সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁 #পর্বঃ৩৯ #লেখনীতে_suraiya_rafa

0
39

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ৩৯
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]

ঈষান কোনে মেঘ ডাকছে। আকাশ জুড়ে বুনো মহিষের পাল। পরন্ত বিকেলে কাল বৈশাখীর স্পষ্ট পূর্বাভাস। চারিদিকের ঘূর্ণি বাতাসে ধুলোবালির ঝড় উঠেছে যেন।

তবে তকতকে পিচ ঢালা ফ্রর্ট ইয়ার্ড আর সুসজ্জিত বাগান বিলাশের পাঁচিল পেরিয়ে সেই ধূলোবালির ঝড় খুব একটা প্রবেশ করতে পারেনা ক্রীতিক কুঞ্জের আলিশান বাড়িতে । ফ্রন্ট ইয়ার্ডে ছোট্ট লেকের পাশ ঘেষে যে গোলাকার বৈঠকখানা বাঁধানো সেখানেই চ্যালাপ্যালা নিয়ে দলের মিটিং এ ব্যস্ত সময় পার করছে রেজা। ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতির পদ লাভ করার পর থেকেই ভারী ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটে রেজার সময়কাল।
সত্যি বলতে এই বাড়ির পূর্ব পুরুষদের রাজনৈতিক কতৃত্ব আর নাম ভাঙিয়েই রেজার এতদূর আসা, সে হিসেবে প্রমান সরূপ এ বাড়ির সুবিশাল বৈঠকখানায় প্রায়শই বসে রেজার রাজনৈতিক আসর, ও যে এই বাড়িরই কুটুম সেটা বোঝাতে হবে তো সবাইকে।

আলোচনা তখন মাঝপথে,একের পর এক নিজেদের বক্তব্য পেশ করছে দলের সদস্যরা, ঠিক সে সময় বাগানে বিলাশে ঘেরা বিশাল গেইটটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজে খুলে যেতেই সবার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকলো সেদিকে। কার্ড দিয়ে উবারের ভাড়া মিটিয়ে মাত্রই বাড়িতে প্রবেশ করেছে সানগ্লাস পরিহিত, লম্বা মতো এক অচেনা সুদর্শন যুবক। তার প্রতিটি পদধ্বনিতে উপচে পরা কতৃত্ব্য আর আভিজাত্য। হাটার তালে তালে চওড়া কাঁধটা ক্রমশ দুলে উঠছে,দেখে মনে হচ্ছে কোন গ্লোবাল সুপারস্টার মাত্রই গুরুত্বপূর্ণ শর্ট শেষ করে শুটিং সেট থেকে বেরিয়ে এসেছে। এহেন ম্যানলি হাটা চলা পেছন থেকে যে কেউ দেখলে নিস্প্রভ হয়ে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য।

অচেনা কাউকে এভাবে হুট করে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে রেজার একজন বিশ্বস্ত ভৃত্য এগিয়ে এসে বিরক্ত কন্ঠে শুধালো,
—- কে আপনি? কি চাই?

ক্রীতিক হাঁটার গতি ধীর করে গম্ভীর গলায় বললো,
—- গেট আউট।

লোকটা এবার চড়াও হয়ে এগিয়ে এসে ক্রীতিকের পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,
—–বলেছি তো, পরিচয় না দিয়ে ওদিকে যাওয়া যাবে না।

লোকটার কথা বলতে বাকি, চোখের সানগ্লাসটা খুলে ওর গালে সপাটে চ’ড় বসিয়ে দিতে দেরি হলোনা ক্রীতিকের। অকস্মাৎ শক্ত জিম করা হাতের চ’পেটা’ঘাতে তিনশো ষাট ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে শুকনো মাটিতে মুখ থুবড়ে পরলো লোকটা।

ক্রীতিক পুনরায় সানগ্লাসটা চোখে চড়িয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
—– এটাই আমার পরিচয়।

বাড়ি বয়ে এসে, নিজের লোকের উপর হঠাৎ আ’ক্রমণ দেখে, রেগেমগে বেশ ক্ষী’প্র গতিতে এগিয়ে এলো রেজা, ক্রীতিকের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে গাঢ় গলায় বললো,
—- আমার লোকের গায়ে হাত তুলিস কে তুই? আমাকে চিনিস, আমি হলাম সহসভা…

রেজার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ওর বাম গালে আঁচড়ে পরলো তীব্র ক’ষাঘা’ত। হঠাৎ থা’প্পড়ের তাল সামলাতে না পেরে রেজা নিজেও ঘুরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরলো শুকনো চৌচির মাটিতে।

নিজেদের নেতাকে এমন বলিষ্ঠ থা’প্পড় খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখে, হকিস্টিক নিয়ে এগিয়ে আসতে গিয়েও ভয়ার্ত ঢোক গিলে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো দলের অন্য ছেলে গুলো।

এদের কান্ডে তরাগ করে ক্রীতিকের মাথায় র’ক্ত উঠে গিয়েছে, পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাড়িটাকে চিড়িয়াখানার মতোই অদ্ভুত লেগেছে ওর নিকট। মস্তিষ্কে দমে থাকা সুপ্ত রা’গটা হুট করেই চড়াও হয়েছে চোখের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা রেজার উপর। আজ এই সহসভাপতির তো একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে ও, যেই ভাবা সেই কাজ ছেলে পেলেদের হাত থেকে হকিস্টিক ছি’নিয়ে এনে ইচ্ছে মতো রাগ ঝেড়েছে রেজার উপর। ক্রীতিক যখন হকিস্টিকের শ’ক্ত প্রহা’রে ফা’টিয়ে ফেলছিল রেজার শরীর।ঠিক তখনই চোখের সামনে হাজির হয় আনচান করতে থাকা চূর্ণ বিচূর্ণ একজোড়া অসহায় চোখ।

যা দেখে পুরোপুরি থেমে যায় ক্রীতিক, হাতের হকিস্টিকটা ছু’ড়ে ফেলে দেয় অনেক দূরে, তারপর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পরে নিজে আ’ঘাতপাপ্ত হয়ে অন্য একজনের আত্মাকে য’ন্ত্রনায় পু’ড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

বালাইষাট ক্রীতিক তাতে সফল হয়েছে, অরু ক’ষ্ট পেয়ে সদর দরজার সামনে হু’মড়ি খেয়ে পরে চিৎকার করে কাঁ’দছে।

মনে হচ্ছে ওরা ক্রীতিককে নয়, প্রতিটা আ’ঘাত অরুর হৃদয়ে করছে। শেষমেশ দ্বিতীয় গাড়িটা গেইট দিয়ে ঢুকতেই ঝামেলার অবসান হলো। গাড়ি থেকে একে একে নেমে এলো, সায়র,অর্ণব, এলিসা, ক্যাথলিন আর প্রত্যয়।
***********************************************
ক্রীতিক ভারী পা ফেলে সদর দরজার কাছাকাছি আসতেই, অরু এগিয়ে এসে ওর ক্ষ’তস্থানের দিকে হাত বাড়িয়ে ঠোঁট উল্টে ফুঁপিয়ে উঠে বললো,
—– কেন করলেন এমনটা?আমাকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে তাইনা?

ক্রীতিক জবাব দেয়া তো দূরে থাক বরং অরু ছোঁয়ার আগেই, ওর থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে দাড়ায়।

ওর এহেন কান্ডে অরু বিস্মিত হয়ে বললো,
—- কি হয়েছে আপনার? আমাকে চিনতে পারছেন না?

অরুর প্রশ্নের বিপরীতে ক্রীতিক কোনোরূপ জবাব দেওয়ার আগেই ওদিক থেকে সায়র এগিয়ে আসতে আসতে সম্মোহনী হেসে বললো,
—– আরে মিস এলোকেশী, আবার দেখা হলো আমাদের।দেখলে তো কেমন তোমার টানে চলে এলাম।

কথায় কথায় সায়র খেয়ালই করেনি ক্রীতিক যে ওর দিকে তখন থেকে অ’গ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যখন খেয়াল করলো,তখন সঙ্গে সঙ্গে গলা খাদে নামিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে মেকি হেসে বললো,
—– না মানে তোমাদের দেশের মানুষের টানে,কি ভালো মানুষ তোমরা বাবাগো, আসার সঙ্গে সঙ্গে কেমন মা’রামা’রি দিয়ে আপ্যায়ন করে নিলে।তততাইনা জেকে?

ক্রীতিক একইভাবে ভাবে দাড়িয়ে আছে, ওদিকে এলিসা এগিয়ে এসে অরুকে দেখা মাত্রই চমকে উঠে বললো,
—- শরীরের এ’কি হাল হয়েছে তোমার অরু? খাওয়া দাওয়া করোনা নাকি? এভাবে শুকিয়ে গেলে কেন?

এলিসার কথার মাথায় ক্রীতিক সাবধানে আড় চোখে একবার অরুর আগাগোড়া পরখ করলো।

ওদিকে অরু কারও কথার কোনোরূপ উত্তর না দিয়েই চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে অন্দরমহলের দিকে চলে গেলো।
অরু চলে গেলে সায়র হতবিহ্বল মুখে সেদিকে তাকিয়ে বললো,
—- আরে এতোদূর থেকে এলাম, একটুখানি ওয়েলকাম না করে এভাবে দাড় করিয়ে রেখে দৌড়ে চলে গেলো?

এলিসা একপলক ক্রীতিককে পরখ করলো, যে সেই কখন থেকে একইভাবে অরুর যাওয়ার পানে চেয়ে আছে, আর কোনো দিকে নজর নেই বললেই চলে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্রীতিকের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সায়রের হাত ধরে ভেতরে যেতে এলিসা বলে,
—- স্বামী স্ত্রীর মান অভিমানের পালা চলছে এখানে, চল ভেতরে যাই, এমনিতেও আমাদের ওয়েলকাম করার মতো কেউ নেই।

সায়র ভ্রু কুঁচকে ভেতরে যেতে যেতে গম্ভীর মুখে বললো,
—- হ্যা তাতো থাকবেই না, বাড়ির মালিক কে দেখতে হবে না? এক নম্বরের হিটলার।
***********************************************
আলিশান মহলের বসার ঘরে কয়েক ইঞ্চি গা দাবিয়ে দেওয়া নরম গদিতে বসে আছে সবাই। ক্রীতিক সেই তখন থেকে পায়ের উপর পা তুলে স্মো’ক করছে। প্রত্যয় চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে পুরো বসার ঘর পর্যবেক্ষন করে মনেমনে বললো,
—- ক্রীতিক ভাই শুধু শুধু টেনে হিঁচড়ে দেশে নিয়ে এলো। যার জন্য দেশে আসলাম সেই তো নেই।

ওর ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ক্রীতিক ডেকে বলে,
—— আমার কয়েকটা আর্জেন্ট বাইক লাগবে প্রত্যয়,কোন ব্র্যান্ডের গুলো ইউজ করি তাতো জানোই। বাইরের গ্যারেজটা পরিস্কার করার ব্যাবস্থা করো। আর হ্যা, আমার রুমে একটা গেমিং মনিটর পাঠিয়ে দিও মনে করে।

সায়র তিনশো ষাট ডিগ্রি এঙ্গেলে চারিদিকে একঝলক চোখ ঘুরিয়ে বললো,
—- ভাই এটা বাড়ি নাকি রাজ প্রাসাদ?সবকিছুতেই কেমন আভিজাত্যের ছোঁয়া।

সায়রের তালেতাল মিলিয়ে এলিসাও বলে ওঠে,
—- রিয়েলি জেকে ইটস অ্যামেইজিং।ইউর ফ্যামিলি হ্যাজ ভেরি গুড টেস্ট।

ওদের থেকে কিছুটা দূরত্বে ডাইনিং এর কাছে দাঁড়িয়ে জাহানারা আর রুপা হা করে ওদের কথা গিলছে। একপর্যায়ে রুপা তব্দা খেয়ে বললো,
—- মা দেখো কি সুন্দর সুন্দর ছেলে সব বিদেশি।

জাহানারার চোখ চিকচিক করে উঠলো মেয়ের কথায়, তিনি আবেগ সামলাতে না পেরে এলিসাকে দেখিয়ে বললেন,
—- ছেলে বাদ দে ওই মেয়েটাকে দেখ, কি সুন্দর। এরকম একটা মেয়ে যদি আমার ব্যাটার বউ হতো?

জাহানারার মুখ থেকে কথাটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি কথায় কথায় যেন অর্ণব এগিয়ে গিয়ে এলিসার ঠোঁটে একসাথে কয়েকটা চুমু খেলো, সবার সামনেই সেই চুমুতে আবার পুরোদস্তুর সায় দিলো এলিসা। যা দেখে এই মূহুর্তে জাহানারার ভীমড়ি খাওয়ার উপক্রম, তিনি মেয়ের হাত দুটো ধরে হাসফাস করে উঠে বললেন,
—- রুপারে আমাকে একটু ধর।

এতোক্ষণ যাবত সেভাবে খেয়াল না করলেও এখন নিজের শার্টের কলার নাড়াতে নাড়াতে জাহানারার উদ্দেশ্যে অর্ণব বললো,
—- এই যে খালা একগ্লাস ঠান্ডা পানি দিন তো।বিডিতে অনেক গরম।

ক্যাথলিন একটু ইতস্তত কন্ঠে ভা’ঙা ভা’ঙা বাংলায় বললো,
—- আমিও।

জাহানারা একটু জোরপূর্বক হেসে বললো,
—- ইয়ে মানে বাবা’রা আমি আসলে এ বাড়ির খালা নই।

বাকি কথা শেষ করার আগেই ক্রীতিক প্রত্যয়কে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- বাড়ির কেয়ারটেকার মোখলেস চাচাকে খবর দাও, আমার ফ্রেন্ডসরা যতদিন আছে উনি যাতে একজন ভালো বাঙালি রাধুনি রেখে দেয়। ওরা যাতে বাঙালী এক্সোটিক খাবার দাবার গুলো টেষ্ট করতে পারে, আর হ্যা এস সুন এস পসিবল এদেরকে বিদেয় করো,আমার মহিলা সার্ভেন্ট পছন্দ নয়।

ক্রীতিকের কথায় অপমানে থমথমে হয়ে গেলো জাহানারার মুখ। রুপা চুপসানো মুখে ঠোঁট উল্টে মিনমিনিয়ে বলে,
—- মা কি বলছে উনি? আমরা নাকি সার্ভেন্ট?

জাহানারা মেয়েকে আস্বস্ত করে বললেন,
—- চুপ কর তোর ফুপি ফিরে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

ক্রীতিক এতোক্ষণে সোফা ছেড়ে উঠে সামনের কেভিনেটের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
—–এখানে আমার ফেবারিট কিছু শোপিচ ছিল, কোথায় গেলো সেগুলো?

জাহানারা তৎক্ষনাৎ নালিশ করার মতো গলা উঁচিয়ে অরুর ঘরের দিকে ইশারা করে বলে ওঠে,
—– ওই যে, ওই মেয়েটা ভে’ঙেছে, শুধু এগুলো না আরও অনেক কিছু ভে’ঙেছে।এইটুকু মেয়ের সে’কি তেজ।

ক্রীতিক সবাইকে শুনিয়ে বিড়বিড়ালো,
—– আমার বউ, তেজ থাকা মাস্ট। প্রত্যয় শোনো।

এগিয়ে এসে প্রত্যয় শুধালো,
—- হ্যা ভাই?

আগের শোপিচ গুলোর মতোই সেম কিছু শোপিচ অর্ডার করে দিও, ওগুলো আমার অনেক ফেবারিট। আর হ্যা একজোড়া করে অর্ডার করে দিও। বলা তো যায়না মহারানীর আবার কখন মুড সুইং হয়।

প্রত্যয় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে সবকিছু নোট করে বললো,
—– ভাই এখন আসছি, অনেক দিন পর ফিরেছি বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।

ক্রীতিক ওর কাঁধের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে বললো,
—- বিলিভ মি,এখন ফিরে যাচ্ছো, তবে খুব শীঘ্রই স্ব-সম্মানে এই বাড়িতে পা রাখবে তুমি।

ক্রীতিকের কথায় স্মিত হেসে দ্রুত পদধ্বনিতে যায়গা ত্যাগ করলো প্রত্যয়।
***********************************************
বিকেলের কালো মেঘ রাত হতেই পরিনত হয়েছে প্রকান্ড ঝড়ে, ঝড়ের বেগে চারিদিকে প্রবল হাওয়া দিচ্ছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই,জেনারেটর জ্বালিয়ে সকলে মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছে ওরা। অনেক বছর পরে এমন বৈশাখী ঝড়ের মাঝে টিমটিমে আলোয় টেবিলে হরেক রকমের বাঙালি খাবার দেখে উৎকন্ঠার সীমা নেই ওদের সবার।

ঘি মাখানো ভাত, আমের ডাল, কুচো চিংড়ি ভুনা,কাতলা মাছের ঝোল, মাংস কষা, শিল পাটায় তৈরি ভর্তা,লাউ পাতার বড়া আর শেষ পাতে দই মিষ্টি।
কতোটা আমোদ করেই না খাবার গুলো হাতে মেখে উপভোগ করছে ওরা।
একটু পর ফ্রেশ হয়ে এসে ওদের মাঝে চেয়ার টেনে বসলো ক্রীতিক, ওর চোখ দুটো আইপ্যাডে নিবদ্ধ। সেদিকে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে খেয়ালই করলো না যে ও অরুর পাশে বসেছে।

বিকেলের ঘটনার পরে এলিসাই অরুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে খাবার খেতে নিয়ে এসেছে, এলিসা বড় আপার মতো, তাই ওর কথা ফেলতে পারেনি অরুও সহসাই চলে এসছে ডাইনিং এ।

চিকন কোমল হাতে প্লেটের মধ্যে কেউ ভাত তুলে দিচ্ছে, ব্যাপারটা দৃষ্টিগোচর হতেই আইপ্যাড থেকে চোখ সরালো ক্রীতিক। দেখলো অরু, ওর পাশে বসে নিজের ছোট ছোট হাত দিয়ে পটু গিন্নিদের মতো করে ওর প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছে। লম্বা চুলের আড়াল থেকে অরুর ঢিলে হয়ে যাওয়া জামাটা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে যে অরু কতোটা শুকিয়ে গিয়েছে। ক্রীতিক সেদিকে একঝলক তাকিয়ে, হুট করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ক্রীতিকের কান্ডে অরু আচমকা লাফিয়ে উঠলো,সায়র খেতে খেতে শুধালো,
—– কি হয়েছে?

ক্রীতিক বেসিন থেকে হাত ধুয়ে উপরে যেতে যেতে বললো,
—– নাথিং।

অর্ণব হাঁক ছেড়ে বললো,
—– খাবিনা?

সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে যেতে যেতে জবাব দিলো ক্রীতিক,
——খিদে নেই।

ক্রীতিক এভাবে উঠে যাওয়াতে অরু অ’পমানিত বোধ করলো খুব ,লোকটা শুধু শুধু ওর সাথে কেন এমন রাগ দেখাচ্ছে কিছুইতো মাথায় ঢুকছে না ওর।ক্রীতিক কি এমন ভুলের শা’স্তি দিচ্ছে ওকে?

সবাই এই মূহুর্তে ওর থমথমে মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি ভেঙে উপরে চলে যায় অরু।
ওরা দুজন চলে যাওয়ার পরপরই সায়র বিরক্তিতে চিড়বিড়িয়ে উঠে বললো,
—- তোর বন্ধু চাইছেটা কি অর্ণব? যার জন্য ইউ এস এ বসে ড্রা’গ,ফ্রা’গ নিয়ে যা-তা অবস্থা করে ফেলেছিল, আর এখন চোখের সামনে পেয়েও তাকে না দেখার ভান করে এরিয়ে যাচ্ছে আশ্চর্য।

এলিসা ক্যাথলিনের প্লেটে তরকারি তুলে দিতে দিতে বললো,
—- জেকে নিজের অভিমানটা প্রকাশ করতে পারছে না, কারন এসব ওর ধাঁচে নেই,যার ফলস্বরূপ অরুর সাথে এমন রু’ড বিহে’ভ করছে। আই থিংক সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।অরুই ঠিক করে ফেলবে।কারণ ওই পিচ্চি মেয়ে ছাড়া আর কারোর ধার ধারেনা ঘাড় ত্যাড়া ছেলেটা।

এলিসার কথা শুনে অর্ণব খেতে খেতে আমোদিত সুরে বললো,
—– জান, তুইতো দেখি জাতে মাতাল তালে ঠিক আছিস।

এলিসা এদিক ওদিক তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,
—– একবার রুমে চল, তারপর তোর হচ্ছে।
.

বাইরে ঝড়ের তান্ডব ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মেঘভেজা শীতল বাতাসে দুলদুল করছে চারিপাশ, অন্ধকারে দৌড়াতে দৌড়াতে চিলেকোঠা অবধি চলে এসেছে অরু। বিদ্যুৎ নেই, তারুউপর দমকা, তাই অন্ধকারটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। অরু যখন চিলেকোঠার ঘরের সামনে এসে হাঁটু ভে’ঙে বসে তাতে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো, তখনই নাকে এসে সুড়সুড়ি দিলো চেনা পরিচিত ম্যানলি স্যান্ডালউড পারফিউমের সুঘ্রাণ। এই সুঘ্রাণটা অরুর বেশ পরিচিত।

শুধু পরিচিত বললে ভুল হবে, একটা সময় এই সুঘ্রাণে মিলে মিশে একাকার হয়ে উঠেছিল ওর শরীর। প্রথম নারী সত্তার বিসর্জন হয়েছিল সেই সুঘ্রাণ যুক্ত পুরুষের হাতেই। আর এখন এই অন্ধকার চিলেকোঠায় আবারও স্যান্ডাল উড পারফিউমের সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে ফোপাঁতে ফোপাঁতে এদিক ওদিক চোখ বোলাতেই অরু দেখলো মানুষটাকে।

অন্ধকারের মাঝে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে নির্বিগ্নে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে ক্রীতিক। ক্রীতিককে দেখতে পেয়ে অরু চট করে উঠে দাড়িয়ে শক্ত গলায় বললো,
—– আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্যই বুঝি হাজার মাইল দূর থেকে বাড়ি বয়ে এসেছেন?

ক্রীতিক কোনো প্রকার জবাব দিলো না। ক্রীতিকের নিরবতায় অরুর মস্তিষ্কটা টগবগিয়ে উঠলো, ও দু কদম এগিয়ে এসে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
—- কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, তাইতো?

ক্রীতিক এবারও নিশ্চুপ।

অরু এবার পেছন থেকে ক্রীতিকের টিশার্টটা খা’মচে টেনে ধরে চেঁচিয়ে উঠে বললো,

—-এতোই যদি অপছন্দ আমাকে, তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিলেই তো পারেন৷ শুধু শুধু কেন এভাবে ন’রক য’ন্ত্রতা দিচ্ছেন?

ক্রীতিক এবার সিগারেটটা পায়ে পিশে অরুর দিকে তাকিয়ে তাছ্যিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—- কলিজায় সাহস টা খুব বেড়ে গিয়েছে দেখছি? এখনই ডিভোর্স চাওয়া শিখে গেছিস? “ডিভোর্স” শব্দটা উচ্চারণ করতে একবারও বুক কাঁপলো না তোর? এই কথার জন্য তোর কি হাল করবো আমি সেটা একবারও কল্পনা করেছিস?

ক্রীতিকের শান্ত মসৃণ অথচ প্রান না’শকারী হু’মকির ন্যায় ধা’রালো কথায় শুকনো ঢোক গিলে দু কদম পিছিয়ে গেলো অরু।
পেছাতে পেছাতে নীড়হারা ব্যার্থ পাখির ন্যায় আহত কন্ঠে বললো,
—– আপনাকে ভালোবাসাটা যে এতো য’ন্ত্রনার তা আগে জানা ছিলোনা আমার।

ক্রীতিক অরুর দিকে তাকিয়ে গভীর গলায় বললো,
—- এতোটুকুতেই হাঁপিয়ে উঠেছিস? সারাজীবন আমার সাথে থাকবি কি করে তুই?

অরু ঠোঁট উল্টে অভিমানি কন্ঠে শুধায়,
—– এতোদিন দূরে থেকে পো’ড়াতেন আর এখন কাছে এসে পো’ড়াচ্ছেন কেন করছেন এমন? একটু ভালো বাসুন না? আমি আপনার একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চাতক পাখির মতো ছটফট করছি, আপনিকি বুঝতে পারেন না?

ক্রীতিক এবার পায়ে পায়ে এগিয়ে এগিয়ে অরুর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। দমকা হাওয়ায় অরুর লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। খানিক বাদে বাদে উড়ে গিয়ে ঠায় নিচ্ছে ক্রীতিকের চওড়া বুকে। অরুকে অবাক করে দিয়ে ক্রীতিক ওর চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করে তাতে নিঃশব্দে নাক ছোঁয়ালো,অতঃপর মুঠো ভর্তি অরুর চুলের সুবাসে লম্বা করে নিঃশ্বাস নিলো ক্রীতিক। দুজনার নিরবতায় কিছুক্ষণ সেভাবেই অতিবাহিত হলো।
পরমূহুর্তেই শুকিয়ে যাওয়ার দরুন অরুর বেড়িয়ে আসা কলার বোন গুলোর দিকে নজর পরতেই শক্ত হয়ে এলো ক্রীতিকের চোয়াল। ও তৎক্ষনাৎ অরুকে ধা’ক্কা মে’রে দূরে সরিয়ে দিয়ে গটগটিয়ে নিচে যেতে যেতে বললো,
—- ইউ ডিজার্ভ ইট।

***********************************************
কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভেঙেছে সায়রের। সকাল সকাল ঘুম ভাঙার অভ্যেস না থাকলেও ইউ এস এ, বাংলাদেশ সময়ের তারতম্যের কারণে রাতে সেভাবে ঘুম হয়নি ওর। রাতে ঘুম না হলেও দুপুরের দিকে হয়তো দেখা যাবে ঘুমের জন্য চোখের পাতা খুলে রাখাই দায় হয়ে পরেছে। তাই ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে সকাল সকালই একটু খানি লেকের আশেপাশে হাটতে বেরিয়েছে সায়র।
পেছনে অবশ্য ট্র্যাক স্যুট পরে ক্রীতিক আর অর্ণব ও বেরিয়েছে, তবে ওদেরকে পেছনে ফেলেই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে সায়র।

রাতে ঝড়ের তান্ডবে পুরো ব্যাক ইয়ার্ড ভরে গিয়েছে কাঁচা আমে। মহলের চারপাশ থেকে সুক্ষ হাতে সেই আম কুড়াচ্ছে বাড়ির কেয়ারটেকার মোখলেস চাচা। সেখানটায় মোড়া পেতে বসে আছে এলিসা আর ক্যাথলিন। ক্যাথলিন ডিএসএলআর এর ক্লিকে কর্মরত মোখলেস চাচার ছবি ধারণ করায় ব্যস্ত। আর এলিসা এটা ওটা প্রশ্ন করায়। মোখলেস চাচাও হাত চালাতে চালাতে বেশ উৎসুক হয়ে উত্তর দিচ্ছেন এলিসার প্রশ্নের।

সায়র হাঁটতে হাঁটতে গেইটের কাছে এগিয়ে এসে গেইট খুলতে যাবে, তার আগেই কেউ একজন গেইট খুলে হুরমুরিয়ে প্রবেশ করে বাড়ির ভেতরে, হুট করে প্রবেশ করায় দুজনার একজনও ঠিক মতো ঠাওর করতে পারেনি, অগত্যাই টাইম টেবিল মিলে যাওয়ায় আগন্তুক তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পরলো সায়রের কোলে।

সায়রও সিনেমার হিরোদের মতোই দক্ষ হাতে ধরে ফেললো তাকে। ঠিক যেন বল নাচের সেই বিখ্যাত পোজ। আগন্তুকের বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে যাওয়া মার্বেলের মতো চোখের দিকে তাকিয়ে যেন কবি বনে গেলো সায়র, হুট করেই সুর ধরে বলে উঠলো,
—– এই কাক ডাকা ভোরে, পথ ভুলে আমার মনের অভ্যায়রন্যে এসে উষ্ঠা খেয়ে পরে গেলে,কে তুমি অবলা নারী?

সায়রের কথায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো নীলিমা , তরিঘরি করে পা’গল লোকটার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, জামা কাপড় ঠিক করতে করতে নীলিমা বললো,
—– কান খুলে শুনুন ব’দমা’শ পুরুষ, আমি মোটেও অবলা নারী নই। আর না আমি পথ ভুলে কোথাও উষ্ঠা খেয়েছি। বরঞ্চ আপনিই এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। মহল্লায় নতুন মনে হচ্ছে, তাই নীলিমাকে চেনেন না। ইভ’টিজিং করতে আসলে না?আব্বাজানকে বলে এমন ক্যালানী খাওয়াবো,যে সারা জীবনের জন্য এই মহল্লার ঠিকানাই ভুলে যাবেন,হুহ।

গড়গড়িয়ে কথাগুলো শেষ করে,একটা মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেলো নীলিমা।

সায়র ঠোঁট উল্টে ক্যাবলা কান্তের মতো বিড়বিড়িয়ে বললো,
—- আশ্চর্য বাঙালি মেয়েরা এতো সেনসিটিভ কেন? কি এমন বললাম? মেয়ে তো নয় যেনো ধানিলঙ্কা, আব্বাজানের ভ’য় দেখায়। আজিব!

এতোক্ষনে ক্রীতিক আর অর্ণব ও এগিয়ে এসেছে গেইটের কাছে। সায়রকে এভাবে একা-একা কথা বলতে দেখে অর্ণব ওর কাঁধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বললো,
—– কিরে ঠিক আছিস?

সায়র ঠোঁট কামড়ে বললো,
—–দোস্ত মেয়েটাকে দেখেছিস, পুরাই রাগিণী।

অর্ণব ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- জেকে অরুতে আসক্ত, আর আমার এলি আছে, তাই আমাদের মেয়ে দেখিয়ে লাভ নেই দোস্ত।

সায়র মাথা চুলকে শুকনো মুখে বলে,
—– হ্যা ঠিকই তো তোমাদের বিয়ে বাসর সব শেষ, আর আমি এখনো সিঙ্গেল।

সায়রের কথার পাছে অর্ণব আবারও ভুল ধরে বললো,
—- এবারও মিস্টেক আমার বিয়ে হয়নি, আর জেকের বাসর।

সায়র চোখ ছোট ছোট করে ক্রীতিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
—- আমি ওকে বিশ্বাস করিনা দোস্ত । ও যা অধৈর্য, সুযোগ পেলে গাড়ির মধ্যে বাসর সেরে ফেলতেও দু’মিনিট ভাববে না।

সায়রের কথায় ক্রীতিক আচমকা বিষম খেলো। কাশতে কাশতে বললো,
—– আমাকে নিয়ে গবেষণাটা এবার বন্ধ করবি তোরা?

ক্রীতিকের নাজেহাল অবস্থা দেখে সায়র অর্ণব ওর দিকে তীক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপ করে একই সুরে বলে উঠলো,
—– তুই কি আসলেই গাড়িতে…….

ওদের কথা বলার আর কোনো কোনোরূপ ফুরসত না দিয়ে হনহনিয়ে গেইটের বাইরে চলে গেলো ক্রীতিক।

ক্রীতিক চলে যেতেই, সায়র আর অর্ণব একজন আরেকজনার দিকে তাকিয়ে আপসোসের সুরে বললো,
—– হাহ,জেকে শালা সব কিছুতেই ফার্স্ট।
***********************************************
ক্রীতিক গেইট ছাড়িয়ে বাইরে বেরোতেই দেখতে পেলো একটা সাদা টয়োটাতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ক্রীতিক কুঞ্জের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে অমিত।

একসাথে একই ভার্সিটিতে পড়ার সুবাদে প্রথম দেখাতেই অমিতকে চিনতে পারলো ও। তাই সহসা এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো ক্রীতিক,
—– অমিত আরিয়ান রাইট?

অমিত তরিঘরি করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ক্রীতিকের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
—–চিনতে পেরেছো তাহলে?

ক্রীতিক একটু ইতস্তত করে হাত মিলিয়ে বললো,
—– তা আমার বাড়ির সামনে কি করছো?

অমিত মৃদু হেসে বললো,
—– তোমার বোনের জন্য ওয়েট করছিলাম, ও তো বাংলা একাডেমিতে যায় প্রতিদিন, তাই ভাবলাম আমি যেহেতু এই গলি দিয়ে যাচ্ছি ওকেও নিয়ে যাই ।

ক্রীতিক ভ্রু কুঞ্জিত করে অবাক হয়ে বললো,
—- আমার বোন মানে?

—- কেন অরোরা তোমার বোন না?

ওর কথায় পেছন থেকে সায়র ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,
—- গেলো!
অমিত একটু ঝুঁকে মাথা কাত করে শুধালো,
—- কি গেলো?

অমিতের কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে ক্রীতিকের। কোনো মতে হাতদুটো মুঠি বদ্ধ রেখে নিজেকে সংবরণ করে, দাঁতে দাঁত চেপে ও বললো,
—– অরোরা আজকে যাবেনা, শরীর ভালো নেই ওর, তুমি যেতে পারো।

অমিত আর কিইবা করবে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে তৎক্ষনাৎ প্রস্থান করে।

অমিতের গাড়িটা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীতিক কাউকে কল দিয়ে বললো,
—– ক্রীতিক কুঞ্জের সীমানা ছাড়ানোর আগেই সাদা টয়োটার টায়ার বরাবর গু’লি করে দাও। যাতে করে সারা জীবনে আর এই বাড়ির সামনে দাড়ানোর সাহস না পায় ওই গাড়ি।

এতোক্ষণ যাবত সবকিছুই পেছনে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষন করছিল সায়র আর অর্ণব। ক্রীতিকের শেষ কথাগুলো শুনে সায়র অর্ণবের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
—- দোস্ত তোকে বলেছিলাম না সকাল থেকেই বাম চোখটা কেমন লাফাচ্ছে, দেখলি তো?

অর্ণব চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
—- তোর জীবনে নারী নামক প্যারার এন্ট্রি ঘটেছে ওই জন্য লাফিয়েছে। এখানকার ঘটনার জন্য নয়, তাই ভুলভাল যুক্তি প্রদান করা বন্ধ কর।নয়তো জেকে কে বলে তোর অন্য চোখ লাফানোর ব্যাবস্থা করছি আমি।

সায়র বিস্ময়ে ভ্রু কুঞ্জিত করে শুধালো
——কি বলবি?

—– বলবো তুই আবারও অরুর নাম মুখে নিয়েছিস।।

কথাটা শেষ করেই কপট হাসিতে প্রসারিত হলো অর্ণবের ঠোঁট।
ওদিকে সায়র অর্ণবের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমটিয়ে উঠে বিড়বিড়ালো,
—– শা’লা মীরজাফর।
চলবে……..
নেক্সট কয়েকটা পার্ট হাসি আনন্দ আর ভালোবাসার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here