সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁 #পর্বঃ৪৭ #লেখনীতে_suraiya_rafa

0
351

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৪৭
#লেখনীতে_suraiya_rafa
(ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫)
(কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)

চন্দ্রদীপ্ত মধ্যরাত, রুপোর থালার মতো চাঁদটা তীর্যক রুপোলী আলোতে ভূবণ ভরিয়ে তুলছে, তারপরেও ঈশান কোনে কয়েক সেকেন্ড অন্তর অন্তর জ্বলে ওরা বিদ্যুৎ এর ঝলকানি আর চারিদিকের তীব্র হিমেল হাওয়ায় মনে হচ্ছে শেষ রাতে বৈশাখী ঝড়ে লন্ড ভন্ড হবে প্রকৃতি।

প্রত্যয়দের বাড়িটা ক্রীতিক কুঞ্জের তুলনায় কুঁড়েঘর ই বলা চলে। ছোট মতো একটা দু’তলা বাড়ি। নিচ তলায় বসার ঘর, রান্না ঘর, আর অতিথিদের জন্য গেস্টরুম। আর উপর তলায় প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু আর বড় আপুর শোবার ঘর। যদিও বা বড় আপু বেশির ভাগই তার শশুর বাড়িতেই থাকেন।
কালেভদ্রে যখন এ বাড়িতে আসা হয় তখনই কেবল তার রুমে মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায়।

প্রত্যয় নিজেও আমেরিকা থেকে বছর অন্তর ছাড়া দেশে ফেরেনা, যার ফলরূপ মুরব্বি দুজন ছাড়া পুরো বাড়িটা শূন্যই থাকে বলা চলে।

প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু অমায়িক মানুষ। বিয়ের আগে শশুর শাশুড়ী নিয়ে অনুর মন গহীনে যে অযাচিত আ’তঙ্ক’রা ঘুরে বেড়াতো, চোখ বুজলেই শশুর বাড়ি নামক যায়গাটা কে যেন মহাযজ্ঞ স্থল ঠেকতো, সেই সকল ভুল ধারনাকে এক দর্শনেই বিনা’শ করেছেন প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু।

আজ এই বাড়িতে পা রাখার পরে অরু আর ক্রীতিকের বিষয়টা নিয়ে প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজনদের মুখ থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি অনুর।

কিন্তু প্রত্যয়ের আব্বুর কান অবধি সে সব কথা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদ করেছেন, নিজের আত্নীয় স্বজন হোক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী সবার উদ্দেশ্যে গম্ভীর গলায় একটাই কথা বলেছেন,
—– বউমা যেহেতু আমার, বউয়ের পরিবারটাও আমারই, আর আমার পরিবার নিয়ে যারা কুৎসিত মন্তব্য করার স্পর্ধা দেখাবে, তারা কখনোই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেনা। তাছাড়া ধর্মীয় আইন কানুন বাদ দিয়ে সমাজের কুসংস্কারে গা ভাসানোর মানুষ আমি নই। ধর্মে যে সম্পর্কের প্রাধান্য আছে, আমার নিকট ও তার যথাযথ সম্মান রয়েছে । দ্বিতীয়বার বউমার বোনকে নিয়ে আর একটাও কথা যাতে না হয় এ বাড়িতে ।

কথা শেষ করে তিনি তার স্ত্রীকে ডেকে দৃঢ় গলায় আদেশ করে বলেন,
—- প্রত্যয়ের আম্মু, তুমি খেয়াল রেখো। বউমার সম্মানহানী হয় এমন কোন কথা যাতে দ্বিতীয়বার আমার কান অবধি না আসে।

নতুন শশুর শাশুরির কাছ থেকে এতোটা প্রাধান্য, এতোটা আন্তরিকতা পেয়ে সত্যিই তখন গর্বে বুকটা ফুলে ফেঁপে উঠছিল অনুর, বারবার মনে হচ্ছিল প্রত্যয়ের মতো একজন ভদ্র সভ্য, শান্ত ছেলে জন্ম দেওয়া কেবল তাদের মতো অমায়িক আর স্বচ্ছ হৃদয়ের মা বাবার দ্বারাই সম্ভব।

রুমের কোনে অবস্থিত লম্বাটে পুরনো সেগুন কাঠের ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে সন্ধ্যা রাতের সেসব কথা ভেবে আরও একবার চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো অনুর চিত্ত চিড়ে।

প্রত্যয়ের রুমটা একতলা কিংবা দোতলায় নয়। বাড়ির একমাত্র ছেলে হিসেবে সম্পূর্ণ আলাদা ডেকোরেশন করে চিলেকোঠার ঘরটাই প্রত্যয়ের রুম হিসেবে বরাদ্দ করা। প্রত্যয় যখন দেশে ছিল তখন থেকেই এই চিলেকোঠার ঘরটা ওর। আর এখন ওদের বিয়ের প্রথম বাসর রাতের আয়োজন ও এ ঘরেই করা হয়েছে।

পুরো ঘরটাতে ভুর ভুর করে সুঘ্রান ছড়াচ্ছে পুরনো খাটে নতুন করে সাজানো তাজা রজনীগন্ধা আর থোকা থোকা গোলাপের আস্তরণ। সাদা চাদরে মোড়ানো বিছানা জুড়েও গোলাপের ছড়াছড়ি। সেদিকে তাকালেও কেমন অপার স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে মন প্রান।

পুষ্প সজ্জিত স্নিগ্ধ সেই রুমের এক কোনে দাড়িয়ে নির্বিগ্নে চুলে তোয়ালে চালাচ্ছে এই ঘরের নতুন ঘরনি, প্রত্যয়ের সদ্য বিয়ে করা নতুন বউ। যেন এই ঘরে আগমন তার নতুন কিছু নয়, সেভাবেই বিয়ের ভারী গহনা,পোশাক আশাক ছেড়ে একটা কালো পাড়ের খয়েরী তাঁতের শাড়িতে নিজেকে নতুন বউ রুপে আবিষ্কার করলো অনু।

ঠান্ডা পানি দিয়ে লম্বা শাওয়ার শেষে সারাদিনের ধকল কে ধুয়ে মুছে সাফ করে একেবারে সতেজ হয়ে বেরিয়েছে অনু। আর এখন এই হাল্কা শাড়িটা গায়ে চড়িয়ে আরও বেশি আরাম লাগছে ওর।

শাড়ির ব্লাউজটা ব্যাকলেস, যার দরুন একটু একটু অসস্থি ও হচ্ছে। এমন একটা আটপৌরে শাড়ির সাথে এমন শরীর উন্মুক্ত ব্লাউজ কে কিনলো ভেবে পায়না অনু, ভাবার মতো সময় ও নষ্ট করে না অবশ্য, তার কারণ ওর মাথায় এই মূহুর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য একটা প্রশ্ন, বারংবার মানস্পটে ভেসে উঠছে সেই তীক্ষ্ণ ক্রুর ভ’য়ানক চোখ দুটো।

অনুর মনে আছে ছোট বেলায় এই চোখ দুটোকে ভীষণ ভ’য় পেতো ও, আর এখনো পায়, কিন্তু হঠাৎ করেই এতো গুলো বছর পর কোথা থেকে উদয় হলো সেই মানব? কেনই বা ফিরে এলো ওদের শান্তশিষ্ট নিরিবিলি জীবনে?
ওদের জীবনে তো মানুষটার আর কোনো অস্তিত্ব নেই, তাহলে আজকের দিনেই কেনো এভাবে দেখা দিলো সে? এটা কি কেবলই অনুর মতিভ্রম নাকি অন্য কিছু?

অনুর ভাবনার জগতের পর্দা টেনে যায় প্রত্যয়ের আগমনে, প্রত্যয় একটু অন্যমনস্ক হয়েই রুমে প্রবেশ করে। আত্নীয় স্বজনদের অধিকাংশই কর্মজীবি হওয়াতে যে যার মতো ফিরে গিয়েছে সবাই, বাড়িতে আপাতত আপু আর তার হাসবেন্ড ছাড়া আর তেমন কেউ রয়ে যায়নি। সবাইকে একেক করে বিদায় দিতে দিতেই রুমে আসতে এতো রাত হয়ে গেলো প্রত্যয়ের।

তারউপর ক্রীতিক কল করেছে কয়েক ঘন্টার জন্যে হলেও কাল অফিস যেতে হবে ওকে, শেয়ার হোল্ডারদের সাথে ইম্পর্টেন্ট মিটিং রয়েছে , তার চেয়েও বেশি চিন্তার বিষয় হলো কাল জামাই শাশুড়ী একই সাথে নিজেদের প্রজেক্ট লঞ্চ করবে, কি জানি কি হবে? কি করেইবা এই দু’জন হট টেম্পার কে একই সাথে সামলাবে ও? চিন্তায় মাথা ভোঁ ভোঁ করছে প্রত্যয়ের।

প্রত্যয় রুমে ঢুকতেই অসম্ভব মিষ্টি সুঘ্রাণে ওর চোখ দুটো আবেশে বন্ধ হয়ে এলো, ফুল,মোমবাতি, সেই সাথে পরিচিত নারীর গায়ের গন্ধ মিলে মিশে পুরো ঘরটা সৌরভে ম ম করছে। অনু অনু সেই গন্ধটা আরও একবার নাক চিড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাহায্যে ভেতরে পুরে নিলো প্রত্যয়।তবে আজ আর এই সৌরভ ওর নাকে নয় ওর হৃদয় গিয়ে লাগছে।

খানিকক্ষন চোখ বুঁজে রেখে নিজেকে সামলালো প্রত্যয়, তারপর আস্তে ধীরে চোখ খুলতেই দেখলো ওর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে অনু,হাতে তার সেদিনের সেই ছোট্ট বক্সটা।

প্রত্যয় বক্সটার দিকে ভ্রু কুঞ্চন করে তাকালে অনু শুধায়,
—- আপনার কি ঘুম পেয়েছে প্রত্যয় সাহেব? চশমাটাও দেখি পরেন নি, ঠিকঠাক দেখছেন তো আমায়?

অনুর কথায় এক চিলতে হাসি খেলে গেলো প্রত্যয়ের ঠোঁটের আগায়, ও অনুকে আগাগোড়া পরখ করে বললো,
—- তোমাকে দেখতে আমার চশমার প্রয়োজন নেই অপরিচিতা, চোখ বন্ধ করলে সর্বদাই তুমি আমার দু’চোখের পাতায় রাজত্ব করে বেড়াও, আর এখন চোখ খুললেও তুমি।

প্রত্যয়ের এসব প্রেম প্রেম কথা ভালোই লাগে অনুর, মাঝেমধ্যে লজ্জাও পায় বেশ, কিন্তু এই মূহুর্তে পেলোনা, উল্টো প্রত্যয়ের কথাকে দু আনা প্রশ্রয় না দিয়েই হাত বাড়িয়ে বক্সটা দেখিয়ে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করে,
—- বিয়ে হয়েছে গিয়েছে, আজ প্রথম রাত, তাহলে এবার বলুন,কি আছে এতে? আমি আর পারছিনা চুপ হয়ে থাকতে, কৌতুহলে মাথাটা কিলবিল করছে আমার।

প্রত্যয় এবারও অনুকে মসৃণ হাসি ফেরত দিয়ে বলে,
—- প্রথম রাতে স্বামীকে সালাম না করেই উপহার দেখতে চাইছো? ইট’স নট ফেয়ার অনু।

অনু তৎক্ষনাৎ দাঁত দিয়ে জিভ কাটে, মনেমনে বলে,
—- এইরে ভুলেই গিয়েছিলাম।

পরক্ষণেই শাড়ির আঁচলটা পিঠের উপর দিক দিয়ে টেনে এনে সামান্য নিচু হয়ে সালাম করলো প্রত্যয়কে। তারপর আবারও সেই একই বুলি,
—- এবার বলুন এতে কি আছে?

অনুর উন্মুক্ত মসৃণ মোমের মতো পিঠের দিকে চেয়ে প্রত্যয় ঘোর লাগা গলায় বললো,
—- কি পরেছো এটা? সব দেখা যাচ্ছে।

অনু বলে,
—- আগে আমার কথার উত্তর দিন তারপর বলছি।

অনুর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এতে কি আছে না জানা অবধি প্রত্যয়কে এক দন্ড বসতেও দেবেনা ও,আর প্রত্যয় কিনা এইটুকু সময়ে কত কিছুরই না স্বপ্ন দেখে ফেলেছে। সিল্যি ফিলিংস, হাহ!

প্রত্যয়ের দুচোখে এখন সেই সব অব্যক্ত,নেশাতুর অনুভূতি গুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু অনুকে বোঝানো মুশকিল। তাই এবার আর কোনোরূপ কথা না পেঁচিয়েই বক্সটা খুলে অনুর হাতে ধরিয়ে দিলো প্রত্যয়।

অনু অবাক চাহনিতে বক্সের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে, হবে হয়তো কোনো দামি জুয়েলারি, কিংবা কোনো হানিমুন টিকেটস।

অনুর জানা মতে বাসর রাতে তো স্বামীরা এসবই উপহার দেয়। কিন্তু এখানে তেমন কিছুই দেখতে না পেয়ে আশাহত হলো অনু, ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রত্যয়কে শুধালো,
— কই?

প্রত্যয় কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করতে করতে বললো,
— কি কই?

— কেন উপহার?

অনুর কালো হয়ে যাওয়া চুপসানো মুখটা দেখে প্রত্যয় অনেকটা কাছে এগিয়ে এসে ওর চিবুক তুলে হিসহিসিয়ে বলে,
—- কি বলেছিলাম আমি? এর মাঝে তোমার স্বপ্ন আছে, আর সেটাই আমার তরফ থেকে তোমার জন্য বাসর রাতের বেস্ট গিফট।

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো,
— স্বপ্ন মানে? কেমন স্বপ্ন?

প্রত্যয় কিঞ্চিত ঠোঁট বাকিয়ে হেঁসে বক্স থেকে একটা আইডি কার্ড বের করে অনুর গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো,
—- এই যে আমার বউ সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।

এতোক্ষণে অনুর টনক নড়েছে, চোখ দুটো ছলছল করছে, ও সেই ছলছলে চোখ নিয়েই প্রথমে প্রত্যয়ের দিকে অবিশ্বাসের চাউনি নিক্ষেপ করলো, অতঃপর কাঁপা হাতে আইডি কার্ডটা চোখের সামনে তুলে ধরলো, যেখানে গুটি গুটি ইংরেজি অক্ষরে অনুর নাম আর ছবি বসানো,
অনন্যা শেখ নামের পাশেই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে পরপর তিনটে অক্ষরে লেখা, L.L.B অনার্স।

এতো ঝড়ঝাপটা, এতো উত্থানপতনে অনু তো ভুলেই গিয়েছিল, নতুন করে পড়াশোনা শুরু করাটা যে ওর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। মায়ের অসুস্থতায়, যা না চাইতেও বিসর্জন দিতে হয়েছিল ওকে, মস্তবড় গেইট পেরিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করার স্বপ্ন তো অপূর্ণই রয়ে গিয়েছিল।

মনের টানাপোড়েন তো কম হয়নি এককালে, কিন্তু অনু নিজেকে বুঝিয়েছিল বড় মেয়ে হতে গেলে দ্বায়িত্ব নিতে হয়,বাড়ির বড় সন্তান কে এতো নিজের কথা ভাবলে চলেনা,তাদের পৃথিবীতে পাঠানোই হয়েছে পরিবারের সর্বসকল্যের সুখ নির্ধারন করার জন্যে।

কিন্তু আজ, এই মূহুর্তে প্রত্যয় নিজ হাতে অনুর স্বপ্নকে অনুর হাতে ধরে দিলো, নতুন করে মনে করিয়ে দিলো অনু এখন আর একা নয়, ওরও নির্বিগ্নে মাথা রাখার জন্য একটা কাঁধ রয়েছে, যার নাম “প্রত্যয় এহসান”।

—- তোমার এখনো অনেকটা পথ অতিক্রম করা বাকি অনু, এগিয়ে যাও আমি তোমার পাশে আছি। তোমার স্বামী, তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী সবসময় তোমার পাশে আছে।

প্রত্যয়ের কথায় এতোক্ষণের ভ্রমটা কেটে গেলো অনুর,মতিভ্রম থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যয়ের উপর ঝাপিয়ে পরে ওর গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চিৎকার করে কেঁদে উঠলো অনু, কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—– এটা কি করেছেন আপনি, কি করেছেন? এতো ভালোবাসা কেন দিচ্ছেন? পা’গল হয়ে যাবো তো আমি। আপনি আমাকে আজকে যা দিয়েছেন তা এই দুনিয়ার কেউ দেয়নি আমাকে, কেউ না।

অনু সরল মনে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললেও, ওর বলা কথা আর চিৎকারে প্রত্যয়ের চক্ষু চড়কগাছ। প্রত্যয় তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ খিঁচিয়ে অনুর মুখটা হালকা চেপে ধরে বললো,
—- আরেহ, কি বলছো এসব? নিচের সবাই শুনলে কি ভাববে? আস্তে বলো জান,আস্তে।

অনু নিজের নাকের পানিটুকু প্রত্যয়ের এক্সক্লুসিভ শেরওয়ানিতে মুছে নতুন উদ্যমে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—- আস্তে বলবো মানে? আমিতো সবাইকে জানিয়ে বলবো আপনি আমাকে কি দিয়েছেন এটা, কয়জন স্বামী দিতে পারে এটা? কার এমন আত্মা আছে, শুনি? কয়জন স্বামী পারে বিয়ের প্রথম রাতেই বউকে এতোটা ভালোবাসা দিতে, বলুন?…

তারপর আবারও কান্নার আওয়াজ।

প্রত্যয়দের ঠিক নিচের রুমটাই ওর আপু দুলাভাইয়ের রুম, অনুর এমন কান্নাকাটি আর আহাজারি শুনে প্রত্যয়ের দুলাভাই আপুকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর গলায় বললেন,
—- তোমার ভাইয়ের একটু সংযত হওয়া উচিৎ ছিল অন্তুর আম্মু। মেয়েটার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে, এতো কান্নাকাটি করছে। বিয়ের প্রথম রাতেই এভাবে পশুর মতো আচরণ কেউ করে?

স্বামীর কথাকে মুখ বাঁকিয়ে অগ্রাহ করে প্রত্যয়ের আপু ঝাঁজিয়ে বলে উঠলো,
—- নিজে কি করেছিলে সে কথা ভুলে গিয়েছো? এখন আবার আমার ভাইকে দোষারোপ করা হচ্ছে, চুপচাপ ঘুমাও, ওদেরটা ওরা বুঝে নিবে।

************************

অনেকক্ষন হলো রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদে
দাঁড়িয়ে আছে অনু। প্রত্যয় গিয়েছে ফ্রেশ হতে, তাই অনু একাই দাড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছে আপাতত ।ঠান্ডা হিমেল হাওয়ার ঝাপটা ওর ক্রন্দনরত মুখ মন্ডলে আঁচড়ে পরছে ক্রমশ।

হাওয়ার তালে তালে আধ ভেজা রেসমের মতো চুলগুলোও ইতি উতি উড়ে যাচ্ছে। বাড়ির সামনের আঙিনায় জ্বলতে থাকা মরিচ বাতির রোশনাইএ ছাঁদটাও আলোকিত। আকাশের উজ্জ্বল হাসি হাসি চাঁদখানা এতোক্ষণে মেঘের আড়ালে ঢাকা পরেছে। কালো মেঘের গা থেকে খসে খসে পরছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বাতাসের তোপে সেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি খুব একটা গায়ে লাগছে না যদিও।

বৃষ্টি ঝরা ফুটো আকাশের দিকে তাকিয়ে অনু আজ তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে, ভীষণ তৃপ্তিতে অজানা তারকারাজিদের উদ্দেশ্যে মনটা বারবার চিৎকার দিয়ে বলতে চাইছে,
—- শুনছো তোমরা, পৃথিবীটা এতোটাও খারাপ নয়, শুধু বদলে দেওয়ার জন্য একটা মানুষ প্রয়োজন, এই যা।

অনু যখন অদূরে আকাশ পানে চেয়ে মনের খুশিতে মন দিয়েই চিৎকার করছিল, ঠিক সেই মূহুর্তেই নিজের উন্মুক্ত বাঁকানো কোমড়ের খাঁজে শীতল দুটো হাতের স্পর্শে শিরশির করে উঠলো অনুর সর্বাঙ্গ। একটু কেঁপে উঠে অনু পেছনে ঘুরবে, তার ফুরসত দিলোনা প্রত্যয়,বরং আরও শক্ত করে ওর কোমড়টা চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো অনুকে,তারপর ওর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বললো,
—- তোমার ইমোশনের পাল্লায় পরে রাত তো শেষ হয়ে যাচ্ছে ম্যাডাম। এবার একটু ইমোশন টাকে সামলাও, আমি যে বেসামাল।

অনু সাদা মনে বললো,
—- রাত তো শেষ হবেই, রাত না শেষ হলে দিনের আলো ফুটবে কি করে শুনি?

প্রত্যয় অনুর কাঁধে টুকরো চুমু খেয়ে ভারী নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- আজকের রাতটা যে আমাদের বহু আকাঙ্খিত রাত জান , থাকনা একটু বেশি সময় ধরে এই আধার টুকু। ক্ষ’তি কি?

অনু নির্বাক, প্রত্যয়ের অবাধ্য স্পর্শে ওর গলা জড়িয়ে আসছে, শরীরের তোরনে তোরনে বয়ে যাচ্ছে শিহরণ জাগানো নাম না জানা এক সাইক্লোন। ও খুব করে চাইছে প্রত্যয়ের হাত দু’টোকে স্থির রাখতে কিন্তু পারছে না, প্রত্যয়ের হাতদুটো অবাধে বিচরণ করছে অনুর সমস্তটা জুড়ে। অনু কোনোমতে ছাঁদের পাঁচিলটা শক্ত করে দু’হাতে খামচে ধরে মাথা নুইয়ে রেখেছে। প্রত্যয় দু’চোখ বুঁজে অনুর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিতেই এক পর্যায়ে তীব্র সংকোচে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের বুকেই মুখ লুকালো অনু।

প্রত্যয়ের বোধ হয় আজ এসব লজ্জা টজ্জা পছন্দ হচ্ছে না, তাই অনুকে খুব একটা আস্কারা না দিয়ে ওর ঠোঁটের ভাঁজে নিঃসংকোচে নিজের আধিপত্য বিস্তার করলো প্রত্যয়,এরপর সেভাবেই অনুকে কোলে তুলে নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো ওদের সাজানো গোছানো চিলে কোঠার ঘরের দিকে। অনু বেশ কসরত করে প্রত্যয়ের ঠোঁট দুটো থেকে ছাড়া পেয়ে অস্ফুটে শুধালো,
—- কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন?

প্রত্যয় দ্রুত গতিতে পুনরায় অনুর অধর জুগলে অধর ডুবিয়ে হিসহিসিয়ে জবাব দিলো,
—- তোমার লজ্জা ভাঙাতে।

*************************************************

শেষ রাতের তীব্র বর্ষনে চারিদিক কর্দমাক্ত। আজকেও আবহাওয়া বেশ শীতল। হয়তোবা এই বর্ষা বর্ষা আবহাওয়াটা এবার বেশ কয়েকদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে।

স্টেট আমেরিকার মতো দেশ থেকে ফিরে পুরান ঢাকার এই ভাঙাচোরা পিচ ঢালা রাস্তা ধরে হাঁটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সায়রের। স্পঞ্চার শীপ থেকে পাওয়া পায়ের লাল সবুজ ট্যাগ লাগানো গুচ্ছি ব্র্যান্ডের জুতোটাও কাঁদায় মাখামাখি,যা দেখে এই মূহুর্তে এই কাঁদায় বসেই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে সায়রের।

চিপাগলি নিবাসী ওই ঝাঁজ ওয়ালা মেয়েটাকে কান ধরে টেনে এনে৷ এসব দেখিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,
— দেখ রাগীনির বাচ্চা, দেখ। তোর জন্য আমার লেটেস্ট ব্র্যান্ডের জুতোটার মান ইজ্জত কাঁদায় ডুবে গড়াগড়ি খাচ্ছে , তবুও রাগ দেখাবি? কথায় কথায় মুখ ঝামটি দিবি? কিসের এতো তেজ তোর? এই টুকুনি চুনোপুঁটির মতো শরীর আবার আমাকে তেজ দেখায়।হুহ!

একমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে চিপাগলি নিবাসী সেই রাগীনির বাড়ির সামনে এসেই থামলো, তা টের পায়নি সায়র নিজেও যখন। গন্তব্য যখন এখানেই তাহলে জানা অজানা দিয়ে কিই বা আসে যায়?

সায়রের ও যায় আসলো না। ও আজ আর উঁকি ঝুঁকিও দিলোনা, অনেকটা নিশ্চিত হয়েই হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে গিয়ে বাইরের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে উঠে গেলো নীলিমাদের শ্যাওলা পরা ছাঁদে।

আজকে আর নীলিমা নাচ করছে না, ঘুঙুর সমেত ছাদে এলেও সেগুলো আপাতত অযত্নে ছাদের এককোনায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, আর নীলিমা ছাদের পাঁচিলে কনুই দিয়ে ভর করে দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে রেখেছে, দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক অস্থির ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে মেয়েটা।

নীলিমা কি নিয়ে ভাবছে তা বোধগম্য হলোনা সায়রের, তাই ও পেছন থেকে আচমকা ডেকে উঠে নরম গলায় বললো,
—- নাচবে না আজ আর? আমিতো দেখতে এলাম।

নীলিমা চমকে উঠলো না, তরিঘরি করে পেছনেও চাইলো না, ভাবটা এমন যেন ও সায়রের উপস্থিতি টের পেয়েছে। বাতাসের সাথে ভাসমান সায়র সায়র গন্ধটা নীলিমা বুঝতে পেরেছে। আদতে তেমন কিছু কিনা কে জানে?
তবে নীলিমা আপাতত আস্তে ধীরে ঘুরে তাকিয়ে চোয়ালটা শক্ত করে সায়র কে বলে ওঠে,
—- কি চাই, আবার কেন এসেছেন?

সায়রের গায়ে লাগলো না নীলিমার চরম তিক্ত কথাগুলো, ওর এতোদিনে বোঝা হয়ে গিয়েছে অর্ণব কেন এতো নি’র্লজ্জ।

সায়র নিজেও এই মূহুর্তে অর্ণবের পন্থাটাই অবলম্বন করলো, নীলিমার কথাতে ভ্রুক্ষেপ না করে এগিয়ে গিয়ে নীলিমার সামনে দাড়িয়ে বুকের বাম পাশে হাত রাখলো। অতঃপর কোনোরূপ কপটতা না করেই কাতর কন্ঠে বললো,
—- কেন যেন সকাল থেকে বুকটা জ্বলে যাচ্ছিল, অযথাই দম আটকে আসছিল,চোখ দুটোও দারুন তৃষ্ণার্থ, কেন যেন মন বলছিল তোমার দেখা পেলে সব অসুখ এক নিমিষে সেরে যাবে, তাই সবার অগোচরেই তোমার কাছে ছুটে এসেছি নীলিমা। কেউ জানেনা আমি এখানে।

সায়র নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে এই প্রথম নীলিমার নামটা উচ্চারণ করলো, যা নীলিমাকে অবাক করে দিতে সক্ষম।

নীলিমা অবাক হয়ে চট করে সায়রের চোখ চোখ রাখলে, সায়র আবার বলে,
—- চেয়ে দেখো, এখন আমি পুরোপুরি ফিট, আই থিংক আমার অসুস্থতার মোক্ষম কারন টা ই তুমি, তোমাকে বোধ হয় আমার লাগবে।

সায়রের কথায় নীলিমার কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাজ পরলো, ও তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন ছু’ড়ে শুধালো,
—- লাগবে মানে? আমি কি জড়বস্তু নাকি? আর তাছাড়া আমার….

নীলিমার কথাকে মাঝপথে আটকে দিয়ে সায়র শান্ত চোখে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললো,
—- আমি বলেছি লাগবে, তার মানে লাগবে, তুমি আমাদের ফ্রেন্ডস জোনটাকে যতটা শান্ত আর নিরিবিলি ভাবো আমরা ততটাও সভ্য প্রজাতির নই। সব কটার ব্যাকরাউন্ড উত্তপ্ত কয়লার মতোই দ’গ্ধ। খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে এসোনা পু’ড়ে যাবে তাহলে।

নীলিমা বুঝলোনা সায়রের কথার আগামাথা, তবে সায়র যে বেশ সাবলীল ভাষায় শান্ত স্বরে ওকে হু’মকি দিয়েছে সেটা খুব ভালো মতোই ধরতে পেরেছে ও।

এই মূহুর্তে কারও মুখে রা নেই, দুজনই দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে নিরবতা পালন করছে ওরা, হয়তোবা দু’জন দুজনার চোখের ভাষা পড়ে ফেলার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।

তবে ওদের এই দীর্ঘক্ষনের চোখাচোখির অবসান ঘটিয়ে হুট করেই ছাঁদে চলে আসে নীলিমার আব্বাজান তাইয়েব জামান।

তিনি ভেতরের সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে উঠতে হাঁপানো সুরে বলেন,
—- আম্মাজান,বাজার নিয়া আইছি, রাতের খাওন টা….

তিনি বাক শক্তি হারিয়ে ফেললেন তখন যখন দেখলেন, অচেনা এক সুদর্শন যুবক তার ছাদে দাঁড়িয়ে তার দিকেই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে এই মূহুর্তে ।

তাইয়েব জামান মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁক গলিয়ে সায়রকে আগা গোড়া পরখ করে গম্ভীর গলায় বললেন,
—- ওই মিয়া তুমি ক্যাঠা? এই মহল্লায় তো তোমারে আগে দেখি নাই। মাগার চেনা চেনা লাগতাছে।

সায়র তাইয়েব জামানের কড়া গলার প্রশ্নে জবাব দেওয়ার আগে নীলিমার দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের সুরে শুধালো,
—- এই তোমার আব্বাজান?

নীলিমা হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে, সায়র আবার তাকালো তাইয়েব জামানের দিকে,
সবুজ পাঞ্জাবি পরিহিত ছিপছিপে গড়নের লম্বা চওড়া সুঠাম দেহী এক সভ্য পুরুষ, চোখ মুখে কিঞ্চিৎ গাম্ভীর্য আর রাশভারি ভাব থাকলেও, এ মোটেও সায়রের ভাবনার ধারে কাছেও নেই।

সায়র তো ভেবেছিল নীলিমার আব্বাজান নিশ্চয়ই পেট মোটা, গোঁফ ওয়ালা, কুচকুচে কালো দেখতে কোনো পালোয়ান হবে হয়তো। যে সারাদিন সাদা লুঙ্গি ধরে ধরে পান চিবোয়, আর একে ওকে ধরে মে’রে তক্তা বানিয়ে ছেড়ে দেয়।
কিন্তু এই লোকটাকে তো যথেষ্ট ভদ্রলোক মনে হচ্ছে, নাহ মিললো না। সায়র হতাশ, ভারী হতাশ। সেই হতাশা থেকেই সায়র মলিন মুখে অবিশ্বাসের সুরে ঠোঁট উল্টে আরও একবার প্রশ্ন করলো নীলিমাকে,
—- উনি আসলেই তোমার বাবা তো?

সায়রের কথায় এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো নীলিমা, তেঁতো গলায় বললো,
—- আশ্চর্য! এ আবার কেমন কথা? দেখছেন আমার আব্বাজান, তাও ভুলভাল বকে যাচ্ছেন?

—- ওই মিঁয়া, আমার লগে কথা কও তুমি? আমগো ছাঁদে কি কাম তোমার?

নীলিমার আব্বাজানের প্রশ্নে সায়র একটু গলা খাঁকারী দিয়ে বললো,
—- ইয়ে মানে আঙ্কেল, পানি খেতে আসছিলাম, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তো।

তাইয়েব জামান বুঝতে পারার মতো করে হালকা মাথা নাড়িয়ে বললেন,
—-অহ, এইডা আগে কইবা না? আহো তাইলে নিচে আইসা পানি খায়া যাও।

এরপর নীলিমাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,
—-আম্মাজান, মেহমানরে পানি দাও।

নীলিমা হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে, সায়রের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে গলা খাদে নামিয়ে বললো,
— আসুন।

নিচে গিয়ে সায়র সবার আগেই নীলিমার রুমে প্রবেশ করে, পুরো রুমটা গার্লি জিনিস পত্র দিয়ে ভরা। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সায়র বুঝতে পারে নীলিমার এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস অনেক। তার চেয়েও বেশি গোছানো আর পরিপাটি ওর রুম।

ছবি আঁকার ক্যানভাস ও রয়েছে রুমের এক কোনে, যেখানে সূর্যাস্থের অর্ধেক পেইন্টিং এখনো অসম্পন্ন। অসম্পন্ন ক্যানভাস দেখে সায়রের বোধগম্য হলো, দেওয়াল জোরা পোট্রেড গুলো তাহলে নীলিমার নিজের হাতেই আঁকা। মেয়েটা আসলেই ট্যালেন্টেড, এই পর্যায়ে এসে নীলিমাকে সূর্যের সঙ্গেই তুলনা করে বসলো সায়র, মনে মনে হাজারটা বাহবা দিয়ে বললো,
—- যেমন তেজ, তেমন তার গুণ। কিন্তু নীলিমার আম্মা কোথায়?

সায়রের মাথায় প্রশ্নটা আসতেই রুমে প্রবেশ করে নীলিমা, হাতে ছোট্ট ট্রে, তাতে একবাটি ক্ষীর আর এক গ্লাস পানি।

নীলিমা সামনে এসে দাড়ালে সায়র পানির গ্লাসটা নিতে নিতে বললো,
— ক্ষীর কে বানিয়েছে?

নীলিমা থমথমে মুখে উত্তর দিলো,
— আমিই।

তৎক্ষনাৎ পানির গ্লাস রেখে ক্ষীরের বাটিতে হাত দিলো সায়র, নীলিমা চেয়ে আছে এক ধ্যানে, সায়র গপাগপ করে ক্ষীর খেতে খেতে মৃদু হেসে বলে,
—– উমম!আমার লাইফের বেস্ট ক্ষীর এটা।

এবার নীলিমাও ঠোঁট কামড়ে সামান্য হাসলো, যা সায়রের দৃশ্যগত হওয়ার আগেই আবার উবে গেলো।

সায়র খেতে খেতে আবারও প্রশ্ন করে বললো,
—- আচ্ছা শাশুড়ী আম্মা, না মানে তোমার আম্মা কোথায়?

নীলিমা কোনোরূপ দুঃখ প্রকাশ না করেই স্বাভাবিক ভাবে বললো,
—- আম্মা নেই, আমার ছোট ভাইয়ের জন্মের সময়ই আম্মা দুনিয়া ত্যাগ করে, তারপর থেকেই আমি আব্বা আর নয়ন মিলেই আমাদের পরিবার। ওই জন্যই তো আমি দূরে কোথাও…

নীলিমা মাঝপথেই কি ভেবে যেন থেমে গেলো। সায়র ওকে আস্বস্ত করে বললো,
— হ্যা বলো?

নীলিমা পুনরায় বলতে আরম্ভ করে,
—- ওই জন্য আব্বা আর ভাইকে ছেড়ে আমি দূরে কোথাও যেতে পারবো না, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমার মহল্লারই.. এতো কাছাকাছি দেখেই বিয়ের প্রস্তাবে আর না করিনি।

—- হয়েছে থাক, বিয়ের পরে এতো বাপের বাড়ি নিয়ে ভাবলে হয়না, দরকার পরলে তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠী আমেরিকা নিয়ে যাবো।

— কিহ!!

ক্ষীরের বাটিটা ঠাস করে ট্রেতে রেখে, কথাগুলো বললো সায়র, অতঃপর ঢকঢক করে গ্লাসের পানিটুকু শেষ করে উঠে দাড়িয়ে নীলিমাকে শুধালো,
—- তোমার আব্বাজান কোথায়?

নীলিমা আঙুল উঁচিয়ে বসার ঘরের দিকে দেখিয়ে দিলে, সায়র বড়বড় পা ফেলে তাইয়েব জামানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

তাইয়েব জামান তখন পেপার পড়ায় ভীষণ মনোযোগী, সায়র তার হাত থেকে ছো মে”রে পেপারটা টেনে নিয়ে পাশের টি-টেবিলে রেখে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে করতে মনেমনে বললো,

—- খুব শীঘ্রই আপনাকে বড়সড় একটা ঝটকা দিতে যাচ্ছি আব্বাজান, আশা করি আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দান করবেন,আমিন।

চলবে……

সবাই বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করে যেও, তাহলে নেক্সট পার্ট কালকেই ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here