হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২] #পর্ব_২২ #জান্নাত_সুলতানা

0
41

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২২
#জান্নাত_সুলতানা

সায়রা আর মিশান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে পঁচিশ কি ছাব্বিশ বছরের একটা রমণী হুট করে কোথা থেকে এসে মিশান কে জড়িয়ে ধরে। রমণী টা নিসন্দেহে একজন বিদেশি মানুষ।
তার পোশাক, চুল শরীর দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।
সায়রা স্তব্ধ। মিশান নিজেও অবাক।
মেয়ে টা মিশানের বুকে লেপটে আছে।
মিশান নিজের দু হাত উঁচু করে আছে।
বাড়ির কেউ কেউ আবাক নয়নে তাকিয়ে তো কেউ খুব স্বাভাবিক ভাবে আছে।
যেনো এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় আর এটা ওনারা এর আগেও দেখেছে।

-“স্টেলা ওরা মাত্র এলো।
ফ্রেশ হতে যেতে তো দাও।”

ইনিয়া কথা টা সাইড থেকে বলে উঠে।
মূলত ও এসছিল সায়রা কে দেখে জড়িয়ে ধরবে বলে।
কিন্তু তার আগেই স্টেলা নামের মেয়ে টা হুট করে এসে পরায় ইনিয়া নিজেই যে কাজের জন্য এসছে সে টা ভুলে গিয়েছে।

রুহির এতোক্ষণ চুপ করে সব দেখছিল।
তবে এখনো মিশান কে ছাড়তে না দেখে নিজে এগিয়ে গিয়ে স্টেলা নামক মেয়ে টা কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠে

-“স্টেলা আপু ছাড়ো ভাইয়া কে।
এটা বাংলাদেশ।”

লাস্ট এর কথা টা কিছু টা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
স্টেলা সে সব পাত্তা না দিয়ে মিশানের কোমর জড়িয়ে ধরে নেকা কণ্ঠে ভাংগা ভাংগা বাংলা ভাষায় জিজ্ঞেস করে

-“মিশান তুমি লন্ডন থেকে চলে আসার পর আমার সাথে কেন একবারও কন্টাক্ট করো নি?”

মিশান ততক্ষণে মেয়ে টা কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছু টা দূরে দাঁড় করিয়ে বিরক্তির সুরে জবাব দেয়

-“স্টেলা আপনার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক ছিল না যে আপনার সাথে আমার সব সময় কন্টাক্ট করতে হবে।
না কোনো commitment ছিল।
আপনি জাস্ট আমার আপুর ফ্রেন্ড।
আর মিট মাই ওয়াইফ সায়রা মিশান চৌধুরী।”

-“সায়রা আপু এটা হচ্ছে ইনিয়া আপুর ফ্রেন্ড ওনি আজ সকালেই লন্ডন থেকে এখানে এসছে।”

মিশান সায়রা কে পরিচয় দিয়ে স্টেলার কথা বলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু তার আগে রুহি পরিচয় দিয়ে দেয়।সায়রা জোর করে একটু হাসে। মেয়ে টা মুখ টা গমন করে থাকে আর কিছু বলে না। সায়রা ইনিয়ার সাথে কথা বলে।

-“আচ্ছা এখন যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়।
রাত দশ টা বাজে।
খাবার টা সবাই খেয়ে নেও।”

আয়না বলে উঠে।
অতঃপর মহিলারা সব রান্না ঘরে চলে গেলো।পুরুষ রা সবাই সোফায় কেউ বা চেয়ারে বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
রুহি সায়রা আর মিশান কে ওদের একটা রুমে নিয়ে চলে যায় ইনিয়া স্টেলা নামের মেয়ে টা কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

-“তোমরা তো কাঁপল।
তাই তোমরা যে কয় দিন থাকবা এটাতেই থাকবে।”

রুহি কথা টা ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে

-“বেশি পাকা হচ্ছি প,,,

-“আমি যাই।”

সায়রা কে সব টা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে রুহি দৌড়ে চলে যেতে যেতে বলে।
“প” শুনে মিশান ভ্রু কুঁচকে সায়রার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে

-“তুই তখন কি বলছিলি?”

সায়রা কিছু না বলে খুব স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশ রুম চলে যায়।
যেনো সে ছাড়া এ রুমে আর কেউ নেই।

-“বেগম দেখিয়ে অভিমান করেছে।
আচ্ছা কোনো ব্যাপার না।”

মিশান কোমরে এক হাত রেখে আর হাত মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলে।

——————–
রাতে খাবার খাওয়ার পর সায়রা আর রুমে আসে না।
মিশান কখন থেকে বসে আছে।
কিন্তু তার বউয়ের কোনো পাত্তা নেই।
এবার মিশান বেশ বিরক্ত হয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই দেখা মিলে সোহানের।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
ভ্রু আড়াআড়ি করে প্রশ্ন করে

-“তুই এখানে?”

-“হুম আমি।
তোমার সাথে থাকব।
ওরা তিন বোন না-কি আজ এক সঙ্গে থাকবে।
তাই আমাকে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলছে।
আমি তোমার সাথে যেনো থাকি।”

সোহান কথা গুলো বলতে বলতে গিয়ে বিছানার ধরাস করে শুয়ে পড়ে।
মিশান বেরিয়ে যেতে নিলেই সোহান আবারও বলে উঠে

-“যেয়েও না।
লাভ হবে না।
আমি কম চেষ্টা করি নি।দরজা বন্ধ।”

মিশানের মুখ মলিন হয়ে আসে। এই মেয়ের এতো অভিমান সব টা নিজের চোখের সামনে দেখার পরেও কি করে এমনটা করতে পারছে। সাথে অন্যদের মাঝেও ঝামেলা করছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান গিয়ে সোহানের পাশে বিছানায় ধপ করে শুয়ে উদাসীন কণ্ঠে বলে উঠে

-“ঘুমিয়ে পর।
এক দিন বউ ছাড়া তেমন কিছু হবে না।”

-“হুম।
আমি বিয়ে করছি সবে এক মাসের বেশি ভাই।”

-“বউয়ের বড় ভাই আমি।
শালা।”

-“তুমি ভুলে যাচ্ছো।
আগে বড় ভাই তার পর আমার বোনের হাসবেন্ড।
তার পর বউয়ের ভাই,হু।”

মিশান কিছু বলে না।
মিনিট পাঁচ এক সময় দু’জন চুপ চাপ থাকে।
তার পর মিশান হঠাৎ বলে উঠে

-“সিগারেট?”

-“কই পাবা?
আমার কাছে নাই।
তোমার বোন দেখলে খবর আছে।”

সোহান অসহায় কণ্ঠে জানায়।

-“আরে বেডা।
আমার কাছে আছে।

মিশান বেশ ভাব নিয়ে জবাব দেয়

-“তাহলে হয়ে যাক।”

খুশি হয়ে বলে উঠে সোহান

-“হুম এমনিতেও
ঘুম আসবে না আজ।”

বলেই বিছানা হতে নেমে গিয়ে নিজের সুটকেস টা খোলে সেখান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আনে।
তার পর ওয়ারড্রব এর উপর থেকে লাইটার নিয়ে আসে সেখানে তিন টা মোমবাতিও আছে।
হয়তো কারেন্ট না থাকলে ওগুলোর প্রয়োজন পরে।
তার পর দুজনে বেলকনিতে গিয়ে একটা তোয়ালে বিছিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে।
অতঃপর মিশান সিগারেট ধরিয়ে মুখে পুরে।
সোহানও মিশান কে অনুকরণ করে।
মিশান সিগারেটের ছাই ফেলে ধীরে কন্ঠে নিজের লন্ডন থাকাকালীন স্টেলা সম্পর্কে বলতে লাগলো

-“আমি যখন লন্ডন যাই তখন থেকেই ওনি আমার পেছন পেছন ঘুরতো। আমি কখনো পাত্তা দেই নি।কারণ আমার মনে সব সময় তোর বোন ছিল।
কিন্তু ওনাকে কিছু বলতে পারতাম না বয়সে বড় ছিল +ওনার বাবা ওখানের আমি যে ভার্সিটিতে পড়তাম সেখানের প্রফেসর ছিল।
আমি যদি ওনাকে কিছু বলতাম তো ওনি ওনার বাবা কে বলতো। আর ওনার বাবার একমাত্র মেয়ে ওনি সাথে জেদি।
তাই ওনার বাবা চাইলে আমাকে যখন তখন যে কোনো কিছু করতে পারতো।
তাই কখনো কিছু বলার সাহস হয়নি।
শুধু সব সময় মনে মনে দোয়া করতাম তাড়াতাড়ি যেনো লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরতে পারি।
কারণ ওনার ইচ্ছে ছিল আমার পড়া লেখা শেষ আমাকে বিয়ে করবে।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমার ফাইনাল ইয়ারে সময় ওনি তিন বছরের জন্য আমেরিকা চলে যায় কোনো এক কারণে যদিও কারণ টা আমার অজানা।
আর আমার পরীক্ষার পর আমি দেশে চলে আসি।
এই হচ্ছে কাহিনি। আর আজকের টা তো তোদের সবার চোখের সামনে হলো তবুও তোর বোনের এমন করার কোনো ভিত্তি আছে কি?
হ্যাঁ আমার এসব আগে বলার দরকার ছিল ওকে।
কিন্তু আমাদের মাঝে কিছু থাকলে তো বলতাম।
আর এখন যখন বলার মতো একটা কারণ হলো তখন তোর বোন অভিমান করে রয়ইলো।
একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।
আমার মুখ থেকে একবার শোনার প্রয়োজনবোধ করলো না।”

সোহান মন দিয়ে মিশানের কথা গুলো শুনছে।
মিশান আরেক টা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরে।
সোহান নিজের টা শেষ করে বলে উঠে

-“ভাই আর খেয়েও না।
আর ও হয়তো একটু রাগ করেছে।
ভালোবাসার মানুষটার পাশে অন্য কাউকে দেখলে যে কারোর রাগ লাগবে।
সেখানে তুমি ওর স্বামী আর মেয়ে টা তোমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল।
খারাপ লাগা রাগ হওয়া টা স্বাভাবিক।
এখন চলো ঘুমাবে।
দেখবে কাল সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সোহানের দিকে তাকিয়ে মিশান মুচকি হাসে।
তার পর দুজনে রুমে এসে শুয়ে পরে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here