন দেখছে। আর রাহান আহামেদ ডাইনিং এ বসে কফি খাচ্ছে। সারা আহামেদ নাস্তার জন্য সব ব্যবস্থা করছে।
সায়রা আর মিশান এগিয়ে গিয়ে সারা আহামেদর কাছে বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলো।

————

সায়রা মিশান বসে অপেক্ষা করছে ডক্টর এর জন্য।
ডক্টর ওটিতে আছে।
অপারেশন শেষ করে এসে রোগী দেখবে।
অনেক রোগি এখানে কম বেশ সব মহিলাদের পেট উঁচু।
দেখে বোঝা যাচ্ছে ওনাদের দেহ আর একটা প্রাণ বেরে উঠছে।
সায়রা সবাই কে দেখছে।
মুগ্ধতা নিয়ে। আর ভাবছে ওরও তাদের মতো এক দিন পেট টা এমন উঁচু হবে।
সায়রা মাথা ঘুরিয়ে মিশানের দিকে চাইলো যে নিজের মনে ফোন ঘাঁটতে ব্যস্ত।
সায়রা মিশানের দিকে তাকিয়ে মুখ টা শুকিয়ে যায়।
এই লোক চাইলে এতো দিনে তার ইচ্ছে গুলো পূরণ হয়ে যেতো।
সব দোষ এই মিশান নামক হনুমানের।

এর মাঝে ডক্টর এর এসিস্ট্যান্ট জানলো ডক্টর এসছে।
দুই এক জন কেবিনেও গেলো।
প্রায় আধঘন্টার পর সায়রার সিরিয়াল এলো।
মিশান ওকে নিয়ে ডক্টর চেম্বারে ভিতর এলো।
ওরা এসেই আগে টেস্ট করে নিয়েছে।
তাই রিপোর্ট দেখালো।
ডক্টর রিপোর্ট দেখে জানালো সমস্যা টা ঠিক হচ্ছে।
তবে এখন বেবি নিতে পারবে।
কিন্তু রোগীর যত্ন নিতে হবে।
সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে।
মিশান ডক্টর এর সঙ্গে কথা বলে সায়রা কে নিয়ে হসপিটাল থেকে সোজা একটা রেস্টুরেন্টে চলে এলো।
এর মধ্যে একবারও মিশান কথা বলে নি সায়রার সঙ্গে। তবে সায়রা সে সব পাত্তা দিচ্ছে না সে নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে।
বেচারি ভীষণ খুশি কি না।
তার পর ওরা রাতের ডিনার করে এর পর বাড়ি ফিরে এলো।
রাত তখন নয় টা। সবাই ডাইনিং টেবিল খাবার খাচ্ছে।
সবার সাথে হালকা কথা বলে মিশান রুমে চলে যায়।
আর সায়রা তখনি বোরকা খোলে সোফায় রেখে গিয়ে মা, মনি দের সাথে কাজ করতে করতে ডক্টর এর বলা সব কথা ফাশ করে দিতে লাগলো।
সবার খাবার খেয়ে লিভিং রুমে বসে আবারও একদফা আড্ডা দিলো।
রাত সাড়ে দশ টার দিকে সায়রা ঘরে এলো মিশানের জন্য কফি নিয়ে।
এটা মিশানের অভ্যাস রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে এক মগ কফি খাবেই খাবে।
যদি মা, বউ, মনি ব্যস্ত থাকে তবে নিজে বানিয়ে নেয়।

এসেই মিশান কে রুমে পায় না সায়রা হাতে থাকা কাপড় গুলো সোফায় রেখে হাতে থাকা গরম ধুঁয়া উঠা কফির মগ টা নিয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো।
বেলকনির লাইট অফ।
শুধু চার দিকের চাঁদের আলো এসে পড়ছে।
যার মধ্যে মিশানের হাতে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সিগারেট টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে

-“আগে তো কখনো দেখি নি?”

সায়রা মগ টা রেলিং এর উপর রেখে কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলে কথা টা।

-“আগে কখনো তোকে হারানোর ভয় ছিল না।
তাই দেখিস নি।”

শান্ত কণ্ঠে সহজ উত্তর।
কিন্তু সায়রার কাছে এটা বেশ কঠিন আর বিরক্তিকর উত্তর মনে হলো।

-“কি হয়েছে আপনার?
এমন উদাস কেন?
আমি এখন সুস্থ আপনার তো খুশি হবার কথা। ”

মিশান সিগারেট ততক্ষণে ফেলে দিয়েছে।
ঝট করে ঘুরে আচমকাই জড়িয়ে ধরে সায়রা কে। সায়রা আকস্মিক ঘটনায় একটু চমকে উঠলো।
কিন্তু ঘটনা বুঝতে পেরে নিজেও জড়িয়ে নিলো মিশান কে।
কিন্তু মিনিট দুই এক পেরোতেই কাঁধে ভেজা অনুভব করলো।

-“তোকে আমি হারাতে পারবো না কলিজা।
আমরা না হয় বাচ্চা না নেই।
প্লিজ। ”

ধরে আসা গলায় মিশান কথা গুলো বলে সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে নিজের বাহুর সাহায্য চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নিলো।
অতঃপর আলতো করে সায়রার কপালে নিজের সিগারেটে পোড়া গোলাপি ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিল।
সায়রা এতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিল।
একটা পুরুষ কতাটা ভালেবাসলে তার শখের নারীর জন্য চোখ দিয়ে পানি আসতে পারে সায়রা জানে না।
কিন্তু ওর আজ মনে হচ্ছে ও সত্যি ভাগ্যবতী।
সায়রা চোখ বন্ধ করতে বাম চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

মিশান নিজের অধর জোড়া দিয়ে বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা ভালোবাসার পরশ দিলো বউয়ের কপালে।

-“আপনার ভালোবাসার জোরে আমাকে আল্লাহ ছাড়া কেউ কেরে নিতে পারবে না মিশান।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমার কিছু হবে না।”

-“তবুও আমার ভয়,,,

-“প্লিজ।”

মিশান কে সব টা কথা শেষ করতে না দিয়ে সায়রা অনুরোধের সুরে বলে উঠে।

মিশান আর কিছু বলে না রেলিং এর উপর থেকে কফির মগ নিয়ে সায়রার হাতে দেয়।
সায়রা এক চুমুক দিয়ে তা আবারও মিশানের হাতে মগ ফিরে দেয়।
মিশান দুটা চুমুক দিয়ে মগ টা ওখানে থাকা পাশের সেন্টার টেবিলে রেখে।
সায়রা কে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে।

#চলবে…..

[আজ বড় পর্ব দিয়েছি।এখন নিশ্চয়ই বড় পর্ব পড়ে সকলের মন ভরবে😊।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।(শব্দ সংখ্যা ১২০০+)]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here