#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_আঠারো
পরেরদিন সকালবেলা,
দিনটি রবিবার। সকাল সাড়ে সাতটা। ইসমত আরা বেগম কিংবা রুপক কেউ ফেরে নি এখনো। ইসমত আরার ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। ধারণা করা যাচ্ছে উনার জীবন আয়ু শেষের পথে। আইসিইউতে রাখা হয়েছে। কখন মৃত্যু ডাক এসে যায় তা বলাও মুশকিল। তবে উনি বের হয়েছেন এখন বাসার দিকে আসছেন। এসে রান্নাবান্না করে আবার যাবেন। কাল থেকে ছেলে মেয়ে দুটো বাসায় একা। কি খাচ্ছে, কি করছে, কে জানে! গতরাত উনার দুঃচিন্তায় কেটেছে। দু’চোখের পাতা এক করতে পারে নি।
খালি কুহুর কথা মনে হয়েছে। মেয়েটা কি করছে,, কেমন আছে, কোনো ঝামেলা পাকালো কি না এসব ভাবতে ভাবতে সময় কেটেছে। রাতে কত বার কল করেছিল কিন্তু ঘুমের ঘোরে কি সব বলল উনি বুঝতে পারেনি।মেয়ে ঘুমাচ্ছে ভেবে আর কল করে বিরক্ত করে নি। এদিকে রুপক প্রায় বাসার কাছাকাছি। বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়েছে।তার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। সারারাত দুঃচিন্তায় ঘুম হয় নি। বোন আর বন্ধুকে একা বাসায় রেখে সেও নিশ্চিন্তে একফোঁটা স্থির থাকতে পারে নি। কত কী যে ভেবেছে তা আল্লাহ মালুম। তার বাবা এখনো অফিসেই আছেন দুপুরের দিকে আসবে। যে ঝামেলার জন্য গিয়েছিলে সেটা কোনোমতে সমাধান করা গেছে। তবে এই নিয়ে পুনরায় ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
কেউ ইমপ্লয়িদের বেতন বাড়ানোর কথা বলে বার বার উস্কে দিচ্ছে। এই কেউ কে খুঁজে বের করার কাজ চলছে। তাকে ধরে ইচ্ছেমতো ধোলাই না দিলে এই সমস্যা থামবে না।
এদিকে কুহু গতকাল রাত থেকে রুম থেকে বের হয় নি। একা রুমে বসে বসে কেঁদেছে। রিদওয়ানকে সে সন্মান করে। কোনো সম্পর্কের রেশ ধরে নয় একজন মানুষ হিসেবেই সন্মান করতো। কিন্তু গতকাল রাতে সে যা করেছে তার পছন্দ হয় নি। ভালো লাগে নি৷ যার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই তার স্পর্শ তার গায়ে কাঁটা হয়ে বিধেঁছে। নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
রাগ হচ্ছে বাবা মায়ের উপর। কেন তারা তাকে বাসায় একা রেখে গেল? সঙ্গে নিয়ে গেলে কি হতো? রিদওয়ান ভাইয়ের বন্ধু ভাই তো আর নয়, তাহলে কোন ভিত্তিতে তারা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে। গতরাতের
ব্যবহারের জন্য রিদওয়ানকে কখনো মাফ করবে না সে। কখনোই না। এখন সকাল সাতটা বেজে দশ মিনিট। রিদওয়ান সকালে উঠে জগিং সেরে নাস্তা বানিয়ে বসে আছে। তাকে আর কুহুকে কলেজে যেতে হবে।
যদিও দু’জন আলাদা যায় তবুও আজ যেহেতু ইসমত আরা নেই তাকে বলে যাওয়া উচিত। নয়তো দেখা যাবে খুঁজবে। সময় যাচ্ছে। কিন্তু কুহু এখনো দরজ খোলে নি। কয়েকবার নক করেছে তাও খোলে নি। ফোনে কল দিয়েছে। রিং হচ্ছে রিসি়ভ করছে না। ইচ্ছে করে রিসিভ করছে না। নতুবা ফোন সাইলেন্স। এইদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তার ক্লাস আছে। এখন না বের হলে ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।সে আর না পেরে বিরক্ত হয়ে রুপককে কল দিলো। রুপক যেন ফোন হাতে নিয়েই বসেছিল। তার কল ফোনে ঢুকামাত্র রিসিভ হলো। তখন রিদওয়ান বিরক্ত সুরে বলল,
-‘তোর বোন ঘুম থেকে উঠছে না। ডাকলেও না। জন্মের মতো দরজা এঁটে ঘুমাচ্ছে। আমি কি বাসা লক করে চলে যাব? নাকি তুই আসবি?’
-‘এসে গেছি প্রায়। আর আধাঘন্টা।’
-‘তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? টায়ার্ড নাকি অন্যকিছু?’
রুপক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর কথা ঘুরাতে আমতা আমতা করে বলল,
-‘কুহুকে ডাকিস না। ঘুমাক। সারারাত ঘুমায় নি।’
-‘কেন, ঘুমায় নি কেন? আর তুই জানলি কিভাবে সে ঘুমায় নি।’
-‘কারণ আমাকে ভোরের দিকে কল করে প্রচুর কেঁদেছে।’
-‘কেঁদেছে? কিন্তু কেন?’
-‘কারণ তুই নাকি তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিস না।’
-‘আমি? আমি আবার কি করলাম?’
-‘ গতরাতে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে কি বলেছে জানিস?’
-‘কি আশ্চর্য! তোর বোন তোকে কি বলেছে আমি কি করে জানব?’
-‘বলেছে, তুই গতরাতে ওর রুমে গিয়েছিলি। ওকে দেওয়ালের সঙ্গে জাপটে ধরে কিস করেছিস। তাকে স্পর্শ করেছিস। সে কেঁদেছে তবুও ছাড়িস নি। তুই ইতর! লম্পট! চরিত্রহীন এক পুরুষ মানুষ!’
এইকথা শোনার মাত্র রিদওয়ান সোফা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। তার কানে যেন কেউ সীসা ঢেলে দিয়েছে। গায়ের পশম যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। সে কিয়ৎকাল অনড় হয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। জবাবে কিছু বলার শব্দ খুঁজে পেল না। তারপর স্বজোরে চেঁচিয়ে উঠল। এত জোরে চেঁচালো যে
মনে হলো তার গলার ভোকাল কর্ড ছিঁড়ে যাবে। মারদাঙ্গা বাঁধিয়ে দেবে। রুপক আর কিছু বলতে পারল না রিদওয়ান তার সুরে চেঁচিয়ে উঠল,
-‘হোয়াট রাবিশ? আর ইউ ক্রেজি ইয়ার? আমি? আমি তোর বোনের সঙ্গে জড়াজড়ি করেছি? লিপকিস করেছি? মাথা ঠিক আছে তোর? কি বলছিস তুই? গতকাল রাতে খেয়ে আসার পর তুই আর আমি রাত প্রায় একটা অবধি ফাইল রেডি করেছি। অডিও কল না ভিডিও কলে। তুইও দেখেছিস আমি ওয়াশরুম ছাড়া এক পাও রুমের বাইরে বের হইনি। না তোর বোনকে আমার রুমে ডেকেছি তাহলে কোন বিবেকে এসবসকথা বলছিস?’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘প্রতিটা জিনিসের একটা লিমিট থাকে রুপক। এবার অতিরিক্ত হচ্ছে।
এসব নোংরা কথাবার্তা আমি মোটেও সহ্য করব না। ভুলে যাস না আমি কে!’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘আমি আগেই বলেছি কুহু যতবারই আমার রুমে আসে অদ্ভুত ব্যবহার করে। কিসব বলে না বলে। কখনো আবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাসে। এই সমস্যার কথা আন্টিও জানে। অথচ তুই বলছিস….!’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘আমাদের মধ্যে যদি তেমন কিছুই থাকত তাহলে আমি সরাসরি বিযের কথা বলতাম। প্রস্তাব দিতাম।। আমি যে ঘুপিজুপি পছন্দ করি না সেটা
তোর থেকে ভালো কেউ আর জানে না। তাহলে আমি কেন এসব করতে যাব? বুঝা আমারে?’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘এই কারণেই আমি বাসায় থাকতে চাচ্ছিলাম না। ধারণা করেছিলাম এমন কিছুই হতে পারো। ধারণা যে সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করি নি।’
-‘কুহু যা যা আমাকে বলেছে তাই বললাম।’
-‘আর তুই বিশ্বাস করে নিলি?’
-‘আমার কথা এত..!’
-‘তোরা দুই ভাইবোনই চরম লেভেলের মিথ্যাবাদী। সত্যি মিথ্যার তফাৎ বুঝিস না। তোর বোন মিথ্যা দোষ দিচ্ছে আমার চরিত্রে। এটা কখনোই মানব না রুপক। কখনো না। এসব সস্তা মেন্টালিটি নিয়ে তোর বাসায় পা রাখি নি আমি।’
-‘কুহু তো…!’
-‘বাকি পরিকল্পনা কিভাবে সাকসেস করবি তা জানি না। তবে আর এক মুহূর্তও এখানে থাকব না আমি। এক মুহূর্তও না। আমি যেমন নোংরামি করি না তেমনি নোংরামিকে প্রশয়ও দেই না। এবার তোদের পারিবারিক ব্যাপার তোরা বুঝে নে।’
একথা বলে রিদওয়ান কল কেটে দিলো। রুপক একনাগাড়ে কল দিতেই থাকল। তাও ধরল না। কথাও বলল না। আর কোনো কথা নেই। যতটুকু বলার বলে দিয়েছে। সে রাগে গজগজ করতে করতে জামা কাপড়সহ যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে লাগেজে ভরতে লাগল। এখনই চলে যাবে।
এত অপমানের পর এখানে থাকার মানেই হয় না। অনেক হয়েছে। তার এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। এটা কত্ত বড় বেয়াদব মেয়ে ভাবা যায়। তার সঙ্গে নাকি সে জড়াজড়ি করেছে। লিপকিস করেছে! আরো কি কি যেন বলল সব৷ যেখানে কুহুর থেকেও হাজারগুন সুন্দরীকে অবলীলায় রিজেক্ট করেছে সেখানে কি ওই পুঁচকে মেয়ে কি না! ছিঃ! এতদিন কুহুর
করা প্রত্যেকটা অভিযোগ, পাগলামি, লিমিটে থাকলেও আর নয়। আজ সে লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। চরম বেয়াদবী করেছে। অপমান করেছে তাকে। রুপকের কাছে তার মাথা হেট করে ছেড়েছে। এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
ওদিকে কুহু একেবারে গোসল সেরে কলেজ ড্রেস পরে রেডি হচ্ছে। তার মনটা ফ্রেশ। গুনগুন করে গান গাইছে। চুল আঁচড়াচ্ছে। চোখ মুখের এই অবস্থা দেখে সে মলিন হাসল। চোখ মুখ ফুলে বিশ্রী দেখাচ্ছে। সে ফোলা ভাবটা ঢাকতে হালকা করে ফেস পাউডার দিলো। চোখে কাজল দিলো। হাতঘড়ি পরল। তারপর চুল শুকিয়ে দু’টো বিনুনি গেঁথে বের হলো। নাস্তা করতে এসে দেখে খাবারগুলো ঢাকা দেওয়া আছে। সে বেজার মুখে সব ঢাকনা তুলে দেখল। ভেবেছিল অপছন্দের খাবার পাবে। কিন্তু সব তার পছন্দের খাবার দেখে চেয়ার টেনে খেতে বসল। খেতে খেতে আড়চোখে তাকাল রিদওয়ানের রুমের দিকে। রুমের পর্দাটা টেনে দেওয়াতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে একটা চিকেন স্যান্ডুইচ আর জুস খেয়ে উঠে পড়ল।
ঘড়িতে তখন সাতটা আটচল্লিশ। কাঁধের ব্যাগটা এনে সে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর যখন দেখল রিদওয়ান বেরই হচ্ছে না তখন নিজেই গেল রিদওয়ানের রুমে। তারপর হাস্যোজ্বল মুখে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া কলেজে যাবেন না? গেলে এখনি যাবেন নাকি থেমে যাবেন?
রিদওয়ান নিজের মতো গোছগাছ করতে ব্যস্ত। কুহু আবার ডাকল। সে নিশ্চুপ। ফিরেও তাকাল না। জবাব না পেয়ে কুহু অপমানিতবোধ করল।
কারো রুমে এসে কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না পেয়ে অপমানিতবোধ করাটাই স্বাভাবিক। রিদওয়ান একটা লাগজে গুছিয়ে মেঝেতে রাখল।
লেপটপ ব্যাগে ভরলো। তখন কলিংবেল বেজে উঠল। রিদওয়ান যাচ্ছে না দেখে কুহু গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে রুপককে দেখামাত্রই মিষ্টি করে হাসল। হাসল রুপকও। তারপর তারা ভাইবোন কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে এসে বসল। যেন সব স্বাভাবিক। কিছু রটে নি কিচ্ছু ঘটে নি।
ভাইকে ক্লান্ত দেখে কুহু পানি এনে দিলো। তার মা তাকে না বলে গেছে দেখে ভাইকে অভিযোগ দিলো। অভিযোগ শুনে রুপক হাসল। হাসিতে আমেজ নেই। প্রাণ নেই। রুপক পানিটুকু খেয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দিলো। ভীষণ টায়ার্ড সে। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। মাথার ব্যথায় অসহ্য লাগছে সবকিছু। তখন রুপকের কথা শুনে রিদওয়ানও লাগেজ টেনে নিয়ে বেরিয়ে এলো। সে রেডি। চলে যাচ্ছে সে। রুপক তাকে দেখে
উঠে দাঁড়াল। রিদওয়ান হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে চাবিরগোছা তার দিকে ছুঁড়ে দিলো। তারপর অত্যন্ত সর্পশীতল চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ ভালো থাকিস।’
-‘রিদ! শোন আগে আমার কথাটা….!’
-‘আন্টির সঙ্গে দেখা হলো না। বলিস তার বিশ্বাস ভাঙি নি। আমিও এক মায়ের সন্তান। আমার ঘরেও মা আছে। ছোটো একটা বোন আছে।’
বন্ধুর কথা শুনে রুপক হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কাকে কি বলবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। জীবনে এত অসহায়বোধ করে নি সে। সঙ্গে সে এটাও জানে বলেও কোনো লাভ হবে না। রিদওয়ানকে চেনে। খুব ভালো করে চেনে। সে যখন বাসা ছেড়ে যাবে বলেছে তখন যাবেই। তাকে আর
আঁটকানোর সাধ্যি কারোর নেই। তবুও লাস্ট চেষ্টা করল সে।।রিদওয়ান বন্ধুর করুণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে লাগেজ টেনে বেরিয়ে যেতে লাগল, তখন কুহু অবাকের সুরে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া! আপনি কোথায় চললেন? লাগেজ কেন? আপনি কি চলে যাচ্ছেন? আর থাকবেন না আমাদের বাসায়? কিন্তু কেন?’
কুহুর কথা শুনে রিদওয়ান পিছু ফিরে তাকালও না। জবাবও দিলো না।
শুধু চোয়ালজোড়া শক্ত করে গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেল। এই চরম লেভেলের বেয়াদব মেয়েটার সঙ্গে আর কখনো কথা বলবে না সে। যত কিছুই হোক কথা বলবে না। এদিকে জবাব না পেয়ে কুহু রুপকের দিকে তাকাল। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সে এবার রুপককে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া চলে গেল কেন? ঝগড়া করেছো তোমরা?’
-‘তেমন কিছু না। কলেজে যা তুই। দেখে শুনে যাস।’
একথা বলে রুপক চোখের উপর হাত রেখে সোফায় মাথা এলিয়ে শুয়ে রইল। না বন্ধুকে বোঝাতে পারল বর্তমান অবস্থা আর না বোনকে বলতে তার তার অসহায়ত্বের কথা। এদের দু’জনের মতিগতি না বুঝে কুহু বের হলো কলেজের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় গিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেল কলেজে।
রিদওয়ান চলে যাওয়াতে তার খুশি হওয়া উচিত নাকি মন খারাপ করা উচিত তাও বুঝল না। সে চুপ করে রিকশায় বসে আছে। রোদ চড়েছে। তাপ বেড়েছে। রিকশাওয়ালা মাথা গলায় ঝুলানো গামছা দিয়ে কপালে
মুছে একা একা বলতে লাগল,
-‘আল্লাহ জমিনের বুকে একটু পানি দেও। গরমে মানুষজন আধমরা হইয়া গেল। এত গরম! এত রোদের তাপ।’
একথা শুনে কুহু ভ্রুঁ কুঁচালো তাকাল। তারপর রিকশাওয়ালা মামাকে বলল,
-‘ কেন মামা একথা বললেন কেন? কাল বিকালেই তো কত ঝড় বৃষ্টি হইল। আবহাওয়া শীতল ছিল।’
-‘হে, হে, আম্মা পাগল হইছেন? কাইল কখন পানি হইল? গত বিশদিনের মধ্যেই তো একফুড়াও পানি হয় নাই। মানুষজন গরমে আধমরা। আপনি
বোধহয় জাইগা জাইগা এসব স্বপ্নে দেখছেন।’
কুহু কথা বলল না। চুপ করে রাস্তা দেখতে লাগল। দেখল পথে চল কত মানুষ। তারপর কলেজে পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে কলেজ প্রবেশ করল। দুই মিনিট হাঁটতেই দেখে পিয়াস, মিরাজ, নিকিতা, চন্দ্রা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে বাদাম খাচ্ছে। হাসাহাসি করছে। কুহুও গিয়ে বসল। কিন্তু তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা। কালকে বৃষ্টি হয় নি? সত্যি হয় নি? বৃষ্টির কথা নাহয় বাদ কিন্তু রিদওয়ানের কি হলো?
সে এমন করলো কেন? মাথার মধ্যে কিসব চিন্তা করতে করতেই চন্দ্রার থেকে বাদাম নিয়ে মুখ পুরল। চিবুতে চিবুতে আনমনেই গলা চুলকাতে চুলকাতে নিকিতাকে বলল,
-‘নিকি? আমার গলায় কিছু হয়েছে নাকি দেখ তো? তিলটার কাছে খুব চুলকাচ্ছে।’
নিকিতা বাদাম রেখে কুহুর গলা ভালোভাবে দেখল। কিছু পেল না। তাই সে বলল,
-‘কই কিছুই তো নেই।’
-‘ধুর বাল! তিলটার কাছে দেখ। ভীষণ চুলকাচ্ছে। ‘
-‘আরে বাল তোর গলায় তিল এলো কোথা থেকে? আমি তো তিল টিল দেখি নি কখনো। রাতারাতি তিল উদয় হলো কিভাবে?’
-‘কি যা তা বলছিস। এই যে কন্ঠনালির উপর তিল। ভীষণ সুন্দর তিল।’
বন্ধুরা কুহুর কথা শ়ুনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। কিন্তু কথার পরিবর্তে কেউই আর কথা এগোতে পারল না। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। সবাই গিয়ে ক্লাসে বসল। যথারীতি ফাস্ট ক্লাস করাতে মোবারক স্যার এলেন।
রোল প্রেজেন্ট করলেন। তারপর গল্প জুড়ে দিলেন। কেউ উনার গল্পে আগ্রহী না সবাই যে যার গল্পে মশগুল। শুধু উনার দিকে তাকিয়ে আছে তাই। তখন মিশকা নামের একটা মেয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করল,
-‘স্যার! রিদওয়ান স্যার কি আজ আসে নি?’
-‘কেন বলো তো?’
-‘না এমনি!’
-‘না। উনি রিজাইন করেছেন। কিছুদিনের জন্য গেস্ট টিচার হয়ে এসেছিল। কাজ শেষ তাই রিজাইনও করেছেন।’
-‘আর কখনোই আসবে না উনি?’
-‘না। তাছাড়া উনি প্রফেশনাল টিচার নন উনার পেশা অন্যকিছু। আমি সঠিকটা জানি না যদিও। তবে শুনেছি আর কি! তবে উনাকে কলেজ থেকে অফার করা হয়েছিল থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উনি থাকেন নি। কিছুক্ষণ আগে শুনলাম দেশ ছাড়ছেন। আগামীকালকে সন্ধ্যায় ফ্লাইটে চলে যাচ্ছেন।’
-‘কোথায় যাচ্ছে?’
-‘যেখান থেকে এসেছিল, সম্ভবত সেখানে।’
To be continue……..!!
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/