সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁 #পর্বঃ২৫ #লেখনীতেঃsuraiya_rafa

0
598

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ২৫
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[কপি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[শুধুমাত্র প্রাপ্ত মনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

আরও একটা ব্যস্ত দিনকে বিদায় জানিয়ে সন্ধ্যা তিমিরে মুড়িয়ে গিয়েছে চারিপাশ। বাইরে বৃষ্টি নেই, তবে প্রবল বেগে হাওয়ার তান্ডব চলমান। ক্রীতিকের বাড়িটা ক্যালিফোর্নিয়া আর সানফ্রান্সিসকোর মাঝামাঝি শহরতলীতে হওয়ায় আশপাশের নির্জন পরিবেশ ছাপিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আগত ঝিরিঝিরি হাওয়ার তান্ডবটা বরাবর একটু বেশিই মনে হয়। কিন্তু আজ সন্ধ্যার ঝড়ো হাওয়াটা তার চেয়েও দিগুণ মনে হচ্ছে। হঠাৎ করেই কেন এই ঝড়ো হাওয়া কে জানে?

সারাদিন পরে মাত্রই ভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফিরেছে ক্রীতিক। পরনে ইতালিয়ান দের মতো আঁটোসাটো ফর্মাল স্যুট। স্যুট গলিয়ে পুরুষালী শরীরের পেশিগুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান। হাতে সিলভার রঙের রোলেক্স ঘড়ি, মাথার চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে সেট করা। এই ক্রীতিককে দেখলে কেউ ভুলেও বলবে না, যে সে ছন্নছাড়া, বেপরোয়া, আর উদভ্রান্তের মতো বাইক রাইড করে। যার কাছে নিজ জীবনের দু’পয়সার মায়াটুকু নেই। ওর ভেতরের মায়া আসক্তি যেটুকুই আছে তা একমাত্র অরুকে ঘীরে।

হুহু বাতাসের মাঝেই ক্রীতিক গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে সোজা ঢুকে গিয়েছে বাসার মধ্যে। পাসওয়ার্ড টিপে হলরুমে পা রাখতেই একটা শুষ্ক ঢোক গিললো ক্রীতিক। পুরো বাড়ি অন্ধকারে ছেয়ে আছে, কোনোরূপ মানুষের আওয়াজ নেই, একটা নিঃশ্বাসের শব্দও নেই। তাহলে অরু, অনু ওরা কোথায়? সকালেই তো ক্রীতিক অরুকে বাড়িতে দেখে গিয়েছে,তাহলে এখন কোথায়? অরুকি সত্যিই চলে গেলো?

মস্তিষ্কের ভেতর একের পর এক হা’মলা দিতে থাকা দানাবাঁধা অসহিষ্ণু প্রশ্নের উত্তর ভাবতে গিয়েই সুদর্শন তীক্ষ্ণ চোয়ালটা আরও আরও খানিকটা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো ক্রীতিকের, দাঁত গিয়ে ঠেকলো দাঁতের সাথে। ও দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে সুইচবোর্ড চেপে হলরুমের আলো জ্বালালো। আলো জ্বালাতেই কিচেনের ওপাশ থেকে মিয়াঁও মিয়াঁও আওয়াজ করে গা ঢাকা দিলো ডোরা, ক্রীতিক ডোরার দিকে এক নজর দৃষ্টিপাত করে চেঁচিয়ে অরুর নাম করে ডেকে উঠল,
—অরুউউউ! অরুউউ! এক্ষুনি নিচে নাম, নয়তো আমি উপরে গেলে তোর খবর আছে।

নাহ দোতলার ঘর থেকে কোনোরূপ আওয়াজ ভেসে আসলো না, অরুও হন্তদন্ত হয়ে নেমে এলোনা। রাগে ফোঁস ফাঁস করতে করতে এবার ক্রীতিক নিজেই সোজা দোতলায় গিয়ে অরুদের রুমে ঢুকে যায়। রুমে ঢোকা মাত্রই দুচোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো ক্রীতিক। যা ভেবেছিল তাই, অরু ওকে না জানিয়েই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে, রুমের মধ্যে এখন আর অরুর একটা সুতোও অবশিষ্ট নেই। থাকলে হয়তো সেটাকেও চুলের মতো বাক্সবন্ধি করে রাখতো ক্রীতিক। এই মূহুর্তে মস্তিষ্কের রাগ, জিদ,হিং’স্রতা সবকিছু ছাপিয়ে ভেতরটা তীব্র দহনে পু’ড়ছে খুব। অরু ক্রীতিককে না জানিয়েই চলে গেলো, কি করে পারলো এটা?

বেশ কয়েক মিনিট পেরিয়ে গেলে বুকের ভেতরে অনেকটা অক্সিজেন মিশ্রিত বাতাস ভরে নিয়ে চোখ খোলে ক্রীতিক। চোখ খুলতেই আবারও সেই অজানা হাহাকার, অরু নেই, অরুর পায়ের নুপুরের রিনঝিন আওয়াজ নেই, অরুর শরীরের গন্ধ নেই, কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু নেই। এই মূহুর্তে পুরো বাড়িটাকেই মৃ’ত্যুপুরি ঠেকছে ক্রীতিকের নিকট, ওর কেন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে এখানে, শরীরের মাঝে কুন্ডলী পাকিয়ে ওঠা তীব্র অস্থিরতা দমাতে একেএকে কোর্ট, টাই, ঘড়ি সবকিছু খুলে মেঝেতে ছু’ড়ে মা’রে ক্রীতিক। আজ আবারও বহুদিন বাদে সেই পুরনো বিষন্নতা এসে হানা দিয়েছে মস্তিষ্কে, মনে হচ্ছে এমন দম বন্ধকর পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃ’ত্যুই শ্রেয়।

যেহেতু ক্রীতিক অনেক দিনের চলমান চিকিৎসার প্রভাবে আগের চেয়ে ভালো আছে, তাই আপাতত নিজেকে সামলে নিতে পারছে। তবুও এসব কু’চিন্তা ভাবনা গুলোকে দূরে ঠেলতে চায় ও। কিন্তু এই বদ্ধ রুমের ভেতরে এক ফোটা দম নেওয়ার উপায় নেই। তাহলে কি করা যায়?অতঃপর কিছু একটা ভেবে দ্রুত দোতলা থেকে নেমে আসে ক্রীতিক। নিচে গিয়ে বাইকের চাবি আর হেলমেট নিয়ে বেড়িয়ে পরে কোনো এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
*****************************************

ছোট মতো জীর্নশীর্ন কোনো ফ্ল্যাট নয়, অরুদের জন্য রেন্ট করা হয়েছে বিলাসবহুল এক এপার্টমেন্টাল ভবন। অরুদের এপার্টমেন্টটা ভবনের তিন তলায় অবস্থিত৷ আজমেরী শেখ হার্টের রোগী তাই খুব বেশি উপরে নেওয়া হয়নি বাসাটা। সন্ধ্যা থেকে সবকিছু গোছগাছ করতে করতে প্রায় রাত হয়ে গিয়েছে অনেক। ওরা তিনজন ছাড়াও আজমেরী শেখের নতুন এসিস্ট্যান্ট রাজ হাতে হাতে অনেকটা সাহায্য করেছে সব কিছুতে । ছেলেটা বাঙালি, দেখতে শুনতেও বাঙালিদের মতোই শ্যাম বর্নের। সভাব চরিত্র মোটেও গুরুগম্ভীর নয়, কথায় কথায় হাসে, অন্যকেও হাসায়। আজমেরী শেখের মতো বিচক্ষণ মহিলাও তার কথায় হাসতে বাধ্য হয়, রাজকে পেয়ে অনুও অনেকটা নিশ্চিন্ত, ছেলেটা মায়ের ভালোই খেয়াল রাখতে পারবে,সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। রাজ প্রথমেই এসে যে কাজটা করেছে অরুকে নিক নেম দিয়ে দিয়েছে পিচ্চি পাখি। রাজের এমন লুতুপুতু ডাকে অরু বেশ বিভ্রান্ত, তাছাড়া সে পিচ্চিটা কোথায়? একটা বিবাহিত মেয়েকে পিচ্চি বলে,আশ্চর্য? অরু যখন হিজিবিজি ভাবতে ভাবতে দাড়িয়ে থেকে রাজের কর্মকান্ড পরখ করছিল, তখনই ওর পাশে এসে দাঁড়ায় অনু, কাঁধের উপর কনুই ঠেকিয়ে বলে,
— ছেলেটা বেশ স্মার্ট, কি বলিস? আসার পর থেকেই কেমন সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে।

অরু মুখ ভেঙিয়ে বলে,
— স্মার্ট না ছাই আমাকে বলে কিনা পিচ্চি পাখি? তুইই বল আপা আমাকে কি পিচ্চি মনে হয়?

অনু অরুর মাথায় চাটি মে’রে বললো,
— বোকা মেয়ে, তুই আমাদের মধ্যে সবার ছোট তাই আদর করে পিচ্চি বলেছে, এতে গাল ফুলানোর কি আছে?

অরু অনুকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
— ও তুই বুঝবি না আপা। মন ভালো নেই, দূরে যা।

— এখানে না বোঝার কি হলো? আজিব!
অনু আর কথা না বারিয়ে, ঠোঁট উল্টে বিড়বিড় করতে করতে কিচেনের দিকে চলে যায়। অনু যেতেই রাজ অরুর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,
— এই যে পিচ্চি পাখি দাঁড়িয়ে না থেকে একটু হেল্প করলেও তো পারো। একা হাতে এতোগুলা ওয়ালবোর্ড লাগানো যায়?

রাজের কথায় অরু তেঁতে উঠে মুখ ঝামটি দিয়ে রুমে যেতে যেতে বললো,
— পারবো না, করলে করুন না করলে ভাগুন।

অরু চলে যেতেই রাজ মুচকি হেঁসে বলে,
— হাউ কিউট।
.
রুমে এসে লাইট নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো অরু, অরুর উদাস উদাস লাগছে খুব, কালকে তৈরি হওয়া বুকের মাঝের চিনচিন ব্যথাটা এখন তীব্রাকার রূপ ধারণ করেছে। ঘুমানোর আশায় চোখ দুটো বন্ধ করলেই একটা অসম্ভব সুদর্শন রাগী রাগী মুখ এসে হানা দিচ্ছে চোখের পাতায়।কি চায় সে? কেন ঘুমাতে দিচ্ছে না? কেনইবা বুকের বা পাশে তীব্র ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে? ক্রীতিকের কথা ভাবতে গিয়েই অরুর অকস্মাৎ মনে পরে যায় ডোরার কথা। এখন অরু নেই, ক্রীতিক নির্ঘাত ডোরাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।

— না না।
ডোরার কথা চিন্তা করে অরু শোয়া থেকে উঠে বসলো, মনেমনে ঠিক করলো, কাল ভার্সিটি হয়ে ক্রীতিকের বাড়িতে গিয়ে ডোরাকে যতদ্রুত সম্ভব নিয়ে আসতে হবে।

— কিন্তু রাতই বা কখন শেষ হবে? আর আগামীকালই বা কখন আসবে?
অস্ফুটে কথাটা উচ্চারণ করতেই আবারও চোখ মুখ বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো অরুর। বুকের ভেতর সেই এক তীক্ষ্ণ চিনচিন ব্যথা, অরুর কষ্ট হচ্ছে, অজানা কষ্ট, কিন্তু কার জন্য? বারবার মনে পরছে ক্রীতিকের মুখ থেকে উগড়ে আসা স্পষ্ট কথাগুলো,
—আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস? তোর প্রেমে পরা।

গুনেগুনে বারো বছরের বড় হয়েও ক্রীতিক অরুর প্রেমে পরেছে, কথাটা ভাবতেই শিহরিত হয়ে উঠছে অরুর হৃদয় মন সব কিছু । হাজার চেষ্টা করেও ক্রীতিকের কথা মাথা থেকে সরানো যাচ্ছে না। না চাইতেও ওই মুখটাই মনে পরছে বারবার। এ যেন মন মস্তিষ্কের এক তীব্র দোটানা। আর ভালো লাগছে না,এই উদাসীনতা, মনটা যে কি চাইছে নিজেও জানেনা অরু।
ওই জন্যই তো ক্রীতিককে না জানিয়ে চুপিচুপি চলে আসা, নয়তো ক্রীতিক সবার সামনে জিদের বসে কি না কি করে বসতো কে জানে?

ক্রীতিককে নিয়ে অহেতুক ভাবতে ভাবতেই অরুর চোখ যায়, রুমের পাশে টানা বারান্দার দিকে। অরু ভাবলো একবার বারান্দায় গিয়ে দাড়াবে, তাহলে যদি ভেতরের কষ্ট কষ্ট ভাবটা একটু কমে আসে। যেই ভাবা সেই কাজ, একটু খানি সস্থির আশায় এগিয়ে গিয়ে কাঁচ ঠেলে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে পরলো অরু, সঙ্গে সঙ্গে একরাশ দমকা হাওয়া এসে চোখেমুখে আঁচড়ে পরলো ওর। এই রুমের বারান্দাটা ভবনের একেবারে পেছন দিকে। পেছনের রাস্তাটাও নির্জন। সোডিয়ামের মৃদু আলো ব্যতিত খুব বেশি আলো এখানে নেই। মানুষ জনের আনাগোনাও তাই বেশ কম।যাকে বলে নিরিবিলি পরিবেশ। নিরিবিলি পরিবেশের সাথে আজ বাইরে তীব্র বাতাসের তান্ডব নৃত্য চলছে, কি জানি ক্রীতিক কি করছে? মনের মাঝে প্রশ্নটা উঁকি দিতেই অরু মিনমিনিয়ে বললো,
— কি আর করবে, হয় কানে হেডফোন গুঁজে ডার্ক রোমান্টিক অডিও বুক শুনছে, নয়তো বাইক নিয়ে রাইডে বেড়িয়েছে, বোরিং লোক একটা।

বিড়বিড়িয়ে কথাটা বলে, হাত দিয়ে বারান্দার কার্নিশে ভর করে মাথা নুয়িয়ে সোজা নিচের দিকে চাইলো অরু। নিচে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে উঠলো ওর। নিজেকে ভুল প্রমান করতে সোজা হয়ে দাড়িয়ে কয়েকবার চোখের পলক ছেড়ে পুনরায় নিচের দিকে তাকালো অরু।দেখলো, অরুর দৃষ্টি বরাবর বাইকে হেলান দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ক্রীতিক।
চুল গুলো অগোছালো। ফর্মাল শার্টের হাতাটাও গুটানো, গলায় টাই নেই, সামনের দিকের কয়েকটা বোতাম অবাধে খুলে রাখা যার ফলে ঢেউ খেলানো ফর্সা বক্ষদেশ স্পষ্ট দৃশ্যমান। ক্রীতিককে বড্ড এলোমেলো লাগছে।ঘোলাটে দৃষ্টিটাও কেমন বেসামাল, এতো দুর থেকেও ক্রীতিকের আহত দৃষ্টিতে বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো অরুর। কেন যেন মনে হচ্ছে ক্রীতিক আর কারোর জন্য নয়, বরং ওর জন্যই দাঁড়িয়ে আছে এতো রাতে।অরুও আর বারান্দায় চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না।হুট করেই কি ভেবে যেন ওড়নাটা নিয়ে সবার আড়ালে ছুটে বেড়িয়ে গেলো এপার্টমেন্ট থেকে। মাথায় ভালোমতো ঘোমটা টেনে ছুটে এলো ক্রীতিকের কাছে। অরু নিচে নেমে এসেছে, তাও ক্রীতিক একই ভাবে তাকিয়ে আছে অরুর পানে, কোনো রাগ নেই, ক্ষোভ নেই, বিরক্তি নেই, দু’চোখে যা আছে তা হলো একরাশ মাদকতা।

অরু সুতি থ্রীপিচ পরে আছে, মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানা। লম্বা সিল্কি চুলগুলো পুরোপুরি বাঁধনহারা। অরু ক্রীতিকের কাছে এগিয়ে আসতেই ক্রীতিক দু’হাতে ওর কোমড় আঁকড়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
— তোকে হুট করেই বউ বউ লাগছে জান।

ক্রীতিকের কথা স্পষ্ট নয়, মাথাটাও কেমন টলছে, মুখ দিয়ে অ্যা’লকোহলের বি’শ্রি গন্ধ বের হচ্ছে। অরু চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
— আপনি অ্যা’লকোহল খেয়ে বাইক রাইড করে এতোদূর চলে এসেছেন?

ক্রীতিক হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে,অরু পুনরায় বলে,
— যদি কিছু হয়ে যেত?

ক্রীতিক ওর কথায় তোয়াক্কা না করে নিভু নিভু চোখে বললো,
— তুই আমায় ছেড়ে কেন চলে এলি? এখন কি করে থাকবো আমি? একটু তো চোখের সামনেই দেখতাম, সেটাও তোর মায়ের সহ্য হলোনা?

অরুর কাছে ক্রীতিকের এই রূপ পুরোপুরি নতুন, ও কখনো ক্রীতিককে এমন নরম সুরে কথা বলতে শোনেনি, আজই প্রথমবার।ক্রীতিকের বলা প্রত্যেকটা কথা অরুর শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বুকের মাঝে জমতে থাকা সেই তীব্র চিনচিন ব্যথাটা হুট করেই কেমন উবে গিয়েছে, পাছে এসে ভর করেছে অজানা এক প্রশান্তি। কি নাম দেওয়া যায় এই প্রশান্তির? জানা নেই অরুর।

অরু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ক্রীতিক অরুর ওড়নাতে নাক ঘষে দু’হাতে ওকে আরও খানিকটা কাছে টেনে বললো,
— হার্টবিট, ফিরে চল আমার সাথে, তুইতো আমার। তোকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে তো।বল যাবি?

ক্রীতিকের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই অরুর কাছে। ও তো এখনো ক্রীতিককে নতুন রূপে আবিষ্কার করায় ব্যস্ত, এ কোন ক্রীতিককে দেখছে ও? অরু যখন ক্রীতিকের বাহুডোরে দাড়িয়েই ক্রীতিককে নিয়ে হাজারো চিন্তায় বিভোর, তখনই কানে ভেসে আসে অনুর গলার কর্কষ আওয়াজ, উপর থেকেই হাঁক পেরে পেরে ওকে ডাকছে অনু, বারবার বলছে,
— রাতের বেলা কোথায় গেলো মেয়েটা?

রুমে দাঁড়িয়ে অনু ডাকছে বুঝতে পেরে অরু নিজের মাথার ঘোমটাটা আরও ভালো করে টেনে নিয়ে ক্রীতিককে উদ্দেশ্য করে বলে,
— মোবাইল কোথায় আপনার?

— মোবাইল দিয়ে কি করবি?

— দরকার আছে দিন?

ক্রীতিক অরুর ওড়নাতে নাক ঘষতে ঘষতে বললো,
— পকেটে মনে হয়।

ক্রীতিক টলছে, তাই অরু নিজেই ওর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কল দিলো প্রত্যয়ের নাম্বারে, প্রত্যয় ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই অরু এক নিঃশ্বাসে বললো,
— ওনাকে, না মানে ক্রীতিক ভাইয়াকে আমাদের বাসার সামনে থেকে নিয়ে যান, উনি ড্রাং’ক হয়ে আছেন।

প্রত্যয় চমকে গিয়ে বললো,
— কি বলছো কোথায় আছে ভাই?

অরু মিনমিনিয়ে বললো,
— আমাদের নতুন বাসার পেছনের রাস্তায়।

প্রত্যয় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
— ওয়েট, আমি এক্ষুনি আসছি।

প্রত্যয় কল কাটার আগে অরু একটু আগ বাড়িয়ে বললো,
— ইয়ে ভাইয়া, আপাকে কিছু বলবেন না দয়া করে।

প্রত্যয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানায়,
— যদিও বা ক্রীতিক ভাই এসবে পরোয়া করেনা, তবুও তুমি যখন বলেছো তখন বলবো না।

অরু সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন কেটে দিয়ে ক্রীতিককে বললো,
—- আপনি থাকুন, আমি আসছি। আপা তখন থেকে ডাকছে, দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

ক্রীতিক এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে,
— উহু কোথাও যাবিনা , তুই আমার সাথে ঘুমাবি এখন, ঠিক সেই রাতের মতো তোকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাবো আমি।

ক্রীতিকের কথায় অরু মনেমনে বলে,
— আপনি সাভাবিক থাকলে এমন আচরণ করেন না কেন বলুন তো?এমন ব্যাবহার করলে তো আমি কবেই আপনার প্রেমে পরে যেতাম।
*****************************************

নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে ধরনীতে, ক্রীতিকের বাড়িটা যেমন পুরোপুরি নির্জন নিরিবিলি, ঘুম থেকে উঠলে মনেহয় মৃ’ত্যু পুরি।এখানে মোটেও তেমনটা নয়, সকাল সকাল বেশ ভালোই গাড়ি-ঘোড়া মানুষ জনের শোরগোল শোনা যায়।
নতুন পরিবেশ তাই খুব সকাল সকালই ঘুম ভেঙেছে অরুর, ঘুম ভেঙেছে কথাটা অবশ্য পুরোপুরি মিথ্যে। কালরাতে এক ফোটাও ঘুম হয়নি অরুর, সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে, আর এখন ঘুম থেকে উঠেই রেডি হচ্ছে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় মায়ের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে ওকে, কোথায় যাচ্ছো,কখন ফিরবে, কতদূরে ভার্সিটি আরও কত কিই। প্রথমে তো সয়ং রাজকেই ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলো কাঁধের মধ্যে। পরে অবশ্য কোনো মতে কথা কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে অরু। এপার্টমেন্ট থেকে বেড়িয়ে মেট্রো ধরে সোজা ভার্সিটিতে যাওয়া যায়, কিন্তু আজকেতো মঙ্গলবার, ক্রীতিকের ক্লাস নেই। সেটা মনে করতেই অরু পিছুপা হাটে, আজ আর ভার্সিটিতে যাওয়ার ইচ্ছা নেই ওর। বরং উল্টো পথে গিয়ে ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে পরে ওর চেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
.
চেনা পরিচিত অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে আছে অরু। সকাল সকাল যে আত্নবিশ্বাস নিয়ে এখানে এসেছিল, বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতেই সেই আত্মবিশ্বাস কর্পূরের মতো কেমন হাওয়া হয়ে গিয়েছে। এই মূহুর্তে মুখগহ্বরে একটুও তরল অবশিষ্ট নেই শুষ্ক গলাটাকে ভেজানোর জন্য। ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝেও হাতের তালু কেমন ঘেমে উঠেছে, পা’দুটো কেমন ঝিনঝিন করছে। তবুও সকল চিন্তা, ভাবনা,ভয়’ডর কে পিছু হটিয়ে ঘরের দরজার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো অরু।

প্রথমে ভেতরে গিয়ে ক্রীতিককে কি বলবে, না বলবে, সেই কথাগুলো হাজার বার প্রাকটিস করে নিয়েছে দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই। অতঃপর পাসওয়ার্ট টিপে সোজা বাসার মধ্যে। হলরুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে চোখ দুটো কুঁচকে এলো অরুর। দেখলো বরাবরের মতো ঘরময় অন্ধকার করে কানে মস্তবড় হেডফোন লাগিয়ে, কাউচে আধশোয়া হয়ে বসে বাইক রাইডিং গেইম খেলছে ক্রীতিক। অরুকে না দেখেই ওপাশ থেকে তার গমগমে আওয়াজ ভেসে এলো,
— কি চাই?

অরু কাঁধে ঝুলানো চামড়ার ব্যাগটা হাত দিয়ে খুঁটতে খুঁটতে বললো,
— ডোরাকে নিতে এসেছি।

তৎক্ষনাৎ কানের হেডফোন খুলে পেছনে তাকিয়ে, ক্রীতিক দাঁত কটমটিয়ে বললো,
— ডোরা কি তোর বাপের কেনা সম্পত্তি? যে চাইলেই নিয়ে যাবি।

অরু মিনমিনিয়ে বললো,
— ডোরা আমার মেয়ে, ও আমার সাথেই থাকবে।

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
— আমাকে কি তোর বিড়াল মনে হয়? আমি কেন বিড়ালের বাচ্চা জন্ম দিতে যাবো শুনি?

অরু মাথা তুলে বললো,
— আপনাকে তো কিছু বলিনি।

— মুখে মুখে তর্ক করছিস? কাছে আয়।

দিনের বেলাতেও পুরো বাড়ি রাত হয়ে আছে, অরু একটা শুষ্ক ঢোক গিলে শুধালো,
— কাছে এলে কি করবেন?

— আমার যা খুশি তাই করবো, এখন চুপচাপ কাছে আসবি, নাকি আমি উঠে টেনে হিঁ’চড়ে, থা’প্পর দিয়ে কাছে টেনে আনবো সেটা তোর ইচ্ছা, ডিপেন্ডস অন ইউ।
এই বলে আবারও পেছনে ঘুরলো ক্রীতিক। অরুর অজানা এক বিশ্বাস ক্রীতিক ওকে কাছে গেলে কিছুই বলবে না, সেই বিশ্বাস থেকেই পা টিপে টিপে ক্রীতিকের কাছে এগিয়ে গেলো অরু। ও পাশে এসে দাঁড়াতেই ক্রীতিক পুনরায় হুকুম করলো,
— পাশে বস।

অরু তাই করলো, চুপচাপ ক্রীতিকের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে পাশে গিয়ে বসলো। অরু বসেছে কি বসেনি,তৎক্ষনাৎ ওর কোলের উপর মাথা দিয়ে সটান শুয়ে পরলো ক্রীতিক। ক্রীতিকের এমন অকস্মাৎ কান্ডে অরুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো। এতোক্ষণ ধরে ছোট্ট মেদহীন পেটটা শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে তালে যে ওঠানামা করতো সেটাও পুরোপুরি বন্ধ। অরু এমন স্ট্যাচু হয়ে আছে দেখে ক্রীতিক চোখ খুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কিরে শ্বাস করছিস না কেন? ম’রে যাবি তো।

— কককরছি।

ক্রীতিক পুনরায় চোখ বন্ধ করে অরুর হাতটা মাথায় রেখে বললো,
— কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি, মাথাব্যাথা করছে, এখন ঘুমাবো, যতক্ষণ ঘুমাবো হাত যাতে মাথা থেকে না নড়ে।

ক্রীতিকের কথায় অরুর খুব বেশি অসস্থি হলোনা, ওর মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অরু ঠোঁট টিপে হেঁসে মনেমনে বললো,
— কাল রাতে যা পাগলামি করেছেন তাতে মাথা ব্যাথা হওয়ারই কথা।

অরুর হাতের স্নিগ্ধ পরশে ক্রীতিক ঘুমের দেশে পারি জমাতে জমাতে হাস্কিস্বরে বললো,
— অরুউউ,

— হুম।

ক্রীতিক এবার উপর হয়ে শুয়ে বললো,
— তুই পুরোপুরি আমার হয়ে যা, বিলিভ মি আমি তোকে মাথায় করে রাখবো, একটুও বকবো না, একটুও মা’রবো না।

ক্রীতিকের করা অস্পষ্ট সীকারোক্তি আদৌও অরু শুনেছে কি শোনেনি কে জানে?

*****************************************
মায়ের মাথায় বিলি কেটে তেল মালিশ করে দিয়ে, মাকে ঘুম পারিয়ে মাত্রই রুমে এসেছে অনু। রুমে আসা মাত্রই অনু দেখতে পায় ভাইব্রেড মুডে থাকা ফোনটা সেই তখন থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছে। অনু এগিয়ে গিয়ে ফোন কানে তুলতেই প্রত্যয় অসহায় সুরে বললো,
— তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে অনু।

অনু মৃদু হেসে বললো,
— কি করে দেখবেন? এখন তো আর হসপিটালে যেতে হয়না, ক্যাফের জবটাও মায়ের ভয়ে ছেড়ে দিয়েছি, মা এসব একদম পছন্দ করেননা।

প্রত্যয় ত্যাক্ত হয়ে বললো,
— আমি তোমাকে দেখতে চাই ব্যাস, কিভাবে দেখা করবে সেটা আমি জানিনা।

অনু একটু ভেবে বললো,
— দেখি গ্রোসারীর কথা বলে বের হতে পারি কিনা, পারলে জানাবো আপনাকে। হয়তো সাথে করে অরুকেও ধরিয়ে দেবে মা।

প্রত্যয় হেঁসে জবাব দিল,
— নো প্রবলেম।

মনেমনে বললো,
— ভাইকে ম্যানেজ করে নিয়ে আসতে পারলে, অরু অটোমেটিক ম্যানেজ।
*****************************************
সারাদিন পার করে গোধূলি লগ্নে ঘুম ভাঙলো ক্রীতিকের। আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলতেই, চোখের সামনে ভেসে উঠলো, ঘুমন্ত এক মায়াপরীর স্নিগ্ধ মুখশ্রী। এটা অরু, ক্রীতিকের ব্যাক্তিগত অরু, যে এই মূহুর্তে ক্রীতিকের মাথাটা কোলে নিয়েই, কাউচে হেলান দিয়ে গুটিসুটি মে’রে ঘুমাচ্ছে। ওর নরম তুলতুলে হাতটা এখনো ক্রীতিকের চুলের ভাজেই নিবদ্ধ। আজকাল অরুর একটু একটু আ’ত্নসমপর্নে বেশ খুশি ক্রীতিক। অরুকে দেখতে দেখতেই ক্রীতিকের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হলো আন্তরিকতা জড়ানো হাসিতে। পরক্ষনেই হাতের কব্জিতে এটে থাকা ঘড়িতে একনজর চোখ বুলিয়ে উঠে বসে ক্রীতিক। অন্যপাশ থেকে একটা পাতলা ফিনফিনে চাদর এনে অরুর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে সোজা চলে যায় দোতলায়।
.
অরুর যখন ঘুম ভাঙে তখন সন্ধ্যা প্রায়, কোনমতে ঘুমু ঘুমু চোখে উঠে বসে, চারিদিক পর্যবেক্ষন করে আঁতকে ওঠে অরু। দাঁত দিয়ে জিভ কে’টে তারাহুরো করে উঠতে উঠতে বলে,
— এই রে, আমার তো ফিরতে হবে, কখন ঘুমিয়ে পরলাম আমি?

উঠে দাড়িয়ে হাতের ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতেই অরুর চোখ যায় কিচেন কাউন্টারের দিকে, সেখানে বসে বসে কফি পান করছে ক্রীতিক। তার পড়নে লেদার জ্যাকেট, আর ব্ল্যাক ডেনিম, পাশের স্টুলে হেলমেট রাখা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাইক নিয়ে বের হবে ।

সেই সকালে এসে এমন সন্ধ্যা বাঁধিয়ে ফেলবে ভাবতে পারেনি অরু, এই মূহুর্তে মায়ের করা হাজারটা প্রশ্নের ভয়ে তটস্থ হয়ে গিয়েছে ও। তাই কোনো কিছু না ভেবেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে ক্রীতিকের জামা টেনে ধরে কাঁদো কাঁদো সুরে অরু বললো,
— সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তো, বাসায় কিভাবে ফিরবো?

ক্রীতিক নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
— ফিরতে হবে না,থেকে যা।

— মজা করবেন না, আমাকে যেতে হবে, মা আছে তো।

— আমার ম্যাচ আছে, প্রত্যয়কে কল দিয়ে আসতে বলেছি ও তোকে নিয়ে যাবে।

ক্রীতিক দিয়ে আসবেনা শুনে অরুর কি একটুও অভিমান হলোনা? হলোতো বটে। তবুও ও বাচ্চাদের মতো ক্রীতিকের জ্যাকেট টানতে টানতে বললো,
— কখন আসবে সে? আমাকে এক্ষুনি ফিরতে হবে।

ক্রীতিক এবার অরুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো,
— কতবার বারণ করেছি আমার কাছে আসবি না, আমাকে ধরবি না, কথা শুনিস না কেন?

ক্রীতিকের কথায় অরুও তেতে উঠে ঝাঁজ নিয়ে বললো,
— কেন বারণ করেছেন?আমার শরীরে কি নোংরা লেগে আছে?

ক্রীতিক এবার উঠে দাড়িয়ে অরুর দিকে এগোতে এগোতে বললো,
— তোর শরীরে কি লেগে আছে সেটা কেবল আমিই জানি।

ক্রীতিকের হটাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে যাওয়া গলার আওয়াজে খানিকটা ভরকে গেলো অরু। মাথা উঁচু করে একনজর ক্রীতিকের দৃষ্টি পরখ করে, ওর এগিয়ে আসার তালে তালে পেছাতে পেছাতে শুষ্ক ঢোক গিলে অরু শুধায়,
— ককি লেগে আছে?

ক্রীতিক বাঁকা হেসে বললো,
— এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছিস কেন?

অরু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিল,
—আপনি এগুচ্ছেন তাই, ভ’য় করছে।

—নিজের স্বামীকে এতোটা ভয় পেলে হবে?

ক্রীতিকের মুখে “স্বামী” শব্দটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে অরুর পিঠ গিয়ে ঠেকলো কাঁচের দেওয়ালে।
ক্রীতিক ধীর পায়ে অরুর খুব কাছে এগিয়ে এসে ওকে একটানে ঘুরিয়ে দিলো, অরু এখনো কাচের দেওয়ালের সাথে সিঁটিয়ে আছে। তীব্র হৃদস্পন্দনের তালে ক্রমাগত ওঠানামা করছে ওর ছোট্ট নারীদেহটা, ক্রীতিক একহাতে অরুর রেশমের মতো লম্বা চুল গুলো পিঠ থেকে সরিয়ে ঘাড়ের পাশে রেখে দিলো, অন্যহাত দিয়ে একটানে খুলে ফেললো, পিঠের উপর ফুল বানিয়ে বাঁধা টপস এর লম্বা ফিতেটা। হঠাৎ করেই ফিতে খুলে ফেলার দরুন জামার গলাটা একেবারে ঢিলে হয়ে গিয়েছে। অরুর হাত পা অজানা লাবডুডের দরুন অবশ হয়ে আছে, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি বলে, মুখ ফুটে কথা বলার বাক শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই ওর মাঝে।

শরীরের তোরনে তোরনে কুন্ডলী পাকিয়ে ওঠা নারীসত্ত্বার কাছে হেরে গিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে কাচের দেওয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে অরু। ক্রীতিক ঘোর লাগা চোখে অরুর ফর্সা কামুক পৃষ্ঠদেশে তাকিয়ে একটা শুষ্ক ঢোক গিললো, অতপর এক হাতদিয়ে ওর বাহু চেপে ধরে, মুখ বাড়িয়ে দিলো পিঠের মাঝ বরাবর। তবে ঠোঁট দিয়ে ঘাড় স্পর্শ করার আগেই ওদের মাঝে ধূমকেতুর হলকার মতো হটাৎ জ্বলে ওঠা অবাধ্য অনুভূতিকে শিথিল করে দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে প্রত্যয়।
— ভাই, অরুকে আম…….

প্রত্যয় ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে চুল দিয়ে অরুর পিঠটা ঢেকে দিলো ক্রীতিক। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— তুমি গাড়িতে ওয়েট করো, আমি অরুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

প্রত্যয় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলে, ক্রীতিক আবারও অরুর জামার ফিতেয় হাত দেয়। এবার অরু সংকুচিত হয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো,
— কি করছেন।

ক্রীতিক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবারও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— কিচ্ছু করবো না, পেছনে ঘোর ফিতেটা লাগিয়ে দিই, তোর না লেট হয়ে যাচ্ছে?

অরু এবার হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে পেছনে ঘুরে দাড়ায়, ক্রীতিক আলতো হাতে ফিতেটা লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,
— রাতে বারান্দায় আসবি, আমি নিচে ওয়েট করবো।

অরুর আপাতত হ্যা না কিছু বলার মতো অবস্থা নেই। গোল গোল গাল দুটো র’ক্তরাঙা হয়ে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ফেটে পরবে। কান দুটো উষ্ণতার শিখরে পৌছে গিয়েছে সেই কখন। মুখ তুলে আর ক্রীতিকের চোখের দিকে চাওয়ার সাহস হলোনা ওর। কোনো মতে ব্যাগটা হাতরে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। তারপর সোজা গাড়ির মধ্যে।

অরু বেরিয়ে যেতেই ডোরা ক্রীতিকের পায়ের কাছে এসে মিয়াঁও মিয়াঁও লাগিয়ে দিয়েছে। ক্রীতিক ডোরাকে দেখে উপহাস করে হেঁসে বললো,
— তোর মালকিন তো তোকে না নিয়েই চলে গেলো। শেইম অন ইউ ডোরা।হাহ!
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here