রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা #পার্ট_৮ জাওয়াদ জামী জামী

0
116

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৮
জাওয়াদ জামী জামী

রিক্সা এসে কলেজের গেইটে দাঁড়ালে ওরা নামতেই কারও উচ্চ হাসির আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকিয়েই দেখল পুলক মির্জা ও তার গ্যাং। আশফিকে তাকাতে দেখেই কয়েকজন বিগলিত হাসি দিয়ে সালাম দেয়। এরপর সবাই একে একে ওদের সালাম দিতে শুরু করল। ওদের সালাম দেয়া কমপ্লিট হলে, আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ায় পুলক। সানগ্লাস খুলে টি-শার্টের সামনে ঝুলিয়ে এগিয়ে আসল আশফিদের দিকে।

” তিয়াসা, এরপর থেকে তোমার বোনকে একা কলেজে পাঠিওনা। ভদ্রমহিলা অতিশয় বুদ্ধিমতী। অতিরিক্ত বুদ্ধি থাকার কারনে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন, যা তার জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। ”

পুলকের কথা শুনে আশফি হতভম্ব হয়ে তাকায় তিয়াসার দিকে।

” এই তিয়ু, কি বলছে এই লোকটা! একদিন সাহায্য করেছে জন্য কি আমার মাথা কিনে নিয়েছে? সে নিজে একটা বুড়ো শেয়াল হয়ে আমাকে ইনসাল্ট করছে! ”

আশফির কথা শুনে পুলক খুকখুক করে কেশে উঠল। আর ওর সাঙ্গপাঙ্গরা মিটিমিটি হাসছে। যেই মানুষকে পুরো শহরের মানুষ ভয় পায়, যার সামনে কেউ গলা উঁচিয়ে কথা বলার সাহস করেনা, সেই পুলক মির্জাকেই একটা মেয়ে জনসম্মুখে বুড়ো শেয়াল বলছে, এটা ওদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতাই বটে।

” আমি আপনাকে মোটেও ইনসাল্ট করিনি, ম্যাম। আপনাকে ইনসাল্ট করার দুঃসাহস আমার নেই। আমি শুধু আপনার কাজিনকে এটাই জানিয়েছি যে, আপনি অতিব জ্ঞানী নারী। এতে আপনি খুশি না হয়ে রাগ করছেন কেন! ”

” তিয়াসা, তুই শুনলি, লোকটা আমাকে আবারও ইনসাল্ট করল? এতবড় ইনসাল্ট মেনে নেয়া যায়, তুই-ই বল? ” আশফির কথা শুনে তিয়াসা কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। এই মেয়েটাকে বোঝানোর সাধ্য ওর নেই।

” আপনি আবারও আমাকে ভুল বুঝছেন। আ…” পুলক কথা শেষ করতে পারলনা। তার আগেই ধমকে উঠল আশফি।

” এই চুপ করুন। আপনার কোন কাজ নেই? যখনই দেখব, তখনই দেখি এখানে-সেখানে চৌকিদারের মত টহল দিয়ে বেড়ান? ”

পুলক ঠোঁটে তর্জনি আঙুল চেপে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর রমনীর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রানভরে দেখছে ওর রমনীকে। এদিকে আশফি একমনে বকেই চলেছে,

” সারাদিন এই যে টইটই করে ঘুরে বেড়ান, বাড়ির মানুষজন কিছু বলেনা? এই বয়সে বাপের হোটেলে খেতে লজ্জা করেনা? ”

তিয়াসা এইবার ভয় পায়। ও বুঝতে পারছে আশফি এখন লাইন ছেড়ে বেলাইনে ককথা শুরু করবে। তাই ও আশফির হাত চেপে ধরল। আলতোভাবে চাপ দিল আশফির কবজিতে। কিন্তু তাতেও আশফির হুঁশ হলোনা। ও খেঁকিয়ে উঠল তিয়াসার ওপর।

” কি হয়েছে, এভাবে চাপাচাপি করছিস কেন? তুই ও কি এদের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে ইনসাল্ট করতে চাস? ”

” সরি, ম্যাম। আপনি শান্ত হোন। এই শাহেদ, ভাবীকে একটা সফ্ট ড্রিংক এনে দে। আর তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? দেখছিসনা তোদের ভাবী রেগে গেছে? বাতাস কর। গুরুজনকে রাগতে দেখেও এমন নিউট্রাল আছিস তোরা! তোদের দেখে আমার লজ্জা হচ্ছে। ” পুলকের ধমকে সবাই ছুটে এসে হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে বাতাস করতে থাকে। শাহেদ ছুটে যায় সফ্ট ড্রিংক আনতে।

” কে আপনার ভাবী? কোন এ্যাঙ্গেল থেকে আমাকে আপনার ভাবী মনে হয়? সরি বলে ঢং দেখাচ্ছে! ” আশফির কথায় পুলক চোখ বড় করে তাকায় আশফির দিকে। তিয়াসার ভিষণ হাসি পাচ্ছে আশফির বোকামিতে।

” যে এ্যাঙ্গেল থেকেই দেখিনা কেন , আপনাকে আমার বউই মনে হয়। আপনাকে বউ ব্যাতিত অন্য কিছুই ভাবতেই পারিনা। যে মেয়ে শুধু পুলক মির্জার বউ হওয়ার ক্ষমতা রাখে, তাকে অযথাই ভাবী ডেকে কেন নিজের পুরুষত্বকে ছোট করব! আর আমি মোটেও ঢং করছিনা। আমি শুধু আপনাকে ভয় পাওয়ার চেষ্টা করছি। শুনেছি সব পুরুষরাই তাদের স্ত্রীদের ভয় পায়। স্ত্রী’কে ভয় না পেলে সংসার জীবন নাকি মধুর হয়না। তাই আমি আগে থেকেই সংসার জীবন মধুর করার চেষ্টা করছি। ”

” ভাইয়া, আমরা যাই। ক্লাস শুরু হতে দেরি নেই। আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেননা। ”

” এটা নিয়ে যাও। তোমার কাজিনের এটা দরকার। আর হ্যাঁ, আমি কাল থাকছিনা। তাই তোমাদের সাথে দেখা হবেনা। তবে..

” আলহামদুলিল্লাহ। ” পুলকের কথা শেষ না হতেই আশফি বিরবিরিয়ে বলল। তবে সেটা পুলকের কানে ঠিকই পৌঁছে গেছে।

” এই মেয়েকে আমার সামনে থেকে এখনই নিয়ে যাও, তিয়াসা। একে তোমরা দিনরাত সহ্য কর কিভাবে! একে সহ্য করার জন্য তোমরা দুই-একটা প্রাইজ ডিজার্ভ কর। ”

তিয়াসা বুঝল পুলক মির্জা ভিষণ রেগে গেছে। তাই ও আশফিকে টেনে কলেজের ভেতরে নিয়ে যায়।

” পুলক মির্জা, দেখেশুনে একটা বোকার হদ্দকেই তোর পছন্দ হতে হলো? এই মেয়েটা তোর সুখের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে এখন থেকেই। বাকি জীবন তোর সুখের কাটবেনা এটা আমি নিশ্চিত বলতে পারি। ” নিজের কপাল চাপড়ে নিজেই বলল পুলক।

***

সেদিন দুপুরের আগেই পুলক ঢাকায় রওনা দিল৷ প্লেনে যাওয়ায় সময়ের অনেক আগেই ঢাকা পৌঁছে যায়। নিজেদের ফ্ল্যাটে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে এরপর এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।

” পুলক বেটা, তারাতারি আমার বুকে এস। ” বড় চাচার গলা পেয়ে ফোন পকেটে রেখে উঠে দাঁড়ায় পুলক। ও বরাবরের মত ভিআইপি লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করছিল।

” চাচ্চু, আমার হিরো তুমি এসে গেছ? ” পুলক জড়িয়ে ধরল ওর বড় চাচা কামরান মির্জাকে।

” কেমন আছো আমার, বেটা? বাসার সবাই কেমন আছে? ”

” সবাই জোস আছে, চাচ্চু। তুমি কেমন আছো? বড়মা, সাদ ভাইয়া , কৃতী ওরা কেমন আছে? ”

” সবাই ভালো আছে। তুমি কি একা এসেছো? ” কামরান মির্জা এদিকওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজলেন।

” চিল চাচ্চু, আমি একা আসিনি। তোমার লোকজনও এসেছে। ওরা বাহিরে অপেক্ষা করছে। ”

” এলাকার খবর সব ভালো? আমার অনুপস্থিতিতে কোন ঝামেলা হয়নিতো? ”

” ঝামেলা হওয়ার কোন সুযোগ দিলে তো। ” দু’জন গল্প করতে করতে এয়ারপোর্ট ছাড়ল।

***

” তিয়ু রে, কথা বলছিসনা কেন? তোর সাথে কথা না বললে আমার কষ্ট হয় জানিসনা। প্লিজ একটু কথা বল। ” তিয়াসার রুমে গিয়ে আশফি ওর চারপাশে ঘুরঘুর করছে।

” তোর সাথে কথা বলে কোন লাভ আছে? আমার কোন কথা শুনিস তুই? ”

” ভুল হয়ে গেছে। আর এমন হবেনা। আমি ঐ লোকটার সামনে গেলে মুখ বন্ধ করে রাখব। এবারতো কথা বল। ”

” পুলক মির্জা অন্যের সাথে যেরূপ আচরণ করে, তোর সাথেও যদি তেমন আচরণ করত তবে কি তুই কলেজে যেতে পারতিস বলে তোর মনে হয়? আমি খেয়াল করেছি, সে তোর সাথে কথা বলার সময় যথেষ্ট নম্র আচরণ করে। কিন্তু তুই উল্টাপাল্টা কথা বলিস। আজ তাকে তুই খেপিয়ে দিয়েছিস। সে যদি মনে করে, তোকে এই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে, তবে সেটা সে পারবে। তাকে বাঁধা দেয়ার মত কেউ আমাদের জেলায় নেই। ”

” আশফি, ঐ আশফি, বাড়িতে আয়, কাম আছে। ” রিনা আক্তারের গলা শুনে তিয়াসা থেমে যায়। ও দরজার দিকে তাকায়। উঠানে রিনা আক্তার দাঁড়িয়ে আছে।

” আসছি, আম্মা। যাই রে। রাতের খাবার রান্না করতে হবে। ”

” তুই যা। আমি একটু পর আসছি। ”

***

কেটে গেছে পনের দিন। রিফাত চাকরিতে জয়েন করেছে। সে চলে গেছে চিটাগং। আগামী দুইমাসের আগে গ্রামে আসতে পারবেনা।

পুলকও ভিষন ব্যস্ত সময় পার করছে। রাজনৈতিক সমাবেশসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে কামরান মির্জার সাথে সে অংশ নিচ্ছে। তাই সে আশফির সামনে আসতে পারছেনা, কিংবা ককথা বলতে পারছেনা। শুধু কলেজে এসে আশফিকে এক নজর দেখেই কাজে চলে যাচ্ছে।

***

” ভাইজান, আপনার ভাতিজার বিয়ের বয়স হয়েছে। এবার তাকে বিয়ে দিতে হবে। একজনকে নাকি তার পছন্দ হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বউমাকে গিয়ে একদিন দেখে আসব। আপনি যাবেন আমাদের সাথে? ” মল্লিকা মির্জা খাবার টেবিলে টুকটাক গল্প করতে করতে কামরান মির্জাকে বললেন।

” তাই নাকি! অবশেষে আমাদের হিরো কাউকে পছন্দ করল। তা আমাদের বউমার বাড়ি কোথায়? তার বাবা কি করে? ”

মল্লিকা মির্জা যতটুকু জানেন খুলে বললেন।
সব শুনে হাসলেন কামরান মির্জা।

” ভাইজান, আমরা এই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা বউমার গ্রামে যেতে চাচ্ছি। পুস্পিতা আসলেই আমরা যাব। আপনি যাবেনতো আমাদের সাথে? ”

” পুষ্পিতা কবে আসছে? তার বেড়ানো শেষ হচ্ছে অবশেষে? ”

” ও আগামী পরশু আসবে। ও যেই শুনেছে পুলকের জন্য বউ দেখতে যাব। তখন থেকেই নাচানাচি শুরু করেছে। বারবার রিকুয়েষ্ট করছে, ও আসলে যেন আমি বউমাকে দেখতে যাই। ”

” একটামাত্র ভাইয়ের বউ দেখতে যাবেনা, আমার পুষ্পিতা মা! আতিক তুমিও যাবে নাকি? ” কামরান মির্জা তার ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন।

” তুমি গেলে আমিও যাব। দুই ভাই মিলে অনেকদিন কোথাও যাইনি। ” আতিক মির্জা চাইছেন তার বড় ভাইও তার সাথে যাক।

” সেদিন আমার কোন প্রোগ্রাম না থাকলে আমিও তোমাদের সাথে যাব। ”

মল্লিকা মির্জা আনন্দে স্বামী এবং ভাসুরকে আরও দুই চামচ ভাত বেশি দিলেন। তারা খেতে না চাইলেও মল্লিকা মির্জার জোড়াজুড়িতে খেতে হয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here