হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪৭

0
316

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৭

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

অয়ন্তি জাহিনের গলা জাপ্টে জড়িয়ে ধরে জাহিনের কোলে বসে আছে বাচ্চাদের মতো। জাহিনের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, হাসি যেন তার থামছে বউয়ের এমন অবস্থা দেখে। অয়ন্তি বার বার নাক টানছে। এতটাই কান্না করছে যে নাক দিয়ে পানি ঝরছে ক্রমাগত। প্রথম দিকে অয়ন্তি নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও জাহিন ফ্রেশ হয়ে আসার পর জাহিনের মুখে ম’রার কথাটা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি অঝোরে কাঁদতে শুরু করে। জাহিন অনেক কষ্টে বউকে‌ নানান কথা বলে কান্নাটা থামিয়েছে কিন্তু কান্না থামালে‌ কি হবে বার বার ফুপিয়ে উঠেছে আর ঘন ঘন নাক টানছে। জাহিন নরম গলায় বলল।

“হয়েছে তো এবার ফুপানো বন্ধ করো।”

অয়ন্তি অভিমানী গলায় বলল, “আমি ফুপালে আপনার কি?”

“আমারেই সব আমার বউ এভাবে কান্না করবে আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো তেমন স্বামী আমি নই।”

“বউ তো এমনি এমনি কাঁদেনি বউকে স্বামী কাঁদিয়েছে।”

“আচ্ছা সরি আর কখনো এমন কথা বলব না।”

“আপনি খুব খারাপ।”

জাহিন নৈঃশব্দে হেসে বলে, “হুম জানি তো।”

“খুব বাজে স্বামী।”

“সত্যি খুব বাজে স্বামী আমি?”

“হুম সত্যি আপনি খুব বাজে স্বামী।”

জাহিন কিছুটা সময় চুপ করে রয়ে ধীর গলায় ডাক দেয়, “অয়ন্তি।”

“হু।”

“ধরো আমার কিছু একটা হয়ে গেল তখন তুমি কি করবে?”

রাগে অয়ন্তির নাকের পাটা ফুলে উঠছে। এই লোক কখন থেকে উল্টাপাল্টা কথা বলে যাচ্ছে। মন চাইছে জাহিনের মাথার সমস্ত চুল গুলা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু অয়ন্তি নিজের রাগটা সামলিয়ে রিনরিনে গলায় বলল।

“আরেকটা বিয়ে করব তারপর ওই বেডার লগে সুখে শান্তিতে সংসার করব।”

জাহিন টের বুঝতে পারছে অয়ন্তি যে ইচ্ছে করে এমন কথা বলছে। জাহিনও অয়ন্তির কথার সাথে পালা দিয়ে বলল, “আমায় ভুলে যাবে।”

“হুম ভুলে যাবো এক্কেবারে আপনার নামটা আমার হৃদয় থেকে মুছে দেবো।”

জাহিন মৃদু হেসে অয়ন্তিকে দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়ন্তির বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আড়ষ্ট কন্ঠে বলল, “এতো সহজে আমাকে ভুলতে পারবেন না মিসেস অয়ন্তি। আপনার শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার ভালোবাসার গভীর ছোঁয়া আছে। তাই এই গভীর ভালোবাসাময় ছোঁয়া এত সহজে ভুলতে পারবেন না।”

অয়ন্তি জাহিনকে জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে মিহি স্বরে বলে, “আমি আপনাকে ভুলতে চাই না নেতা মশাই কোনো দিনও ভুলতে চাইতে না। মৃত্যুর পরেও আমি আপনাকে স্মরণে রাখতে চাই।”

জাহিন চোখ মেলে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “আচ্ছা মাঝে মাঝে তোমার এটা ভেবে আফসোস হয় না যে কি এক লোককে বিয়ে করেছো যার জন্য প্রতিনিয়ত তোমাকে চিন্তায় থাকতে হয়।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে চোখ মেলে তাকায়। এবার জাহিন একটু বেশি বাড়িবাড়ি করছে। এই লোককে থামানো দরকার। কখন থেকে মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে। অয়ন্তি দাঁত কাঁমড়ে ধুম করে জাহিনের পিঠে আস্তে করে কিল মেরে বসে। আকস্মিক পিঠের উপরে এভাবে কিল মারাতে জাহিন ব্যথায় অর্তনাদ করে উঠে। অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠে জাহিনের অর্তনাদ শুনে। সে তো এত জোরে কিল দেয় নি তাহলে জাহিন এভাবে অর্তনাদ করে উঠল কেন? অয়ন্তি তড়িৎ বেগে জাহিনের কাছ থেকে দূরে সরে এসে বিচলিত গলায় বলল।

“কি হয়েছে? আমি তো এতো জোরে কিল দেই নি যার জন্য আপনি এতোটা ব্যথা পাবেন।”

জাহিন চোখ বন্ধ করে দাঁত দাঁত চেপে বলল, “আমি ঠিক আছি অয়ন্তি কিছু হয় নি আমার।”

অয়ন্তির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। জাহিনের চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে উঠল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রেখেছে। জাহিন তার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাতে চাইছে। পিঠে হয়তো কিছু হয়েছে যেটা জাহিন তার কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে। দেখতে হবে পিঠে কি হয়েছে যার জাহিন এতটা কষ্ট পেলো এই সামান্য কিল দেওয়ার কারণে। অয়ন্তি হাত বাড়িয়ে জাহিনের গায়ে পরিহিত শার্টের বোতাম খুলতে নিলে তৎক্ষণাৎ জাহিন অয়ন্তির হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলে।

“কি করছো?”

“হাতটা ছাড়ুন আমি দেখব।”

জাহিন ভীত গলায় বলল, “দেখবে মানে কি দেখবে?”

“আপনাকে দেখব।”

“তো দেখো বারণ করেছে কে? কিন্তু তার জন্য শার্টের বোতাম খুলতে চাইছো কেন?”

“আপনার পিঠে কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য শার্টের বোতাম তো খুলতেই হবে।”

জাহিন ভড়কালো। তার পিঠ যদি একবার অয়ন্তি দেখে তাহলে এই‌ মেয়ে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে। আটকাতে হবে অয়ন্তিকে না হলে এই মেয়ে কান্না করতে করতে চোখের বারোটা বাজিয়ে দিবে। জাহিন মেকি হেসে বলল।

“আমার পিঠে আমার পিঠে আবার কি হবে? আমার পিঠে কিছু হয় নি তো।”

অয়ন্তি জেদ ধরে বলল, “তাও আমি দেখব। দেখি হাত সরান।”

“শার্ট খুললে আমার ঠান্ডা লাগবে অয়ন্তি।”

“লাগুক ঠান্ডা। আর এমনিতে আপনি কয়েক দিন ধরে বেশির ভাগ খালি গায়েই থাকেন।”

“অয়ন্তি আমার কথাটা শুনো।”

অয়ন্তি জাহিনের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল, “হাতটা ছাড়ুন।”

শেষমেষ অয়ন্তির জেদের কাছে জাহিন হার মানলো। অবশেষে অয়ন্তি জাহিনের শার্ট খুলে জাহিনের পিঠ দেখতেই অয়ন্তি আঁতকে উঠে জাহিনের পিঠের দিকে তর্জনী তাক করে বিস্ময় নিয়ে বলে।

“এটা? এটা কি করে হলো?”

জাহিনের পিঠের অনেকটা জায়গা জুড়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। দেখতে এতোটা ভয়ানক লাগছে তাহলে এর ব্যথা কতগুণ হতে পারে অয়ন্তি কল্পনা করতে চায়ছে না। অয়ন্তি কাঁপাকাঁপা হাতে জায়গাটা স্পর্শ করতে যাবে সাথে সাথে জাহিন অয়ন্তির দিকে ফিরে। অয়ন্তির চোখ টলমল করছে পানিতে, চোখের পলক ফেললেই কপোল বেয়ে অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়বে। অয়ন্তি নিস্তেজ হয়ে যাওয়া গলায় বলল।

“এর জন্য বুঝি এমন ভাবে আর্তনাদ করে উঠেছিলেন।”

জাহিন গায়ে শার্টটা জড়াতে জড়াতে বলে, “আমি ঠিক….।”

জাহিনকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই‌ অয়ন্তি ধরা গলায় বলতে শুরু করল, “এই ঠিক আছি কথাটা আপনি বলবেন না প্লিজ তাহলে যারা এই মুহূর্তে সু্স্থ আছে তাদেরকে অপমান করা হবে।”

অয়ন্তির কথা শুনে জাহিন দিলো শব্দ করে হেসে। অয়ন্তি জাহিনকে এভাবে হাসতে দেখে রাগে দুঃখে জাহিনের বুকে কিল মেরে বলল।

“এতো বড় একটা ব্যথা পেয়েছেন আর আপনি বেহায়ার মতো হাসছেন।”

“তো হাসবো না তোমার কথাটা খুব মজার ছিল।”

অয়ন্তি এবার অশ্রুসিক্ত নয়নে জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “খুব ব্যথা করছে তাই না।”

জাহিন তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলল, “একটু।”

“কি করে এতো বড় ব্যথা পেয়েছেন?”

জাহিন অয়ন্তির সরু নাকটা টেনে বলল, “কিছু কথা অজানা থাকা ভালো বউ।”

অয়ন্তি কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বলে, “দাঁড়ান ওয়েনমেন্টটা নিয়ে আসি জায়গাটাতে লাগিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি ব্যথাটা কমে যাবে।”

অয়ন্তি বেড থেকে নামতে নিলে জাহিন তৎক্ষণাৎ অয়ন্তির হাতটা ধরে হেঁচকা টানে এনে নিজের বুকে ফেলে অয়ন্তিকে নিয়ে শুয়ে পড়ে আর বলে।

“ওয়েনমেন্ট লাগবে না এমনি ঠিক হয়ে যাবে।”

অয়ন্তি মুখ তুলে জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, “এমনি এমনি কি করে ঠিক হয়ে যাবে যদি ঔষধ না দেওয়া হয়?”

জাহিন অয়ন্তির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ধীরে বলল, “ঘুমাও অয়ন্তি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

অয়ন্তি আর কিচ্ছু বলল না চুপচাপ পড়ে রইল জাহিনের বক্ষস্থলে। সময় গড়িয়ে যায়। জাহিন গহীন ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অয়ন্তি আস্তে আস্তে জাহিনের বুক থেকে সরে এসে নিজের বালিশে কাঁধ হয়ে শুয়ে জাহিনের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইল। এই মানুষটা এত ধৈর্য নিয়ে কি করে থাকে? জাহিন কি এই ধৈর্য নিয়ে পিএচডি করেছে নাকি। অয়ন্তি হাত বাড়িয়ে জাহিনের কপালে পড়ে থাকা চুল গুলা সরিয়ে দিয়ে হাতটা জাহিনের পড়ে থাকা হাতের মুঠোতে রেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখের পাতা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

_______

জারার মাথা ধরেছে। পড়ার চিন্তা আর নুহাশের চিন্তায়। এই দু চিন্তা একাকার হয়ে মস্তিষ্কে জট বেঁধে গেছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে এগারোটার উপরে বাজে। একটা কড়া লিকার দিয়ে চা খেতে হবে তাকে তাহলে যদি মাথাটা পাতলা হয়। যেই ভাবনা সেই কাজ জারা পড়ার টেবিলে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বের হতেই পা জোড়া থমকে যায়। নুহাশ কেমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে হেলেদুলে ছাদের দিকে যাচ্ছে এই ঠান্ডার মাঝে। জারা কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক গুরুতর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জারা দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়ল। চারপাশটা দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। জারা কিচেনের উদ্দেশ্যে না গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছাদের দিকে। নুহাশের সাথে কথা বলা দরকার তার।

জারা আস্তে আস্তে করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দরজা খুলে দেখে নুহাশ কোমর বাকিয়ে রেলিং এর উপরে দু হাতের কনুই ভর করে পরম শান্তিতে সিগারেট টানছে। জারা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় নুহাশের দিকে। নুহাশ এক মনে সিগারেট টানছে আর কিছু একটা ভাবছে।

“সিগারেট খেতে কেমন লাগে নুহাশ ভাই?”

আকস্মিক কানের কাছে মেয়েলি কন্ঠ শুনে নুহাশ চমকে পাশে তাকাতেই জারাকে দেখে স্তব্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এই মেয়ে এত রাতে এখানে কি করছে? জারা পুনরায় প্রশ্ন করল।

“কি হলো বললে না তো সিগারেট খেতে কেমন লাগে?”

নুহাশ চট জলদি হাত থেকে অর্ধ খাওয়া সিগারেটটা ফেলে তা পা দিয়ে পিষে ভর্য়াত গলায় বলল, “জারা তুমি এখানে?”

“কেন আমি এখানে আসতে পারি না?”

“আসতে পারো তা বলে এতো রাতে। ডর ভয় নেই নাকি মনে তোমার।”

জারা মৃদু হেসে বলল, “আপাতত‌ ডর ভয় লাগছে না কারণ তুমি আছো তো আমার পাশে।”

নুহাশ ম্লান কন্ঠে বলল, “এতো বিশ্বাস।”

“হুম।”

নুহাশ শুকনো ঢোক গিলে বলল, “এতো বিশ্বাস করো না আমাকে জারা পরে পস্তাতে হবে।”

জারা কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে নুহাশ জারার হাত ধরে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটার আড়ালে নিয়ে আসে। জারা হতবাক হয়ে বলল, “কি হয়েছে?”

নুহাশ জারার ঠোঁটের উপরে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল, “হুসসস। কথা বলো না নিচে গার্ড আছে।”

তখনই ওরা যে জায়াগটাতে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এসে লাইটের আলো পড়লো। নুহাশের দৃষ্টি ওই দিকে থাকলেও জারার নজর নুহাশের মুখের দিকে। লাইটের আলো সরে যেতেই নুহাশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে জারার দিকে তাকাতেই নুহাশের বুকটা ধ্বক করে উঠে জারাকে নিজের এতোটা কাছে দেখে। নুহাশ ফাঁকা ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ জারার মুখ থেকে নিজের পুরুষালী হাতটা দ্রুত সরিয়ে নিয়ে জারার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। জারা এখনও স্থির চোখে নুহাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নুহাশ গলা খাকারি দিয়ে বলল।

“চলো।”

নুহাশ পা বাড়াতে নিলে থেমে যায় জারার নিষ্প্রভ স্বরের ডাক শুনে, “নুহাশ ভাই।”

নুহাশ আনমনে বলে উঠে, “হু।”

“তুমি খুব অপরাধভোগে ভুগছো তাই না।”

নুহাশ কথা বলল না। জারা পুনরায় বলল, “তোমাকে অপরাধভোগে আর ভুগতে হবে না। আমি শোধবোধ করে দিবো।”

নুহাশ ভ্রু কুঁচকে নেয় জারার কথা শুনে। জারার কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারছে না সে। আকস্মিক জারা নিজের পায়ের পাতার সমানের অগ্রভাগে শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে নিজেকে উঁচু করে টুপ করে নুহাশের ওষ্ঠ জোড়ায় সশব্দে চুমু খেয়ে বসে সরে আছে। নুহাশ স্তব্ধ, বিমূর্ত। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল জারার দিকে। জারার বুকের উঠানামা বেড়ে গেছে। নিজ থেকে চুমু খেয়েছো তো ঠিক কিন্তু এখন মন চাইছে এক লাফে ছাদ থেকে নেমে যেতে। আড় চোখে একবার হতবাক হয়ে থাকা নুহাশের দিকে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল।

“আমি যাই।”

যাই বললেই কি আর যেতে দিবে নাকি নুহাশ তাকে এই মুহুর্তে। কখন না! এমনিতে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছে আর সেই যুদ্ধের মাঝে যদি এভাবে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে তাহলে কি নিজেকে সমালানো সম্ভব। না এটা সম্ভব না। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে এখন এই বাঁধ জোড়া‌ লাগানো সম্ভব নয় তার দ্বারা।

নুহাশ খপ করে জারার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। জারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বুকের হৃদপিন্ডের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে এই বুঝি বেরিয়ে আসবে। ভেসে আসলো নুহাশের নিরেট গলার স্বর।

“কাজটা কি ঠিক করলে তুমি জারা?”

জারা চোখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। শ্বাস ভারি হয়ে আসছে তার, হাসফাঁস লাগছে, গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে গেছে। ঠান্ডায় জারার ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ কাঁপছে। নুহাশ‌ সেই দিকটায় একবার তাকিয়ে জারার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বলল।

“ওপেন ইউর আইস জারা।”

জারা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। দুজনের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলল। জারা নুহাশের এই উন্মত্ত দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে নজর সরিয়ে নিজের। নুহাশ বার বার শুকনো ঢোক গিলছে যথাসাধ্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে আর‌ যাই হোক এই গভীর রাতে তার সামনে তার প্রিয় নারীটি দাঁড়িয়ে আছে সেই‌ হিসেবে নিজেকে সামলানো‌ যেন একটু দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নুহাশ কাঁপাকাঁপা গলায় বলল।

“জারা আই ওয়ান্ট টু ডু ইট এগেইন।”

জারা ধীরে ধীরে হাত উঁচু করে‌ নুহাশের জ্যাকেটটা শক্ত করে‌ আঁকড়ে ধরে‌ আবেশে চোখ বন্ধ করে‌ নেয়। নুহাশ আবারো নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করল কিন্তু না এই যুদ্ধ সে‌ আজ পরাজয়। কিয়ৎক্ষণ পরেই অনুভব করল‌ জারা তার গাল‌ আর গলার কাছটায় পুরুষালী ঠান্ডা শক্ত হাতের পরশ। মোচর দিয়ে উঠল তার তল পেট। এক মাতাল করা অনুভূতির জোয়ারে সে ভাসছে। যে জোয়ার আনার ক্ষমতা শুধু নুহাশেরই আছে। জারা এর পরপরেই অনুভব করল‌ নিজের অধর জোড়ায় নরম উষ্ণ এক ছোঁয়া। দুজনের শান্ত শ্বাস অশান্ত হয়ে এলো। শরীরের অনুভব করছে নুহাশের বেসামাল ঠান্ডা হাতের স্পর্শ। নুহাশ আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের সাথে জারাকে জড়িয়ে রেখেছে। নেশায় বুঁদ হয়ে গেছে নুহাশ। জারা কপাল কুঁচকে নেয়। এই অনুভূতি তার কাছে বড্ড নতুন এক অনুভূতি। এই অনুভূতির নাম কি দেওয়া যায়? আদৌ কি অনুভূতির নাম দেওয়া যায়, না যায় না। এই অনুভূতির নাম দেওয়া সম্ভব নয়, এ এক নাম না জানা অনুভূতি। জারার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। নুহাশ যখন বুঝতে পারল জারা কান্না করছে তখনই নুহাশ জারাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সরে আসে না। নুহাশের ভারী গরম অশান্ত নিঃশ্বাস জারার উন্মুক্ত ঘাড়ে আঁছড়ে পড়ছে। জারা মাথা নিচু করে রেখেছে। লজ্জায় নুহাশের দিকে ফিরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। আকস্মিক নিজের গালে নুহাশের হাতের ছোঁয়া পেয়ে জারা কেঁপে উঠে। নুহাশের গভীর গলায় স্বর ভেসে আসে।

“পরের বার এই ভুল যেন দ্বিতীয় বার না হয়। যদি হয় এর থেকে কিন্তু খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। কথাটা মনে থাকবে।”

জারা মাথা উপর নিচ করল দু তিন বার। পরপর নিজেকে অনুভব করল নুহাশ তার হাঁটু আর পিঠে হাত রেখে তাকে পাঁজাকোলা তুলে নিয়েছে। জারা ভয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠে। নুহাশ এগিয়ে গেল চিলেকোঠার দরজার দিকে। জারা ভয়ে আছে যদি কেউ তাদের এই অবস্থায় দেখে নেয় তখন কি হবে? বাড়িতে ঝড় বয়ে যাবে। জারা চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করছে এই যাত্রায় আজ শুধু বাঁচিয়ে দিক এরপর থেকে আর কোনো দিন সে নিজ থেকে এমন অঘটন ঘটাবে না জীবনেও।

সহিসালামতে নুহাশ জারার রুমে ঢুকে জারাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজে এক সেকেন্ডও দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জারা দরজার শব্দ শুনে চোখ মেলে তাকায়। বুকের বা পাশটা শক্ত করে চেপে ধরেছে। কোন দুঃখে যে‌ সে নুহাশের পেছন পেছন ছাদে যেতে গেল। গাড়িতে যা হয়েছিল, হয়েছিল এটার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে গেলি কেন? যদি না করতি তাহলে এমনটা হতো না। জারা এবার নিজেকে নিজেই হাজারটা গালি দিচ্ছে।

#চলবে

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

আমার সব গল্পের লিংক একত্রে
https://www.facebook.com/110256437345301/posts/309897647381178/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here