সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁 #পর্বঃ১৪ #লেখনীতেঃsuraiya_rafa

0
22

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ১৪
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[প্রাপ্ত মনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য ]

দিনের অন্তিম প্রহর চলমান। সূর্য পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে গিয়েছে সেই কবেই। তাও সূক্ষ্ম সোনালী মিয়িয়ে যাওয়া আলোর ছঁটা দেখে মনে হয় রাত নামেনি,এখনো সন্ধা বেলাতেই আটকে আছে প্রকৃতি। পশ্চিম আকাশে সূর্যের শেষ আলোটুকু হানা দিলেও পুব আকাশে ঠিক তার বিপরীত।সেথায় ঘন-কালো মেঘ গুরগুর করছে, এক পলক তাকালে মনে হয় এখনই তুফান ধেয়ে আসবে।

ভর সন্ধ্যা বেলা মেঘমল্লার গুরগুরানি আর দমকা হাওয়া পেছনে ফেলেই বাসায় ফিরেছে ক্রীতিক। সাধারণত সপ্তাহে তিনদিন ম্যাক্রোকোনোমিক্স এর উপর ক্লাস থাকে ক্রীতিকের। এছাড়া বাকিটা সময়, পাহাড়ি দূ’র্গম কোন রাস্তায় বাইক রাইডিং নয়তো অন্ধকার রুমে শুয়ে বসে অডিও বুক শুনে কাটিয়ে দেয় ও। নিজের একঘেয়ে জীবনটা বর’ই অপ্রীতিকর ক্রীতিকের কাছে।মাঝেমধ্যে ই মনে হয়, এমন জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয়।

সোনার চামচ মুখে নিয়ে বিত্তশালী পরিবারে জন্ম নেওয়া ক্রীতিকের আশেপাশে মানুষের অভাব ছিলোনা কোনো কালেই।তবুও সে ছিল চিরাচরিত একা। এতো টাকা, পয়সা ব্যাংক ব্যালেন্স ক্ষমতা সব কিছুই ওর কাছে মূল্যহীন ছিল বরাবরই, বুঝ হবার পর থেকে কোনদিন কোনো আবদার অপূর্ণ থাকেনি ক্রীতিকের। হোক সেটা ন্যায় আবদার কিংবা অন্যায়।এই সোনায় মোড়ানো জীবনে ক্রীতিক আজন্ম যেটা পায়নি সেটা হলো, ভালোবাসা,আদর, স্নেহ আর পরিবার নামক অদৃশ্য বন্ধন। যার দরুন ছোট থেকেই নরম হৃদয় তৈরি হওয়ার জন্য সকল উপকরণ সর্বেসর্বা বাদ দিয়ে, স্কুল, কলেজ,ভার্সিটি সব খানে তৈরি করেছে নিজের ক্ষমতা আর নেতৃত্বের প্রভাব। নেতৃত্ব আর কতৃত্বের মাঝে র’ক্ত মাং’সের হৃদয়টা কবেই যে পাথর রূপ ধারণ করেছে তা টের পায়নি ক্রীতিক। ঢাকা দক্ষিণের প্রাক্তন মেয়র তারউপর বর্তমান মন্ত্রী জামশেদ জায়ান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী। পাবলিক ভার্সিটির বাঘা বাঘা ছাত্র নেতা থেকে শুরু করে এলাকার ছোট বড় পাতি নেতা,সবাই সমীহ করে চলতো নর্থসাউথে পড়া অবাঙালি চেহারার ক্রীতিককে। পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে যে কোন চায়ের আড্ডা কিংবা মিছিল মিটিং ক্রীতিকের নাম ছিল সবার মুখে। দিন আর রাত নেই, মা’রামা’রি কা’টাকা’টি, মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে সব কিছুতে ক্রীতিকের এক ইশারায় সবাই তৎক্ষনাৎ হাজির হতো বিনাবাক্যে। সে সসময়ে পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটে সবাই একই বুলি আওরাতো,

—-জামশেদ জায়ানের বডিগার্ডের দরকার নেই ,তার ছেলে একটাই একশো।

একটা অপারগ, অনিশ্চিত, হৃদয় নিংড়ানো অদম্য কষ্টকে হটাতে হৃদয়টাকে পাথর বানিয়ে, নেতৃত্বের জয়জয়কারে তখনও ভালোই ছিল ক্রীতিক।উঠতে বসতে দলের লোকেদের ভালোমন্দ খেয়াল রাখতে রাখতে সময় কে’টে যেত ওর।

কিন্তু আটবছর আগে হঠাৎ করে হৃদয়ে অরুর আগমন, আর অরুর সাথে করা সেই ছোট্ট একটা ভুলের জন্য সব ছাড়তে হয়েছিল ওকে।নিজের বাড়ি,নিজের দেশ,নিজের কতৃত্ব, নিজের দল, নিজের লোক সব,সবকিছু।

সবকিছু ছেড়ে হাজার মাইল দূরে এসে,ধরাবাধাহীন ক্রীতিক কে বন্ধী হতে হয়েছিল আমেরিকার মতো নিয়মতান্ত্রিক সমাজে। তখন থেকেই মানুষের উপর ক্রীতিকের চরম বি’রক্তি। তখন থেকেই ওর কাছে ভালোবাসার মানেই স্বার্থ হাসিল। স্বার্থের পৃথিবীতে নিঃস্বার্থে ভালোবেসে বুকে টেনে নেওয়ার মানুষের উপস্থিতি কল্পনা বইকি কিছুই না। প্রথম দিকে আমেরিকার দিন গুলো ক্রীতিকের জন্য ছিল, ভ’য়ংক’র ক:ষ্টদায়ক আর বিভৎস। যে ক্রীতিক ডানে বামে, পেছনে, মানুষ ছাড়া এককদম বাইরে পা বাড়াতো না, সে নিজের জন্য একটা হাউজ মেইড কিংবা সার্ভেন্ট পর্যন্ত নিয়োগ দেয়নি। আমেরিকা আসার পরেই যোগাযোগ ছিন্ন করেছে দেশের প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা শুভাকাঙ্খীর সাথে।এমন কি নিজের বাবার সাথেও। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে কক্ষব’ন্ধী দূর্বিষহ জীবন কাটিয়েছে ও । এভাবে দিন মাস যেতে যেতে একটা পর্যায়ে এসে উ’গ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে ক্রীতিক। হুট করে রে’গে যাওয়া, যাকে তাকে একটুতেই আ’ঘাত করে বসা, দিকভ্রান্তের মতো বাইক রাইড করা থেকে শুরু করে নিজেই নিজের হা’ত কাঁ’টা কি করেনি ও। ক্রীতিক যখন নিজেই নিজের জন্য অনিরাপদ হয়ে পরে,তখনই এঞ্জেল এর মতো আবির্ভাব ঘটে ওরই মতো ছ’ন্নছাড়া আরও তিনজন মানুষের। তাদের জীবনেও ভালোবাসার বড্ড অভাব। একেকজনার জীবন যেন একেকটা ট্রা’জেডী।

এলিসা, অর্নব আর সায়রই পরক্ষনে সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শে একটু একটু করে, সাভাবিক করে তোলে ক্রীতিককে। ওই জন্যই তো ক্রীতিকের হাউজ পাসওয়ার্ড প্রতিবার হ্যা’ক করে ওরা। আর সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ মতেই প্রত্যেক উইকএন্ডে একজন না একজন চলে আসে জনমানবহীন শুনশান এই শহরতলীতে।
আর অরু? সেতো তখন খুব ছোট ক্রীতিকের পুরুষালী হৃদয়ে হঠাৎ করে জন্মানো অজানা মায়া, অজানা অনূভুতি, অজানা আসক্তি কিছুই ওর বোধগম্য নয় তখন। তবুও ক্রীতিকের অরুর উপর আকাশসম রা’গ,জি’দ আর অভিমানের ছড়াছড়ি। আট বছর পরে এসেও না ও অরুকে ভুলতে পেরেছে আর না নিজের রা’গটা অরুর উপর ঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে।এতোবছর পর আবারও আটকা পরেছে বহুদূরে ফেলে রেখে আসা সেই পুরনো মায়াডোরে।কেনইবা পরবে না? অরুর প্রতি ক্রীতিকের আসক্তি টা যে এক দুদিনের নয়, তারউপর অরু এখন সদ্য যৌবনে পা রাখা অষ্টাদশী রমনী। ক্রীতিক যখন মায়ায় পরেছিল তখন নিতান্তই কিশোরী অরু, গরন বরন ও তেমনই ছিল।
আর এখন, সর্বাঙ্গে রূপের ছড়াছড়ি তার।

কি নেই? ভালোবাসা হীন একাকী হৃদয়ের ক্রীতিকের অদম্য বাসনা পূরনের জন্য সব কিছুই উপস্থিত ওর মাঝে। তাহলে ক্রীতিক কেন পারছে না খুব সহজে অরুকে আপন করে নিতে? ক্রীতিক তো সমাজের নিয়ম কিংবা নি’ন্দা কোনোটাতেই পরোয়া করেনা কোনোকালেই , তবুও হৃদমাঝারে কেন এই পাহাড়সম দূরত্ব ? আপাতত নিজ মন গহীনের অযাচিত প্রশ্নের কোন উত্তরই নেই ক্রীতিকের কাছে। তাই পেছনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, ভেতরের দীর্ঘশ্বাস নিংড়ে বের করে পাসওয়ার্ড টিপে মেইন ডোরের লক খুলে ঘরের দিকে পা বাড়ায় ক্রীতিক।
***********************************************

পুরো হলরুম না,পুরো বাড়ি ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। তিমিরে ঢাকা ঘরের দুয়ারে পা রাখা মাত্রই, পায়ের কাছে নরম কিছুর অনুভূতি হতে, ভ্রুকুঞ্চিত করে নেয় ক্রীতিক। তারপর মেঝের দিকে তাকিয়ে অন্ধকারে জ্বলতে থাকা সবুজ চোখ জোড়া দেখে বুঝতে পারে এটা অরুর নেউটে বিড়ালটা। বিড়াল এখানে তাহলে অরু কই?
তাছাড়া বিড়াল সব যায়গায় গেলেও ঘুনাক্ষরেও ক্রীতিকের সামনে আসেনা, তাহলে আজ হলোটা কি? আশ্চর্য। বিড়ালের এমন আকষ্মিক গায়ে মাখামাখি ভাব দেখে ভাবনায় পরে গেলো ক্রীতিক। তাই দেরি না করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো লাইটের সুইচবোর্ডের কাছে। অন্ধকারে ক্রীতিক নতুন হাটছে না, তাই সুইচবোর্ড পর্যন্ত যেতে মোবাইলের আলো জ্বালানোর আর প্রয়োজন পরেনি ওর।

একযোগে পুরো বাড়ির প্রত্যেকটা রুমের আলো জ্বালিয়ে ডোরাকে খুজতে দরজার দিকে চোখ রাখলো ক্রীতিক,কই দরজার কাছেতো নেই,তাহলে? চারিদিকে হাতরিয়ে একটু পর খেয়াল করলো বিড়ালটা ওর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে। বিড়ালের দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে ক্রীতিক বললো,
— হোয়াটস রং? কাপড় নোংরা করছিস কেন? এক্ষুনি দুরে যা বলছি। নয়তো তোকেও তোর মালকিনের মতো চ’ড়ি’য়ে গাল লাল করে দেবো।

ক্রীতিকের বাংলা ইংরেজি মিলানো ধমকেও কাজ হলোনা,ডোরা আগের ন্যায়ই দাঁড়িয়ে আছে। সেই দেখে ক্রীতিক দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,
—- ইউজলেস ক্যাট, কথা না শুনলে একদম ঘর থেকে বের করে দেবো। যেমন মালকিন তার তেমন পোষা বিড়াল, নিজে সারাদিন বে’য়াদবি করে করে, বিড়ালটাকেও বে’য়াদবি শিক্ষা দিয়েছে। ইচ্ছে করছে দুটোকেই ধরে আ’ছাড় মা’রি।
ডোরার দিক থেকে পাকাঁনো চোখ সরিয়ে ক্রীতিক দোতলার করিডোরের দিকে তাকিয়ে চেচাঁতে লাগলো,
—- কোথায়, তোর বে’য়াদব মালকিনটা? কতবার বলেছি আমার চোখের সামনে যাতে এই নেউটে বিড়ালটা না আসে। একে দেখলে আমার ইরেটেটিং হয়। অরু,এ্যাই অরু এক্ষুনি নাম নয়তো তোর বিড়ালকে ঘাড় ধরে বের করে দেবো আমি। অরু???

ডোরা কাঁউচের সামনে গিয়ে মিঁয়াও মিয়াঁও করছে দেখে ক্ষী’প্ত ক্রীতিকের চোখ গেলো সেদিকেই। দেখলো কাউচের উপর জুবুথুবু হয়ে কম্ফোর্টার মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে অরু। হাটু সমান লম্বা খোলা চুল গুলো মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ওর । দেখে মনে হচ্ছে চেতনা নেই।
অরুকে এমন অসার হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে ক্ষনিকের মাঝে হৃদপিন্ড ধরাক করে উঠলো ক্রীতিকের। এতোক্ষণ ধরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা মেজাজটা দপ করে নিভে গিয়ে অজানা ভয়ে ছেয়ে গেলো মস্তিষ্ক। ও এক পা দু’পা করে এগিয়ে হাঁটু গেড়ে কাউচের সামনে অরুর মুখোমুখি হয়ে বসে পরলো, অতঃপর মৃদু আওয়াজে ডেকে উঠলো,
— অরু?

অরু নিশ্চুপ।

গলার মাঝে কাঁ’টার মতো তীক্ষ্ণ কিছু বিঁধছে মনে হচ্ছে গলার স্বর বের হওয়ার যো নেই,ক্রীতিক সেটাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে আবারও ডাকলো অরুকে।
—- অরু,
এবার গলার স্বরটা আরও খানিকটা নরম শোনালো ওর।
এক বার, দুইবার, তিনবারের সময় ব্যাস্ত হয়ে পরলো ক্রীতিক, ভেতরে জমিয়ে রাখা দূরত্ব, জরতা,অভিমান,আক্রোশ সব কিছুকে সাইডে সরিয়ে, দু’হাতে আঁজলা করে ধরলো অরুর জ্বরে লাল টকটকে হয়ে যাওয়া মুখটা।অতঃপর উদগ্রীব হয়ে ওর মুখমন্ডল ঝাঁকিয়ে উঠে বললো,
—- অরু,এই অরু, হার্টবিট, ক্যান ইউ হেয়ার মি?
এই প্রথম মনে মনে নয় বরং মুখ ফুটে অরুকে আদুরে নামে ডাকছিল ক্রীতিক। যদিও ক্রীতিকের আপাতত কোনোকিছুতেই খেয়াল নেই। ও তো স্রেফ অরুকে জাগিয়ে তুলতে চাইছে।
.
অবশেষে প্রায় আধঘন্টার প্রচেস্টায় ঢুলুঢুলু করে চোখ খোলে অরু, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে। তীব্র জ্বরে কি যেন বিড়বিড় করছে অস্পষ্ট আওয়াজে। অরু চোখ খুলেছে দেখে সস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে ক্রীতিক। মনে মনে ঠিক করে এখনই একবার ডক্টর কে কল করে আনতে হবে।

কিন্তু ওর ভাবনার ছেদ ঘটে তপ্তদুটো নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে। জ্বরের ঘোরেই দুহাতে ক্রীতিকের গলা জড়িয়ে ধরেছে অরু। ক্রীতিক সে অবস্থাতেই স্থীর হয়ে বসে আছে,যেন নড়াচড়া করতেই ভুলে গিয়েছে ও। এবার পাশঘুরে শুয়ে নিজের হাতদুটো আরও শক্ত করে নিলো অরু। সঙ্গে সঙ্গে অরুর দিকে ঝুঁকে পরলো ক্রীতিক, অরুর তপ্ত প্রশ্বাস, কাঁপা কাঁপা অধর আর নিঃশ্বাসের তালে তাল মিলিয়ে বারবার ওঠানামা করা ধনুকের মতো শরীরটা এক ঝলক পরখ করে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয় ক্রীতিক।অরু জ্বরে পুড়ছে, এই সময় নিজের মস্তিষ্কের অযাচিত কামুক চিন্তা ধারা গুলো একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে ও জ্বরের ঘোরে থাকা অরুকে শুধালো,
—- অরু, ক্যান আই টাচ ইউ?

অস্পষ্ট সুরে কিছু একটা বিড়বিড়ালো অরু,ক্রীতিকের কান অবধি তা পৌঁছায় নি। তাও নিজের কোর্ট আর টাইয়ের নট’টা খুলে সেগুলোকে একপ্রকার ছু’ড়ে ফেলে, কাউচের উপর উঠে বসে, কম্ফোর্টার সহ’ই আলগোছে অরুকে কোলের মাঝে নিয়ে নিলো ক্রীতিক।
কম্ফোর্টার আর ক্রীতিকের শরীরের ওমে, মূহুর্তেই মুখের বিড়বিড়ানি বন্ধ হলো অরুর,মনে হয় শীত কমেছে।
ক্রীতিক অরুর মুখের পানে তাকিয়ে বলে,
—- এমন কেন করিস অরু? আমাকে কি একটু আপন ভাবা যায়না? একটা কল দিলে কি হতো? আমি নাহয় খুব খারাপ, অনুকে কি কল দেওয়া যেত না? এতো বেখেয়ালি কেন তুই?? তুই এমন করলে আমার অগোছালো জীবনটা কে সাজাবে বল?

অরুর কাছ থেকে জবাব আসেনা, আসার কথাও না, অরুতো এখন নিজের মাঝেই নেই।
ক্রীতিক একটু থেমে আবার বলে,
—- এখন তুই জ্বরের ঘোরে আছিস,কিছু বললেও মনে থাকবে না তোর, রাইট??এখন যদি আমি বলি,
ক্রীতিক কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলো তারপর বললো,
—- কিছুনা। তোর যথেষ্ট বয়স হয়েছে বোঝার,আর আমাকেও তোর বুঝেই নিতে হবে। নেক্সট টাইম নিখিল নিখিল করলে তোকে চি’বিয়ে খাবো আমি। সেই সাথে ওই ধূর্ত নিখিলকেও পুঁ’তে রেখে দিয়ে আসবো ।

. বেশ অনেকটা সময় পর অরুকে কোলে তুলে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে আবারও নিচে নামে ক্রীতিক।ফর্মাল শার্টের উপরেই এ্যাপ্রোন পরে পুরো রুম গুছিয়ে ফেলে সে। তারপর কিচেনে গিয়ে হোয়াইট পোরিজ বানিয়ে নিয়ে যায় অরুর কাছে। মাথার জলপট্টিটা উল্টে দিয়ে অরুর মুখে একটু একটু পোরিজ দিতে দিতে ক্রীতিক আহত সুরে বলে,
—– আমি খুব খারাপ তাইনা? সব সময় কষ্ট দিই তোকে। কথার আ’ঘাতে হৃদয়টা বিষিয়ে দিই। কি করবো বল? তোর জন্যই আমি এমন….
***********************************************
ক্যাফের সর্বশেষ কাস্টমারকে বিদায় জানিয়ে মাত্রই পার্ট টাইম শেষ করে বেরিয়েছে অনু। আজ কাজের অনেক চাপ ছিল, তার উপর সেই সকালে বেরিয়েছে,আসার আগে দেখে এসেছে অরুর শরীরটা ভালো নেই,তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে ফোন বের করে ডায়াল করলো ক্রীতিকের বাসার ল্যান্ডলাইনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কলটা কেউ তুললো না, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনু অবশ্য ছাতা নিয়েই এসেছে সাথে করে, তাই আর বৃষ্টি কমার অপেক্ষা না করে ছাতা মাথায় বেড়িয়ে পরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

রাতের বেলায় ঝুম বৃষ্টিতে পিচ ঢালা রাস্তা গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পরছে গিয়ে ঢালু জমিনে। কুর্তি আর স্কিনি ডেনিম পরিহিতা অনু,সেই বৃষ্টির পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে হাটছে ঠিক ছোট বেলার মতো। এভাবে কিছুক্ষণ হাটতে হাটতে অনু খেয়াল করে ও একা নয় ওর পাশে আরও একজন ওর সাথে তাল মেলাচ্ছে। বিস্ময়ে, বিহ্বলিত হয়ে অনু ছাতা তুলতেই দেখতে পায় পরিচিত সেই হাসি মুখখানা। প্রত্যয়ের মুখটা একবার পরখ করে আবারও ছাতা নামিয়ে নিয়ে অনু বলে,
—– আপনি সবসময় রাতের বেলা উদয় হোন কেন বলুনতো?

—- কারন আমি চাঁদ।

অনু একই ভাবে ছাতা তুলে শুধালো,
—– কি বললেন?
প্রত্যয় এবার নিজের ছাতাটা উঁচিয়ে বলে,
—- দিনের বেলা অফিস থাকে ম্যাডাম।
নিজের কাজ জেকে ভাইয়ের কাজ দু’টো একসাথে সামলাতে হয়।

—- আপনি ক্রীতিক ভাইয়াকে ভাই ডাকেন কেন?

প্রত্যয় জবাব দেয়,
—- সে আমার বহু পুরোনো বড় ভাই। সে জন্য।

—- আর আপনার পরিবার?

—– সবাই আছে বিডিতে।

অনু বুঝতে পারার মতো উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

ততক্ষণে উল্টে প্রশ্ন ছু’ড়লো প্রত্যয়,
—- আপনার মা তো কোম্পানির চেয়ার ওয়েম্যান, তাহলে এতো কষ্ট করে পার্ট টাইম কেন করেন?

অনু হাসার চেষ্টা করে বললো,
—– আমাদের আর ক্রীতিক ভাইয়ার সম্পর্কের জটিলতা তো জানেনই। উনি মায়ের চিকিৎসার জন্য এতোএতো খরচ বহন করছে সেই অনেক। তাছাড়া মায়ের অধিকার থাকলেও আমাদের তো এসবে কোনো অধিকার নেই, তাই নিজের আর অরুর হাত খরচ মেটানোর জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটার ব্যাবস্থাই করা আর কি।

অনুর আত্মসম্মান প্রগার, নিতান্তই ঠ্যাকায় পরে মাকে নিয়ে এতোদূর এসেছে, অনুর কথার টোনে তা স্পষ্ট বোধগম্য হলো প্রত্যয়ের। তাই ও এসব ফিন্যান্সিয়াল কথার বাইরে গিয়ে শুধালো,
—- আপনার মা এখন কেমন আছেন?

অনু হাসি মুখে জবাব দেয়,
—- ভালো আছেন। ডাক্তার বলেছেন শারীরিক উন্নতি হচ্ছে দ্রুত। এরকম হলে খুব শীঘ্রই অপা’রেশন করানে সম্ভব হবে।

প্রত্যয় সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- আপনাকে খুশি দেখতে ভালো লাগছে। আপনার হাসিটা আমার হৃদয় ছুয়ে যায়। দেখলে মনে হয়,হৃদপিন্ডে ছো’ড়া তরতাজা তী’রের ফলা।

অনু হাটার গতি পুরোপুরি থামিয়ে দিয়ে প্রত্যয়ের পানে চেয়ে বললো,
—- প্রত্যয় সাহেব, বৃষ্টিতে ভিজবেন? বসন্তের বৃষ্টিতে?

প্রত্যয় তৎক্ষনাৎ নিজের ছাতা ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
—– আপনার এই খুশিটুকু ধরে রাখার জন্য জান কোরবান।
প্রত্যয়ের সাথে সাথে অনুও নিজের ছাতাটা নামিয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে বরফ শীতল বারিধারা এসে ছুঁয়ে যায় দুটো উচ্ছ্বাসিত,রোমাঞ্চকর প্রান।
চলবে…..
রিচেইক করিনি বানান ভুল থাকতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here