হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪৪

0
309

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৪

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

নিঝুম রাত। চারিদিক নিস্তব্ধতায় ঘিরে থাকার কারণে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বাইরের দমকা হাওয়া এসে থাই গ্লাসের সাথে বারি খাচ্ছে। অয়ন্তি তার শব্দ শুনে চোখ মেলে তাকায়। ভেবেছিল জাহিন হয়তো তার কাছে পুনরায় আসবে কিন্তু না মশাই রাগ করে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে। অয়ন্তি ঘাড় ঘুরিয়ে জাহিনের পানে তাকায়। ইস বড্ড অভিমান করে ফেলেছে তার নেতা মশাই। অয়ন্তি মাথা তুলে জাহিনের মুখের দিকে তাকায়। জাহিন ঘুমিয়ে পড়েছে কি সেটা পরখ করার জন্য কিন্তু না মশাই ঘুমাই নি। জাহিনের চোখ বন্ধ থাকলেও চোখের পাতা পিটপিট করেছে, মাঝে মাঝে অঁধর জোড়াও ফুলাচ্ছে, ভ্রু জোড়া কুঁচ করে রেখেছে। অয়ন্তি মুচকি হাসে। বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ অভিমান করেছে এই লোক। এবার অভিমান ভাঙ্গার মিশনে নামতে হবে অয়ন্তিকে।

অয়ন্তি আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসে। দেখে নেয় জাহিনের পাশে কতটুকু জায়গা আছে আর সে জায়গাটুকুতে তার জায়গা হবে কি না। জায়াগটা দেখে মনে হচ্ছে তার জায়গা অনায়াসে হবে। অয়ন্তি জাহিনকে টপকে জাহিনের পাশে শুয়ে পড়ে। আকস্মিক এমনটা হওয়াতে জাহিন হকচকিয়ে উঠে চোখ বড় বড় করে অয়ন্তির পানে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করছে এই মুহূর্ত কি হলো এটা? জাহিনকে এমন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে তাকতে দেখে অয়ন্তি কপট রাগ দেখিয়ে বলে।

“কি হলো এভাবে না তাকিয়ে থেকে আমাকে ধরুন। আপনি কি চান খাট থেকে আমি ধপাস করে নিচে পড়ে কোমর ভাঙ্গি।”

জাহিন নিজেকে সামলে অয়ন্তির কথা মতো বা হাতটা অয়ন্তির পিঠের উপরে রেখে জড়িয়ে ধরে। অয়ন্তি মুচকি হেসে জাহিনের নাক টেনে বলে।

“নেতা মশাই বুঝি অভিমান করেছে আমার উপরে?”

জাহিন থমথমে গলায় বলল, “কে বলেছে অভিমান করেছি তোমার উপরে আমি?”

“উমম! অভিমান করে নি বুঝি নেতা মশাই আমার উপরে, তাহলে রাগ করেছে?”

জাহিন অয়ন্তির দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে শক্ত গলায় বলে, “না রাগও করে নি।”

অয়ন্তি দুই ভ্রু উঁচু করে বলে, “ওও।”

জাহিন বলছে সে রাগ অভিমান করে নি। কিন্তু কন্ঠে ঠিকই রাগ অভিমান দুটোই মিশে একাকার হয়ে আছে। অয়ন্তি নিচের ঠোঁট কামড়ে প্রশ্ন করল, “আচ্ছা বরদের যাতে রাগ, অভিমান কমে যায় তার জন্য বউদের কি করতে হয় আপনি জানেন?”

জাহিন চমকায় অয়ন্তির কথা শুনে। তার কথা তাকেই শোনাচ্ছে। কত্ত পাজি এই মেয়ে। কিন্তু করতে কি চাইছে এই মেয়ে? জাহিন কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলে।

“কি করতে হয়?”

অয়ন্তি মৃদু হেসে মাথা উঁচু করে জাহিনের কপালে সশব্দে গভীর এক চুমু বসায়। জাহিন চোখ বন্ধ করে বউয়ের ভালোবাসার পরশ অনুভব করল। অয়ন্তি সরে আসে। জাহিন চোখ মেলে তাকিয়ে ঢোক গিলল। অয়ন্তি ফিচেল গলায় বলল।

“প্রথমে বরের কপালে গভীর ভাবে চুমু খেতে হয়।”

জাহিন এক ভ্রু উঁচু করে মনে মনে হাসল। তার দেখানো কৌশল তার উপরে প্রয়োগ করছে এই মেয়ে। ঠিক আছে দেখা যাক কত দূর এই মেয়ে যেতে পারে আজ। এত সহজে আজকে সে হার মানবে না। অয়ন্তি পুনরায় প্রশ্ন করল।

“এরপরও যদি বরের রাগ না কমে তখন কি করতে হয় জানেন?”

“আমি কি করে জানব কি করতে হয়?”

অয়ন্তি ভাবুক হয়ে বলে, “ওও তাই তো আপনি কি করে জানবেন আপনি তো আর আগে একটা বিয়ে করেন নি যে আপনার আগের বউ এভাবে আপনার রাগ ভাঙাবে।”

জাহিন চোখ ছোট ছোট করে অয়ন্তির দিকে তাকাল। এই মেয়ের নিশ্চিত মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে? জাহিন রেগে কিছু বলতে নিবে তৎক্ষণাৎ ঢোক গিলে নিজের মনের কথা মনের মাঝেই চেপে নেয়। এখন কিছু বলা যাবে না অয়ন্তি এরপর কি করে সেটা দেখতে হবে। অয়ন্তি পুনরায় বলল।

“কোথায় যেন ছিলাম আমরা দুজনে?”

জাহিন অধর জোড়া মেলে কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে অয়ন্তি বলে উঠে, “ও হ্যাঁ বরের কপালে চুমু দেওয়ার পরেও যদি বরের রাগ না কমে তখন বরের দু গালে আলতো করে চুমু খেতে হয়।”

জাহিনের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে। কিন্তু হাসিটা অনেক কষ্টে দাঁতে দাঁত চেপে আটকিয়ে রাখল। অন্য দিকে অয়ন্তি তার কথা মতো জাহিনের দু গালে চুমু খায়। জাহিন মৃদু হাসল। অয়ন্তিও মৃদু হেসে বলল।

“তারপর নাকের ডগায় চুমু খেতে হয়।”

অয়ন্তি জাহিনের নাকের ডগায় চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, “রাগ, অভিমান কমেছে এখন।”

জাহিন দু কাঁধ নাচিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে, “আমি কি জানি!”

অয়ন্তি শব্দ করে হাসল। জাহিন আড় চোখে সেই হাসি দেখল। অয়ন্তি টের বুঝতে পারছে জাহিন কি চায়? ঠিক আছে সেও জাহিনের মনের বসনা পূরণ করবে। অয়ন্তি আকস্মিক জাহিনের উপরে ঝুঁকে আসে। জাহিন বার কয়েক বার চোখের পাতা ফেলল। দুজনে দুজনের দিকে এক নজর তাকিয়ে রইল। জাহিন আলতো হাতে অয়ন্তির গালে পড়ে থাকা চুল গুলা সরিয়ে দেয়। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে এগিয়ে আসলো জাহিনের কানের কাছে। জাহিনও চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়। অয়ন্তির গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে জাহিনের কাঁধে। কিয়ৎক্ষণ পরেই ভেসে আসলো এক মিষ্টি, মধুর কন্ঠস্বর।

“ভালোবাসি নেতা মশাই ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।”

জাহিন চোখ মেলে তাকায়, ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে মৃদু হাসি। হৃদয় জুড়ে বয়ে যায় এক শীতল হাওয়া। তার লাজুক বউ তাহলে ভালোবাসি কথাটা বলল তাকে। জাহিন জবাব দিলো না চুপ করে রইল। অয়ন্তি কানের কাছ থেকে সরে আসতেই জাহিন নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। অয়ন্তি পুনরায় জাহিনের কানের কাছে গিয়ে গালের সাথে গাল লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

“জবাব দিবেন না বুঝি আমার কথায়। অবশ্য গত কাল রাত্রে এই‌ কথাটা আপনি হাজার বার বলে ফেলেছেন। আর আমি জানি আপনি আমায় ভীষণ ভালোবাসেন।”

অয়ন্তি কথাটা বলে জাহিনের বুকে নিজের থুতনি ঠেঁকিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার একান্ত পুরুষ মানুষটির দিকে। জাহিন ভ্রু উঁচু করে ইশারা করে “কি হয়েছে”? অয়ন্তি মুচকি হেসে এবার নিজের অধর জোড়া মিলিয়ে দেয় জাহিনের অধর। জাহিন নিঃশ্বাস আটকে নেয়। জাহিনকে কোনো রকম রেসপন্স না করতে দেখে অয়ন্তি সরে আসতে নিবে সাথে সাথে জাহিন অয়ন্তির ঘাড়ে শক্ত পুরুষালি হাত রেখে এক ঝটকায় অয়ন্তিকে শুইয়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে।

“রাগ, অভিমান তো ভাঙ্গিয়েছো এবার না হয় সেই রাগ, অভিমান গুলা গভীর আদরে পরিণত করি।”

দুজনের হৃদ স্পন্দনের গতি অনিয়ন্ত্রিত হলো। জাহিন অয়ন্তির অধর জোড়া নিজের অধর জোড়ার দখলে নিয়ে নেয়। জাহিন কয়েক মুহূর্ত পর অয়ন্তির অধর জোড়া ছেড়ে দিয়ে অয়ন্তির পানে তাকায়। অয়ন্তি লাজুক হাসে সাথে জাহিনও মুচকি হাসে। পুনরায় জাহিন অয়ন্তির জোড়া নিজের অধর জোড়া দিয়ে আঁকড়ে ধরে। অয়ন্তিও সায় দিল। অয়ন্তি বা হাত দিয়ে জাহিনের ঘাড় পেঁচিয়ে ধরে। জাহিন নিজের শক্ত হাতের পাঁচ আঙুল দ্বারা অয়ন্তির ছোট ছোট আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে। অয়ন্তির ঠোঁট ছেড়ে এবার জাহিন নিজের ঠোঁট নামিয়ে আনলো গলায়। একে একে অয়ন্তির গলায়, ঘাড়ে, কাঁধে নিজের উষ্ণ, নরম অধর জোড়ার বিবরণ চালাতে শুরু করল। অয়ন্তি অস্থির হয়ে পুরো শরীর সাপের মতো‌ মোচর দিয়ে উঠল। সর্বাঙ্গে বয়ে যাচ্ছে শিহরণ। জাহিন ব্যস্ত হাতে অয়ন্তির শাড়ীর পিন খুলে দিয়ে নিজের পরিহিত শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে মাঝে। পুনরায় জাহিন অয়ন্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে কানের লতিতে চুমু এঁকে দিয়ে নেশাক্ত গলায় বলল।

“ভালোবাসি অয়ন্তি।”

জাহিন আলতো হাতে অয়ন্তির গা থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিল। অয়ন্তি লজ্জায় দাঁতে দাঁত চেপে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। পরপর অনুভব করতে পারল জাহিনের বেসামাল ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া নিজের উন্মুক্ত পেটের উপরে। শক্ত হাতে খামচে ধরল জাহিনের কাঁধ অয়ন্তি, তাতে যেন জাহিনের কোনো হেলদোল নেই। ধীরে ধীরে দুজনের মাঝ থেকে সেরে যেতে শুরু করল সকল আবরণ। আস্তে আস্তে ডুব দিলো জাহিন অয়ন্তির মাঝে। অয়ন্তিও জাহিনের ভালোবাসা মিশ্রিত সকল ব্যথা যন্ত্রণা সাদরে গ্রহণ নিলো। পুরো রুম জুরে দুই মানব মানবীর ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। অয়ন্তির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুই এক ফোঁটা নোনা জল। যেই জলের ফোঁটায় নেই কোনো দুঃখ আছে শুধু সুখের ঠিকানা।

_________

রাত তিনটে বাজে। বাইরের বৃষ্টি থেমেছে, বাতাসের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। কারেন্ট নেই যার জন্য বাইরের পরিবেশ অন্ধকারে ডুবে আছে। অয়ন্তি জাহিনের বুকের উপরে মাথা রেখে জাহিনের বুকে তর্জনী দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। অয়ন্তির পড়নে জাহিনের শার্ট। জাহিন অয়ন্তির হাতটা ধরে অয়ন্তির আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল রেখে নরম গলায় বলে।

“অয়ন্তি তোমার মনে আছে একটা ঘটনা।”

অয়ন্তি চিন্তিত হয়ে জাহিনের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “কোন ঘটনা?”

“ওই যে আমাদের বিয়ের দিন মিষ্টি মুখের ঘটনাটা।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “হঠাৎ এই কথা!”

“না আমার একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে।”

“কি কথা?”

“আমি যখন তোমার দিকে মিষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম তখন তুমি মিষ্টি খেয়েছিলে তো।”

“অল্প খেয়েছিলাম।”

জাহিন মজা করে বলে, “অল্প খেয়েছিলে আমাদের বিয়ের মিষ্টি তুমি। অল্প কি করে খেতে পারলে বলো তো?”

অয়ন্তি বোকার মতো বলে, “বেশি খাওয়া উচিত ছিল বুঝি!”

“হুমম।”

“তো এখন কি করার?”

“চলো আবার বিয়ে করি। তখন এমন এক পরিস্থিতিতে বিয়ে করতে হয়েছে যার জন্য ভালো করে নিজের বিয়েটাও উপভোগ করতে পারি নি।”

অয়ন্তি জাহিনের কাছে থেকে সরে গিয়ে নিজের বালিশে মাথা রেখে বলে, “আর উপভোগ করতে হবে না। অনেক রাত হয়েছে এসব কথা রেখে চুপচাপ ঘুমান আর ঘুমটাকে উপভোগ করেন।”

জাহিন বিরক্ত গলায় বলল, “ঘুমাতে বলছো ভালো কথা কিন্তু দূরে সরে গেলে কেন?”

অয়ন্তি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় জাহিনের বুকে মাথা রাখে। জাহিনও মুচকি হেসে অয়ন্তির কপাল চুমু এঁকে দিয়ে বলে, “এবার ঘুমাও। আর যা বুঝলাম বাস্তবে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে পারব না তাই স্বপ্নে না হয় বিয়ে করলাম।”

অয়ন্তি জাহিনের কথা শুনে মুচকি হেসে দু হাত দিয়ে জাহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “আপনার স্বপ্নে আসার জন্য আমি অপেক্ষায় রইলাম নেতা মশাই।”

_________

লিজাকে মেয়ে দেখার জন্য পত্রপক্ষ আসার কথা ছিল। কিন্তু কোনো এক কারণে পত্রপক্ষ লিজাকে দেখতে আসবে না বলে দিয়েছে। সেই খবরটাই লিজার মা রত্না বেগমকে জানাতে এসেছেন ঘটক শাহেলা বানু। রত্না বেগম চিন্তিত হয়ে বলেন।

“হঠাৎ কি এমন হলো যে তারা মেয়ে দেখতে আসতে পারবে না? আর তারা তো মেয়ের ছবি দেখেও পছন্দও করছিল তাহলে।”

শাহেলা বানু চায়ের কাপে শব্দ করে চুমুক বসিয়ে বলেন, “আরে একটা পাত্র চলে গেছে তো কি হইছে ওই পাত্র থেকে হাজার গুন ভালো পাত্র আমার ঝুলিতে আছে।”

রত্না বেগম হাসি খুশি মুখে বলেন, “তাই নাকি আপা। তা ছেলে কি করেন?”

“পোলা বিরাট বড়ো পুলিশ অফিসার। মাসের শেষে লাক্ষ লাক্ষ টেহা ইনকাম করে।”

রত্না বেগম ছেলে পুলিশ অফিসার কথাটা শুনে মুখটা অন্ধকার হয়ে যায় তা দেখে শাহেলা বানু বলেন, “কিতা আপা এমন আন্ধার হয়ে গেল কেন আপনের মুখটা?”

“না মানে ছেলে পুলিশ….।”

রত্না বেগমের মুখের কথা শাহেলা বানু ছিনিয়ে নিয়ে বলেন, “আরে আপা পুলিশ তো কি হইছে? ছেলে দেখতে মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর আর চালচলনও অনেক ভালো। এমন পোলা হাত ছাড়া করতে নাই বুঝলেন। মাইয়া আপনার সুখেই থাকবে ওই‌ পোলার ঘরে।”

রত্না বেগম ইতস্তত গলায় বলল, “আইচ্ছা আপনি তাহলে কথা বলেন ছেলের পরিবারের সাথে। আর ছেলের নাম কি?”

শায়েলা বানু কিছু একটা ভেবে বলেন, “পোলার নামটা মনে নাই। এত পোলা-মাইয়ার নাম মনে থাহে না।”

“ওও আচ্ছা।”

“শুনেন আপা আরেকটা কথা ছেলে এহন আসতে পারব না। আর কয় দিন পর তো নির্বাচন। নির্বাচনে ছেলের ডিউটি আছে। তাই যা করার নির্বাচনের পরে করতে হইব বুঝলেন।”

“ঠিক আছে তাহলে নির্বাচনের পরেই‌ দেখা সাক্ষাৎ হোক।”

শাহেলা বানু ভেঙে ভেঙে বলেন, “তাইলে আপা আমারে কয়েকটা যদি টেহা দিতেন। মানে যাতায়াত খরচটা যদি একটু দিতেন আর কি।”

ঘটক শাহেল বানুর কথা শুনে রত্না বেগম ঘর থেকে একশো টাকার একটা নোট এনে ধরিয়ে দেয়। শাহেলা বানুও টাকা নিয়ে চলে যান। কিছু দূর যেতেই শারাফ নামে সেভ করা এক নাম্বার ডায়েল করে। ওপর পাশ থেকে কল ধরতেই শায়েলা বানু আপ্লুত গলায় বলে উঠেন।

“হ্যাঁ বাজান তোমার কথা মতো আমি ওই বিয়াটা ভাইঙ্গা দিছি।”

ফোনের ওপর‌ প্রান্ত থেকে ভেসে আসে শারাফের পুরুষালী ভরাট কন্ঠ, “কেউ‌ সন্দেহ করে নি তো।”

“না বাজান এমন ভাবে কইছি যে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নাই।”

“গুড।”

“তা বাজান আমার টেহাটা যদি দিতেন তাহলে ভালো হইত আর কি।”

“আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে?”

“হো বাজান আছে এই নাম্বারটাই আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট।”

“ঠিক আছে আমি বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিবো।”

“আইচ্ছা বাজান তাইলে রাহি এহন।”

শারাফ নিজের বিকাশ অ্যাকউন্ট থেকে শায়েলা বানুর নাম্বারে‌ তিন হাজার টাকা সেন্ড মানি করে ফোনটা টেবিলের উপরে রেখে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে বাঁকা হেসে বলে।

“মিস লিজা ভিজা এতো সহজে তো তোমাকে আমি অন্য কারোর হতে দিবো না। খুব শখ না অন্য কারোর বউ হওয়ার। সেই শখ তোমার পূরণ হতে দিবো না আমি থাকতে। তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে অন্য কারোর না।”

দুই দিনে আগের ঘটনা। শারাফের সাথে লিজার কথা কাটাকাটির সময় রত্না বেগম লিজাকে ডেকে বলেন, “এই‌ লিজা ঘটক শায়েলা আপার নাম্বারটা দে তো দেখি আমার ফোনে ডিলেট হয়ে গেছে নাম্বারটা। কবে পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবেন জানতে হবে?”

কথাটা শুনে যেন শারাফের তালু জ্বলে উঠে। লিজাকে বউ দেখতে আসছে মানে? সে এই দুনিয়াতে থাকতে কোন শালায় আসছে লিজাকে বউ দেখতে? শারাফ কথাটা শুনেই কল কেটে দেয়। কারণ লিজাকে কোনো প্রশ্ন করলেও জীবনে উত্তর দিবে না এটা সে জানে। তাই লিজা যাতে তার উপরে সন্দেহ না করে তার জন্য আর কল পর্যন্ত করে নি লিজাকে সে। শারাফ এরপর ঘটক শায়েলা বানুকে খোঁজার মিশনে নামে। আর তাতে সফলও হয়। পুলিশ হওয়াতে যেন কাজটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। আর এরপরেই শায়েলার বানুর ফোন নাম্বার কালেক্ট করে টাকার লোভ দেখিয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় আর নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।

#চলবে

কোনো বানান ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। পরবর্তীতে সংশোধন করে নিবো।

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

আমার সব গল্পের লিংক একত্রে
https://www.facebook.com/110256437345301/posts/309897647381178/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here