হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫১

0
18

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫১

শারাফ নির্বাচনের চিঠি হাতে পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ও চিঠিটা খাম থেকে খুলে দেখে নি কোথায় ডিউটি পড়েছে তার। থানা থেকে বাসায় এসে বিছানার উপরে চিঠির খামটা রেখে গা থেকে ইউনিফর্ম খুলে সোজা ওয়াশরুমে চলে‌ যায়।‌ ফ্রেশ হয়ে বেডের উপরে বসে আর তিন দিন পরেই নির্বাচন। হাত বাড়িয়ে খাম থেকে চিঠিটা বের করল। চিঠির ভাঁজ খুলে পুরো চিঠিতে নজর বুলাতেই শারাফের চোখ কপালে। সন্ধ্যাপুরে এক নাম্বার কেন্দ্রে তার ডিউটি পড়েছে। শারাফ বসা থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলল।

“কি সন্ধ্যাপুরে আমার ডিউটি পড়েছে যেখানে লিজার গ্রামের বাড়ি সেখানে।”

শারাফ সারা ঘরময় জুড়ে পায়চারি করতে করতে বলল, “আচ্ছা সন্ধ্যাপুরে তো দুইটা কেন্দ্র এখন যেই কেন্দ্রেটা আমার আন্ডারে লিজা কি সেই কেন্দ্রে আসবে ভোট দিতে নাকি অন্য কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে।”

শারাফ মাথাটা উপরে তুলে বলল, “হে আল্লাহ লিজা যেন এক নাম্বার কেন্দ্রে আসে ভোট দিতে। ওকে শুধু এক নজর দেখতে চাই।”

শারাফের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। লিজাকে কল করে জেনে নেওয়া যেতে পারে কথার ছলে ছলে লিজা কোন কেন্দ্রে এসে ভোট দিবে কিন্তু মেয়েটা আজকাল তার কল ইগনোর করে। কল করলেই এক কথা কে আপনি, কি আপনার পরিচয়, নাম কি ইত্যাদি? আরে এতো পরিচয় জানার জন্য পাগল হওয়ার কি আছে? ক’দিন পর তো ঠিকই জানতে পারবে। শারাফ লিজার নাম্বারটা বের করে যেই কল দিতে যাবে তখনই আকস্মিক শারাফের ফোন বেজে উঠে। নুহাশ কল করেছে তাকে, “হুম নুহাশ বল?”

“নিচে নাম।”

শারাফ ভ্রু কুঁচকে বলল, “নিচে নামবো মানে? তুই কই?”

“তোর অ্যাপার্টমেন্টের নিচে দাঁড়িয়ে আছি।”

“তাহলে উপরে আয় নিচে কি করোছ?”

“না তুই নিচে নাম দরকার আছে।”

“এখন। ঠিক আছে পাঁচ মিনিট সময় দে আসছি।”

শারাফ শীতের জ্যাকেট, গলায় মাফলার ঝুলিয়ে, পায়ে ক্যাচ পড়ে অ্যাপার্টমেন্টের নিচে নামে। নিচে নেমে দেখে নুহাশ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শারাফ এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল।

“কি হয়েছে এতো জরুরি তলব?”

নুহাশ বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল, “উঠে বস।”

শারাফ নাক মুখ কুঁচকে বলল, “শালা বাইক নিয়ে এসেছিস কেন এই শীতের মাঝে। এমনিতেই ঠান্ডা হাওয়া তার উপরে বাইক চালালে ঠান্ডা বাতাসে তো মরে যাবো।”

“এই ঠান্ডায় মরবি না তাই‌ চুপচাপ উঠে বস।”

“কই‌ যাবো?”

“আগে উঠ দেখতেই পাবি কই যাবো?”

শারাফ বাইকে উঠতে উঠতে বলল, “তোর যন্ত্রণাটা।”

বাইক এসে থামল ছোট খাটো একটা কফি শপে। শারাফ বাইক থেকে নেমে দু হাত একসাথে ঘর্ষণ করতে করতে বলল, “ভাই জমে গেছি রে ঠান্ডায়।”

নুহাশ বাইকের ঘাড় লক করে বলল, “বুঝলাম না তুই এমন করচ্ছিস কেন? না হলে‌ যে রাতের পর রাত এই‌ শীতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ডিউটি করিস তখন ঠান্ডা লাগে না।”

“তখন তো‌ হাতে টাকা পাওয়ার একটা গরম থাকে তাই ঠান্ডাটা ঠিক গায়ে লাগে না।”

নুহাশ মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, “টাকার গরম না।”

“হো টাকার গরম। এবার ভেতরে চল ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি।”

নুহাশ দু কাপ ব্ল্যাক কফি অর্ডার করলে শারাফ বাঁধা দিয়ে বলল, “দু কাপে হবে না তিন কাপ দিন আমার দু কাপ ওর এক কাপ।”

ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে যায়। নুহাশ অবাক হয়ে বলল, “বুঝলাম না তোর জন্য দু কাপ কেন?”

“আমার ঠান্ডা বেশি লেগেছে তাই।”

নুহাশ নাক কুঁচকে বলল, “আর কত ডং ধরবি তুই।”

“আমার ডং না দেখে বল কি কারণে হঠাৎ এখানে নিয়ে এসেছি আমায়?”

“তোর কি ধারণা?”

“আমার সাথে ডেট তো করতে আসিস নি। নিশ্চয়ই তোর জীবনের দেবদাসের অজানা কাহিণী গুলা শুনাতে এনেছিস।”

নুহাশ মাথা নিচু করে ধীর গলায় বলল, “দেবদাস তার পারুর কাছে নিজের জমে রাখা অনুভূতিগুলো অনেক আগেই প্রকাশ করে ফেলেছে। তাই তো ভয় হয় কখন দেবদাসের জীবন থেকে তার পারু হারিয়ে যাবে।”

শারাফ হতভম্ব হয়ে বলল, “কি বললি তুই? জারার কাছে নিজের অনুভূতির কথাগুলা বলে দিয়েছিস।”

“বলেছি সাথে একটা ভুলও করেছি।”

শারাফ চিন্তিত হয়ে বলল, “ভুল! কি ভুল করেছিস? কোনো ভাবে কি তুই…..।”

শারাফের কথার মাঝেই নুহাশ কাতর গলায় বলে, “আমি পারছি না নিজের অনুভূতি গুলা আটকে রাখতে একবার ভুল করেছি কিন্তু আমার মন‌ বার বার উস্কে দেয় এই ভুলটা পুনরায় করার জন্য। সময়ের সাথে সাথে আমি সত্যি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি শারাফ।”

“বলে দে তুই জাহিন ভাইকে সবটা।”

“যদি না মানে তাহলে?”

“বলে তো দেখ কি হয়?”

নুহাশ তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলল, “যে বাড়ির নুন খেয়েছি‌ ছোট থেকে সেই অনাথ ছেলেটা যদি হঠাৎ করেই সেই বাড়ির এক মাত্র মেয়ের হাত চেয়ে বসে তাহলে কি তারা ছেলেটার হাতে তুলে দিবে মেয়েটাকে?”

শারাফ কিছু বলতে নিলে থেমে যায় ওয়েটারকে আসতে দেখে। ওয়েটার কফি দিয়ে চলে যায়। শারাফ বলতে শুরু করল, “দেখ নুহাশ ভালোবাসা এত সব চিন্তা করে হয় না। মোট কথা জারা তোকে ভালোবাসে। আর এমনও তো হতে পারে জারার মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই মেনে নিলো তোদের সম্পর্কটা।”

নুহাশ নৈঃশব্দে হেসে বলল, “জানিস এই আটাশ বছরের জীবনে এই প্রথম বার এতোটা আফসোস হচ্ছে এটা ভেবে আমার নিজস্ব কোনো পরিবার নেই কেন? যদিও বা পরিবার ছিল কিন্তু সেই পরিবারটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।”

“দেখ ভাই যেই মানুষগুলা তোকে নতুন একটা জীবন দিয়েছে সেই মানুষগুলা আর যাই হোক তোদের জীবন নষ্ট করবে না। তোকে জাহিন ভাই অনেক ভরসা করে। এমনও তো হতে পারে ভরসা জের ধরে জারাকে তোর হাতে তুলে দিলো।”

“ভরসা! জাহিন ভাই আমাকে ভরসা করে দেখেই তো আমি চাইছি না ভাইয়ের ভরসাটা এভাবে ভেঙ্গে দিতে।”

শারাফ কপট রেগে বলল, “জাহিন ভাইয়ের ভরসা ভাঙতে পারবি না আবার জারার প্রতি ভালোবাসাগুলো বিসর্জন দিতে পারবি না তাহলে কোন পথে যাবে তুই?”

“সব পথের দরজাই আমার জন্য বন্ধ।”

“তাহলে একটা কাজ কর গোপনে তোরা বিয়ে করে নে। আমি সব ব্যবস্থা করব।”

শারাফের মুখে এমন আশ্চর্যজনক কথা শুনে নুহাশ ভড়কালো। অবিশ্বাস্য গলায় বলল, “কি বলচ্ছিস তুই এসব মাথা ঠিক আছে তোর?”

“মাথা ঠিক আছে বলেই বলছি। জারাকে বিয়ে করে নে গোপনে। পরেরটা পরে দেখা যাবে। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে নিজের প্রিয় মানুষটাকে শক্ত করে বেঁধে নে নিজের বাহুডোরে। পরে যদি এই বিষয়টা জানাজানি হয় তখন হয়তো সকলে রাগারাগী করবে কিন্তু পরে সময়ের স্রোতের সাথে সাথে সবটা মেনেও নিবে।”

“তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে শারাফ তাই উল্টাপাল্টা বকছিস। সুস্থ মস্তিষ্কের একটা মানুষ কখন এমন অযৌক্তিক কথা বলে না।”

“বুঝতে পারছি আমার কথাটা ঠিক আমলে নিচ্ছিস না তুই কিন্তু ভেবে দেখ এটাই একমাত্র শেষ আশা। এর মাধ্যমে তুই নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে পারিস।”

নুহাশ কথা বলল না চুপ রইল। শারাফের এই প্রস্তাবে যদিও সে রাজি হয়ে পড়ে তাহলে জারা কি রাজি হবে এই দুঃসাহসিক কাজটা করতে। নুহাশ যেন দু টানায় পড়ে গেছে। কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। এক দিকে নির্বাচনের চিন্তা আরেক দিকে নিজের ভালোবাসার চিন্তা। কোন দিকে যাবে সে?

_______

নুহাশ সদর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে দরজা খোলার। কিয়ৎক্ষণ পরেই সদর দরজা খুলে দিলো কেউ। দরজা খোলার মালিকটা আর কেউ না স্বয়ং জারা। নুহাশ যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জারাকে উপেক্ষা করার কিন্তু‌ মোম যে বার বার নিজ থেকে আগুনের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে। জারাকে দেখে নুহাশের শারাফের বলা কথাটা মনে পড়েছে। আচ্ছা শারাফের কথাটা যদি বাস্তবে পরিণত করা হয় তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। নুহাশ নিজের ভাবনায় নিজেই‌ চমকে উঠে।‌ মনে মনে বলে‌ উঠে।

“না না এটা ঠিক নয়। আমি এই পরিবারের মানুষ গুলাকে‌ ঠকাতে পারব না আর যাই হোক।”

নুহাশ জারাকে পাশ কাটিয়ে চলে‌ যেতে নিবে তৎক্ষণাৎ জারা পেছন থেকে বলে উঠে, “নুহাশ‌ ভাই।”

নুহাশ থেমে‌ গিয়ে বলল, “হুমম।”

জারা নুহাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি কি কোনো‌ ভাবে‌‌ আমার উপরে রেগে আছো?”

নুহাশ নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসি খুশি হয়ে চারপাশটা নজর বুলিয়ে আস্তে বলল, “কে‌ বলেছে আমি আমার জানটার উপরে রেগে আছি।”

“ওই‌ দিনের পর‌‌ থেকে তুমি কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছো।‌‌ কেমন গা ছাড়া ভাব তোমার মাঝে। তুমি কি‌‌ কোনো‌ ভাবে এই সম্পর্কটা থেকে মুক্তি পেতে চাইছো?”

নুহাশ চমকে‌ উঠে জারার কথা শুনে। কি বলছে এই‌ মেয়ে? এখনও যেই সম্পর্কটার একটা নাম হয় নি সেই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাইছি মানে? নুহাশ কিছু বলতে নিবে তখনই জোহরা বেগমের গলার স্বর ভেসে আসে।

“কিরে তোরা দুজন এখানে কি করছিস?”

নুহাশ আর জারা নিজেদেরকে তটস্থ করে নেয়। জারা কিছু না বলে চলে যায়। নুহাশ বলল, “কিছু না বড় মা।”

“ওও! আচ্ছা জাহিন এখনও আসে নি।”

“না ভাইয়ের হয়তো আসতে একটু দেরি হবে। আসলে নির্বাচনের তো বেশি দিন বাকি নেই।”

“আচ্ছা যা বাইরে থেকে এসেছিস ফ্রেশ হো গিয়ে।”

নুহাশ নিজের ঘরের সামনে এসে থেমে গিয়ে জারার বন্ধ দরজার দিকে তাকায়। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। এই ভালোবাসা নামক পীড়া যেন প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। কবে এই পীড়া থেকে মুক্তি পাবে সে। আর এক সুখকর মুহূর্ত এসে ধরা দিবে হাতের শক্ত মুঠোয়। কিছু একটা করতে হবে তাতে যা হওয়ার হবে কিন্তু আগে এই নির্বাচনটা ভালোই ভালোই মিটে যাক তারপর। কিন্তু নির্বাচনের তেরো দিন পরেই যে এই বাড়িতে নেমে আসবে এক শোকের দিন। যেই দিনটার কথা গত পাঁচ বছরেও এই বাড়ির কারো মন থেকে মুছে যায় নি। এখনও সেই বিভীষিকাময় দিনটার কথা মনে পড়লে বুকের আহাজারি বেড়ে যায় এতোটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল সেই দিনটা।

________

জাহিন রাত সোয়া বারোটার দিকে বাড়িতে আসে। বাড়িতে ফোন করে আগেই জানিয়ে দিয়েছে তার আসতে দেরি হবে তাই তার জন্য কেউ যেন অপেক্ষা না করে। অয়ন্তি হাজার চেষ্টা করেও সে ঘুমাতে পারি নি। এপাশ ওপাশ করতে করতে সময় বয়ে গেছে। আসলে অয়ন্তির খুব বাজে এক স্বভাবে প্রভাবিত হয়েছে জাহিনের বুকে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারে না।

গাড়ির আওয়াজ শুনে অয়ন্তি বুঝতে পারে জাহিন এসেছে। অয়ন্তি নিজেই গিয়ে সদর দরজা খুলে দেয়। জাহিন সবে মাত্র পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা লক খুলতে যাবে ওমনি মুখের সামনে দরজা খুলে‌ যাওয়াতে জাহিন হকচকিয়ে উঠে। বার কয়েক বার চোখে পলক ফেলে অবাক হয়ে অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বলল।

“তুমি ঘুমাও নি এখনো?”

অয়ন্তি মজা করে বলে, “অয়ন্তি অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে এটা অয়ন্তির আত্মা দাঁড়িয়ে আছে।”

জাহিন অয়ন্তির সরু নাকটা টেনে দিয়ে বলল, “মজা করা হচ্ছে আমার সাথে বুঝি।”

“ভেতরে আসুন বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে।”

জাহিন ভেতরে ঢুকে সদর দরজা আটকে দেয়। জাহিন অয়ন্তির দিকে ফিরে বলল, “অয়ন্তি একটু কষ্ট করে আমার জন্য এক কাপ চা করে আনতে পারবে কাড়া লিকার দিয়ে।”

“আপনি যান আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

অয়ন্তি চা বানাতে চলল স্বামীর জন্য। জাহিন ঘরে ঢুকে গা থেকে জ্যাকেট খুলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে তারা মাথা ধুতে হবে আগে। বালুতে চুলের গোড়া ভরে আছে। নির্বাচন অফিসের বিল্ডিং এমনিতে পুরাতন যার জন্য ওয়ালের প্লাস্টার ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে। জাহিন ভুলবশত ওয়ালে মাথাটা হেলিয়ে দিলেই ছড়ছড়িয়ে বালু সিমেন্ট মাথা এসে পড়ে। যার জন্য এতো রাতে ঠান্ডার মাঝে চুল ধুতে হচ্ছে। অয়ন্তি চা করে নিয়ে আসে। ওয়াশরুমে পানি পড়ার শব্দ শুনে বুঝি জাহিন ওয়াশরুমে। কিয়ৎক্ষণ পরেই জাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হলো চুল মুছতে মুছতে। অয়ন্তির জাহিনের চুল ভেজা দেখে বলে।

“একি আপনি এতো রাতে গোসল করেছেন?”

“হুমম।”

“ঠিক আছে চা’টা খান তাহলে শরীরটা গরম হবে।”

অয়ন্তি চা আনতে যাওয়ার উদ্যত হতে নিলে জাহিন অয়ন্তির কব্জি চেপে ধরে বলে, “মাথাটা ভালো করে মুছে দাও তো।”

অয়ন্তি সরু চোখে তাকালো জাহিনের দিকে। জাহিন বউয়ের এমন চাওনি দেখে বলল, “হাত ব্যথা করছো তো তাই তোমাকে বলেছি।”

“ঠিক আছে বসুন।”

জাহিন বেডে এসে বসে। অয়ন্তি টাওয়াল হাতে নিয়ে ভালো করে জাহিনের ভেজা চুলগুলা মুছতে লাগল। জাহিন ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে অয়ন্তির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। অয়ন্তি জাহিনের এমন চাওনি দেখে বলল।

“কি দেখেন এতো?”

“তোমাকে দেখি।”

“সবসময়ই তো দেখেন তাহলে?”

জাহিন অয়ন্তির বাহু ধরে নিজের কোলে বসিয়ে অয়ন্তির কোমর জড়িয়ে ধরে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল, “তোমাকে আজীবন দেখলেও আমার এই দু চোখের তৃষ্ণা কখন মিটবে না অয়ন্তি।”

“হুম বুঝলাম।”

“কি বুঝলে?”

“এই যে আপনি দিন দিন কবি হয়ে যাচ্ছেন রাজনীতিবিদ থেকে।”

জাহিন আরেকটু নিবিড় ভাবে অয়ন্তিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অয়ন্তির বুকে মাথা রেখে মোহনীয় গলায় বলল, “কবি রুপটা শুধু মাত্র তোমার সামনে অন্যদের সামনে রাজনীতিবিদ।”

“হয়েছে আর কবি সাজতে হবে না চা’টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নিন।”

অয়ন্তি উঠে চায়ের কাপটা জাহিনের দিকে এগিয়ে দেয়। জাহিন নাক মুখ ছিটকে বলল, “চা খেতে ইচ্ছে করছে না কেন জানি।”

“তাহলে বললেন কেন চা বানানোর জন্য? আমি এতো কষ্ট করে বানিয়ে আনলাম।”

“ঠিক আছে দাও।”

জাহিন এক চুমুকে পুরো চা’টা শেষ করল। এমনিতেই চা কুসুম গরম হয়ে গেছে এই ঠান্ডায়। অয়ন্তি কাপ নিয়ে ঘর থেকে বেরুতে নিলে জাহিন বলল, “কই যাও?”

“কাপটা কিচেনে রেখে আসি।”

জাহিন উঠে দরজার‌ ছিনিকিনি লাগিয়ে অয়ন্তির কাছ থেকে কাপটা নিয়ে ওয়ারড্রোবের উপরে রেখে বলল, “এখন রাখার দরকার নেই সকাল বেলা রাখবে এখন ঘুমাবে চলো।”

বলেই অয়ন্তিকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে। অয়ন্তি জাহিনের বুকে মাথা রেখে প্রশ্ন করল।

“নির্বাচনের‌ দিন কি ভোট দিতে যাবো না আপনাকে?”

জাহিন সাফ সাফ গলায় বলল, “না যাবে না।”

“যাবো না কেন?”

“তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারবো না অয়ন্তি। তাই ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। ইভেন বাড়ির কোনো মহিলারা যাবে না ভোট দিতে।”

“ইস ভেবেছিলাম জীবনের প্রথম ভোটটা জামাইকে দিব। কিন্তু জামাই আমার সাফ সাফ গলায় না করে দিল দুঃখ পেলাম মনে।”

জাহিন সশব্দে হেসে উঠল। অয়ন্তি জাহিনের এমন হাসিতে রেগে জাহিনের বুকে আস্তে করে কিল মেরে বলল, “একদম হাসবেন না।”

“আচ্ছা হাসবো না। এখনও ঘুমাও সকাল বেলা উঠতে হবে আমাকে।”

জাহিন ক্লান্ত হওয়াতে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অয়ন্তি ঘুম আসছে তার দু চোখে। কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে। একবার জাহিনের বুকে তো আরেকটা বালিশে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম আসছে তার দু চোখে। কিন্তু তারপরও চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। কখন যে দু চোখে ঘুম এসে হানা দিয়েছে অয়ন্তির জানা নেই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here