আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে #লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো #পঞ্চম_পর্ব

0
52

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পঞ্চম_পর্ব

কলেজের প্রিন্সিপাল আতিকুর রহমানের অফিস রুমে বসে আছে রিদওয়ান। তার দৃষ্টি টেবিলের থাকা পানিভর্তি কাঁচের গ্লাসের দিকে। মুখভঙ্গি অত্যন্ত স্বাভাবিক। চোখের চাহনিতে শীতলতা। প্রিন্সিপাল এই অবধি তাকে অনেক প্রশ্ন করেছে, কিন্তু সে একটিরও জবাব দেয় নি। জেদ চেপে চুপ করে বসে আছে। যেন প্রতিজ্ঞা করেছে টু শব্দ করবে না। ভাব ভঙ্গিতে স্পষ্ট সে কাউকে জবাব দিতে বাধ্য নয়। দিবে না। এই জেদি একগুঁয়ে স্বভাবের ছেলেটার সঙ্গে না পেরে প্রিন্সিপাল বেল বাজিয়ে টুটুলকে ডাকলেন। টুটুল সাধারণ কর্মচারী। চা, টা, করা, চিটারদের আদেশকৃত টুকটাক কাজকর্ম করে থাকে।
বয়স কতই বা বাইশ কি তেইশ। টুটুল বেল শুনে দ্রুত অফিস রুমে এসে পৌঁছাল। হাতের ফাইল ধরা অবস্থাতে হাসি হাসি মুখে জানতে চাইল, ‘কিছু লাগব ছ্যার?’
প্রিন্সিপাল স্যার মুখটা গুরুগম্ভীর করে বললেন,
-‘ইংলিশ ক্লাসে রিওয়ান যাদেরকে মেরেছে তাদের সবাইকে ডেকে আনো। সবাই যেন আসে, সবাইই!
-‘জি স্যার!’
আদেশ পেয়ে টুটুল চলে গেল। আর প্রিন্সিপালের কথা শুনে রিদওয়ান হাসল। হাসির কারণে তার বাঁকা দাঁতটা স্পষ্ট হয়ে
দেখা গেল। প্রিন্সিপাল সেটা দু’চোখ ভরে দেখলেন। মন ভরে দোয়া করলেন।তিনি মাঝে মাঝে ভেবে পান না, রিদওয়ানের
দাঁতের কারণে হাসিটা এত সুন্দর? নাকি হাসির কারণে তার দাঁতটা এতটা সুন্দর দেখায়, কোনটা? তবে যেটাই হোক উনি চান ছেলেটা সব সময় হাসুক। সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুন। কখনো কোনো কষ্টের ছোঁয়া না পাক। কিন্ত এই জীবনে বাঁচতে হলে লড়তে হবে। মুখোমুখি হতে হতে সুখ এবং দুঃখের। তবেই না মানবজীবনে স্বার্থকতা আসবে। প্রিন্সিপালকে এভাবে মুগ্ধ নজরে তাকাতে দেখে রিদওয়ানের হাসি মুছে গেল। থমথমে মুখে ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যত্রে তাকিয়ে রইল। হাসি মুখটা মলিন হতে দেখে প্রিন্সিপাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বুঝলেন ছেলেটা এখনো উনার প্রতি অভিমান পুষে রেখেছে। তীব্র অভিমান।
আচ্ছা উনাদের বাবা ছেলের অভিমান কখনো ভাঙ্গবে না? ছেলেটা পূর্বের মতো বাবা বলে ডাকবে না? হয়তো ডাকবে না। কারণ ছেলেটাও হয়েছে বড্ড একরোখা। রাগে জিদে
মায়ের মতোই বেপরোয়া, লাগামছাড়া। রাগটা যেন তাদের রন্ধে রন্ধে। তারা যা বলবে সেটাই ঠিক। নয়তো এতবার করে
বলার পরেও হোটেলে উঠল কেন? কেন নিজের বাবার এত বড় বাসা থাকতে একা থাকছে? কি বোঝাতে চায় উনি বাবা হিসেবে বিবেকহীন? দায়িত্বজ্ঞানহীন? ভুল বোঝাবুঝি কারণ
সমাধা করেছে অনেক আগে। তবুও কেন উনাকে মা ছেলে এভাবে দূরে সরিয়ে রাখে? উনি কি মানুষ না? উনার কি কষ্ট হয় না? স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে থাকতেও উনাকে একা বসবাস করতে হয়। জ্বরে একা একা কাঁতরাতে হয়, এত বড় ডায়নিং টেবিলে একা একা বসে খেতে হয়, যাদের জন্য শখের বশে এত বড় বাড়ি বানিয়েছিলেন তারা থাকে না, কারো হাসিতে কলকল করে ওঠে না বাড়ির ড্রয়িংরুম, লোক নেই, জন নেই, সংসারের হাল ধরার কেউ নেই, দিন শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে দুটো কথা বলার মানুষ নেই, এগুলো কি কষ্ট না? স্ত্রী সন্তান থেকেও উনি নিঃস্ব এটা কি একজন পুরুষের
বুক ব্যথার কারণ না? কিন্তু কাদের বোঝাবে একথা? কে বা বুঝবে উনার কষ্টগুলো? যদি বোঝার মতোও কেউ থাকত, তাহলে উনার ভাঙা সংসারটা অনেক আগেই জোড়া লাগত।
হাসি-খুশি, রাগ-অভিমানে মুখোরিত হতো উঠতো মৃতপ্রায় সংসারটা। উনি কলেজে পারিবারিক আলোচনা পছন্দ করে না। ব্যক্তিগত সম্পর্কের টান কলেজের বাইরে, ভেতরে নয়।
তবে যেদিন হঠাৎ রিদওয়ান এসে গেস্ট টিচার হয়ে কলেজে জয়েন করার কথা জানায়, সেদিন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। অবাধ্য চোখজোড়াও ভিজে উঠতে চেয়েছিল।
এতদিন পর ছেলেকে দেখে বুক ভার হয়ে এসেছিল। ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে নিতো। ছেলের কাঁধে মাথা রেখে হু হু করে কাঁদতে। কিন্তু তিনি পারে নি। পারে নি বলেই হয়তো ছেলেটা দূরে দূরে থাকে। দুপুরে লাঞ্চে ডাকলে আসে না। ফোন করলে ধরে না। ধরলেও কথা বলে না। কেন জানি পালিয়ে পালিয়ে থাকে।

রিদওয়ান ঘড়িতে সময় দেখল। তার আরেকটা ক্লাস আছে।
এতক্ষণ বসে থাকা যায় না ভেবে উঠতে যাবে তখন কুহুসহ
মোট সতেরোজনের একটা দল এলো। এসে সালাম দিলো।
অফিসরুমে রিদওয়াকে দেখে সকলে একে অপরের দিকে তাকাল। কেউ কেউ ভয়ে ঢোক গিলল। একেকজনের মুখ চুপসে গেল। বুক ধড়ফড় করতে লাগল। কিন্তু কেউ নড়ার সাহস করল না। তাদের ভয়ার্ত মুখ দেখে রিদওয়ান তাদের দিকে তাকিয়ে হাসল। মুচকি হাসি। স্যারকে হাসতে দেখে অনেকে সাহস পেল। রিদওয়ান আবার ঘুরে বসে ফোন স্কল করতে লাগল। সে তাকিয়ে থাকলে ছেলে মেয়েগুলো ভয়েই কথা বলতে পারবে না। অথচ তাদের এখন কথা বলা উচিত।
তখন প্রিন্সিপাল সকলের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন,
-‘রিদওয়ান কেন মেরেছে তোমাদের?’
একথা শুনে কুহু রাগে গজগজ করে জবাব দিলো,
-‘হোমওয়ার্ক করে আসি নি তাই।’
-‘এভাবে মারধরের নিয়ম নেই। তাছাড়া…!”
-‘মারের নিয়ম নেই তবুও তো মে…রে….।’
একথার পাল্টা জবাব দিতে পারল না কুহু। রিদওয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকিয়েছে। তাদের বলতে তার দিকেই। এমন সর্প শীতল চাহনি দেখে কুহু কথা গুলিয়ে ফেলল। কি বলতে চেয়েছিল সেটাও ভুলে গেল। নত মস্তকে নিশ্চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আর একটা কথাটও উচ্চারণ করার সাহস হলো না তার। হবেই বা কিভাবে? এমন খাইয়া ফেলামু লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকলে কথা বলা যায়? কুহু কথা সম্পূর্ণ না করাতে প্রিন্সিপাল ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালেন। ছেলেকে তাকাতে দেখে বুঝলেন ব্যাপারখানা। চোখ দ্বারা নীরব হুমকি। সঙ্গে খেয়াল করলেন এতগুলো ছেলের মাঝে এই একটিই মাত্র মেয়ে। মেয়েটি ভারী সুন্দর দেখতে। তবে তার মুখ লাল হয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে সে কেঁদেছে। কাঁদার ফলে মুখের এই করুণ অবস্থা। কান্না এখনো তার গলাতেই আঁটকে আছে।
কথা বললে ফোঁপানোর মতো শুনাচ্ছে। তখন সাহেদ নামের একটা ছেলে এগিয়ে এলো। সে বুকে সাহস নিয়ে বলল,
-‘স্যার আমাদের ছেলেদের মেরেছে কলেজের ছাদে বসে সিগারেট খাওয়ার জন্য। আর..।’
-‘আর?’
-‘আসলে স্যার, ঘটনাটা খুবই লজ্জাজনক। তবে স্যার আমাদের মেরেছে আমাদের অভিযোগ নেই। তবে এইটুক বলতে পারি স্যার পড়ার অজুহাতে মেরেছে। এর পেছনের অনেক বড় অপরাধ জড়িয়ে আছে। যেই অপরাধ করেছি তাতে আমাদেরকে কলেজ থেকে বের করে দিলেও অবাক হবো না।’
-‘কি অপরাধ করেছো বলো আমিও জানতে চাই।’
-‘স্যা..র…।’
সাহেদ তোতলাতে লাগল। বলতে পারল না। সকলেই মাথা নিচু করে নিলো। অপরাধীরা যেভাবে দাঁড়ায় তারাও সেভাবে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু কুহু বোকা বোকা চোখে সবাইকে দেখে যাচ্ছে। এরা কি বলছে কিছুই বুঝছে না সে। অপরাধ, মার, ছাদ, সিগারেট খাওয়া এসব কোথা থেকে এলো? কি বলছে এরা? সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সাহেদ যখন কিছু বলতে পারল না তখন রিদওয়ান তাদেরকে যেতে বলল। সে বাকিটা বুঝে নিবে। তার এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সকলে। প্রিন্সিপালের অফিসরুমে বসে গেস্ট টিচারের পদে থেকে সে এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে কিভাবে? প্রিন্সিপাল
স্যারও কিছু বলছে না কেন? কিসের ভিত্তিতে রিদওয়ানকে ছাড় দিচ্ছেন? সবার মনে এমন ধরনের প্রশ্ন উদয় হলেও, প্রশ্ন করার সাহস হলো না কারোই। তারা সকলে চলে এলো।
আসলে এরা কেউ’ই রিদওয়ানের নামে অভিযোগ জানায় নি। টুটুল ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে আসার সময় রিদওয়ানকে এভাবে মারতে দেখেছে। দেখামাত্রই উনাকেও দেখিয়েছে। স্টুডেন্টদের এভাবে মারার নিয়ম নেই। এই নিয়ে জলঘোলা হয়েছে অনেক। রিদওয়ান বাইরে দেশে থাকত নিয়ম কানুন হয়তো জানে না। এইকথা ভেবে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি রিদওয়ানসহ যাদের মেরেছে সকলকে ডেকে এনেছে। যাতে পরে জলঘোলা না হয়। ব্যাপারটা এখানেই সমাধান হয়। তাছাড়া একথা জানা জানি হলে কলেজের রেপুটেশন নষ্ট হবে। উনাদের শিক্ষার দিকে আঙুল তুলবে।
অনেকেই এই সুযোগে মিথ্যাচার ছড়াতেও পিছ পা হবে না।
কুহুরা চলে গেল রিদওয়ান জানাল, ছেলেগুলো তাদের এক বড় ভাইয়ের কথায় কলেজে এসে গাঁজা বিক্রি করে। এমন ভাবে করে এখন অবধি কোনো টিচারের নজরে আসে নি।
আর আসলেও গুরুত্ব দেয় নি। এককাজ হয়ে আসছে গত তিনমাস ধরে। কাজগুলো করে পাঁচজনের একটা দল।তারা প্রথম প্রথম ফ্রি’তেই দিতো। যখন দেখল যারা ফ্রিতে নিতো তারা রেগুলার গাঁজা টানা শুরু করেছে, তখনই তারা ফ্রিতে দেওয়া বন্ধ করে দিলো। ফলে গাঁজার নেশা যাদেরকে পেয়ে বসেছে তারা টাকা দিয়ে কিনে খেতে শুরু করল। গাঁজা বাদে এখন ইয়াবা আনাও শুরু হয়েছে। ইয়াবার দাম বেশি এজন্য এখন দিচ্ছে একপিচ মাত্র আশি টাকা। যারা ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছে অভ্যাস হয়ে গেলেই দামটা বাড়িয়ে দিবে, এটা হচ্ছে ব্যবসার ট্রিকস্। এসব কেনাবেচা হয় পরিত্যক্ত স্টোর রুমে,ওয়াশরুমে আর ছাদে। আজ সকালে যে ছেলেকে সে মেরেছে সে এই কলেজের স্টুডেন্টই না। রাস্তার টোকায়। সে কলেজ ড্রেস পরে রোজ গাঁজা দেওয়ার জন্য আসে, এসেই মেয়েদেরকে নানানভাবে হ্যারাস করে। রিদওয়ান এসব কিছু জানত না। কেউ একজন তাকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে। পরে খতিয়ে দেখে ঘটনা সত্য। রিদওয়ান তার পকেট থেকে চিঠি বের করে টেবিলের উপরে রাখল। প্রিন্সিপাল হতবাক হয়ে চিঠিখানা পড়লেন। কবে, কোথায়, কিভাবে, কি হয় সব ডিটেইলসে লেখা। প্রিন্সিপাল চিঠিটা রেখে বললেন,
-‘মেয়েটাও কি এসবের সঙ্গে জড়িত?’
-‘না, তার কেস অন্য।’
-‘গুরুতর কিছু? ‘
-‘না, তবে আমি সামলে নিবো। আসি।’
একথা বলে উঠতে গেলে প্রিন্সিপাল স্যার রুষ্ট স্বরে বললেন,
-‘ মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে নেই। যত অপরাধই করুক আগে বুঝিয়ে বলা উচিত। এভাবে মারবে না কাউকে। মেরে কাঁদানো একজন ভালো শিক্ষকের কাজ নয়।’
-‘মারের কিছুই হয় নি। ওর কপালে আরেকদফা মার নাচছে।’

রিদওয়ানের কথা শুনে স্যার অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন। এটা আবার কেমন কথা? কি এমন দোষ করেছে মেয়েটা? দেখে মনে হলো রিদওয়ানকে ভয়ও পায়। ভয়ে তখন কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল। এই তেজি বুনো ঘোড়াটা হঠাৎ ফুটফুটে মেয়েটার উপর রাগল কেন? রাগের কারণ কি? যতদূর মনে পড়ে রিদওয়ানের নামে মেয়েলি কোনো কেস নেই। মেয়েদের অসন্মান করে না সে। তাহলে এই মেয়েটার পেছনে হাত ধুয়ে
পড়ার কারণ বুঝলেন না। ছেলে বড় হয়েছে। ছেলের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করাও ঠিক হবে না। আর রিদওয়ান জানলে রেগে যাবে। তাকে রাগানো মানে নিজের সন্মান নিজ হাতে খোয়ানো। উনি আর কথা বাড়ালেন না। তবে মনে মনে ঠিক
করলেন মেয়েটাকে নজরে নজরে রাখবে। রিদওয়ান উনার দৃষ্টি পরোয়া করে ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কথা
বলতে ইচ্ছুক নয় সে। স্যার বেল বাজিয়ে টুটুলকে ডাকলেন
বুঝিয়ে দিলেন তার বর্তমান কাজ। টুটুল কলেজের কর্মচারী ছাড়াও উনার একজন বিশ্বস্ত লোক। টুটুল উনার বাসাতেও কাজ করে। বাজার সদাই করে। এমনিতেই ছেলেটা ভীষণ ভালো। বুদ্ধিমানও বটে। এখন দেখা যাক, সে গোয়েন্দাগিরি করে চাঞ্চল্য কোনো খবর আনতে পারে কি না। কিংবা তার বুদ্ধির জোর কতটুকু।

অফিস রুম থেকে বেরিয়ে কুহু আর কলেজে থাকে নি। সে
কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে গেছে। পণ করেছে আগামী এক সপ্তাহে কলেজে আসবে না। এমন বেয়াদব স্যারের সামনেই যাবে না। যে সাধারণ ভুল মাফ করতে পারে না, সে আবার কিসের স্যার? সে নিজে আস্ত বেয়াদব সে নাকি দিবে শিক্ষা। দরকার নেই এমন শিক্ষার। এদিকে মেয়েকে কাঁদতে দেখে ইসমত আরা বেগম কি হয়েছে বার বার জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাও বলৱ নি। আম্মুরও উপরেও তার রাগ হচ্ছে, ভীষণ রাগ। সে রাগে দুঃখে হিজাব আর ভি বেল্টটা খুলে কলেজ ড্রেস পরে শুয়ে পড়ল। হাতের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যথায় টনটন করছে। আড়াআড়িভাবে দুটো করে দাগ বসে গেছে।
সে হাতের অবস্থা দেখে কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় ঘুমিয়ে গেল। তখন তার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। ঘুমন্ত কুহু জানতেও পারল কেউ একজন মরিয়া হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। অবশেষে না পেয়ে নাম্বার মেসেজ করেছে। কিন্তু কুহুর ফোনের খেয়াল থাকলে তো? সারাদিন যা ঘটল তাতে
নিজেরই হুঁশ থাকার কথা না। তাছাড়া সে ম্যাসেজ ট্যাসেজ
চেক করে না। কারণ এলে রবি কোম্পানির ম্যাসেজই আসে তার ফোনে। ব্যক্তিগত পছন্দ নেই, মানুষও নেই। কেউ তাকে ম্যাসেজ করতে পারে এই ধারণাও তার নেই। এজন্য হয়তো
অনাদরে ম্যাসেজটা আনসিন অবস্থায় থেকে যাবে, কখনো যদি সিন করেও তাহলে দেখতে পাবে কারো বুকচাপা রাগের ক্ষুদে বহিঃপ্রকাশ। রাগটুকু যেন এই ম্যাসেজ উগড়ে দেওয়া,

-‘ভি-বেল্টের সঠিক ব্যবহার না জানলে সেটা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সেটা নেওয়া যা; না নেওয়াও তা। কলেজে এসে ছেলেদের থেকে গা বাঁচিয়ে চলা এক বুদ্ধিমতী মেয়ের কাজ। কিন্তু যারা সস্তা, তারা ব্যাপারটা আমলেই নেয় না।
ছেলে মেয়ের ফ্রেন্ডশীপ খুবই ভালো, তবে ছেলে হয়ে মেয়ের ভি-বেল্ট ধরে টানাটানি করা জঘন্যতম কাজ। আর জঘন্য কাজটা করার পরেও যদি সেটাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে প্রশ্রয় দু’জনেরই আছে। তারা দু’জনেই চরম বেয়াদব। আর বেয়াদবে শাস্তি বেয়াদব হয়ে দিতে হয়।’

To be continue…..!!

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here