রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা #পার্ট_৬ জাওয়াদ জামী জামী

0
176

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৬
জাওয়াদ জামী জামী

” বল ইমদাদুল, তোর শেষ ইচ্ছা কি? আমি এতটাও নির্দয় নই যে, একজন মৃ’ত্যু পথযাত্রীর শেষ ইচ্ছেটুকুও পূরণ করবনা। এটলিস্ট তোর ওয়াইফের কোন অভিযোগ থাকবেনা আমার প্রতি। কারন তার সামনেই তার স্বামীর শেষ ইচ্ছা জানতে চাচ্ছি আমি। তাইনা, ভাবী? ”

ইমদাদুলের আলিশান প্রাসাদের ড্রয়িংরুমের দামী সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে পুলক মির্জা। ওর সামনের সোফায় ইমদাদুল, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে বসে আছে। ওরা ভয়ে কাঁপছে। চারপাশে ওদের ঘিরে রেখেছে পুলক মির্জার ছেলেরা। তাদের প্রত্যেকের হাতে নাইন এম এম, বেরেটা এম নাইন, রিভালবার, শর্টগান এমনভাবে দুলছে যেন এগুলো ওদের শরীরেরই একটা অংশ।

” প্লিজ ছোট মির্জা, আমার স্বামীকে ছেড়ে দাও। ওর এই ভুল তুমি ক্ষমা করে দাও। ” অনুনয় ঝরে পরল ইমদাদুলের স্ত্রী’র গলায়।

” আমার ছেলেরা যদি গতকাল শফিককে না ধরত, তবে কি আপনার স্বামী আমার বাবাকে ছেড়ে দিত? বাঁচিয়ে রাখত? ” পুলক মির্জার কথার কোন উত্তর নেই ইমদাদুলের স্ত্রী’র।

” পুলক, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার পরিবারকে ছেড়ে দাও। আমার মেয়েরা ভয় পাচ্ছে। ওরা এসবের সাথে পরিচিত নয়। ” ইমদাদুল হাতজোড় করল।

” আমিও তো কোন বাবারই সন্তান। যখন শফিককে আমার বাবাকে মারতে পাঠিয়েছিলি, তখন সেই কথাটা একবারও মনে হয়নি? তারও তো তোর মেয়ের বয়সী একটা মেয়ে আছে? ” রাগে পুলক মির্জা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ইমদাদুলের গালে।

শাহেদ একহাতে শফিককে ধরে রেখেছে, ওর আরেক হাতে নাইন এম এম। পুলক ইশারা করতেই শাহেদ, আশিক, সাকিব মিলে শফিককে বেধড়ক পেটাতে শুরু করল।
আরেকদিকে, রিকো, সুমন, সোহান, রায়হান, মিঠু, ইব্রাহিম মিলে ইমদাদুলকে পেটাতে শুরু করল।

ইমদাদুলের স্ত্রী-মেয়েরা তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করছে। প্রায় আধমরা ইমদাদুলকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায় ছেলেরা।
পিস্তল হাতে পুলক এগিয়ে যায় মেঝেতে লুটোপুটি খেতে থাকা ইমদাদুলের দিকে। পিস্তলের নল ঢুকিয়ে দেয় ইমদাদুলের মুখের ভেতর। ভয়ে জমে যায় ইমদাদুলের স্ত্রী-মেয়েরা।

” শোন ইমদাদুল, আজকে তোকে প্রান ভিক্ষা দিলাম। তোর স্ত্রী-সন্তানদের অনুরোধ ফেলতে পারলামনা। তবে এরপর যদি কখনো আমার বাবার ক্ষতি করার চিন্তা মাথায়ও আনিস ,সেদিন তোর মৃ’ত্যু কেউ ঠেকাতে পারবেনা। আজকের পর থেকে তুই রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিবি। আমার কথা না মানলে তোর পায়ের নিচে মাটি থাকবেনা। ” পুলক হাত বাড়িয়ে দেয় শাহেদের দিকে। শাহেদ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পুলকের হাতে দেয়।

” নে এখানে একটা সিগনেচার কর। এটাই তোর বেঁচে থাকার দলিল। ” পুলক কাগজটা এগিয়ে দেয় ইমদাদুলের দিকে।

” ক…কি লেখা আছে এ..এ..ত..তে? ” আর্তনাদ করতে করতে জিজ্ঞেস করল ইমদাদুল।

” বললামনা, এটা তোর বেঁচে থাকার দলিল। তারপরও যখন শুনতে চাচ্ছিস, তখন শোন, এখানে লিখা আছে তুই ভবিষ্যতে রাজনীতি করবিনা, কিন্তু সমর্থন দিবি আমার বাবাকে, আমার বাবার হয়ে কাজ করবি। তোর সমর্থকরা সবাই আমার বাবার হয়ে কাজ করবে। তুই, তোর স্ত্রী-সন্তানরা আমার অনুমতি ছাড়া দেশ ছাড়তে পারবিনা আজীবন। তোর সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করব আমি৷ মাস শেষে তোকে খরচের জন্য নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা দেব। নে সিগনেচার কর। ” পুলকের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে ইমদাদুল। ও শরীরের ব্যথা ভুলে তাকিয়ে আছে পুলকের দিকে। পুলক তাকে পথে বসানোর ব্যবস্থা পাকাপাকি করে দিয়েছে এটা সে নিশ্চিত।

ইমদাদুলকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসল পুলক। এই মুহূর্তে তাকে দেখে পুলক মজা পাচ্ছে।

” সিগনেচার করবি নাকি পরপারের টিকেট কাটব তোর জন্য? ” পুলকের প্রচ্ছন্ন হুমকিতে ভয় পায় ইমদাদুল। হাত বাড়ায় কলমের জন্য।

***

” বেটা, সারাদিন কোথায় ছিলে? তোমার সাথে খাব জন্য এখনও আমরা দু’জন মানুষ না খেয়ে আছি। আর তুমি রাত এগারোটায় বাসায় এসে শুয়ে আছ! এভাবে আমাদের উৎকন্ঠায় না রাখলে হয়না? ” মল্লিকা মির্জা পুলককে শুয়ে থাকতে দেখে ওর পাশে বসলেন। ছেলের চুলে আঙুল চালিয়ে আদুরে গলায় বললেন।

” খুব টায়ার্ড লাগছিল, আম্মু। কিন্তু তোমরা সারাদিন ধরে না খেয়ে আছ কেন! কি যে কর তোমরা। না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ হয়ে যাবেনা? আব্বু কোথায়? তুমি টেবিলে খাবার দাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, আর আব্বুকেও ডাকছি। ” অস্থিরচিত্তে বলল পুলক। ও তখনো আধা শোয়া অবস্থায় আছে।

” তোমার আব্বু বাহিরে গেছে। আধাঘন্টার মধ্যেই এসে যাবে। কিন্তু তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে? কত চিন্তা করি তোমাকে নিয়ে, কিন্তু তুমি সেটা বুঝতেই চাওনা। ” মল্লিকা মির্জার গলায় অভিমান চাপা থাকেনা।

পুলক আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসল। জড়িয়ে ধরল মা’য়ের হাত।

” ক্ষমা কর, আম্মু। জরুরী কাজ পরে গিয়েছিল, তাই সারাদিন বাসায় আসতে পারিনি। এরপর এমনটা আর হবেনা। ”

” তুমি কিন্তু এখন পর্যন্ত বউমার ছবি আমাকে দেখাওনি। একদিন তাকে বাসায় নিয়ে এস। আমরাও দেখি আমাদের ঘরের রানী কেমন হবে। ”

” আমি আগেই বলে রাখছি, সে আর তার পরিবার কিন্তু তোমার সোসাইটির সমকক্ষ নয়। অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে সে। হয়তো তাকে দেখে, তার পরিবারকে দেখে তোমাদের পছন্দ হবেনা। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। বিয়ে করলে ওকেই করব। ”

” আমার ছেলে যাকে পছন্দ করেছে, তাকে অপছন্দের কোন কারন দেখছিনা আমি। আমরা চাই আমার ছেলে বিয়ে করে আমার রাজমহলে একটা রানী নিয়ে আসুক। তার পদচারনায় মুখরিত হোক এই মহলের প্রতিটি কোন। হয়তো এখন সে আমাদের সোসাইটির উপযুক্ত নয়, কিন্তু কে বলতে পারে, হয়তো এক সময় এই মেয়েটার হাত ধরেই এই মির্জা পরিবার আরও একবার সম্মানের মুখ দেখবে। এবার বল তাকে কবে বাসায় নিয়ে আসছ? আর বিয়ের পর কোন দেশে সেটেল হতে চাও? ”

” আমার সাথে চালাকি করছ, আম্মু? তোমরা কি ভেবেছ, বিয়ের পর আমি দেশের বাইরে চলে যাব? সেটা কখনোই ঘটার চান্স নেই। রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে আমি, আমার রক্তে রাজনীতি। তাই দেশ থেকে বাহিরে যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারিনা। আর আব্বুকে অরক্ষিত রেখে অন্য দেশে যাওয়ার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবিনা। ভবিষ্যতে এই নিয়ে আর কোন কথাই হবেনা। আর রইলো তোমার বউমার বিষয়। তবে সে এখানে সজ্ঞানে আসবেনা। তাকে দেখতে হলে তার বাড়িতে যেতে হবে তোমার। তাকে এই বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে। ”

ছেলের কথা শুনে মল্লিকা মির্জার মন খারাপ হয়ে যায়। তিনি কিছুতেই চাননা, তার ছেলে দেশে থাকুক। রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজের জীবন শেষ করুক। তাই তিনি ছেলেকে দ্রুতই বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। তিনি চাচ্ছেন বউসহ ছেলে সুইজারল্যান্ড পাঠাতে। তবে তিনি এই মুহূর্তে ছেলের সাথে উচ্যবাচ্চ করতে চাইছেননা। যা করার ভেবেচিন্তে করতে হবে।

***

” আশফি, কোথায় গেলি, মা? ” আফজাল হোসেন ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে এসে ডাকল আশফিকে। বাবার ডাক শুনে আশফি ঘর থেকে বেরিয়ে আসল।

” বাজার এনেছ, আব্বা? দাও আমার কাছে। ”

” শোন মা, বড় রুই মাছ নিয়ে আসছি। মাথাটা রেখে দিবে। রিফাত আসলে ওকে রান্না করে দিবে। ছেলেটা মাছের মাথা খেতে ভালোবাসে। ”

” আচ্ছা, আব্বা। তুমি ঘরে যাও। আমি চা দিচ্ছি তোমাকে। ”

” বাপে কইল রিফাতরে মাছের মাথা দিবি, আর তুই ও রাজি হইলি? তোর বুড়া ভাইয়ের যদি মাছের মাথা খাওয়ার শখ হয়, তয় আমার পোলা-মাইয়ার শখ হইতে পারেনা? তর বাপের না হয় এক পা কবরে গেছে, তাই উল্টাপাল্টা চিন্তা করে। কিন্তু তোর তো মরার বয়স হয়নি। তুই বুঝসনা? মাছ কাইটা ভালো কইরা রাইন্ধা নে। মাথা আমার পিয়াসরে দিব। ” রিনা আক্তার খেঁকিয়ে উঠল।

” ঠিক আছে, আম্মা। ভাইয়াকে মাছের মাথা দিতে হবেনা। পিয়াসকেই দিও। আর আব্বাকে নিষেধ করে দিও আর যেন এমন উল্টাপাল্টা কথা না বলে। ” আজকাল আশফির আব্বার ওপর প্রচন্ড অভিমান হয়। আব্বা যদি শুরু থেকেই মা হারা তার দুই ছেলে-মেয়ের প্রতি একটু সদয় হত, তবে আজ তারা নিজের বাড়িতেই অবহেলিত হতোনা।

” আচ্ছা মেজো চাচি, তুমি সব সময়ই এভাবে কথা বলো কেন? মেজো চাচা সপ্তাহে তিনদিন বাজার করে, বড় বড় মাছ কিনে, মাংস কিনে। এছাড়া নিজের পুকুরের মাছও বাড়িতে আসে। সব মাছের মাথাই শুনি পিয়াস, পৃথা খায়। আশফি আর রিফাত ভাইয়া কি মেজো চাচার সন্তান নয়? ওদের কি মাছের মাথা খেতে ইচ্ছে করেনা? সপ্তাহে একদিন তোমার নিজের ছেলেমেয়ে মাছের মাথা না খেলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে? ” তিয়াসা রিনা আক্তারের কথা শুনতে পেয়ে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল।

” তুই ছোট ছোটর মতোই থাক, তিয়াসা। তরে এইখানে কথা কইতে কে ডাকছে? আমার সংসারে আমি কি করমু সেইডা তোর থাইকা জাইনা নিমু? ” রিনা আক্তার কাউকে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নয়।

” আমাকে মুখ ঝামটা দিওনা, মেজো চাচি। আমি আশফি কিংবা রিফাত নই। তাই তোতোমার মুখ ঝামটা সহ্য করার প্রশ্নই আসেনা। তুমি উঠানের মধ্যেই যেভাবে চিৎকার দিয়ে কথা বলছ, আমার কানে পৌঁছে গেছে কথাগুলো, তাই বাহিরে আসলাম। আগে নিজের গলার জোর কমাও, পরে আমার বিচার করতে এস। মেজো চাচা, তোমার সামনে আশফি, রিফাত ভাইয়াকে চাচি কত আজেবাজে কথা বলে, সেসব শুনতে তোমার ভালো লাগে? কৈ তোমার আর দুই ভাই তো এমন স্ত্রৈন নয়। তবে তুমি কেন এমন হলে? কি করে পার নিজের সন্তানদের এমন অপমান মুখ বুজে সহ্য করতে? চল আশফি মাছটা কেটে দেই। ” তিয়াসা আশফির হাত ধরে ওকে নিয়ে রান্নাঘরে যায়।

আফজাল হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে যায়। রিনা আক্তার উঠানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তিয়াসাকে মনে মনে গালমন্দ করল। তবে তিয়াসাকে সামনাসামনি কিছু বলার ক্ষমতা তার নেই। তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন তিয়াসা। ওকে কেউ কিছু বললেই ওর ভাইয়েরা সাথে সাথে রুখে দাঁড়ায়। এছাড়াও তিয়াসার বাবার সাংসারিক অবস্থা রিনা আক্তারের সাংসারিক অবস্থার থেকেও অনেক ভালো। আর তিয়াসার তিন ভাইও বড় চাকরিজীবী। তাই রিনা আক্তার ওদের সাথে লাগতে যায়না।

” গাধীরে, আর কতদিন এমন অবলা হয়ে থাকবি? একটু প্রতিবাদ করতে শিখলে কি হয়? যেখানে প্রতিবাদ করা দরকার সেখানে না করে, তুই পুলক মির্জার সাথে ঠ্যাটামি করিস! তোর কি মনে হয়, তোর আম্মা পুলক মির্জার থেকেও বেশি ভয়ংকর? যেখানে কথা বলা প্রয়োজন সেখানে কথা না বলে, অপ্রয়োজনীয় জায়গায় কথা বলিস। ” মাছ কাটছে আর কথা বলছে তিয়াসা। ওর পাশেই আশফি সবজি কাটছে।

” ঐ লোকটাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে। ওর এ্যাটিটিউড দেখলে মনে হয় যেন দেশের কিং। তার ছ্যাঁচড়ামো দেখলে আরও রাগ উঠে। তাই মুখ ফসকেই কথা বেরিয়ে যায়। ”

” পুলক মির্জা কিন্তু তোর সাথে কোনরকম ছ্যাঁচড়ামো করেনি। তোর সাথে ভদ্রভাবেই কথা বলেছে। ”

” তুই কি তার পক্ষ নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করছিস? তাকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। তাই রিয়্যাক্ট করে ফেলি। ” রিনা আক্তারকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে আর কিছু বললনা আশফি। নিরবে কাজ করতে থাকল। ”

***

” ভাবী, এই নিন সফ্ট ড্রিংক্স। আর এই যে ছাতা। এই রোদের মধ্যেও আপনি ছাতা ছাড়া কলেজে আসেন দেখে ভাই কিনে পাঠিয়েছে। ” আশফি ক্লাস শেষ করে কলেজের বারান্দায় আসতেই সাকিব নামের ছেলেটি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। আজও তিয়াসা কলেজে আসেনি। তাই ওকে একাই বাড়িতে যেতে হবে।

” আমার এসব লাগবেনা, ভাইয়া। আপনি নিয়ে যান। ”

” প্লিজ ভাবী, নিন। নয়তো ভাই আমার চুল কেটে টাকলা বানিয়ে দেবে। এই গরমে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। সেজন্যই ভাইয়ের নির্দেশ আপনাকে যেন প্রতিদিন পানি আর সফ্ট ড্রিংকস দেই। আর রোদে ছাতা ছাড়া বের হবেননা। ” সাকিব গভীর মনোযোগে কথাগুলো বলল।

” এটাও কি আপনার ভাইয়ার নির্দেশ? মানে ছাতা ছাড়া কোথাও যেতে পারবনা? ”

” জ্বি, ভাবী। ”

” এখন থেকে আমার সবকিছু আপনার ভাই নিয়ন্ত্রণ করবে বুঝি? ”

” সেটা ভাই জানে। সে আমাদের যা হুকুম করবে, আমরা সেটাই করব। ”

” মাজার আছে? ”

আসফির এমন প্রশ্নে ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। সে প্রশ্নই বুঝতে পারেনি উত্তর দেবে কি।

” সরি, ভাবী। আপনার প্রশ্ন বুঝিনি। ”

” বললাম আপনার ভাইয়ের নামে কোন মাজার আছে? যেভাবে কথায় কথায় ভাই জপ করছেন, তাতে মনে হচ্ছে আপনার ভাইয়ের মাজার আছে, সে সেখানকার পীর আর আপনারা তার মুরিদ। ”

” এখন পর্যন্ত কোন মাজার নেই। তবে ভাই চাইলে হবে। আর আপনি যদি চান তবে ভাইকে বলতে পারি। আপনার ইচ্ছা ভাই অবশ্যই পূরণ করবে। আমরা জানি, আপনার ইচ্ছে পূরণের সারথি হচ্ছে ভাই। ”

” সাকিব? ” পুলকের ডাকে চমকে পেছনে তাকায় ওরা দু’জন। ওদের কথার মধ্যে কখন পুলক এসে দাঁড়িয়েছে তা ওরা বুঝতে পারেনি।

” ভাই! আমি ভাবীকে সফ্ট ড্রিংক্স দিতে এসেছি। নিন, ভাবী। ”

” আমার এটা লাগবেনা। ” আশফি চলে আসতে চাইলেই পুলক ওর হাত আলতো করে ধরল। ভয়ে আশফির শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে।

” ম্যাম আজ আপনি আমার সাথে যাবেন। চলুন। ”

” কো..কোথায়? আমি বাড়িতে যাব। ”

” আমি আপনাকে গ্রামেই পৌঁছে দেব। ”

” আপনার সাথে কোথাও যাবোনা। আমি রিকশায় যেতে পারব। ” আশফি এক ঝটকায় পুলকের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় কলেজ থেকে। গেটের সামনে একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে বসল রিকশায়।

আকাশ জুড়ে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা। ধরনী স্তব্ধ হয়ে আছে। ঝড়ের পূর্ব মুহূর্তে যেমন সবকিছু নিশ্চুপ থাকে ঠিক তেমনই নিশ্চুপ হয়ে আছে প্রকৃতি। আশফির এবার ভয় লাগছে। রাস্তার মাঝেই যদি ঝড় আসে তবে কি হবে। বারবার রিক্সাওয়ালাকে জোরে চালাতে বলছে। দশ মিনিট পরই বইতে শুরু করল বাতাস। প্রবল বাতাসের দরুন রিক্সা চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে। ঝড়ের সাথে সাথে বিজলি চমকাচ্ছে। সেই সাথে বাজও পরতে শুরু করল।

” আম্মা, এই ঝড়ের মইধ্যে রিক্সা চালান যাইবনা। একটা দোকান দেইখা দাঁড়াইতে হইব। ” রিক্সাওয়ালা উপায় না দেখে বলল।

” এই ঝড়ের মধ্যে কোথায় দাঁড়াব, মামা? ” আশফি ভয়ে কাঁপছে।

রিক্সাওয়ালা রাস্তার একপাশে রিক্সা দাঁড় করিয়ে আশফিকে নিয়ে পাশের এক দোকানে গেল। দোকানে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় বিশজন মানুষ। এতগুলো পুরুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ভেবেই ভয়ে বুক শুকিয়ে আসছে আশফির।

আশফিকে দেখে একজন সরে দাঁড়ায়। ঝড় থেকে বাঁচতে মেয়েটা সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়।

আশফি বুঝতে পারছে কয়েকজন ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কিছু বলছে। বিষয়টা ওর কাছে ভালো লাগছেনা। চিন্তা করল এখান থেকে বেরিয়ে যাবে। হোকনা ঝড়। সম্মান আগে।

” এক্সকিউজ মি ব্রাদার, দেখছেননা এখানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে? এদিকে চেপে আসছেন কেন আপনারা? সড়ে দাঁড়ান। ” এতগুলো অপরিচিত মানুষের মধ্যে পরিচিত গলা শুনে চমকে তাকায় আশফি। ওর পাশে পুলককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুকে প্রশান্তি অনুভব করল।

দোকানের মধ্যে থাকা লোকজন পুলক মির্জাকে চিনতে পেরে তাকে দাঁড়ানোর জায়গা করে দেয়। পুলক আশফির জায়গায় এসে দাঁড়িযে আশফিকে ওর একপাশে নেয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here