দো_দিলে_জাহান #পর্বঃ১৭ #বর্ষা

0
12

#দো_দিলে_জাহান
#পর্বঃ১৭
#বর্ষা
৫৬.
তালুকদার বাড়ি আজ নিস্তব্ধ।কারণও আছে। শুধু আজই না বিগত চার-পাচদিন যাবৎ একদম কোলাহল নেই, কথাবার্তা নেই যেন চুপসে গেছে সবাই।চুপসে যাওয়ারই কথা।মাহিন-মোয়াজ বোনের চিন্তায় ক্লান্ত।দাদাকে দোষারোপ করলেও কিন্তু তীব্রর সুস্থতা আসবে না।তবে বার দুয়েক জোরে কথা বলতেই তো মোবারক তালুকদার কাত হয়ে পড়লেন।হার্টের সমস্যা।বার দুয়েক এটাক হয়েছে।আর একবার হলেই হয়তো শেষ তিনি।

মাহিন এতোদিন হসপিটালেই ছিলো।কাল বাড়ি ফিরেছে।তীব্রকেও কাল ওরা বাড়ি নিয়ে গিয়েছে।এই সুবাধে বাড়ি ফেরা ওরও। তবে মাহিন চিন্তিত ওর দাদার বুদ্ধির অবনতি দেখে।লোকটা কি ভেবে নওশিনের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে মাহিন জানে না।জানতেও চায় না।সে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে,

-“সংসার তো আমি করবো তাই না?আমি একজনকে পছন্দ করি।তাকেই বিয়ে করবো।তোমার পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে পারবো।যদি তোমার একে এতোই ভালো লাগে তো তুমিই বিয়ে করে নেও দাদা”

মাহিনের কথায় ধমকে ওঠেন রাবেয়া বেগম।ছেলে মুখে মুখে তর্ক করছে অবিশ্বাস্য।কি করে তার এই শান্তশিষ্ট ছেলে এভাবে কথা বলছে।তারই মাঝে মোয়াজ বলে ওঠে,

-“বড়দা ভাই একদম ঠিক বলেছে।কেন ধমকাচ্ছো ওকে?আমরা কিছু বললেই ভুল।আর দাদা?সে বয়স্ক মানুষ।আস্তে আস্তে তার বুদ্ধি আরো কমছে।তাকে তো কেউ কিছু বলো না।তাকে বিশ্রাম নিতে বলো। আমাদের জীবন আমরা দেখে নিবো।চলো বড়দা ভাই”

মাহিনকে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসে মোয়াজ।মাহিন তার প্রতি ভাইয়ের পক্ষ নেওয়ায় বেশ খুশি।মনে থাকা দুঃখরা যেন পালিয়েছে।মোয়াজ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে কল দেয় কাউকে।

-“তৃষ্ণা জলদি বাইরে আসো তো।একটা জায়গায় যাবো”

এই সময়ে তৃষ্ণাকে ডাকার কারণ মাহিন বোঝে না।মাহিন জিজ্ঞেস করতে নেবে ঠিক সে সময় মোয়াজ বলে ওঠে,
-“ভাই আজ তোমার বিয়ে। মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে নেও।”

-“মানে?”(মাহিন)

-“তুমি ওই নূরিয়া শয়তানির শয়তান বোন নওশিনকে বিয়ে করতে চাও?”(মোয়াজ)

-“কখনোই না”(মাহিন)

-“তাহলে ফোন দেও মারিয়ামকে।বলো ওর বাসায় যাচ্ছি আজ।আর আজই বিয়ে।একদম শরিয়াত মোতাবেক।ইসলামিক তরিকায়”(মোয়াজ)

-“কিন্তু…”(মাহিন)

-“ভাই তুমি সংকোচ বোধ করছো?”(মোয়াজ)

-“মেহেরের এই অবস্থায়….”(মাহিন)

-“ভাই সময় আসবে যাবে।মেহের নিজেও মারিয়াম আপুকে ভাবি হিসেবে চায়। এখন যদি তুমি ওরই অপছন্দের মানুষের বোনকে বিয়ে করো তাহলে ভাবো তো কি হবে তখন।এর চেয়ে যাকে পছন্দ করো তার সাথেই বিয়ে কর”(মোয়াজ)

-“মোয়াজ একদম ঠিক বলেছে ভাইয়া। আমাদের মেহের কিন্তু মারিয়ামকে বড্ড পছন্দ করে। এখন ইচ্ছে আপনার”(তৃষ্ণা)

-“আব্বু-আম্মু সবার সাথেই তো কথা বলা দরকার।এভাবে হুট করে বললেই তো হবে না আর”(মাহিন)

-“ভাই তুমি এতো বাধ্য হয়ো না।আব্বু-আম্মুকে তুমি ফোনে বলো। এখন চলো।”(মোয়াজ)

-“একটু দাঁড়া মেহেরকে আগে জানিয়ে নেই।বেচারি নয়তো পরে অনেক কষ্ট পাবে”(মাহিন)

মাহিন কিছুটা দূরে সরে আসে ওদের থেকে।ফোন হাতে মেহেরকে কল দেয়।উত্তেজনায় কেমন জানি লাগছে ওর।একবার দুইবার তিনবার রিং হতেই তীব্র কল ধরে।বড়দা ভাই লেখা দেখেই বুঝে গেছে মাহিন কল করেছে।বলে ওঠে,

-“কিরে কি অবস্থা?আর এখন তোর বোনকে ফোন দিছস কেন?”

মাহিন চমকায়।বোঝে তীব্র ফাজলামো করছে।তবে কি ওর সব মনে পড়ে গেছে।তার একটু পরই ওর ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়।তীব্র ওর সাথে ছোটবেলার গল্প করছে। তখনই ওর থেকে ফোন নেয় মেহের।ভাইয়ের সাথে কথা বলতে লাগে। অনেক খুশি হয় ভাই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুনে।তবে আজই করবে এটা শুনে যেতে পারবে না দেখে একটু মন খারাপ হয় তার।তবে পরক্ষণেই ভাইয়ের কথা শুনে রাগ হয় ওর।ছোটদা ভাই ওকে ম্যাসেজ দিয়েছে‌।আজ কি হয়েছে তা নিয়ে।কলে থাকা অবস্থাতেই ম্যাসেজ দেখেছে সে।

-“এভাবে বিয়ে করায় তো আমাদের পরিবারের মান-সম্মানে আচ লাগবে।এমনিতেই তুই আর মোয়াজ তো বাইরেই বিয়ে করেছিস। জানিস তো কত কথা হয়েছে। এখন আমিও….”(মাহিন)

-“বড়দা ভাই জীবনটা তোমার।পাব্লিকের না যে তারা কি ভাববে বলে তুমি পরিবারের কোথায় ওই নূরিয়ার বোনকে বিয়ে করবে। তুমি যদি মারিয়ামকে সত্যিই চাও তবে আজই ওর পরিবারকে মানিয়ে বিয়ে করো।”(মেহের)

আরো কিছু গোপন কথা হয় দুই ভাই-বোনের মাঝে।সবাই সব জানে। কিন্তু কেউ জানে না যে তার পাশের মানুষটাও এই একই কথা জানে। অর্থাৎ সবাই সব জানলেও একে অপর যে জানে তাই জানে না।বিশাল রহস্য আছে।তবে আদৌ তার খুলাসা কি হবে?

৫৭.
গাড়িতে নিশ্চুপ বসে আছে জারিন।সে অবাক হয়েও হতে পারছে না।সে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।মেহের তাকে রেদওয়ান বাড়ি যেতে বলেছে তাও আবার নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে।এর মানে কি?কি করতে চায় মেহের!জানে না জারিন।সত্যিই সে কিছুই জানে না।আর না জানতে চায়।সে শুধু বাঁচতে চায় সারিমকে নিয়ে।

তীব্র ভাইয়ের এই পরিস্থিতিতে মেহের কি কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছে?জারিন উত্তর পায়না।ওর বাবা-মা ওকে দিতে নারাজ ছিলো।তারপর মেহেরের সাথে কি যেন কথা হলো তাদের।তারা জারিনকে আসতে দিলো।এমনকি থাকার অনুমতিও দিলো।মেহেরের পাঠানো গাড়িতেই যেতে হচ্ছে তাকে।

৫৮.
রেদওয়ান বাড়িতে পার্সেল এসেছে।মেহেরের নামে।তবে খুব অল্প মানুষই জানে মেহের এখানে।মেহের পার্সেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে দেখে ডেলিভারি ম্যান মনে হচ্ছে না ওর।পোশাকটা একদম নতুন।এতো নতুন পোশাক কিভাবে!আর সে নতুন কর্মচারী মেনে নিলেও রেদওয়ান বাড়িতেই কেন তার প্রথম আসা!

ডেলিভারি ম্যানটা চলে গেছে এমনটা সবাই ভাবছে। কিন্তু দোতলা থেকে তীব্র দেখেছে ওই লোকটা।ফোন তার হাতেই ছিলো।কাউকে কি যেন ম্যাসেজ পাঠিয়ে মোবাইল থেকে নাম্বার ডিলিট করে দিলো।তবে তা সবার অগোচরে।

পার্সেল খোলার আগে ভালো মতো বোঝার চেষ্টা করে মেহের।টিকটিক সাউন্ড পেতেই কিছু না ভেবে দ্রুত সাফিন বাবাইয়ের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় কোথাও।বাড়ির সবাই চিন্তিত।আর তীব্র সে কিছু ভাবতে ভাবতে রুমে চলে যায়।

৫৯.
কয়েকজন কালো পোশাকধারী লোক দাঁড়িয়ে আছে বাগান বাড়ির মতো স্থানে।সারিম এখানেই আছে।এই বাড়িটা তীব্রর সেইফ হাউজ।এখানে বিপদ ছুঁতে পারবে না তাকে।প্রতিটা মাফিয়া গেরোর নিজস্ব আলাদা মাফিয়া থাকে।তীব্রর নিজস্ব দলের সুরক্ষায় আছে এই বাড়িটা।

-“সারিম প্ল্যান মাফিক যেন হয় সবকিছু।সাবধানে মেহেরকে কিছু জানতে দেওয়া যাবেনা।ও নিজ থেকে বের করার চেষ্টা করুক।তার আগে আমাদেরকে আমাদের কাজ শেষ করে ওর হাতে প্রমাণ দিতে হবে”

-“হুম।তবে জারিনকে রেদওয়ান বাড়ি নিয়ে আসার বুদ্ধিটা ওর বেশ।তবে একটা বিষয় কি জানো?ও এখনো অব্দি ওর আসল পরিচয় লুকিয়ে রেখে ভালো করেছে।নয়তো তালুকদারদের ওপর হামলা হতো”(সারিম)

-“মাহিন আমাদের সম্পর্কে সবই জানে হয়তো।তবে ওর জানা আর না জানা দিয়ে কিছু আসে যায় না। কিন্তু ওর সামনে ওর অতীতটা আনতে হবে।ওই লোকটাকে রেডি রাখ”

-“বৃদ্ধ এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছে।তবে স্মৃতি থাকলেও কতটুকু তা বলা যায় না।কথা বলার হিম্মত আছে বলেও মনে হয়না।বেশ দূর্বল”(সারিম)

সারিম ফোনে কথা বলছে। প্রাইভেট নাম্বার হওয়ায় ট্রাক করতে পারবে না কেউ।আর যেহেতু গোপন নাম্বার এইটা তাই কেউ জানেও না যে এইটা সারিমের নাম্বার।আর যার সাথে কথা বলছে সে যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন।যে তালুকদারদের অতীতও ঘেটে ঘোলা করেছে।হয়তো বের করে ফেলেছে এক নির্মম সত্য।

চলবে কি?

কি হতে চলেছে?আর কেই বা সারিমকে গাইড করছে এখন?তীব্র কি সুস্থ তাহলে কেন অসুস্থতার ভান করছে?আর মাহিনেরই বা কি অতীত সামনে আসতে চলেছে?কি হতে চলেছে ভবিষ্যৎ এ?অনেক প্রশ্ন তবে উত্তর হয়তো ভবিষ্যৎ বলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here