#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৩৭
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]
অনুজা ছোট্ট বোনটার উদভ্রান্ত ভগ্নহৃদয়ের কা’ন্না আর কষ্ট দেখে অবশেষে কিছুটা হলেও হৃদয় টললো অনুর। মনের মনিকোঠায় কোথায় যেন চিনচিনিয়ে নাড়া দিয়ে উঠলো ওর।
যেখানে মানুষ দুইটা একজন আরেকজনকে ছাড়া ম’রে যাচ্ছে, সেখানে এতো সমাজ বিবেচনা করে কি লাভ? বুঝে আসেনা অনুর।তাছাড়া ধর্মে যেই সম্পর্কের পুরোপুরি বৈধতা আছে, সেখানে সামান্য সমাজ আর সমাজের কটুক্তির দোহাই দেওয়াটা নিছকই ছেলে মানুষি নয় কি?
জায়ান ক্রীতিক কবেই বা মেনেছে এই সমাজের নিয়ম কানুন? তার মতো মানুষকে সমাজের শেকলে ব’দ্ধ করা কেবলই কল্পনা মাত্র। অথচ এসবের মাঝে পরে শুধু শুধু পাহাড় সমান ক’ষ্টে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওইটুকুনি মেয়েটা।
এতোদিন যেমন তেমন ছিল, দেশে ফেরার পরে এখন আবার শুরু হয়েছে মামি আর রেজা ভাইয়ের উপদ্রপ। সবমিলিয়ে নিজের ছোট্ট বোনের এমন হৃদয় নিংড়ানো কা’ন্নার জোয়ার চোখের সামনে আর দেখতে পারলো না অনু। করিডোরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কিছু ক্ষী’প্র সিদ্ধান্ত সমেত, নিজের সকল সংশয় ভুলে ছুটে যেতে লাগলো মায়ের কক্ষের দিকে।
চৈত্র মাসের ভ্যাপসা গরম, মাথার উপর অনবরত ঘুরতে থাকা বৈদ্যুতিক পাখাটার জীবন ফুরিয়ে এসেছে বোধহয়,তবুও কর্মক্ষেত্রে অটল সে। পুরাতন আমলের পাখা মজবুত তো হবেই।
রাতের বেলাতেও এইটুকুনি ঠান্ডা হাওয়া নেই, তাই রুমের মাঝে এয়ারকুলার মেশিন চালিয়ে ইজি চেয়ারে বসে বেশ মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন আজমেরী শেখ। সেই প্রথম জীবন থেকেই সাহিত্যে তার ভীষণ আগ্রহ, জামশেদ জায়ানের সাথে বিয়ে হওয়ার পরে তিনিই মহলের এককোনে একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী উপহার দিয়েছিলেন আজমেরী শেখকে। ভালোবাসা প্রকাশের ফলস্বরূপ লাইব্রেরীর নাম দিয়েছিলেন “মেরীর রংমহল”।
কিছু বছর আগেও ব্যবসায়ী কাজে স্বামীকে সাহায্য করার পরে যেই ফুরসত টুকু মিলতো সেই সময়টা লাইব্রেরিতেই কাটাতেন আজমেরী শেখ। খুব মনদিয়ে নাড়াচাড়া করতেন পছন্দের বইগুলো, একে একে পাতা উল্টে বুক ফুলিয়ে নিতেন নতুন বইয়ের সুঘ্রাণ ।
মাঝখানে অবশ্য অসুস্থতায় কেটে গিয়েছে বেশ কিছু বছর,এখন আর আগের মতো চোখের তীক্ষ্ণ পাওয়ারটা অবশিষ্ট নেই, তাই চোখের উপর মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়েই বহুবছরের অভ্যেসে কিছুটা শান দিতে বসেছেন তিনি আজ।
আজমেরী শেখ যখন বইয়ের পাথায় বুদ হয়ে আছেন, তখনই হুড়মুড়িয়ে কক্ষে প্রবেশ করে অনু। অনুর এমন অকস্মাৎ আগমনে ভ্রুকুটি করে আজমেরী শেখ বলেন,
—-এটা কি ধরনের আচরণ অনু? কারও রুমে ঢুকতে হলে আগে নক করতে হয়, এখনো শিখাতে পারিনি কেন?
মায়ের কথায় কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে, অনু হাতের মাঝে হাত দিয়ে কচলাতে কচলাতে বললো,
—- মামি কেন অরুর রুমের দরজায় তালা লাগিয়েছে মা? তুমি কিছু বলোনি?
আজমেরী শেখ কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বললেন,
—- তালা লাগিয়েছে মানে?
মায়ের কথার পাছে অনু কিছু বলবে তার আগেই রুমের মাঝে আগমন ঘটে অনুর মামি জাহানারার। অনু রা আমেরিকা থেকে ফেরার পরেই পুরো পরিবার শুদ্ধ এসে ক্রীতিক কুঞ্জে হাজির হয়েছে তারা। উদ্দেশ্য আজমেরী শেখের দেখভাল করা। অনুর মামা ভূমি অফিসের ছোটখাটো কর্মকর্তা, তিনি মেয়েলী ঝুট-ঝামেলায় খুব কমই থাকেন।
তবে ক্রীতিক কুঞ্জের মতো আলিশান বাড়িতে একমাস কেন একবছর বেড়াতেও তার কোনো অসুবিধা নেই। তারউপর এখন তার বোনও সুস্থ সবল হয়ে ফিরেছে,আগেতো ধিঙ্গি মেয়ে দু’টোর সাথে জাহানারার সারাদিন কথা কাটাকাটি লেগেই থাকতো, এখন আর সেই সুযোগ নেই। কারন মামির সাথে বে’য়াদবি করলে কিভাবে মেয়েদের সু-শিক্ষা দিতে হয় সেটা তার বোন ভালো করেই জানে।
ওই জন্যই তো, বউয়ের এক কথাতেই এখানে বেড়াতে চলে আসা। জাহানারার অবশ্য অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা ফলিয়ে তবেই এ বাড়ি থেকে বিদেয় হবে সে, তার আগে নয়।
অনুর কথায় আশ্চর্য হয়ে আজমেরী শেখ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবেন তার আগেই জাহানারা এগিয়ে এসে বলেন,
—- কি করবো বলো আজমেরী, তোমার ছোট মেয়েটা অসহ্য রকম চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছিল, তারউপর অন্দরমহলের সব দামিদামি জিনিস গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করে ছেড়েছে।বিশ্বাস না হলে নিচে গিয়ে দেখো একবার।
মামির কথায় তেতে উঠে অনু বললো,
—– ভাঙলে ওর স্বামীর টাকায় কেনা জিনিস ভেঙেছে, তাতে তোমার কি মামি?
অনুর মুখে ক্রীতিকের গুনগান শুনেই গর্জে উঠলেন আজমেরী শেখ,মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন,
—— চুপ করো, কে কার স্বামী? কোথাকার কোন থাইল্যান্ড বসে বিয়ে পরিয়েছে, রেজিষ্ট্রি করেছে ওসব আমি মানিনা।
—- কেন মানোনা মা? অস্বীকার করতে পারবে অরু যে ক্রীতিক ভাইয়ার বিবাহিতা স্ত্রী? তাছাড়া অরু চারদিন যাবৎ ক্রীতিক ভাইয়ার সাথে ছিল, একসাথে একই ছাদের নিচে, আর সবচেয়ে বড় কথা ওরা একজন আরেকজন কে ভালোবাসে।তাহলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?
অনুর কথার পাছে, আজমেরী শেখ কিছু বলার আগেই জাহানারা মুখ দিয়ে বিরক্তিকর ছ্যাহ ছ্যাহ উচ্চারণ করে বলে ওঠে ,
—– কতটা লজ্জা শরমের মাথা খেলে মানুষ এই কাজ করতে পারে বাপু? শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের মায়ের সৎ ছেলের গলায় ঝুলে পরলো ছ্যাহ। আমার তো মনে হয় ওই ছেলে ফূর্তি করার জন্যই এতো নাটক করেছে, ফূর্তি করা শেষ এখন আর এদিকে ফিরেও তাকাবে না।
মামির কথায় শক্ত হয়ে এলো অনুর চোয়াল, এরা ভাবেটা কি নিজেকে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে। ওদিকে আজমেরী শেখের ও কানে লেগেছে কথাগুলো, নিজের সন্তানকে নিয়ে কেউ এসব বললে কানে লাগারই কথা। আজ নিজের ভাইয়ের বউ বলছে, দুদিন পর মহল্লার লোকেরাও বলবে,তারপর ধীরে ধীরে পার্টি অফিসের সবাই পিঠ পিছে খিল্লি ওড়াবে।তার মেয়েকে নিয়ে বাজে কু’রুচিকর মন্তব্য করবে,খুব গভীর আর অন্তরঙ্গ ব্যাপার গুলো নিয়ে হাসাহাসি করবে।এখনই সেসব কথা ভাবতে গেলে মেজাজ সপ্তম আসমানে চড়ে যায় আজমেরী শেখের।
তিনি ক্ষ্যা’পাটে অনুকে তৎক্ষনাৎ ধমকের সুরে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
—- অরু যদি একটা রাস্তার ছেলেকেও ভালোবাসতো তবুও তার অন্যান্য যোগ্যতা বিচার করে মেনে নিতাম আমি,কিন্তু জায়ান ক্রীতিক কে মানা যায়না। তাই এসব বিষয় নিয়ে আর একটাও কথা বাড়াবে না অনু, চুপচাপ থাকবে,সবার সব কিছু জানাজানি হয়ে যাওয়ার আগেই অরুর জন্য উপযুক্ত একটা ব্যাবস্থা করবো আমি।
অনু বিচলিত হয়ে তেঁতো গলায় বললো,
—- জায়ান ক্রীতিকের দোষটা কোথায় মা?
তখন থেকে অনু ক্রমাগত মুখেমুখে তর্ক করছে তাও এরকম একটা জটিল বিষয় নিয়ে, ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগছে না আজমেরী শেখের।তাই তিনি এবার মেয়েকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
—– আমি বলেছি মেনে নেওয়া যায়না,তারমানে যায়না। আর কোনো প্রশ্ন করবে না এক্ষুনি নিজের রুমে যাও।
অনু থমথমে গলায় বললো,
— যা ইচ্ছে করো মা, তবে নিজের জিদ আর অহমিকাকে এতোটাও বড় করে দেখতে যেও না যার ফলসরূপ তোমার মেয়ের না আবার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।
কথাটুকু বলে মামির কোমরের গোছা থেকে টান মে’রে অরুর রুমের চাবিটা নিয়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় অনু।
অনু চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় জাহানারার ব্রে’নওয়াশ। তিনি এগিয়ে গিয়ে আজমেরী শেখের উদ্দেশ্যে বলেন,
—- সেই কবে থেকে বলছি তোমায় আজমেরী, অনু বড় হয়েছে,আমার রেজাও মাসআল্লাহ নামদাম কামিয়েছে অনেক, পুরো ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রলীগের সহসভাপতি হয়েছে এবছর। রেজার কথায় বড়বড় মাথা ওয়ালা লোকেরাও এখন ওঠে বসে।
তাছাড়া আমার ছেলের ক্ষমতা তো তোমরা নিজের চোখেই দেখলে, তোমাদের সকল বন্দোবস্ত সেরে হুট করেই কেমন আমেরিকা থেকে নিয়ে এলো। ক্ষমতা না থাকলে কি এসব হয়? তাই এখনো সময় আছে অরুর মতো উচ্ছনে গিয়ে ভুলভাল কাহিনী ঘটানোর আগেই অনু আর রেজার গাঁটছড়াটা বেধে দাও। তাহলে ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো,মাঝখান থেকে তোমার একটা ছেলেও জুটলো।
একসাথে অনেকগুলো কথা শেষ করে,রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে জাহানারা পুনরায় বললেন,
—-আমি যা বলি তোমার ভালোর জন্যই বলি বোন।
অন্যের কথায় প্রভাবিত হওয়ার মতো মানুষ আজমেরী শেখ নয়। কিন্তু অরু এবার ইউ এস এ তে গিয়ে যা যা ঘটালো তাতে অনুর প্রতি সন্দেহ আর শঙ্কা দুটোই তার মনেও দানা বেঁধেছে কিছুটা।
এক মেয়ের জন্য মান সম্মান খোয়া যাচ্ছে, এই সময়ে অন্য মেয়েকে সম্মানের সাথে উপযুক্ত গুনাগুন সম্পন্ন পাত্রস্থ করা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতোই। তাই আপাতত আজমেরী শেখের মাথায় জাহানারার কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।
ঠিকই তো এভাবে শর্ট নোটিশে কত সহজে দ্বায়িত্ব নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে ফেলেছে রেজা। তাছারা আরেকটা কথাও তো ঠিক, এখন আর সেই এলাকার নেতাদের লেজ ধরে ঘুরে বেড়ানো পাতি নেতা নেই রেজা। নিজের যোগ্যতায় বেশ ভালোই নামদাম কামিয়েছে সে। দেখতে শুনতেও খারাপ না। এককথায় পাত্র হিসেবে ভালো, শুধু ভালো নয় বরং বেশ ভালো।
***********************************************
মামির কাছ থেকে চাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে অনু যখন দ্রুত পা ফেলে অরুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই হুট করে সামনে চলে আসে রেজা আর ওর ছোট বোন রুপা।
না, রেজা অনুর পথ আটকে দাঁড়ায়নি, বরং দু’জন দুদিক থেকে আসছিল বলেই পথিমধ্যে দেখা। আমেরিকা থেকে আসার পর এটাই বোধ হয় প্রথম সাক্ষাৎ ওদের। যার ফলস্বরূপ অনুকে দেখা মাত্রই পা দুটো থমকে যায় রেজার। রেজার পেছনে ওর ছোট বোন রুপাও ছিল, মাত্রই সন্ধ্যার টিউশন থেকে ফিরেছে সে, এখন রুমেই যেতো।কিন্তু পথিমধ্যে ভাইকে এভাবে আচমকা দাঁড়িয়ে পরতে দেখে,তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের আগন্তুক কে দেখার জন্য একটু খানি উঁকি দেয় রুপা।
উঁকি দিতেই চোখের সামনে অনুকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে রুপা বললো,
—- আরে ভাবি যে, কতদিন পর দেখা হলো তোমার সাথে।
এমনিতেই মেজাজ চড়াও হয়ে আছে,মাথাটা য’ন্ত্রণায় ধিরিম ধিরিম আওয়াজ করছে,তারউপর রুপার এমন অহেতুক ভাবি সম্মোধনে বেশ বিরক্ত হলো অনু, তৎক্ষনাৎ রুপাকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
—- কে তোর ভাবি? আপু বল।
অনুর ধমকে রুপা মুখ কালো করে চলে যেতেই রেজা খানিকটা এগিয়ে এসে শুধালো,
—– কেমন আছো অনু?
অনু বিরক্তিতে চিড়বিড়িয়ে উঠে বললো,
—- ভালো নেই।
—কেন?
অনু এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে আগাগোড়া পরখ করলো রেজাকে,আগের চেয়ে বেশভূষায় বেশ পরিবর্তন হয়েছে তার । চেহারায় এখন আগের মতো মদন মদন ভাবটা আর নেই, সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি আর মুখভর্তি খড় দাড়িতে ভালোই লাগছে দেখতে,কোথাও যেন একটা গু’ন্ডা মা’স্তান ভাইব আছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনুর চোখে রেজাকে সেই আগের মতোই মদন মদন লাগছে। রেজা এখনো প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে দেখে অনু নিজের ভ্রম ছেড়ে বেরিয়ে এসে বললো,
—- আপনার মা ভালো থাকতে দিলেতো?
অনুর কথার পাছে রেজা স্নেহের স্বর বুলিয়ে বললো,
——এভাবে কেন বলছো অনু? এখন একটু সহ্য করো বিয়ের পর মাকে সামলানোর দ্বায়িত্ব আমার।
অনু অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে বলে,
—- কিসের বিয়ে, কার বিয়ে? কি বলছেন যা-তা?
রেজা ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো,
—- এবার আমাদের বিয়েটা সত্যিই হচ্ছে “প্রিয়া আমার”। একটু আগে শুনে এলাম মা আর ফুপি বিয়ে নিয়ে আলাপ করছে। আরেকটু সবুর করো তোমাকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বউ করে নিয়ে যাবো আমি।
রেজার পকর পকর অনু এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে অরুর ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বজ্র কন্ঠে বললো,
—- রিডিকিউলাস।
রেজা লাজুক হেঁসে হালকা মাথা চুলকে বলে ওঠে,
—– হ্যা ওইটাই।
রেজার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখ ভঙ্গিমা পাল্টে গেলো অনুর, রাগি রাগি চেহারাটা মূহুর্তেই ধারণ করলো অসহায় রূপ। মুখশ্রী জুড়ে জমা হলো একরাশ ঘন কালো আত’ঙ্কের মেঘ, দেখে মনে হচ্ছে টলটলে চোখ দুটো থেকে এখনই নেমে আসবে অসহায় অপারগ বারিধারা। তপ্ত রাশভারি ব্যথাতুর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে করিডোর দিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড়ালো অনু,
—– শুনেছি বাড়ির বড় মেয়েরা সবসময় স্যাক্রিফাইস করে, আমি যদি নিজের ভালোবাসার বেলায় একটু খানি স্বার্থপর হই তাহলে কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে? আমিও কি অরুর মতো খারাপ আর অবাধ্য মেয়ে হয়ে যাবো?
***********************************************
ক্রীতিক কুঞ্জের হলরুমে টাঙানো দেয়াল জোড়া বিশাল ঘড়িটায় ঢংঢং আওয়াজ করে সকাল আটটার জানান দিচ্ছে।
তবে এখনো পর্যন্ত বিছানা ছাড়েনি কেউ। নিচে ডাইনিং এর যায়গাটাও পুরোপুরি ফাঁকা, সেই সুযোগে সবার আড়ালে অরুকে একটু খানি মাংস ভাত মাখিয়ে খায়িয়ে দিচ্ছে অনু।
খাবারের লোকমা মুখে নিয়েই বসে বসে ফোপাঁচ্ছে অরু, কিছুতেই মুখ থেকে গলায় নামাচ্ছে না। সেই তখন থেকে একই ভাবে বসে আছে দেখে অনু এবার ধমকে উঠে বললো,
—- কি ব্যাপার খাচ্ছিস না কেন?
অরু হেঁচকি তুলে বলে,
—- খাবার গলা দিয়ে নামছে না আপা,আমি ওনার কাছে যাবো।বিশ্বাস কর ওনার থেকে এতোটা দূরে চলে এসেছি, সেটা ভাবলেও আমার কলিজা ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে, গ’লা কাঁ’টা মুরগীর মতো ছটফট করে উঠছে হৃদয়টা।
আমাদের কি আর কখনো দেখা হবেনা আপা? উনিতো আমাকে না দেখে থাকতে পারেনা,প্রচুর রেগে যায়। আচ্ছা, অতিরিক্ত টেনশনে ওনার যদি আবারও প্যানিক এ্যা’টাক হয়, আবারও যদি নাক দিয়ে র’ক্ত পরে, তাহলে? উনিতো তখন পুরোপুরি সেন্সলেস হয়ে যায়, ওনার অনেক কষ্ট হয় আপা।
খাবার মুখে নিয়ে একত্রিশ বছরের ক্রীতিকের জন্য মাত্র উনিশে পা দেওয়া অরুর এমন দুশ্চিন্তা দেখে অনু হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর ছোট বোনের দিকে, ঠিক কতোটা ভালোবাসলে সামান্য ভৌগোলিক দূরত্বে মানুষ এতোটা ছটফট আর আহাজারি করে জানা নেই অনুর,তাই বলার আর কিছু ভেবে না পেয়ে অরুকে স্বান্তনা দিয়ে অনু বলে,
—- সব ঠিক হয়ে যাবে বোন আমার, ক্রীতিক ভাইয়া ঠিক কোনো একদিন চলে আসবে,এখন খেয়ে নে।
অনু কথাটা বলেছে কি বলেনি,তখনই ওর মুখের কথা ছো মে’রে নিয়ে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ডাইনিং এর দিকে এগিয়ে এসে জাহানারা বললেন,
—– খাওয়া খাওয়া, বেশি করে খাওয়া, শরীর ভে’ঙে চুড়ে যা হাল হয়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ বাড়ির ছোট সাহেব সর্বনাশের আর কিচ্ছুটি আর বাদ রাখেনি।
মামির আকারে ইঙ্গিতে করা নোং’রা তি’রস্কারে থমথমে হয়ে ওঠে অনুর মুখ। এসবের কারনেই তো অরুকে মামির সামনে খুব একটা পরতে দেয়না ও।
অনুর এসব রাগ ঢাকের দু’পয়সা তোয়াক্কা না করে জাহানারা এগিয়ে এসে,আঙুল উঁচিয়ে অরুর ঢিলে হয়ে যাওয়া জামাটা দেখিয়ে বললো,
—- দেখ দেখ জামাটা পর্যন্ত কাঁধ থেকে খুলে পরছে, কি ধকলটাই না গিয়েছে মেয়ের উপর দিয়ে, আগে তো এমন ছিলিস না। অথচ এবাড়ির ছেলের সাথে কদিন থেকেই এই হাল?
হ্যারে অরু হাঁটুর বয়সী মেয়ে হয়ে বয়সে ওমন বড় সৎ ভাইয়ের সাথে থাকতে তোর একটুও ভয় করলো না?
মামি এখন ইচ্ছে করে লাগাম ছাড়া কথা বলে ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছে, ব্যাপারটা বুঝে আসতেই চেঁচিয়ে উঠলো অনু,
—-মামি চুপ করবে তুমি?
মামির বলা নোংরা কথার মাথায় এতোক্ষণে নিজের শরীরের দিকে চাইলো অরু, আসলেই ও আগের চেয়ে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে, তবে এটা আজ বা কাল নয়, প্রায় মাস খানিক আগে ক্রীতিক যখন হুট করেই ওর সাথে দেখা করতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল তখনকার ঘটনা।
ঘুরিয়ে পেচিয়ে হলেও কথাটা সত্যি, ক্রীতিকের জন্যই শারীরিক এই অধপতন অরুর। তাই অরু নিজের জামাটা ঠিকঠাক করে খাবার চিবুতে চিবুতে মামির উদ্দেশ্যে বললো,
—- স্বামীর সাথে থাকতে ভ’য় কিসের মামি?বিয়ের পরে মামার সাথে থাকতে তোমার বুঝি খুব ভ’য় হতো? শুনেছি তোমার আর মামার বয়সের পার্থক্য প্রায় পনেরো বছর, সেখানে আমিতো আমার স্বামীর চেয়ে বারো বছরের ছোট মাত্র।
এইটুকুনি মেয়ের মুখে এতো বড় অপ’মান জনক কথা শুনে ঝাঁজিয়ে উঠলেন জাহানারা, আশেপাশের কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই খিটমিটিয়ে বললেন,
—– বিদেশে গিয়ে ন’ষ্টা হয়ে ফিরেছিস আবার বড়বড় কথা বলা হচ্ছে? মহল্লার মানুষকে বলে দিলে তখন বুঝবি অপ’মান কাকে বলে।
— মামি, কি সমস্যা তোমার? কেন গায়ে পরে শুধু শুধু ঝ’গড়া করছো, আর কাকে কি বলছো তুমি? যে গদিতে বসে পায়ে পা দোলাচ্ছো সেটা ওর স্বামীর টাকায় কেনা, তাই ভালোয় ভালোয় বলছি মুখ সামলাও। পরিনাম খারাপ হতে পারে।জায়ান ক্রীতিক কে চেনোনা তুমি।
অনুর কথা শেষ হতেই,জাহানারার তীরের ফলার মতো দৃষ্টি ভস্ম করলো অনুকে, তিনি সেভাবেই তাকিয়ে বললেন,
—- ক’দিন পর ছেলের বউ হবি বলে তোক কিছু বলছি না অনু, তাই বলে এইনা যে মুখেমুখে তর্ক করলে তোকে ছে’ড়ে দেবো আমি।
অনু আশ্চর্য হয়ে শুধালো,
—- কি বলছো, কার ছেলের বউ?
—- তোমার আর রেজার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
মায়ের মুখ থেকে ভেসে আসা অকস্মাৎ কথাটা ধূমকেতুর হলকার মতো ছুটে এসে কর্ণকূহরে ঝঙ্কার তুললো অনুর, ও তৎক্ষনাৎ পাশ ঘুরে মায়ের দিকে তাকিয়ে আহত সুরে ডাকলো,
—- মা!
আজমেরী সিঁড়ির রেলিং ধরে নামতে নামতে বললেন,
—- আশা করি তোমার কোনো আপত্তি নেই।
অনু কাতরে উঠে বললো,
—- এতো তাড়াহুড়ো কেন মা? মাত্র কদিনই তো হলো আমরা দেশে ফিরলাম, তুমি এখনো সুস্থ হওনি পুরোপুরি, তোমাকে এখনো মাসে মাসে চেকআপের জন্য ইউ এস এ যেতে হবে।আর এখনই কিনা….
—- ওই জন্যই তো তাড়াহুড়ো, তোমাদের জন্য করনীয় দ্বায়িত্বটুকু ভালোয় ভালোয় পালন করতে পারলে তবেই আমার শান্তি। তাছাড়া তোমার বিয়ে না হলে অরুকে বিয়ে দেওয়া যাবেনা,এই মূহুর্তে অরুর বিয়ে হওয়াটা জরুরি, কিন্তু বড় বোনের আগে ছোট বোনকে বিয়ে দিতে গেলেই মানুষ পেছনের কাহিনি খোঁচাতে শুরু করবে,এটাতো আর আমেরিকা নয়। তাই আপাতত অরুর নয়, তোমার বিয়েটাই মোক্ষম আমার কাছে, আশা করি এবার আর কোনো আপত্তি নেই?
মায়ের কথা শেষ হতেই চেঁচিয়ে উঠলো অনু, জড়ানো কন্ঠে বললো,
—- হ্যা,হ্যা অনেক আপত্তি আছে, আমি এই বিয়েটা কিছুতেই করতে পারবো না মা।
অনুর প্রতিক্রিয়া শুনে আজমেরী শেখ মুখে কিছুই বললেন না, চুপ করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন মেয়ের মুখের দিকে অতঃপর আহত সুরে বলে উঠলেন,
—– ইদানীং আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে অনু, যখন তখন আবারও পরে যেতে পারি, তবে মনে হয়না এইবার পরে গেলে আর কোনোদিন উঠতে পারবো। সুস্থ থাকতে কথা শোনো মায়ের, নয়তো পরে আপসোস করবে।
মায়ের কথায় অনু, অরু দু’বোনেরই মুখ থেকেই র’ক্ত সরে গেলো, ওরা কি মায়ের সাথে বেশি বেশি করে ফেললো? সেটাই ভাবছে আপাতত।
অনুর হাত পা কাঁপছে, মনে হয়না আর শেষ রক্ষা হবে।অরুতো তাও কয়েকটা দিনের জন্য হলেও ক্রীতিকের হতে পেরেছিল, ওদের ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছিল, কিন্তু অনুদের অপূর্ণ ভালোবাসার কি হবে?
এই “কি হবে”,ভাবতেই গিয়েই বুকের ভেতরে এলোপাথারি ঝড় উঠেছে অনুর,সেই ঝড়ে একে একে ভে’ঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে আশা, ভরসা,প্রতিশ্রুতি সব। প্রত্যয়ের সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত মানস্পটে খচিত প্রতিটা সুন্দর মূহুর্তে যেন হুট করেই দা’উদাউ করে অ’গ্নি শিখা জ্বা’লিয়ে দিয়েছে কেউ।
অনু আর এভাবে ভেজা চোখ নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না সবার সামনে, এঁটো হাত সহ’ই ছুটে চলে গেলো নিজের রুমে। অতঃপর দরজা লাগানোর কর্কষ আওয়াজ ভেসে এলো দোতলার কোনো একটা ঘর থেকে।
***********************************************
সন্ধ্যে হতেই ল্যানটার্ন আর স্ফটিকের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে হিরিকো খচিত বারের চারিপাশ। ভেতরে সফ্ট গানের তালে তালে শরীর দোলাচ্ছে তরুণ তরুণীর দল।হাতে থাকা হুইস্কি আর রেড ও’য়াইনের প্রভাবে কেউ মাতাল আবার কেউ বা অর্ধ মাতাল। তবুও মিউজিকের তালে তালে পায়ে পা মিলিয়ে কোমর দোলাতে মোটেও অপারগ নয় তারা।
বিশাল বারের এককোনে যে বার কাউন্টার রয়েছে, সেখানেই বারস্টুল পেতে ডোরাকে কোলে নিয়ে বসে বসে রেড ও’য়াইনে চুমুক দিচ্ছে ক্রীতিক, পরনে এখনো পুরোপুরি ফর্মাল ড্রেস। দেখে মনে হচ্ছে ভার্সিটি থেকেই এখানে এসেছে সে। ক্রীতিকের মোটেই ডিস্কোবার কিংবা হইহট্টগোল পছন্দ নয়। তাই নিজের মতো করে একটু খানি সময় কাটাতে হলে এখানেই চলে আসে ও।
ছোট্ট ডোরা নিজের নরম তুলতুলে গা টা পুরোপুরি ক্রীতিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে আধো আধো চোখ খুলে ঝিমাচ্ছে, মনে হয় অ্যা’লকোহলের গন্ধে ওরও নেশা ধরে এসেছে। ক্রীতিক ডোরার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
—– তোর মালিকের মতো ঢং করা বন্ধ কর, নয়তো মাথায় তুলে একটা আ’ছাড় দেবো।
ডোরা বেচারী হয়তো জানেই না আসলে ওর দোষটা কোথায়,তাই সহসা চুপচাপ বসে রইলো ও।
ডোরাকে ধমক দিয়ে ক্রীতিক যখন আবারও ওয়াইনে মন দেয়, তখনই বারের মধ্যে একে একে আগমন ঘটে অর্ণব, এলিসা, আর সায়রের।
ওরা আজকাল ক্রীতিককে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকে, ওই জন্যই নিজেদের অবসর হলেই, হুটহাট লোকেশন ট্র্যাক করে চলে আসে ক্রীতিকের কাছে,ওকে একটু সময় দেওয়ার জন্য, ঠিক আগের মতো।
ওদেরকে দেখে ক্রীতিক ভালোমন্দ কিছুই বললো না,বরং ভাবলেশহীন হয়ে বসে রইলো আগের ন্যায়।
অর্ণব এগিয়ে এসে বারস্টুল টেনে বসতে বসতে অবাক হয়ে শুধালো,
—- দেখে তো মনে হচ্ছে ভার্সিটি থেকে ফিরেছিস, তাহলে বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে বারে কি করিস তুই?
ক্রীতিক ঠোঁট উল্টে না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
— জানিনা।
সায়র একটু ভালো করে নজর বুলিয়ে বললো,
—– আরে এটাতো অরুর বিড়াল।
ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- তোকে জিজ্ঞেস করেছি? কতবার বলেছি ওর নাম মুখে নিবিনা তুই।
এলিসা ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো,
—– থামনা তোরা, জেকে তুই তো বিড়াল দেখলেই এ’লার্জি এ’লার্জি বলে নাক সিটকাস, এখন তাহলে বিড়াল নিয়ে বারে কি করিস তুই? আর কতক্ষণ ধরেই বা এখানে বসে আছিস? আদৌও ভার্সিটিতে গিয়েছিলি?
ক্রীতিক কোনোরূপ জবাব না দিয়ে নির্লিপ্ত মুখে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে টেবিলের উপর রেখে পুনরায় চুমুক দিলো ওয়াইনের গ্লাসে।
কাগজে কি আছে দেখার জন্য অর্ণব তাড়াহুড়ো করে কাগজটা লুফে নিয়ে সেটাতে চোখ বুলিয়ে আশ্চর্য কন্ঠে বলে ওঠে,
—— তুই রিজাইন দিয়েছিস মানে? এটা তোর শখের জব ছিল।
ক্রীতিক সামান্য হাসিতে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,
—– আই নো।
এলিসা রেগেমেগে বললো,
—- তাহলে হুট করে রিজাইন দিয়েছিস কেন? অরুর জন্য? সবকিছুর একটা লিমিট থাকতে হয় জেকে, এভাবে লিমিটক্রস করে কেউ লাইফ লিড করতে পারেনা, তুই আজকাল যা শুরু করেছিস, তাতে খুব শীঘ্রই ম’রে যাবি তুই।
সায়র নাক চোখ সিকোয় তুলে বললো,
—- গাইস ওর সাথে থাকতে থাকতে বিড়ালটাও অসভ্য আর উগ্র হয়ে যাচ্ছে, আমাদের উচিৎ বিড়ালটাকে হেফাজতে নিয়ে নেওয়া। নয়তো কোন দিন দেখবো বিড়ালটারও অতিরিক্ত ডি’প্রেশনে নোজ ব্লে’ডিং হচ্ছে ।
ওদের একেক জনার যুক্তি শুনে ক্রীতিক বিরক্ত হয়ে কর্কষ আওয়াজে বলে উঠলো ,
—– আহ,চুপ করবি তোরা, আমি ডিপ্রেশড হয়ে ঘরে বসে থাকার জন্য মোটেই জব ছাড়িনি, বিডি তে যাওয়ার জন্য ছেড়েছি।
এবার অর্ণব,এলিসা, সায়র একযোগে বললো,
—- কিহ, তুই অবশেষে বিডি তে ফিরছিস?
ক্রীতিক ওয়াইনের গ্লাসে শেষ চুমুকটা দিতে দিতে বললো,
—- একেবারের জন্য যাচ্ছি না, বেশকিছু হিসেব নিকেশ বাকি পরে আছে,সেগুলো শুধে আসলে মিলাতে যাচ্ছি। তাছাড়া আরও একজনকে খুব কাছ থেকে শা’স্তি দেওয়াটাও বাকি পরে আছে। আমি আবার বাকির খাতা খুব বেশিদিন ফেলে রাখিনা।
তীর্যক ছু’ড়ির ফলার মতো কথাগুলো উগরে দিয়ে ডোরাকে নিয়ে উঠে যায় ক্রীতিক, যাওয়ার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পেছনে তাকিয়ে ওদের উদ্দেশ্যে বলে,
—- বাই দা ওয়ে, সি ইজ নট বিড়ালের বাচ্চা, হার নেইম ইজ” ডোরা”।
ক্রীতিক চলে গেলে সায়র, অর্ণব আর এলিসার কাঁধ হাত দিয়ে অস্ফুটেই বলে ওঠে,
—- দোস্ত এবারের ভ্যাকেসনটা বাংলাদেশে কাটালে কেমন হয়?
অর্ণব দাঁত কটমটিয়ে সায়রের একহাত ঝাড়া মে’রে এলিসার কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
—- কেমন হয় সেটা পরে বলছি, তার আগে তুই আমার বউয়ের কাঁধ থেকে হাত সরা গর্ধব।
সায়র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গালে হাতদিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
—- আজ একটা বউ নেই বলে বন্ধুরাও মীরজাফরের মতো আচরন করে, হাহ!!
চলবে……