সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁 #পর্বঃ২৯ #লেখনীতেঃsuraiya_rafa

0
646

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ২৯
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[কপি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]

বন্ধুর আকাশ ছুঁই ছুঁই পর্বতমালার নিম্নভাগে জোছনা রাতের রুপোলী ঝকঝকে আলো এসে পৌঁছাতে পারেনা কোনোকালেই। সেথায় এখনো ঘোর আমাবস্যা বিরাজমান। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর তমসাচ্ছন্ন,শুধুমাত্র পাহাড়ের এককোণে গুহার মধ্যে যে গুপ্তঘরটা রয়েছে, সেখান থেকেই জেনারেটর চালিত বৈদ্যুতিক বাল্বের নিয়ন আলোর ছটা এসে ঠেকছে নরম সবুজ কচি ঘাসের উপর। অতীব সুন্দর সেই ম্যাজিকাল আলোছায়া আর ঘাসের আস্তরকে পায়ে মাড়িয়ে তরিৎ বেগে এদিক ওদিক পায়চারি করছে নিখিল। কপালে তার দুশ্চিন্তার গভীর ভাজ, শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপা, শার্টের উপর পরা সফেদ রঙা এ্যাপ্রোনটার এথায় সেথায় শুকিয়ে যাওয়া র’ক্তের ছোপ ছোপ দাগ।
কুঁচকে রাখা ছোট ছোট চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে, একটু আগেই কোনো অপকর্ম করে ধরা খেয়েছে সে।এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতেই দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে একমনে কি যেন বিরবির করছে একনাগাড়ে ।দেখলে মনে হবে কোনো কিছুর হিসেবে কষছে।

নিখিলের এমন উদভ্রান্তের মতো কর্মকান্ড দেখতে পেয়ে গুপ্তঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে লিও। এক ছুটে বেরিয়ে আসাতে তার স্থুলকায় দেহটা হাঁপিয়ে ওঠে, সে নিখিলের সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শুধায়,
—- কি হয়েছে, এখনো কাজ শুরু করছো না যে? রাত শেষ হয়ে যাবে তো।

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে ফট করে দু’হাতে লিওর কলার খা’মচে ধরলো নিখিল, অতঃপর চোয়াল শক্ত করে দাঁত খিচিয়ে বললো,
— তোমাকে আগেই বলেছিলাম এই কয়জনে হবেনা, সবকিছুর একটা পরিমাণ রয়েছে, পরিমাণের বাইরে ওদের শরীর থেকে অতিরিক্ত হরমোন বের করলে সবগুলো মা’রা পরবে। তখন ধনকুব হওয়ার বদলে জেলে পঁচে ম’রতে হবে আমাদের।

নিখিলের কথায় লিও শুষ্ক ঢোক গিলে ভয়ার্ত কন্ঠে শুধালো,
— এএখন কি করবো?

নিখিল পুনরায় পায়চারি করতে করতে বিড়বিড়িয়ে বলে,
— জানিনা, রাশিয়ান মাফিয়াদের থেকে এডভান্স ডলার নিয়ে ফেলেছি, যে করেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

লিও মুখ কাচুমাচু করে বললো,
— কিন্তু এই সময় নতুন করে টিনএজ হরমোন কোথায় পাবো?

লিওর কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিখিলের হাটার গতি সহসা থেমে যায়, ও আঙুল উঁচিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় জ্বলতে থাকা ফেইরী লাইট আর মাঝ আকাশে উড়তে থাকা নিভু নিভু জ্বলন্ত ফানুস গুলো দেখিয়ে লিওকে শুধালো,
— ওখানে কি হচ্ছে?

লিও ঠোঁট উল্টে বললো,
— মেইবি কোনো গ্রুপ ক্যাম্পিং এ এসেছে।

নিখিল তৎক্ষনাৎ গটগটিয়ে যায়গা ত্যাগ করে, বড়বড় পা ফেলে উঠতে থাকে পাহাড়ের চূড়ায় ।ওর কান্ডে পেছন থেকে লিও হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠে বললো,
— আরে কোথায় যাচ্ছো?

নিখিল যেতে যেতে পেছনে না তাকিয়েই ক্রুর হেসে বললো,
— সব কিছু রেডি করো, আসছি আমি।
*****************************************
আজকাল স্টুডেন্টরাও হয়েছে ফাজিল একেকটা, কথা নেই বার্তা নেই যখন তখন কল দিয়ে কনভার্সেশন শুরু করে দেয়, আর থামার নামই নেই। প্রথমে পড়াশোনা দিয়ে শুরু করবে, তারপর সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে ঢুকে যাবে ব্যক্তিগত আলাপে। আমেরিকান মেয়েরা এতো নির্লজ্জ আর বেহায়া কেন কে জানে?

স্টুডেন্টের বাড়তি প্যাচাল প্রথমে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলেও এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফোনটাই বন্ধ করে দিয়েছে রগচটা, বদ মেজাজী ক্রীতিক। একেতো চড়ম মূহুর্তে কল দিয়ে মুডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, তারউপর রাত বিরাতে কল দিয়ে ঢংয়ের আলাপ, অসহ্য।স্টুডেন্টদের কাছে ক্রীতিক বরাবরই চুপচাপ, হুম,হা ছাড়া উত্তর দেওয়া ওর ধাঁচে নেই, তাইতো কথা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখের উপর ফোন বন্ধ করে দিয়েছে একদম । এবার হাজারটা কল দিলেও আর ক্রীতিকের নাগাল পাওয়া যাবেনা, সে যতই প্রয়োজনীয় আলাপ হোকনা কেন।

কিছুক্ষন নিরিবিলি দাড়িয়ে থেকে, নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝ থেকে একবুক বাতাস ভরে নিয়ে, ক্রীতিক পুনরায় এগিয়ে গেলো ক্যাম্পিং ভ্যানের দিকে। ওদিকে সবাই মহা আনন্দে ফানুস উড়াচ্ছে। ক্রীতিক ভাবলো অরুকেও দেখাতে হবে এই রোমাঞ্চকর দৃশ্যটা, নয়তো এতো দূরে ক্যাম্পিং এ আসার মজাটাই মিস করে যাবে মেয়েটা, তাই ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকেই অরুকে ডেকে উঠল ক্রীতিক,
— অরু বাইরে আয়,যাস্ট লুক সামথিং স্পেশাল ইজ হ্যাপেনিং হেয়ার। কাম ফাস্ট,অরুউউ?

ভেতর থেকে অরুর কোনোরূপ সারা শব্দ না পেয়ে এবার ক্রীতিক নিজেই ধীর গতিতে ক্যাম্পিং ভ্যানের ভেতরে প্রবেশ করলো।
.

চারিদিকে ফানুসের ছড়াছড়ি। একের পর এক উড়ন্ত ফানুসের টিমটিমে আলোয় পুরো পাহাড়টাকে অপার্থিব সুন্দর লাগছে। ক্যাম্প ফায়ারের পাশেই চাঁদের পাহাড় গান বেজে চলেছে সেই তখন থেকে, পুরোই এডভেঞ্চারাস পরিবেশ। পাহাড়ের এককোনে দাড়িয়ে এলিসা উরন্ত ফানুস গুলোকে সুক্ষ্ম নজর দিয়ে পরখ করছে। তা দেখে, অর্ণব একটা ফানুস নিয়ে এগিয়ে এসে এলিসাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- এলি, ফানুস উড়াবি আয়।

এলিসা তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে অর্ণবের হাতে হাত রাখে। তারপর দুজন মিলে এগিয়ে যায় ফানুসটাকে উন্মুক্ত করে দিতে। ফানুসের মধ্যে জ্বলতে থাকা সোনালী আলোয় এলিসার হাতের হিরে খচিত আংটিটা চকচক করছে করছে খুব। অর্ণব সেটার দিকে একবার পরখ করে ওর চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। এলিসার ধূসর চোখ দুটোতেও জ্বলন্ত ফানুসের নিদারুণ প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান। স্থির চোখে মুখে ধামাচাঁপা পরে আছে একরাশ খুশির ঝিলিক। অর্ণব সেই খুশিকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
— আই লাভ ইউ এলি। শুধু আজ বা কাল নয় জনম জনমের ভালোবাসা তুই আমার।

অর্ণবের কথার প্রতিউত্তরে এলিসাও লাজুক হেসে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই কোথা থেকে যেন ছুটে এসে এক থা’বায় সায়রের কলার টেনে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে ক্রীতিক বললো,
— আমার অরু কই?

সায়র বেচারা বসে পপকর্ন চিবুতে চিবুতে অর্ণব এলিসার সিনেমাটিক প্রেম নিবেদন দেখছিল, হঠাৎ এমন অতর্কিত আ’ক্রমণে তৎক্ষনাৎ পপকর্ন ওর গলাতেই আটকে গেলো। কাশি দিতে দিতে ক্রীতিককে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কোনো মতে ফ্যাসফ্যাসিয়ে বললো,
— ছাড় ভাই, আমি সত্যিই জানিনা অরু কই। তোরা দুজন তো হুট করেই একসাথে উধাও হয়ে গেলি। তোরা স্বামী স্ত্রী তোদের প্রাইভেসির ব্যাপার আছে, ওই জন্য আর ডাকিও নি আমরা।

সায়রের কথায় ক্রীতিক নিজেকে সংবরণ করে ওর কলার ছেড়ে দেয়।তখনই ওপাশ থেকে এলিসা আর অর্ণব এগিয়ে এসে শুধালো,
— কি হয়েছে জেকে।

ক্রীতিক থমথমে মুখে এদিক ওদিক হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো,
— ডোন্ট নো, অরু কোথাও নেই।

এলিসা উদ্বিগ্ন সুরে বললো,
— কোথাও নেই মানে? ও তো তোর সাথেই ছিল।

ক্রীতিক জিভ দিয়ে শুষ্ক অধর ভিজিয়ে চিন্তিত গলায় বললো,
— হ্যা তখন তো ছিল, আমি নিজেই ওকে ক্যাম্পিং ভ্যানে রেখে একটা ফোন কল রিসিভ করতে একটু দূরে গিয়েছিলাম আর তারপর…..

ক্রীতিক নিজের তেঁতো গলার অযথা সীকারোক্তি শেষ না করেই চট করে সায়রকে বললো,
— সায়র, তুইনা এলিসা অর্ণবের সারপ্রাইজ মোমেন্ট ধারণ করার জন্য হিডেন ক্যামেরা সেট করেছিলি?

সায়র হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে,ক্রীতিক পুনরায় বলে,
—- কোথায় কোথায় সেট করেছিলি, সব গুলো বের কর, কুইক।

এবার শুধু সায়র নয়, ওর সাথে সাথে অর্ণবও পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো ক্যামেরা গুলো খুঁজে বের করতে।এই মূহুর্তে ক্রীতিকের মাথা ফে’টে যাচ্ছে দু’শ্চিন্তায়। অতিরিক্ত দু’শ্চিন্তার ফলে সুকৌশলী মস্তিষ্কটাও হ্যাং করছে বারংবার। রাতের আধারে এমন অচেনা অজানা পার্বত্য এলাকায় হঠাৎ করেই কোথায় চলে যেতে পারে মেয়েটা। তাও ক্রীতিককে না জানিয়ে?

কিছুক্ষণ আগেই তো সবকিছু কতোটা মসৃণ হয়ে উঠেছিল ওদের মাঝে। অরু বারবার বলেছিল,
— আমি শুধু আপনাকেই চাই। নিজ স্বামীরূপে আপনি ছাড়া অন্য কারও মুখ আমি কল্পনাও করতে পারিনা।

সেসব কথা ভাবলে এখনো ক্রীতিকের হৃদয়টা এক অজানা উষ্ণতায় ছেয়ে যায়।মস্তিষ্ক ঘীরে ধরে কাল্পনিক সুখের ভাবনারা।অথচ এখন এভাবে হুট করে হারিয়ে গিয়ে কেমন দুশ্চিন্তায় পাগ’ল বানিয়ে দিচ্ছে ওকে। এটা কি ঠিক হলো?খানিকক্ষণ আগে কাটানো ভালো সময় গুলোর কথা মনে পরতেই মূহুর্তের মধ্যে আ’গ্নেয়গিরির অ’গ্নি’স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পরলো ক্রীতিকের পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে ।ও আর চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো না, ধাপ ধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো ক্যামেরা গুলোর দিকে।

মনিটরের স্ক্রিনে একে একে সবগুলো ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চেক করা হলে শেষ ক্যামেরাতে এসে চোখ আটকে গেলো ওদের সবার,শুধু চোখ আটকে গেলো বললে ভুল হবে রীতিমতো কাশাকাশি শুরু হয়ে গিয়েছে সবার। ভিডিওতে অরুর সাথে করা ক্রীতিকের একান্ত মূহুর্তের পাগলামি গুলো দেখে এলিসা, অর্ণব, সায়র তিনজনই ক্রীতিকের পানে অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করে, একই সুরে বলে ওঠে,
— তোরা একটু আগে এসব করছিলি?

সায়র বড়বড় চোখ করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— সি, হি ইজ সো ডেস্পারেট, মেয়েটাকে শ্বাস পর্যন্ত নিতে দিচ্ছে না।
সায়রের কথায় এলিসা অর্ণব মুখ টিপে হেঁসে দিলো।

ওদের খিল্লি আর মজা মাস্তিকে এক ধমকে থামিয়ে দিয়ে ক্রীতিক বললো,
— জাস্ট শাট আপ, টেনশনে আমার মাথা ফে’টে যাচ্ছে, আর তোরা এখানে মজা নিচ্ছিস। তাছাড়া অরু আমার বিয়ে করা বউ, যা খুশি, যেভাবে খুশি,যেখানে খুশি করবো তোদের বাপের কি?

ওদের তর্কবিতর্কের মাঝেই ভিডিওর একটা যায়গাতে অর্নব পজ করে বললো,
— গাইস লুক।

তৎক্ষনাৎ ক্রীতিক সচকিত হয়ে এগিয়ে এসে স্ক্রিনে চোখ রাখলো। অর্ণবকে সরিয়ে দিয়ে , রিপিট করে ওই একই সিন টুকু বারবার টেনে টেনে দেখছে ক্রীতিক। চার সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এ্যাপ্রোন পরা কেউ একজন এসে অরুর সাথে হেঁসে কুশলাদি বিনিময়ের মতো করে কথা বলছে, অতঃপর অরু তার পেছন পেছন অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছে।

অর্ণব পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,
— কে হতে পারে এই এ্যাপ্রোন পরা লোকটা?

সায়র সহসা এগিয়ে এসে ভালো করে নজর বুলিয়ে বললো,
— আরে এটাতো নিখিল অরুর ক্রাশ।

— অরুর বাচ্চাআআআ!
অকস্মাৎ ক্রীতিকের গর্জনে কেঁপে উঠলো ওরা সবাই। ক্রীতিক উঠে দাড়িয়ে ভ্যানের সামনে রাখা স্টুলটাকে সজোরে লা’ত্থি মে’রে রাগে থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
— ওকে একবার খুঁজে পাই, মে’রে ওর গাল ফা’টিয়ে দেবো আমি, তখন সারাজীবনের মতো ক্রাশ খাওয়া ভুলে যাবে।

অর্ণব এগিয়ে এসে ক্রীতিকের কাঁধে হাত রেখে বললো,
— ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভাব জেকে, এটাকি আদৌও পসিবল? অরুতো তোর সাথে এসেছিল, একটু আগে তোরা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছিলি, তাহলে হঠাৎ করে অরু কেন নিখিলের সাথে চলে যাবে? তাও কাউকে কিছু না জানিয়ে?
তাছাড়া অরু এডাল্ট, বিয়ের মর্ম কতটুকু সেটা ও ভালো করেই বোঝে,তাও তোকে না জানিয়ে কেন যাবে? আর সবচেয়ে বড় কথা।

অর্ণব কথা শেষ করার আগেই পাশ থেকে এলিসা গুরুগম্ভীর গলায় বললো,
— নিখিল এখানে কি করছে?

অর্ণব এলিসার দিকে তাকিয়ে বুক ফুলিয়ে বললো,
— রাইট, এই না হলে আমার সোনা।

অর্ণবের আহ্লাদী কথায় এলিসা দাঁত কিরমিরিয়ে উঠে বললো,
— চুপ করবি তুই? সিরিয়াস কনভার্সেশন চলছে এখানে।

ক্রীতিক ওদের কথায় কান না দিয়ে দ্রুত নিজের মোবাইল বের করে লোকেশন ট্র্যাকারে ঢুকে পরলো।
সায়র শুধালো
—কি খুঁজছিস?

ক্রীতিক কিছু একটা সার্চ করতে করতে বললো,
— কিছুদিন আগে আমি অরুকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলাম, সেটার লোকেশনই আমার ফোনে কানেক্ট করে রেখেছিলাম।যদি কখনো প্রয়োজন হয় সেটা ভেবে।

সায়র দাঁত কটমটিয়ে বললো,
— সেটা আগে বলবিনা?

ক্রীতিকের এই মূহুর্তে কোনোকিছু ঠিক নেই, চোখ দুটো ঝাপসা লাগছে অগত্যাই, আঙুলের ভাঁজে ধরে রাখা ফোনটা তিরতিরিয়ে কাঁপছে। ও বারবার নিজের ফোকাস ধরে রাখতে চাইছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না।অনবরত হাতের পিঠ দিয়ে নাকের ডগা মুছছে, কিছুই নেই তবুও মুছছে। এলিসা, অর্ণব, সায়র সবাই ক্রীতিকের অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্থতার কথা জানে, তার উপর অরু মিসিং ক্রীতিক নিশ্চয়ই এখন নিজের মধ্যে নেই। মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগে ক্রীতিকের বারবার ঘাড় ফুটানো আর নাকের ডগা মোছা দেখে এলিসা এগিয়ে শান্ত গলায় শুধালো,
—- কিছু পেলি? কোনো লোকেশন?

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
— লাস্ট লোকেশন দেখে তো এই পাহাড়েরই আশেপাশে কোনো একটা যায়গা মনে হচ্ছে।

তৎক্ষনাৎ অর্নব আর সায়র ছুটে এসে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,
— কই দেখি?

মোবাইলের লোকেশনটা ভালো মতো পরখ করে চোখ কপালে উঠে গেলো অর্ণবের,অবিশ্বাসের সুরে ক্রীতিককে শুধালো,
— এটা কি আসলেই অরুর লোকেশন?

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কেন কি হয়েছে?

অর্ণব শুষ্ক ঢোক গিলে বললো,
— আমার জানা মতে এই গুহাটা পরিত্যক্ত, বহুবছর আগে আমেরিকান একটা রিসার্চ টীম এখানে কিছু অ’বৈধ রিসার্চ চালাতো, ওরা টিনএজ ছেলেমেয়েদের হরমোন সংগ্রহ করে সেটাকে প্রসেস করে মৃ’তদেহের স্নায়ু সচল রাখতে ব্যবহার করতো। ইটস আ হিউজ ডে’ঞ্জার। পরবর্তীতে আমেরিকান গভমেন্টের নজরে এলে, তারা পুরোপুরি নিষেধা’জ্ঞা জারি করে দেয় এই রিসার্চের উপর। এছাড়া ওই টীমের সবাইকে শা’স্তির আওতায় আনা হয়েছিল তখন।

অর্ণবের কথা শেষ হতেই এলিসা চট করে বললো,
— অরুও তো টিনএজ? সি ইজ অনলি এইটিন প্লাস।

এলিসার কথাটা পুরোই বি’স্ফোরণের মতো গিয়ে হাম’লে পরলো ক্রীতিকের উদ্বিগ্ন মস্তিষ্কে। ওর সচিকত চোখ দেখে মনে হচ্ছে ও যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছে। দু-হাতে নিজের লম্বা চুল গুলো সজোরে টেনে ধরে, কিছু একটা ভেবে ক্রীতিক অস্ফুটে বললো,
— নিখিল ইজ আ বায়োলজিকাল সাইন্টিস্ট, ওহ নো! দিস মা*** ফা***বা***। ওকে আমি জ্য’ন্ত ক’বর দেবো আজ।

ক্রীতিকের চড়ম ক্ষীপ্রতায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওরা তিনজন একই সুরে শুধালো,
— কি হয়েছে?

ক্রীতিক আর জবাব দিলোনা মোবাইলের লোকেশনে চোখ বুলাতে বুলাতে অন্ধকারের মাঝেই পাহাড়ি আঁকাবাকা সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো পরিত্যক্ত গুহার দিকে।

পেছনে আলো জালিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে ওর পথ অনুসরণ করে স্ব গতিতে এগিয়ে আসতে লাগলো আরও তিন জোড়া পা। তারা আর কেউ না,ওর জীবন মর’নের বেস্টফ্রেন্ডস, ওর দুঃসময়ের সাথী অর্ণব, এলিসা আর সায়র।
*****************************************
পাহাড়ের ঢালে এসে গুহার মুখোমুখি হতেই থমকে গেলো ওরা। গুহার মুখে পাহারাদারের দাঁড়িয়ে আছে এক বিশালাকৃতির লৌহগেইট। তাতে আবার পাসওয়ার্ড লাগানো। অর্নব এলিসার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— জান ফ্ল্যাশ ধর আমি এটার ব্যবস্থা করছি।

সায়র পেছন থেকে ভীত স্বরে বলে ওঠে,
— আমার কেমন যেন ভ’য় করছে ভাই, যদি ওরা আমাকেও ধরে নিয়ে রিসার্চ করতে বসিয়ে দেয়।
অর্ণব পাসওয়ার্ডের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বললো,
— তুই কি টিনএজ শালা? বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেলো এখনো ভীতুর ডিমই রয়ে গেলি।

ক্রীতিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— তোরা প্লিজ তাড়াতাড়ি কর, দম আটকে আসছে আমার।

— হয়ে গিয়েছে।
পাসওয়ার্ড আনলকড এর পিক পিক আওয়াজ হতেই সবাইকে ঠেলে ভেতরে চলে গেলো ক্রীতিক। ক্রীতিকের পেছন পেছন ওরা তিনজনও ঢুকে পরলো গুপ্তঘরে। ঘরটাতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা উৎকট গন্ধে চোখমুখ কুঁচকে এলো ওদের সবার। শুধু মাত্র ক্রীতিকেরই কিছুতে কিছু হচ্ছে না। ও হন্তদন্ত হয়ে উদভ্রান্তের মতো চারিদিক হাতরে বেরাচ্ছে।

বাইরে থেকে যায়গাটাকে যতটা অন্ধকার আর ভুতুড়ে লাগছিল, ভেতরে তেমন কিছুই নয়, বাল্বের আলোয় চারিদিক ফকফকে পরিস্কার। রুমের মধ্যে যত্রতত্র বিভিন্ন মেশিন আর ক্যা’মিক্যালের শিশি দিয়ে পরিপূর্ণ। ক্রীতিকের অবশ্য এতোকিছুতে নজর নেই, ও একটা একটা করে পর্দা,সেলফ, মেশিন সবকিছু তচনচ করে অরুকে খুঁজছে। খুঁজতে খুজঁতে ভেতরের রুমে ঢুকতেই সেই উৎকট গন্ধটা যেন দিগুণ বেড়ে গেলো এবার।মনে হচ্ছে এখনই গলা দিয়ে খাবার উগড়ে আসবে। ক্রীতিক কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করেই সামনে এগিয়ে যায়। ভেতরের দিকে এগিয়ে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় কিছু কাচের তৈরি কফিন, যেগুলো স্বচ্ছ পানি দিয়ে ভর্তি, তারমধ্যেই ভাসছে অল্পবয়স্কা মেয়েদের দেহগুলো। একেকটা কফিনে একেকটা মেয়ে। পানির মধ্যে ভাসমান মেয়েগুলোকে দেখতে কি ভ’য়ানকই লাগছে।
—আচ্ছা এদের মধ্যে অরু নেইতো?

প্রশ্নটা মাথায় আসতেই ক্রীতিক হকচকিয়ে ছুটে এসে প্রত্যেকটা কফিন চেক করতে শুরু করলো। কিন্তু না একটাতেও অরু নেই।

স্বচ্ছ কাচের কফিন গুলো চেক করতে করতেই ওর কানে ভেসে এলো অস্পষ্ট এক গোঙানির আওয়াজ, হঠাৎ রিনরিনে আওয়াজে ক্রীতিক সচকিত হলো, ভাবতে থাকলো কোন দিক থেকে আসছে শব্দটা।রুমের মাঝ বরাবর টানানো পর্দার ওপাশ থেকেই আসছে বোধহয় আওয়াজটা। ক্রীতিক দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই অজানা আত’ঙ্ক আর মা’ত্রাতিরিক্ত উ’দ্বেগে কয়েক মূহুর্তের জন্য মস্তিষ্কটা হ্যাং করলো ওর, আবারও মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো পুরোদস্তুর । চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা লাগছে, বারকয়েক চোখের পাতা ফেলে, দৃশ্যপট স্পষ্ট করে, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় এগিয়ে গিয়ে একটানে পর্দাটা সরিয়ে ফেললো ক্রীতিক,সঙ্গে সঙ্গে পুরো দুনিয়া দুলে উঠলো ওর।

ক্রীতিকের থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে পানি ভর্তি কাঁচের কফিনের উপর হাত পা, মুখ বে’ধে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে অরুকে। কপালের দুপাশে লাগিয়ে রাখা হয়েছে কি সব যন্ত্রপাতি। কানের পাশে একটু খানি কা’টা দাগ।হাঁটু সমান লম্বাচুল গুলো কফিন ছাড়িয়ে মেঝেতে পরে আছে। চোখের সামনে নিজের হৃৎস্পন্দনের এমন বি’দ্ধস্ত রূপ দেখে বারবার যেন দুনিয়া দুলে উঠছে ক্রীতিকের।মুখের মাঝে কোনো তরল অবশিষ্ট নেই গলা ভেজানোর জন্য, এ্যাংসাইটি,ডিপ্রেশন, ওভার থিংকিং আর তীব্র ক্রো’ধ তিনে মিলে ক্রীতিকের গলা চেপে ধরেছে, সেই সাথে বাকশক্তি ও রোধ করে রেখেছে অজানা এক শক্তিবল। তবুও বহু চেষ্টার ফলস্বরূপ অস্পষ্ট সুরে ঠোঁট কাঁপিয়ে ক্রীতিক ডাকলো,
— হার্টবিট।

ক্রীতিকের কন্ঠস্বর শোনা মাত্রই, সেদিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ’ধা অবস্থাতেই খু’নখুনিয়ে কেঁদে উঠলো অরু। তীব্র কান্নার জোয়ারে কেঁপে উঠলো ওর পুরো শরীর। সবচেয়ে কাছের মানুষের আগমনে নির্বাক কাতরতা, আর অভিমানী কান্নায় চোখের কার্নিশ ভিজে উঠেছে মেয়েটার। ক্রীতিক স্পষ্ট বুঝতে পারছে ওর চোখের ভাষা, যেখানে অরু বারবার ফুঁপিয়ে উঠে আকুতির সুরে বলছে,
— তুমি আসবে আমি জানতাম। কিন্তু এতো দেরি করে কেনো এলে? আমার বুঝি কষ্ট হয়নি?

অরুর চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে নির্বাক ধ্বনিতে ক্রীতিকও একই সুরে জবাব দিল।
— আ’ম সরি হার্টবিট। আ’ম রিয়েলি সরি, খুব ভুল হয়ে গিয়েছে।

ওদিকে অরুর হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কান্নার রোল শুনতে পেয়ে রিসার্চ রুম থেকে বেরিয়ে এসে অকস্মাৎ ওদের সবাইকে দেখে পিলে চমকে গেলো নিখিলের। একসাথে এভাবে এতো জনকে দেখে নিখিলের হা’র্টএ্যা’টার্ক হওয়ার উপক্রম। ও এখন সবার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত ঢোক গিলছে শুধু। মনেমনে খুজছে পালানোর পন্থা।

নতুন করে কারোও পদচারনা টের পেয়ে, ক্রীতিক পেছনে ঘুরতেই নিখিলকে দেখতে পায়, ওকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে দমে যাওয়া ক্রো’ধটা দিগুন হারে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো ক্রীতিকের । কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে, চোখের সাদা অংশ র’ক্তিম হয়ে উঠলো আপনাআপনি। তীক্ষ্ণ ব্লে’ডের মতো ধারা’লো চোয়ালটায় গাম্ভীর্য টেনে ক্রীতিক তে’ড়ে এসে ওর কলার চেপে ধরে চোখমুখ খিঁচে উইথ আউট ওয়া’র্নিং একেরপর আ’ঘাত করতে থাকে নিখিলের নাক বরাবর। সেই সাথে অ’স্রাব্য গা’লি তো আছেই। ক্রীতিকের এই ভয়’ঙ্কর দানবীয় রূপটা সবাই দেখতে পায়না, হুটহাট বেরিয়েও আসে না, তবে যদি একবার বেরোয় তো সেটা জ্বলন্ত অ’ঙ্গারের মতোই বিভৎ’স আর নি’কৃষ্ট।
—- শু**** বাচ্চা তোকে আজ এই পরিত্যক্ত গুহার মধ্যেই জ্যন্ত কবর দেবো আমি, আর নয়তো আমার নাম জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী নয়।

ক্রীতিক কি উত্তেজিত? মোটেই না, সবসময়ের মতোই বাচনভঙ্গিমা এখনো মসৃণ ওর, তবে গলার স্বরে ভয়ানক ক্ষী’প্রতা স্পষ্ট।
ক্রীতিকের করা প্রত্যেকটা আ’ঘাত একেবারে চোখে মুখে এসে হা’মলে পরছে নিখিলের। ও দম নেওয়ার ফুরসত টুকুও পাচ্ছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ মা’র খেলে নিজের জীবন এখানেই খোয়াতে হবে,ব্যাপারটা বুঝতে পেরে,তৎক্ষনাৎ নিজের সর্বশেষ চালটা চাললো নিখিল, কোনো মতে হাতরে বেরিয়ে, হাতের কাছে থাকা সুইচবোর্ডটায় প্রেস করে অন্যদের মতো অরুকেও ফেলে দিলো ক্যা’মিক্যাল মিশ্রিত পানি ভর্তি কফিনের মধ্যে।

সঙ্গে সঙ্গে পানির মধ্যে পরে গিয়ে তীব্র ছটফটানি শুরু করে দিলো অরু। অকস্মাৎ এহেন কান্ডে পেছনে ঘুরে অরুকে ছটফট করতে দেখে নিখিলকে ছু’ড়ে মে’রে, অরুর নিকট ছুটে গেলো ক্রীতিক। তখনও বদ্ধ কফিনে গলা কাঁ’টা মু’রগীর মতোই ছটফট করছে অরু। পুরো কফিন জুড়ে মোটা স্বচ্ছ কাচের আস্তর কোথাও কোনো খোলার যায়গা নেই, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কফিনের সামনে হাটু গেড়ে বসে, কাচের আস্তরটাকে ভা’ঙার উদ্দেশ্যে কফিনের উপরই নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে এলোপাথাড়ি পাঞ্চ বসাতে লাগলো ক্রীতিক। ওদিকে সময়ের ব্যবধানে অরু ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

ক্রীতিক সেদিকে নজর দিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
— হোল্ড অন,ওয়ান মিনিট, যাস্ট ওয়ান মিনিট বেইবি। প্লিজ হোল্ড অন, আমি এটাকে এক্ষুনি ভে’ঙে গুড়িয়ে ফেলবো।

এভাবে ক্রমাগত পাঞ্চ করতে করতে ওর হাত থেঁ’তলে গিয়ে কখন যে পুরো কফিন র’ক্তাক্ত হয়ে উঠেছে তার হদিস নেই ক্রীতিকের, ওর দৃষ্টিতো কেবল স্থির হয়ে আছে অরুর নিভু নিভু চোখ দুটোর পানে। একনাগারে পাঞ্চ করতে করতে হাতের অবস্থা বেগতিক,তবুও এক সেকেন্ডের জন্যও থামেনি ক্রীতিক। যতক্ষণ না র’ক্তাক্ত কাচের আস্তরে ফা’টল ধরে চৌচির হয়েছে, ঠিক ততক্ষণ একই উদ্যমে অনবরত কাচের কফিনে আ’ঘাত করেছে সে।

অন্যদিকে অরুর জন্য ক্রীতিকের এমন উন্মাদনায় আবিষ্ট বেপরোয়া ভয়’ঙ্কর রূপ দেখে, ভ’য়ে জর্জরিত হয়ে নিজের আহত শরীরটাকে টেনেটুনে নিয়েই সুযোগ বুঝে কেটে পরলো নিখিল, ওর আফ্রিকান বন্ধু লিও পালিয়েছে বহুক্ষণ আগেই। তবে মনে হয়না এই শরীর নিয়ে বেশিদূর যেতে পারবে নিখিল। কারন ওর পিছু নিয়েছে এ্যাথলেটিক টম বয় খ্যাত গার্ল এলিসা ক্রিস্টিয়ান।

অবশেষে জায়ান ক্রীতিকের মতো বেপরোয়া,জিদি,রগচটা মানুষের কাছে হার মেনে নিয়েছে কাঁচের তৈরি কফিনটা। কফিনটাকে ভে’ঙে চৌচির করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে ক্রীতিক। কফিন ভে’ঙে যেতেই অরুকে টেনে বের করে ওর হাত পা মুখের বাঁ’ধন খুলে বারবার সিপিআর দিতে থাকে ক্রীতিক।

একনাগাড়ে সিপিআর দিতে দিতে একপর্যায়ে এসে অরু লম্বা করে দম নেয়। অরুর শ্বাসপ্রশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেয়েই, নিশ্বাসের শব্দ ক্ষীন হয়ে এলো ক্রীতিকের নিজেরও, তৎক্ষনাৎ অরুর মাথাটা কাছে টেনে এনে ওর ঠান্ডা ফ্যাকাশে ঠোঁটে অনবরত চুমু খেতে থাকে ক্রীতিক। নিঃশব্দে নির্লিপ্তে…..

তবে অরুর শরীরটা এখনো নেতিয়ে রয়েছে, চোখ মুখ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে আছে ,দেখে মনে হচ্ছে শরীরে একরত্তিও শক্তি অবশিষ্ট নেই। শুধু আলতো করে চোখের পলক ফেলছে মাত্র। অরুর হালকাপাতলা নড়নচড়ন দেখে ক্রীতিক বুক ভরে সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে পরলো, সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো ওর। অরুকে কোলে নিয়েই বারবার হাতের পেছন দিয়ে ডাকের ডগা ঘষছে ক্রীতিক। চোখের সামনে স্থীর দাঁড়িয়ে থাকা অর্ণব আর সায়র কে কেমন ঝাপসা লাগছে দেখতে, বারবার চোখের পলক ফেলেও সেই দৃষ্টি স্পষ্ট হচ্ছেনা মোটেই।তবুও অরুকে কোলে নিয়েই সামনে পা বাড়ালো ক্রীতিক। সামনে এগোতে এগোতে ক্রীতিক দেখলো, সায়র আর অর্ণব উদ্বিগ্ন নজরে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, ওদেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ক্রীতিক নাক টেনে বললো,
— কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

— তোর নোজ ব্লে’ডিং হচ্ছে জেকে!

সায়রের কথায় ক্রীতিক এবার হাতের পিঠ দিয়ে নাকে ঘষা দিয়ে চোখের সামনে এনে দেখলো, ওর নাক থেকে ফি’নকি দিয়ে র’ক্ত গড়িয়ে পরছে।

ক্রীতিক হাতের পিঠ দিয়ে র’ক্তটুকু পরিষ্কার করতে করতে বললো,
— ইটস ফর এ্যাংসাইটি। কিচ্ছু হবে না চল।

কথাটা বলে দুকদম এগোতেই হাঁটু গেড়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পরলো ক্রীতিক। ওর কোলে এখনো অরুর নেতিয়ে পরা ছোট্ট শরীরটা। নিজে বসে পরলেও অরুকে শক্ত করে ধরে রেখেছে বুকের মধ্যে ।এবার সত্যিই সামনের সবকিছু পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। অসার হয়ে আসছে শরীরের মাংসপেশি গুলোও, ক্রীতিকের নোজ ব্লে’ডিংএর ঘটনা নতুন কিছু নয়, প্রথম প্রথম আমেরিকায় আসার পরে অতিরিক্ত অব’সাদগ্রস্থতা, আর দু’শ্চিন্তার ফলে প্রায়ই এমনটা হতো। ডাক্তার বলেছিল মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু গত কয়েকবছর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ফলস্বরূপ এটা পুরোপুরি বন্ধ ছিল, অথচ আজ অরুর একটুখানি বিপ’দে, এতো বছর ধরে একটু একটু করে উন্নতি করা ক্রীতিকের মানসিক স্বাস্থ্যে ধস নেমে এলো মূহুর্তেই । তাহলে ক্রীতিক আদতে কতোটা ডেস্পারেট ওর এইটুকুনি হাটুর বয়সী সৎ বোনের জন্য? এ কেমন প্রেম আর কেমন আসক্তি? সেটাই আপাতত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অর্ণব আর সায়র।

ক্রীতিক হাঁটু গেড়ে বসে নাক থেকে গড়িয়ে পরা র’ক্তগুলো হুডির হাতায় মুছতে মুছতে অস্পষ্ট সুরে বললো,
— অর্ণব, আমি বোধহয় সে’ন্স লেস হয়ে পরবো। তুই অরুকে কোলে নে। প্রাইমারী ট্রিটমেন্ট দিয়ে ওকে সেইফলি বাসায় পৌঁছে দিবি, আর সায়র তুই ভুলেও অরুকে টাচ করবি না। জ্ঞান ফিরে আমি যদি শুনেছি তুই অরুকে টাচ করেছিস, তাহলে তুই আর এ জীবনে বাচ্চার বাপ হতে পারবি না, সেই ব্যবস্থা আমি নিজ হাতে করবো।

সায়র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— টাচ করবো না তোর অরুকে, কিন্তু এটলিস্ট তোকে তো ধরতে দে। পরে যাচ্ছিস তুই।

ক্রীতিক সে কথা আদৌও শুনেছে কি শোনেনি কে জানে?
*****************************************
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here