#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি কেন এসছেন প্রহর ভাই?
আজ তো আমি আমাদের বাসায় চলে যাব।
আর ইকবাল ভাই আমাকে নিতে আসার কথা।”
রুহি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে গেইট থেকে প্রহর এর গাড়ি থেকে এগিয়ে আসে।
তখন প্রহর গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিল।
আর প্রহর কে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে রুহি।
প্রহর একবার রুহির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে জবাব দেয়।
-“গাড়ি তে বসো বলছি।”
রুহি কিছু বলে না মাথা নেড়ে প্রহর এর পাশে বসে পড়ে।
আর ততক্ষণে প্রহর একটা পানির বোতল সাথে কিছু দোকানের হাবিজাবি খাবার এগিয়ে দেয়।
রুহিও পানি নিয়ে সেটা দিয়ে গাড়ি থেকে জানলা দিয়ে মুখ ধুয়ে সে গুলো খেতে থাকে।
আর প্রহর কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধিরে গলায় জানান দেয় কিছু কথা
-“তোমাকে ইকবাল ভাই নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ওনার ইমারজেন্সি পরে যাওয়াতে তিনি আসতে পারবে না।
তাই এনামুল নিজ থেকে আগ্রহ দেখিয়ে বলেছে সে নিতে আসবে আর এ কথা টা ইনিয়া আপু ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানার পর পরই আমাকে বলেছে।
আর তাই আমি নিতে এসছি।”
রুহির কেনো হেলদুল নেই সে এক মনে চকলেট খেতে খেতে খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করে
-“তো কি হতো এনামু,,,
-“এই মেয়ে তুমি কি ওই দিনের ঘটনা
ভুলে গিয়েছো?
তুমি চাইলে আবার রিপিট করতে পারি আমি।”
বাকা হেসে বলে প্রহর।
রুহি তৎক্ষনাৎ চকলেট খাওয়া বন্ধ করে ঠোঁট নিজের দু হাত দিয়ে আড়াল করে ফেলে।
আর মাথা নাড়ে যার অর্থ “না”।
প্রহর হালকা হেসে গাড়ি স্টাট করে।
—————–
আজ রুহির শেষ পরীক্ষা ছিল।
দেখতে দেখতে পনেরো দিনের বেশি সময় কেটে গিয়েছে।
সামনে সাপ্তাহে ইনিয়ার বিয়ে।
তাই রুহি আজ নিজেদের বাসায় চলে যাচ্ছে।
আর আয়ান চৌধুরী সপরিবারে নিয়ে দু দিন বাদেই যাবে।
—————-
-” আপনার সব আমি গুছিয়ে নিয়েছি ।
আপনি একবার চেকিং করি নিবেন?”
সায়রা কথা টা বলে চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে বিছানার এক পাশে বসে। মিশান ল্যাপটপে কোলে নিয়ে তাতে কিছু করছিল।
কিন্তু বউয়ের কথা ল্যাপটপ বিছানার পাশে টেবিলে রেখে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষেঁ মিনমিন করে উত্তর দেয়
-“তার দরকার নেই।
আমি জানি তো আমার বউ সব ঠিক ঠাক নেবে।”
-“হয়েছে ছাড়ুন ঢং করতে হবে না। রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?
কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।”
সায়রা মিশানের থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে বলে।
কিন্তু মিশান শুনলে তো।
সে তো বউ কে চুমু খেতে ব্যস্ত।
সায়রাও কেমন মিশানের স্পর্শে শরীর ছেড়ে দিচ্ছে।
কিন্তু তবুও চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে জানায়
-“মিশান।
কাল সকালে তো,,,
-“উঁহু, কোনো কথা না সুইটহার্ট।
আমরা সবার পরে যাব।”
মিশান আর কিছু শোনে না সায়রা কে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে।
আর ডুবে যায় একে অপরের মাঝে।
————-
-“শোনো খাবার রান্না করা আছে।
গরম করে খেয়ে নিও।”
প্রিয়তা মির্জা মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে উঠে।
-“মা আমি বলছিলাম আমরাও তোমাদের স,,,,
-“হ্যাঁ মনি আমরা পারবো।
তোমরা যাও।
বাবাই হয়তো অপেক্ষা করছে। ”
সায়রা কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে মিশান প্রিয়তা মির্জা কে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠে।
প্রিয়তা মির্জা মুচকি হেসে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় পেছন পেছন মাইশা চৌধুরীও চলে যায়।
অতঃপর সবাই বাড়ি থেকে এক এক করে বেরিয়ে যায়।
আজ সবাই যাওয়ার কথা থাকলেও সায়রা, মিশান,সোহান, আরভী যাবে না। তারা সন্ধ্যা যাবে।
মিশান বলেছে কি একটা কাজ আছে পরে যাবে।
তাই ওনারা সায়রা আর আরভী কে রেখে গিয়েছে। সায়রা একা একা থাকবে তাই আরভী কেও দিয়ে যাচ্ছে। দু জনে এক সাথে থাকলে সময় কেটে যাবে যেহেতু মিশা বাহিরে থাকবে।
আসলে কথা হলো মিশানের কোনো কাজ ফাজ কিছু নেই।
কিন্তু আরভী কেও রেখে যাবে শুনে বেচারা সোহানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলো।
সোহান বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা এই বেডা মিশানের মাথায় ঘুরছে তাই নিজেও মিশানের সাথে যাবে বলে জানিছিল।
কেউ কিছু বলে নি।
যাক যার যখন ভালো লাগে তাড়া কেউ তো আর ছোট নেই।
তাই বড় রা সকালে যাচ্ছে সাথে প্রহর তো আগে আগে গিয়ে গাড়ির ডাইভিং সিটে বসে আছে।
কেন না তার প্রাণভোমরা যে সেখানে রয়েছে।
এটা দেখে সোহান অবশ্য প্রহর কে কম খোঁচায় নি।
প্রহর কিছু বলে নি মুখ বুঁজে সব সহ্য করেছে।
কারণ টা হলো এতো দিন প্রহরও সোহান কে কম জ্বালায় নি।
যখনি সোহানের সাথে প্রহর ফোনে কথা বলতে তখনি সোহা যদি জিজ্ঞেস করতো “কি করিস?” তখনি প্রহর সোহান কে খেপানোর জন্য বলতো “তোর বউয়ের সাথে আছি”।
ব্যস সোহান তখন ইচ্ছে মতো প্রহর কে গা’লা’গা’লি করে ফোন রেখে দিতো।
যদিও ও জানতো প্রহর মজা করছে।
কিন্তু তবুও কেন যেনো বেচারা সোহানের সহ্য হতো না।
কিন্তু পরে ঠিক আবার দু জনের গলায় গলায় ভাব হয়েই যেতো।
————-
সবাই সেই সকালে চলে গিয়েছে এখন বিকেলে চারটি।
দুপুরে খাবার খেয়ে মিশান, সোহানও কোথাও একটা গিয়েছে। তাদেরও কোনে খুঁজ নেই।
সায়রা, আরভী বসে বসে গল্প করছে আরভীর রুমে।
সায়রা অবশ্য ছাঁদে যেতে চেয়েছে কিন্তু আরভী যাচ্ছে না।
বলছে ওর না-কি ভালো লাগছে না তাই ও শুয়ে আছে।
সাথে সায়রা কে নিজের পাশে বসিয়ে রেখেছে।
সায়রার কেন জানি মনে হচ্ছে আরভী ওর কাছ থেকে কিছু একটা লোকাচ্ছে।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে কি লোকাবে।
হয়তো ওর মনের ভুল তাই নিজের মন কে আবোল তাবোল বুঝিয়ে নিজেও গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
দু বোন একই বাড়িতে থাকে অথচ মনে হচ্ছে কত বছর পর দেখা হয়েছে।
এমন করে কবে আরভীর সাথে এতো টা সময় আড্ডা দিয়েছে সায়রার মনে পরছে না।
যখনি বসে কোনো না কোনো কাজ, নয়তো মিশান ডাকে।বাড়িতে অনেক দিন পর এভাবে দু বোন এক সাথে আছে।
কেউ জ্বালাচ্ছে না।
কিন্তু বিয়ের পর যতবার আড্ডা দিতে বসে ঠিক তক্ষুনি কোনো না কোনো কারণে সে টা আর হয় না।এই জন্যই বুঝি মানুষ বলে” গাঙে গাঙে দেখা হলেও বোনে বোনে হয় না”।
আরভী শোয়া থেকে উঠে বিছানার সাইডে টেবিল থেকে পানি খেয়ে আবারও বসতে নিলে ফোনে টুং করে শব্দ হলো।
সায়রা ততক্ষণে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এটা সেটা নেড়ে চেড়ে দেখছে।
আরভী নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো মিশান দিয়েছে মেসেজ টা।
আরভী মেসেজ টা পড়ে ফোন টা নিয়ে সায়রা কাছে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট বের করে।
সায়রা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে
-“এটা কি?”
আরভী মুচকি হেসে বলে
-“এটা ভাইয়া দিয়েছে।
তুমি পড়ে রেডি হয়ে আসো।
আমিও আসছি।
-“রেডি কেন হবো?
আর আমরা তো একটু পর আয়না মনির বাসায় চলে যাব।”
-“বেশি কথা বলো না।
আমিও কিছু জানি না। তুমি রেডি হয়ে নেও।
ভাইয়ার কাছ থেকে সব জেনে নিও।”
কথা শেষ আরভী সায়রার হাতে প্যাকেট টা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সায়রা কিছু বুঝলো না।
তবে বেশি কিছু না ভেবে প্যাকেট টা খোলে।
আর সেখানে একটা কালো রং এর শাড়ী পেলো সাথে শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় জিনিস।
সায়রা বেশি কিছু না ভেবে সেটা পড়ে রেডি হয়ে নিজের ফোন টা নিয়ে বেরিয়ে এলো আরভীর রুম থেকে।
আরভী কে দু তিন বারের মতো ডাকলো তবে কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।
সায়রা সিঁড়ির কাছে এসে নিচে নামতে নিলে লাইট গুলো সব অফ হয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে এলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সায়রা নিজের গলায় কারোর গরম নিশ্বাস পড়ায় কেঁপে উঠল। কিন্তু পেছন ফিরার সাহস পেলো না।
ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।
কারোর একটা শক্ত ঠান্ডা হাত ওর পেটে বিচরণ করতে লাগলো।
আর সেই হাতের মালিক হুট করেই সায়রা কে কোলে তুলে উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরলো সায়রা চুপ করে গলা জড়িয়ে আছে।
কারণ স্পর্শ গুলো যে ওর অতি পরিচিত।
আর মানুষ টা যে আর কেউ নয় ওর একান্তই ব্যক্তিগত স্বামী নামক ভালোবাসার পুরুষ টা।
সায়রা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে লম্বা মিশানের গায়ে থেকে আসা পারফিউম এর স্মেইল টা যে ওর ভিতর টাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
সব এলোমেলো লাগছে।
মিশানের গলায় খামচে ধরে।
মিশান ততক্ষণে বউ কে নিয়ে নিজদের রুমে এসে সায়রা কে দরজার পাশে থাকা ছোট টেবিল টায় বসিয়ে দিয়ে মুখ টা উঁচু করে নিজের অধর জোড়া দিয়ে সায়রার অধর জোড়া চেপে ধরে পাগলের মতো ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে।
নিজের অবাধ্য হাত জোড়া বিচরণ করে বউয়ের পেটে।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বনে আবদ্ধ হয়।
সায়রাও স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়া।
কিন্তু মিশান হুট করে ছেড়ে দেয় বউ কে।
নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা সায়রার ঠোঁট মুছে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নামতে ইশারা করে।
সায়রাও নেমে পড়ে। মিশান একটা কালো সুট পরে আছে।সায়রার সাথে মিলিয়ে। সায়রা মুগ্ধতা নিয়ে দেখলো স্বামী কে।তার পর মিশানের পেছন পেছন বেলকনিতে যায়।
-“এতো কিছু কখন করেছেন?”
সায়রা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিশান কে।
মিশান মুচকি হাসে।
কিছু বলে না বউয়ের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়।
সেন্টার টেবিলে থাকা কেক টার সামনে দাঁড়ায়।
সায়রা এবার আরও এক দফা অবাক হয় সাথে খুশি তো আছে।
ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।
খুশি তে চোখে জল চলে এসছে।
চোখ চিকচিক করছে কিন্তু মুখে হাসি লেপটে আছে।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে
-“আমার তো মনেই ছিল না।
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।”
মিশান নিজেও জড়িয়ে ধরে বউয়ের মাথায় তালুতে চুমু আঁকে।
-“Happy anniversary bow”
সায়রা ছেড়ে দেয় মিশান কে নাক টেনে নিজেও বলে উঠে
-“Happy anniversary jamai”
মিশান শব্দ করে হেসে উঠে।
সায়রা এটা মিশান কে এনিয়ে দুবার জামাই বলল। গত বার প্রথম বলেছিল মিশানের বার্থডে তে।
আর আজ দ্বিতীয় বার।
মিশানের হাসি দেখে সায়রাও হেসে দিল।
অতঃপর দু’জন মিলে কেক টা কেটে নিলো।
এখন সন্ধ্যায়।
সায়রা হঠাৎ কিছু মনে করার মতো করে বলে উঠে
-“আরভী, সোহান?”
-“ওরা চলে গিয়েছে পাঁচ টার দিকে।”
মিশান সায়রার কাঁধে চুমু খেয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
-“ওহ।”
সায়রার কথা শেষ করার সাথে সাথে মিশান সায়রা কে সোফায় শুয়ে দিয়ে গলায় মুখ গুঁজে দেয়।
সায়রা মিশানের একটা উরুতে বসে ছিল বেলকনিতে থাকা সোফায়।
আর হুট করেই মিশান ওকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে নেয়।
-“আমরা যাব না?”
-“হুম।
একটু পর।
একটু আদর করি?”
অনুমতির সুরে বলে উঠে মিশান।
সায়রা মুচকি হাসে এই লোক এখন না করলে শোনবে মনে হয়।
এমন একটা ভাব করছে।
তাই মিশান কে সায়রা নিজে উল্টো প্রশ্ন করে
-“যদি না করি শুনবেন?”
-“সে টা তুই ভালো করেই জানিস।”
আর কোনো কথা হয় না।
শুধু ভালোবাসা আদান-প্রদান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুই মানব মানবী।
——
রাত সাত টা বাজে সায়রা নিজে ফ্রেশ হয়ে এলে মিশান ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সায়রা এসে রেডি হয়ে নেয়।
মিশান গোসল শেষ নিজের কাপড় সহ বউয়ের কাপড় ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসে।
তার পর রেডি হয়ে দুজনেই রুহিদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।(শব্দ সংখ্যা ১৬০০+)]