দো_দিলে_জাহান #পর্বঃ২৪ #বর্ষা

0
12

#দো_দিলে_জাহান
#পর্বঃ২৪
#বর্ষা
৭৮.
মেহেরের হাসি মনে হয়না আজ আর থামবে।হলুদের রাত থেকে তীব্র সামনে আসলেই সে হাসছে।আর বেচারা একটু পর পর ওর কাছে এসে কি যেন বলে যাচ্ছে।তার ‘র’ও হয়তো শুনছে না মেহের।তাইতো তীব্র বেজায় চটেছে।

বাড়ির মানুষ হওয়ায় বাড়ির আত্মীয়দের দেখভাল, খাওয়া-দাওয়ার দিকটা দেখতে হচ্ছে ওদের সবাইকেই।মেহেরের সাহায্য করছে তৃষ্ণা আর মারিয়াম।তীব্রর হুটহাট এসে মেহেরকে কিছু বলে যাওয়া দেখে তারা ভাবছে আসলে তীব্র বলছেটা কি!

-”এই মেহের”(তৃষ্ণা)

-“বলো ভাবী”(মেহের)

-“আরে আমি বলছি।এই তীব্র ভাইয়া এভাবে এসে তাড়াহুড়োতে তোমায় কি বলছে?”(মারিয়াম)

মেহেরের মনে পড়ে যায় কালরাতের ঘটনা।বাসায় ফিরে সবার সাথে দেখা করে রুমে যেতে ওর প্রায় একটা বেজেই গিয়েছিলো।তীব্র মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে।ছেলেটার আক্কেল জ্ঞান কম।তাইতো রুমের দরজা খুলে রেখে গোসলে গিয়েছিলো।এইযে মেহের হুট করে ঢুকে পড়লো অন্যকেউও তো আসতে পারতো।এই বাড়িভর্তি মেহমানদের মাঝে একটুও সচেতন না এই ছেলে।

-“এই যে এতো কি ভাবছো?যাও দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসো।কি সেজেছো পুরাই পেত্নি লাগছে”(তীব্র)

মেহের যদিও কিছু বলতে চেয়েছিলো তীব্র কথা শুনে আর বলেনা।এমিনতেই বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার।ফ্রেশ হয়ে এসে একটু রেস্ট নেওয়াই ঠিক হবে।কালকে তো আরো ধকল আছে।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই তীব্র বলে ওঠে,

-“কাল তুমি মেয়ের বাড়ি যাবে না।কাল কেন পরশু যখন মেয়ের ফিরানি হবে তখনও যাবে না”

-“কেন?”(মেহের)

-“অকালে বউ বিয়ে দিয়ে আমি সতিনের ঘর করতে চাইনা “(তীব্র)

মেহের হেসে দেয় তীব্র কথা শুনে।তাইতো হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করে,

-“তা মহাশয় ছেলেদের কি সতিন হয়?আর জারিনের বাড়ি গেলে আপনার সতিন আসবে কোথা থেকে”

তীব্র ওই আন্টির কথাগুলো খুলে বলে মেহেরকে।সেই থেকে যে হাসি শুরু করেছে মেহের!ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বেচারি হেসেছে আর বলেছে,

-“আমার মহাশয় দেখি তার সতিনের মায়ের সাথে দেখাও করেছে!হা হা হা”

মেহেরকে আবারো হাসতে দেখে ধাক্কা মারতে বেচারী ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।আর হাসতে হাসতে নিজের দুই ভাবীকে সব বলে।তারাও হাসতে থাকে। তৃষ্ণা আর মারিয়াম তো ভাবতেই পারছে না স্বামীর কাছে নাকি স্ত্রীর বিয়ের প্রস্তাব আসে কখনো!তারা তো হেসেই চলেছে।কাজ করবে আর কখন।

৭৯.
ছেলের সাথে বাড়ির কয়েকজন আর ছেলের বন্ধু-বান্ধব পাঁচজন যাবে।আর বাকি সবার জন্য রেদওয়ান বাড়িতেই খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মেয়েপক্ষের ওপর এতো চাপ ফেলানোর কোনো ইচ্ছা ছিলো না ওনাদের। আগেই মেয়ের বাবার হাতে হাত রেখে সাফিন রেদওয়ানের ছোট ভাই বলে দিয়েছে

-“ভাইসাব আমরা মেনে নিতে আসবো খুব অল্প কয়জন।এই ধরুন বিশজন।এর একজন বেশিও না,আবার কমও না।”

দুই মাইক্রো প্রাইভেট কার ভাড়া করা হয়েছে আটজন করে দুই গাড়িতে যাবে।আর বাকি চারজন বরের গাড়িতে যাবে।যখন গাড়িতে ওঠার সময় হলো তীব্র মেহেরকে উঠতে দেবে না।আর না উঠবে সে নিজে।তার ইচ্ছা নেই সেখানে যাওয়ার।ঠিক করেছে সারিমের বিয়ের পরপরই মেহেরের নাক ছিদ্র করবে।নাকফুল পড়াবে।যাতে মানুষ একটু হলেও বোঝে তার বউটা বিবাহিত।

-“কিরে তুই উঠছিস না কেন?আর আমার মেহেরকেই উঠতে দিচ্ছিস না কেন?”(সারিম)

-“এক চড় দিয়ে তোর দাঁত ফালাবো।বিয়ে করতে যাচ্ছিস যা বিয়ে করে আয়।আর আমার বউকে তুই তোর বলবি না।বলবি ভাবী।”

মেহের খুব বুঝেছে তার মহাশয় তার ওপর রাগ দেখাতে না পেরে বেচারা সারিমের ওপর লাগ দেখাচ্ছে।সাফিন রেদওয়ান ছেলের পিঠে হালকা থাপ্পর মেরে বলে,

-“কি হয়েছে,গাড়িতে উঠছো না কেন?”

-“আব্বু আমি আর মেহের যাচ্ছি না”(তীব্র)

-“তুমি যাচ্ছো না ভালো কথা।আমার মেহের মাকে আটকাচ্ছো কেন?আম্মু তুমি যেতে চাও?”(সাফিন রেদওয়ান)

মেহের হ্যা সূচক মাথা নাড়তেই সাফিন রেদওয়ান ওকে গাড়িতে উঠতে বলে।এখন আর তীব্র কি করবে!বেচারা সেও গাড়িতে উঠতে নিলে সাফিন রেদওয়ান বলে ওঠে,

-“তুমি না যাবে না..?”

-“তোমার বঊ নিয়ে টানাটানি হলে বুঝতা।”(তীব্র)

সাফিন রেদওয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সে জিজ্ঞেস করলো কি আর ছেলে উত্তর দিলো কি!তার অবাকতা না কাটিয়েই চলে যায় বরের গাড়ি।আর তার পেছন পেছন যায় আত্মীয়দের গাড়ি দুটো।

সারিমের পাশে বসেছে তীব্র।আর তার পাশে মেহের বসেছে রুহানকে কোলে নিয়ে।আর সামনে তুষার,সাথে সারিমের দুলাভাই ওয়াহেদ চৌধুরী।দুষ্টামি-ফাজলামি করতে করতে সবাই পৌছে যায় মেয়ের বাড়ি।আজ যেন মানুষের সংখ্যা আরো বেশি।বেশ কিছুক্ষণ দরকষাকষি হবার পর গেট দিয়ে ঢোকে ওরা।এই পক্ষে আত্মীয়-স্বজন অনেকজন।

-“তীব্র কি হচ্ছেটা কি?”(মেহের)

-“কই,কি হচ্ছে?”(তীব্র)

-“তুমি আমার পিছে পিছে আসছো কেন?”(মেহের)

-“আমার বউয়ের পিছে আমি আসছি তাতে তোমার কি?”(তীব্র)

মেহের আর ঘাঁটায় না।যদিও একটু ঝগড়া করার ইচ্ছা ছিলো তার।তবে বেশি ঘাটালে এখানে না সিনক্রিয়েট হয়!এমনও হতে পারে তার গুণধর স্বামী তাকে পাঁজাকোলা করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এখনই।সেই ভয়ে চুপচাপ হাঁটতে থাকে মেহের।জারিনকে দেখে একটু এদিক-সেদিক ঘুরঘুর করে।আর তীব্র আঠার মতো ওর সাথে লেগে থাকে।

-“কি ভাইয়া আমাদের ননদকে একটু আমাদের সাথেও ছাড়ো।তুমিই দেখছি সেই থেকে ওর সাথে সাথে ঘুরছো”(তৃষ্ণা)

-“কি করবো বলেন!এই মহাদয়ার সাথেই তো সারাজীবনের দীর্ঘপথ হাঁটব। এইটুকুন পথ আর বেশি নাকি”(তীব্র)

-“ভাই সত্যিই তুমি দেখছি আমার বোনের পাগল হয়ে গেছে।আমরা এসেছি দেখেও ভাও দিচ্ছো না “(মোয়াজ)

-“বউয়ের সাথে তো তুইও ঘুরছিস।হাত ধরে যে এদিক গেছিস আমিও দেখেছি।”(তীব্র)

-“তীব্র তুমি এখন যাও।আমি ছোটদা ভাই আর ভাবীর সাথে আছি”(মেহের)

-“হুম থাকো।তেরিংবেরিং করতে দেখলে খবর আছে।একটু সারিমের ওখান থেকে আসি”(তীব্র)

তীব্র যেতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে মেহের।মোয়াজ বোনকে ক্ষেপাতে থাকে।আর মেহেরও কম নাকি সেও তার ছোটদা ভাইকে ক্ষেপাচ্ছে।আর এদিকে দুই ভাই-বোনের কথা শুনে লজ্জায় লাল হচ্ছে তৃষ্ণা।

-“এই তোমরা দুজন থামবে?কিসব বলছো সবাই আড়চোখে দেখছে”(তৃষ্ণা)

-“দেখলে দেখুক আমাদের কি”(মোয়াজ)

-“আচ্ছা ভাবী আমি কিন্তু থেমেছি ছোটদা ভাইকে থামাও “(মেহের)

মেহের এদিক-ওদিক দেখে।সুদূরে দেখা যাচ্ছে মাহিন ভাইকে।তাইতো ওদের থেকে বিদায় নিয়ে সেদিকে ছোটে।মারিয়ামের উপস্থিতিও আছে এখানে। দুইজন ডাক্তার হলে যা হয় আরকি।এখানে তাদের পরিচিত রোগীরাও আছে।এখন তাদের সাথেই বকবক করছে দুইজন।মেহের বোঝে এখানে কথা বলা ঠিক হবে না। তাই ম্যাসেজে আজ রাতে ছাদে আসার কথা বলে জারিনের কাছে চলে যায়।

৮০.
বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।স্টেজে বউকে আনতে বলা হয়েছে।সারিম বেচারা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।এখন তার শুধু হাসিই পাচ্ছে।এই খুশি তো প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাবার আনন্দে।মেহের এখন মেয়ে পক্ষের হয়ে জারিনকে সঙ্গে এনেছে।মোটা অংকের চাঁদা চেয়ে বসেছে সারিমের কাছে।সারিম বেচারা হতভাগ।তার কি ভাগ্য তার ভাবীই এখন মেয়ে পক্ষের হয়ে চাঁদা চাচ্ছে।

-“মেহের একটু ছাড় দে।এতো চাস কেন?”(সারিম)

-“দেখেছো আমরা কতজন?কম দিলে কি হবে নাকি! তাড়াতাড়ি বের কর নয়তো বউকে আড় দেখাবো না।ঘরে নিয়ে গেলাম।”(মেহের)

-“আচ্ছা দাঁড়া।এই নে দুইহাজার আর নাটক করিস না বোন”(সারিম)

-“তুমি আমার দেবর দেখে আর বাড়ালাম না।আচ্ছা এই যে আপুরা বউকে নিয়ে এসে বসাও”(মেহের)

তীব্র ফোনে কথা বলতে একটু বাইরের দিকে গিয়েছিলো।বিয়ে পড়ানোর পরপরই ওরা খেতে বসবে। এখনো বসেনি।ফোনে কথা বলা শেষ করে ভেতরে আসতে নিলেই মেহেরকে সারিমের ওখানে দেখে চমকায় সে।এই মেয়েটার তিড়িং বিড়িং না করলে যেন চলেই না।

পথিমধ্যে তার রাগটা আরো বাড়ে। দুইজন মহিলা কথা বলছে মেহেরকে নিয়েই। গাঢ় কালোর ওপর সোনালি কারুকাজ করা কাতান পড়েছে সে।সাথে আছে হিজাব। অনেক সুন্দর লাগছে ওকে।আর তীব্র কালো সুট পড়েছে।মহিলা দুটির কথোপকথন এমন যে,,,

-“বরের পাশের মেয়েটা সুন্দর আছে।কি মিষ্টি ভাষী!ইশ একটা ছেলে থাকলে মেয়েটার বাসায় প্রস্তাব দিতাম।”

-“আর কিছুদিন আগে দেখলে তো আমার বাবুর বিয়েটা ওর সাথেই দিতাম।এই মেয়েকে বউমাকে করে পেলে যেন ভাগ্য খুলে যেতো”

আর শোনার ইচ্ছা নেই তীব্রর।তার তো রাগ উঠছে কেন তার বউয়ের পেছনেই সবাই পড়েছে।রাগে ফুঁসছে সে।আর তীব্রকে রাগতে দেখে মাহিন ওর দিকে এগিয়ে আসে।তীব্রর কাছে মেহের জন্য প্রস্তাব আসার বিষয়টা মারিয়াম তাকে বলেছে।বেচারাও কিছুক্ষণ হেসেছে।

-“কিরে এভাবে ফুসফুস করছিস কেন?কোনো সমস্যা এসে পড়েছে নাকি?”(মাহিন)

-“না, সমস্যা তো আমার সাথেই থাকে।এ আবার আসবে কোথা থেকে!”(তীব্র)

-“কি সমস্যা হয়েছে?”(মাহিন)

-“তোর সুন্দরী বোনকে সবার মনে ধরেছে এখানে।আফসোস করছে তোর বোনকে নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে না পারায়”(তীব্র)

-“দেখেছিস আমার বোনকে কত মানুষ পছন্দ করে।তোর তো খুশি হওয়া উচিত তোর বউকে এতো মানুষ পছন্দ করে দেখে”(মাহিন)

-“তোর বউয়ের ওপর ওনাদের নজর পড়লে পরে বুঝবা ভাই।ওই দেখ মারিয়াম ভাবীর দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে”(তীব্র)

মাহিনকে চেঁতাতে এমন করে তীব্র।যদিও ওনারা মারিয়াম নিয়ে নয় বরং ডেকোরেশন নিয়ে আলোচনা করছিলো তবে মাহিনের মনে হয় হয়তো ওনারা ওর বউকে নিয়েই আলোচনা করছে।বুকের ভেতর ওর ছ্যাত করে ওঠে। ছুটে গিয়ে মানুষের মাঝেই বউয়ের হাত ধরে ফেলে।মারিয়াম যেন অবাক হয়।এই ছেলেই তো তাকে একটু দূরত্ব রাখ বলেছিলো এখানে।আর এখন?এখন নিজেই হাত ধরেছে।

চলবে কি?
#গল্প_দো_দিলে_জাহান
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া-আপুরা। ভুল-ত্রুটিগুলো মার্জনার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here