দো_দিলে_জাহান #পর্বঃ১০ #বর্ষা

0
221

#দো_দিলে_জাহান
#পর্বঃ১০
#বর্ষা
৩১.
ঈদের দিন দেখতে দেখতেই কাছাকাছি চলে এসেছে প্রায়। তালুকদার বাড়িতে ঈদের গরুও চলে এসেছে।এইটা প্রতিবারই হয়।কিছুদিন আগে গরু কিনেন ওনারা।নিজেরা পোষন করেন।তারপর কোরবানি।অনেক আত্মীয় স্বজন আমন্ত্রণও করেছেন।ঈদের আগের দিন তোয়ার গায়ে হলুদ,মেহেদী অনুষ্ঠান করা হবে।আর ঈদের পরেরদিন বিয়ে। সাধারণত আগের দিন গায়ে হলুদ,পরের দিন বিয়ে এমনটাই দেখা যায়।তবে ওরা এবার ভিন্ন নজির গড়বে।

জায়িন গরুটাকে দেখছে তো গরুর দায়িত্বে রাখা ছেলেটাকে দেখছে।ছেলেটার বেশ ভুঁড়ি। ভুঁড়ির চিন্তা মাথায় আসতেই তোয়ার ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে হবে এই কথা মাথায় আসে ওর।হাসতে থাকে।যেই সেই হাসি না একেবারে অট্টহাসি।এই সময় বিয়ের পোশাক পাওয়াটা টাফ।ঈদের শপিং নিয়েই প্রায় মানুষ ব্যস্ত।

সকাল সকাল বাড়ির ছোটরা প্ল্যান করেছে শপিং করতে যাবে।যেহেতু মেঘলা আকাশ তাই সকাল সকাল যেতে সমস্যা নেই।এই বৃষ্টির মাঝে ঘোরাঘুরি করতে বেশ লাগে। তাছাড়া লাঞ্চ বাইরে করে পুরো বিকেলটা ঘোরাঘুরি করে কাটানো যাবে।

মেহের যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।সে নাকি তার প্রয়োজনীয় সব অনলাইনে অর্ডার করেছে।এই মেয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি বলে কিছুই নেই এমনটাই বকছেন মোবারক তালুকদার।তার মতে,এই অনলাইন টনলাইনে কি আসল পোশাক পাওয়া যায় নাকি।সব হলো টাকা নষ্ট।

-“বনু এই ছুটির দিনে এমন করছিস কেন?চল না যাই।একসাথে কতদিন ঘোরাঘুরি করা হয়না বলতো।”

মোয়াজের কথায় মেহের ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ভাইয়ের গালে আদূরে স্পর্শ দিলে বলে ওঠে,”তুমি আর বড়দা ভাই যে বড় ভাবীকে দেখতে গিয়েছিলে আমায় জানাওনি তাই আমি অভিমান করেছি। তোমাদের সাথে যাবো না আমি”

মেহেরের কথায় প্রথমে ব্যতিব্যস্ত হয়ে সরি সরি করলেও পরক্ষনেই ওর মনে পড়ে ওদের মারিয়ামের সাথে দেখা করতে যাওয়ার বিষয়টা তো কেউই জানে না। তাহলে মেহের জানলো কিভাবে!প্রশ্ন করতে গিয়েও করেনা।হয়তো বড়দা ভাই বলেছে।বলতেই পারে।তার তো কলিজা এই মেয়ে।মেহের ভাইকে যেতে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।সে ঘুমাবে।মোয়াজ ব্যর্থ হয়ে চলে যায়।মাহিনও এসেছিলো মানাতে মেহেরের এককথা সে যাবেনা।

বাড়ির বউয়েরা,ছেলেরা,বিয়ের কনে সবাই গেছে শপিং এ।বাড়িতে আছে বাড়ির বড়রা।মায়া বেগমের শশুর-শাশুড়ি মারা গেছে বহুবছর আগে।একমাত্র ছেলে ছিলেন তূর্যয়ের বাপ।একা বিশাল বাড়িতে থাকা বড্ড ভয়ের।তাই স্বামী সন্তান নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকেন তিনি। ভাবীদের সাথে খুব একটা কথা কাটাকাটি হয়না।তবে হলে আর এ বাড়িতে থাকেন না।দিন কয়েকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওঠেন।

নামমাত্রিক ঘুমিয়ে বিছানা ছেড়ে দেয় মেহের।তৈরি হয়ে নেয়। সুন্দর করে ব্রাউন লং টপসের সাথে কালো হিজাব আর মাস্ক পড়ে নেয়।চোখে কালো সানগ্লাস লাগাতে ভুল হয়না ওর। নিজের রুমের দরজাটা আরেকবার দেখে নেয়।না,ভালো করেই লাগিয়েছে। বারান্দায় গিয়ে আমগাছ বেয়ে দেয়াল টপকায় সে।তার বারান্দা সাথে সংলগ্ন আমগাছ আর আমগাছের সাথে লাগোয়া দেয়াল।

৩২.
গোডাউনে আটকে রাখা হয়েছে কাউকে।মুখটা শক্ত করে কাপড় দিয়ে বাঁধা।তীব্রের হুকুমেই আটকানো হয়েছে একে।এস.আরকে কেন দরকার জানাটা তার জন্য যেন ফরজ হয়ে গিয়েছে।নিজেকেও কালো পোশাকে আবৃত করে উপস্থিত হয় তীব্র।অন্ধকারে এই কালো পোশাক বুঝতে দেয় না প্রতিপক্ষ আসলে কোথায় অবস্থান করছে।তাই একে সুরক্ষিত থাকার এক অবলম্বন বলাই যায়।

-“হেই ইয়াং লেডি,আমাকে আই মিন এস.আরকে কি দরকার আপনার?”

ভারী কন্ঠে তীব্র জিজ্ঞাসা শুরু করে।এপাশের নারী জবাব দেয়না।তীব্র বিরক্ত হয় জবাব না দেওয়ায়।তবে তখন তিতুমীর দৌড়ে এসে বলে,
-“স্যার আপনি কেন এসেছেন?আমায় বললে আমিই আপনার হয়ে কাজটা করে দিতাম।”
-“আপাতত এই মেয়ের মুখ দিয়ে কথা বের করো।”(তীব্র)
-“এর মুখে কাপড় বাঁধা। দাঁড়ান খুলতাছি”(তিতুমীর)

তীব্রর নিজের ওপর রাগ লাগে।মেয়েটার মুখে কাপড় বাঁধা থাকলে কথা বলবে কিভাবে! শুধু শুধুই তার মুখের বুলি নষ্ট হলো। তিতুমীর হাত খুলে যাওয়ার সময় তীব্র বলে ওখানকার লাইট জ্বালিয়ে দিতে। তিতুমীরের সাথে ঝগড়া করা মেয়েটার কন্ঠ কেমন জানি পরিচিত লেগেছে তার।এখন দেখার পালা এই কি সেই।যদি দু’জন এক হয় তবে তো আর ছাড়া যাচ্ছে না।

অন্ধকার রুমটা আলোয় ভরে যেতেই মেহেরের চোখে আলো লাগে।চোখ খুলতে কষ্ট হয়।তবে মুহুর্তবাদে চোখ খুলতে সক্ষম হয় সে।চোখের সানগ্লাসটা টানাহেঁচড়ায় কোথায় যেন পড়েছে।জানা নেই ওর।তবে এখানে এসে যে পৌঁছে এই অনেক।টাইকুনের লোকদের হেফাজতে এসেই পড়েছে ও এটা ওর খুব করে জানা। মেহের মনে মনে বলছে,
-“শালা তোরা কি মনে করছ তোরা একজনকে স্যার বলবি আর আমি তাই বিশ্বাস করে নিবো! তোদের স্যার এখানে আসেনি।আসতে পারেনা কেননা তার নিজের তো একটা স্ট্যান্ডার আছে।তবে এটা কে তা তো আমার জানতেই হবে”

-“এই মেয়ে কে তুমি?”(তীব্র)

কন্ঠটা মেহেরের কাছে চেনা চেনা ঠেকে।তবে কিছু না বলেই হঠাৎ করে হামলে পড়ে সামনের মানুষটার ওপর।তীব্র তো চোখ দেখেই যা বোঝার বুঝে ফেলে।মেহেরের আক্রমণকে অগ্রাহ্য করে ওর কানে কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
-“প্রিয়তমার দেখি প্রিয়তমের হতে তর সইছে না!”

পরিচিত মানুষের কন্ঠস্বর ভেসে উঠতেই তৎক্ষণাৎ নিজেকে ছাড়ানোর প্রয়াস আরো বাড়িয়ে দেয় সে। ছটফটানি এতোই বেড়েছে যে হাঁটুতে আঘাত করেই শেষমেশ ছুটেছে।সামনের মানুষের দিকে আতঙ্ক ভরা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেহের সশব্দে বলে ওঠে,
-“তীব্র”

তীব্র তৎক্ষণাৎ মেহেরের মুখে হাত রাখে।হাত সরিয়ে ঠোটে আঙ্গুল রেখে হুঁশ করে।দেওয়ালেরও কান আছে।এই নামটা হয়তো কোথাও বিস্তার ফারাক রাখেনি।তবে শত্রুপক্ষের কাছে এই নামটাও অনেক বড় লিড।মেহের নিজের পায়ের কাছে গুঁজে রাখা বন্দুক বের করে।তাক করে তীব্রর মাথা সই সই।ট্রিগারে আঙ্গুল।একটা চাপ দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে।

৩৩.
শপিং করতে এসে সবাই আলাদা আলাদা হয়ে পড়েছে।মুহিবও যেহেতু এসেছে তাই ওর সাথেই তোয়া ঘুরছে।ছেলেটা যত্নবান আছে।তোয়ার পছন্দ সম্পর্কেও বেশ জানে।মুহিবের অপছন্দের খাবারটাই তোয়ার বেশ পছন্দের।মুহিব জানে।জানতে হয় এই বিষয়গুলো। নয়তো কি আর প্রিয় মানুষের প্রিয় হয়ে থাকা যায়!

মারিয়াম ইন্টার্নে করছে ফজুলাতুন্নেসা মেডিকেল কলেজে।সেখানকার দুই বন্ধু নিয়েই এসেছে শপিং এ। উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য হয়েও ঈদে শপিং করবেনা তা তো হয়না তাইনা!সুমাইয়া আর নাদিয়া সঙ্গি হয়েছে ওর।একই সঙ্গে একই কলেজে পড়াশোনা করে এখন একই সাথে ইন্টার্নে করছে তিনজন।ভালো বন্ধুত্ব আছে বটে তিনজনার।

মারিয়াম এইখানে মাহিনকে দেখে চমকায়।এখানে আসবে বলেনি তো।ওদের শপিং শেষ।আজকে নাইট শিফট পড়েছে।তাই তাড়াতাড়ি শপিং করে নিলো ওরা সকাল সকালই।সুমাইয়া আর নাদিয়া বিদায় জানিয়ে চলে যায়।মারিয়াম শপিং ব্যাগ হাতে ফোন দেয় মাহিনকে।

-“****** শপিংমলে আসবেন বলেননি তো?”(মারিয়াম)
-“তুমিও এখানে এসেছো বুঝি?”(মাহিন)
-“আপনাকে আমি টেক্সট করেছিলাম।আপনি পড়েননি?”(মারিয়াম)
-“সরি খেয়াল করেনি।”(মাহিন)
-“আচ্ছা।ঠিক আছে শপিং করুন।বাই (মারিয়াম)
-“হুম”(মাহিন)

মারিয়ামের কষ্ট লাগে এই ছেলেটা এমন কেন! ম্যাসেজ সিন করা না তাহলে কি ওনার কাছে ওর গুরুত্ব নেই?হয়তো নেই।হয়তো মরীচিকার পেছনে ছুটছে ও। সমস্যা নেই।হায়াত আছেই বা কয়দিন।দুইদিনের এই দুনিয়া।একদিন তো মরতেই হবে।সময় না দিলেই ভালো।এইসবের প্রতি টানফান সৃষ্টি হবে না।

-“ভাইয়া কে ফোন দিয়েছিলো?”(তূর্যয়)
-“আমার বউ।কথা বলবি?”(মাহিন)
-“তুমিও না!তুমি তো বিয়েই করো নাই।আমি তো ভাবছি নূরিয়া ছোট বোন নওশিনের সাথে তোমার বিয়ের কথা বলবো।ওর বাড়িতে তো আমাদের মেনেই নিছে”(তূর্যয়)
-“খবরদার তূর্যয়।আমার জন্য কোনো মেয়ে দেখার দরকার নেই তোর।যেই মেয়ে পালাতে পারে তার পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে আমি ধারণা পোষণ করতে চাইনা”(মাহিন)
-“ভাইয়া আপনার চিন্তাধারা অনেক ছোট”(নূরিয়া)
-“হ্যা আমি জানি।তোমরা জেনে যাওয়াতে খুশিই হয়েছি”(মাহিন)

মাহিন সরে আসে সেখান থেকে।রাগের বহিঃপ্রকাশ কয়েকভাবে ঘটানো যায়।এই মেয়ের চালচলন ওর ভালো লাগে না।আর সেখানে নাকি এর বোনকে বিয়ে করবে ভাবা যায়!মাহিন সরে আসে ওখান থেকে।ওদের আশেপাশে থাকলে যখন তখন ঝগড়া লেগে সিনক্রিয়েট হতে পারে।

মাহিন চলে যেতেই নূরিয়া হাতের শপিং ব্যাগ ফেলে তূর্যয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থাপন করে।বলে ওঠে,
-“মাহিন ভাইয়া আমার পরিবারকে ছোট করলে আর তুমি চুপচাপ শুনলে?কেমন জামাই তুমি হ্যা কিছু বলতে পারলে না?”
-“কি বলতাম আমি?তুমি আমার সাথে পালিয়েছো দেখেই তো সবাই এমন কথা বলছে”(তূর্যয়)
-“আমার ভূল ছিলো তোমার মতো কাপুরুষের সাথে পালানো।যেই ছেলে নিজ বউয়ের হয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনা তাকে বিয়ে করাই আমার ভুল”(নূরিয়া)
-“নূরিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করছো!চিৎকার করা বন্ধ করো।সবাই দেখছে”(তূর্যয়)
-“তো দেখুক।শুনে রাখো নওশিনের সাথেই তোমার ভাইয়ের বিয়ে দিবো আমি।তুমি খালি দেখো”(নূরিয়া)
-“কি করবা তুমি?”(তূর্যয়)
-“তোমার জানতে হবে না।চলো আমার আরো শপিং বাকি আছে”(নূরিয়া)

ফেলে দেওয়া ব্যাগগুলো আবারো হাতে তুলে নেয় নূরিয়া।যেই বোনকে নিয়ে অপমান শুরু হলো সেই বোনকেই বিয়ে দিয়ে এই তালুকদার পরিবারের সদস্য বানাবে সে। তালুকদাররা নিজেদের কি ভাবে?এই অহংকার সে চুরমার করে ছাড়বে।নওশিনকে তালুকদার বাড়ির পুত্রবধূ বানিয়ে নিজেও রাজ করবে ওই বাড়িতে।

চলবে কি?
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া-আপুরা। ভুল-ত্রুটিগুলো মার্জনার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকবো।হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here