হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪৮

0
347

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৮

একটা নতুন শিশির ভেজা সকাল। সূর্য্যি মামা পুব আকাশে উঁকি দিয়েছে। তার সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কুয়াশা কেটে গেছে। শিশির কণা জমে আছে গাছের সবুজ পাতায় তারেই পানি টুপটাপ করে নিচে পড়ছে একএক করে। সবুজ নরম দূর্বা ঘাসের উপরে জমে আছে শিশির কণা। যা মানুষের পায়ের সাথে পা লেগে ঝরে পড়ছে।

তেমনি মনে হচ্ছে জাহিনের চোখে মুখে কেউ পানি ঝেরে ফেলছে। জাহিন কপালে ভাঁজ ফেলে বিরক্তিকর চোখে তাকাল। চোখের সামনে দৃশ্যমান রুপে ভেসে উঠলো এক রমণীর প্রতিচ্ছবি যে রমনী নিজের ভেজা চুল গুলা দু হাত দিয়ে আলতো করে ঝাড়ছে তার পানি এসেই জাহিনের চোখে মুখে পড়ছে। জাহিন পুনরায় আবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলল। আড়ামোড়া ভেঙ্গে উঠতে নিলে পিঠে ব্যথা অনুভব করল কিন্তু দাঁত কামড়ে সেই ব্যথাটা সহ্য করে ধীরে ধীরে বেড থেকে নেমে অয়ন্তির দিকে এগিয়ে আসলো।

অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে গুনগুন করে গান গাইছে আর চুল মুছতে ব্যস্ত আছে। হঠাৎ করেই শাড়ি ভেদ করে কারো তপ্ত হাতের ছোঁয়া ঠান্ডা পেটের উপরে পেতেই অয়ন্তি চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায়। আয়নার দিকে তাকতেই দেখে জাহিন ঘুম ঘুম চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। জাহিন মুচকি হেসে অয়ন্তির ভেজা কাঁধের উপর নিজের চিবুক ঠেকিয়ে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন্তি জাহিনের হাতের উপরে বা হাত রেখে ধীর গলায় বলল।

“উঠে পড়েছেন।”

জাহিন চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলল, “হুমম।”

“ঠিক আছে তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিন। নাস্তা করে ঔষধ খেতে হবে।”

জাহিন ছাড়লো না বরং নিবিড় ভাবে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরল। অয়ন্তির ঠান্ডা শরীরটা জাহিনের উষ্ণ শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। অয়ন্তি মৃদু কেঁপে উঠে জাহিনের অবাধ্য ছোঁয়াগুলা এখনও নিজের শরীরের ছুঁয়ে গেলে না চাইতেই আনমনে কেঁপে উঠে। জাহিন অয়ন্তির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে।

“এখনও আমার ছোঁয়া পেলে কেঁপে উঠতে হয় বুঝি।”

অয়ন্তি চুপ রইল। একটা “রাও” করলো না। জাহিন পুনরায় আগের ন্যায় বলল, “এতো সকালে গোসল করেছো কেন রাতে তো তেমন কিছু হয় নি আমাদের মাঝে যার জন্য গোসল করতে হবে।”

অয়ন্তি লজ্জা পেলো। মিনমিন করে বলল, “রাতে কিছু হলেই বুঝি সকালে গোসল করতে হয় এ ছাড়া গোসল করা যায় না বুঝি।”

জাহিন অয়ন্তির ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে বলল, “চলো আবার যাতে গোসল করতে হয় তার ব্যবস্থা করি তখন তুমি আর আমি একসাথে গোসল করবো।”

অয়ন্তি চোখ বড় বড় করে জাহিনের দিকে তাকিয়ে কনুই দিয়ে জাহিনের পেটে গুঁতো মেরে বলে, “খালি উল্টাপাল্টা কথা যান তো ফ্রেশ হোন গিয়ে।”

কথাটা বলে অয়ন্তি জাহিনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জাহিনের কাপড় গুলা জাহিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এবার যান।”

জাহিন মন খারাপের ভান ধরে বলল, “আমার প্রস্তাবটা গ্রহণ করলে না তো।”

“এই প্রস্তাব এখন গ্রহণযোগ্য নয়।”

জাহিন দুষ্টু হেসে বলল, “তাহলে রাতের বেলা গ্রহণযোগ্য বুঝি।”

অয়ন্তি জাহিনের দিকে চোখ গরম করে তাকাল। জাহিন বুঝলা হাওয়া গরম হয়ে গেছে। অয়ন্তি শাসিয়ে বলল, “এতো বড় একটা ব্যথা পেয়েছেন তারপরও‌ আপনার কোনো হেলদোল নেই। মানে আপনি কি আদৌ‌ মানুষ নাকি অন্যকিছু।”

জাহিন হেসে হেসে বলল, “অন্য কিছু হলে এতক্ষণে তোমার ঘাড় মটকে দিতাম।”

অয়ন্তি জাস্ট ভেবে পাচ্ছে না জাহিন কি করে হেসে হেসে কথা বলছে। এত বড় একটা ব্যথা পেয়েছে চোখে মুখে কোনো রকমের যন্ত্রণার চাপ নেই। এক্কেবারে স্বাভাবিক, জাহিনের জায়গাতে অন্য কেউ থাকলে হয়তো আহাজারিতে ফেঁটে পড়ত। অয়ন্তি কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে জাহিন হাত উঁচু করে বলল।

“ঠিক আছে‌ ঠিক আছে যাচ্ছি ভাষণ দিতে হবে না। এমনিতে নিজের ভাষণ শুনেই কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।”

জাহিন ওয়াশরুমে চলে যায়। অয়ন্তি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা গুছিয়ে নিচে আসলো। জোহরা বেগম ছেলের বউকে দেখেই হাতে কফির মগ ধরিয়ে বলল।

“জাহিনের কফিটা দিয়ে আসো।”

অয়ন্তি নম্র গলায় বলল, “মা আপনি করতে গেলেন কেন শুধু শুধু কষ্ট করে।”

জোহরা বেগম মুচকি হেসে বলল, “সবসময় তো তুমিই‌‌ করো আজ না হয় আমি করলাম। যাও দিয়ে আসো।”

অয়ন্তি রুমে পা রাখতেই দেখে জাহিন গালি গায়ে বসে হাত বাঁকিয়ে পিঠে ওয়েন্টমেন্ট লাগাছে। এতোক্ষণ জাহিনের চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ দেখতে পেলো অয়ন্তি। বাড়ির কাউকে বলতেও পারছে না এই ঘটনাটা জাহিনের জন্য। অয়ন্তি জাহিনের সামনে এসে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে ওয়েন্টেমেন্টটা নিজে নিয়ে বলল।

“আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।”

জাহিনও চুপচাপ মেনে নিলো। অয়ন্তি আলতো হাতে ওয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে পরিস্কার লম্বা একটা কাপড় দিয়ে জায়গাটা বেঁধে দিলো যাতে করে শার্টের গায়ে না লেগে যায় প্রলেপটা। অয়ন্তি শার্ট পড়াতে জাহিনকে সাহায্য করে চলে যেতে নিবে তৎক্ষণাৎ জাহিন অয়ন্তির হাত চেপে ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কোলে এনে বাসায়। অয়ন্তি চমকে জাহিনের গলা জড়িয়ে ধরে থতমত খেয়ে বলল।

“আপনি হুটহাট এমন ব্যবহার করেন কেন বলুন তো? ভয় পাই তো নাকি।”

জাহিন অয়ন্তির কপালের চুলগুলা সরিয়ে দিয়ে বলল, “ওই দিন রাতে কি বলতে চেয়েছিলে পরে তো বললে না।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “আমি আবার কখন কি বলতে চেয়েছিলাম।”

“আরে ওই দিন রাতে তুমি কি একটা কথা বলতে চেয়েছিলে তারপর আমার ফোন আসতে চলে যেতে হয়েছিল।”

অয়ন্তির মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে উঠল। সে তো লাবীবের কথা বলতে চেয়েছিল। এখন কি বলবে জাহিনকে লাবীবের কথা নাকি রাতে বলবে। এখন তো জাহিন খাওয়া দাওয়া করে বের হবে। তার চেয়ে ভালো রাতেই বলবে। অয়ন্তিকে এমন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখে জাহিন চিন্তিত গলায় বলল।

“কি হলো কথা বলছো না কেন? কি বলতে চেয়েছিলে তুমি?”

অয়ন্তি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলল, “কিছু না আমায় ছাড়ুন আমার কাজ আছে।”

অয়ন্তি এক প্রকার পালিয়ে চলে গেল। জাহিন বোকার মতো অয়ন্তির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। এই মেয়ে কিছু তো একটা লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে কিন্তু সেটা কি?

_______

জাহিন স্টাডি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। পর্দা ফাঁক করে দেখে নিলো বাবা কোথায় আছেন? দেখল বাবা তার ফোমের চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে মুখের সামনে পেপার ধরে পেপার পড়ছেন। জাহিন দরজায় করঘাত করল। আজমল শেখ দরজার শব্দ শুনে মুখ থেকে পেপার সরিয়ে দরজার পানে তাকাল। বড় ছেলেকে এমন সময় এখানে দেখে একটু অবাক হোন। জাহিন বলল।

“আসবো বাবা।”

আজমল শেখ সোজা হয়ে বসে পেপার ভাঁজ করতে করতে বলেন, “হুম আসো।”

জাহিন বাবার সামনের সোফাটায় গিয়ে বসতেই আজমল শেখ বললেন, “হঠাৎ এখানে কোনো দরকার নাকি? মানে টাকা পয়সা লাগবে।”

জাহিন ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলল, “বাবার কাছে কি সন্তান শুধু টাকার জন্যই আসে অন্য কিছুর জন্য আসাতে পারে না বুঝি।”

আজমল শেখ ফ্লোরের দিকে একবার তাকিয়ে ছেলের দিকে পুনরায় নজর ফেলে নরম কন্ঠে বলেন, “তা আসতে পারো।”

“আপনার শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে। ঔষধগুলা ঠিক মতো খাচ্ছেন।”

আজমল শেখ আস্তে করে বলেন, “হুম।”

“বাবা।”

“হুম।”

“আমি জানি আপনি আমার প্রতি বিরক্ত তার কারণটা যে আমার রাজনীতি করা নিয়ে সেটাও আমি খুব ভালো করে জানি। আর এটা বুঝতে পারি আপনি প্রত্যেক মুহূর্ত আমাকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন এটা ভেবে না জানি আমার সন্তানের কি হয়ে যায়? কিন্তু আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে‌ আনার জন্য কিন্তু পারি নি। একবার আপনাদের না জানিয়ে আমি দল করা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু তখন দম বন্ধ হয়ে এসেছিল আমার। মনে হচ্ছিল যেন আমার জীবন থেকে কিছু একটা হারিয়ে গেছে। তারপর যখন আবার ফিরে গেলাম দলে তখন স্বস্তি ফিরে পাই আমি। আমার হারানো কোনো এক অদৃশ্য জিনিস ফিরে পাই। আমি জানি ভাইয়া মা’রা যাবার পর থেকে আপনার রাজনীতির প্রতি একটা ঘৃণা চলে এসেছে। কিন্তু এই রাজনীতি ভাইয়ার স্বপ্ন ছিলো। চেয়েছিল সবসময় জনসাধারণ মানুষের পাশে থাকবে কিন্তু ভাগ্য সেটাতে সহায় হলো না। ভাইয়ার স্বপ্নটা পূরণ করার জন্য আমিই রাজনীতিতে থাকার অঙ্গীকার করি। তাই রাজনীতি করা আমি ছাড়তে পারবো না। এই রাজনীতির মাঝেই আমি ভাইয়াকে খুঁজে পাই। যার জন্য আমি চাইলেও এর ভেতর থেকে বের হতে পারি না।”

আজমল শেখ ছেলের প্রত্যেকটা কথা মনযোগ দিলে শুনলো। চোখের কোণে পানি জমে গেছে সেটা ছেলের অগোচরে মুছে নেয়। জাহিন ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।

“বাবা মায়ের দোয়া নাকি আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় আর কবুলও হয়। আপনি শুধু আমার জন্য একটু দোয়া কইরেন বাবা যেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে না হয় আমাকে।”

আজমল শেখ ছেলের কথা শুনে আঁতকে উঠে ধমকের স্বরে চিৎকার করে উঠেন, “জাহিন।”

জাহিন নৈঃশব্দে হেসে বলল, “আরে আমি তো এটা কথার কথা বললাম।”

“বেশি লায়েক হয়ে গেছো না তুমি মুখে যা আসছে কখন থেকে তাই বলে যাচ্ছো। মুখে লাগাম টানো।”

আজমল শেখের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বাড়ির সবাই এসে স্টাডি রুমের সামনে জড়ো হয়। জোহরা বেগম ভেতরে ঢুকে ভয়ে ভয়ে বললেন, “কি হয়েছে?”

আজমল শেখ বসে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে মুখ করে বলেন, “তোমার ছেলেকে প্রশ্ন করো?”

জোহরা বেগম বিচলিত গলায় ছেলেকে বললেন, “কি বলেছিস তুই‌ যে তোর বাবা এতোটা উত্তেজিত হয়ে পড়লো?”

জাহিন মায়ের কানে কানে বলল, “বেশি কিছু না অল্প একটু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের ডোজ দিলাম তোমার পঁয়ত্রিশ বছরের সংসার জীবনের ভালোবাসার পতি পরমেশ্বরকে।”

জোহরা বেগম ছেলের বাহুতে থাপ্পড় মেরে বললেন, “কি বলেচ্ছিস তুই?”

“তোমার পতি পরমেশ্বরের কাছ থেকে জেনে নিও।”

জাহিন চলে যাওয়ার জন্য উদ্ধত হতে নিবে তখনই আজমল শেখের ব্যতিব্যস্ত গলায় চেঁচিয়ে বললেন, “জোহরা তোমার এই অভদ্র ছেলেকে বলে দাও পরের বার যেন আমার কাছে এসে এসব আলতু ফালতু কথা না বলে। যদি এসে বলে তখন কিন্তু ওকে আমি চেলা কাঠ দিয়ে পিঠাবো। ছোট বেলায় যেই মা’রটা ও খায় নি সেটা ও বাবা হওয়ার বয়সে এসে খাবে বলে দিলাম।”

বলেই হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাহিরে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা জলদি চেপে গেল দরজার আড়ালে। অয়ন্তি আগে ভাগেই এখান থেকে সরে গেছে। জাহিন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বাবার কথা শুনে। জোহরা বেগম ঠোঁট টিপে হেসে ছেলেকে বললেন।

“বাবা কি বলে গেল শুনলি তো তাড়াতাড়ি বাবা হয়ে যা। হয়তো দাদাভাই ডাক শুনতে চাইছে তাই আকার ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাতে চাইল।”

জাহিন মায়ের দিকে ফিরে রাশভারি কন্ঠে বলল, “হুম তোমরা চাইলে আর আমি টুপ করে একটা বাচ্চা গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এসে অয়ন্তির কোলে দিয়ে দিবো। বাচ্চা হতে সময় লাগবে সাথে ধৈর্যও লাগবে।”

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু জোহরা বেগম চিন্তিত হয়ে পড়লেন ছেলে কি এমন বাবাকে বলল যেটা শুনে এতোটা রেগে গেল। জানতে হবে।

________

অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একটা প্রোগ্রামের এসে জড়ো হয়েছে। নির্বাচনের আগে এটাই লাস্ট প্রোগ্রাম। এই‌ প্রোগ্রামে জাহিনের দলও এসেছে। বলতে গেলে মেয়র পদ‌ প্রাপ্তি যারা আছেন তারা সকলেই‌ আছেন। এই প্রোগ্রামে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছেন তারা সকলে বলছে এই বার জাহিন যাবে মেয়র পদে। এই কথাটা বেশির ভাগ মানুষ সমর্থন করলেও কিছু কিছু মানুষ কথাটা ঠিক হজম করতে পারছে না। প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একে একে সব দলেই বের হতে শুরু করেছে হল থেকে। হঠাৎ করেই জাহিনের পা দুটো থমকে যায় কারো কথা কর্ণগোচর হলে।

“হু! যে নিজের ঘর সামলাতে পারে না সে নাকি আবার সামলাবে রাষ্ট্র।”

জাহিন স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই কথাটা তাকেই ইঙ্গিত করা বলা হয়েছে। কিন্তু ও ঘর সামলাতে পারে না মানে? কি বলতে কি চাইছে? জাহিন পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ত্রিনভ তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। ত্রিনভের এই হাসি দেখে জাহিনের গা জ্বালে যাচ্ছে যেন। জাহিন ত্রিনভের দিকে দু কদম এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“কি বললে তুমি?”

ত্রিনভ উপহাস করে বলল, “আপনি কি কালা যে কানে কম শুনেন।”

জাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ত্রিনভে দিকে তাকিয়ে বলল, “ওই দিনে চড়টা খাওয়ার পরও তোমার শিক্ষা হলো না দেখা যায়।”

ত্রিনভে জাহিনের দিকে এগিয়ে এসে উদ্ধত ভঙ্গিতে বলল, “আমি ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা নিতে পছন্দ করি না। বরাবরেই আমি অশিক্ষিত থাকতে পছন্দ করি।”

“ছোট ছোটর মতো থাকো‌।”

“আমি কিভাবে থাকব সেটা আপনার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে চাই না। আপনি বরং নিজের মূল্যবান পরামর্শগুলা আপনার দু টাকার পকেটে ভরে রাখেন।”

“মুখ সামলে কথা বলো ত্রিনভ।”

“আপনি আপনার স্ত্রীকে সামলান আগে।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলল, “আমার স্ত্রীকে‌ সামলাবো মানে? এখানে আমার স্ত্রীর প্রসঙ্গ আসছে কোথা থাকে?”

“আপনার স্ত্রী যে‌ অন্য বেডার গলা‌য় মাঝে মাঝে ঝুলে পড়ে সেটা কি আপনি জানেন?”

জাহিন হতভম্ব হয়ে বলল, “মানে?”

নুহাশ বিচলিত গলায় জাহিনকে‌ বলল, “ভাই চলো এখান থেকে এসব আজে বাজে কথা শোনার কোনো দরকার নেই।”

“তুই চুপ কর। আমি জানতে‌ চাই ও কি বলতে‌‌ চাইছে?”

জাহিন ত্রিনভের দিকে ফিরে শান্ত গলায় কথাটা বললেও গলায় মিশে রয়েছে হিংস্রতা, “পুরো কথাটা শেষ করো।”

ত্রিনভ অশালীন ভঙ্গিতে বলল, “দেখলাম আপনার স্ত্রীকে ওই দিন শপিংমলে এক পুরুষের সাথে চিপকে লেগে রয়েছে দেখে মনে হচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকা। আহ কি ভালোবাসা। বউকে সামলান না হলে তো আপনার মুখ পুড়িয়ে দিবে।”

জাহিন ত্রিনভের কলার ধরতে গিয়েও থেমে যায়। আশে পাশে সকলে তাদের দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে। জাহিন ত্রিনভের ঘাড়ে হাত রেখে শক্ত করে ঘাড় চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “আমার স্ত্রীর নামে যদি আর একটা উল্টাপাল্টা কথা বলেছো ত্রিনভ তাহলে আমার মুখ পুড়ে যাওয়ার আগে তোমার মুখ পুড়িয়ে দিবো।”

ত্রিনভ বাঁকা হেসে বলল, “নিজের স্ত্রীকে গিয়ে প্রশ্ন করুন তাহলে বুঝে যাবেন আমি সত্যি বলেছি নাকি মিথ্যা।”

জাহিন ত্রিনভের ঘাড় থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। ত্রিনভ এতটা কনফিডেন্স নিয়ে কি করে কথাগুলা বলছে? জাহিনের মাথা কাজ করছে না। মাথার ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। অয়ন্তি আর যাই হোক এমন কাজ করতে পারে না। নিশ্চয়ই দেখার কোনো ভুল আছে যেটা ত্রিনভ আরো রঙচঙ মাখিয়ে সেটা তার কাছে প্রেজেন্ট করছে। জাহিন এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ছুটে চলল গাড়ির দিকে। সবটা জানতে হবে তাকে। শুধু ত্রিনভের কথা বিশ্বাস করে অয়ন্তিকে অবিশ্বাস করলে চলবে না অয়ন্তির কথাও শুনতে হবে। নুহাশ জাহিনকে আটকে অনুনয় কন্ঠে বলল।

“ভাই এতোটা হাইপার হয়ে ভাবির উপরে কোনো আঘাত করো না আর যাই হোক ভাবি এমন নোংরা একটা কাজ করতে পারে না।”

জাহিন শান্ত গলায় বলল, “তোর কি মনে হয় আমি সেই সকল স্বামী যারা বাইরের মানুষের কথা শুনে যাচাই-বাছাই না করেই নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলবো বা তাকে কটু কথা বলবো। আমি এমন স্বামী নই নুহাশ যে নিজের প্রিয় মানুষটাকে কষ্ট দিবো তাও আবার নিজের শত্রুর কথা শুনে। আমি অয়ন্তির মুখ থেকে শুনতে চাই কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা?”

কথাটা বলে জাহিন গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। জাহিন চাইলেই ত্রিনভের গায়ে হাত তুলতে পারতো কিন্তু পরিস্থিতি যেন অন্য রকম। ত্রিনভের গায়ে হাত তুলার ফলে যদি অয়ন্তির নামে সবার সামনে বাজে আর কুৎসিত কথা বলে উঠে তখন অয়ন্তির চরিত্রে কালী লাগতে খুব একটা বেশি সময় লাগতো না। তাই জাহিন ত্রিনভকে বেশি কিছু বলল না। নুহাশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। ত্রিনভ নিজের গাড়িতে বসে বৃদ্ধাঙ্গুল ঠোঁটের উপরে রেখে বাঁকা হাসচ্ছে আর মনে মনে বলল।

“দাম্পত্য কলহ এমন একটা জিনিস যেটা দাম্পত্য জীবনে এক বার ঢুকে পড়লে হাজার চেষ্টা করলেও ওতো সহজে নির্মূল করা সম্ভব হয় নয়। এই দাম্পত্য কলহই ওই জাহিনকে একটু হলেও দুর্বল করবে। আর আমাকে চড় মারার অধিকাংশ প্রতিশোধও নেওয়া হবে।”

#চলবে

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

আমার সব গল্পের লিংক একত্রে
https://www.facebook.com/110256437345301/posts/309897647381178/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here