হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫০

0
13

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫০

নতুন দিনের সূচনা। ক্যালেন্ডারের পাতায় চলছে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটার ঘরে। সূর্যের দেখা মেলে নি এখনও চারিপাশ ঢেকে আছে ঘন কুয়াশায়। পাখিরা এই ঠান্ডায় নিজ নীড় থেকে বের হয় নি এখনও। কিন্তু মানুষজন তার জীবিকা নির্বাহের জন্য বের হয়েছে এই কনকনে ঠান্ডার মাঝে। বাইরে মানুষের কোলাহলের শব্দ কানে এসে পৌঁছাতে জাহিনের ঘুমের মাত্রা পাতলা হয়ে আসছে। ঘুমের মাঝে বুকের বাম পাঁজরের স্থানটা ভারি অনুভব করল। বা হাতটা চাইলেও নাড়াতে পারছে না পুরো অবশ হয়ে গেছে যার দারুণ জাহিন শক্ত করে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়। জাহিন আধবোজা অবস্থা চোখ মেলে তাকিয়ে নিজের বুকের উপরে তাকায়। অয়ন্তি তার বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। জাহিন তা দেখে পুনরায় চোখ বন্ধ করে এবার পুরোপুরি ভাবে চোখ মেলে ঘুমন্ত অয়ন্তির দিকে তাকায়। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। অয়ন্তির ভারি, উত্তপ্ত নিঃশ্বাস জাহিনের গলার কাছটায় আছড়ে পড়ছে। রাতে দুজনের একান্ত মিষ্টি মুহূর্তগুলা মনে পড়তে জাহিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ভেবেছিল নিজের হৃদয়ের গহীনে কাউকে স্থান দিবে না কিন্তু উপওয়ালা যে ওর জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল‌ সেটা কে জানত? এই‌ মেয়েটা যদি তার জীবন থেকে চলে যায় তাহলে সত্যি সে পাগল হয়ে যাবে। আপন মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা জাহিন পাঁচ বছর ধরে সয়ে আসছে এখন যদি এই যন্ত্রণা আবারো তাজা হয়ে উঠে তাহলে‌ সেটা সইতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। জাহিন বা হাতটা অয়ন্তির ঘাড়ের নিচ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে অয়ন্তি নিজের গুটিয়ে নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে জাহিনকে। জাহিন তা দেখে আর হাতটা সারলো না। তবে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে অয়ন্তির গালে লাল টকটকে হয়ে থাকা পিম্পলটা ছুঁয়ে দিল। অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে নেয়। জাহিন অয়ন্তির ভ্রু কুঁচকানোকে বড্ড উপভোগ করল। পুনরায় জাহিন অয়ন্তির নাকে, ঠোঁটে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। তাতে অয়ন্তির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটল। পিটপিট চোখে অয়ন্তি তাকাল। ভেসে উঠল জাহিনের হাস্যজ্জ্বল মুখখানা। অয়ন্তি আবারো চোখ বন্ধ করে কিছু একটা মনে পড়তে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তাড়ক্ করে উঠে বসে বলতে শুরু করল।

“ক’টা বাজে হুম? অনেক বেলা হয়ে গেছে মনে হয়।”

অয়ন্তি চলে যেতে নিবে তৎক্ষণাৎ জাহিন অয়ন্তির হাত চেপে ধরে। অয়ন্তি জাহিনের ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে বলল, “কি হয়েছে?”

জাহিনের ভারি কন্ঠস্বর, “এমন করছো কেন?”

“কেমন করছি?”

“এই যে মাছের মতো ছটফট করছো।”

অয়ন্তি চোখ মুখ কুঁচকে বলে, “মাছের মতো আবার মানুষ কিভাবে ছটফট করে?”

জাহিন অয়ন্তিকে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকে এনে ফেলে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, “এতো ছটফট না করে শুয়ে থাকো।”

“শুয়ে থাকবো মানে বাড়ির সবাই কি ভাববে বাড়ির বউ যদি এতো বেলা অব্দি শুয়ে থাকে।”

জাহিন চোখ বন্ধ করে বলে, “সবাই ভাববে জামাইয়ের সেবা করছে বাড়ির বউ।”

“তা কি ধরণের সেবা করছি শুনি? সবাই তো জানে আপনি একদম সুস্থ আছেন।”

জাহিন অয়ন্তিকে বেডে শুইয়ে দিয়ে অয়ন্তির দিকে ঝুঁকে নিরেট গলায় বলল, “প্রেমের সেবা করছো তুমি।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি আজব কথা। আপনি এসব আজব আজব কথা কই…।”

অয়ন্তি আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই তার গলার ভাঁজে জাহিন নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়। অয়ন্তি প্রথম দিকে আবেশে চোখ বন্ধ করে জাহিনের উষ্ণ নরম ছোঁয়াগুলা অনুভব করলেও পরক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়ে জাহিনের কাঁধে হালকা চাপড় মেরে শক্ত কন্ঠে বলে।

“নেতা মশাই এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে সরুন আপনি। সারা রাত জ্বালিয়ে মেরেছেন এখন আবার সকালে শুরু করেছেন। কিছু প্রেম ভালোবাসা নিজের কাছে জমা রাখুন ভবিষ্যতের জন্য।”

জাহিন অয়ন্তির কানের লথিতে চুমু এঁকে দিয়ে বলে, “তোমার জন্য আমার হৃদয়ের ভান্ডারে জমিয়ে রাখা ভালোবাসা গুলা এতো সহজে ফুরাবে না অয়ন্তি।”

অয়ন্তি মুচকি হাসলো। মানুষটা সত্যি দিনকে দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে। অয়ন্তি কৌতুকের ন্যায় বলল, “আপনাকে কিন্তু সবাই পরে রাজনীতিবিদ নয় বউ পাগল বলবে।”

“বললে বলবে তাদের মুখ তো আর ধরে রাখতে পারব না আমি। আর বউকে যদি ভালোবাসলে আমাকে বউ পাগল বলে ঠিক আছে বলুক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।”

“ঠিক আছে ঠিক আছে হয়েছে এবার উঠুন।”

জাহিন মুখ তুলে অয়ন্তির ঠোঁটে ছোট করে চুমু এঁকে দিয়ে শান্ত গলায় বলল, “ভালোবাসি ভীষণ রকমের ভালোবাসি।”

অয়ন্তি মুদৃ হেসে জাহিনের গালে হাত রেখে জবাব দেয়, “ভালোবাসি নেতামশাই খুব ভালোবাসি আপনাকে।”

জাহিন অয়ন্তির হাতটা নিজের গাল থেকে সরিয়ে এনে অয়ন্তির হাতের পাতায় চুমু বসায়। দুজনে আরো কিছুক্ষণ ভালোবাসার খুনসুটিতে মেতে থাকল। জাহিন আর দেরি না করে‌ উঠে পড়ে তার নয়টার ভেতরে নির্বাচন অফিসে পৌঁছাতে হবে।

_________

নির্বাচন অফিসে ত্রিনভের সাথে জাহিন মুখোমুখি হয়েছে। ত্রিনভের চোখ মুখ কেমন রহস্যময় রহস্যময় লাগছে। ত্রিনভ জাহিনের দিকে দু কদম এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বলল।

“আপনার সাথে কানাকানি একটু কথা বলতে চাই যদি আপনার লোকেদের একটু দূরে সরে যেতে বলতেন তাহলে একটু ভালো হতো আর কি।”

জাহিন মুখ দিয়ে “চ” বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলল, “ঠিক আছে শুনি কি বলতে চাও কানাকানি।”

জাহিন নিজের দলের লোকদের দূরে সরে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। ত্রিনভ জাহিনের দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু জাহিনের কান সমান হতে পারছে না জাহিনের থেকে খাটো হওয়াতে। জাহিন তা দেখে সশব্দে হেসে উঠে। ত্রিনভ তাতে বড্ড অপমানিত হলো। জাহিন বলল।

“নিচু হতে হবে বুঝি।”

ত্রিনভ কিছু বলল না। শুধু স্থির চোখে জাহিনের দিকে তাকিয়ে রইল। জাহিন পুনরায় বলল, “দেখলে তো আমার সমসাময়িক হতে হলে তোমাকে কতটা কষ্ট করতে হবে। তবে আজ তোমাকে দেখে বুঝতে পারলাম খাটো মানুষদের মস্তিষ্ক সত্যি কুটনি বুদ্ধি দিয়ে ভরপুর।”

ত্রিনভ নিঃশব্দে হেসে বলল, “যাক কেউ তো আমার কুটনি বুদ্ধির প্রশংসা করল। তবে এটা মনে রাখবেন আমার মতো খাটো মানুষ চাইলে আপনার মতো লম্বা মানুষটাকে নিচু করে দিতে পারে ঠিক যেমন আপনি একটু আগে নিচু হতে চেয়েছেন।”

জাহিন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “তুমি কি বলতে চাইছো সেটা বলো চুপচুাপ।”

ত্রিনভ জিভ দ্বারা দাঁতের উপরের পাটি ঘর্ষণ করে অশালীন ভঙ্গিমা নিয়ে বলতে শুরু করল, “আপনার বউয়ের কাহিনী মানে অন্য পুরুষের সাথে পরক…..।”

পুরো কথাটা ত্রিনভ শেষ করতে পারলো তার আগেই জাহিন ত্রিনভের পায়ে গায়ের সর্বস্ব জোর দিয়ে পাড়া দিয়ে বসে। ত্রিনভ ব্যথায় চিৎকার করে নিচে বসে পড়ে। জাহিন ব্যতিব্যস্ত হয়ে করুন গলায় বলল।

“সরি সরি ত্রিনভ আমি আসলে বুঝতে পারি নি কখন যে তোমার পায়ে পাড়া দিয়ে ফেলেছি। আসলে চারিপাশে খুব মশা তো তাই পা রাখার জায়গা পাচ্ছিলাম না কখন যে তোমার পায়ে পাড়া দিয়ে বসেছি বুঝতে পারি নি। ইস খুব বেশি ব্যথা পেয়েছো বুঝি। আমার পায়ে আরো সু জুতা তোমার পায়ে স্যান্ডেল জুতা যার জন্য ব্যথাটা একটু বেশিই পেয়ে বসেছো।”

ত্রিনভ টের বুঝতে পারছে জাহিন ইচ্ছে করে পাড়াটা দিয়েছে। ঠিক আছে এর শোধও তুলবে। সবকিছু মস্তিষ্কে গেঁথে রাখছে এগুলার হিসাব কড়ায় গন্ডায় তুলবে। ত্রিনভ দাঁতে দাঁত চেপে নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল।

“ঠিক আছি আমি।”

জাহিন খোঁচা দিয়ে বলল, “আমি জানি তো তুমি ঠিক আছো কারণ তুমি স্ট্রং বয়।”

কথাটা বলে জাহিন নিজেও হাঁটু ভেঙ্গে বসে ত্রিনভের কানে কানে কিড়মিড় করে বলল, “আমার বউকে নিয়ে তোমার এতো চিন্তা না করলেও চলবে ত্রিনভ। আমার বউয়ের জন্য আমি আছি। তাই তোমাকে কষ্ট করে আমার কানে আমার বউয়ের সম্পর্কে বিষ না ঢাললেও চলবে। রাজনীতিতে বিষ ঢেলে যাচ্ছো ঢেলে যাও কিন্তু আমার দাম্পত্য জীবনে তুমি তোমার বিষ ঢালবে আর সেই বিষ আমি গ্রহণ করব তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। তাই নিজের সীমার ভেতরে থাকো ত্রিনভ সীমা লঙ্গন করো না।”

কথাগুলা বলে জাহিন সরে এসে অপরাধী ভাব ধরে বলে, “ইস কতটা ব্যথা পেয়েছে লাল হয়ে গেছে এক্কবারে।”

কথাটা বলে দাঁড়িয়ে নিজের দলের ছেলেদেরকে উদ্দেশ্য করে বল, “এই তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ওয়েন্টমেন্ট নিয়ে আয় দেখছিস না বেচারা পায়ে ব্যথা পেয়েছে।”

ত্রিনভ উঠে পা ঝাড়া দিয়ে ক্রোধ নিয়ে বলে, “লাগবে না অয়েন্টমেন্ট আমার। এসব আদিখ্যেতা দেখার দরকার নেই।”

জাহিন দু কাঁধ নাচিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল, “ঠিক আছে দেখালাম না আদিখ্যেতা। আসি কেমন ভালো থেকো।”

জাহিন চলে যায়। ত্রিনভ রাগী চোখে জাহিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। ত্রিনভের দলের লোক এসে বলল, “ভাই ওই হা রা মি জাহিনকে কিছু বললে না।”

“কিছু বলব না তবে করে দেখাবো।”

“কি করবে?”

“সময় আসলে ঠিক জানতে পারবি। তবে এটা জেনে রাখ এই‌ জাহিনের জীবনে আসল ভিলেনটা আমি আর অন্য কেউ না।”

জাহিন গাড়িতে বসে নুহাশকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আমার একজনের খোঁজ লাগবে।”

“কার খোঁজ?”

“তাশীদ সাখাওয়াত লাবীব।”

নুহাশ চিন্তিত গলায় বলল, “কে এটা?”

“যেটা বলছি সেটা কর পাল্টা প্রশ্ন করবি না।”

“ঠিক আছে আমি খোঁজ নিচ্ছি।”

“পারিস যদি সন্ধ্যার মধ্যে খোঁজ নিয়ে আমার সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা কর।”

“ঠিক আছে।”

_________

সন্ধ্য হয়ে গেছে। পুরো শহর জুড়ে কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠে। রাস্তার ধারে হলদে রাঙা সোডিয়াম লাইটগুলা কুয়াশায় আবৃত হয়ে আছে। তার দিকে লাবীব এক নজরে তাকিয়ে আছে কাঁচ বিশিষ্ট রেস্টুরেন্টের দু তালা থেকে। যখন জানতে পেরেছে জননেতা শেখ আবরার জাহিন তার সাথে দেখা করতে চায়ছে তখন থেকে লাবীবের ভেতরে এক অজানা ভয় কাজ করছে। কিন্তু সেটা কোন বিষয় সেটা বুঝতে পারছে না। চেয়ার টানার শব্দ শুনে লাবীব ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকায়। জাহিনকে চোখের সামনে দেখে ভদ্রতা সূচক লাবীব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। লাবীবকে দাঁড়াতে দেখে জাহিন বসতে বসতে বলে।

“আরে আরে উঠেছেন কেন বসুন।”

লাবীব বসল। জাহিন অমায়িক গলায় বলল, “কেমন আছেন?”

“জি ভালো! আপনি?”

“এই ভালো মন্দ মিলিয়ে আছি।”

লাবীব নম্র কন্ঠে বলল, “কেন দেখা করতে চেয়েছেন আমার সাথে যদি একটু বলতেন?”

“বলছি এতো তাড়া কিসের? আগে এই ঠান্ডা ঠান্ডা সন্ধ্যায় গরম গরম কফি খাওয়া যাক।”

জাহিন দু কাপ কফি অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পর ওয়েটার কফি সার্ভ করে দিয়ে গেল তাদের টেবিলে। জাহিন লাবীবের অস্বস্তি বুঝতে পেরে বলল, “বি ইজি লাবীব। আমার সামনে এতোটা অস্বস্তিতে থাকার কোনো দরকার নেই।”

“আমার একটু তাড়া আছে যদি তাড়াতাড়ি বলতেন কি বলতে চাইছেন আমাকে তাহলে আমার জন্য সুবিধা হতো।”

জাহিন কফির কাপে চুমুক দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল, “আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি তারপরও মুখের ভাষায় বলছি, অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে থাকেন লাবীব।”

“মানে।”

“আমি জানি আপনার সাথে অয়ন্তির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কোনো এক কারণে বিয়ের দিন বিয়েটা হয় নি। বিয়েটা কেন হয় নেই সেই অতিত আমি জানতে চাই না। শুধু এই টুকু আমি বলব আপনি অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে থাকবেন।”

লাবীব ধীর গলায় বলল, “আমি অয়ন্তির কাছ থেকে দূরেই আছেই।”

জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “তাহলে ওই দিন শপিং মলে অয়ন্তির কাছে এসেছিলেন কেন?”

“ও পড়ে যাচ্ছিল তাই ওকে ধরতে বাধ্য হয়েছি।”

“তো আপনাকে বাধ্য হতে কে বলেছে? পড়ে যেতো ও।”

লাবীর হতভম্ব হয়ে বলল, “মানে আপনার স্ত্রী যদি পড়ে ব্যথা পেতো তাহলে কি আপনি খুশি হতেন?”

“অবশ্যই আমি খুশি হতাম না। কিন্তু এই কথাটা তো উঠতো না যে আমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ।”

“মানে।”

“মানেটা খুব সোজা আপনার জন্য হয়তো আমার স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা উঠতে পড়তো। অয়ন্তি এখন কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। পুরো শহর ওকে চিনে শেখ আবরার জাহিনের স্ত্রী হিসেবে। তার স্ত্রীকে যদি‌ অন্য কোনো পুরুষের কাছাকাছি দেখে কেউ তাহলে কি কথা উঠতে পারে সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না।”

লাবীব টের বুঝতে পারছে জাহিনের কথার মানে কি! সত্যি তো অয়ন্তি এখন আর কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। সবাই তাকে শেখ আবরার জাহিনের স্ত্রী হিসেবে চিনে। তার কাছে যাওয়াটা সত্যি ভুল হয়েছে। কিন্তু কাছে না গিয়েও তো কোনো উপায় ছিল না। ভালোবাসার মানুষটাকে কি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখতো। লাবীবকে নিরব থাকতে দেখে জাহিন বলল।

“কি ভাবছেন?”

লাবীব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “কিছু না। আমার জন্য অয়ন্তির চরিত্রে কালি লাগবে না মিস্টার শেখ। আমি অয়ন্তির সামনে কোনো দিন পড়বো না। আর অয়ন্তিও হয়তো চায় না আবার আমাদের দেখা হোক।‌ তাই আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।”

লাবীবের কথার ভাঁজে যে একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে জাহিন বুঝতে পারছে। এক তরফা ভালোবাসা জিনিসটা বড্ড ভয়ানক। না পারে গিলতে না পারে ফেলতে। জাহিন ভরাট কন্ঠে বলল।

“ভালোবাসেন অয়ন্তিকে?”

লাবীব কথাটা শুনে মৃদু হেসে বলল, “প্রশ্নের উত্তরটা না হয় অজানা থাক। শুধু এটাই চাইবো অয়ন্তিকে সুখে রাখবে‌ন কোনো দুঃখ ওকে ছুঁতে দিবেন না প্লিজ।”

জাহিন শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। লাবীব পুনরায় বলল, “আপনাকে আমার একটা কথা বলার আছে?”

“কি কথা?”

“অয়ন্তির কিডন্যাপিং বিষয় নিয়ে?”

জাহিন কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখে ফেলে বলে, “কি জানেন?”

“এতো কিছু জানি না আমি। আসলে অয়ন্তিকে যারা কিডন্যাপ করেছিল তাদের কাছ থেকে আমিই সরিয়ে নিয়েছিলাম ওকে।”

জাহিন অবিশ্বাস্য গলায় বলল, “আপনি অয়ন্তিকে ওই পোড়া বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।”

“হুমম আর ভেবেছিলাম ওকে আপনার কাছে সুস্থ ভাবে পৌঁছে দিবো। কিন্তু আমি গাড়ি পার্ক করে ওর জন্য খাবার আনতে গিয়ে এসে দেখি ও আমার কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। তারপর যখন ওকে খুঁজতে বের হলাম কিছু দূর যাওয়ার পরেই দেখি আপনি পেয়ে গেছেন অয়ন্তিকে। যাই হোক আমার জন্য আপনাদের সাংসারিক জীবনে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমি নিজেকে আড়ালে রেখে দিলাম।”

“ধন্যবাদ আপনার জন্যই আজ অয়ন্তিকে আমার জীবনে পেয়েছি। যদি ওই দিন আপনি অয়ন্তিকে বিয়ে করতে আসতেন তাহলে হয়তো আপনি আমার জায়গাটাতে থাকতেন।”

“আমার ভাগ্যে ছিলো না অয়ন্তি, ও‌ আপনার ভাগ্যেই ছিল।”

জাহিন কিছু বলতে নিবে তখনই ফোন বেজে উঠে। ফোনে আসছি বলে লাবীবকে বলে, “আমাকে যেতে হবে। অন্য কোনো একদিন জমে থাকা কথাগুলা বলা হবে।”

জাহিন লাবীবের সাথে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিলো। লাবীব প্যান্টের পকেট থেকে একটা ঘড়ি বের করল যেটা অয়ন্তি জাহিনের জন্য কিনেছিল ওই দিন। লাবীব ভেবেছিল জাহিনকে ঘড়িটা ফেরত দিবে কিন্তু পরে ভাবলো ভালোবাসার মানুষটার পছন্দের একটা জিনিস তার কাছে রইলো তাতে ক্ষতি কি? লাবীব ঘড়িটার পানে তাকিয়ে কাতর গলায় বিড়বিড় করে বলল,

“এই‌ জনমে তোমাকে পেয়েও আমার পাওয়া হলো না অয়ন্তি। যদি পর জনম বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে তোমাকে যেন আমি পাই অয়ন্তি।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here