দো_দিলে_জাহান #পর্বঃ১৫ #বর্ষা

0
165

#দো_দিলে_জাহান
#পর্বঃ১৫
#বর্ষা
৪৯.
জীবনের ধাপগুলো বেশ সহজ লাগলেও প্রতিটি পদক্ষেপ কখনো কখনো হয়ে দাঁড়ায় একটি রুবিকস কিউবের মতো।যে পারে সে কয়েক মুহূর্তেই মিলিয়ে নিতে পারে।আর যে পারে না সে একাংশ ছাড়া বাকি পাঁচ অংশ কখনো মিলাতে পারেনা।আজ মেহেরের মনে হচ্ছে সেও তেমনি জীবনের একাংশই উদ্ঘাটন করতে পেরেছে।বাকি পাঁচ অংশের খোঁজ অব্দি এতদিন সে পায়নি।

হসপিটালের করিডোরে নিস্তব্ধ ভাবে বসে আছে সে। রেদওয়ান আর তালুকদার বাড়ির প্রায় মানুষই উপস্থিত এখানে।তীব্রকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে দুই গুলি।বুকের অনেকটা উপরে লাগায় এই যাত্রায় তার সুস্থতা খুব শীঘ্রই হয়তো নিশ্চিত।

মেহেরের চোখ টলটল করছে।হয়তো কেউ একটু সহানুভূতি দেখাতে আসলেই কেঁদে ভাসাবে।পুরো বারো ঘন্টা এখনো জ্ঞান ফেরেনি তীব্রর। আরে বাড়ির মানুষেরা তো খবরই পেলো এখন।সবদিক তো মেহেরই সামলাচ্ছিলো।তার সামনেই তো সব হলো।

বারো ঘন্টা আগে,

গাড়িতে করে মেহেররা বেড়িয়েছে রেদওয়ান বাড়ির উদ্দেশ্যে। দু’জনেই বেশ চুপচাপ।বিকেলের সেই বিষয়টা নিয়েই হয়তো দুইজনের মাঝে এখনো ঝড় চলছে।গাড়িতে আর কেউ নেই। এতো রাত করে যাওয়ার দরকারও ছিলো না।তবে নূরিয়া মেয়েটা ওকে টিচ করে বলেছে শশুর বাড়ি থাকতেও জামাই নিয়ে বাপের বাড়ি কেন পড়ে আছে। মোবারক তালুকদার এই কথা শুনেও শুনেননি।তবে মেহেরের কথা শুনেছেন।মেহের বলেছিলো,
-“আমি তো আমার বাপের বাড়ি পড়ে আছি।আর তুমি তো তোমার বাপের বাড়ি কিংবা শশুরবাড়ি কোথাও নেই।পড়ে আছো আত্মীয়ের বাড়িতে”

তাইতো মোবারক তালুকদার মেহেরকে বেড়িয়ে যেতে বললেন।কথা শোনালেন।মহাসিন তালুকদার কিংবা রাবেয়া বেগম কেউ কিছু বলেননি। জুনায়েদ তালুকদার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না।আর তান্মি সে তো রুমে বসে এখনো কাঁদছে মেয়ের জন্য।মাহিন-মোয়াজ-জায়িন ওরা তখনও আত্মীয়দের বিদায় জানাতে ব্যস্ত।

লাগেজ গোছাতে যেতে নিলে মহাসিন তালুকদার পথ রোধ করে দাঁড়ান।মেহের বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়।সে জানে তার বাবা কেন তার দাদাকে কিছু বলতে পারেননা।তার বাবা যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত তখন তার দাদী মৃত। মোবারক তালুকদার প্রায় একটা বছর নাওয়া খাওয়া ভুলে ওনার সেবা করে ওনাকে সুস্থ করেছেন।কত মানুষ বলতো আরেক বিয়ে কর,আরেক বিয়ে কর।তিনি এসবে পাত্তা দিতেন না।নিজ হাতে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন।তাইতো চাইলেও বাবাকে কিছু বলতে পারেননা তিনি।

-“মেহের মা বাবাকে ভুল বুঝিস না।তুই তো জানিস আমি আব্বার মুখের ওপর কখনো কথা বলতে পারবো না।তোর আব্বুকে মাফ করিস মা”(মহাসিন তালুকদার)
-“আব্বু এটা কেমন কথা বলো? তুমি মাফ চাচ্ছো কেন?একদিন তো আমায় শশুরবাড়ি যেতেই হতো।আজ যাবো কিংবা কাল।যাবো তো নাকি।চিন্তা করো না।আম্মুর কাছে যাও। দেখো হয়তো আড়ালে কাঁদছে “(মেহের)
-“হুম মা”(মহাসিন তালুকদার)

মেয়ের মাথায় চুপু খেয়ে মহাসিন তালুকদার চলে যান।মেয়েরা হচ্ছে বাপের চোখের দুলালি।ছেলেকে যতটা শাসন করে শক্ত করা যায়,তার চেয়ে মেয়েকে ততটা কোমলতা দেখিয়ে কোমল হয়তো বাবারই বানায়।আর মেয়েদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসন করে তাদের মায়েরা।বাবা-মেয়ের সম্পর্কের বাঁধন অন্যরকম।

মেহেরকে রুমে আসতে দেখে তীব্র মুচকি হেসে বলে ওঠে,
-“ও বউ আসছো যখন দরজা বন্ধ করেই আসো।ঘুমাবো তো”
-“কোনো ঘুম না।জামা-কাপড় গোছাও।আজই শশুরবাড়ি যাবো।”(মেহের)
-“এতো রাতে?আচ্ছা ঠিক আছে”(তীব্র)
-“তাড়াতাড়ি”(মেহের)

মেহের নিজের কাপড়গুলো কোনমতে লাগেজে ভরে একটা জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়।বড্ড ক্লান্ত সে।তবে তার আত্মসম্মান সবার আগে।ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো তবে এখন আগে যেতে হবে শশুর বাড়িতে।

বাবা-মাকে বলে বেড়িয়ে যেতে পথিমধ্যে ভাইদের সাথে দেখা হয় ওর।পাশেই তৃষ্ণা ছিলো।সেও অবাক এই রাত দুপুরে ব্যাগ হাতে মেহের-তীব্রকে বের হতে দেখে। দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরে তাদের।মাহিন-মোয়াজ দু’জনই এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে অনেক প্রশ্ন।উত্তর হিসেবে মেহের বলে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতেই রাত-বিরতে যাওয়া।যদিও সন্দেহ করেছিলো তবে বেশি প্রশ্ন আর করেনি। দু’জন এখন বড় রাস্তায়।তীব্র ড্রাইভ করছে।

-“মেহের কাউকে তো আর সত্য বললে না। অন্ততপক্ষে আমায় তো বলো কি কারণে রাত-বিরতে বাড়ি ছাড়লে?”(তীব্র)
-“তোমার কি মনে হয় আমি কেন ছেড়েছি?”(মেহের)
-“আমার সাথে তো সময়ই ব্যয় করতে পারতে না।তাই হয়তো তাড়াতাড়ি বাড়ি ছাড়লে।যাতে আমার…”(তীব্র)

তীব্র কথা সম্পন্ন করতে পারেনা তার আগেই পেছন থেকে ট্রাক ধাক্কা মারে।গাড়ি গিয়ে বাড়ি খায় রাস্তার পিলারের সাথে।তাও যেন ট্রাকের লোকটার শান্তি হয়না।পেছন দিকে ফিরে আরো দুইটা ধাক্কা মারে।তীব্রর মাথা দিয়ে প্রচন্ড রক্ত ঝড়তে থাকে।আর মেহের তার হাত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে।মাথায় আঘাত পায়নি হাত সামনে রাখায়।

ট্রাক চালক চলে যেতেই মেহের বহু কষ্টে বের হয় গাড়ি থেকে।একার পক্ষে তীব্রকে বের করা হয়তো কষ্টসাধ্য ছিলো তার পক্ষে। তবুও বের করে তাকে খুব দ্রুত। কেননা গাড়ি থেকে ডিজেল লিক হচ্ছিলো।যখন তখন আগুন লাগতে পারে।আর তারপর এম্বুলেন্সের সাহায্যে মিনিট দশেকের মাঝে এই হসপিটালে। আল্লাহর রহমত ছিলো তাইতো তীব্রর পান্টের পকেটে ফোন ছিলো।নয়তো কি যে হতো।

বর্তমান,,

ফোনের শব্দে মেহের কেঁপে ওঠে।ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।ঘন্টা ছয়েক আগেও এই নাম্বারে সে কল করেছিলো। ইনফরমেশন সঠিক আংকেল ক্যানিয়ন বাংলাদেশে এসেছেন।আর ঠিক তার পরদিনই তীব্রকে মারার চেষ্টা?কিছুতেই যেন কিছু মিলছে না।আংকেল ক্যানিয়ন তো আবার এসবের পেছনে জড়িয়ে নেই?মনের প্রশ্নে নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানায়।তীব্র তাকে ওনার কাহিনী বলেছে। টাইকুন সাম্রাজ্য গড়ে ওঠার আত্মকাহিনী মেহের জানে।

মেহেরের ইচ্ছে হয় সে যদি জিন হতো।তবে লুকিয়ে লুকিয়ে সবার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করে সব খবর দিনের মাঝেই বের করে ফেলতে পারতো।যা সম্ভব নয়।মেহেরের রাগ লাগে বড্ড।আবার টেক্সট এসেছে তীব্রর ফোনে।”ইউ হি ডেইড?”আংকেল ক্যানিয়নের ফোন থেকে এমন ম্যাসেজ মেহের আশা করেনি।কল দেয়।অপর পাশ থেকে রিসিভও হয়।

-“আংকেল ক্যানিয়ন এস.আর আহত। মৃত্যুর সাথে….”(মেহের)
-“হুশ আমি জানি।এটাও জানি তীব্র বাঁচবে না আর।আর ওর মৃত্যুর পেছনে তো আমিই আছি”(ক্যানিয়ন)
-“আংকেল?”(মেহের)
-“হা হা হা‌।ও বড্ড বোকা বুঝেছো তো।ওকি কানাডাকে তোমাদের সো কল্ড এই দেশ পেয়েছে যে ওখানে অন্যায় অবিচার হবে।আমি ওকে কাহিনী শোনালাম আর ও মেনেও নিলো।আর কি লাগে।ওর কারণে আমার অনেক কাজ হয়ে গেছে।তাইতো দূর্ঘটনায় মারলাম নয়তো মাথায় বুলেট ঢুকিয়ে মারতাম”(ক্যানিয়ন)

মেহের আর কিছুই বলে না।ঘরের শত্রু বিভীষণ।তীব্রর খুন আর কেউ নয় বরং ওরই সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ করতে চেয়েছে।বাহ যার জন্য সে এতদিন এই কাজ করেছে সেই কিনা তাকে মারতে চাচ্ছে। তীব্র তো জানতেও পারলো না এখনো যে তার আংকেল কত বড় বাটপার।

৫০.
আংকেল ক্যানিয়ন আর কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর ক্যাসিনোর মতো জায়গাতে। বাংলাদেশেও এখন এমন জায়গা আছে বটে।আংকেল ক্যানিয়ন আশ্বস্ত করেন সামনের ব্যক্তিটিকে।তার অস্তিত্ব এখানে গোপন থাকবে।চাইলে সে মাস্ক,হুডি খুলতে পারে।এতো গরমে এভাবে থাকার মানে হয়না। আংকেল ক্যানিয়ন যেহেতু খোলামেলা দাঁড়িয়ে তো সামনের ব্যক্তিটাও খুলে ফেলে তার এই পরিচ্ছেদ।

তূর্যয়?হ্যা তূর্যয় ওনার সামনে দাঁড়িয়ে।ডিল করতে এসেছেন ওনারা। সবচেয়ে বড় ডিল। বাংলাদেশের ডিলারদের সাথে।ড্রাগ ডিলিং।এই দেশ থেকে কিনে অন্যদেশে পাচারের যেই ধান্দা সেইটার কাজেই আজ তার এখানে আসা।

-“টি.কে ডিলটা কনফার্ম করো”(ক্যানিয়ন)
-“ইয়েস বস।”(তূর্যয়)

ডিল কনফার্ম হতেই মদের নেশায় লুতপুত হয় ওনারা।এইসব জায়গায় তো শয়তানের বাস।রাতে মানুষের সংখ্যা থাকে অনেক অনেক বেশি।তাইতো দিন করে ডিল করা।সকাল সকাল এই ডিলিং এই সেফ মনে হয়েছে ওনাদের।তাইতো এই সকাল সকালই ডিল ফাইনাল হওয়ায় ওনাদের খুশি উৎযাপন!

মানুষ কত খারাপ হয় তাইনা?নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য কত ধরনের মিথ্যা কথাই না বলে মানুষ।তীব্র যাকে ভালো মানুষ ভেবে জনগণের হিতে আইনের বিরুদ্ধে কাজ করছিলো সেখানে সে নিজেই হয়েছে প্রতারিত।তার সাথেই তার আংকেল প্রতারণা করেছে। তীব্র কি সইতে পারবে এই প্রতারণা?আদৌতে কি সে বিশ্বাস করতে পারবো সব!নাকি এইসব বিশ্বাস করার চেয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণে সে বেশি আগ্রহী হবে।

মেহের কি আবারো ডিআইজির সাথে যোগাযোগ করে কেসটা হাতে নিবে?সে কি আংকেল ক্যানিয়নকে তার যোগ্য শাস্তি পাইয়ে দিতে পারবে!পারবে কি তীব্রর ভুল ভাঙাতে।আচ্ছা তীব্র কি পারবে কখনো আর কাউকে বিশ্বাস করতে? নাকি এখানেই ওর বিশ্বাসের সমাপ্তি ঘটবে!আর তূর্যয়ই বা কিভাবে আংকেল ক্যানিয়নের সাথে জড়িত হলো।সে যে ওকে কখনো ধোঁকা দিবে না তার কি মানে আছে!

চলবে কি?
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া-আপুরা। দুঃখিত কালকে পর্ব দিতে না পারায়।হুট করেই সব কাহিনী গুলিয়ে গিয়েছিলো।তিনবার লিখেও কিছু সাজাতে পারিনি। ভুল-ত্রুটিগুলো মার্জনার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here