রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা #পার্ট_২২ জাওয়াদ জামী জামী

0
176

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_২২
জাওয়াদ জামী জামী

” নাতবউ, তুমি আমার নাতিটার যত্ন নিও। ছেলেটা খুব অভিমানী। হাজার আঘাত পেলেও কাউকে বুঝতে দেয়না। মনের কষ্ট মনেই চেপে রাখে। তুমি ওকে সামনে থেকে দেখলেও বুঝতে পারবেনা, ওর ভেতর ঝড় বইছে। ছোটবেলা থেকেই ও এমন। প্রথমে আমরাও বুঝতামনা। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি। চুপচাপ, ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে ও। কিন্তু ভেতরে যে পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে ঘুরছে সেটা টেরই পাবেনা। ” শাহেদের দাদু তিয়াসার সাথে গল্প করতে করতে একপর্যায়ে বললেন।

তিয়াসা দাদুর কথার প্রেক্ষিতে কি বলবে তা ভেবে পায়না। তাই ও নিরবে তার কথা শুনতে থাকে৷

” ও নতুন বউ, কাইলকা রাতে দেখলাম শাহেদ বাবা হের স্টাডি রুমে গিয়া শুইল। বাবা’য় এই কামডা করল কেন! তুমি আর রুমের দরজা লাগায় রাইখা ঘুমাইওনা। বাবা’য় যেই দেখছে তুমি রুমের দরজা বন্ধ কইরা দিছ, তাই সে আর তোমারে ডাকেনি। ”

খাদিজা আন্টির কথা শুনে তিয়াসার বুক ধুকপুক করছে। ও বুঝতে পারছে বিষয়টা হয়তো বেশিদিন চাপা থাকবেনা। আর যখন সবাই জেনে যাবে, তখন ওকে অনেকের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। কি জবাব দেবে তখন?

” ঠিক আছে, আন্টি। ” এক বাক্যে খাদিজা আন্টির কথার উত্তর দেয় তিয়াসা।

” দাদু, আমাকে ডেকেছিলে? ” শাহেদ রুমে এসে থমকে দাঁড়ায়। ও জানতনা তিয়াসা এখানে আছে।

তিয়াসা দাদুর পাশেই বসে ছিল। ও শাহেদকে দেখে জড়োসড়ো হয়ে বসল।

” এসো দাদু ভাই, নাতবউয়ের পাশে এসে বস। তোমাদের দু’জনকে পাশাপাশি অবস্থায় দেখা হয়নি আমার। দেখি দু’জনকে কেমন মানিয়েছে। ” দাদুর কথা শুনে শাহেদ তিয়াসা দু’জনেই ইতস্তত করছে। তবুও শাহেদ তিয়াসার পাশে গিয়ে বসল।

” দাদু, তুমি ঔষধ খাচ্ছ ঠিকমত? কালকে আন্টি বলল তুমি নাকি ঔষধ খেতে চাচ্ছনা? এমন কেন করছ? নাকি তুমিও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবার চিন্তা করছ? আমি কি সবার বোঝা হয়ে গেছি দাদু, যে সবাই আমাকে ঝেড়ে ফেলার চিন্তা করে? ” শাহেদের চোখে পানি এসে গেছে। ওর গলা আবেগে ভারী হয়ে গেছে।

খাদিজা আন্টিরও চোখে পানি। সে শাহেদের কষ্ট সইতে পারেনা। তিয়াসা অবাক হয়ে শাহেদের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটার চোখ ছলছল করছে। ফর্সা মুখটা লালচে রং ধারন করেছে। সে ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছে।

শাহেদের চোখে পানি দেখে দাদু ওকে জড়িয়ে ধরলেন।

” এভাবে বলোনা, দাদুভাই। তুমি আমার ছেলে বউমার শেষ স্মৃতি। তোমাকে ঝেড়ে ফেলার কথা আমি চিন্তাই করতে পারিনা। তবে আমার বয়স হয়েছে তো। আজকাল কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা। হয়তো কোন একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে কথা শোনাবে? তুমি কেন বোঝনা, তুমি আমার কলিজার টুকরা। ” দাদুও কেঁদে উঠলেন।

” আব্বা, এইভাবে কাইন্দেননা। দুপুরে খাননি কেউই। আমি টেবিলে খাবার দিতাছি। নতুন বউ, তুমি আব্বারে নিয়া নিচে আস। শাহেদ বাবা, তুমিও আস। আইজ আমি তোমার পছন্দের রুই মাছের কালিয়া রান্ধছি। আর শেষ পাতে রইছে ঘরে পাতা দই। ” খাদিজা আন্টি রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।

” দাদু, চলুন আপনাকে ডাইনিং এরিয়ায় নিয়ে যাই। ”

” আমার পাশে আরেকটুখানি বসবে, নাতবউ? তোমাদের সাথে একটু গল্প করি। ”

তিয়াসা হাসল দাদুর কথা শুনে।

” দাদু, আপনি কালকে আমাদের বাড়িতে গেলেননা কেন? আমি কিন্তু আপনাকে আশা করেছিলাম। আন্টিও যায়নি। আমার কিন্তু খুব খারাপ লেগেছে। ”

” আমার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। তাই তোমাদের নিতে যেতে পারিনি। আমারও ইচ্ছে ছিল তোমাদের বাড়িতে যাব। আর আমি যাইনি, তাই খাদিজাও যায়নি। ”

” আমি সকালেও লক্ষ্য করলাম আপনি ঠিকমত খেলেননা। না খেয়ে থাকলে যে আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন। আজকে কিন্তু আমি নিজ হাতে আপনাকে খাইয়ে দেব। ”

” বেঁচে থাক, দিদিভাই। সুখের সংসার হোক তোমাদের। সারাজীবন আমার নাতীকে আগলে রেখ। ” দাদু অনেক দোয়া করলেন তিয়াসাকে।

” দাদু, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। ” শাহেদ বলল।

” বল, দাদু ভাই। ”

” আমি আগামি পরশুদিনই ঢাকা যাচ্ছি। চাকরিতে জয়েন করতে হবে। তাই কয়েকদিন আগেই যেতে চাইছি। ”

” তাহলে দিদিভাইকে তোমার সাথে নিয়ে যাও। এই সুযোগে তোমরা একটু একান্তে সময় কাটাতে পারবে। ”

” সরি দাদু ভাই, এবার পারবনা। নতুন চাকরিতে জয়েন করব, অফিসের কাজ বুঝে নিতে হবে। কতক্ষণ অফিসে কাটাতে হবে সেটা জানিনা। আগে অফিসের সব কাজ বুঝে নিই, বাসা ঠিক করি, তারপর তোমার দিদিভাইকে নেয়ার কথা ভাবব। ”

” বাসা ঠিক করবে মানে? ঢাকায় তো আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাট থাকতে তোমাকে বাসা নিতে হবে কেন? ”

” দাদু ভাই, আমার অফিস হবে মতিঝিল। আর আমাদের ফ্ল্যাট গুলশান। যানজটেই অর্ধেক সময় খেয়ে নিবে। তাই ভাবছি, এত ঝামেলা না করে অফিসের কাছাকাছিই ফ্ল্যাট নিব। ”

” আচ্ছা, তুমি যেটা ভালো মনে কর। ”

” চল দাদু ভাই, খেতে যাই। সকালে খাইনি তাই ভিষণ ক্ষুধা পেয়েছে। ” শাহেদ এতক্ষণ ধরে কথা বলছে কিন্তু একবারও তিয়াসার দিকে তাকায়নি। তিয়াসা সেটা লক্ষ্য করেছে।

শাহেদ দাদুকে ধরতে গেলেই তিয়াসা হাত বাড়িয়ে দেয়।

” আপনি যান, আমি দাদুকে নিয়ে যাচ্ছি। ”

শাহেদ দাদুর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিয়াসা দাদুকে ধরে নিয়ে ডাইনিং এরিয়ায় যায়।

” দাদু ভাই, তুমি আবার কতদিন পর বাসায় আসবে? তোমাকে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা লাগবে। ”

তিয়াসা মাছের কাঁটা বেছে দাদুর প্লেটে দিচ্ছে। দাদু বেশ মজা করে খাচ্ছেন। ও দাদুকে মুখে তুলে খাওয়াতে চেয়েছিল কিন্তু দাদু চাইলেন তিয়াসাও তাদের সাথে খাক। খাওয়ার মধ্যেই দাদু জানতে চাইলেন।

” বলতে পারছিনা, দাদু। দেখি কতদিনে আসতে পারি। ” শাহেদ লক্ষ্য করল তিয়াসা শুধু করলা-আলু ভাজি দিয়েই ভাত খাচ্ছে।

শাহেদ তিয়াসার প্লেটে মাছের কালিয়া তুলে দিলে চমকে উঠল তিয়াসা। ও অবাক হয়ে চাইল শাহেদের দিকে। দাদু-নাতির গল্প শুনতে গিয়ে ও অন্য তরকারি নেয়ার কথা ভুলেই গেছে।

” এত এত খাবার রেখে শুধু ভাজি দিয়ে খাচ্ছেন কেন? শুধু ভাজি দিয়ে খাওয়া যায়! শেষে অসুস্থ হয়ে যাবেন। ” দাদুর কানে না যায় এমনভাবে বলল শাহেদ। তবে এবারেও সে তিয়াসার দিকে তাকালোনা। খাদিজা আন্টি এখানে না থাকায় কথাগুলো তিয়াসা ছাড়া কেউই শুনলনা।

” খাচ্ছি। ”

খাওয়া শেষ হলে শাহেদ বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

***

” বউমা, আমার ছেলে কোথায় গেছে বলতো? এত বেলা হয়ে গেছে তবুও তার আসার নামই নেই। এই ছেলেকে নিয়ে আর পারিনা। এবার থেকে তুমিই ওর দ্বায়িত্ব বুঝে নাও। ওকে শক্ত করে আঁচলে বেঁধে রাখ। ” মল্লিকা মির্জা আশফিকে বললেন। ওরা দু’জনে পুলকের অপেক্ষা করছে। সে আসলেই তবে একসাথে খাবে। পুষ্পিতা ভার্সিটিতে গেছে। আতিক মির্জা দলের কাজে বড় ভাইয়ের সাথে বাহিরে গেছেন।

” মা, আপনার ছেলে যে ত্যাড়া, সে আমার কথা শুনবে! তাকে কথা শোনানোর থেকে গন্ডারকে ঘাস খাওয়ানো সহজ। ”

আশফির কথায় হেসে উঠলেন মল্লিকা মির্জা।

” আমার ছেলে এতটাও ত্যাড়া নয়। তোমার কথা সে ফেলবেনা এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। শুধু তোমার একটু চেষ্টাই ওকে বদলাতে পারে। শোন গল্প রেখে এখন তোমার জামাইকে ফোন দাও। ওকে বল আধাঘন্টার মধ্যে বাসায় আসতে। ”

শ্বাশুড়ির কথামত আশফি পুলককে ফোন দেয়।

পুলক বন্ধুদের সাথে শো-রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ফোনে আশফির নাম দেখে হেসে ফোন কেটে ব্যাক করল।

” আসসালামু আলাইকুম। আপনি কোথায় আছেন? ” পুলকের ফোন আসতেই রিসিভ করে বলল আশফি।

” আয় হায় জানেমন, এতক্ষণে আমার কথা মনে হয়েছে! আর এদিকে আমি প্রতি সেকেন্ডে তোমার কথা ভেবে নিজের কলিজাকে শান্তি দেই। ” পুলকের কথা শুনে আশফি লজ্জায় মুখ কাঁচুমাচু করে মল্লিকা মির্জার দিকে তাকায়। শ্বাশুড়ি যদি ওর কথা শুনে ফেলে তবে লজ্জায় শ্বাশুড়িকে মুখ দেখাতে পারবেনা।

” বাসায় কখন আসবেন? আমরা এখনো খাইনি। আপনি আসলেই তবে খাব। ” পুলককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল আশফি।

” এখনো না খেয়ে আছ তোমরা! টেবিলে খাবার সাজাও, আমি দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি। ” পুলক ফোন কেটে দিয়ে শো-রুম থেকে বেরিয়ে আসল।

***

রাত নয়টা দশ। দাদু এশার নামাজ আদায় করছেন। খাদিজা আন্টিও নিজের রুমে নামাজ আদায় করছে। দাদুর নামাজ শেষে হলেই তিনি ঘুমিয়ে পরবেন। অসুস্থতার কারনে তিনি আর রাত জাগতে পারেননা। তিয়াসা আগেই নামাজ আদায় করে ছাদে এসেছে। সারাদিন নিজের রুম আর দাদুর রুমে বসে বসে ওর বিরক্তি এসে গেছে। তাই নামাজ আদায় করেই ছাদে এসেছে।

ছাদে এসেই তিয়াসা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে। বিশাল ছাদ জুড়ে কত রকমের গাছ! একপাশে পাখির খাঁচা রাখা আছে অনেকগুলো। খাঁচা রাখার জায়গা পুরোটা ছাদ দেয়া এবং চারপাশে ঘিরে দেয়া হয়েছে। তিয়াসা প্রথমেই গেল পাখিদের কাছে। ককাটেল থেকে শুরু করে বাজরিগর, টিয়া, কয়েক প্রজাতির ঘুঘু বড় বড় খাঁচায় কিচিরমিচির করছে। তিয়াসা অনেকক্ষণ পাখিদের সাথে কাটিয়ে খোলা ছাদে আসল। ছাদে আসার পর থেকেই ওর নাকে আলাদা ধরনের গন্ধ আসছিল। ও উৎসুক হয়ে ছাদের প্রতিটা গাছ ভালোবাসে দেখতে লাগল। দক্ষিণের কোনায় গিয়ে দেখল কয়েকটা টবে ক্রিনাম লিলি ফুটে আছে। তিয়াসা একটু ঝুঁকে ফুলের গন্ধ নিল। তাহলে এতক্ষণ এই ফুলের গন্ধই ও পাচ্ছিল!

এভাবে কতক্ষন কেটে গেছে তার কোন ধারনাই নেই তিয়াসার। ওর ঘোর ভাঙ্গলো শাহেদের ডাকে।

” আপনি এত রাতে ছাদে এসেছেন কেন! ”

শাহেদ প্রতি রাতেই একবার ছাদে আসে। ও কিছুক্ষণ ফুল, পাখিদের সাথে কাটিয়ে তারপর শুতে যায়। প্রতি রাতের মত আজও ছাদে এসে তিয়াসাকে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে।

” একা একা রুমে থাকতে ভালো লাগছিলনা তাই ছাদে এসেছিলাম। আন্টি বলছিল আপনাদের ছাদ অনেক সুন্দর। তাই দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। ”

” বিকেলে আসবেন, দেখবেন অনেক ভালো লাগবে। রাতের কৃত্রিম আলোয় ছাদের আসল সৌন্দর্য বোঝা যায়না। এখন রুমে যান। এগারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। আম্মু কখনোই এতরাত পর্যন্ত মেয়েদের কাউকেই ছাদে থাকতে দিতনা। ”

” মেয়েদের কাউকে মানে! আপনাদের বাসায় খাদিজা আন্টি আর তিনজন মেইড ছাড়া আর কোন মেয়েকে তো দেখলামনা! ”

” আমার কাজিনদের কথা বলছি। ওরা দেশে আসলেই রাত জেগে ছাদে আড্ডা দেয়। ”

” ওহ। আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি। ” তিয়াসা কযেক পা সামনে গিয়েই আবার শাহেদের কাছে এসে দাঁড়ায়।

” একটা রিকুয়েষ্ট করব আপনাকে? ” তিয়াসার গলা শুনে ওর দিকে ফিরে তাকায় শাহেদ৷

” বলুন। ”

” এখন থেকে নিজের রুমেই ঘুমাবেন প্লিজ। গত রাতে আপনি স্টাডি রুমে ছিলেন সেটা আন্টি দেখেছে। আজ আমাকে বলছিলেন সে কথা। ”

” কোন প্রবলেম নেই। আন্টি এই বিষয়ে কাউকে কিছুই বলবেনা। আপনি এ নিয়ে চিন্তা করবেননা।”

” তবুও আপনি নিজের রুমেই ঘুমাবেন। প্লিজ আমার এই কথাটা রাখুন। ” বিয়ের পরদিন সকালের পর এই প্রথমবার শাহেদ তিয়াসার দিকে তাকায়। যদিও ওর সংকোচ হচ্ছিল। অথচ একসময় এই মেয়েটাকে ও প্রতিদিনই লুকিয়ে দেখত। কিন্তু আজ যখন এই মেয়েটা ওর স্ত্রী, অথচ তার দিকে তাকানোর সাহস নেই ওর। অথচ তাকানোর পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু যখনই ও শুনেছে মেয়েটা কারও কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তখনই ভেতরের সকল ইচ্ছেদের চাপা দিয়ে নিজের মনকে কঠোর করেছে।

তিয়াসা আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে শাহেদের দিকে।

” ঠিক আছে। তবে আমি রুমে ডিভান অথবা সোফার ব্যবস্থা করছি। আমি সেখানেই থাকব। ” শাহেদ আর সেখানে দাঁড়ায়না। চলে যায় পাখিদের কাছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here