আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে #লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো #চতুর্থ_পর্ব

0
166

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#চতুর্থ_পর্ব

-‘গেস্ট রুমে রেখে গেস্ট বানানোর কি দরকার? একেবারে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই করে ফেলো আম্মু। দয়ার শরীর তোমার। এতে সে বাসা পাবে তোমার মনও শান্ত হবে। হিরোমার্কা খারুস চেহারার লোকটা পাত্র হিসেবেও মন্দ হবে না। তাকে ডাকো। এখনই ডাকো, বিয়ের কাজটা চটজলদি
সেরে ফেলি।’

উপরোক্ত কথাটি কুহু মনে মনে বলে পানির সাহায্যে মুখের ভাতটুকু গিলে নিলো। মনে মনে না বলে উপায়ই বা কি? এই কথা বাবা মাকে সরাসরি বলা যায়? উহুম যায় না। সে যতই বেহলাজ হোক তবুও মানুষ তো। আর মানুষের চক্ষুলজ্জা বলে একটা ব্যাপার থাকে। তারও আছে৷ রিদওয়ানকে সে যতই পছন্দ করুক স্যার তো। মনে মনে স্যারের গুষ্টি শুদ্ধো উদ্ধার করা যায়। কিন্তু বিয়ে, ঘরজামাই এসব যেন শ্রুতিকটু
দেখায়। চোখে লাগে। তাছাড়া বাঙালি বাবা মা এতটা ভালো হয় না। বাঙালি সন্তানরা খুব কম ফ্রেন্ডলি বাবা মা পায়। সে পায় নি। যারা পায় নি তারা জানে ভুলভাল বকলে কাঁঠালের ডাল থেকে শুরু করে ডাল ঘুটনির আঘাত ঠিক কতটা তীব্র।
তার বাবা মা অরজিনাল বাঙালি। তাদের মাঝে বিন্দুফোঁটা খাদ নেই। সে যদি সত্যি সত্যি কথাটি উচ্চারণ করত তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভাত তোলা চামচ ছুঁড়ে মারতেন তার মমতাময়ী মা ইসমত আরা বেগম। সেই চামচ ঠিক কোথায় লাগত বলা মুশকিল। তবে লাগত এটা সিওর। ভাইয়ের বন্ধু মানে ভাইই। যতই হোক আপন মায়ের পেটে রক্তহীন সম্পর্কের ভাই। ধরা যাক, হাক ডাকে সাজানো ভাই। তবুও ভাই।আর তাকে নিয়ে মজা করা। তার এই কথার পিষ্টে মজার করার স্বাদ ভাতের চামচের কড়াঘাতে মিটিয়ে ছাড়তেন। এরা বাঙালি বাবা-মা
অন্যকিছু না। তাই উক্ত কথাটি মনে মনে জবাব দিয়ে মনকে আপাতত ঠান্ডা করল। মুখ ফসকে বললে যদিও কলিজাটা ঠান্ডা হতো। কিছু করার নেই, আপাতত দুধের স্বাদ ঘোলেই নাহয় মেটাক। তখনো ইসমত আরা বেগম স্বামী মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বকবক করেই যাচ্ছে। উনার একটাই কথা, উনি ছেলেটাকে বাসায় থাকতে দিবেন, ব্যস। ছেলেটা দেশে এসে বন্ধুর বাসা থাকতে হোটেলে পড়ে থাকবে তবুও উনারা দেখেও না দেখার ভাণ ধরবে তাহলে ব্যাপারটা ছোটোলোকি হয়ে যায়। বন্ধুত্ব নিয়ে কথা ওঠে। কুহু তার আম্মুর জনদরদী মার্কা ভাষণ শুনে রাগে তাকাল না। কথাও বলল না। রুপক তিন নাম্বার চিংড়ি পাতে তুলে নিয়ে মজা করে খাচ্ছে। চিংড়ি তাদের দুইভাই বোনের ভীষণ পছন্দ। এতটাই পছন্দ যে তার
বন্ধুকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে অথচ তার কোনো হেলদোলই নাই। সে আছে খাওয়ার তালে।সে খেতেই মনে হয় পৃথিবীতে এসেছে। ভাইয়ের কাজকর্ম দেখে কুহুর মাঝে মাঝে মনে হয় তার ভাই আস্ত পাগল। অবশ্য পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না। তার ভাই হচ্ছে খাওয়া পাগল, ভবের পাগল। এছাড়া এটাও বুঝছে না কুহু, তার আম্মুর মাথার নাট টাট খুলে পড়ে টড়ে গেল নাকি? পড়লে সেটা কোথায় পড়ল? সেটা তুলে এখুনিই লাগিয়ে না দিলে সর্বনাশের মাথায় বাঁশ। তার মাতারাণী এত
দরদী হয়ে উঠেছে যে, তিনি প্রায় ভুলেই বসেছেন উনার এক
অতীবও সুন্দরী বিবাহযোগ্যা কন্যা আছে। আর তিনি যাকে
বাসায় রাখার কথা বলছেন সেই যুবকটি বিবাহযোগ্য এক
সুদর্শন যুবক। বিবাহযোগ্যা মেয়ে এবং ছেলে দু’জনে আগুন এবং ঘি পাশাপাশি রাখার মতো বিপদজনক। তাছাড়া মানুষ
শুনলে কি বলবে? সবাই কি তার মায়ের মতো সরল মনের?
নাকি সবার চিন্তা ভাবনা হয় সহজ সরল। যেখানে ভাইয়ের পাশাপাশি হেঁটে গেলেই গফ নামক তকমা লেগে যায় মাঝে মাঝে। সেখানে এক বাসায়, ভাইয়ের বন্ধু থাকলে না জানি কত কেচ্ছা রটিয়ে দেয়। আসলে দোষটা সমাজের না। দোষ মানুষের। মানুষের চিন্তাধারার। কুৎসিত মনোভাবের। তার মা একজন আর্দশ মায়ের স্থানে দাঁড়িয়ে হয়তো ঠিক বলছে।
নিজের সন্তান বাইরে দেশে গিয়ে হোটেল থাকলে তার মনটা নিশ্চয়ই খুশিতে ডগমগ করতো না। গলা দিয়ে ভাত নামত না। ছেলে যতই বড় হোক, কর্ম করুক, ছেলের চিন্তায় কেঁদে কূল পেতেন না। কেন পেতেন না? কারণ তিনি একজন মা। আর নারীরা সর্বপরী কঠিন মনের হলেও একজন মা হতে পারে না। কখনো না। যার ঘরে দুটো ছেলে মেয়ে আছে সেই মা কিভাবে কঠোরমনের হতে পারে? তিনি নিজের ছেলেকে
রিদওয়ানের স্থানে দাঁড় করিয়ে এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে এটাও বুঝেছে। তবুও…সব দোষ ওই হুঁকোমুখো নন্দলালের। থুরি
রিদওয়ানের। সে কেন বাসায় আসতে গেল? আসলি ভালো কথা হোটেলে থাকার কথা জানালি কেন? তুমি বড়লোকের ব্যাটা, ইনকামও করো, সারাটাবছর হোটেলেই নাহয় থাকো।

মোশাররফ হোসেন সহধর্মিণীর কথাগুলো মন দিয়ে শুনে রুপকের দিকে তাকালেন। বাবার দৃষ্টির মানে বুঝল রুপক। সে এতক্ষণে মুখ খুলল,
-‘আম্মু! তুমি যত যায় বলো রিদওয়ান এখানে থাকবে না?
তোমার আগে আমিই ওকে বলেছিলাম কিন্তু সে শোনো নি।
সে কারো বাসায় এসে থাকার মতো ছেলে না। সে এক কঠিন ব্যক্তিত্বের মানুষ। সর্বদা নিজে যা ভালো বুঝবে তাই করবে।
যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক সে ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না।
ওকে আমি চিনি। ইভেন আমরা প্রতিটা বন্ধু ওকে খুব ভালো করে চিনি। কিছুক্ষণ আগে যাওয়ার সময়ও এখানে থাকার কথা বলেছিলাম। উল্টে আমাকেই কথা শুনিয়ে দিয়েছে৷ কি বলেছে জানো?’
-‘বল শুনি।’
-‘বলেছে, আমরা যে তাকে বাসায় থাকার অফার করেছি। তাতেই সে খুশি। কিন্তু সে এখানে থাকতে পারবে না। কারণ
আমাদের বাসায় একটা অবিবাহিত মেয়ে আছে। আর সেও অবিবাহিত ছেলে। লোকজনে যখন জানবে সে আমার বন্ধু, এমনকি আমার বাসায় থাকছে তখন সবার আগে আঙুল উঠবে কুহুর উপর। বাঙালি জাত নাকি জল ঘোলা করতে এক্সপার্ট। সে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে আশা করি আর বলতে হবে না। রিদওয়ান খুব বুদ্ধিমান ছেলে আম্মু। মনটাও পরিষ্কার। যা বলবে মুখের উপরে। রাখঢাক ব্যাপারটা তার মধ্যে নেই। কখনো দেখিও নি। মোদ্দাকথা, সে আমার থেকে শতগুন বেশি বুদ্ধি নিয়ে চলে।’
-‘ ছেলেটার সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি।’
-‘তবে রিদওয়ান বলেছে সময় সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবে। তুমি যেন রাগ না করো। ‘

একথাটা শুনে ইসমত আরা বেগমের হাসি চওড়া হলো। উনি গালভর্তি করে হাসলেন। তবে জবাবে কিছু বললেন না, মৃদু হাসতে হাসতে খাওয়াতে মন দিলেন। উনার সবচেয়ে বড়গুন
উনি মানুষ চিনতে পারে। কথার ধরণ, চোখের ভাষা, পড়তে পারেন। এইদিকে কুহু হতবাক। রিদওয়ান এভাবে ভেবেছে, বুঝিয়ে বলেছে দেখে সত্যিই সে অবাক। অন্য কোনো ছেলে হলে অফারটা হাতছাড়া করত না। ছেলেটা অল্প অল্প ভালো আছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু স্যার হিসেবে খুবই খারাপ, খুবই খারাপ। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে হলে, আসলে সে কেন রিদওয়ানকে দেখতে পারছে না? দোষটা তো নিজে করেছে। সেই তাকে ভুল ঠিকানা দেখেছি। অহেতুক অচেনা গলিতে ঘুরিয়েছে। নিজে দোষ করে নিজেই রাগ দেখাচ্ছে এ কেমন কথাবার্তা? না এটা ঠিক হচ্ছে না। সে খুব চঞ্চল হতে পারে। ইংলিশে কাঁচা হতে পারে। সব পরীক্ষায় ফেল করতে পারে, কিন্তু মনের মধ্যে অহংকার পুষে রাখে না। রাগ করে থাকতে পারে না। ভাইয়া যখন এত ভালো ভালো কথা বলল এবারের মতো তাকে মাফ করায় যায়। এসব ভেবে সে মনের রাগ টাগ দূরে ছুঁড়ে দিলো। তৃপ্তিসহকারে খাবার খেলো। গল্প করল, নিজে হাসল সবাইকে হাসাল। তারপর টেডি জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। তখন তার স্মরণ হলো, ‘এত সুন্দর একটা গিফ্টের জন্য তাকে থ্যাঙ্কস দেওয়া হয় নি। ছিঃ! ছিঃ! মনেই ছিল না। কালকেই কলেজে গিয়ে টাটকা টাটকা থ্যাক্স দিয়ে দিবে।’
এসব ভাবতে ভাবতে সে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল।
তখন বুকের সঙ্গে লেপ্টে রেখেছে রিদওয়ানের দেওয়া নতুন টেডি। পছন্দ জিনিসগুলোকে সে এভাবেই আগলে রাখে।

পরেরদিন সকালবেলা। থাই গ্লাসে সেই তখন থেকে ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। সে বুঝছে কারা এসেছে তবুও অলসতায় জোকে ধরেছে সর্বশরীর। উঠতেই ইচ্ছে করছে না। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে এপাশ ওপাশ করছে সে। একটা সময় ঠকঠক শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হওয়া মাত্রই সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। চট জলদি উঠে দৌড়ে গেল বেলকনিতে। যাহ্, আজ সে চলেই গেছে। যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এতক্ষণ অপেক্ষা করল তাকে ডাকল আর সে মনের শয়তানিকে পাত্তা দিয়ে শুয়ে ছিল।
আজকে সকালটা শুরু হলো মিসটেক দিয়ে। না জানি কত দিন হয়। সে মন খারাপ করে ফিরে আসতেই আবারও সেই ঠকঠক শব্দ হলো। কুহু গালভর্তি হেসে থাই গ্লাসটা সরিয়ে দিতেই, একঝাঁক শালিক একযোগে ছুটে এসে জায়গা দখল করল তার বেলকণির গ্রিলে গ্রিলে। কিচিরমিচির শব্দে ভারি করে তুলল পরিবেশ। কুহু দৌড়ে গিয়ে গম, ধান, ভুট্টা, এনে মুঠো মুঠো তুলে ছিটিয়ে দিলো বেলকণির মেঝেতে। শালিক পাখির দল ঠুকরো ঠুকরে খেতে লাগল। সঙ্গে কিচিরমিচির শব্দ। সম্ভবত দেরি করায় তাকে বকা দিচ্ছে। কুহু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শালিকদের খাওয়া দেখছে।তার এখন প্রতিটা সকাল শুরু হয় এসব স্পেশাল মেহমানদের সঙ্গে গালগল্প করে। শুরুতে এদের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। সেই পাখিটা আর আসে না। কোথাও দেখতে পায় না। প্রথম যে শালিকটা এসেছিল তার নাম রেখেছিল দুখু। কারন দুখুর একপা ছিল না। খুব কষ্ট করে হাঁটত পাখিটা। দেখে ভীষণ মায়াও হতো।
দুখু রোজভোর বেলা তার থাইগ্লাসে ঠোঁট দিয়ে টোকা দিতো।
একদিন সে ব্যাপারটা খেয়াল করে সুখুকে খেতে দিয়েছিল।
দুখু পেট পুরে খেয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পরেরদিন সকালে আবার এসেছিল। আবার খেয়ে গিয়েছিল। এভাবে প্রতিদিন আসত সে, সঙ্গে আনত অনেকগুলো সঙ্গীকে। সঙ্গী গুলো এখন রোজ আসে কিন্তু দুখু আসে না। কেন আসে না জানা
নেই তার। তবে দুখু মারা গেছে একথাও ভাবতে চায় না সে।
খারাপ লাগে। কষ্ট হয়। তাই সে মনে করে দুখু আছে, হয়তো কোনো কারণে অভিমান করে অচিনপুরীতে চলে গেছে।তার অভিমান ভাঙলে ঠিক ফিরে আসবে। যে দুখু পায়ের কারণে
হাঁটতে পারত না। খাবার সংগ্রহ করতে পারত না। সেই দুখু তার মাধ্যমে এতগুলো পাখিদের খাবারের তার ঘাড়ে দিয়ে হারিয়ে গেছে। কি অদ্ভুত তাই না? মানুষের জীবনেও তাই। কিছু কিছু মানুষ জীবনে আসে আলো হয়ে। আনন্দ উল্লাসে
ভরিয়ে দেয় চারপাশ। তারপর যখন সে অভ্যাসে পরিণত হয় তখন মানুষটা হঠাৎ করে হারিয়ে যায়। তলিয়ে যায় অচেনা গন্তব্যে। নতুবা জীবন থেকে আনন্দ কেড়ে কষ্টের মুখে ঠেলে দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে।

শালিকরা পেটপুরে খেয়ে চলে গেলে সেও ফ্রেশ হতে গেল।
এখন বাজে সাতটা চার। ক্লাস শুরু হবে সাড়ে আটটা থেকে।
কুহু একেবারে রেডি হয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নিচে নামল। ধীরে সুস্থে নাস্তা সারল। রোজ তার বাবাই অফিসে যাওয়ার সময় তাকে কলেজের গেটে নামিয়ে দিবে। আজ নাকি বাবা যাবে না। অন্য কাজ আছে। রুপক বাসাতেই আছে তবে ঘুমাচ্ছে। বাসায় বোম ফেললেও উঠবে কি না সন্দেহ। তাই সে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়ল। হুটোপুটি গ্যাংয়ের সকলে রাস্তায় এসে গেছে। সে না যাওয়া অবধি কেউ কলেজে ঢুকবে না। বলেও লাভ হয় না তাদের। আসলে বন্ধুগুলো পেয়েছে ভাগ্য করে।
স্কুল থেকে তারা পাঁচজন একসঙ্গে আছে। সারাজীবন এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছেও আছে। আসলে জীবন তো পরিকল্পনা মাফিক করে না। না চলে কারো ইচ্ছেমতো। পরের কথা পরে ভাবা যাবে তবে যতদিন একসঙ্গে আছে কেউ ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করবে না। প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সে রিকশা নিয়ে কলেজে চলে গেল। মিরাজ, পিয়াস, চন্দ্র আর নিকিতা কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চোখে মুখে বিষ্ময় ঠিকরে পড়ছে। কলেজের গেট দিয়েই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু দেখছে। সে ভাড়া মিটিয়ে বন্ধুদের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। সবার মতো সেও তাকাল কলেজের মাঠের দিকে, রিদওয়ান একটা ছেলের হাতের তালুতে বেত দিয়ে মারছে।
সে এবার জানতে চাইল আসল ঘটনা। তাকে দেখে মিরাজ জানাল ছেলেটা একটা মেয়ের ওড়না ধরে টান দিয়েছে, সে বেছে বেছে সুন্দরী মেয়েদের নোংরা স্পর্শ করে, লোকলজ্জা আর সন্মানের ভয়ে কেউ কিছু বলে না। ব্যাপারটা আজকে রিদওয়ান স্যারের চোখে পড়েছে। হাতে নাতে ধরায় ছেলেটা
পালাতে পারে নি। ফলস্বরুপ, যে হাতে নোংরা স্পর্শ করেছে সেই হাতে বেতের বারি উপহার দেওয়া হচ্ছে। একথা শুনে কুহু মনে মনে খুশিই হলো। যাক এতদিনে একজন লয়্যার স্যারকে পাওয়া গেল। অতঃপর তারা ক্লাসে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো। তারপর ক্লাসের সময় হলে যে যার আসনে বসল। পাঁচ মিনিট পর রিদওয়ান স্যার আসল। তার হাতে একটা ইংলিশ বই। স্যার এসে নাম পেশেন্ট করে আগে হোমওয়ার্ক দেখাতে বলল। যার খাতা তার সামনেই রাখতে
আদেশ করলেন। উনি যারটা ইচ্ছে তারটা দেখবে। আর যে হোমওয়ার্ক করে নি সে যেন সবসন্মানে আগে দাঁড়ায়। উনি যদি দেখে হোমওয়ার্ক না করা সত্ত্বেও কেউ বসে আছে আর উনার নজরে পড়েছে। তাহলে কপালে দুঃখ আছে। একথা শুনে একে একে সতেরোজন দাঁড়াল। কুহুও দাঁড়াল। স্যার সকলের দিকে তাকিয়ে একে একে কারণ জিজ্ঞাসা করল। যে উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারল তাকে বসতে বলল আর যে পারল না তাকে পাঁচটা করে বেতের বারি সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকার আদেশ দিলো। সতেরো জনের মধ্যে তিনজন বসার অনুমতি পেয়েছে। বাকিরা দাঁড়িয়ে একে একে মার খাচ্ছে। স্যার এবার কুহুতে জিজ্ঞাসা করল,
-‘হোমওয়ার্ক করেন নি কেন?’
-‘করতেই যাচ্ছিলাম, তখনই বাসায় গেস্ট এসেছিল।’
-‘স্পেশাল গেস্ট?’
-‘জি স্যার। আমার ভাইয়ার বন্ধু।’
-‘তা ভাইয়ার বন্ধুকে কি আপনি রেঁধে বেঁধে খাইয়েছিলেন?’
-‘জি না স্যার।’
-‘গুড, এবার হাতটা বাড়ান।’
-‘স্যার, বলছিলাম কি যে…!’
-‘উহুম, একটা বাড়তি শব্দ উচ্চারণ করলে একটা করে মার বাড়বে। ক্লাসের সময় যাচ্ছে, হাত টা বাড়ান।’

কুহু করুণ দৃষ্টিতে রিদওয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বলছে এবারের মতো ছেড়ে দিতে। কিন্তু পাষাণ স্যার ছাড়ল না বরং শক্তি দিয়ে তার দুই হাতের তালুতে মোট তিনটে বারি দিলো। পাওনা রইল আরো দুটো। সবাইকে পাঁচটা মেরেছে। তার জন্যও পাঁচটা বরাদ্দ। কিন্তু তিনটেতেই তার ফর্সা হাত লাল টকটকে রুপ ধারণ করল। যেন রক্ত বেরিয়ে আসবে। দাঁতে দাঁত চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল কুহু। ছলছল করে উঠল তার চোখজোড়া। হাত জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ চুরি দিয়ে কেঁটে ফালা ফালা করে দিয়েছে। অনেক মার খেয়েছে সে। কিন্তু আজকে মাইর অন্যরকম। এ যেন কারো চাপা রাগের বহিঃপ্রকাশ। সে কাঁদবে না কাঁদবে না করেও ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে গেল জল। ফুঁপিয়ে উঠল। মোট পাঁচটা মার বুঝিয়ে দিয়ে, স্যার পড়ানো শুরু করল। ওয়ানিং দিলো সবার দৃষ্টি যেন বইতেই থাকে। কোনো গুজুরগুজুৃর ফুসুরফুসুর করলে
কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবে। আর ক্লাস করতে ইচ্ছে না হলে বেরিয়ে যেতেও পারে। গরুগম্ভীর কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে পুরো ক্লাস নীরব। সকলে দৃষ্টি বইয়ের দিকে। কুহু বাকি চৌদ্দ জনের মতো দাঁড়িয়ে আছে। নীরবে তার অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে। দুই হাতই ব্যথায় টনটন করছে। নিকিতা তার হাতটা আড়াল করে টিস্যু ভিজিয়ে চেপে ধরে আছে। কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না, অদূরে বসা পিঁয়াসরা। তারা বইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ফুঁসছে। গালি ছুঁড়ছে, নিষ্ঠুর স্যারটাকে।
কুহুও সামনে বই রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বইয়ের
পাতায়। এখনো নীরবে কাঁদছে। তোতাপাখির মতো নাকটা লাল হয়ে গেছে। সে হানড্রেট পার্সেন্ট সিওর রিদওয়ান ইচ্ছে করে তাকে এত জোরে মেরেছে। তার মতো করে কাউকে সে মারে নি। এজন্য মার খেয়ে কেউ কাঁদেও নি। কিন্তু তাকেই বা এভাবে মারল কেন? কিসের রাগ তুলল? ভুল ঠিকানায় পাঠানোর জন্য? নাকি কালকে রেগে তার সামনে থেকে উঠে চলে যাওয়ায়?

(প্রিয় পাঠকমহল,
আপনাদের কমেন্ট আমার লেখার উৎসাহের কারণ। যারা গল্প পড়েন তারা প্লিজ রেসপন্স করবেন।)

To be continue…….!!

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here