আজ ওদের মন ভালো নেই লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা ৩.

0
167

আজ ওদের মন ভালো নেই
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

৩.

বাইরে চৈত্রের ঝাঁ-ঝাঁ রোদ। ছাদের পাটাতন তাওয়ার মতো তেতে আছে। নাহিদ বিছানার উপর অলস বসে ছিল। বিছানার পাশের জানালাটা খোলা। খোলা জানালা দিয়ে হাওয়া আসছে না। আসছে চৈত্রের তাপ। এমন তাপ-উত্তাপের দুপুর বেলা সাধারণত ঘুঘু ডাকে। ঢাকায় ঘুঘুর দেখা পাওয়া দুষ্কর তাই কাক ডাকছে। সৌধ ছাদের রেলিং-এ দুটো কাক দেখিয়ে বলল,

‘ আম্মা বলে কাকের ডাক অশুভ। ঘন ঘন কাক ডাকলে মানুষ মরে। মনে হয় তুই মরে যাবি।’

নাহিদ হেসে ফেলল,

‘ ঢাকা শহরে যে পরিমাণ কাক! আর যে পরিমাণ কা-কা শোনা যায়। তোর থিওরি ঠিক থাকলে শহরের অর্ধেক মানুষ মরে সাফ হয়ে যেত। আমার ধারণা, এরা তৃষ্ণার্ত। ঢাকা শহরে কাকদের পানি খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা উচিত, বুঝলি? শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কাকের বাস। অথচ তাদের দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না! এটা তো রীতিমতো বৈষম্য। শহর কী আমাদের একার? তাদের নয়?’

সৌধ ভাবুক মুখে মাথা নাড়ল। দুই বন্ধু একত্রে হলেই তাদের মধ্যে একটা দার্শনিক ভাব চলে আসে। অনেক হাস্যকর দর্শন নিয়ে গম্ভীরমুখে আলোচনা করার প্রতিভা তাদের আছে। সৌধকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো নাহিদ। ধমক দিয়ে বলল,

‘ বসে আছিস কেন? যা একটা বাটিতে করে কাক দুটোকে পানি দিয়ে আয়।’

সৌধ অবাক হলো,

‘ সত্যি দিব?’

‘ অবশ্যই সত্যি দিবি। স্বামী বিবেকানন্দ কী বলেছেন জানিস না? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। যা ঈশ্বর সেবা করে আয়।’

সৌধ ইতস্তত করে উঠে গেল। নাহিদ কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে সৌধর মহৎ কর্ম দেখল। তারপর নজর দিল নিজের পায়ের দিকে। ভোর রাতের দিকে ফিরে বেহুশের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল দু’জনে। পায়ের ঘা’টা পরিষ্কার করা হয়নি। নর্দমার ময়লা পানির চাপে আপাতত রক্ত বন্ধ হয়ে আছে। ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। নাহিদ পা’টা নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখল। পায়ে গুলি লাগা যতটা অসুবিধার তার থেকেও অসুবিধার এর তাপ-উত্তাপ। গুলির রোগী শুনলেই ডাক্তাররা সন্দেহী চোখে তাকান। চোখ-মুখ গম্ভীর করে বলেন, ‘পুলিশ কেস। পুলিশকে না জানিয়ে কোনো চিকিৎসা আমরা দিতে পারব না।’ পুলিশকে না জানিয়ে চিকিৎসা ম্যানেজ করা এক ফ্যাঁকড়া। আবার তাদের জানানো আরেক ফ্যাঁকড়া। পুলিশ প্রথমেই গুলির রোগীকে ভয়ংকর অপরাধী ভেবে ফেলবেন। হাজার বুঝিয়েও তাদের সন্দেহ কাটানো যাবে না। তাদের সন্দেহ শুধু কাটবে পয়সা ঢালার পর। নাহিদ পকেট হাতড়ে একটা সিগারেট বের করে সৌধকে বলল,

‘ গজ, সেভলন কিনে আন তো। জিনিসটা নিজেই ম্যানেজ করে ফেলি।’

সৌধ ততক্ষণে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। নাহিদের কথায় অবাক হয়ে বলল,

‘ নিজেই ম্যানেজ করবি মানে কী? ক্ষতের ভেতরটা কাদামাটি ঢুকে ভয়ংকর অবস্থা। নর্দমায় কত রকম রাসায়নিক পদার্থ এসে মিশে কোনো ধারণা আছে তোর? ইনফেকশন হয়ে পা’টা হারাবি।’

সিগারেটের শলাকায় একটা টান দিতেই নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসতে চাইল নাহিদের। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। মুখ তেতো হয়ে আছে। এই অবস্থায় এতো ঝামেলায় যেতে ইচ্ছে করছে না।

___________

ইশতিয়াকের জীবনটা ‘ লাইক আ হেল’ এর মতো হেল হয়ে আছে। চাইলেই ‘হেল’-কে সুন্দর করে জাহান্নাম বলে ফেলা যেত। কিন্তু ইশতিয়াকের জাহান্নাম শব্দে খানিক অস্বস্তি আছে। জাহান্নাম শব্দ উচ্চারণ করলেই সে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে। বিরাট সাপ-বিচ্ছু এসে কামড়ে দিতে চায়। সে তুলনায় ‘হেল’ কিছুটা সহনীয়। ইশতিয়াক তার ‘হেল’ জীবন নিয়ে খুবই বিপদে আছে। মাসখানেক আগে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হঠাৎ তার মনে হয়েছে, ডাক্তারি তার জন্য নয়। সে ডাক্তারি পড়ে তার অর্ধেক জীবন নষ্ট করে ফেলেছে। তার আসলে অন্য কিছু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই অন্যকিছুটা কী! সেটাও ইশতিয়াক ধরতে পারছে না। রোগীর রোগ নির্ণয় করা ছাড়া অন্য কোনো প্রতিভা তার মধ্যে নেই। এটাও একটা সমস্যা। তার ক্রমেই মনে হচ্ছে, ডাক্তারি করেই তার মহামূল্যবান কোনো প্রতিভা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার আর ডাক্তারি ফাক্তারি ভালো লাগছে না। ‘ডাক্তারি’ যদি একটা মানুষ হতো তাহলে ইশতিয়াক হতো তার আশু হত্যাকারী। ব্যাপারটা দাঁড়াল এই রকম, ইশতিয়াক যাকে হত্যা করতে চায় তার সাথেই তাকে সহবাস করতে হচ্ছে। ‘সহবাস’ শব্দটা শুনেই চট করে খারাপ ধারণা করে ফেলবেন না। ইশতিয়াক ভালো ছেলে। খারাপ ধরনের কথাবার্তা তার কাছে বিষ। এখানে সহবাস বলতে একত্রে বসবাস। বসার ঘরের দেওয়াল ঘড়িতে কোকিল ডেকে উঠল। সেই সাথে ঝনঝন করে টেলিফোন বাজল। এই এন্ড্রোয়েডের জমানাতেও ইশতিয়াকের ঘরে একটা টেলিফোন আছে। টেলিফোনটা কিনেছে সে খুব শখ করে। কৈশোরে তার খুব শখ ছিল টেলিফোন কানে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিকার সঙ্গে আলাপ করবে। এক ফাঁকে গান গাইবে,

‘ আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন
কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে…’

টেলিফোনে প্রেম করার জন্য একটা প্রেমিকাও জোগাড় করে ফেলেছিল সে সময়। কার বাড়ি টেলিফোন আছে খোঁজে খোঁজে বের করে প্রেম করা সহজ কথা নয়। ইশতিয়াক সেই অসাধ্য সাধন করেছিল। কিন্তু ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’ বলার আগেই দাদাভাই দেখে ফেললেন। ফোনটা কান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

‘ কে তুমি? তোমার বিবাহ হয়েছে? গান শুনতে হলে বিবাহ হওয়া জরুরি। তোমার আব্বাকে ফোন দাও, তোমার বিবাহের ব্যবস্থা করছি।’

বিবাহের ব্যবস্থা করতে হলো না। মেয়েটা ফোন কেটে দিল। ‘কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে..’ বুকের ভেতর পুরে রেখেই স্কুল কলেজ পাশ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো ইশতিয়াক। এমবিবিএস শেষ করে প্রথম চাকরির প্রথম স্যালারিতেই আগে টেলিফোন কিনল। কেনার পর দেখল, ছোটবেলার সেই ধুকপুক আনন্দটা এখন আর নেই। এইযে নেই, এইযে একটা স্বপ্নের মৃত্যু — এটাও বড় পীড়া দেয় ইশতিয়াককে। ইশতিয়াক উঠে গিয়ে টেলিফোন তুলল। ওপাশ থেকে নাহিদের আনন্দিত কণ্ঠ ভেসে এলো,

‘ কই আছ ভাই?’

‘ ইন দ্য হেল।’

নাহিদকে খুবই আনন্দিত শোনাল। সে খুশি হয়ে শুধাল,

‘ তাই নাকি? ‘হেল’ তো সাতটা। তুমি কোনটাতে আছ? জাহীম, হুতামাহ, হাবিয়াহ, লাযা, সা’ঈর, সাকার নাকি আন-নার?’

ইশতিয়াক দীর্ঘশ্বাস ফেলল,

‘ তোর হঠাৎ আমার কথা মনে হওয়ার কারণ কী?’

নাহিদ হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে বলল,

‘ কারণ তো অবশ্য একটা আছে। খুবই বিপদে পড়েছি বুঝলে? কাল রাত থেকে আমার ঘুম উড়ে গিয়েছে। কিছুতেই ঘুমুতে পারছি না।’

ইশতিয়াক ভুরু কুঁচকে বলল,

‘ কেন? ঘুমুতে পারছিস না কেন?’

‘ চোখ বন্ধ করলেই তোমার সেই কলিগটা চোখে ভাসছে। ওইবার দেখলাম না? লম্বা চুল, দারুণ দেখতে? হঠাৎ কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। তোমার সাথে দেখা হলে মনে হচ্ছে ঘোরটা কেটে যাবে। তোমার ডিপ্রেশড চেহারার সামনে বসে কোনো সুন্দরীকে কল্পনা করা অসম্ভব। আমি আসছি। দু’দিন তোমার জাহান্নামে থাকব।’

ইশতিয়াককে কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই ফোন কাটল নাহিদ। নাহিদ তার ফুপাতো ভাই হলেও তাদের খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। শুধু নাহিদ নয়। জ্ঞাতি ভাইবোন কারোর সাথেই সম্মুখ আলাপটা হয়ে উঠে না। ‘বিয়ে আতঙ্ক’ ব্যতিরেকে আর কোথাও তাদের কোনো মিল নেই। প্রত্যেকেই আলাদা; নিজের কাজে ব্যস্ত। ইশতিয়াকের ধারণা, নাহিদের মধ্যে এই বিয়ে আতঙ্কও নেই। দাদাভাই বলে একটা জীব যে তাদের জীবনে পুতুল নাচ নাচাচ্ছে সে ব্যাপারে এই ছেলে আশ্চর্য রকম নিষ্পৃহ। নাহিদ এলো ঘন্টা দুই সময় নিয়ে। তাকে দেখে একটুও মনে হলো না, গতরাত থেকে তার ঘুম উড়ে গিয়েছে। শ্যামলা, একহারা, পলিশড চেহারা। হাসলেই টুপ করে একটা টুল পড়ে। ওই টুলের দিকে তাকালে মনে হবে, এই ছেলেটা পৃথিবীর সবথেকে সুখী ছেলে। ভেতরে ঢুকেই সে ইশতিয়াককে তার নতুন ফোন দেখাল। মুখ ভরা গল্প নিয়ে চা খেলো। ইশতিয়াক যে কত জঘন্য চা বানায়, চা খেতে যে কত বিস্বাদ হয়েছে সেটাও বলল। তারপর কাঁচি দিয়ে ক্যাচক্যাচ করে ডান হাঁটুর নিচের টাউজারটুকু কেটে ফেলে বলল,

‘ এটার কী করা যায় বল তো?’

ইশতিয়াক তার হাঁটুর নিচে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেল। ক্ষতর যা অবস্থা তাতে ব্যথা-যন্ত্রণায় এই ছেলের এতক্ষণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ সে হেসে বেড়াচ্ছে! আশ্চর্য!

‘ কী করে হলো?’

‘ বুলেট।’

ইশতিয়াক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল,

‘ এই কাণ্ড কী করে করলি? কলেজে পড়াকালীন শুনেছিলাম তুই নষ্ট ছেলেদের সাথে ঘুরছিস। এখন তো ইউনিভার্সিটি শেষ। এখনও এসব? পুলিশ কেস হলে?’

নাহিদ উত্তর দেওয়ার আগেই দরজায় বেল বাজল। ইশতিয়াক এমনভাবে চমকে গেল যেন দরজা খুললেই দেখতে পাবে, এক ব্যাটালিয়ান পুলিশ। তারা নাহিদকে চোখের সামনে দিয়ে টেনেহিঁচড়ে ভ্যানে তুলবে। ইশতিয়াককে ধরে নিয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু হবে না। পুলিশদের কাজই ধরে নেওয়া। তাদের কাজ তারা করবে। ইশতিয়াক আতঙ্কে অস্থির হয়ে দরজা খুলতে গেল। দরজাটা অল্প খুলে উঁকি দিয়ে তাকাতেই দেখল পুলিশ নয়, একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটিকে ইশতিয়াক চিনে। তার পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। ইশতিয়াকের সিনিয়র, ডা. মোস্তফা সাহেবের মেয়ে। ইশতিয়াকের ধারণা, মেয়েটা খুবই পাঁজি। এবার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। মেডিকেলের জন্য পড়ছে। মাঝে মাঝে ইশতিয়াকের কাছে পড়া বুঝতে আসে। আর এসেই নানারকম বিপদজনক কাজ করে বসে। ওসব কাজের কথা ইশতিয়াক মুখেও আনতে পারবে না।

‘ আপনি এভাবে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ভাইয়া?’

‘ভাইয়া’, এই ভাইয়া ডাকে একটা দুষ্টু দুষ্টু ব্যাপার আছে। সব কথা স্বাভাবিক কেবল ভাইয়া শব্দটাতেই এই মেয়ের আবেগের বাড়াবাড়ি। ‘খারাপ কথা’ এক নম্বর বিষ। এই মেয়ে হলো ইশতিয়াকের দুই নম্বর বিষ। ইশতিয়াক চোখ-মুখ গম্ভীর করে বলল,

‘ এই সময়ে তোমার কী চাই?’

মেয়েটি মিষ্টি করে হাসল। গায়ের লম্বা জামাটা একটু ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলল,

‘ আমাকে কেমন লাগছে, বলুন?’

ইশতিয়াক খেয়াল করল, মেয়েটা বেশ সেজেছে। ইশতিয়াক কী বলবে বুঝতে পারল না। থমথমে মুখে বলল,

‘ ভালো।’

মেয়েটি খুশি হতে পারল না। ভুরু বাঁকিয়ে বলল,

‘ আপনি এমন কুষ্ঠরোগীর মতো চেপে চেপে কথা বলছেন কেন? সুন্দরী মেয়েদের প্রশংসা করতে হয় মন খোলে। ডাক্তার হয়ে বসে আছেন অথচ এটুকু জানেন না?’

মেয়েটি একটু থামল। ভেতরে উঁকি দিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে বলল,

‘ ভেতরে কেউ আছে নাকি? আপনার হাবভাব তো সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, পারলে দরজার কপাট খুলে হাত নিয়ে আসবেন। ভেতরে দেখি?’

ইশতিয়াক আরও এঁটে দাঁড়াল। কিছুতেই নাহিদের গুলি ফুলির ব্যাপার এই মেয়েকে জানতে দেওয়া যাবে না। দেখা যাবে ঘটনাটা পুরো রাষ্ট্র করে একটা কান্ড করে ফেলবে। ইশতিয়াক তাড়াহুড়ো করে বলল,

‘ হঠাৎ এতো সেজেছ কেন?’

‘ আজ আমার মামাতো বোনের বিয়ে। বিয়েতে সেজে যেতে হয় তাই সেজেছি। আমার আপু ভয়ংকর সুন্দরী। সবাই বলে আমি তার থেকেও বেশি সুন্দরী। তার কারণ হলো, আমার চোখের মণি বটল গ্রীন। আপনি কী খেয়াল করেছেন? না খেয়াল করলে এখন করুন…’

কথাটা বলেই মেয়েটা এক পা এগিয়ে এলো। সাথে সাথেই ইশতিয়াকের বুক ধরফর করে উঠল। এই মেয়ে কাছে এলেই মনে হয়, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ইশতিয়াক তাড়াহুড়ো করে দরজা বন্ধ করে দিল। এই বিষ মেয়েটার নাম প্রভা। প্রভা অর্থ দীপ্তি হলেও ইশতিয়াকের ধারণা এই মেয়েটার যন্ত্রণায় স্ট্রোক ফোক হয়ে তার সমস্ত জীবনের প্রভা মিটে যাবে। ইশতিয়াক দরজা বন্ধ করে পেছনে ফিরতেই দেখল, নাহিদ চোখ-মুখ অন্ধকার করে বসে আছে। ইশতিয়াক এগিয়ে এসে বলল,

‘ কী রে? ব্যথা করছে?’

‘ ভীষণ।’

ইশতিয়াক মাথা নেড়ে বলল,

‘ স্বাভাবিক। তুই যে এতক্ষণ কী করে সহ্য করলি সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। পায়ের ব্যথায় এতোক্ষণ তোর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা।’

নাহিদ হতাশ কণ্ঠে বলল,

‘ পায়ে না। বুকে ব্যথা করছে।’

ইশতিয়াক অবাক,

‘ বুকে আবার কী হলো?’

নাহিদ দুঃখী কণ্ঠে বলল,

‘ কোনো মেয়ের বিয়ের কথা শুনলেই আমার বুক ব্যথা হয়। মেয়েটা কে? নাম কী? কিছুই জানি না। অথচ বুকের ভেতরটা কেমন ধরফর করছে। মনে হচ্ছে স্ট্রোক হয়ে যাবে। সুন্দরী একটা মেয়ের এভাবে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, এটা কেমন কথা? পৃথিবী এত নিষ্ঠুর কেন!’

ইশতিয়াক জবাব দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পেল না। হতবাক হয়ে এই আশ্চর্য ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল। আশ্চর্য!

#চলবে…

(পরের পর্ব কালকেই দেওয়া হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here