রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা #পার্ট_১৫ জাওয়াদ জামী জামী

0
25

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_১৫
জাওয়াদ জামী জামী

মল্লিকা মির্জা আশফিকে নিচে ডেকে পাঠালে আশফি নিচে আসল। সিঁড়িতে পা দিয়েই ড্রয়িংরুমের দিকে তাকাতেই ও মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলকের গ্যাং ড্রয়িংরুম মাতাচ্ছে।

” হায় আল্লাহ, দুইদিন আগেও এরা আমাকে ভাবী ডেকে মুখ দিয়ে ফেনা তুলত। তখনতো আমি ঐ বদ লোকের বউ ছিলামনা। তখনই এদের সেবায় অতিষ্ঠ হয়ে যেতাম। এখনতো আমি এই বদ লোকের বউ। এবার বুঝি এদের ডাকে, সেবা-যত্নে আমি পাগল হয়ে যাব! আল্লাহ এই বান্দরের দলের হাত থেকে বাঁচাও আমাকে। ” আশফি বিরবির করতে করতে নিচে নামে।

” ভাবী, আমাদের ভাবী, কেমন আছেন? ”

” আসসালামু আলাইকুম, ভাবী। ” ড্রয়িংরুমে বসা আট-দশজনের প্রত্যেকেই একে একে আশফিকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করল।

আশফিও চেষ্টা করল সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে।

” ভাবী, এটা নেন। আগে নাহয় সমস্যা ছিল, তাই আমরা কিছু দিলে নেননি। যদিও সেগুলো ভাই-ই দিত। ” সাকিব এসে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল আশফির দিকে।

আশফি প্যাকেটটা নিতে ইতস্তত করছে।

” আরে ভাবী, নিন না। এরপর আমাদের পালা। ” সবাই একযোগে বলল।

” কি ব্যাপার, তোমরা কি এনেছ? যেখানে তোমরা নিজেরাই দশ টাকার জন্য বাবার ওপর নির্ভর কর, সেখানে কেন এসব করতে হবে? ” মল্লিকা মির্জা এসে ছেলেদের কৃত্রিম ধমক দিলেন।

” আন্টি, আমরা কিন্তু বেকার নই। বাড়ি থেকে আর একটা টাকাও নিইনা। ভাই আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ” সাকিব বলল।

” তোমরা কাজ কর! তাহলে মাস্তানী-গুণ্ডামি কর কখন? তোমাদের কাজ বলতে তো একে মারা, তাকে ধরা এসবই আমি জানি। ”

” এভাবে বলবেননা, আন্টি। জানেননা, কানাকে কানা বলতে নেই, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই, বধিরকে কানে খাটো বলতে নেই? ” রকি একটু ন্যাকা স্বরে বলল। ও একটু মেয়েলি স্বরে কথা বলে।

রকির কথার টান শুনে আশফি হেসে উঠল। এবার নিজেকে কথা বলা থেকে বিরত রাখতে পারলনা।

” কানা, খোঁড়া, বধির এরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। আপনারাও কি তাই? মানে গুণ্ডা-মাস্তানরাও কি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের তালিকায় পরে! প্রতিবন্ধী কার্ড করেছেন? নিয়মিত ভাতা পান? আপনাদের লিডারেরও কি প্রতিবন্ধী কার্ড আছে? সে-ও কি ভাতা পায়? ”

আশফির কথা শুনে পুলক রাগে ফুঁসছে। নিজের বউ হয়ে জামাইকে কেমন সবার সামনে অপদস্ত করছে! অন্যের বউ এমন করলে নাহয় মানা যেত।

এদিকে আশফির কথা শুনে পুষ্পিতা পারলে হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। কিছুতেই ওর হাসি থামছেনা। আর পুলকের ছেলেরা আশফির করা হেনস্তায় গুটিয়ে গেছে। ওরা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে পুলকের দিকে। যার অর্থ, ভাই কিছু কর।

” পুষ্পিতা তুই কি থামবি, নাকি কানের নিচে চটকানা দেব? ” পুলকের ধমকে পুষ্পিতা হাসি থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে ও নিজের রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ইচ্ছেমত হাসতে থাকে।

” বউমা, তুমি আমার সাথে এস। তোমাকে আমাদের রান্নাঘর দেখাই। আর এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাহিনীর জন্য নাস্তাও বানাই। তার আগে এই উজবুকগুলোর কাছ থেকে গিফ্ট নিয়ে নাও। ” মল্লিকা মির্জাও হাসছেন। তিনি মনে মনে ভাবছেন, আশফি ওদের বেশ জব্দ করেছে।

***

রুমের জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে সূদুরে তাকিয়ে আছে তিয়াসা। সামনের দিনগুলোর কথা চিন্তা করছে মেয়েটা। বাকিটা জীবন কিভাবে কাটবে ওর? ও কখনোই শাহেদকে ভালোবাসতে পারবেনা এটা মোটামুটি নিশ্চিত। শাহেদ কি এসব মেনে নেবে? বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মানুষের মনেই ফ্যান্টাসি থাকে,স্বপ্ন থাকে। শাহেদও নিশ্চয়ই এর ব্যাতিক্রম নয়। কিভাবে সামলাবে ও শাহেদকে? নানায় চিন্তায় তিয়াসার শরীর অবসন্ন হয়ে গেছে।

” কি দেখছ এভাবে? ” নিজের খুব কাছে শাহেদের গলা শুনে চমকে একধাপ পিছিয়ে যেতেই জানালার গ্রীলে পিঠ ঠেকে যায় তিয়াসার।

” ছোঁবেননা আমাকে। ” নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বলে ফেলল।

তিয়াসার এহেন কথায় থমকে যায় শাহেদ। সে তো তিয়াসাকে ছুঁতে চায়নি।

” তোমাকে ছুঁতে চাইনি আমি। আর ছুঁলেই বা দোষ কোথায়? তুমি আমার স্ত্রী। অধিকার আছে আমার। ”

” নাহ্! ” তিয়াসার গলা কাঁপছে।

” কেন? ”

” আমি এখনও মন থেকে প্রস্তুত নই। আমার সময় লাগবে। ”

তিয়াসার কথায় মৃদু হাসল শাহেদ। ও বুঝতে পারছে তিয়াসার এমন কথা বলার কারন। ঠকেছে ও। আর ঠকেছে নিজের বোকামির কারনে। কেন হুটহাট তিয়াসাকে ভালোলাগার কথা জানিয়েছিল মামীকে! কেন আগে জানতে চায়নি তিয়াসার একান্ত কেউ আছে কিনা!

” মামীর প্রস্তাব শোনার পর কেন জানালেনা, তুমি কারও কাছে প্রতিজ্ঞানবদ্ধ? তাহলে অন্তত তোমাকে কষ্ট পেতে হতোনা। ”

শাহেদের কথা শুনে তিয়াসার সর্ব শরীর কাঁপছে। যে ভয়টা ও পাচ্ছিল, সেটাই সত্যি হল। কি জবাব দেবে ও শাহেদের কথার? অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে কথা গুছিয়ে নিল তিয়াসা। ধরা যেহেতু পরেই গেছে, সেহেতু লুকিয়ে লাভ নেই। তবে ওর ভয় হচ্ছে রিফাতকে নিয়ে। তিয়াসা কোনভাবেই এই সম্পর্কের টানাপোড়েন লুকিয়ে রাখতে পারবেনা। প্রকাশ একদিন হবেই। আর সেদিন কি হবে সেটা ভাবতেই ওর ভয় হচ্ছে।
ও পুলক আর তার গ্যাংকে ভালো করেই জানে। ওরা শাহেদের জন্য রিফাতের ক্ষতি করতে এক মুহূর্তও ভাববেনা। হয়তো পুলক আশফির কথা ভেবে এসবে জড়াবেনা। কিন্তু ঐ গ্যাং এ শাহেদের ভূমিকাও কম নয়। পুলক রিফাতকে কিছু না বললেও অন্যেরা ঠিকই বলবে। অনেক ভেবেচিন্তে মুখ খুলল তিয়াসা। যাই হয়ে যাক না কেন ও রিফাতের কথা কাউকে বলতে চায়না।

” আমি স্বেচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়েছি। হয়তো একসময় কারও কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু বিয়ের সাথে সাথে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। হয়তো আপনাকে মেনে নিতে আমার সময় লাগবে। আই হোপ, সে সময়টুকু আমাকে দেবেন। ”

অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখল শাহেদ। তিয়াসার কথার ধরনই বলে দিচ্ছে, ওর ভালোবাসা সহজে ভুলতে পারবেনা। শাহেদ বরাবরই ঠান্ডা মাথার ছেলে। রাগ ওর ধাতে নেই। তবে তিয়াসা যদি একবার ওর মুখের দিকে তাকাতো তবে ওর চোখেমুখে ফুটে ওঠা কষ্ট ঠিকই অনুধাবন করতে পারত।

শাহেদ দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সেই সাথে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে। ওর মন-মস্তিস্কে ঝড় বইছে। ও বুঝতে পারছেনা এই ঝড় সামাল দেবে কিভাবে।

***

” আম্মু, ভাবীকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাই? আগামী পরশু অয়নের বাবা-মা’র এনিভার্সারি। আংকেল-আন্টির জন্য গিফ্ট কিনতে হবে। ”

আশফির সাথে গল্প করছিলেন মল্লিকা মির্জা। তখনই পুষ্পিতা এসে ওর মা’কে রিকুয়েষ্ট করল।

” রিসিপশনের আগে বউমাকে বাহিরে যেতে দেবোনা। যা শপিং করার তুমি একাই করো। আর অয়নের বাবা-মা’কে আংকেল, আন্টি ডাকছ কেন? এখন থেকেই অভ্যাস কর, নয়তো বিয়ের পরও এই বদ অভ্যাস থেকে যাবে। ”

আশফি অবাক হয়ে গেছে শ্বাশুড়ির কথা শুনে। পুষ্পিতা কাউকে পছন্দ করে, আর সেটা ওর বাড়িতেও জানে! আবার বিয়ের আগেই সেই বাড়ির অনুষ্ঠানেও যাবে! আশফি ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে থাকল ওদের দিকে।

” কি আম্মু, তুমি ব্যাকডেটেড শ্বাশুড়ির মত কথা বলতে শুরু করলে যে! কি হবে এখন যদি ভাবী শপিংয়ে যায়? আমি চিন্তা করেছি, অয়নদের বাসায় আমি ভাবীকেও নিয়ে যাব। তাই অযথাই পুরোনো দিনের শ্বাশুড়ি হওয়ার চেষ্টা করোনা। ”

” আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। শুধু নিজের শ্বাশুড়ির সংস্কার মানার চেষ্টা করছি আমি। নতুন বউ সাতদিনের আগে বাবার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও যাবেনা। তোমার দাদিও সব সময়ই বলতেন, নতুন বউদের সাতদিন বাড়ি থেকে বের হতে নেই। এর মধ্যে তারা শুধু বাবার বাড়িতে যাবে। এতে যদি আমি পুরোনো দিনের শ্বাশুড়ি হই তো হলাম। ”

” আম্মু, প্লিজ। ” অনুনয় করল পুষ্পিতা।

” চুপ কর, কোন কথা হবেনা। বউমা, তুমি আমার ওপর রাগ করোনা কেমন? গতরাতেই তোমার শ্বশুরকে নিয়ে মেহমানদের লিষ্ট করেছি। আজকে চেইক দেব কেউ বাদ পরল কিনা। আজকে রবিবার। মঙ্গলবার তোমাদের রিসিপশন। বুধবার তোমার বাবার বাড়িতে যাবে। এরমধ্যে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, বউমা। ”

” আমি রাগ করিনি, মা। আমাদের গ্রামেও নতুন বউদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়না। গুরুজনরা বলে, এতে নাকি সমস্যা হয়। খারাপ নজর লাগে। ”

পুস্পিতা বুঝল ওর সকল আশায় পানি ঢেলে দিল ভাবী। আজকের দিনের জন্য কত প্ল্যান ছিল ওর। ভাবীকে নিয়ে ঘুরবে, রেস্টুরেন্টে যাবে। ও মন খারাপ করে একাই শপিংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

রাত দশটা বেজে গেছে। আশফি এতক্ষণ পুষ্পিতার সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। পুষ্পিতা ওর হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জন্য কি গিফ্ট কিনেছে সেটা আশফিকে দেখায়। এছাড়াও আশফির জন্য অনেক কেনাকাটা করেছে মেয়েটা। এত শপিং দেখে আশফি তব্দা খেয়ে গেছে। ওর বিশ বছরের জীবনে ওর এত কেনাকাটা কেউ করেনি। অনেক সময় এমনও হয়েছে ঈদেও কোন পোশাক পায়নি। ভাইয়া ওদের দুই ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেত। তাই বছরে খুব বেশি হলে দুই সেট থ্রিপিস পেত ও। আর সেটা ভাইয়াই দিত। অবশ্য প্রতি ঈদে চাচী একটা করে পোশাক দিত। আর বড়মা বছরে দুই-তিনটা জামা দিত। তাই আজ চোখের সামনে দশটা থ্রিপিস, দশটা শাড়ী দেখে কেঁদে ফেলল আশফি। আশফিকে কাঁদতে দেখে মল্লিকা মির্জা ওকে জড়িয়ে ধরলেন। পুষ্পিতার ডাকে তিনিও এসেছিলেন আশফির জন্য নিয়ে আসা পোশাক দেখতে।

” তুমি কাঁদছ কেন, বউমা? তোমার কি এসব পছন্দ হয়নি? পছন্দ না হলে বল, আমি কালকেই তোমার জন্য আরও সুন্দর পোশাক নিয়ে আসব। ” মল্লিকা মির্জা উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলেন।

” সবগুলোই আমার পছন্দ হয়েছে, মা। আসলে জীবনে একসাথে কখনো এত পোশাক পাইনিতো তাই আবেগে কেঁদে ফেলেছি। ”

মল্লিকা মির্জা একজনের কাছ থেকে আশফির ছোটমা সম্পর্কে শুনেছিলেন। তার কথার সত্যতা আশফির চোখের পানিতেই প্রমান হয়ে গেল। তিনি এবার আশফির কাছে জানতে চাইলেন তার পরিবার সম্পর্কে।

” তোমার আব্বা-আম্মা তোমাকে শপিং করে দিতনা? আমি শুনেছি তুমি যাকে আম্মা ডাক, সে নাকি তোমার সৎ মা? সে কি তোমাদের দুই ভাইবোনকে আদর করেনা? তুমি যদি চাও নিজের মা ভেবে আমাকে সবকিছু বলতে পার।”

মল্লিকা মির্জার প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে বসে থাকল আশফি। কিভাবে নিজের পরিবার সম্পর্কে নেগেটিভ কথা বলবেও! অবশ্য আজকে ও না বলল, এক সময় ইনারা ঠিকই জেনে যাবেন। তাই সত্যিটা বলারই সিদ্ধান্ত নিল।

” আমার আট বছর বয়সেই আম্মা মা রা যায়। ভাইয়া তখন ক্লাস নাইনে পড়ত। আম্মার মৃ ত্যু র ছয়মাস পর আব্বা ছোটমাকে বিয়ে করে। এরপর ধীরে ধীরে আব্বা পাল্টে যায়। বদলটা প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। কিন্তু ভাইয়া যখন বুঝতে পেরেছে, তখন থেকেই নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছে। ক্লাস টেনে ওঠার পর থেকেই ভাইয়া টিউশনি করাতো। সেই টাকাতেই চলত আমাদের দুই ভাইবোনের পড়াশোনা। সংসারে ছোটমা কর্তী হয়ে উঠেছে ততদিনে। আমাদের ঠিকমতো খেতে দিতনা। আবার সে কথা কাউকে বলতেও পারতামনা। কিন্তু বড়মা ঠিকই বুঝে যেত। প্রতিদিন তার ঘরে আমাদেরকে ডেকে খেতে দিত। বড়মা না থাকলে আমরা হয়তো কবেই শেষ হয়ে যেতাম। ভাইয়া শুধু টিউশনি করে আমাকে প্রয়োজনীয় পোশাক দিতে পারতনা। তাই বড়মা বছরে দুই-তিনটা জামা দিত। বড়মা না থাকলে হয়তো আমরা কবেই শেষ হয়ে যেতাম। ”

আশফির কথা শুনে মল্লিকা মির্জা আর পুষ্পিতা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। মল্লিকা মির্জা যা শুনেছেন তার সবটাই সত্যি। পুষ্পিতা ভাবছে, সবার জীবন একরকম নয়। কেউ বড় প্রাচুর্যতার মাঝে, কেউবা বেড়ে উঠে অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে, আবার কেউবা সংসারে অবহেলা, নির্যাতন সয়ে বড় হয়। একটাই পৃথিবীতে কত রকমের মানুষের বাস। মানুষের কত রকমের সমস্যা।

” ভাবী, তোমরা প্রতিবাদ করতেনা? আর তোমার বাবাই বা কেমন! তিনি এসব জানতেননা? ”

” ভাইয়াকে প্রতিবাদ করতে দেখেছি। ভাইয়ার দেখাদেখি আমিও প্রতিবাদ করতে গেছি। কিন্তু তার ফল ভালো হতোনা। এরপর আস্তে আস্তে প্রতিবাদ করতে ভুলে যাই। আব্বা সারাদিন স্কুলে থাকত। স্কুল শেষে সেখানেই ছাত্র পড়াত। তাই আব্বা কিছুই জানতনা। তবে এক সময় ছোটমার হাতের পুতুল হয়ে যায় সে। আমাদের কোন কথাই বিশ্বাস করতনা। তাই তার কাছে কোন অভিযোগ করা বন্ধ করে দিই। ”

মল্লিকা মির্জা পরম স্নেহে আশফিকে কাছে টেনে নিলেন। চুমু দিলেন ওর কপালে।

” আজকের পর থেকে তুমি আগের জীবনের সব কথা ভুলে যাবে। এবার থেকে প্রতিমাসে তোমার জন্য পুষ্পিতার আজকের কেনা পোশাকের থেকেও বেশি পোশাক আসবে। আর হ্যাঁ, প্রতিমাসে তোমার বাবা-মা’কে দাওয়াত করবে। রাঁধুনিকে বলে দিবে কি কি রান্না করতে হবে। তুমি নিজ হাতে তাদের খাওয়াবে। প্রতি বছর তাদের দামী পোশাক কিনে দিবে। এটাই হবে তোমাদের প্রতি করা তাদের অন্যায়-অত্যাচারের জবাব। মনে রেখ, কাউকে তার অন্যায়ের শাস্তি দিতে হলে সব সময় তাকে কথার আঘাত না করলেও চলে। আঘাত না করেও অপরাধীর গালে চপেটাঘাত করা যায়। ”

আশফি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর শ্বাশুড়ির দিকে। ওর সামনে বসে থাকা মানুষটা যে মন্দ নয় এটা ও বুঝে গেছে।

” আমার প্রতিমাসে নতুন পোশাক লাগবেনা, মা। এগুলো না ছেঁড়া পর্যন্ত নতুন পোশাক আনবেননা কিন্তু। এগুলো দিয়েই আমার কয়েক বছর চলে যাবে। ”

” তুমি মির্জা বাড়ির বউ। এই কয়টা পোশাক দিয়ে তুমি কয়েক বছর চলার চিন্তা করছ! শোন পাগলী মেয়ে, তুমি না চাইলেও পোশাকের স্তুপে তোমাকে হাবুডুবু খেতে হবে। তুমি শুধু হুকুম করবে, দেখবে চোখের পলকেই তোমার সামনে সবকিছু হাজির হয়ে যাবে। ”

পুলক চলে আসায় ওদের গল্পে ব্যাঘাত ঘটল।

” আম্মু, তোমরা কি অনলাইনে বিজনেস চালু করেছ? বেশ ভালো। চালিয়ে যাও। আমিও তোমার বিজনেসের প্রচার করব। ” পুলক রুমে ঢুকে বিছানায় কাপড়ের স্তুপ দেখে বলল।

” ফাজিল ছেলে, বিজনেস করলে এই কয়টা আইটেম নিয়ে করব! এসব বউমার জন্য। পুষ্পিতা নিচে চল। টেবিলে খাবার দেই। বেটা, তুমি ফ্রেশ হয়ে বউমাকে নিয়ে নিচে এস। ”

মল্লিকা মির্জা মেয়েকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে পুলক একটা প্যাকেট বাড়িয়ে ধরল আশফির দিকে। কিন্তু আশফি সেটা না নিয়ে তাকিয়ে থাকল।

” কি হলো নিচ্ছনা কেন? নিবেনা এটা? ”

” কি আছে এতে? ”

” খুলে না দেখলে বুঝবে কিভাবে। খুলে দেখ পছন্দ হয় কিনা। ”

আশফি প্যাকেট হাতে নিয়ে খুলে চোখ বড় করে তাকায় পুলকের দিকে।

” এটা আমার! ”

” হুম। ”

” এটাতো আইফোন! আমি এত দামী ফোন দিয়ে কি করব? ”

” প্রতিদিন সকাল, বিকাল,সন্ধ্যায় আইফোন পানিতে চুবিয়ে সেই পানি খাবে। এতে তোমার ব্রেইন আইফোনের মত শার্প হবে। ”

” পানিতে ফোন নষ্ট হয়ে যাবেনা! ”

আশফির কথা শুনে পুলক কপাল চাপড়ায়।

” আল্লাহ, একটু বুদ্ধি এই মেয়ের ঘটে দিলে কি হত! আরে ম্যাম, আপনার কাছে ফোন নেই তাই, আপনার জন্য এটা এনেছি। এটাতে সিমকার্ডও আছে। এটা দিয়ে আপনি সবার সাথে কথা বলবেন। আগের ফোনের কথা ভুলে যাবেন। ”

পুলক আশফির হাতে ফোন দিয়ে কাবার্ড থেকে টি-শার্ট, ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here