হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪৫

0
31

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৫

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

গৌধূলী লগ্ন। পখিরা আকাশে ঝাঁক বেঁধে হুটোপুটি খাচ্ছে। সূর্য্যি মামা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে যার দরুণ পশ্চিম আকাশ জুড়ে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে অপর প্রান্তে থাকা মানুষজন সূর্য্যি মামাকে অনায়াসে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে‌ পারবে কিন্তু চাইলে কি সব কিছু ছোঁয়া যায়। দূর থেকে ওই দিকের আকাশটা কাছে মনে হলেও আকাশ যে তার থেকে বহু দূর। ঠিক তেমনটা হয়েছে লাবীবের ক্ষেত্রে। লাবীব চাইলেও অয়ন্তিকে ছুঁতে পারছে না অয়ন্তি যে তার থেকে বহু দূরে।

লাবীব একটা কাজে এসেছিল রেস্টুরেন্টে। কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিতে নিবে তখনই নজর পড়ে অয়ন্তির উপর। অধর জোড়া তার আপনাআপনি আলগা হয়ে যায়। অয়ন্তি গাড়ি থেকে নামছে আর তার সাথে নুহাশ, জারা আর আহান। অয়ন্তির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুব সুখে আছে। লাবীব নির্নিমেষ ভঙ্গিতে চেয়ে আছে‌ হাস্যজ্জ্বল অয়ন্তির দিকে ঠোঁটের কোণে তার মৃদু হাসি। যেই হাসিতে রয়েছে শত শত দুঃখ বেদনা। লাবীব গাড়ির কাঁচের উপরে নিজের বা হাতটা রেখে অয়ন্তিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। এই ছোঁয়াতে যে অয়ন্তির পরশ পাওয়ার নয়। লাবীব গাড়ির জানলার কাঁচ নামিয়ে জাহিনকে খুঁজার চেষ্টা করে কিন্তু না জাহিন নেই। তার মানে জাহিন অয়ন্তির সাথে আসে নি। অয়ন্তিরা মলে ঢুকে গেছে। তা দেখে লাবীব তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে নিজেও মলে ঢুকার প্রস্তুতি নেয়।

অয়ন্তি আর জারা নিজেদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্যই মূলত শপিংমলে এসেছে। কিন্তু তাদের সাথে কে আসবে তা নিয়ে একটু জামেলা হয়েছিল। তারপর ঠিক হলো নুহাশ আসবে তাদের সাথে। জাহিন আসতে পেরে নি তার একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং থাকার জন্য না হলে আসত। নুহাশ আহানকে নিয়ে ঘুরছে আর অন্য দিকে অয়ন্তি আর জারা নিজেদের জন্য কেনাকাটা করছে। জারার আর কিছু দিন পরে বোর্ড পরীক্ষা তার জন্য ঘড়ি কেনা দরকার তাই দুজনে ঘড়ির দোকানে এসেছে। জারা ঘড়ি পছন্দ করতে ব্যস্ত অন্য দিকে অয়ন্তির নজর পড়ে একটা ঘড়ির উপর। ঘড়িটা তার খুব পছন্দ হয়েছে জাহিনের জন্য। কিন্তু কিনবে নাকি কিনবে না ভেবে দু টানায় পড়ে গেছে। আজ পর্যন্ত জাহিনকে খুব একটা সচরাচর ঘড়ি পড়তে দেখি নি তাই মন স্থির করতে পারছে না কি করবে এটা ভেবে? জারা একটা ঘড়ি পছন্দ করে অয়ন্তির কাছে এসে বলে।

“ভাবি দেখো তো ঘড়িটা কেমন?”

অয়ন্তিকে কোনো রেসপন্স করতে না দেখে জারা অয়ন্তির চাওনি অনুযায়ী সামনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে অয়ন্তির মানোভাব। জারা মুচকি হেসে অয়ন্তিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে, “কি ভাবি ঘড়িটা বুঝি পছন্দ হয়েছে ভাইয়ার জন্য নিয়ে নাও ঘড়িটা। দেখতেও সুন্দর আছে ঘড়িটা, যদিও বা ভাইয়া খুব একটা ঘড়ি হাতে পড়ে না কিন্তু তুমি গিফট করলে অবশ্যই পড়বে।”

অয়ন্তি জারার কথা শুনে নিজের হুসে ফিরে এসে বলে, “না না আমি এমনই দেখছিলাম।”

জারা মাথা নাড়াতে নাড়াতে মজা করে বলে, “হুম হুম বুঝতে পেরেছি।”

জারা কথাটা বলে দোকানদারকে বলে, “আঙ্গেল ওই যে কালো ঘড়িটা আর এই ঘড়ি দুটো প্যাক করে দিন।”

অয়ন্তি নাকচ করে জারাকে বলে, “জারা ওই ঘড়িটা নেওয়া লাগবে না।”

“উমম বেশি কথা বলো না তো।”

অয়ন্তি আর কিছু বলল না। তাদের দুজনে কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। অয়ন্তির বেশি কিছু কেনার নেই যা আছে জারার।এমন সময় নুহাশ জারাকে কল করে। জারা নুহাশের কল দেখে অয়ন্তিকে বলে, “ভাবি তুমি ঘুরে দেখো চারপাশটা আমি একটু আসছি।”

“হুমম।”

জারা ওদিকটায় চলে যায়। অয়ন্তি ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশের দোকানের সব কিছু দেখে দেখে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই জারার কল আসে অয়ন্তির ফোন। অয়ন্তি কল‌ ধরতেই ওপাশ থেকে জারা বলে।

“ভাবি আমরা নিচে চলে এসেছি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি নিচে আসো।”

“আচ্ছা।”

অয়ন্তি আর দেরি না করে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো। কয়েকটা সিঁড়ির ধাপ পেরোতেই অঘটন ঘটে গেল তার সাথে। আকস্মিক শাড়ির কুচির সাথে পা লেগে অয়ন্তির দেহ খানা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়, সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল ভয়ে, আজ আর রক্ষে নেই তার। চাপা গলায় চিৎকার করে উঠে, হাত থেকে পড়ে যায় ব্যাগ। পড়ে যেতে নিবে তৎক্ষণাৎ অনুভব করল কারো শীতল, বলিষ্ঠ, পেশিবহুল হাত তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে পেঁছিয়ে ধরেছে তার কোমর। অয়ন্তির শরীরটা টেনে নিয়ে যায় কেউ নিজের বুকের অতি নিকটে যার দরুণ মানষুটির বুকের উঠানামা স্পষ্ট শুনতে পারছে সে। অয়ন্তির ঘাড়ে আঁছড়ে পড়ছে মানুষটির গরম ভারী নিঃশ্বাস। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করেই ভয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। কিয়ৎক্ষণ পরেই ভেসে আসলো এক আবেগে ভরা শান্ত কন্ঠস্বর।

“ভয় পাওয়ার কিছু হয় নি পড়ার আগেই তো ধরে নিয়েছি আমি। শান্ত হও প্লিজ।”

অয়ন্তি চমকে তাকায়, এই কন্ঠ এই‌ কন্ঠস্বর তার অতি পরিচিত। এই‌ কন্ঠস্বরের মালিকের সাথে অনেক বার কথা বলেছে সে ফোনে। তবে কি সেই মানুষটি তার নিকটে। অয়ন্তি তৎক্ষণাৎ মাথা তুলে সামনের দিকে তাকায়। কেঁপে উঠে সমস্ত কায়া, বিস্ময় অবিশ্বাস তার মুখশ্রীতে ফুটে উঠেছে। তার সামনে লাবীব দাঁড়িয়ে আছে তাও আবার তার এতটা নিকটে। অয়ন্তি তড়াক্ করে সরে গেল লাবীরের কাছ থেকে অস্বস্তিতে তার মুখ পাংশুটে হয়ে গেছে। পা দুটো যেন আটকে গেছে ফ্লোরের সাথে শত চেষ্টা করেও নিজের দেহটাকে নাড়াতে পারছে না অয়ন্তি। লাবীব এর মাঝে দৃঢ় কন্ঠে ডাক দিল।

“অয়ন্তি?”

অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠল। হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। শীতের মাঝেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। অয়ন্তির এমন অবস্থা দেখে লাবীব কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখার ভাঁজ ফেলে নম্র কন্ঠে প্রশ্ন করল।

“অয়ন্তি তুমি ঠিক আছো?”

অয়ন্তির কন্ঠ রোধ হয়ে এলো। চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, “না আমি ঠিক নেই আপনাকে এত মাস পরে দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না লাবীব। আপনি কেন আমার সামনে এসে এভাবে দাঁড়িয়েছেন?” কিন্তু শত চেষ্টা করেও কথাটা বলতে পারছে না। সিঁড়ির মাঝে আপাতত তারা দুজন ছাড়া কেউ‌ নেই। লাবীব অয়ন্তির বাহু ধরে ঝাঁকি দিয়ে উঁচু গলায় বলে।

“অয়ন্তি।”

অয়ন্তি নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে লাবীরের দিকে তাকায়। লাবীব অয়ন্তির চোখে‌ জল দেখে হকচকিয়ে উঠে। মেয়েটা কাঁদছে। লাবীব কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে অয়ন্তি নিচু হয়ে পড়ে থাকা ব্যাগটা তুলে এক প্রকার ছুটে পালিয়ে যায় এখান থেকে। লাবীব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। নিজেও অয়ন্তির পিছু নেওয়ার জন্য সিঁড়িতে পা ফেলতেই পায়ের সাথে কিছু একটা বারি লাগে। তাকিয়ে দেখে ছোট একটা বক্স লাবীব দুই একটা সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে কোমর বাঁকিয়ে বক্সটা তুলে নিয়ে খুলে দেখে একটা ঘড়ি। লাবীবের বুঝতে বাকি নেই এই ঘড়িটা কার জন্য অয়ন্তি কিনেছে। লাবীব ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বক্সটা নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।

অয়ন্তি হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়ির সামনে এসে থামে। অয়ন্তিকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে জারা অয়ন্তির কাছে এসে বিচলিত গলায় প্রশ্ন করে, “ভাবি কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”

অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, “কিছু হয় নি আমার জারা। তাড়াতাড়ি চলো এখান থেকে।”

অয়ন্তি তাঁড়াহুড়ো পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসে। জারা আর নুহাশ একে অন্যের দিকে তাকায়। হঠাৎ করে ভাবির কি হলো? এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? অয়ন্তি পুনরায় চেঁচিয়ে বলে।

“কি হলো জারা তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? গাড়িতে উঠো।”

জারা আর নুহাশ গাড়িতে উঠে বসে। নুহাশ গাড়ি স্টার্ট দেয়, গাড়ি কিছুটা দূর যেতেই লাবীব এসে পৌঁছায়। লাবীব অনিমেষ ভঙ্গিতে গাড়ির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। গাড়িটা মিলিয়ে যেতেই লাবীব মাটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বুকের বা পাশটা শক্ত করে চেপে ধরল। চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে বুকের বা পাশের জায়গাটা। এতটা যন্ত্রণা আর সইতে পারছে না। অয়ন্তি তাকে নিজের মন থেকে মুছে ফেললেও সে মুছতে পারছে না। আর হয়তো কোনো দিন মুছে ফেলতেও পারবে না অয়ন্তির নামের মেয়েটিকে।

________

রাত এগারোটা বাজে। অয়ন্তি সব কাজ শেষ করে রুমে এসেছে। রুমে এসে দেখে জাহিন কতো গুলা কাগজ পত্র নিয়ে বসেছে। সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত অয়ন্তি শান্তিতে থাকতে পারছে না। মনের মাঝে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। আর তার উপরে আবার ঘড়িটা হারিয়ে ফেলেছে, যার জন্য মনটা আরো বিষন্ন হয়ে আছে।। আজকের দিনটা যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। তাদের জীবনে লাবীব আবার কোনো প্রভাব ফেলবে না তো। জাহিনকে লাবীবের কথাটা জানানো দরকার কিন্তু কি করে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অয়ন্তি ধীর পায়ে হেঁটে বেডের এক কোণে বসে, অতি চিন্তায় বার বার দু হাত কচলাচ্ছে, আর ঠোঁট কামড়ে ধরছে। জাহিন মাথা তুলে চিন্তিত অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বলে।

“অয়ন্তি কি হয়েছে তোমার? এমন অস্থির লাগছে কেন তোমাকে? কিছু কি বলবে?”

অয়ন্তি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে তটস্থ করে জাহিনের দিকে ফিরে ভেঙে ভেঙে বলে, “আমার কিছু বলার আছে আপনাকে?”

“হুম বলো।”

“আসলে লা….।”

অয়ন্তি কথাটা বলে শেষ করতে পারল না তার মাঝেই জাহিনের ফোন বেজে উঠে। জাহিন কল ধরে শুধু বলে, “হুম আসছি আমি তোরা অপেক্ষা কর।” জাহিন কল কাটতেই অয়ন্তি জাহিনের কাছে এসে বিচলিত কন্ঠে বলে, “কি হয়েছে?”

জাহিন বসা থেকে উঠে অয়ন্তির সামনে এসে ঠোঁটর কোণে হাসি রেখে বলে, “কিছু হয় নি। আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে। তোমার কথা আমি পরে শুনবো কেমন। আর ঘুমিয়ে পড়ো অপেক্ষা করো না আমার জন্য। আমার আসতে হয়তো দেরি হবে।”

অয়ন্তি মাথা কাঁত করে সায় দিয়ে বলল, “হুম সাবধানে যাবেন।”

জাহিন ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ল। অয়ন্তি পুনরায় বেডে এসে বসলো। বলা হলো না লাবীবের কথাটা জাহিনকে। আচ্ছা লাবীবের কথাটা বললে কি জাহিন রাগ করবে। কিন্তু তারা তো সকলে জানতো তার আগে একটা বিয়ে হওয়ার কথা ছিল‌ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই বিয়েটা হয় নি। হয়তো জাহিনের সাথে তার জুড়ি ছিল বলে বিয়েটা হয় নি। আশা করা যায় জাহিন লাবীবের কথাটা শুনলে রাগ করবে না এতটুকু বিশ্বাস জাহিনের উপর আছে তার। এসব ভাবনার মাঝে আকস্মিক জাহিনকে পুনরায় রুমে আসতে দেখে অয়ন্তি বসা থেকে উঠে অবাক হয়ে বলে।

“কি হলো চলে আসলেন যে যাবেন না?”

জাহিন অয়ন্তির ধারে এসে পুরু কন্ঠে বলে, “যাবো তো! কিন্তু একটা কাজ অপূর্ণ রয়ে গেছে।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “কোন কাজটা অপূর্ণ রয়ে গেছে আবার?”

জাহিন আচমকা মাথা নুইয়ে অয়ন্তির অধর জোড়ায় নিজের অধর জোড়া মিলিয়ে শব্দ করে চুমু খেয়ে সরে আসে। অয়ন্তি চমকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ঠোঁট জোড়া আলগা হয়ে আছে তার। জাহিনের ঠোঁটের কোণে হাসি। অয়ন্তি কিছু বলার জন্য উদ্ধত হতে নিবে তখনই জাহিন অয়ন্তির কোমর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে এনে অন্য হাতটা অয়ন্তির গালে রেখে পুনরায় ডুবে যায় অয়ন্তির ঠোঁটের মাঝে। অয়ন্তিও আবেশে চোখ বন্ধ করে জাহিনের জ্যাকেটের কলার শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। জাহিনের বেসামাল হাতের পরশ অয়ন্তি পুরো শরীর জুড়ে বইতে শুরু করেছে। মিনিট পাঁচেক পরে জাহিন অয়ন্তির কাছ থেকে সরে আসে। অয়ন্তি এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। জাহিন তা দেখে মুচকি হেসে অধর জোড়া জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে অয়ন্তির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে।

“এভাবে চোখ বন্ধ করে থাকলে কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারি মিসেস অয়ন্তি। তখন কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। এমনিতে আমাকে বাইরে‌‌‌ যেতে হবে।”

অয়ন্তি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে জাহিনের বুকে দু হাত রেখে ধাক্কা দেয়। জাহিন কিঞ্চিৎ দূরে সরে যায়। অয়ন্তি দিশেহারা গলায় বলে, “চলে তো গিয়েছিলেন তো ফিরে এলেন কেন নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর জন্য।”

জাহিন মৃদু হেসে অয়ন্তির কপালে পড়ে থাকা চুল‌ গুলা তর্জনী দ্বারা সরিয়ে মোহনীয় কন্ঠে বলল, “রাতের বেলা বউকে ছেড়ে কি থাকা যায় বলো? তাই চলে যাওয়ার আগে বউয়ের একটু সঙ্গ নিতে এলাম। কিন্তু কে জানত বউ যে আমার সঙ্গ পেয়ে এতোটা মাতোয়ারা হয়ে যাবে।”

অয়ন্তি হতভম্ব হয়ে জাহিনের পানে তাকাল। এই লোক কবে থেকে এতোটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের হলো? আগে তো এমন ছিল না। আগে তো মনে হতো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারত না। কিন্তু এখন তো! অয়ন্তি বিড়বিড়িয়ে বলে, “এতোটা অভদ্র কবে থেকে হলো এই লোক?”

জাহিন অয়ন্তির কথা শুনে মুচকি হেসে বলে, “যবে থেকে তোমার সঙ্গ পেয়েছি তবে থেকে।”

অয়ন্তি এবার নিজের কোমর থেকে জাহিনের হাত সরাতে সরাতে রেগে বলল, “এই‌ আপনি যান তো আর সঙ্গ টঙ্গ দিতে হবে না আপনাকে আমায়।”

“ঠিক আছে চলে যাচ্ছি কিন্তু পরের বার কিন্তু সঙ্গর মাত্রাটা গভীর হবে।”

“উফফ আপনি যান তো।”

জাহিন হাসতে হাসতে বলে, “ঠিক আছে যাচ্ছি। আর রাত জাগবে না কিন্তু কেমন ঘুমিয়ে পড়বে। আমার আসতে দেরি হবে।”

“জি জি আমি তাড়াতাড়ি ঘুমাবো।”

জাহিন অয়ন্তির কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে, “আসি কেমন।”

জাহিন চলে যায়। অয়ন্তি রুমের লাইট নিভিয়ে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু চোখের পাতায় ঘুম এসে ধরা দিছে না লাবীবের চিন্তায়। লাবীবের কথাটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব জাহিনকে জানাতে হবে।

_________

জারা কোচিং থেকে বের হয়ে দেখে অদূরে নুহাশ প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে, চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কত সুদর্শন লাগছে দেখতে লোকটাকে। জারার ঠোঁটের কোণে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুঁটে উঠল। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা তার প্রেমিক ইস ভাবতেই তো সর্বাঙ্গে প্রশান্তির টেউ খেলে যাচ্ছে। নুহাশ জারাকে দেখার সাথে সাথে হাত উঁচু করে হাই দেয়। জারা আর দাঁড়িয়ে না থেকে নুহাশের দিকে অগ্রসর হয়। কোচিং ছুটি হওয়ার দরুণ অনেক মেয়েরা আছে তার মধ্যে কিছু মেয়ে নুহাশের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে জারা দাঁতে দাঁত চেপে নাকের পাটা ফুলিয়ে মনে মনে বলে।

“শাকচুন্নির দলেরা তোদের নজর ঠিক কর। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা একান্ত আমার বুঝলি।”

জারা নুহাশের সামনে এসে দাঁড়ায়। জারার এমন থমথমে চেহারা দেখে নুহাশ প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে সুন্দর মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছো কেন?”

জারা গম্ভীর গলায় বলল, “এমনি চলো আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে শো করতে হবে না।”

জারা কথাটা বলেই ধপধপ পায়ে হেঁটে প্যাসেঞ্জার সিট গিয়ে বসে পড়ে। নুহাশ চারপাশটায় নজর বুলিয়ে বুঝতে পারল আসল ব্যাপারটা। নুহাশ নিঃশব্দে হেসে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিল।

গাড়ির মাঝে পিনপিন নিরবতা। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নুহাশ আড় চোখে একবার চুপচাপ জারার দিকে তাকায়। এতটা জেলাস। অবশ্য প্রত্যেকটা মেয়েই তার প্রিয় মানুষটার পাশে অন্য কোনো মেয়েকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না। আকস্মিক জারা চেঁচিয়ে বলে উঠে।

“নুহাশ ভাই গাড়ি থামাও জলদি গাড়ি থামাও।”

জারার এমন ভাব চেঁচানো শুনে নুহাশ গাড়ি সাইড করে ব্রেক কষে হতভম্ব হয়ে বলে, “কি হলো এভাবে চেঁচিয়ে উঠলে কেন?”

“ফুচকা খাবো।”

নুহাশ কপালে ভাঁজ ফেলে বলে, “কি ফুচকা খাবে বলে কি এভাবে চেঁচাবে?”

জারা মেকি হাসি দিয়ে বলে, “বেশি এক্সাইটেড হয়ে চেঁচিয়ে ফেলেছি।”

“খুব ভালো করেছো চেঁচিয়ে।”

কথাটা বলে নুহাশ গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার জন্য উদ্ধত হতে নিবে তৎক্ষণাৎ জারা বলল, “কি হলো গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছো কেন? আমি ফুচকা খাবো তো।”

“অন্য দিন খেয়েও আজ নয়। আমার কাজ আছে।”

জারা জেদ ধরে বলে, “আমি আজকেই খাবো।”

বলেই গাড়ির দরজা খুলে জারা গাড়ি থেকে নেমে যায়। নুহাশ চিৎকার করে বলে, “জারা আমার কথাটা শুনো।”

কে শুনে কার কথা? জারা ফুচকার দোকানে গিয়ে ওলরেডি বসে পড়েছে। নুহাশের আর কি করার বাধ্য হয়ে সিট বেল্ট খুলতে খুলতে অসহায় হয়ে বলল, “এই মেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।”

নুহাশ গাড়ি লক করে জারার পাশের চেয়ারে এসে বসে আস্তে করে বলে, “অর্ডার দিয়েছো?”

“হুম।”

“কয় প্লেট অর্ডার দিয়েছো?”

জারা থমথমে গলায় বলল, “দশ প্লেট।”

নুহাশ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এতো টুকু মেয়ে দশ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়েছে ভাবা যায়। কি করে যে খায় এসব মেয়েরা বুঝে উঠতে পারে না নুহাশ। নুহাশ জারাকে খোঁচা মেরে বলল, “দশ প্লেট কম হয়ে গেল না আরো কয়েক প্লেট অর্ডার দেওয়া প্রয়োজন ছিল।”

জারা ছোট ছোট চোখ করে নুহাশের দিকে তাকাল। নুহাশ তার পরিবর্তে মুচকি হাসল। মূলত জারা ইচ্ছে করে বলেছে দশ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়েছে কিন্তু সেটা যে নুহাশ এমন বিদ্রুপ করে বলবে ভাবতে পারি নি। কিছুক্ষণ পরেই দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে আসলো দোকানদার। নুহাশ দুই প্লেট ফুচকা দেখে বলে।

“আর আটটা প্লেট কোথায়?”

জারা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “আমি দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়েছি।”

নুহাশ ভ্রু উঁচু করে বলে, “ওও আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়া শুরু করো।”

জারা ফুচকা খাচ্ছে আর তীক্ষ্ণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। অদূরে একটা গাছের নিচে নুহাশ একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলছে তারা নাকি দুজনে এক কালে ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড ছিল আর দেখো নুহাশ কেমন নির্লজ্জের মতো বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। মনে হচ্ছে জীবনে হাসে নি কোনো দিন। ইচ্ছে করছে দাঁত গুলা ভেঙ্গে দিতে। জারা দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

“দাঁড়াও তোমার হাসি আমি বের করছি।”

জারা উঠে গিয়ে দোকানদার মামাকে বলল, “মামা চারটা পাঁচ মরিচ দিয়ে একটা ফুচকা বানিয়ে দিন তো।”

দোকানদার মামা হতভম্ব হয়ে বলল, “এতো জ্বাল খাবেন।”

“হুম আপনি দিন।”

“আইচ্ছা।”

জারা ফুচকা বানিয়ে এনে নিজের প্লেটে রাখে। প্লেটে আরো চারটা ফুচকা আছে। নুহাশ মেয়েটার সাথে কথা বলে এসে জারাকে বলল, “ফুচকা খাওয়া শেষ।”

জারা বিরক্তিকর গলায় বলল, “হুম।”

“তাহলে ওই চারটা ফুচকা।”

জারা একটা ফুচকা হাতে নিয়ে বলল, “এটা তোমার জন্য।”

“না না আমি ফুচকা খাই না।”

“আজকে খেলে কিচ্ছু হবে না। নাও খাও।”

জারার ফুচকা খাওয়ানো নিয়ে এতোটা জোরাজোরি করতে দেখে সন্দেহ হলো নুহাশের। কিছু একটা ভেবে নুহাশ জারার কাছে থেকে ফুচকা নিজের হাতে নিয়ে বলে, “ঠিক আছে খাচ্ছি।”

নুহাশকে ফুচকা নিয়ে বসে থাকতে দেখে জারা বলল, “কি হলো খাও?”

“হুম খাচ্ছি তো।”

নুহাশ হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে, “জারা ওই দেখো ওই দিকে কি যেন।”

জারা ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনের দিকে তাকাতেই নুহাশ জলদি করে হাতের ফুচকাটা রেখে প্লেট থেকে অন্য একটা ফুচকা নিয়ে নেয়। জারা নুহাশের দিকে ফিরে বলে, “কই‌ কিছু তো নেই।”

নুহাশ মেকি হেসে বলল, “চলে গেছে তুমি দেখার আগেই।”

“ওওও আচ্ছা। তুমি খাও না ফুচকাটা।”

“হুম খাচ্ছি তো।”

নুহাশ হা করে মুখের ভেতরে ফুচকটা ঢুকিয়ে দেয়। জারা মনে মনে বলল, “খাও না খাও একটু পরেই টের পাবে কত মরিচে কত জ্বাল।”

নুহাশ ফুচকা খেয়ে ঢেকুর তুলে বলে, “খুব মজা তো খেতে ফুচকা। মেয়েরা এর জন্য বুঝি এত পাগল হয়।”

জারা স্তব্ধ, বিমুঢ়। অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইল নুহাশের পানে। এটা কি করে সম্ভব এত ঝাল কি করে নুহাশ খেলো? এই লোক কি দিয়ে তৈরি ওই দিন নুনে পোড়া কফি খেয়ে নিল অবলীলায় আর আজকে এত ঝাল খেয়ে নিল। একি অদৌ মানুষ নাকি অন্য কিছু। জারা শুকনো ঢোক গিলল। নুহাশ জারাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে।

“ওই ফুচকা গুলা শেষ করো আমি বিলটা দিয়ে আসি।”

নুহাশ চলে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে মনে মনে বলল, “কিছু তো একটা করেছো তুমি সেটা একটু পরেই বুঝতে পারব যখন তুমি নিজে খাবে ফুচকাটা।”

#চলবে

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

আমার সব গল্পের লিংক একত্রে
https://www.facebook.com/110256437345301/posts/309897647381178/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here