বিয়ে_থা #পর্ব-০৬ #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
145

#বিয়ে_থা
#পর্ব-০৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

স্বামীর পেছনে ঘুরঘুর করছেন ধারা। উদ্দেশ্য নিজের ইচ্ছে পূরণ করা। ফাহিম মাহবুব তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি জানেন তার সঙ্গীনি কেন ঘুরঘুর করছেন। নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে। তার কথাটা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে ধারা পাশে বসলেন। কাঁধে হাত রেখে আহ্লাদী কন্ঠে বললেন,

‘এই শুনো না।’

ফাহিম মাহবুব মুখে হাসি ফুটালেন। নাহলে বউ ফায়ার করে দিবে।

‘বলো শুনছি।’

‘চলো না ইন্ডিয়া যাই?’

ফাহিম মাহবুব চোখ বড়বড় করে তাকালেন।

‘সেখানে কে আছে তোমার?

‘আরে ঘুরতে যাবো। এ সময় দার্জিলিং ঘুরাটা উপভোগ করতে পারবো। চলো না যা-ই?’

‘না যাবে না। এখন তো অবশ্যই না।’

‘কেন কেন?’

ফাহিম মাহবুব ঢুক গিললেন। এই রমনীকে কিভাবে বুঝাবেন তাকে নিয়ে ইন্ডিয়া যাওয়া এখন বিপদ জনক হবে। ধ্রুব বার-বার না করেছে এই সময় তার পরিবারের কেউ যেনো ইন্ডিয়াতে পা না রাখে।

ধারা মানতে নারাজ। ফাহিম মাহবুবের শার্ট ধরে ঝুলে আছেন রীতিমতো। ফাহিম মাহবুব শব্দ করে হাসছেন। এই মহিলা এখনো অল্প বয়সী মেয়েদের মতো আবদার করে, পূরণ না করলে ঝুলাঝুলি করা তার স্বভাব। এতে ফাহিম মাহবুব বিয়ের আগে প্রেম চলাকালীন থেকে অভ্যস্ত। ধারার দল ভারী করতে সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো কিশোরী মেয়েটি। পড়োনে স্কুল ড্রেস। ব্যাগটা সোফায় রেখে সে-ও মায়ের মতো করে বাবার আরেকদিক ধরে ঝুলাঝুলি করা শুরু করেছে। ফাহিম মাহবুব বুঝলেন এই দু’রমনী আগে থেকে সব ভেবে নিয়ে শক্ত হাতে মাঠে নেমেছে। তিনি রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

ফাহিম মাহবুব মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

‘প্রিন্সেস ও প্রিন্সেসের মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ফাহিম মাহবুব প্রস্তুত।’

কিশোরী মেয়েটি জড়িয়ে ধরলো মা বাবাকে।

‘আ’ম সো হ্যাপি মাম্মি পাপা।’

ধারা রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন,

‘টেবিলে খাবার গরম করে রাখছি, বাবাকে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বসো ফারিন।’

ফারিন নিজের বাবার হাত কাঁধে নিয়ে টেনে টেনে উপরে নিয়ে গেলো। বাবাকে ফ্রেশ হতে বলে নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। খেতে খেতে মন খারাপ করে বলল,

‘আমাদের ফ্যামিলি ট্রিপটাতে ভাইয়া থাকবে না পাপা?’

ধারা’র ও মন খারাপ হয়ে গেলো। ছেলেটা তার সারাবছরই কাজে ব্যস্ত থাকে। জীবনটা ঠিকঠাক উপভোগ করবে ট্যুর দিবে তা না। তিনি বাবা দাদার মতো দেশরক্ষা করতে চান।

ফাহিম মাহবুব খেতে খেতে বললেন,

‘এবার সে থাকছে না, তবে পরেরবার থেকে থাকবে। সাথে আরেকজনও যোগ হতে পারে।’

ধারার ভ্রু কুঁচকে গেলো,

‘আরেকজনটা কে?’

‘তোমার ছেলেকে কি বিয়ে করাবে না?’

ধারাকে এবার খুশি হতে দেখা গেলো।

‘ধ্রুব এইবার বাসায় ফিরুক। বিয়ে করিয়েই ছাড়বো। যদি দরকার হয় বউ নিয়ে সেনানিবাসে থাকবে। তবুও ওকে বিয়ে করতে হবে।’

ফারিন খিলখিল করে হাসলো।

‘সেনানিবাসে বউকে কিভাবে রাখবে মা?’

‘সেনানিবাসে না হোক। ও যেখানে কাজে থাকবে সেখানে বাংলো বা কোয়ার্টার তো থাকবেই। নিজের সাথে রাখবে। কি না কি খায়, আমার বাচ্চাটা তার বাবার মতো আমার হাতের রান্না ছাড়া খেতে চায় না।’

ফাহিম মাহবুব কিছু বললেন না। ধারা নামক রমনী জানেন সেনাবাহিনীদের কি কি চিবিয়ে খেতে হয়। তার স্বামীও দীর্ঘ জীবন সেগুলোই চিবিয়ে এসেছেন। বাড়িতেই শুধু বউয়ের রান্না জুটতো। অন্য কোথাও তো আর জুটতো না। তবে ধ্রুব ও ফারিন যখন ছোট তখন তার যেখানে কাজ থাকতো সেখানের কোয়ার্টার বা বাংলোতে থাকতেন ছেলেমেয়ে নিয়ে। কখনো বান্দরবান, কখনো খাগড়াছড়ি। বাংলাদেশের কোনো অঞ্চল বাদ যায়নি।

ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নিলো তারা। গোধুলি বিকাল। পেট জানান দিলো খাবারের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বলে। আজকের সন্ধ্যাটা না-হয় দার্জিলিংয়ের স্ট্রিট ফুড খেয়ে এনজয় করা যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নিনীকারা চারজন বের হয়ে পড়েছে। নিনীকার পড়োনে লং স্কার্ট ও সাদা শার্ট। গলায় একটি ছোট্ট স্কার্ফ ঝুলছে। কানে সাদা ছোট্ট টপ৷ সে হালকা গোলাপি রঙা ঠোঁট নাড়িয়ে সুমিত্রাকে বলল,

‘যতোই চারিদিক অন্ধকার হচ্ছে ততোই যেনো সৌন্দর্য বেড়ে যাচ্ছে।’

নিনীকা যখন মুগ্ধ চোখে দূরের পাহাড় পর্বত গুলোর বুকে অন্ধকার আকাশ দেখে মুগ্ধ হচ্ছে তখন তাকে দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে কেউ। মানুষটি প্যান্টে হাত গুঁজে দাড়িয়ে। চশমার আড়ালে থাকা চোখদুটো রমনীর দিকেই নিবদ্ধ। ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসছে সে। বিরবির করে বলল,

‘মিসেস তিনমাস কম সময় না। অনেক জ্বালিয়েছেন। মেজর ধ্রুব মাহবুব’কে বউহীন করার অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত হতে হবে। দুঃখে হোক সুখে হোক মুখ লুকাতে হবে ধ্রুব মাহবুব এর বুকে।’

নিনীকা যখন মুগ্ধ হয়ে সব দেখছে, তখনই তাকে একা রেখে তিনজন অন্যদিকে চলে গেলো। বউকে একা পেয়ে ধ্রুব এগিয়ে এলো। নিনীকা হঠাৎ নিজের সামনে চওড়া বলিষ্ঠ শরীরের কোনো পুরুষকে দেখে চমকে গেলো। পেছনে একবার তাকিয়ে খুজলো সঙ্গীদের। ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

‘হাই মিসেস।’

নিনীকা সম্মোধনটা খেয়ালই করেনি। সে-ও হাসিমুখে হাই জানালো। ধ্রুব হাস্কি স্বরে বলল,

‘আপনাকে নিতে এলাম যে।’

নিনীকা এবার ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকালো।

‘আমাকে নিতে এলেন মানে?’

ধ্রুব এবার চোখমুখ গম্ভীর করলো,

‘অবাক হওয়ার কি আছে? আমিই তো নিতে আসবো। আমারই আসার কথা।’

নিনীকা বিরক্ত হলো। এদেশের ছেলেরা মজা করতে পছন্দ করে নাকি?

‘দেখুন ভাই আমি মজার মুডে নেই। আমার তিনজন সঙ্গীকে খুজে পাচ্ছি না। আপনি যদি আপনার মুখটা বন্ধ করেন তবে আমি তাদের ফোন করে খুঁজে নিতে পারি।’

ধ্রুব নিনীকার হাত থেকে মোবাইল কেঁড়ে নিলো তৎক্ষনাৎ।

‘তুমি আমার সাথে যাবে মিসেস।’

নিনীকা ঢুক গিললো।

‘দেখুন আপনি যদি ছিনতাইকারী হোন তো ফোন নিয়ে নিন, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিন। ‘

ধ্রুব নিনীকার ভয় পাওয়া মুখ দেখে নিঃশব্দে হাসলো। তার বাবা বলেছিলেন বউয়ের সামনে হাসার চেষ্টা করতে। ধ্রুবর চেষ্টা করতে হয়নি হাসি নিজ থেকেই এসে যাচ্ছে।

‘আমি কোনো ছিনতাইকারী না। তবে তোমাকে ছিনতাই করবো মিসেস।’

নিনীকা বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘কি তখন থেকে মিসেস মিসেস লাগিয়ে রেখেছেন। আপনার মিসেস কি হারিয়ে গেছে? নাকি আপনি তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না? অতি শোকে পাগল হয়ে গেছেন নাকি? আহারে বউ পাগল লোকটা। আপনার মিসেসের ছবি দিন আমি আমার ফ্রেন্ডসদের নিয়ে খুঁজবো।’

ধ্রুব এবার নিনীকার হাত চেপে ধরে হোটেলের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। নিনীকা মৃদুস্বরে চিৎকার করলো,

‘কি করছেন আপনি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?’

ধ্রুব কিছু বলছে না। নিনীকা হুমকি দিলো,

‘আমি কিন্তু চিৎকার করবো।’

ধ্রুবর গলা শুনা গেলো,

‘করো, বউকে নিয়ে যাচ্ছি তাতে কার কি?’

নিনীকার মুখ কাঁদোকাঁদো,

‘আপনার বউটা কে মশাই? আমার মতো সিঙ্গেল মেয়েকে কেন বার-বার বউ বলছেন?’

ধ্রুব পেছন ফিরে অবাক স্বরে বলল,

‘তুমি সিঙ্গেল?’

নিনীকা ‘হ্যা.. বলতে গিয়েও চুপসে গেলো। মনে পড়লো নিজের রুমে বিয়ের সাজে মুখ দিয়ে কবুল বলার কথা। হাত দিয়ে সিগনেচার ও করেছে সে।

নিনীকাকে চুপ হতে দেখে ধ্রুব ঠোঁট বাকালো।

‘চুপ হয়ে গেলে যে?’

‘আপনি কি চাইছেন বলুন তো? কে আপনি?’

ধ্রুব এবার দু’কাধ ধরে নিজের সাথে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘কেন নাটক করছো মিসেস?’

‘আমি কোনো নাটক করছি না আমি সত্যিই জানি না আপনি কে।’

নিনীকার স্পষ্ট উত্তরে ধ্রুব কিছু একটা ভেবে বলল,

‘তুমি বিবাহিত না?’

নিনীকা এক মুহুর্ত থমকে গেলো। তারপর মিনমিন করে বলল,

‘হয়তো, কিন্তু তাতে আপনার কি?’

‘আমার কিছু না বলছো?’

নিনীকার রাগ বিরক্তি সব হচ্ছে। কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না। কি শক্ত শরীর বাবাগো। তাকে চেপ্টা করে দিতে সময় নিবে না।

‘আমার বিবাহিত হওয়ার সাথে আপনার কিছু না হওয়ার কি সম্পর্ক জি?’

‘তোমার বর কে নিনীকা শেখ?’

নিনীকার সবকিছু থেকে বিরক্তি ঝড়ে পড়লো।

‘কে জানে কোন শালা, আমি দেখিনি। তবে হবে কোনো হনুমান। আপনি তার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?’

ধ্রুবের মাথায় বাজ পড়লো। তার বউ যে তাকেও ছাড়িয়ে গেছে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। প্রায় চিৎকার করে বলল,

‘ ও মাই গড ও মাই গড তুমি আমাকে শালা বললে মিসেস। আমি দেখতে হনুমানের মতো? ‘

নিনীকার মুখ হা হয়ে গেলো। ধ্রুবের দিকে আর চোখ তুলে তাকাতে পারলো না। হা করা মুখটা বন্ধ করে স্কার্টটা দু’দিকে ধরে দৌড় দিলো জান হাতে নিয়ে।

(চলবে)

[ নোট- আমি আগেও একবার বলেছিলাম গল্পটা কাল্পনিক হবে। সুতরাং বাস্তবতার কোনোকিছু মিলাবেন না। গত পর্বে ধ্রুবর সেনাবাহিনীর জিপ নিয়ে দার্জিলিং যাওয়াটা নিয়ে অনেকে বলেছেন এক দেশের সৈনিক অন্য দেশে যাচ্ছে কিভাবে। আমি সেজন্য আবারও বলছি গল্পের সৌন্দর্যের জন্য আমি অবাস্তবিক অনেক কিছুই দিবো।

ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাদের। ঈদ মোবারক ]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here