আজ ওদের মন ভালো নেই ৬.

0
24

আজ ওদের মন ভালো নেই

৬.

চমৎকার একটা দিনের শুরু হলো ভয়ংকর এক মন খারাপ নিয়ে। সকালের খবরের কাগজ খুলেই মিথি দেখল, মোখলেসুর আলমকে নিয়ে একটা কলাম লেখা হয়েছে। কলামের শিরোনাম-

‘হাসপাতাল শয্যায় অভিনেতা সাফাত; পরিচালক মোখলেসুর আলমের প্রতি তীব্র ক্ষোভ।’

কলামের শুরুই হয়েছে মিথ্যা দিয়ে। মিথ্যা দিয়ে শুরু হওয়া কলামের মূল কথা খুবই ভয়ংকর। কলাম লেখক, মোখলেসুর আলমকে মোটামুটি ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। এই লেখা পড়লে পৃথিবীর যেকোনো মানুষ নিঃসন্দেহ হয়ে যাবে, বাংলাদেশের অর্ধেক ডায়রিয়া ও ফুড পয়জনিং-এর পেছনে আছে মোখলেসুর আলমের হাত। কলাম লেখকের চেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মোখলেসুর আলমের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সয়লাব বেয়ে যাচ্ছে। একজন বি-গ্রেড তারকা খুব মাথা গরম করে লিখেছেন, তার ক্যারিয়ারের পতনের পেছনেও নাকি আছে মোখলেসুর আলমের হাত। কোনো এক কালে তিনি খুব নামজাদা পরিচালকের ফিল্ম সাইন করেছিলেন। মোখলেসুর আলমের নাটকে অভিনয় করার পর সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু শুটিংয়ের আগের দিন হঠাৎ তার শরীর খারাপ হয়ে গেল। হাসপাতালে টানা সাত দিন ভর্তি। ডাক্তাররা বললেন, খাদ্যনালিতে আলসার হয়েছে। সহজে সমাধান সম্ভব না। দীর্ঘসময় হাসপাতালে থাকতে হবে। ফলে তার ফিল্মে কাজ করার সুযোগটা হারিয়ে গেল। এই যে গেল আর উঠে দাঁড়াতে পারলেন না। অসুখের আগে যেহেতু তিনি মোখলেসুর আলমের নাটকে কাজ করেছেন সেহেতু আলসার ঘটিত সমস্যার সৃষ্টিদাতাও তিনি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিনা কারণে এতো হেনস্তা হওয়ার পর মোখলেসুর আলমের কাছে কাজ পাওয়া যে কেবলই সুমধুর কল্পনা তা মিথি জানে। মিথি কল্পনায় বিশ্বাসী নয়। তার বিশ্বাস কেবল কাজে। মোখলেসুর আলম টেলিফোন করে সেই কাজের পিণ্ডিও চটকে দিলেন। খুব হম্বিতম্বি করে বললেন,

‘ ইউ ব্লাডি ইডিয়ট! তোমার ধারণা এতোকিছুর পরও এই ফ্লোরে কাজ করে খেতে পারবে তুমি? সরি টু বার্স্ট ইউর বাবল, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে তোমার ক্যারিয়ারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করব।’

মিথি তার হম্বিতম্বির বিপরীতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মোখলেসুর আলম রাগত স্বরে শেষ হুমকিটা পেশ করলেন,

‘ আজকের দিনের মধ্যে আমার নামে আসা সকল এলিগেশন ক্লিয়ার করবে তুমি। কী করে করবে, সে প্রশ্ন আমি শুনতে চাই না। ইউ হ্যাভ টু ড্যু ইট। নয়তো তোমার নামে মানহানির মামলা করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।’

মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রাখল। ফুলির মাকে ডেকে এক কাপ গরম চা দিতে বলে লম্বা সময় নিয়ে গোসল করল। গোসলের মাঝেই বাথরুমের দরজায় হামলা দিলেন খালামণি। কাঠের দরজায় একটা ঝড় তুলে ফেলে বললেন,

‘ মিথি? এই মিথি, দরজা খোল।’

‘ কী সমস্যা খালামণি?’

খামামণি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

‘ তোর সঙ্গে আমার জরুরি আলাপ আছে।’

মিথি খুব বিরক্ত হলো ,

‘ জরুরি আলাপ থাকলেই গোসলের মাঝপথে বেরিয়ে আসতে হবে? তুমি একটু অপেক্ষা করতে পারবে না?’

‘ না পারব না। আমি পয়েন্ট ঠিক করে এনেছি। অপেক্ষা করতে হলে পয়েন্টগুলো ভুলে যাব।’

মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ টেবিলের উপর কাগজ-কলম আছে। ভুলে যাওয়ার ভয় থাকলে পয়েন্টগুলো লিখে ফেলো। আমি গোসল শেষ না করে বের হবো না।’

কথাটা বলে ফেলেই দারুণভাবে চমকাল মিথি। তার হঠাৎ করে মনে হলো, খালামণি তার হৃদয়ের খুব কাছের মানুষ। তাবৎ দুনিয়ার সকলের সাথে মিথি সংযত ব্যবহার করে। কেবল খালামণির উপরই তার যত বিরক্তি, রাগ, জেদ। এই রাগটা কাছের মানুষের জন্যই বরাদ্দ। আমরা সাধারণত, দূরের মানুষের সাথে রেগে যেতে পারি না। মিথি গোসল সেরে বের হয়ে দেখল খালামণি চলে গিয়েছেন। টেবিলের উপর একটা কাগজ পাখার হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে। খালামণি সত্যি সত্যিই তার পয়েন্টগুলো লিখে ফেলেছেন। মিথি কাগজটা হাতে তুলে পয়েন্টগুলো পড়ল। তিনি এক নম্বরে খুব অফেন্সিভ কথা লিখেছেন,

১. দুইদিন ক্যামেরা ধরে তোর খুব ঢঙ হয়েছে। অতি শীঘ্রই এক থাপ্পড়ে তোর সব ঢঙ ছুটিয়ে দেওয়া হবে।

২. বিয়ে করে, বরের সঙ্গে যাবতীয় রঙঢঙ করে বিয়ে ভুলে যাওয়ার যে নাটক তুই দেখাচ্ছিস তা আমার অসহ্য ঠেকছে। বিয়ে কোনো ইয়ার্কির বিষয় না। এটা নিয়ে ইয়ার্কি করবি না। বিয়ে আল্লাহর রহমত। যেভাবেই হোক, হয়েছে।

৩. তোর মায়ের বিয়ে হয়েছিল হুট করে। তখন সে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছে। পরেরদিন পরীক্ষা। সকালে আব্বা তার ঘুম ভাঙিয়ে খুব শান্ত কণ্ঠে বললেন, আজ তোমার বিয়ে। শান্ত মাথায় পরীক্ষা দিয়ে আসো। নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তোর মা নার্ভাস হলো। নার্ভাসনেসের কারণে পরীক্ষায় বসেই দুই দুইবার বমি করে ফেলল। মাথা ঘুরিয়ে অচেতন অবস্থা। বাবা তার কথায় স্থির রইলেন। তোর মা-বাবার বিয়ে হলো হাসপাতালে। তোর বাবা রোবট ধরনের মানুষ। তোর মা এই রোবট ধরনের মানুষ পেয়ে খুবই খুশি হলো। বর দেখে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সে একেবারে সুস্থ । আমার মনে হয়, তোরও একবার নিজের বরের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানো দরকার। তার দিকে তাকালেই তোর সব কষ্ট মুছে যাবে।

৪. তোর দাদার এসিস্ট্যান্টের সাথে যোগাযোগ করে জামাইয়ের টেলিফোন নাম্বার আর ঠিকানা জোগাড় করেছি আমি। তুই অতি অবশ্যই তার সাথে যোগাযোগ করবি। তোর দাদা এখনও তোকে এর সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কেন করছেন না তা ভেবে আমি খুবই আশ্চর্য হচ্ছি। তবে তোর জানা থাকা উচিত, তিনি অতি বুদ্ধিমান মানুষদের একজন।

৫. পয়েন্ট লিখে ফেলার ব্যাপারটা চমৎকার লেগেছে। সরাসরি বললে, কথাগুলো ঠিকঠাক বলতে পারতাম বলে মনে হয় না। গুছিয়ে লিখে ফেলতে পেরেছি বলে আনন্দ লাগছে। এরপর থেকে এই পদ্ধতিই অবলম্বন করব।

তারপর একটা নাম্বার আর ঠিকানা লিখে খালামণি লেখা শেষ করেছেন। মিথি কিছুক্ষণ কাগজটার দিকে তাকিয়ে থেকে তৈরি হতে গেল। আজকের তৈরি হওয়াটা গন্তব্যহীন। কোথায় যাবে ঠিক করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

মিথি আজ খুব তৈরি হয়ে বেরিয়েছে। যে পোশাকটা সে সচরাচর পরে না সেই পোশাকই পরেছে। স্বচ্ছ আকাশের মতো নীল একটা শাড়ি। কপালে ছোট্ট কালো টিপ। চৈত্রের গরমে শাড়ি পরা উচিত হয়নি। মিথির আজকে উচিত-অনুচিত নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। প্রচন্ড ভয়ের মুখোমুখি হয়ে গেলে যেমন স্থবির, অনুভূতিশূন্য লাগে। সমস্যায় সমস্যায় ভর্তি একটা জীবন বয়ে বেড়াতে বেড়াতে মিথির আজ সেরকম লাগছে। সমস্যাগুলো নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মিথি অনেকটা সময় উদ্দেশ্যহীন হেঁটে মেট্রোতে চড়ে চলে গেল মতিঝিল। মতিঝিল তার কোনো কাজ নেই। কেন এলো সেটাও বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ রাস্তা ধরে অকারণেই হাঁটল মিথি। একসময় তপ্ত ফুটপাতে বসে পড়ে ফোন করল সাফাতের এসিস্ট্যান্টকে। এসিস্ট্যান্ট ফোন তুলতেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিথি বলল,

‘ সাফাত ভাইয়াকে দিন তো।’

এসিস্ট্যান্ট খুব আশ্চর্য হয়ে বলল,

‘ আপনি ওই মশা আপা না? মশা খাইয়ে আবার ফোন দিয়েছেন? এতো বড় দুঃসাহস? স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনাদের নামে এট্যাম্প টু মার্ডারের মামলা করবেন। যত কথা আছে সব হবে আদালতে।’

মিথি ঠান্ডা স্বরে বলল,

‘ সাফাত সাহেবকে ফোনটা দিন। দিয়ে বলুন, আমি কথা বলতে চাই।’

মিথি জানে, সে এমন কোনো লাড্ডু না যে তার কথা শুনলেই সাফাত লাফিয়ে লাফিয়ে কথা বলতে রাজি হয়ে যাবে। অন্য সময় হলে হয়ত চিনতেও পারত না। যেহেতু এতসব কান্ডের মধ্যে সে একটা বিশেষ চরিত্র সেহেতু আজ ব্যতিক্রম হতেই পারে।

‘ আপনি চাইলেই স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন কেন? স্যারের হিউজ কাজ। যারতার সাথে কথা বলার সময় তার নেই।’

মিথি বলল,

‘ আপনি ওনাকে আমার কথা বলুন। ওনি যদি না চান আমি এই মুহূর্তে ফোন কেটে দিব।’

মিথির কণ্ঠের দৃঢ়তায় বিভ্রান্ত হয়ে গেল এসিস্ট্যান্ট। কিছুটা চমকে গেল মিথি নিজেই। কিছুক্ষণ নীরবতার পর ফোনের ওপাশটা সক্রিয় হয়ে উঠল। গমগমে কণ্ঠে কথা বলে উঠল স্বয়ং সাফাত। রাগী কণ্ঠে বলল,

‘ বলুন।’

সাফাত সত্যি সত্যিই ফোন তুলবে এতোটা চিন্তা করতে পারেনি বলেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল মিথি। একটু নীরব থেকে বলল,

‘ আমি কী আপনার সাথে দেখা করতে পারি? আমার একটা এপয়েন্টমেন্ট দরকার।’

সাফাত অন্যরকম কিছু ভেবেছিল। মিথি তার কাছে এপয়েন্টমেন্ট চাওয়ায় একটু থমকাল। গুছিয়ে রাখা কড়া কড়া কথাগুলো গিলে নিয়ে বলল,

‘ এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে কী হবে? আপনার আরও কিছু বলার আছে?’

‘ আছে।’

‘ থেকে থাকলে এখনই বলুন। এপয়েন্টমেন্টের কী দরকার?’

মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ কথাগুলো আমি আপনার সামনে বসে বলতে চাই।’

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে সাফাত বলল,

‘ বেশ। দুপুর বারোটায় আমার অফিসে আসুন। আমি অপেক্ষা করব।’

ফোন রেখে রাস্তার ধারে উদাস হয়ে বসে রইল মিথি। এই কাঠফাটা দুপুরে কোনো রূপবতী মেয়ে ব্যস্ত রাস্তায় মূর্তির মতো বসে আছে, এমন দৃশ্য বোধহয় সচরাচর দেখা যায় না। অনেক পথচারী এই বিরল দৃশ্যটা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে। মিথি সেসকল দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে বসে রইল। রোদের তাপে পিঠ পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না। জীবনের সাথে দৌঁড়ে দৌঁড়ে বড় ক্লান্ত সে। মনে হচ্ছে, তার আর কোথাও যাবার নেই। কতক্ষণ এইভাবে বসে থেকেছে খেয়াল নেই মিথির। ঘোরটা কাটল কানের পাশে পরিচিত এক কণ্ঠস্বরে। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখল, নাহিদ। গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার। ক্রাচ হাতে বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিথিকে তাকাতে দেখেই চিৎকার করে বলল,

‘ আরে, মিথি আপু? তুমি এখানে? হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!’

নাহিদের উচ্ছ্বসিত মুখ দেখে মনে হলো, মিথি তার ব্যক্তিগত বসার ঘরে বসে আছে। নিজের বসার ঘরে বহুদিনের পরিচিত মিথিকে দেখে সে একই সাথে আশ্চর্য ও আনন্দিত। মিথি কপাল কুঁচকে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইল। অত্যন্ত চাপাবাজ নাহিদকে তার খুব একটা পছন্দ না। নাহিদ ধপ করে মিথির পাশে ফুটপাতে বসে পড়ল। আনন্দিত কণ্ঠে শুধাল,

‘ বলো কী খাবে? ফুটপাতে যেহেতু বসেছ ফুটপাত জাতীয় খাবার খেতে হবে। ফুটপাত জাতীয় খাবারের মধ্যে মেয়েদের সবথেকে পছন্দ হলো হাওয়াই মিঠাই। হাওয়াই মিঠাই খাবে?’

মিথিকে উত্তর দেওয়ার ফুরসত না দিয়ে একটা বাচ্চা ছেলেকে ডেকে দুটো হাওয়াই মিঠাই কিনল নাহিদ। আরেকটা বাচ্চা মেয়ের থেকে কিনল একটা লাল গোলাপ। মিথি গোলাপ হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বলল,

‘ গোলাপ কেন?’

‘ তার আগে বলো, তুমি এখানে কী করছ? সুইসাইড টুইসাইড করবে নাকি?’

শেষ কথাটা চোখ বড় বড় করে বলল নাহিদ। মিথি বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ অযথা সুইসাইড করতে যাব কেন?’

নাহিদ ভুবন ভুলানো হাসি হেসে বলল,

‘ রাস্তার ওপাশ থেকে অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে খেয়াল করছিলাম বুঝলে? তোমার বডি লেঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছিল এখনই গাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমি তোমার ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষা করছিলাম। ভাই হিসেবে তো আমার কিছু দায়িত্ব আছে। আমার বোনের লাশ রাস্তায় বেওয়ারিশের মতো পড়ে থাকবে, ব্যাপারটা খারাপ দেখায়।’

মিথি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। নাহিদের দিকে তাকিয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তোর পায়ে কী হয়েছে?’

নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নির্বিকার মুখে বলল,

‘ ট্রাকের নিচে চাপা গিয়েছে। মেজর একটা এক্সিডেন্ট বুঝলে? জানের উপর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পায়ের উপর দিয়ে গেল বলেই রক্ষা।’

‘ তোর পায়ের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে গেল, পা তো গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়ার কথা।’

নাহিদ হাসল,

‘ গুড়ো গুড়োই তো হয়েছে। ডাক্তার টেকনিক করে প্লাস্টার করে দিয়েছে। গুড়া গুড়া ব্যাপারটা বুঝা যাচ্ছে না। আচ্ছা, সাব্বির ভাইয়ের কী খবর?’

নাহিদ ‘সাব্বির ভাই’ কথাটা এমনভাবে উচ্চারণ করল যেন সাব্বিরের সাথে তার মাই ডিয়ার টাইপ সম্পর্ক। বেশ কিছুদিন দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে না বলে সে কিঞ্চিৎ চিন্তিত। মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তুই এখানে কী করছিস?’

সাব্বির সম্বন্ধীয় প্রশ্নটা মিথির এড়িয়ে যাওয়া নাহিদ খেয়াল করল কি-না বুঝা গেল না। হাসিমুখে বলল,

‘ মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। ওর নাকি কীসব কেনা দরকার। দুই ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছি, দেখা নেই। মেয়ে মানুষ মাত্রই লেইট।’

মিষ্টির কথা ভাই-বোনদের থেকে হালকা পাতলা শুনেছিল মিথি। সে অবাক হয়ে বলল,

‘ তুই গার্লফ্রেন্ডের কেনাকাটার জন্য ভাঙা পা নিয়ে চলে এসেছিস?’

নাহিদ জবাবে মিষ্টি করে হাসল। শুধাল,

‘ তোমাকে কিন্তু শাড়ি পরে অন্যরকম লাগছে। কোথায় যাবে বল তো?’

মিথি ফট করে বলে বসল,

‘ কলাবাগান।’

‘ কলাবাগান!’ অবাক হলো নাহিদ। ‘ কলাবাগান কেন?’

মিথি খুব তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়িয়ে একটা রিকশা ডাকল। যেন কী যেন দরকারি কাজ এক্ষুনি মনে পড়ে গিয়েছে। রিকশায় উঠে বসতে বসতে বলল,

‘ একটু দরকার আছে।’

নাহিদকে দরকারের কথা বললেও তৃতীয় বারের মতো চমকাল মিথি। কলাবাগানে সাব্বিরের বাসা। সকালে কাগজে এমনটাই লিখেছিলেন খালামণি। রিকশা দ্রুত কলাবাগানের দিকে ছুটছে। সাব্বিরের বাসার দিকে সে কেন যাচ্ছে এই উত্তর মিথির কাছে নেই। মনের ভেতর তীব্র অস্বস্তি নিয়েও রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ঘড়িতে এগারোটা বাজে। কলাবাগান না গিয়ে তার যাওয়া উচিত সাফাতের অফিসে। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে সেই উচিত কাজটা মিথি করল না। নাহিদের দেওয়া ফুল হাতে নিশ্চুপ বসে থেকে সে কলাবাগানের পথেই এগোল। রিকশার ঝাঁকিতে খোলে গেল তার রেশম চুলের খোঁপা। ঘামে লেপ্টে গিয়েছে চোখের কাজল। মিথির নতুন করে খোঁপা বাঁধতে ইচ্ছে হলো না। আজকে বোধহয় মিথির ‘না দিবস’। আজ তার সর্বত্র কেবল না, না, না।

#চলবে…

নৌশিন আহমেদ রোদেলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here