হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_২০ #জান্নাত_সুলতানা

0
25

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোর কিছু হলে আমি নিজেও শেষ হয়ে যাব, কলিজা।”

সায়রা কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মিশান সায়রার গালে হাত রেখে করুন কণ্ঠে কথা টা বলে উঠে।

-“ভরসা রাখুন কিছু হবে না আমার, মিশান।”

সায়রা ভরসা দেয় স্বামী কে নিজেও বাম হাত মিশানের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি ভরতি গালে হাত বুলিয়ে
কথা টা শেষ করে সায়রা মিশানের অধরে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সরে আসতে নিলেই মিশান সায়রার মাথার পেছনে হাত দিয়ে নিজের অধর দ্বারা সায়রার অধর চেপে ধরে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে সায়রাও চোখ বন্ধ করে তা গ্রহণ করে।
কিন্তু হাত তার মিশানের সার্ট এর বোতামে।
আস্তে আস্তে সব কটা বোতাম খোলা নেয়।
মিশান সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে গায়ে থাকা সার্ট টা খোলে ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে।
সায়রা পরিহিত মেয়েলী পাতলা টি-শার্ট টা সরিয়ে চুমু আঁকে পেটে, গলা।
আর নিজের মতো করে ভালোবাসতে থাকে বউ কে।
সায়রাও সুখের জল গড়িয়ে পড়ে চক্ষু হতে। সায়রা কিছু সমস্যা থাকায় যতবারই স্বামী স্ত্রীর মতো করে ভালোবাসা আদান-প্রদান করে ঠিক ততবারই মেয়ে টা ব্যথায় নুয়ে পরে।মিশান যে সেটা বুজে না তেমন নয়।কিন্তু সায়রা মিশান কে দূরে যেতে দেয় না। নিজের কষ্টে তা কখনো মিশানের সুখে বাঁধা হয় না।কিন্তু এবার কষ্টের চেয়ে আনন্দ বেশি হচ্ছে কেন না সে হয়তো
এবার সে তার ইচ্ছে পূরণ, মা হওয়ার আনন্দ সুখের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

————–

-“আমি বলি কি সারা তোরা বরং এখানে থেকে যা।
তাছাড়া সামনে মাসেও তো ইনিয়া টার বিয়ে।
সাদনান ভাই আপনি কি বলেন?”

-“আমি কি বলবো।
বাবা মা চলে যাওয়ার পর থেকে তো সব সময়ই বলে এসছি যেনো এখানেই সেটেল্ড হয়।
কিন্তু ওনি তো ওনার জন্মস্থান ছেড়ে আসবে না।
যেনো ঢাকা থেকে কুমিল্লা টা বেশি দূর।
চাইলে যখন তখন যাওয়া যাবে।
আমি আর এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।”

সাদনান মির্জা কথা গুলো বলেই গটগট পায়ে লিভিং রুম থেকে প্রস্থান নিলেন।
সবাই মুখ টিপে হাসে।
শুধু সারা অসহায় চোখে তাকিয়ে স্বামী রাহান আহামেদ এর দিকে।
কিন্তু ব্যবহার টা হলো তিনিও হাসছে।

-“আমি এবার ঢাকা থেকে আর কোথাও যাচ্ছি না।”

সায়রা আহামেদও কথা শেষ হনহনিয়ে লিভিং রুম ছেড়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো।
ওনার পেছনে রাহান আহামেদও চলে গেলো।
যা দেখে আয়ান হো হা করে হেসে দিলো।
আর বাকিরা ঠোঁট টিপে হাসে।

-“এই রাহান টা এখনো আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।”

কথা গুলো বলে তিনি মাইশা চৌধুরী কে ইশারা করে নিজেও লিভিং রুম ছাড়ে।
প্রিয়তা মির্জাও চলে নিজের রুমে জামাই তার নিশ্চয়ই খেপেছ। এতোক্ষণ রুমে একা একা তিনি কিছুতেই থাকতে চায় না।
বুড়ো হয়েছে কিন্তু বউ তার সব সময় আশেপাশে চাই।
আর এই বুড়ো বুড়ির কাণ্ডে দেখে লিভিং রুমে বসে থাকা সব কয় টার ছেলে মেয়ে হেসে কুটিকুটি হতে লাগলো।
————-

সাদনান মির্জা বোনের সাথে কিছু টা রাগ সাথে অভিমান বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ওনাকে ঢাকাতে থাকতে বলা হয়েছে।
ওনি বলেছিল বাপের বাড়ি থাকলে লোকে খারাপ বলবে আর নিজের দাম থাকে না।
সবাই কথা টায় মনে মনে কষ্ট পেয়েছে কারণ প্রিয়তা মির্জা বা মাইশা চৌধুরী কেউ এমন না তবে মুখে তা কেউ প্রকাশ করে নি। তবে সারা আহামেদও কথা টা তেমন কাউ কে উদ্দেশ্য করে বলে নি। কিন্তু তিনি হয়তো এটাই জানে না তার এই ভিত্তিহীন কথা টাতে তার অজান্তেই কেউ কেউ ভীষণ ভাবে কষ্ট পেয়েছে।
আজ্জম মির্জা গত হওয়ার পর ওনার স্ত্রী সালেহা বেগমও বেশি দিন বাঁচে নি। স্বামীর শোকে শোকে তিনি বছর ঘুরেতে স্বামীর কাছে চলে যায়। তখন সাদনান মির্জা মা-বাবা দু’জন কে হারিয়ে সাদনান মির্জা বলেছিল বোন সারা আহামেদ যেনো আলাদা ফ্ল্যাট এ থাকে তবুও যাতে সবার কাছাকাছি থাকে কিন্তু তিনি তাতেও রাজি হয় নি।
ছেড়ে আসে নি শশুরের আগের পুরোনো ভিটা।
এটা নিয়ে সারা আহামেদের উপর কিছু টা রাগ থেকেই আর আগের মতো বোনের সাথে তেমন আর ওতো টা গদগদ ভাব নেই।
কথাও কম বলে খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।
তবে সারা আহামেদ এর এতে কিছু আসে যায় না সে এক মাস পনেরো দিন পর পর সপরিবারে ঢাকা চলে আসে।
এতে সবাই খুশি হয় কিন্তু এক্কেবারে না থেকে যাওয়ার জন্য সবাই খুশি টা প্রকাশ করে না।

——–

আজ থেকে রুহির টেস্ট পরীক্ষা শুরু। সকালে রুহি কলেজের জন্য এক্কেবারে রেডি হয়ে এসছে।
সবাই নাস্তা করছে।
এখন আর আগের মতো আরভী, সায়রা আগে আগে নাস্তা করতে বসে যায় না। মা দের সাথে এটা সে টা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করে।যা দেখে রুহির ইচ্ছে হয় সেও এমন কাজ করবে পড়া লেখা করবে না।
এসব পড়া লেখা ভালো লাগে না তার।
কিন্তু এই ইচ্ছের কথা প্রহর এর কাছে জানানোর পর সে এক কথায় বলে দিয়েছে “কম পক্ষে অনার্স শেষ করা লাগবে না হলে সে এই মেয়ে কে বিয়ে করবে না।সে একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট স্কুল থেকে শুরু করে সে সব সময় টপ করেছে। আর সেখানে তার বউ কি না সামান্য ইন্টার পাস।এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না। যত যাই হোক সে এই মেয়ে কে পড়া লেখা করাবেই।”
ব্যস রুহি সেই থেকে মন দিয়ে পড়া লেখা করছে।
প্রহর এর ভার্সিটিতে তাকে চান্স পেতেই হবে।
এসব ভাবতে রুহি খাবার শেষ আয়ান চৌধুরী সাথে কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
সবাই যার যার কাজে চলে গেলো।
মিশান আজ এখনো ঘুম থেকে উঠে নি কাল অফিস থেকে দেড়ি করে ফিরেছে।
কিছু মিটিং থাকার সুবাদে।
তাই এখনো ঘুমে সে।
সারা আহামেদ একটা থালায় নাস্তা নিয়ে সে টা সায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিশানের রুমে পাঠিয়ে দেয়।
সে বসেছিল মাত্র প্রহর,সোহান,আরভীর সাথে আড্ডা দিবে বলে কিন্তু তা আর হলো না।
মনির থেকে নাস্তা নিয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে।
এসে দেখলো মিশান মহাশয় এখনে কম্বল মুড়ি দিয়ে খালি গায়ে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।
কম্বল অর্ধেক নিচে পরে আছে।
সায়রা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে মেঝেতে পড়ে থাকা কম্বল এর অংশ উঠিয়ে বিছানায় রাখে।
অতঃপর নিজের ঠান্ডা হাত টা মিশানের পিঠে রেখে হালকা করে ডাকে

-“উঠুন।
খাবার খেয়ে আবার ঘুমাবেন না হয়।”

মিশান নড়েচড়ে সায়রা হাত নিজের পিঠের উপর থেকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
সায়রাও চুপ করে স্বামীর মুখে পানে চেয়ে থাকে।
আর ভাবে “কে বলেছে ঘুমিয়ে থাকলে শুধু মেয়েদের সুন্দর লাগে।শুধু মেয়েদের না ছেলেদেরও লাগে। এই যে তার স্বামী কে এখন আস্ত একটা মায়ার খনি মনে হচ্ছে।”
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা মিশানের চুলের ফাঁকে হাত ঠুকিয়ে ঘুমন্ত মিশানের এলোমেলো চুল গুলো আরও একটু এলোমেলো করে দেয়।
মিশান ঘুমের মাঝে ভ্রু কুঁচকে নেয়। এটা তার মোটেও পছন্দ নয়।
সায়রার পিড়াপিড়িতে মিশানের ঘুম ছুটে গেলো।
উঠে বসলো কম্বল সরিয়ে ঘুম চোখে জিজ্ঞেস করলো

-“কি হয়েছে, সুইটহার্ট?
জ্বালানো হচ্ছে কেন?
কাল অনেক কাজ করেছি।অনেক বড় এক টা ডিল ফাইনাল করেছি।”

-“আমি জানি তো।
ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে হবে না?”

মিশান ততক্ষণে নেশাক্ত দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকায়।
সায়রা কথা শেষ উঠে যেতে নিলেই মিশান খপ করে বউয়ের হাত ধরে আটকে দেয়।
সায়রা পেছন ফিরে মিশানের দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকায়
আর অমনি মিশান একটানে বউকে নিজের কোলে এনে ফেলে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠে

-“এখন খাবার নয় অন্য কিছু চাই।”

সায়রা নাক মুখ কুঁচকে নেয় মিশানের কথা।
ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে

-“আপনি তো ফ্রেশ হন,,

পুরো টা শেষ করতে পারে না সায়রা মিশান তার আগে নিজের পুরুষালী শক্ত অধর দ্বারা সায়রার অধর চেপে ধরে।
নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে বউ কে।
সায়রা বাধ্য হয়ে হারমানে স্বামীর ভালোবাসার কাছে।
নিজেও সঙ্গ দেয় স্বামীর।
মিশান নিজেও নিজের ভালোবাসার চাদরে মুড়ি নেয় বউ কে।
অবহেলিত পরে রয় সেন্টার টেবিলে থাকা খাবার থালা।
সাথে দুট মনের অস্তিত্বের ভালোবাসার মিলনের সাক্ষী হয় এই শীতের সকালে পর্দার ফাঁক ভেদ করে আসা মিষ্টি রোদ টা।

#চলবে…

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here