#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৩৬
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]
“দিন পাল্টায় রঙ বদলায় অস্থির মন
হাতের মুঠোয় ফেরারি সময়,শুধু শিহরণ,
ছায়াপথ ধরে হাতছানি কার, সেই পিছুটান….
তার কথা মনে পরে… তার কথা মনে পরে…”
গাড়ির প্লে লিস্টে বাজতে থাকা চমকপ্রদ লাইন গুলো শেষ হতে না হতেই সহসা থেমে গেলো ব্ল্যাক মার্সিডিজ গাড়িটা। জানালার কাঁচ নামিয়ে সেই তখন থেকে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে ক্রীতিক,যার দরুন গাড়িটা থেমে যাওয়া সত্ত্বেও প্রত্যয়কে আগ বাড়িয়ে আর কিছু প্রশ্ন করলো না ও,বরং মসৃণ চামড়া দিয়ে তৈরি প্রসস্থ গদিতে পায়ে পা তুলে বসেই দু’ঠোটের ফাঁক দিয়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী ছেড়ে,অন্যহাতে ফোন তুলে কল লাগালো ব্ল্যাক হার্ট ইমোজি দিয়ে সেভ করা একটা নাম্বারে।
ক্রীতিক কলে ব্যস্ত এই সুযোগে গাড়ি থেকে সহসা নেমে গেলো প্রত্যয়, আজ তেরো দিনের মাথায় লস অ্যাঞ্জেলস থেকে সানফ্রান্সিসকো ফিরেছে ওরা। ক্রীতিকের মা বড় পর্দার সাবেক তারকা, সে হিসেবে অনেক বেশি দায় দায়িত্ব আর ফর্মালিটিস ছিল সেখানে , এছাড়া বেশকিছু ইন্টারভিউ তো ছিলোই। কিয়ারা রোজারিওর দ্বিতীয় ঘরের সন্তান রয়েছে ঠিকই তবে সে একা হাতে সকল দ্বায়িত্ব সামলানোর মতো ততোটাও বড় নয়, একসাথে অনেক গুলো ধকলের ফলসরূপ পরিস্থিতিটাই বদলে গিয়েছিল তখন,অগত্যাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও থেকে যেতে হয়েছিল ক্রীতিক কে।
আর আজ কাঁধে জমে থাকা মাতৃত্বের শেষ দ্বায়িত্বটুকুর অবসান ঘটিয়ে সানফ্রান্সিসকো ফিরে সবার আগে অরুকে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওদের ভবনের সামনে এসে গাড়ি থামাতে নির্দেশ করে ক্রীতিক।প্রত্যয় নিজেও অবশ্য মনে মনে এটাই চেয়েছিল, কারন ও নিজেও তো অনুকে দেখেনা বহুদিন। ক্রীতিক আর অরুকে নিয়ে সেই যে রাগারাগি হলো, তারপর প্রতিদিন ফোনে কথা হলেও মায়ের ভয়ে তটস্থ অনু সামনাসামনি দেখা করার সাহস করে উঠতে পারেনি আর,তাছাড়া গত তেরো দিন ধরে তো ফোনের যোগাযোগটুকুও পুরোদমে বন্ধ। ওই জন্যই তো বহুদিনের দূরত্বে প্রত্যয়ের হৃদয়টাও যে পু’ড়ছে খুব।
.
দিনের আলোকে পায়ে মাড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে এইতো কিছুক্ষন হলো। পশ্চিম আকাশে এখনো সূর্যের সোনালী আবিরের ছটা,গোধূলি সন্ধ্যায় তীব্র হাওয়া দিচ্ছে প্রকৃতি, যার দরুন ভবনের পাশে টাঙানো যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সাইজের একফালি পতাকাটা পতপত করে উড়ছে। সেই সাথে উড়ছে প্রত্যয়ের কপাল ছুঁই ছুঁই লম্বা চুল গুলোও। নতুন করে টাঙানো পতাকাটাকে এক নজর পরখ করে তরাগ গতিতে ভবনের দিকে চোখ সরিয়ে নিলো প্রত্যয়, একতলা দুইতলা ছাড়িয়ে নজরবন্দি হলো তিন তলায় অবস্থিত কর্ণারের এপার্টমেন্টটা। ভর সন্ধ্যা বেলাতেও সেথায় নিকোশ কালো অন্ধকার বিরাজমান, কোনোরুমেই একফোঁটা আলো জ্বলছে না। পুরো ভবনে এই একটা এ্যাপার্টমেন্টেরই এই হাল দেখে বিস্ময়ে বিমূর্ত হলো প্রত্যয়ের হাসিহাসি মুখখানা।
অনুর রুমের টানা বারান্দায় চোখ বুলিয়ে অস্ফুটেই বিড়বিড়ালো প্রত্যয়,
—- ব্যাপারটা কি?অনুতো সবসময় ঘরে সন্ধ্যা বাতি জ্বালিয়ে দেয়, তাহলে আজ কোথায় গেলো সব?
প্রত্যয়ের অযাচিত ভাবনার ছেদ ঘটে ক্রীতিকের দ্রুত পায়চারির আওয়াজে, ও চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পায় এই ঠান্ডা হাওয়ার মাঝেও নিজের ওভারকোর্টটা ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে কানে ফোন আর হাতে সিগারেট নিয়ে ক্রমাগত পায়চারি করছে ক্রীতিক। চেহারায় তার ভীষণ তীক্ষ্ণতা আর বিরক্তির ছাপ, দেখে মনে হচ্ছে কোনোকিছুর অপারগতায়, জিদের তোপে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে চাইছে ও। ক্রমশ একই নাম্বারে ডায়াল করতে করতে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ক্রীতিকের, এদিক থেকে ওদিকে পায়চারী করতে করতেই বলে ওঠে ,
—- অরু, জানবাচ্চা আমার প্লিজ ফোনটা তোল।এই বয়সে তোর জন্য এতো পাগলামি করতে আর ভালো লাগেনা আমার। অথচ প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মূহুর্তে চিন্তা দিয়ে পাগল করে ছাড়িস আমাকে। এতো কেন নির্দয় তুই ?
ক্রীতিকের বেপরোয়া আর উদভ্রান্ত ভঙ্গিমা নজরে এলে প্রত্যয় এগিয়ে এসে শুধালো,
—- এনি প্রবলেম ভাই?
ক্রীতিক সিগারেটের শেষ টান দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে তিন তলার দিকে একঝলক তাকিয়ে ভরাট গলায় বললো,
—- অনুকে কল দাও প্রত্যয়, আমার ব’দমাশ বউটা কল তুলছে না।
ক্রীতিকের কথা শুনে প্রত্যয়ের ভেতরটা ধক করে উঠলো আচমকা, ও তৎক্ষনাৎ গলা খাদে নামিয়ে বললো,
—- অনু তো সকাল থেকেই কল তুলছে না ভাই, আমি ল্যান্ড করার পর থেকেই কল দিয়ে যাচ্ছি,ফোন অফ।
প্রত্যয়ের কথায় ক্রীতিকের শক্ত চোয়াল ধা’রালো হয়ে উঠলো কিছুটা, বাঁজপাখির মতো তীক্ষ্ণ নজরটা পুনরায় চলে গেলো তিনতলার টানা বারান্দায়, তিমিরে ঢাকা বারান্দার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকাতেই চট করে ক্রীতিকের সুকৌশলি মস্তিষ্কটা খারাপ কোনোকিছুর পূর্বাভাস অনুভব করলো।তৎক্ষনাৎ পেশিবহুল হাতদুটো মুঠি বদ্ধ হয়ে উঠলো ওর, ছু’রির ফলার মতো ধারালো নজরটা প্রত্যয়ের দিকে ঘুরিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে ক্রীতিক হুকুমের স্বরে বললো,
— প্রত্যয় উপরে যাও, ভেতরে কে আছে, না আছে,কে কি করছে,কে কি বলছে, কিচ্ছু দেখার দরকার নেই সোজা গিয়ে অরুকে টা’নতে টা’নতে নিচে নিয়ে এসো।
ক্রীতিকের কথায় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে প্রত্যয় ভবনের দিকে চলে গেলেও ক্রীতিকের মন বলছে অরু উপরে নেই,অরু যদি উপরেই থাকতো তবে তা ঠিকই টের পেতো ক্রীতিকের হৃদয়। আর ওই জন্যই শেষ সন্দেহটুকু হটাতে প্রত্যয়কে পাঠানো। প্রত্যয় চলে গেলে ক্রীতিক গাড়ির ডিকিতে হেলান দিয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো,প্রচন্ত য’ন্ত্রনায় মাথা ফে’টে যাচ্ছে ওর,তার সাথে যোগ হয়েছে হৃদয়ের লেলিহান। একটা মেয়ের জন্য আর কতো? আগে তাও শারীরিক মানসিক দুটোরই দূরত্ব ছিল, ভালোবাসাটা একতরফা ছিল।ক্রীতিক নিজেকে ব্যাপক ভাবে সামলে নিয়েছে বহুবছর।
কিন্তু এখন? সবটা পাওয়া হয়ে গিয়েছে, অরুর শরীরের প্রতিটা খাঁজে খাঁজে ক্রীতিকের তীব্র ভালোবাসার স্পর্শ জড়ানো, সেই সাথে হৃদয় উপচানো মায়া তো আছেই, এখন কি করবে ক্রীতিক? পেয়ে হারানোর ব্যথাটা যে বড্ড যন্ত্রনাদ্বয়ক। অরু কি তা বোঝেনা?
খানিকক্ষণ চোখ দুটো বন্ধ রেখে অরুকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে করতেই অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে এলো ক্রীতিকের গলা থেকে,
—-আই সয়ার অরু,তোকে খুঁজে পেলে আমি যে তোর কি হাল করবো সেটা আমি নিজেও জানিনা।
***********************************************
লাইট, ক্যামেরা একশান, ডিরেক্টর রিচার্ডের মুখ থেকে শব্দ ক’খানি বের হতেই লাইটের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর সুদর্শন পোজ দিতে শুরু করলো সায়র। শেষ রাতে শ্যুট চলছে,সামনেই সামার ফেস্টিভ্যাল,বছরের শুরুর দিকে এই সময়ে এসে ফটোশ্যুটের কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করে সায়র। রোগা পাতলা লম্বাটে গড়ন আর ব্রাউন স্কিন টোনের সায়রের নিখুঁত চেহারা আর আত্মবিশ্বাসী রেম্প ওয়াকের দরুন গুচ্চি,লুইস ভুইটোন,নাইক,কেলভিন ক্লাইনের মতো পৃথিবী সেরা নামি দামি প্রায় অনেক গুলো ব্র্যান্ডেরই সুপার মডেলের খেতাব রয়েছে সায়রের ঝুলিতে।
এতো সাকসেস আর প্রতিপত্তির বাইরে গিয়ে না পাওয়ার তালিকাটাও বৃহত ওর। আর এখন এই সময়ে এসে সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন ওর জীবনে, সেটা হলো জীবন সঙ্গী, যাকে এখনো খুজে পাওয়া হয়নি সায়রের। কি জানি কবে পাবে, কার নামই বা লেখা আছে ওর ভাগ্য জুড়ে।
ডিরেক্টর সাহেব প্যাকআপ বলতেই, সায়র দ্রুত হেটে মেকআপ রুমে চলে গেলো, ওর পেছন পেছন গেলো আরও দুজন স্টাফ, যারা এই মূহুর্তে ওর মেকআপ ঠিকঠাক করবে। সায়র এগিয়ে গিয়ে চেয়ারের উপর গা ছেড়ে বসেছে কি বসেনি তার আগেই ঝীম ঝীম আওয়াজে ভাইব্রেট হলো ওর মোবাইলটা। কে কল দিয়েছে দেখার জন্য ফোনটা চোখের সামনে ধরতেই তরাগ করে লাফিয়ে উঠলো সায়র। ফোনের স্ক্রীনে ক্রীতিকের রাগারাগি চেহারাটা ভাসছে,তারউপরে গুটিগুটি ইংরেজি অক্ষরে লেখা “ব্রিটিশ হিটলার”।
ক্রীতিক কল দিয়েছে তাও এই সময় ব্যাপারটা সন্দেহ জনক, ফোনের দিকে তাকিয়ে মনেমনে সায়র বলে,
—-এবার কি করবো? কি উত্তর দেবো? কল টা কি কেটে দেবো?কিন্তু কল না ধরলে তো আরেক বি’পদ, হিটলারের বাচ্চা সোজা শ্যুটিং সেটে এসে কেলিয়ে যাবে, তখন আবার মান ইজ্জতের ব্যাপার।
কিছুক্ষন একই ভাবে ফোনের দিকে চেয়ে থেকে, চোরের মতো এপাশ ওপাশ তাকিয়ে কয়েকদফা শুষ্ক ঢোক গিলে ফোন রিসিভ করে ভয়ে ভয়ে কানে ধরলো সায়র।
ফোন তোলার সঙ্গে সঙ্গে, এপাশ থেকে হ্যালো ট্যালো বলার কোনোরূপ ফুরসত না দিয়েই ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো ক্রীতিক,
—- সায়রের বাচ্চা আমার অরু কই?
ক্রীতিকের কথায় ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সায়র,মনেমনে বললো,
— জানতাম, যত দোষ সায়র ঘোষ।
—- সায়র উত্তর দে, অর্ণব কে আমি বলে যাইনি অরুর দিকে খেয়াল রাখতে? কোথায় ওই হতচ্ছাড়া? অরুকে খুজে না পেলে কিন্তু এলিসাকে আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে অন্যত্র বিয়ে দেবো,কথাটা বলে দিস ওকে।
ক্রীতিক রাগে কাঁপছে, কথার টোনে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তাই সায়র আর কোনোরূপ মশকরা কিংবা ভনিতা না করেই বললো,
—- অরু যে নেই সেটা আরও দুদিন আগেই জেনেছি আমরা, তোর কথা মতো খোঁজ নিতে গিয়েই জেনেছি। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে অর্ণব অরুর বোনের ফোন নাম্বার জোগাড় করে লোকেশন ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি,ফোনটা বন্ধ , লাস্ট লোকেশন ওদের এপার্টমেন্টেই।
ক্রীতিক ক্রোধে ফেটে পরে বললো,
— হাদারাম, তাহলে আগে কেন জানাসনি আমাকে? এতোদিন পরে এখন আমি কোথায় খুজবো ওকে?
সায়র ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
—- তুই রেগে যাবি, দুশ্চিন্তা করবি তাই সাহসে কুলায় নি।
ওর কথায় ক্রীতিক দাঁত খিঁচে বলে ওঠে,
—- তো এখন কি আমি ঠিক আছি? তোর কি মনে হয়?
সায়র জবাব দিলোনা, অপর পাশের নিরবতা আঁচ করে ক্রীতিক নিজের অতিরিক্ত ক্রোধ দমিয়ে, গলা কিছুটা খাদে নামিয়ে শুধালো,
—- অর্ণব কোথায়?ফোন কেন তুলছে না ও?
সায়র বললো,
—- তোর ভ’য়ে ফোন টোন বন্ধ করে কোথায় যেন ঘাপটি মে’রে আছে, মেইবি এলিসার বাসায়।
—- ফা’ক অফ।
ক্রীতিক শেষ কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে পিক পিক করে কল কাটার আওয়াজ ভেসে এলো।
সায়র একটা সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—– যাক এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
অতঃপর পরক্ষনেই কপাল জুড়ে সুক্ষ চিন্তার ভাজ পরলো ওর,আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো সায়র,
—– কোথায় যেতে পারে অরু?
**********************************************
একটা ক্রোধিত গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে, মোবাইল ফোনটা শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে পাহাড়ের ঢালে ছুটে মারলো ক্রীতিক। সন্ধ্যা রাতে যা ভেবেছিল তাই হয়েছে, শুধু অরু কেন অরুর একটা চিহ্ন পর্যন্ত পরে নেই ক্রীতিকের জন্য। আর এই ব্যপারটাই জ্বা’লিয়ে পু’ড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে ক্রীতিক কে। হৃদয়ের অসহ্য য’ন্ত্রণা আর মস্তিষ্কে জ্বলতে থাকা আ’গ্নেয়গিরির দাবানল যেন একসাথে গ্রাস করে নিচ্ছে ওকে।প্রচুর মানসিক চাপে নিজের অজান্তেই বারবার হাতের পিঠ দিয়ে নাক ঘষে যাচ্ছে সেই সন্ধ্যা থেকে।
মাথাটাকে সামান্য একটু ক্ষনিকের নিস্তার দিতে দিয়াশলাই দিয়ে আবারও সিগারেট ধরিয়ে নতুন উদ্যমে নিকোটিনের ধোয়া বাষ্পিত করতে ব্যতিগ্রস্থ হলো ক্রীতিক।সন্ধ্যা থেকে কতবার যে স্মোক করেছে সে খেয়াল নেই ওর। সিগারেটে পুড়ে সুন্দর ডার্কব্রাউন পুরুষালী ঠোঁট জোড়া একরাতেই কেমন তামাটে রঙ ধারণ করেছে।
শেষ রাতের আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলছে শুক তারা। তমশাচ্ছন্ন রাতে পুরো শহর ঘুমিয়ে আছে,ঘুম নেই শুধু ক্রীতিকের দু’চোখে। ওর ঘোর লাগা নিদ্রাহীন চোখদুটো জুড়ে তো শুধু অরুর বসবাস,মেয়েটা হারিয়ে গিয়েও ঘুমাতে দিচ্ছে না। কি আশ্চর্য!
ক্রীতিক যখন বাইকে হেলান দিয়ে স্মোক করতে করতে হিজিবিজি ভাবছিল তখনই হুরমুরিয়ে ছুটে আসে প্রত্যয়, পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে ক্রীতিকের দেখা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় করে দম নিলো ও। সেইসাথে হাতদুটো দিয়ে হাঁটুতে ভর করে হাঁপাতে লাগলো কিছুক্ষন। নিস্তব্ধ রাতে শুনশান পরিবেশে হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে প্রত্যয়ের বক্ষদেশ, কোনোমতে নিজের ব্রেথক্যাচ করে অস্পষ্ট আওয়াজে প্রত্যয় শুধালো,
—- আপনার ফোন কোথায় ভাই?
ক্রীতিক নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
— ফেলে দিয়েছি।
—- কোথায় ফেলেছেন?
ক্রীতিক চোখ দিয়ে ইশারা করলো পাহাড়ের ঢালে। প্রত্যয় সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- খোঁজ নিয়েছি ভাই,অরুরা সানফ্রান্সিসকোর কোথাও নেই।
ক্রীতিক বললো,
—- শুধু সানফ্রান্সিসকো না,পুরো ইউ এস এ তে যে নেই সেটা আমিও জানি, থাকলে লোকেশন ট্রাক করা যেত, অন্য কোনো ইনফরমেশন থাকলে বলো।
প্রত্যয় ঠোঁট কামড়ে বললো,
—- ডক্টর এডওয়ার্ডের চেম্বারে গিয়েছিলাম।
ক্রীতিক এবার সচকিত হয়ে শুধালো,
—- কি বলেছেন উনি?
— উনি বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই নাকি আজমেরী ম্যাম নিজের চিকিৎসা পত্রের সবকিছু গোছাচ্ছিলেন, এমনকি ওনার কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে জানিয়েছিলেন, কোনোভাবে এখন দেশে ফিরতে পারবে কিনা।
প্রত্যয় বাকি কথা শেষ করার আগেই ক্রীতিক বললো,
—- এবার সবকিছু ক্লিয়ার প্রত্যয়, আজমেরী শেখ তার মেয়েদেরকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। কিন্তু ওনাকে এতো তাড়াতাড়ি এ কাজে হেল্প করলো কে? কোম্পানির হেল্প নিলে তো আমার কানে ঠিকই পৌছাতো, তাহলে কার এতো সাহস?
প্রত্যয় এতো বেশি ঘাটালো না,বরং উল্টো প্রশ্ন ছু’ড়ে বললো,
—- কিন্তু ভাই বিডি তে ফিরে কোথায় যেতে পারে?
প্রত্যয়ের কথায় ক্রীতিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—- আজমেরী শেখের দৌড় জেকে গ্রুপ, আর ক্রীতিক কুঞ্জ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
পরক্ষণেই ভ্রু কুঞ্চিত করে কিছু একটা ভেবে ক্রীতিক বললো,
— আচ্ছা আজমেরী শেখের এ্যাসিসট্যান্ট কি কোনোভাবে এতে ইনভলভ?
প্রত্যয় না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
—- না ভাই, রাজ বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, তাছাড়া ওর পরিবার শান্তি প্রিয়।সেদিন আপনার সাথে ঝামেলা হবার পর,রাজ ওর বাবা মায়ের নির্দেশে চাকরিটা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।কারণ ওর পরিবার চায়নি দ্বিতীয়বার তাদের ছেলে আপনার সামনে পরুক।
— ভেরি গুড, তুমি যাও রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, গিয়ে রেস্ট করো।
প্রত্যয় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়ার আগে আরেকবার ঘাড় ঘুরিয়ে শুধালো,
—- ভাই আপনি।
ক্রীতিক আরও একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো,
—– সময় হলে চলে যাবো, ইউ স্যুড গো।
প্রত্যয় আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ বড়বড় পা ফেলে যায়গা ত্যাগ করে।
—- আহ!দিস ফা’কিং অবসেশন।
প্রত্যয় চলে যেতেই গম্ভীর আওয়াজে কথাটা বলে বাইকের লুকিং গ্লাসের মাঝ বরাবর সজোরে পাঞ্চ বসিয়ে দিলো ক্রীতিক,সঙ্গে সঙ্গে ভে’ঙে চৌচির হয়ে ঝরঝর করে মাটিতে আঁচড়ে পরলো কয়েক টুকরো ভগ্ন কাঁচ,সেই সাথে ধারালো কাচে আ’ঘা’তপ্রাপ্ত হয়ে র’ক্ত বেরিয়ে এলো ক্রীতিকের হাতের বেশ কয়েকটা আঙুল থেকে।
নিজের র’ক্তা’ক্ত হাতের দিকে এক পলক ও না তাকিয়ে উল্টে একের পর এক ধোঁয়ার কুন্ডলী ছাড়তে ছাড়তে পুনরায় গর্জে উঠে হিং’স্র গলায় ক্রীতিক বললো,
—- প্র’তারক, মি’থ্যাবাদী,ছ’লনাময়ী নিজের সবকিছু আমার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে, হাজারটা মি’থ্যা প্রতিশ্রুতি শুনিয়ে, আমাকে নিজের জন্য উন্মাদ বানিয়ে ছেড়ে এভাবে মায়ের হাত ধরে পালিয়ে যেতে একবারও কলিজা কাঁপলো না তোর? আমি তোর আদতে কি হাল করবো সেটা একবারও মাথায় আসেনি তাইনা? ঠিকাছে, জায়ান ক্রীতিকের আসল চেহারাটা এবার তুইও দেখবি। কি ভেবেছিলি? পিচ্চি বলে ছেড়ে দেবো? মোটেই না, জায়ান ক্রীতিক এতোটাও স্বাধু পুরুষ নয়, ভালোবাসার দ’হনে একটু একটু করে পু’ড়ি’য়ে মা’র’বো তোকে আমি।ঠিক যেভাবে তুই আমাকে মে’রেছিস। তোকে যেদিন পুরোপুরি ভাঙতে পারবো, সেদিন আবারও এই বুকে ঠায় পাবি তুই, তার আগে আর নয় ।
*
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কিছুটা নিচে গিয়ে ক্রীতিকের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে সেখানেই ধপ করে বসে পরে প্রত্যয়। দূর্বল হাতে চিকন ফ্রেমের চশমাটা খুলে,অদূরে সানফ্রান্সিসকো মূল শহরের দিকে নিস্প্রভ চোখে তাকিয়ে মনেমনে প্রত্যয় বলে,
—– ভাইকে কি করে বোঝাই আমার চোখেও যে আজ আর ঘুম নামবে না, এভাবে সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি অনু? এই হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব ছাপিয়ে আমি কি আদৌও তোমাকে খুঁজে পাবো? আর কি দেখা হবে আমাদের?
অযাচিত প্রশ্নের উত্তর মেলেনা আর, উল্টে প্রেয়শীকে হারানোর নিদারুণ বিজ্ঞাপ্তিতে ছেয়ে যায় হৃদয়ের শহর, সহসাই হাত দিয়ে নিজের বুকের বাম পাশটা চেপে ধরে প্রতয়,চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরে অশ্রুশিক্ত দুফোঁটা নোনাজল, তৎক্ষনাৎ শার্টের হাতার উল্টো পিঠ দিয়ে সেই জল টুকু আড়াল করে পকেট থেকে ফোন হাতরে কাউকে কল লাগালো ও, ওপাশ থেকে কে কি বললো সেটা না বোঝা গেলেও এপাশ থেকে প্রত্যয় বললো,
—– অনন্যা শেখের বিডি নাম্বারটা চাই আমার, এস সুন এস পসিবল।
***********************************************
অবশেষে ক্রীতিক যখন বাড়িতে ফিরলো তখন সবে সবে ভোর হয়েছে মাত্র। চারিদিকে সূর্যের সোনালি ছটা নিদারুণ আলো ছড়াচ্ছে, ডুপ্লেক্স বাড়িটা কাঠের শোপিচের মতোন মাথা উঁচু করে স্ব স্থানে দাড়িয়ে আছে, এই একটা মায়া যা ক্রীতিককে আজ অবধি ছেড়ে যায় নি।
ফ্রেঞ্চ গেইট ছাড়িয়ে টলতে টলতে ভারী পদযুগলে বাড়ির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে ক্রীতিক। ওর চোখ দুটো আগের চেয়েও অনুভূতি শূন্য। প্রতিটি কদমে অজানা আ’ক্রমন হানা দিচ্ছে হৃদয়ে। সেখান থেকে কেউ একজন অসহায় গলায় চিৎকার করে বলছে,
—– ভেতরে যাস না কষ্ট হবে, ওখানে অরু নেই,সব ফাঁকা।
তৎক্ষনাৎ জিদি উগ্র মনটা গম্ভীর ধা’রালো গলায় বলে উঠছে,
— না থাকলে নেই, ওই মি’থ্যে বাদীটা কবেই বা ছিল আমার, কয়েক দিনের জন্য ফিরে এসে কেবল হৃদয়টাতে এক সমুদ্র জ’লোচ্ছ্বাস তুলে দিয়ে আবার জায়গা মতো ফিরে গিয়েছে, ছ’লনাময়ী একটা। নিজের সবকিছু দিয়ে আমাকে পাগল বানাতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।
শেষ কথাতে দম আটকে এলো ক্রীতিকের,চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো তৎক্ষনাৎ, আবারও সেই এলোমেলো অনুভূতি, অরুর গায়ের মিষ্টি গন্ধ, অরুর নরম তুলতুলে ঠোঁট, ওর স্পর্শ সবকিছু এখনো জীবন্ত দু’চোখের পাতায়। সেসব কথা মাথায় এলে উন্মাদ হয়ে যায় ক্রীতিক। তবে জিদি মস্তিষ্কটা খুব বেশিক্ষণ ভাবতে দিলোনা অরুকে,সবকিছু মাথা থেকে ঠেলে সরিয়ে অকস্মাৎ চোখদুটো খুলে ফেললো ও।পরবর্তীতে আবারও ভারী পা ফেলে এগিয়ে গেলো মেইন ডোরের কাছে।
দরজা খুলতে খুলতে হাতের পিঠ দিয়ে সেই কখন থেকে এক নাগাড়ে নাকের ডগা ঘষছে ক্রীতিক।ব্যাপারটা বিরক্তিকর আর আ’শঙ্কা জনক।কিন্তু ক্রীতিকের কাছে প্যানিক এ্যা’টার্ক নতুন কিছু নয়, তাই ও এসবে কোনোরূপ পাত্তা না দিয়েই চুপচাপ ভেতরে ঢুকে গেলো। ভেতরে প্রবেশ করে হলরুমে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃশ্যগত হলো বিড়াল ছানা ডোরা, আবারও সেই অরুর স্মৃতি, বিরক্তিতে এবার চিড়বিড়িয়ে উঠলো ক্রীতিক, গর্জে উঠে তেঁতো গলায় ডোরাকে ধমকের সুরে বললো,
—– তুই এখনো এখানে কি করছিস? যা ভাগ।
অবুঝ প্রানী ডোরা কি বুঝলো কে জানে? হুট করেই মিয়াঁও মিয়াঁও আওয়াজ করা থামিয়ে দিয়ে চুপচাপ লেজ গুটিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দিলো সে। ডোরাও চলে যাচ্ছে, ব্যপারটা বোধগম্য হতেই হাঁটু ভেঙে ধপ করে মেঝেতে বসে পরলো ক্রীতিক,অতঃপর কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,
—- যাস না ডোরা।
ডোরা গেলোনা সেখানেই লেজ গুটিয়ে বসে পরলো তখনই। ক্রীতিক সেদিকে একনজর পরখ করে মৃদু হেসে, আবারও নাকের ডগায় আঙুল ছোঁয়াতেই বুঝতে পারলো ওর নোজ ব্লে’ডিং হচ্ছে। ক্রীতিক ঝাপসা চোখে আঙুলের দিকে তাকিয়ে বিড়িবিড়িয়ে বললো,
—- এগেইন, দিস ফা’কিং প্যানিক এ্যা’টার্ক। বির’ক্তিকর।
কোনোমতে হাতার উল্টো পিঠ দিয়ে ভালোমতো র’ক্তটুকু মুছে,ক্রীতিক কাঁপা হাতে পাহাড়ের ঢাল থেকে কুড়িয়ে আনা আধভাঙ্গা ফোনটা দিয়ে “আর্জেন্ট”লিখে ম্যাসেজ করলো ফ্রেন্ডস গ্রুপে। তারপর একটু নিচের দিকে স্ক্রল করে আবারও সেই ব্ল্যাক হার্ট ইমোজি দিয়ে সেভ করা নাম্বারের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে কাঁপা হাতে টাইপ করলো ক্রীতিক,
—- আবারও আমাকে একা করে দিয়ে কোথায় চলে গেলি হার্টবিট? তোকে ছাড়া আমি ঠিক নেই, মোটেই ঠিক নেই। তুই ঠিক আছিস তো জান?
পুরোপুরি চোখ বুজে যাওয়ার আগে এতোটুকুই টাইপ করেছিল ক্রীতিক। ও জানতো এই ম্যাসেজ কিংবা এই নাম্বার কোনোটাই অরুর কাছে পৌঁছাবে না আর, তবুও ছ’ন্নছাড়া, বেপরোয়া মনটাকে কে বোঝাবে এই কথা? কেই বা দেবে অরুর খবর?
আচ্ছা অরু আদৌও ঠিক আছে তো?
***********************************************
মাঝরাতে বিশাল কক্ষের লাগোয়া কাঠের দরজায় তীব্র করাঘা’তের ঝনাৎ ঝনাৎ শব্দে যেন পুরো অন্দরমহল কেঁপে উঠছে ক্রীতিক কুঞ্জের।
সেই সাথে কাচের চুড়ি ভা’ঙার টুংটাং আওয়াজ। অমন শক্ত পোক্ত দরজা ভেদ করে ভেতরের আওয়াজ তো বাইরে আসার কথা নয়, তবুও ভেতর থেকে অরুর গগন কাঁপানো হৃ’দয় বিদা’রক একেকটা চি’ৎকারে কম্পিত হয়ে উঠছে অনুর শরীর। ওড়না দিয়ে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে অরুর কক্ষের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে অনু।
ওদিকে দরজার বাইরে কারও উপস্থিতি টের পেতেই বারাবারি রকমের উত্তেজিত হয়ে উঠেছে অরু। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা ধা’ক্কাতে ধা’ক্কাতে ভে’ঙে ফেলছে হাতের সবগুলো চুড়ি। অরুকে এভাবে বুক ফাটি’য়ে কাঁদতে দেখে অনু কাঁপা গলায় বলে ওঠে,
—- অরু বোন আমার একটু শান্ত, আমি মামির কাছ থেকে চাবি ছি’নিয়ে এনে তোর রুমের দরজা খুলে দিচ্ছি, তবুও এভাবে কাঁদিস না দয়া করে।
অনুর কথায় তীব্র কা’ন্নায় ভে’ঙে পরে অরু বললো,
—– জায়ান ক্রীতিককে ছাড়া আমি ম’রে যাবো আপা,তুই দয়া করে আমাকে তার কাছে যেতে দে, আর কোনোদিন তোদের এই অপয়া মুখ দেখাবো না, তবুও তাকে ছাড়া বাঁচবো না।
অনু ভেবে পায়না,জায়ান ক্রীতিকের মতো একটা উগ্র মেজাজী, দয়ামায়াহীন,পা’ষণ্ড পুরুষের জন্য কিনা তার এইটুকু বোন এভাবে পা’গল হয়ে গেলো? কিন্তু কেন? কি এমন আছে জায়ান ক্রীতিকের মাঝে? কোন জাদুবলেই বা বশ করেছে সে অরুকে?
কই অনুর চোখে তো কোনোদিন তেমন কিছু পরেনি, ক্রীতিক অরুকে জো’র করে বিয়ে করেছে ব্যাপারটা ভাবতে গেলেও মাঝেমাঝে সন্দেহ হয় অনুর, মনে মনে বলে,
—- কি করে সম্ভব এটা? ক্রীতিক ভাইয়াকে তো কখনো অরুর দিকে ভালো করে তাকাতেও দেখলাম না,অথচ অরু কি-না তার জন্য এভাবে পা’গলামি করছে? আচ্ছা ক্রীতিক ভাইয়া কি আসলেই এতোটা ভালোবাসা ডিজার্ভ করে? উনি তো সুযোগ পেলেই অরুকে মা’রধর করে, তাহলে অরু কেন এমন করছে? একটুআধটু ভালোবাসলে কি কোনোদিন এতোটা পাগলামি করা যায়?মোটেই না। তারমানে কি ক্রীতিক ভাইয়ার ভালোবাসাটা ইনডিভিজুয়াল? আমরাই শুধু দেখতে পাইনা,যার জন্য রয়েছে সে ঠিকই গভীরতা টের পেয়েছে এই ভালোবাসার।
অনুর ভাবনার ছেদ ঘটে অরুর ফোপাঁনোর আওয়াজে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত কন্ঠে অরু পুনরায় বলে,
—– আপা দে’না যেতে, ম’রে যাবো তো। তুইওতো ভালোবাসিস, তাহলে আমি কি দোষ করেছি?
অরুর কাকুতি মিনতি শুনে কান্না দমিয়ে রাখতে পারলো না অনু, অজান্তেই চোখের পাতা ভারী হয়ে গড়িয়ে পরলো অশ্রুজল। অতঃপর কোনোমতে নিজেকে সংবরণ করে, অনু বললো,
—– কি করে যাবি ক্রীতিক ভাইয়ার কাছে? ভুল গিয়েছিস আমরা যে বাংলাদেশ চলে এসেছে,আর তোর জায়ান ক্রীতিক এখনো সেই ক্যালিফোর্নিয়াতে।
অনুর কথায় একপ্রকার ঝাঁজিয়ে উঠলো অরু, অসম্ভব তেঁতো গলায় বললো,
—- তাহলে কেন নিয়ে এলি আমাকে? তোদের কি মনে হয় ওনাকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো? মোটেই না। জায়ান ক্রীতিক কে ছাড়া পাগ’ল হয়ে যাবো আমি, শুনেছিস তুই? তোর মামি আর মাকেও কথাটা বলে দে, আমার স্বামী একবার ফিরে এলে, প্রত্যেককে ক্রীতিক কুঞ্জ থেকে হটিয়ে ছাড়বে, তবুও আমাকে ছাড়বে না।
অনুর কষ্ট হচ্ছে খুব, ছোট্ট বোনটার এমন দূরহ অবস্থা আর সহ্য করা যাচ্ছে না, তাছাড়া মা তো এখন আগের চেয়ে ভালোই সুস্থ, দু’একটা কথা বললে খুব বেশি বারাবারি হবে না, সেই ভেবেই অনু চোখ মুছতে মুছতে পা বাড়ালো মায়ের কক্ষের দিকে। মনেমনে ঠিক করলো,
—–আজ মায়ের পায়ে পরে অনুরোধ করে হলেও সবকিছু ঠিক করতে হবে। মামি আর রেজা ভাইয়ের বুদ্ধিতে মা এবার সত্যি সত্যিই অতিরিক্ত করছে।অরুকে আটকে রাখার মতো তো এমন কিছু হয়নি? ও তো আর উড়ে উড়ে আমেরিকা চলে যেতে পারবে না,তাহলে কেন এই নি’র্দয় আচরন?
ভেবে পায়না অনু। তাছাড়া অরুতো ঠিকই বলেছে জায়ান ক্রীতিক অরুর খোঁজে বাংলাদেশে এলো বলে।তখন মামি আর মামির নেতা ছেলে রেজার যে তুলোধুনোর মতোই নাজেহাল অবস্থা হবে সেটা অনু ভালোই আঁচ করতে পারছে এখন থেকেই।
চলবে…….
বানান ভুল থাকতে পারে, তার জন্য সরি।