সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁 #পর্বঃ৪০ #লেখনীতে_suraiya_rafa

0
48

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৪০
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]

গোধূলি বিকেলে সূর্যের ঝাঁ ঝাঁ উত্তাপ কমে এসেছে কিছুটা। এখন পর্যন্ত পায়ের তলার মাটি লোহার তাওয়ার মতোই তেতে আছে।
চারিদিক নিস্তব্ধ, দুপুরের ভাতঘুমে বিভোর পুরো মহল্লা। শুনশান নিরবতার মাঝেই গলির মোড় থেকে ক্ষনে ক্ষনে ভেসে আসছে নেড়ি কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ।

ভেজা টিস্যু দিয়ে কপালের অর্হনিশ ঘাম টুকু মুছে মাত্রই ক্রীতিক কুঞ্জের কলিং বেলে হাত চালালো প্রত্যয়।

আজ আর কোনো ফর্মাল পোশাকে নয়, মেরুন টিশার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিমে হাজির হয়েছে সে। কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ। বাংলাদেশে আসার দরুন। আমেরিকার আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে ডাই করা হালকা বাদামি চুলগুলোতে রুক্ষতা স্পষ্ট দৃশ্যমান।

চোখের চশমাটা আঙুল দিয়ে ঠেলে, দরজার বাইরে দাড়িয়েই নিজের পছন্দের স্টাইলিশ চুলগুলোতে হাত বোলালো প্রত্যয়, অতঃপর অপেক্ষারত হলো সদর দরজা খোলার।এই উত্তপ্ত বিকেলে কিছুতেই ক্রীতিক কুঞ্জে আসার ইচ্ছে ছিলো না প্রত্যয়ের। কিন্তু ক্রীতিকের জরুরি তলবে না এসে আর উপায় কি?

ক্রীতিকের সিদ্ধান্ত এখন থেকে জেকে গ্রুপের বাংলাদেশি ব্র্যাঞ্চে নিয়মিত বসবে সে। তাই কোম্পানির প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো নিয়েই এই ভর দুপুরে ছুটে আসা। ক্রীতিক মালিক মানুষ, সে চাইলেই হাজার দিন দায়িত্ব ফেলে রাখতে পারে। কিন্তু প্রত্যয়ের তো আর সেই সুযোগ নেই। পুরো কোম্পানির দ্বায়িত্ব তার কাঁধে, বাংলাদেশ হোক কিংবা বিদেশ অফিস তো তাকে নিয়মিতই করতে হয়। তারউপর ক্রীতিকের ব্যক্তিগত একটা সাইড ও পুরোপুরি প্রত্যয়ের দেখভাল করতে হয়, সে হিসেবে প্রত্যয় ভিষণ ব্যস্ত একজন মানুষ।

নিজের হাজার রকম দ্বায়িত্বের কথা চিন্তা করতে করতে আবারও ভেজা টিস্যু দিয়ে কপাল মুছলো প্রত্যয়। ঠিক তখনই ঝনাৎ করে খুলে গেলো সদর দরজা। নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে প্রত্যয় সামনে তাকাতেই দেখলো কালো চুড়িদার পরিহিত অনুকে। যে এই মূহুর্তে প্রত্যয়কে দেখে চোখদুটো রসগোল্লা বানিয়ে দাড়িয়ে আছে। অনুর চোখে চোখ পরার সঙ্গে সঙ্গে চোখ দুটো ছোট ছোট করে ফেললো প্রত্যয়। ধীর পায়ে সামনে এগোতে এগোতে ধা’রালো গলায় কথা ছু’ড়লো তৎক্ষনাৎ,
—- তোমার না বিয়ে হয়ে গিয়েছে কোন ভুড়ি ওয়ালা আড়ৎদারের সাথে? খুব বড়লোক,পুরান ঢাকার নামকরা ব্যবসায়ী,তোমাকে অনেক ভালোবাসে, বাসর করাও শেষ। তাহলে এখানে কি করছো?

প্রত্যয়ের রক্তিম চোখের দিকে তাকিয়ে ঢকাত করে শুষ্ক গিলে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো অনু। অনুর পদচারণ অনুসরণ করে প্রত্যয় এগোতে এগোতে পুনরায় বললো,
—-কোথায় সেই গোঁফধারী সুদর্শন পুরুষ? আমিও একটু দেখি আমার অনুকে কে দিলো এতো সুখ? বিছানায় পারফর্মেন্স কেমন ছিল সেটাও তো জানতে হয়। আমার জিনিসকে আমার আগেই উপভোগ করেছে, ভুড়িওয়ালার লাক আছে বলতে হয়। আমার অপরিচিতা যে ভুঁড়িতে এতো শান্তি খুঁজে পায়, তা জানলে এতো কষ্টে জিম করে আর বডি বানাতাম না, ট্রাস্ট মি।

প্রত্যয়ের উল্টাপাল্টা কথা শুনে অনু মনেমনে বললো,
—- রাগের চোটে ওনার মাথার তাড় ছি’ড়ে গিয়েছে, এক্ষুনি আইসব্যাগ দিতে হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ, অনু ছুটে গিয়ে ফ্রীজ থেকে আইস ব্যাগটা এনে প্রত্যয়ের মাথার উপর রেখে দিলো ভোঁ দৌড়। অনু ভয়ের চোটে গা ঢাকা দিতে চাইছে ব্যাপারটা বুঝে আসতেই অনুর পেছন পেছন ছুট লাগালো প্রত্যয়, ওকে তাড়া করতে করতে চেঁচিয়ে প্রত্যয় বললো,
—- অনুর বাচ্চা, তোমাকে আমি ছাড়বো না। আমাকে মিথ্যে বলার শা’স্তি সরূপ মুখ সেলাই করে দেবো তোমার। তারপর তোমায় দেখিয়ে দেখিয়ে আন্টিমার্কা মহিলাদের সাথে ফ্লার্ট করবো, তখন বুঝবে কেমন লাগে।
ধা’ন্দাবাজ মহিলা দাঁড়াও বলছি।

কে শোনে কার কথা অনু ছুটছে তো ছুটছেই। একতলা পেরিয়ে দোতলা, দোতলার করিডোর পেরিয়ে তিনতলা তারপর সোজা ছাঁদ। প্রত্যয়ও দমবার পাত্র নয়, এতোগুলো মিথ্যে বলার শাস্তি আজ অনুকে দিয়েই ছাড়বে ও। তাইতো অনুর পিছনে ছুটতে ছুটতে ছাঁদে চলে আসা।

দৌড়ে ছাঁদের শেষ মাথায় এসে অকস্মাৎ থেমে গেলো অনুর পা। কোনো মতে পাঁচিলে হাত দিয়ে নিজেকে সামলে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে চাইলো অনু। দেখলো ওর থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে হাঁটুতে হাত ভর করে হাঁপাচ্ছে প্রত্যয়। কয়েক সেকেন্ড হাঁপিয়ে, নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে, অনুর দিকে তাকিয়ে রা’গে গজগজিয়ে উঠে প্রত্যয় বললো,
—- স্কুলে কি দৌড়ের কম্পিটিশন করতে নাকি? বাপরে বাপ।

অনু মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,
— আপনি কেন তাড়া করছেন আমাকে? ওই জন্যই তো দৌড়ালাম।

প্রত্যয় দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে অনুর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— শা’স্তি দেবো বলে। তোমার সাহস কি করে হয়, আমাকে এতোগুলা মিথ্যে কথা বলার? তোমার কি মনে হয়? তুমি বলেছো আর আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে বসে আছি? স্টুপিড মেয়ে। সবসময় প্রশ্রয় দিয়েছি, কথার প্রাধান্য দিয়েছি, তাই বলে যা খুশি তাই বলবে? আমার ইমোশন নিয়ে খেলবে? স্পিক আপ?

অনুর কাঁধ ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো প্রত্যয়। প্রত্যয় প্রচন্ড রেগে আছে, চোখ দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি অনুকে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেবে এই ভদ্র,সভ্য,ঠান্ডা মেজাজের ছেলেটা।

তারউপর মিথ্যে বলার দরুন অনুকেই দোষারোপ করছে বারবার , তাই এইমূহুর্তে ভয়ে কুকরে গিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে অনু।

প্রত্যয় কা’ন্নারত অনুর দিকে তাকিয়ে রাগে ফোসফাস করতে করতে বললো,
—- তোমাকে আমি ম্যাচিউর ভাবতাম অনু।সবসময় বিশ্বাস ছিল তুমি সবকিছু ম্যাচিউরিটি দিয়ে হ্যান্ডেল করবে, আমাদের সম্পর্কটাকেও।কিন্তু না, একটুখানি সাময়িক টানাপোড়েনে তুমি আমাকে জাস্ট ওয়ান টু তে দূরে সরিয়ে দিলে। ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের মিথ্যে বিয়ের কাহিনী শোনালে। তারপর বললে আমাকে ভুলে যান, হাউ সিল্যি।এটাকি বাংলা সিনেমা পেয়েছো?

অনু ফোঁপাতে ফোপাঁতে সামান্য গলা উঁচিয়ে বলে,
— আআসলে পরিস্থিতি।

—ফা’ক ইউর পরিস্থিতি। ভালো কিভাবে বাসতে হয় নিজের বোনকে দেখে শেখো। ক্রীতিক ভাই এসেছে শব্দে কথা বলাতো দূরে থাক অভিমানে ফিরেও তাকাচ্ছে না অরুর দিকে। তবুও চুপচাপ সহ্য করছে মেয়েটা।কেন জানো? কারণ ও সত্যিকারের ভালোবেসেছে। সত্যিকারের ভালোবাসায় পরিস্থিতির দোহাই দেওয়াটা একটা অজুহাত মাত্র। ভালোবাসায় যতটা সুখ ঠিক ততটাই য’ন্ত্রনা, এই মাত্রাতিরিক্ত সুখ আর মাত্রাতিরিক্ত য’ন্ত্রটা দুটোকে সয়ে নিতে পারলে তবেই না তুমি সত্যিকারের ভালোবেসেছো।

কিন্তু আপসোস, তুমি এসবের কিছুই জানোনা,কিছুই বোঝোনা, শুধু একটু আবেগের বশে বলে দিয়েছো সারাজীবন আমার সাথে থাকবে। আরে একসাথে থাকাটা কি এতোই সোজা? ফা’ক ইওর ম্যাচিউরিটি।

রেগেমেগে কথা শেষ করে হনহনিয়ে পিছু হাটে প্রত্যয়। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ছুটে এসে ওকে শক্ত করে জাপ্টে ধরলো অনু। অনুর কান্নারত তীব্র শরীরের ঝাঁকুনি পুরোপুরি অনুভব করতে পারছে প্রত্যয়। বৈশাখী বিকেলের উত্তাপের মাঝেও তৎক্ষনাৎ একটা নরম ভেজা অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো প্রত্যয়ের হৃদয় মন।

এভাবে কিছুটা সময় অতিবাহিত হলে, চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ রেখে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নরম স্বরে প্রত্যয় বলে,
—- সরি অনু, মাথা ঠিক ছিলোনা তাই তোমাকে একটু বেশিই বকে ফেলেছি।কেঁদোনা।

অনু প্রত্যয়ের পিঠে মাথা এলিয়ে দিয়ে এদিক ওদিক না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
—- আমিই সরি, খুব সরি, কোনোকিছু ভাবনা চিন্তা না করে, আপনার সাথে নিজের সমস্যা শেয়ার না করে, এভাবে এতোগুলা মিথ্যে কথা বলে আপনাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অজুহাত তৈরি করা আমার মোটেই ঠিক হয়নি। আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?শুধু একবার,প্লিইইজ।

—- যেখানে তুমি আমার কাছে অ’পরাধীই নও,সেখানে ক্ষমা করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে অপরিচিতা?

অনু এবার চোখ তুলে তাকায় প্রত্যয়ের পানে, বোঝার চেষ্টা করে ওর কথার সারমর্ম। প্রত্যয় ঘুরে দাঁড়িয়ে অনুর চোখ মুছিয়ে দেয়, অতঃপর হিসহিসিয়ে শুধায়,
—- ক্যান ইউ ফিল ইট ডিয়ার?

অনু হেঁচকি টেনে বলে কি?
—- কি ফিল করবো?

প্রত্যয় একই সুরে বলে,
—- মাই লাভ। ইউ ফল ইন লাভ উইথ মি, হার্ডলি, শেইম লেসলি,ডেস্পারেটলি এন্ড আনকন্সিয়াসলি।

প্রত্যয়ের কথায় অনু লজ্জায় মিয়িয়ে যায়। লতানো তরুর ন্যায় মাথাটা নুয়িয়ে ফেলে তৎক্ষনাৎ। প্রত্যয় অনুর চিবুকে হাত দিয়ে মাথাটা একটু তুলে বলে,
—- আর যদি কখনো কিছু লুকিয়েছো, তাহলে সত্যি সত্যি তোমাকে আর ক্ষমা করবো না আমি।

অনু হেঁচকি তুলতে তুলতে না সূচক মাথা নাড়ালে, প্রত্যয় ওকে দু’হাতে বাহুডোরে আগলে ধরে, তপ্ত গমগমে চমৎকার আওয়াজে বলে,
—–আমি তোমার হৃদয়ের গোপন থেকে গোপনীয় কথাটাও জানতে চাই অনু।
হতে চাই তোমার সুখের সন্ধি আর দুঃখের পিছুটান। আমার নীরে তুমি সর্বক্ষন ভালোবাসায় অম্লান।

বুড়িগঙ্গা পারের নাতিশীতোষ্ণ বাতাসের সাথে সাথে তখনও ভেসে আসছিল বেসুরো দুটো গানের লাইন,
“আমার বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে
বৃদ্ধ হতে চাই তোমার সাথে,

অনেক খুঁজে তোমায়, নিলাম চিনে,
ভালোবাসার এই দিনে…. ”
****************************************
আলিশান মহলের সবচেয়ে সুন্দর আকর্ষনীয় আর বড় ঘরটায় থাকেন আজমেরী শেখ। এটা মূলত ক্রীতিকের বাবা জামশেদ জায়ানের ঘর ছিল। স্বামীর সূত্রেই এই ঘরের উত্তরাধিকারী এখন তিনি।

আপাতত এই ঘরের কর্ণারে যে দামি মখমলের ডিভানগুলো রয়েছে, তাতেই মুখোমুখি হয়ে বসে আছে আজমেরী শেখ আর জায়ান ক্রীতিক।

ক্রীতিক সেই তখন থেকে বসে বসে পায়ের উপর পা রেখে দোলাচ্ছে। দু আঙুল দিয়ে বারবার ঘসে যাচ্ছে নিজের কপাল। মূর্তিমান ক্রীতিকের দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন আজমেরী। ক্রীতিক দেশে আসার পরে এটাই তাদের প্রথম সাক্ষাৎ।

ক্রীতিক কি বলতে এসেছে, কিংবা কি বলবে সেসবের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে নিজেই গভীর গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন আজমেরী শেখ ,
—– এই ঘরে কেন এসেছো, কি চাই?

ক্রীতিক নিজের বন্ধ চোখ জোড়া অকস্মাৎ খুলে ফেললো, অতঃপর শান্ত মসৃণ গলায় বললো,
—- কি চাই সেটা আপনি ভালো করেই জানেন, তাহলে কেন করলেন এটা? কোন সাহসে অরুকে আমার কাছ থেকে কে’ড়ে নিয়ে এলেন? অরু ছাড়া পুরো দুনিয়াতে এখন আর আমার কেউ নেই।আপনি সেটা ভালোভাবে জানতেন, তবুও আমায় দ্বিতীয়বার একাকিত্বের য’ন্ত্রনায় ভোগালেন কেন? আন্সার মি?

আজমেরী থমথমে গলায় বললেন,
—- ভদ্রভাবে কথা বলো, আমি তোমার গুরুজন হই।

ক্রীতিক এক পা অন্য পায়ের উপর তুলে ডিভানে গা ছড়িয়ে বসে বললো,
— হ্যা তা হোন বটে, শাশুড়ী মা বলে কথা।

—- আমি কারও শাশুড়ী নই।

ক্রীতিক একটু তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,
—- আপনি মানেন বা না মানেন, অরু আমার। আপনি ভালো করেই জানতেন, ইউ এস এ টু বিডি কেন, পৃথিবীর মধ্যে যে কোনো গর্তে গিয়ে লুকালেও অরুকে আমি ঠিক খুজে বের করতাম। শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করলেন।

আজমেরী শেখ দমে যাওয়ার পাত্রী নন, যথেষ্ট সুকৌশলী মহিলা তিনি। তাই এবার চোয়াল শক্ত করে ক্রীতিকের চোখে চোখ রেখে আজমেরী বললেন,
—- আমি যা করেছি, তোমার আর অরুর মান সম্মান বাঁচানোর জন্যই করেছি।একবার ভেবে দেখেছো, এ বাড়ির একমাত্র ছোট সাহেব তার সৎ বোনকে বিয়ে করেছে একথা জানাজানি হলে, তোমার পরিবারের এতো বছরের ঐতিহ্য, নামদাম, আভিজাত্য কোথায় গিয়ে দাড়াবে?

সমাজের মানুষ তোমার চরিত্রে আঙুল তুলবে, সেই সাথে আমার ওইটুকুনি মেয়ের দিকেও।

আজমেরী শেখের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনের টি টেবিলে পা’ঞ্চ মে’রে গ’র্জে উঠলো ক্রীতিক,
—- আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট দিস ফা”কিং সমাজ। আমার আত্মা যাকে চেয়েছে আমি তাকিয়েই বিয়ে করেছি,তাকেই ভালোবেসেছি আর তার সাথেই বেড শেয়ার করেছি।

দেখি কোন সমাজের সাহস আছে আমার অরুকে কটাক্ষ করার। যেই সমাজ অরুর কিংবা আমার ফিলিংসের দিকে আঙুল তুলবে সেই সমাজের নিয়মই ভে’ঙে দেবো আমি। তাতে যদি আমি জায়ান ক্রীতিক শেষ হয়ে যাই তবে তাই হবো, তবুও অরুকে আমি এই জনমে ছাড়ছি না।

আজমেরী শেখের মুখের উপরে একনাগাড়ে অনেক গুলো কথা ছু’ড়ে মে’রে,গটগটিয়ে বেরিয়ে যায় ক্রীতিক। যাওয়ার আগে পিছু
ডেকে নির্লিপ্ত কন্ঠে আজমেরী বলেন,
—– যেদিন সন্তানের বাবা হবে,সেদিন ঠিক বুঝবে, আমি কেন এতোসব করেছি।

ক্রীতিক না ঘুরেই দাঁড়িয়ে বললো,
—- আমার আর আপনার মেয়ের ডিএনএ আর যাই হোক দু”শ্চরিত্রের অধিকারী হবেনা। এজ এ প্যারেন্ট, দ্যাটস এনাফ ফর মি।

পরক্ষণেই কি ভেবে যেন ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্রীতিক বলে,
—- আর হ্যা, অনু প্রত্যয়ের বিয়ের আগ পর্যন্ত, আপনার ভাইয়ের পরিবার কিছুতেই যাতে ক্রীতিক কুঞ্জ ত্যাগ না করে। পুরো বিয়ের অকেশনে তারা আমার স্পেশাল গেস্ট।

ক্রীতিক যখন কথাগুলো বলছিল তখন ওর ঠোঁট ভে’ঙে বেড়িয়ে আসছিল সামান্য রহস্যময়ী ক্রুর হাসি।

ক্রীতিক স্থান ত্যাগ করে চলে যেতেই তীরের ছিলার মতো এক ভ্রু উঁচিয়ে,আজমেরী শেখ কটমটিয়ে বললেন,
—- কিয়ারা রোজারিও যে কি খেয়ে এমন ত্যাঁদর ছেলে জন্ম দিয়েছিল কে জানে? এ নিশ্চয়ই ব্রিটিশদের বংশ ভূত।

ক্রীতিকের উপর রাগ ঝাড়তে গিয়ে একটা কথা মিস করে গিয়েছে আজমেরী শেখ, মাত্র সেটা মস্তিষ্কে বিট করতেই, তিনি অস্ফুটে বললেন,
—- অনু আর প্রত্যয়ের বিয়ে মানে? কি বললো এই ত্যাঁদর ছেলে? আমার মেয়ে গুলো কি ওর খেলার পুতুল নাকি? না না এক্ষুনি ওর এসব কৌশলী পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

আজমেরী শেখ রে”গেমেগে ডিভান ছাড়লেন, তারপর দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরলেন ক্রীতিককে অনুসরণ করে।

করিডোরের এমাথা থেকে ওমাথা কোথাও ক্রীতিক নেই। অগত্যাই হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গিয়ে দাড়িয়ে পরলেন তিনি, আজমেরী শেখ যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন, তারপাশে সিঁড়ি ঘরের ওঠার রাস্তা। ঠিক সেখান থেকেই কিছু অযাচিত আওয়াজ কর্ণকূহরে পৌঁছালে, তরিৎ গতিতে চোখ ঘোরালেন তিনি, মরচে যাওয়া আবছা আলোতে দেখেলেন, অন্ধকার সিঁড়িতে বসেবসে ফোপাঁচ্ছে অনু,পাশেই বসে আছে প্রত্যয়। অনু কাঁদছে দেখে বারংবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রত্যয়। অনুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে আওয়াজ ভেসে এলো প্রত্যয়ের দিক থেকে,

—– এতো কাঁদে কেউ? মাথা ব্যাথা করবে তো জান। আর বকবো না সরি তো। এই যে দেখো কানে ধরছি, ঘাট হয়েছে আমার। আমার অনু, আমার ময়না পাখি আর কাঁদেনা।

পরক্ষনেই আবারও নিজের বলিষ্ঠ হাতের পিঠ দিয়ে অনুর দু কপোল মুছে দিলো প্রত্যয়।

আজমেরী শেখ খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে অনু আর প্রত্যয়ের দৃষ্টিগোচর হবার আগেই দ্রুত চলে এলেন সেখান থেকে।

***********************************************
তখন মাঝরাত, বাইরে পূর্নিমা,রাতের আকাশে মস্তবড় চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোতে ভেসে যাচ্ছে ক্রীতিক কুঞ্জের সুবিশাল মহল। রুপার বার্তায় মাত্রই রুম থেকে বেরিয়েছে অরু। মা নাকি ওকে ডেকে পাঠিয়েছে। গত দুদিনে মামির উপদ্রপ কমেছে খানিকটা, সে আপাতত রেজাকে নিয়ে হসপিটালে রাত্রিযাপন করছে। আর রুপা মামির মতো এতো ভেজাল করেনা, তাই রুপাকে খুব বেশি বিরক্তও লাগেনা অরুর। ওই জন্যই তো রুপার কথামতো সহসা রওনা হয়েছে মায়ের ঘরের দিকে।

কিছুদুর গিয়ে করিডোরের মাঝ পথেই আটকে গেলো অরুর পা। দেখলো অন্যপাশ দিয়ে অনুও বের হয়ে এসেছে। অনুকে শুকনো মুখে এগিয়ে আসতে দেখে অরু তারাহুরো করে ওর কাছে গিয়ে শুধালো,
—- কিছু কি হয়েছে আপা? মা আমাকে হঠাৎ ডেকে পাঠালো যে?

অনু ঠোঁট উল্টে জবাব দেয়,
—– জানিনা রে, আমাকেও ডেকে পাঠিয়েছে। সত্যি করে বল অরু, ক্রীতিক ভাইয়ার সাথে কিছু করিস নি তো?

অরু বিরক্ত কন্ঠে বললো,
—– আপা! উনি এসেছে থেকে আমার মুখের দিকে অবধি ভালো করে তাকাচ্ছে না,কথা বলা দূরের থাক।

অনু বললো,
—– ভাগ্যিস মামি নেই, থাকলে এটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে হাজারটা অপবাদ জুড়ে দিতো।

অরু অন্যমনস্ক হয়ে গেলো, মনেমনে ভাবলো,
—– হতেও তো পারে মামির কথায়ই ঠিক, জায়ান ক্রীতিক এখন আর আমাকে ভালোবাসেনা। এখন আর আমি আগের মতো গোলগাল নেই,শুকিয়ে গিয়েছি অনেক, তাই হয়তো আমার সৌন্দর্যে উনি আকর্ষিত হচ্ছেন না, ভালো লাগছে না আমাকে আর।

ভাবনার মাঝপথে অনু আচমকা ধাক্কা দিলো অরুকে, অরুর ভ্রম কেটে গেলে, গলা খাদে নামিয়ে অনু বলে,
—– এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে চল, আর হ্যা কিছু কড়া কথা শোনার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখ। মা তো একটু বলবেই, ওসব মনে রাখার দরকার নেই। কেমন?

অরু অনুর কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে অনুর আঁচল ধরে পেছন পেছন এগিয়ে গেলো।

—- মা আসবো?

আজমেরী শেখ হাতের বইটা রেখে ঘুরে তাকালেন, পাওয়ারি চশমায় স্পষ্ট দেখতে পেলেন ফুটন্ত কলির মতো তার দুই মেয়েকে। একজনের পরনে লাল টকটকে চুড়িদার, আরেকজনের পড়নে কালো। আমেরিকা থেকে আসার পরের দিনগুলোতে যেমন বিষন্ন, মলিন মুখশ্রীতে ঢাকা পরে থাকতো স্নিগ্ধ চেহারাটা, এখন এই মূহুর্তে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যদিও অরুকে কাহিল দেখাচ্ছে, তবুও কোথাও একটা লাবন্যের আভা ফুটে উঠেছে ছোট্ট মুখটায়।

মেয়েদেরকে একনজর পরখ করে আজমেরী শেখ বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে গম্ভীর গলায় বললেন,
—– হ্যা এসো।

অনু ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
—- কি হয়েছে মা? শরীর খারাপ করছে তোমার?

—- আমি ঠিক আছি, তুমি ঠিক আছোতো?

মায়ের কথার রহস্য ছেদ করার ক্ষমতা নেই অনুর, অগত্যাই শুষ্ক ঢোক গিললো ও। জিভ দিয়ে অধর ভিজিয়ে বললো,
—– ঠিকই তো আছি মা।

আজমেরী শেখ আর কথা ঘোরালেন না, স্পষ্ট আওয়াজে বললেন,
—– প্রত্যয়ের পরিবারের সাথে কথা বলা হয়েছে, ওরা কাল সন্ধ্যায় আসছে। দু’বোন সেজেগুজে রেডি থাকবে। আমিতো আর জায়ান ক্রীতিক না, যে পরিবার সমাজ এসবের বাইরে গিয়ে যা ইচ্ছে করবো। যা হবে দু পরিবারের সম্মতি এবং সকল রিচুয়াল মেনেই হবে।

আজমেরী শেখের কথায় অরুর মুখটা চুপসে গেলেও, আনন্দে পুলকিত হয়ে ওঠে অনুর হৃদয়। সকল আশা ভরসা বিসর্জন দেওয়ার পরে এ যেন মেঘ না চাইতে জল। ও পারছেনা খুশিতে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠতে, কারণ সেটা ওর ধাঁচে নেই। তাই চুপচাপ মায়ের কথায় মাথা কাত করে সম্মতি জানালো অনু।

—– এবার যেতে পারো।

আজমেরী শেখ যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু বোন বাইরের দিকে অগ্রসর হয়।ঠিক তখনই পুনরায় অরুকে ডেকে ওঠেন তিনি,মায়ের ডাকে অরু পিছু তাকালে, একটা ভারী দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে আজমেরী বলেন,

—- তোমার স্বামীকে বলবে, সে যাতে যথা সময়ে মেহমানদের সামনে উপস্থিত থাকে। আমরা সামাজিক জীব তো তাই এসব আতিথেয়তা আমাদের পালন করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় অতিথিদের সর্বোচ্চ আপ্যয়নে। তাই কালকের দিনটা অন্তত যাতে একটু ভদ্রভাবে নিচে নামে।

কেন যেন মায়ের তিক্ত কথাগুলোও আজকে বেশ মনে ধরলো অরুর। ইচ্ছেতো করছে উড়ন্ত পাখির ন্যায় উড়ে উড়ে ডানা ঝাপটাতে। এই প্রথম ক্রীতিক আর ওর সম্পর্কটা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে মা, তার মানে কি একটু একটু করে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হচ্ছে মায়ের কাছে?
এর চেয়ে খুশির আর কিই হতে পারে। আজ অনেক গুলো দিন পরে হয়তো অরু একটু ঘুমোতে পারবে। যাকে বলে সত্যিকারের ঘুম ।

ওদিকে ঘুম নেই অনুর চোখে। কি বললো মা এটা? এতো তাড়াতাড়ি কি মনে করে সবকিছু মেনে নিলো মা? এটা কি আসলেই সত্যি নাকি সপ্ন? ঘুম ভেঙে গেলে যদি সব মিথ্যে হয়ে যায়,তখন? অযাচিত ভয়ের সত্যতা যাচাই করার জন্য নিজের শরীরেই নিজে চিমটি কাটলো অনু।
—- আউচ!

ব্যথা পেয়ে তরাগ করে উঠে বসলো ও। মনেমনে বললো,
—- সবই ঠিক আছে, কোনো কিছুই স্বপ্ন কিংবা ভ্রম নয়। কিন্তু রেজা ভাই আর মামি জানলে কি অশান্তিটাই না করবে,কে জানে? মাকে না আবার কথা দিয়ে পিষ্ট করে ফেলে।তখন তো আমারই কষ্ট হবে। হে উপর ওয়ালা যা হওয়ার তা যাতে ভালোয় ভালোয় হয়, নয়তো মায়ের কষ্ট আমি দেখতে পারবো না, কিছুতেই না।

নিশুতি, নিস্তব্ধ, শুনশান তমসাচ্ছন্ন রাত। অরু গভীর তলিয়ে আছে। দক্ষিণের জানালাটা হাট করে খোলা, সেথা থেকে বুড়িগঙ্গা পারের শা শা বাতাস ধেয়ে আসছে। অদুরে লঞ্চের হুইসেল বাজছে, হয়তো শেষ রাতে ঘাটে ভিড়েছে, তাই ঘুমন্ত যাত্রীদের জানান দিতেই এই তীক্ষ্ণ আওয়াজ।

লঞ্চের তীক্ষ্ণ আওয়াজে ঘুমের খুব একটা অসুবিধা না হলেও, সিগারেট পো’ড়া উৎকট গন্ধে দমবন্ধ হয়ে আসছে ঘুমন্ত অরুর। মনে হচ্ছে কেউ নাকের কাছে এসে সিগারেট ধরিয়েছে, যে সেই সিগারেট না, বিদেশি ব্র্যান্ডেট কোনো সিগারেট, যার দরুন গন্ধটাও তীক্ষ্ণ, ঘুমের মাঝেও কেমন মস্তিষ্কে গিয়ে লাগছে।

বাইরের হিমেল হাওয়াও সেই গন্ধ দূর করতে পারছে না। বেশকিছুক্ষন ঘুমের তালে হাসফাস করে শ্বাস নিতে না পেরে অবশেষে লাফিয়ে উঠে বসলো অরু। বাইরের চাঁদের আলোতে আলোকিত ঘর। সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পুরো রুমে কেউ নেই, অথচ সিগারেটের গন্ধটা এখনো বর্তমান। নিজের মনের ভ’য় আর সন্দেহ কাটাতে উঠে গিয়ে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালালো অরু। রুমজুড়ে ফকফকে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে পরতেই অরুর দৃষ্টিগোচর হলো মিয়িয়ে যাওয়া ধোঁয়ার কুন্ডলী। দেখে মনে হচ্ছে এখানে একটু আগেও কেউ ছিল, কিন্তু কে?এতো রাতে নিজের ঘুম বিসর্জন দিয়ে কে আসতে পারে এই রুমে, ভাবনায় পরে গেলো অরু।
তবে ভাবনারা ঘনীভূত হওয়ার আগেই চোখের পাতা ভার হয়ে এলো ঘুমে, অরু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না,তৎক্ষনাৎ গিয়ে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়, ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে ভাবলো,
—– যে থাকার থাকুক, জায়ান ক্রীতিক বাড়িতেই আছে, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না, আফটার অল হি ইজ মাই সুপার হিরো।

****************************************
আজ আর একাডেমিতে যাওয়া হলোনা অরুর। সন্ধ্যায় মেহমান আসবে, তারউপর এখনো ক্রীতিকের বন্ধুরা আছে,তাই বাড়িতে অনেক কাজ। সকাল সকালই টেলিফোন করে নীলিমাকে জানিয়ে দিয়েছে অরু। বলেছে সন্ধ্যা বেলায় যাতে শাড়ি টাড়ি পরে নীলিমাও চলে আসে, তাহলে একসাথে সেলফি তোলা যাবে। নীলিমাও বেশ উৎসুক হয়ে সায় জানিয়েছে অরুর কথায়। অবশেষে অনু আপার বিয়ে হতে যাচ্ছে। ওদের খুশির যেন সীমা নেই।

নীলিমার সাথে কথা শেষ করে অরু খাবার টেবিলে আসলে, আজমেরী শেখ বলেন,
—– তাকে বলা হয়েছিল?

“তাকে” বলতে মা ক্রীতিককে বুঝিয়েছে, ব্যাপারটা মাথায় আসতেই অরু দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে যেতে যেতে বললো,
——- এক্ষুনি বলে আসছি মা, তাড়াহুড়োয় ভুলে গিয়েছিলাম।

অরু যখন উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ক্রীতিকের রুমে প্রবেশ করলো,তখন সেই আট বছর আগের মতোই অনুভূতি হচ্ছে ওর।মনে হচ্ছে এই বুঝি উঠে এসে ঠাস করে থা’প্পর লাগিয়ে দেবে ক্রীতিক, তারপর দাঁত খিঁচিয়ে বলবে,
—- আমার রুমে কি চাই?

অথবা হিতে বিপরীত ও হতে পারে, না উঠেই হাতের ইশারায় ডেকে বলতে পারে,
—- এখানে বস তোকে দেখবো।

মনের মাঝে বাসা বাঁধা তখনকার য’মরাজ যে এখন হৃদয়ের পৃথ্বীরাজ হয়ে যাবে কে জানতো?

অতীতের কথা মনে করে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রুমের মাঝে এগিয়ে যায় অরু। বেলা প্রায় এগারোটার কাছাকাছি, অথচ এখনো উদম শরীরে উপর হয়ে ঘুমাচ্ছে ক্রীতিক। কোমড় অবধি টানা কম্ফোর্টার ছাড়িয়ে তার ভি শেইপ পৃষ্ঠদেশ, পুরুষালি বাহু,ফর্সা পিঠের ইতি উতি রাজত্ব গেঁড়ে বসা কুচকুচে কালো তিল সবকিছুই দৃশ্যমান অরুর চোখে। সেদিকে তাকালেই যেন ঘোর লেগে আসে, জাগ্রত হয় অবাধ্য নারী সত্তা। তাই বেশিক্ষণ না তাকিয়ে, তাড়াহুড়ো করে চোখ নামিয়ে, অন্যদিকে তাকিয়ে রিনরিনে আওয়াজে ডাকলো অরু,
—– শুনছেন, কথা ছিল, কাজের কথা।

ক্রীতিকের কোনো হেলদোল নেই। অথচ অরু একই ভাবে ডাকলো বেশ কয়েকবার।

পরক্ষণেই মনে মনে বললো,
—- আমি জানি সজাগ থাকলেও সারা দিবেন না আপনি। আমারই ভুল আগ বাড়িয়ে ডাকতে এসেছি।

অরু যখন বিরক্ত হয়ে গাল ফুলিয়ে চলে যাচ্ছিল, তখনই আওয়াজ ভেসে আসে ক্রীতিকের। সকালের হাস্কিটোনে ক্রীতিক বলে,
—– চোখ ভর্তি ঘুম, আর মাথা ভর্তি শুধু তুই।

অরু তরতরিয়ে এগিয়ে এসে শুধালো,
—- কি বললেন?

ক্রীতিক এবার ঘুরে শুলো, বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা কুড়িয়ে চেইক করতে করতে বললো,
—— নাথিং, কি বলতে এসেছিস সেটা বল।

অরু চোখমুখ শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
—- আজ প্রত্যয় ভাইয়াদের বাড়ি থেকে মেহমান আসবে, মা বলেছে আপনাকে উপস্থিত থাকতে।

ক্রীতিক ফোন স্ক্রল করতে করতে বললো,
—– রাতে ঘুমাতে পারিনি, পার্টি অফিসের পূর্নমিলনীও ঘুমের জন্য ক্যান্সেল করেছি। সারাদিন ঘুমাবো। সন্ধ্যায় ডেকে দিস, ঘুম হলে চলে আসবো।

অরু কঠিন গলায় বললো,
—— বাড়ির জামাইদের এসবে থাকতে হয়, আর আপনি বাড়ির ছোট জামাই।

—— ওহ তাই আমি বুঝি ক্রীতিক কুঞ্জের জামাই? আগেতো জানা ছিলোনা?

—- হ্যা তাইতো।

কথায় কথায় ক্রীতিক খেয়াল করলো অরু সেই তখন থেকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলছে, কাহিনি ধরতে না পেরে ক্রীতিক ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
—– আমি তোর শশুর না ভাসুর? এভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিস কেন?

অরু চোখমুখ খিঁচিয়ে বললো,
—– দয়া করে কিছু পড়ুন।

ক্রীতিক নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
—– এমন ভাব করছিস যেন এর আগে তুই আমাকে আনড্রেস দেখিসনি।আমিতো প্যান্ট…..

—- থাআআআক!

কানে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো অরু। তৎক্ষনাৎ রুম ত্যাগ করতে করতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
—– নির্লজ্জ, বেহায়া লোক। এই রুমে এসে আমার ঘাট হয়েছে।

****************************************
সন্ধ্যে হতেই হ্যাজাক আর ল্যানটার্নের আলোতে সেজে উঠেছে ক্রীতিক কুঞ্জ। চারিদিকে উৎসব মুখর পরিবেশ। মূলত ক্রীতিকের বন্ধুরাই মাতিয়ে রেখেছে সবকিছু। সায়র আজকে ফটোগ্রাফার। এদিকে সেদিক যেখানে যা পাচ্ছে তারই ছবি তুলে নিচ্ছে ও।
এলিসা ব্যস্ত সময় পার করছে অনুকে সাজাতে। পাশেই দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় ফুল পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ক্যাথলিন। আজ বাঙালিদের মতো থ্রী পিচ পরেছে সে। রুমের কোথাও অরুর দেখা নেই। মেয়েটা সাজেওনি। ক্রীতিক এখনো ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেনা, চোখে চোখ রেখে তাকায় না।

ওই জন্যই সাজগোজ করার ইচ্ছেটাও ম’রে গিয়েছে। কিন্তু এলিসা তো মোটেও কথা শোনার পাত্রী নয়, ঠিকই কোথা থেকে যেন ধরে এনে অরুকেও সাজাতে বসেছে।

মেহমান এসেছে এইতো কিছুক্ষন। ঘরোয়া আয়োজন, ছোটখাটো আংটি বদল যাকে বলে, তাই মেহমানের সংখ্যাও কম। প্রত্যয়ের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছাড়া তেমন কেউ আসেনি।

অতিথিদের কিছু সময় পরে, প্রত্যয় নিজেও এসেছে, পুরোপুরি ফর্মাল স্টাইলে। অফ হোয়াইট শার্ট, ব্ল্যাক কোটি আর ব্ল্যাক রিস্ট ওয়াচে তাকে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে। প্রত্যয়ের কোলে তার বড় বোনের পিচ্চি মেয়ে অন্তু। অন্তুকে কোলে নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে আজমেরী শেখকে সালাম জানালো প্রত্যয়। আজমেরী শেখ হাসিমুখে সালাম গ্রহন করে প্রত্যয়কে বসতে বললো।

মোখলেস চাচা সহ বাড়ির অন্য ভৃত্যরা অতিথি সমাদরে ব্যস্ত।অর্ণব আর এলিসা অতিথিদের সাথে টুকটাক কথা জমিয়েছে। সায়র সকলের ভিডিও ধারণ করছে। ঠিক সেসময় অনুকে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামে অরু আর ক্যাথলিন।

কটকটে গাঢ় মেরুন রঙের হাফসিল্ক শাড়ি আর হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি পরিহিত অনুকে চেনাই যাচ্ছে না এখন। দেখতে অপরূপ লাগছে। হুট করেই মনে হচ্ছে সিনেমার মেইন ক্যরেক্টারের এন্ট্রি হয়েছে। সবার চোখ অনুর দিকে। অন্তুকে চকলেট দিতে দিতে প্রত্যয়ও দু একবার আড় চোখে দেখে নিলো অনুকে।

অরুও আজ শাড়ি পরেনি, সিকোয়েন্স থ্রী পিচ পরেই অনুকে নিয়ে নেমেছে সে। নিচে এসে অনুকে বসানো হলো প্রত্যয়ের পাশেই। ভালোবাসার বিয়ে দেখা দেখির কিছু নেই। ডিরেক্ট আংটি বদল হলেই চলে, তবুও আশ মেটাতে সবাই একটু একটু করে দেখে নিলো হবু বউকে।

একজন মাত্র মানুষ যিনি অনুর পাশাপাশি, উঠে এসে অরুকেও চিবুক তুলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। তিনি হলেন প্রত্যয়ের বড় ফুপি। অরু বুঝলো না ওকে এভাবে দেখার কি আছে, তবে সেরকম কিছু মনেও করলো না।

সবাই যখন অনু আর প্রত্যয়কে নিয়ে মেতে আছে, তখন অরুর দিকে এগিয়ে আসেন আজমেরী শেখ। কিছুটা রাগান্বিত হয়ে গলা খাদে নামিয়ে শুধান,
—– তোমার স্বামী কোথায়?

অরু থতমত খেয়ে উপরের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলবে, তার আগেই দেখা গেলো সিঁড়ি দিয়ে নামছে ক্রীতিক। চোখে মুখে এখনো ঘুমের রেশ। এলোমেলো চুল, পড়নে কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার৷ পায়ে স্লিপার, হাতে আইপ্যাড। সেভাবেই অতিথিদের সামনে চলে এলো ক্রীতিক। আজমেরী শেখ ক্রীতিককে দেখে অরুকে চোখ রা’ঙিয়ে চলে গেলেন। আর অরু সেখানে দাড়িয়েই কপাল চাপড়াতে থাকলো। এ কি স্বামী কপালে জুটলো তার? রাইট বললে লেফ্টে যাবে, তো লেফ্ট বললে রাইটে । ঘাড় ত্যাড়ামির ও তো একটা সীমা থাকা দরকার।

ক্রীতিক সবার মাঝে আসতেই প্রত্যয় দাড়িয়ে ওকে বসতে বললো,
ক্রীতিক ও গিয়ে একটা সিঙ্গেল সোফার উপর বসে পরলো। ওকে দেখে প্রত্যয়ের পনেরো বছরের কাজিন ফট করে বলে উঠলো,
—- ভাইয়া আপনি দেখতে পুরাই রানবীর কাপুরের মতো। এলোমেলো চেহারাতেও হট লাগছে।

প্রত্যয়ের ফুপি তৎক্ষনাৎ মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—- চুপ করবে তুমি? ইউ হ্যাভ নো ম্যানারস।

ক্রীতিক ইতস্তত কন্ঠে বললো,
—– ইটস ওকে ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি।

সায়র মিনমিনিয়ে বললো,,
—— নিজে একটা ছোট মেয়ের জন্য দিওয়ানা হয়ে ঘুরছে, আর এখানে আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে ঢং যত্তসব।

সবার সব টকশোতে ইতি টেনে অবশেষে ছোটমোটো করে আজমেরী শেখ অনু আর প্রত্যয়ের আংটি বদলের ঘোষণা করেন। এবং সবার হইহুলোরে ওদের আংটি বদলটা হয়েও যায়।

দুই পরিবারের সম্মতি সাপেক্ষে একসপ্তাহ পরে ঠিক করা হয় বিয়ের দিন তারিখ।
এইংগেজমেন্ট মানে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দুজন দুজনকে নতুন করে চিনতে শুরু করা। অনেকটা কাছ থেকে, আর অনেকটা আন্তরিকতা দিয়ে। তাই মেয়ে আর জামাইকে একটু প্রাইভেসি দিয়েছে সবাই।

আলাদা কথা বলার জন্য ওদের ছাঁদে পাঠানো হয়েছে।
আর নিচে আপাতত সবাই মিষ্টি মুখ করায় ব্যস্ত। প্রত্যয়ের ফুপি আজমেরী শেখের মুখে একটুখানি মিষ্টি পুরে দিয়ে, হাসিমুখে বললেন,
—- আপা, আমাদের তো আরও একটা আবদার বাকি রয়ে গেলো।

আজমেরী শেখ খানিকটা উৎসুক হয়ে শুধালেন,
—– কি আবদার বলুননা।

—- আমাদের আরও একজন ছেলে আছে, প্রত্যয়েরই চাচাতো ভাই, ওর নাম অমিত। নামকরা নোবেলিস্ট,কিছুদিন আগে ছোট খাটো একটা কার এ’ক্সি’ডেন্ট হয়েছে দেখে আজ আসতে পারেনি, ও আসলে আপনার ছোট মেয়েকে খুব পছন্দ করে। অনু আর প্রত্যয়ের কথা বলা, কওয়ার আগে থেকেই অরুর কথা বলাবলি করেছি আমরা।

ছেলেটা অবশেষে কাউকে পছন্দ করেছে, তাই আবদার না করে থাকতে পারিনি, এখন আপনাদের মতামত।

প্রত্যয়ের ফুপির কথা শেষ হতেই ঘর শুদ্ধ সবাই বিব্রত চাহনি নিক্ষেপ করলো ক্রীতিকের পানে। যে এতোক্ষণ যাবত আইপ্যাড স্ক্রল করছিল, কিন্তু এই মূহুর্তে বাঁজপাখির মতো তীক্ষ্ণ চাহনিতে চেয়ে আছে, এককোনে কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকা অরুর দিকে।

অরুর নিজেও এহেন প্রস্তাবে হতবাক। কিন্তু আপাতত ওর ভ’য় করছে, ভীষণ ভ’য়। ক্রীতিক না আবার বড়সড় ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে। চারিদিক এমন থমথমে হয়ে আছে দেখে প্রত্যয়ের ফুপি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শান্ত স্বরে ক্রীতিক বলে ,
—– অরু যে ভা’র্জিন না সেটা আপনার ভাতিজা জানেতো?

—-কিহ!

হতবিহ্বল হয়ে গেলেন প্রত্যয়ের ফুপি,এই টুকু মেয়ে ভা’র্জিন না, তাও আবার এসব গোপনীয় কথা সবার মাঝে বসে বলছে তারই সৎ ভাই?

ক্রীতিক চারিদিকে একবার চোখ বোলালো, তারপর উঠে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
—- এনজয় ইওর কোয়ালিটি টাইম।

সবাইকে বিদায় জানিয়ে উপরে যেতে যেতে সবার সামনে অরুকে ডেকে ক্রীতিক বললো,
—- অরু এক্ষুনি উপরে আয়। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।

****************************************
অরু রুমে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ওকে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানায় ছু’ড়ে মা’রলো ক্রীতিক।

শরীরের শক্তি ক্ষীণ, তার উপর এভাবে ছু’ড়ে মা’রাতে মারাত্মক ব্যথা পেলো অরু। ক্রীতিকের সেদিকে খেয়াল নেই। গত কয়েকদিনের রা’গ, হিং”স্রতা সব একসাথ হয়ে মস্তিষ্কে জমা হয়েছে ওর। চোখদুটোতে ভর করেছে র’ক্তিম তে’জক্রিয়তা কপালের সবকটা রগ ফুলে আছে।

অরু নিজেকে সামলে উঠে দাড়ালো। ও বুঝতে পারলো না ওর দোষটা কোথায়, তাই ঝাঁজিয়ে উঠে বললো,
—- সমস্যা কি আপনার, যখন ইচ্ছে মা’রছেন, যখন ইচ্ছে অবহেলা করছেন, যখন ইচ্ছে কাছে টেনে নিচ্ছেন,কেন? কি করেছি আমি?

ক্রীতিক জো’র করে শ’ক্ত হাতে অরুর ঠোঁটের লিপস্টিক ঘষে মুছতে মুছতে বললো,
—- কতবার বলেছি অন্যকারও সামনে সাজবি না কথা শুনিস নি, আমি মাত্র একটা মাস দূরে ছিলাম এর মধ্যে অন্য নাগর জুটিয়ে ফেলেছিস। তারা এখন আমার বউয়ের জন্য, আমার বাড়িতেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। তোকে আজ আমি কি করবো নিজেও জানিনা।

অরু ক্রীতিককে দু-হাতে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
—– কি করবেন আপনি আমাকে, মে”রে ফেলবেন? মা’রুন,কা’টুন যা ইচ্ছে করুন। আপনার জন্য এমনিতেই আধম’রা হয়ে আছি আমি। অথচ আপনাকে দেখুন কষ্ট দিয়েই যাচ্ছেন, তো দিয়েই যাচ্ছেন। কেন দিচ্ছেন তার কোনো উত্তর নেই। কি দোষ আমার বলুন, কেন এমন করছেন? কেন!!

আবারও ক্রীতিকের শক্ত বুকে ধা’ক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো অরু।

এবার আর নিজের ক্রো’ধটাকে সংবরণ করতে পারলো না ক্রীতিক। ওর হাতদুটো নিজের মুঠোয় পুরে,গলা ছেড়ে চিৎকার করে বললো,
—– বিকজ আই লাভ ইউ ড্যামএট।

ক্রীতিক এতো জোরেই কথাটা বলেছে যে ওর গ’র্জন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মহলের প্রতিটি দেওয়ালে। সেইসাথে হলরুমে বসা সকলেই লাফিয়ে উঠেছে এহেন গর্জনে।

অরুর নিজেও এই মূহুর্তে থরথরিয়ে কাঁপছে, ক্রীতিক নিজের দাঁতে দাঁত পিষে অরুর মুখের কাছে মুখ এনে বললো,
—– ইচ্ছেতো করছে মে’রে মে’রে নরম তুলতুলে গালগুলোকে র’ক্তা”ক্ত করে দিতে। কিন্তু না খেয়ে খেয়ে নিজের এমন হাল করেছিস সেটা করতেও কলিজায় লাগছে। এদিকে রা”গটাকেও কমাতে পারছি না। ওহ গড!

অরু ক্রীতিকের চোখে চোখ রেখে কাঁদছে।

ক্রীতিক ও অরুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেভাবেই খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে,খানিকটা শান্ত স্বরে বলে,
—— অরু, আমার অ্যারোগেন্সি, আমার রা’গ, আমার জিদ, আমার ডেস্পারেটনেস। তুই না সহ্য করলে আর কে সহ্য করবে বলতো? কার কাছে খোলা বই হবো আমি? তুই কি চাস আমি সারাজীবন ডি’প্রেশন আর এ্যাং’সাইটিতে ধুঁকে ধুঁকে ম”রি?

অরু জবাব দেয় না, শুধু ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের পিঠে পরে থাকা লম্বা চুল গুলোকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে চুপচাপ স্থির হয়ে থাকে।

ক্রীতিকের রা’গ সংযত করার জন্য অরু নিজেকে তার কাছে সমর্পন করছে, ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই একটানে ওর জামার ফিতেটা খুলে শক্ত হাতে ওর বাহু চেপে ধরে অরুর তুলতুলে কোমল উন্মুক্ত পৃষ্ঠদেশে ঝড়ের গতিতে মুখ ডুবিয়ে দিলো ক্রীতিক।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here