হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪৩

0
28

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৩

ত্রিনভের ফোনের স্ক্রিনে ছলছল করছে জাহিনের হাতে চড় খাওয়ার ভিডিও ফুটেজটা। ত্রিনভ শক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নেট দুনিয়াতে এখন এই ভিডিওটা হট টপিকে আছে। নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরণের ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটা ছাড়ছে। এসব দেখে ত্রিনভের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো রাগে। চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে অতিরিক্ত রাগের কারণে। ইচ্ছে করছে খোটা শহরটাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে। তার গায়ে হাত তুলেছে ওই জাহিন। এই হাত যদি সে ভেঙ্গে না গুড়িয়ে দিয়েছে তাহলে তার নাম ত্রিনভ মজুমদার নয়। ত্রিনভ প্রচন্ড রাগে আক্রোশ সামনে থাকা কাঁচের সেন্টার টেবিলে লাথি মারে মুহূর্তের মাঝে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচের ছোট ছোট টুকরা। সাথে হাতে থাকা ফোনটাও দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। মুহূর্তের মাঝে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় ফোনটা। ফোন ভাঙ্গা আর সেন্টার টেবিল ভাঙ্গার বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে সুরেশ মজুমদার সহ বাড়ির অন্য সদস্যরা ছেলের ঘরে এসে এসব দেখে ধমক দিয়ে বলেন।

“কি হচ্ছে এসব ত্রিনভ?”

ত্রিনভ কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ছেলেকে চুপ থাকতে দেখে সুরেশ মজুমদার চেঁচিয়ে বলেন, “আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গেসা করছি ত্রিনভ।”

ত্রিনভ তারপরও মৌন রইল। সুরেশ মজুমদার তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, “দেখো ত্রিনভ আমি জানি তোমার রাগে কারণটা। কিন্তু দোষটা সম্পূর্ণ তোমার। তুমি প্রথমে জাহিনের কলার ধরেছো তাই তোমাকে ও চড় মেরেছে। আর তুমি কি করে বলো যে ওর দল মিছিল করতে পারবে না। সব প্রার্থীরাই‌ এই পুরো পৌরসভার ভেতরে ওয়ার্ক করতে পারে সেখানে তুমি বাঁধা দেওয়ার কে? তোমার এই‌ কাজের জন্য জানো আমাকে কতটা নিচু হতে হয়েছে নির্বাচন অফিসে আজ। তাই বলছি এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। ভেবে নাও বড়ো ভাই হিসেবে জাহিন তোমাকে একটা চড় মেরেছে। আর এই বিষয়টা নিয়ে জল ঘোলা করো না। সামনের দিন গুলা সুন্দর ভাবে ওয়ার্ক করে নির্বাচনটা উৎরে যাক এটাই প্রত্যাশা করি।”

কথাটা বলে সুরেশ মজুমদার সহ সবাই ঘর থেকে চলে যায়। ত্রিনভ চাঁপা গলায় চিৎকার করে সামনের সিঙ্গেল সোফাটাতে জোরে লাথি মারে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রাগে শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। এত সহজে সে এই বিষয়টা ভুলবে না। জনসম্মুখে তাকে জাহিন চড় মেরেছে, এর প্রতিশোধ তো সে নিবেই জাহিনের থেকে। কথায় আছে ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। জাহিনকে এই পাটকেল তো খেতেই হবে হয় নির্বাচনের আগে না হয় নির্বাচনের পরে।

_________

“তুমি আবার নতুন করে কার সাথে জামেলাতে জড়িয়েছো জাহিন?”

বাবার মুখে এমন কথা শুনে জাহিন খাওয়া থামিয়ে চোখ তুলে বাবার দিকে তাকায়। জাহিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই জোহরা বেগম স্বামীকে বলে উঠেন।

“খাওয়ার সময় কি এসব কথা না বললে হয় না?”

আজমল শেখ কন্ঠে রুক্ষতা এনে বললেন, “না হয় না। ও রাজনীতি করছে আর একের পর এক শত্রুতা বানিয়ে ঘরে ফিরছে। এই খলিল তালুকদার তো প্রথম থেকেই আছে আর এখন এক নতুন শত্রু যুক্ত হয়েছে ওই সুরেশ মজুমদারের ছেলে ত্রিনভ মজুমদার। ও কি ভাবছে ওই ত্রিনভ এই চড়ের শোধ তুলবে না। ও কড়ায় গন্ডায় শোধ তুলবে। হয়ত গিয়ে দেখো এতক্ষণ সব ভেবে রেখেছে কি করে এই চড়ের শোধ তুলবে।”

জাহিন চুপচাপ খাওয়া শুরু করল। তার কিছু বলার নেই বাবাকে। আজমল শেখ ছেলের এমন গা ভাঁসানো ভাব দেখে চিৎকার করে বলেন, “আমি তোমায় কিছু বলছি জাহিন।”

জাহিন খেতে খেতে বলল, “হুম শুনছি।”

“তাহলে উত্তর দিচ্ছো না কেন আমার কথার?”

“কারণ আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।”

আজমল শেখ রেগে উল্টা পাল্টা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যান। অদূরে অয়ন্তি দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার চোখ মুখ অন্য রকম লাগছে। বুঝতে পারছে স্বামীর চিন্তায় আছে এই নিরীহ মেয়েটা। মেয়েটার কি দোষ? মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই। সম্পূর্ণ দোষ তার ছেলের। ছেলে যদি নিজের ভালোটা না বুঝতে চায় তাহলে কি করার? আজমল শেখ তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন।

“তোমার এই রাজনীতি ফাজনীতির জন্য যদি আমার পরিবারের উপরে নতুন করে কোনো আঘাত আসে তখন কিন্তু তোমাকে আমি ছেড়ে কথা বলব না জাহিন কথাটা মনে রেখো।”

বলেই আজমল শেখ খাবার টেবিল ছেড়ে চলে যান। স্বামীকে এমন ভাবে চলে যেতে দেখে জোহরা বেগমও ছুটে চলল স্বামীর পিছু পিছু। জাহিন বাবার যাওয়ার পানে এক নজরে তাকিয়ে রইল। জাহিন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে বাবার চিন্তা। পরিবার থেকে যে বাবা তাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করছে এটা তার অজানা নয়। কিন্তু তার কিছু করার নেই। এই রাজনীতিটা যেন একটা নেশার মতো হয়ে গেছে তার কাছে। ছেড়ে দিলেই নিশ্চিত নিজেকে হারিয়ে ফেলবে। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। পাশ থেকেই আজহার শেখ ভাতিজাকে বলে উঠেন।

“এই জাহিন তোর মাঠ কেমন রে?”

জাহিন আস্তে করে বলে, “ভালো।”

“জিততে পারবি তো নাকি চাচ্চুর মত…।”

জাহিন চাচ্চুর দিকে তাকাতেই আজহার শেখ মুচকি হেসে বলেন, “অব্যশই জিতবি তুই আমি জানি সেটা।”

“চাচ্চু একটা কথা বলব!”

“কি কথা?”

“তুমি একবার আমার সাথে বের হবে। তোমাকে আমার সাথে জনগণরা দেখলে হয়ত তাদের ভালো লাগবে।”

আজহার শেখের খাবার মাখানো হাতটা থেমে যায়। জাহিনের দিকে নরম চোখে তাকিয়ে আহত গলায় বলল, “তা হয় না। আমি নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই রাজনীতির আশেপাশে যাবো ন। তবে তুই চিন্তা করিস না আমার ভোটটা আমি তোকেই দিবো। চাচ্চুর উপরে এই আস্তাটা রাখতে পারিস।”

জাহিন মুচকি হেসে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাল। অয়ন্তি তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা বড্ড অন্য রকম অয়ন্তির। বুঝাই যাচ্ছে এই মেয়ে তাকে নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।

_______

খাওয়া দাওয়া করে যে যার ঘরে চলে গেছে। জারার হাত পা নিশপিশ করছে। ঘরের মধ্যে তার মন ঠিকছে না। বার বার নুহাশের কাছে যেতে মন চাইছে কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। নুহাশ তাকে কড়া ভাবে বলে দিয়েছে তার ঘরে যেন সে না যায়। জারা পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। পড়ায় মন বসছে না। বসবে কি করে তার মন তো পড়ে আছে নুহাশের কাছে। জারা শব্দ করে বই বন্ধ করে বলে।

“ধুর। আগে পড়ায় মন বসত না নু্হাশ ভাই কাকে পছন্দ করত সেই চিন্তায় আর এখন পড়ায় মন বসছে না নুহাশ ভাই আমাকে ভালোবাসে বলে এই চিন্তায়। এই জীবনে মনে হয় আমার পড়ালেখায় মন বসবে না।”

জারা ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইল। এর মাঝে ফোনের রিং টোন বেজে উঠে। জারা ফোন হাতে নিয়ে দেখে নুহাশ কল করেছে। জারা লাজুক হেসে কল পিক করতেই নুহাশের ভরাট গলার স্বর ভেসে আসলো।”

“কি করছো?”

“পড়ছি।”

“পড়তে বসেছো আমি তো ভেবেছি আমার চিন্তায় হয়ত আজ পড়তে বসবে না।”

জারা ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভাবলো। তাকে এতটা ছ্যাঁচড়া হলে চলবে না। প্রেমিকাদের সবসময় একটু টানে থাকতে হয়। ছ্যাঁচড়ামি করবে তো প্রেমিকরা। জারা থমথমে গলায় বলল।

“তোমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করার মতো আমার হাতে এতো সময় নেই বুঝলে। আমার পড়া আছে আর এক মাস পরে আমার পরীক্ষা।”

নুহাশ ঠোঁট টিপে হাসল। জারা যে মিথ্যা কথা বলছে সেটা সে সিউর। নুহাশ গলা খাকারি দিয়ে টিপনী কেটে বলে, “ঠিক আছে তাহলে তুমি পড়ালেখা করো আমি ফোন দিয়ে তোমাকে বিরক্ত করলাম।”

জারা চোখ বড় বড় করে দ্রুত গলায় বলে, “এমা না না বিরক্ত কোথায় হয়েছি? আমি একদম বিরক্ত হই নি। তুমি কল কেটো না।”

নুহাশ নিঃশব্দে হাসলো। দুজনেই চুপ। কেটে যায় কয়েক মুহূর্ত। নুহাশ পুরু কন্ঠে ডাক দেয়, “জারা!”

জারা আস্তে বলল, “হু।”

“ভালোবাসি।”

জারা মৃদু হাসল। বুকের ভেতরটা ধুকধুক করছে। হৃদয়ের মাঝে প্রশান্তি হাওয়া বয়ে গেল এই এক বাক্যের কথাটা শোনা মাত্র। জারার সাড়াশব্দ না পেয়ে নুহাশ কান থেকে ফোনটা সরিয়ে চেক করে দেখে কল কেটে গেছে কি না। না কল কেটে যায় নি তাহলে মেয়েটা কথা বলছে না। নুহাশ পুনরায় বলল।

“হ্যালো জারা আমার কথা শুনতে পারছো।”

“হু।”

“তাহলে উত্তর দাও নি কেন?”

“কিসের উত্তর?”

“এই যে ভালোবাসি কথাটা বললাম আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তো কিছু শুনতে পারি নাকি।”

জারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসি কথাটা বলতে যাবে সাথে সাথে নুহাশ বলে উঠে, “আচ্ছা ব্যাপারটা কেমন জানি রোমাঞ্চকর রোমাঞ্চকর লাগছে না।”

নুহাশের কথা শুনে জারা ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলে, “কোন ব্যাপারটা?”

“এই যে দুজনের রুম পাশাপাশি অথচ দেখো ফোনে কথা বলতে হচ্ছে আমাদের।”

“হুম সত্যি রোমাঞ্চকর ব্যাপারটা।”

নুহাশ অবলীলায় বলে উঠে, “ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর থেকে কবে রোমান্টিক হবে বলে তো?”

জারার শরীর ঈষৎ কেঁপে উঠে। দু তিন বার চোখের পাতা জাপ্টালো। কিছু একটা ভেবে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, “আমি রাখলাম আমার পড়া আছে।”

বলেই কল কেটে দিয়ে বুকের বা পাশটা চেপে ধরে। বুকের উঠানাম বেড়ে গেছে। কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে। শরীরের লোম কূপ দাঁড়িয়ে গেছে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। নুহাশের বলা কথাটা কানে এখনও বাজচ্ছে কবে তাদের ব্যাপারটা রোমান্টিক হবে? রোমান্টিক মানে তো? জারা লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। নুহাশ পুনরায় জারাকে কল দেয় কিন্তু জারা কল ধরল না।

_________

জাহিন আধশোয়া হয়ে আছে কোলে তার ল্যাপটপ আর বার বার দেয়াল ঘড়ি দিকে তাকাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে এগারোটার ঘরে পৌঁছে গেছে কিন্তু মিসেস অয়ন্তির এখনো রুমে আসার নাম নেই। অয়ন্তির অপেক্ষা করতে করতে জাহিনের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু জাহিনের ধৈর্যের বাঁধ পুরোটা ভাঙ্গতে না দিয়ে অয়ন্তি রুমে এসে হাজির হয়। রুমে ঢুকে জাহিনের দিকে এক পল তাকিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। জাহিন ভ্রু কুঁচকে বউয়ের কার্যক্রম গুলা দেখল। এই মেয়ের মনে চলছেটা কি? তাকে কি ইগনোর করছে নাকি কোনো ভাবে। ইগনোর করে কোনো লাভ নেই দিন শেষে তার বুকে এসেই মাথা রাখতে হবে।

অয়ন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুপচাপ জাহিনের বা পাশে এসে অন্য দিকে মুখ করে গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। জাহিন ঘাড় বাঁকিয়ে অয়ন্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। হঠাৎ হলোটা কি এই মেয়ের? এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে টেবিলের উপরে রাখে। আগের বউয়ের কি হয়েছে তা দেখতে হবে তারপর অন্য কিছু। জাহিন উঠে গিয়ে লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে অয়ন্তির পাশে শুয়ে অয়ন্তির কাঁধে হাত রেখে ধীর গলায় বলল।

“অয়ন্তি কি হয়েছে তোমার?”

অয়ন্তি চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল, “কিছু হয় নি আমার।”

“রাগ করেছে আমার উপরে?”

“না।”

“আচ্ছা আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে সরি।”

“আপনি সরি বলছেন কেন? আর আমি সত্যি আপনার উপরে রাগ করে নি।”

“তাহলে আমার দিকে ফিরো।”

জাহিন অয়ন্তিকে জোর কাটিয়ে নিজের দিকে ফিরালো। জাহিন অল্প ঝুঁকে আছে অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তির চোখের পাতা বন্ধ দেখে জাহিন নরম স্বর বলল, “চোখ খুলো।”

অয়ন্তি চোখ খুলল। জাহিন অয়ন্তির গালে হাত রেখে বলল, “কি হয়েছে আমার বউটার না বললে বুঝবো কি করে?”

অয়ন্তিও জাহিনের গালে হাত রেখে ধরা গলায় বলল, “আপনি আমায় কোনো দিন ছেড়ে চলে যাবেন না তো।”

জাহিন থমকালো অয়ন্তির কথা শুনে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে মৃদু হেসে অয়ন্তির নাক আলতো হাতে টেনে কৌতুকের স্বরে বলে, “আমার এত সুন্দর একটা বউ থাকতে তাকে ছেড়ে কোন দুঃখে চলে যাবো শুনি।”

অয়ন্তি সিরিয়াস হয়ে বলল, “আমি একদম মজার মুডে নেই নেতা মশাই।”

জাহিন দুষ্টুমির স্বরে বলে, “তাহলে ম্যাডাম রোমান্টিক মুডে আছেন বুঝি।”

অয়ন্তি জাহিনকে ধাক্কা দিয়ে রেগে বলে, “খালি উল্টাপাল্টা কথা।”

জাহিন হাসতে হাসতে বলে, “বউয়ের সাথেই তো পুরুষরা উল্টাপাল্টা কথা বলবে নাকি পাশের বাড়ির ভাবির সাথে বলবে। তখন তো বউ আবার রেগে আগুন হয়ে যাবে।”

অয়ন্তি চোখ মুখ কুঁচকে বলে, “আপনার কি একটু চিন্তা হচ্ছে না।”

“উমম! কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা হবে আমার?”

“ওই যে কাকে চড় মে’রেছে তাকে নিয়ে।”

জাহিন শব্দ করে শ্বাস নিয়ে বলে, “ওসব নিয়ে পরে চিন্তা করব। আসো একটু প্রেম করি। খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে আমার।”

বলেই জাহিন অয়ন্তির গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে দেয়। অয়ন্তি দু হাত দিয়ে জাহিনকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।”

জাহিন মুখ দিয়ে “চ” বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলে, “বউয়ের যাতে প্রেম প্রেম পায় তার জন্য কি করতে হয় জানো?”

অয়ন্তি ভ্রুযুগল কুঁচকে বলে, “কি করতে হয়?”

জাহিন মুচকি হেসে মুখ উঁচু করে অয়ন্তির কপালের মধ্যস্থানে গভীর এক চুম্বন বসিয়ে সরে আসে। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে জাহিনের ছোঁয়া অনুভব করে চোখ মেলে তাকায়। জাহিন নেশাক্ত গলায় বলে।

“প্রথমে বউয়ের কপালে একটা গভীর চু’মু খেতে হয়। তারপর কি করতে হয় জানো?”

অয়ন্তি চুপ করে রইল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল স্বামীর পানে। জাহিন নিজ থেকেই বলতে শুরু করল, “তারপর বউয়ের দু গালে আলতো করে চু’মু খেতে হয়।”

জাহিন নিজের কথা মতো অয়ন্তির দু গালে শব্দ করে চু’মু খেয়ে মুখ তুলে অয়ন্তির দিকে তাকায়। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে রয়েছে দেখে জাহিন মুচকি হেসে বলে, “তারপর নাকের অগ্রভাগে চু’মু খেতে হয়।”

জাহিন অয়ন্তি নাকের ডগায় চু’মু খেয়ে, থুতুনিতেও চু’মু বসায়। অয়ন্তি চোখ মেলে তাকায়। জাহিন এবার অয়ন্তির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে নিবে সাথে সাথে অয়ন্তি জাহিনের মুখ চেপে ধরে। জাহিন অসহায় চোখে বউয়ের দিকে তাকায়। অয়ন্তি জাহিনের মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে বলল।

“আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে না আমার খুব ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আপনিও ঘুমান আর আমাকেও ঘুমাতে দিন।”

বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। জাহিন তব্দা মেরে রইল। কি হলো এটা? এভাবে তাকে ইনসাল্ট করল। বউয়েরা আর যাই পারুক কিংবা না পারুক পুরুষদের কিভাবে টাইট দিতে হয় এটা খুব ভালো করে জানে। কিন্ত তা বলে এভাবে তাদের ইমোশন নিয়ে খেলা করবে। জাহিনের মনে হচ্ছে আগে যেভাবে থাকত সেভাবে থাকলেই ভালো ছিল। কেন যে সেই‌ এই মধু খেতে গেল গতকাল রাত্রে? জাহিন প্রচন্ড অভিমান নিয়ে নিজেও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব। জাহিন মনে মনে নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে বসল সে যেচে আর অয়ন্তির কাছে কখন যাবে না। অয়ন্তি তার কাছে আসলে আসবে না আসলে নাই। হুমম।

#চলবে

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

আমার সব গল্পের লিংক একত্রে
https://www.facebook.com/110256437345301/posts/309897647381178/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here