#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৪
পৌষ’র কাঁধে হাত রাখতেই কিছুটা ছুঁড়ে ফেলে পৌষ। তৌসিফ দমলো না বরং চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— পৌষরাত? কি হয়েছে? বাসার কথা মনে পরছে?
বলতে বলতে শোয়া থেকে এইবার উঠে গেলো তৌসিফ। সবেই বিছানায় গা দিয়েছিলো তখনই কেন জানি মনে হলো পৌষ ঘুমায় নি। তখনই শিওর হতে কাঁধে হাত রাখে।
টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালাতেই হলদেটে আলোয় মাখোমাখো হলো কক্ষ। তৌসিফ পৌষ’র দিকে তাকিয়ে এবার ওর বাহু টেনে ধরলো। বসানোর চেষ্টা করতেই এবার হু হু করে কেঁদে উঠলো পৌষ। ওর চঞ্চলা মনটা মানতে পারছে না। কিছুতেই না। হোক তার কোন আশা নেই তৌসিফ থেকে তাই বলে রাত বিরাতে তৌসিফের এহেন সোহা’র রুমে যাওয়াটা ও মানতে পারছে না। স্বভাবসুলভ ই নারী মন। তার মধ্যে পৌষ’র মনটা অতি নরম। মাতৃ সুলভ। সেখানে ছোট খাট অনুভূতি রোজ খেলা করে। এরমধ্যে সবচাইতে বড় বন্ধন। পবিত্র এক বন্ধনে আটকা দু’জন। হয়তো কোন আবেগ তাদের এই বিয়েকে ঘিরে নেই। তবুও প্রাকৃতিক ভাবেই টান সৃষ্টি হয়ে যায়।
পৌষ’র কান্নায় তৌসিফ নিজেই ভরকে গেল। দুই হাতে ওর চোখটা মুছতে নিলেই পৌষ সরাতে চাইলো ওকে। এক প্রকার জোর করে চোখ মুছে দিলো তৌসিফ। অতি নরম স্বর বের হলো কণ্ঠনালী ভেদ করে,
— বাসার কথা খুব বেশি মনে পরছে জান?
–জান, প্রাণ, কুত্তা,বিলাই আমাকে ডাকতে হবে না। সরুন আমার সামনে থেকে।
কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে বললো পৌষ। তৌসিফ অবাকের উপর অবাক হলো। তবুও বউ’কে আদর করে বললো,
— আচ্ছা হানি একটু আগে না ঘুমালে? কি হয়েছে বলো।
এতটা ন্যাকা সাজা পৌষ’র হজম হলো না। রুক্ষ কণ্ঠে ঝরঝরে বললো,
— বর হওয়ার অধিকার দিয়েছিলাম আপনাকে। আপনি নেন নি। আমার সামনে ভালো সাজা বন্ধ করুন। আপনার আসল চেহারা পুরো এলাকা জানে। আমিও জানতাম। তবে আজ স্ব চোখে দেখলাম।
বলেই তৌসিফ থেকে দূরত্ব রেখে শুয়ে পরলো পৌষ। ফোঁস করে দম ছাড়লো তৌসিফ। দিনের বেলা সোহা’র কাছাকাছি যাওয়াটা একটু ঝামেলাকর তাই তো রাতে গেলো পৌষ ঘুমানোর পর। মেয়েটাকে গভীর ঘুমে দেখে গেলো অথচ কিভাবে জানি ধরা খেয়ে গেলো। বড্ড অসহায় অনুভব করলো তৌসিফ। এমনটা তো না হলে ও পারতো।
পাশে তাকিয়ে দেখলো পৌষ হয়তো ঘুমিয়েছে। নাক টানার আওয়াজ আসছে না মানেই ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা আজ কাঁদলো কেন? তৌসিফ’কে ভিন্ন নারীর রুম থেকে বের হতে দেখে? আচ্ছা সে তো জানে তৌসিফ আগে ও কোন নারীতে গভীর ভাবে মত্ত ছিলো। সেই নারী’র মাঝে বিচরণ করেছে। পিয়াসী’কে সে অতিরিক্ত ভালোবাসতো। এক ঘন্টাতে যে কতবার ফোন দিতো তার ইয়াত্তা নেই। বন্ধু মহলে মানুষ হাসাহাসি ও করতো ওকে নিয়ে। “বউ পা গলা” উপাধি পেয়ে ও কোনদিন নিজেকে ছোট করে নি তৌসিফ। সবসময় তার মনটা চাইতো তার পিয়ু’র কাছাকাছি থাকতে। মনে হতো যত দিচ্ছে তত ই বুঝি ভালোবাসা কম হচ্ছে। এত এত সুখ, প্রেম সে যাকে উৎসর্গ করলো দিন শেষে সেই নারীটা তার চোখে এক মুঠো বালি দিয়ে চলে গেলো। তৌসিফের ও উচিত ছিলো না তার পিয়ু’কে দেখিয়ে অন্য নারী’র প্রেমের সুধা পান করা?
____________________
সকাল সকাল চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে যায় তৌসিফে’র। রাতে দেড়ীতে ঘুমানোর ফলে মাথা টিস টিস করছে ওর। চোখ ভর্তি ঘুম থাকায় উঠে বসে ও একটু ঝুমছে ও। দুই হাতে চোখটা ডলে খুলার আগেই ওর কান সজাগ হলো। পৌষ’র গলা শুনা যাচ্ছে। কাউকে ধমকাচ্ছে। মস্তিষ্ক তড়িৎ প্রবাহের ন্যায় চটপট চলা ধরলো। ফট করে চোখ মেললো তৌসিফ। তারাতাড়ি নরম বিছানা ছেড়ে হাবিলদারের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ওর বউ যে সকাল সকাল গ্যাঞ্জাম পাকিয়েছে তা বুঝতে এক মিনিট ও লাগলো না। হুরমুর করে বেরিয়ে এলো তৌসিফ। পায়ে চপ্পল দেয়ার সময়টুকু র বড্ড অভাব। বাইরে আসতেই চমকালো তিনগুণ বেশি। মিনু’কে সমান তালে ধমকাচ্ছে পৌষ। মিনু মাথা নিচু করে ফুঁসে যাচ্ছে তবে কথা বলছে না। তখনই একটা সিল্কের নাইটি গায়ে ওরনা পেঁচিয়ে সোহা বেরিয়ে এলো। সবেই তার ঘুম ভেঙেছে বুঝা যাচ্ছে। মিনু তার আপাকে দেখে সাহস পেলো। সোহা আশেপাশে তখন ও দেখে নি। কপাল কুঁচকে ঘুমু কণ্ঠে ই বললো,
— চিল্লাচিল্লি কিসের সকাল সকাল? এটা বাসা না অন্য কিছু? কাল কত রাতে বাসায় ফিরেছে মানুষটা। ওনার কি ঘুম দরকার নেই?
তৌসিফ’কে অবশ্য দেখে নি সোহা৷ মিনু দৌড়ে ওর আপা’র কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। সোহা কপাল কুঁচকে বললো,
— তোকে বকেছে?
— হ্যাঁ আপা। অনেক বকেছে। গালি দিয়েছে।
আর কিছু বলার আগেই রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে পৌষ এগিয়ে আসতে নেয় মিনু’র দিকে। তৌসিফ বুঝে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে যে কোন সময়। তারাতাড়ি পেছন থেকে পৌষ’র পেট জড়িয়ে ধরে। তবে বিশেষ লাভ হলো না। পৌষ রেগে আগুন হয়ে চিল্লিয়ে উঠলো,
— মিথ্যুক। মিথ্যা বলে। কখন গালি দিয়েছি তোকে। শা’লী এদিকে আয়। দেখ তোকে কি করি। তোর মুখ খামচে দিব একদম। ওই বান্দরের মতো চুল একদম টেনে উপড়ে দিব৷ চিনিস আমাকে? তোর চৌদ্দ গুষ্টি’কে ঘোল খায়িয়ে ছাড়ব।
সোহা হা করে তাকিয়ে রইলো। তৌসিফ পৌষ’কে দুই হাতে নিজের সাথে মিশিয়ে উঁচু করে নিলো কিছুটা। পৌষ’র পিঠটা ওর বুকে ঠেকলো। ওভাবেই ওকে নিয়ে রুমে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। সমান তালে হা পা ছুঁড়ে যাচ্ছে পৌষ। তৌসিফ না পেরে ওকে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো। নিজেও ওর পাশে শুয়ে ওর দুটো হাত শক্ত করে নিজের হাতে ধরে নরম স্বরে বললো,
— এমন করছো কেন পৌষরাত? কি করেছে মিনু?
রাগে কাঁপতে কাঁপতে পৌষ বললো,
— সকালে আমাকে দেখে হাসছিলো। কিছুই বলি নি। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সামনে ঘুরঘুর করতে করতে কাকে জানি বলছিলো যে নতুন মানুষের সুখ নেই। সকালে গোসল করে না। ও যে আমাকে বলছিলো তা আমি বুঝি নি? ওর ঐ চাপা ভেঙে দিব আমি। কত্ত সাহস! আগেও এমন করেছে। কিছুই বলি নি। কাজের মেয়ে এত উড়াউড়ি কিসের?
পৌষ’কে অবাক করে দিয়ে ওর দুই গালে হাত রাখলো তৌসিফ। ঠিক দ্বিতীয় দিনের ন্যায় গালে আদর দিতে লাগলো। পৌষ প্রশয় দিলো না। ঝটাক করে হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
— রাতে মন ভরে নি না? আচ্ছা রাতে কেন যেতে হবে এখন ই যান না। কে আটকালো? আমি? রাতে গেলে যা করেন দিনের আলোয় করতে ভয়…..
আচমকা তৌসিফের থাবার শিকার হলো পৌষ। ওর তোঁতা পাখির মতো মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো। তৌসিফের প্রচন্ড রাগ হলো তবে দমন করলো ও। পৌষ’র কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— যা ভাবছো ভুল। আর কি শুনতে চাও।
— মানুষের কথা মিথ্যা না।
— শুনা কথায় কান দিও না।
— চোখে দেখা মিথ্যা নয়।
— মাঝে মধ্যে হয়।
— সোহা কাজের মেয়ে। এত কিসের ক্ষমতা ওর? কেন এত নাক গলায় সব কিছুতে? কেন?
— এসবে মাথা ঘামিও না পৌষরাত।
— একশত বার ঘামাব।
— পৌষরাআআআত।
টেনে টেনে পৌষ নাম নিয়ে মুখটা নামিয়ে ওর থুতনিতে চুমু খেলো তৌসিফ। ঝনঝন করে উঠলো পৌষ’র দেহটা। এই লোকের এই ছোঁয়া ওর সহ্য হয় না। তৌসিফ নিজেই সরে গেলো বটে। ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো,
— আমি আসলে বেরুবো একসাথে।
কথা বুঝি শুনে পৌষ। তরতর করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। বের হতে হতেই দেখা মিললো সোহা’র। পৌষ একটা মুখ ঝামটা দিয়ে সোজা কিচেনে ঢুকলো৷ বুয়া তখন পরটা বেলছেন। পৌষ নিজে পরটা ফ্রাইপ্যানে দিয়ে বললো,
— ঘি কোথায়?
বুয়া যেন ভুত দেখার মতো চমকালো। কখনো মালিকরা রান্না ঘরে পা রাখেন না৷ চমকানো টা বড়ই স্বাভাবিক। বুয়া কিছুটা তোতলানো গলায় বললো,
— আ আপনি? আমি করে দিচ্ছি নতুন বউ। আপনি টেবিলে বসুন।
— কেন? আমি করতে পারি তো।
— মামা দেখলে রেগে যাবেন। আপনি….
— আপনার মামা’র কাঁথা পুড়ি আমি।
বুয়া’র যেন ঘাম ছুটে গেলো। চাকরিটা ছুটে যাবে কি তাহলে?
পৌষ তাগাদা দিতেই কিশোরী মেয়ে টা ঘি’য়ের বোয়ামটা বের করে দিলো। চামচ ভরে ভরে ঘি দিয়ে পরটা ভাজছে রোদ। মুহুর্তে ই যেন ঘ্রাণে মৌ মৌ করে উঠলো রান্না ঘর সহ পুরোটা ড্রয়িং রুম।
বুয়াদের সাথে অতি সহজ গলায় কথা চালালো পৌষরাত। বেচারীরা ভয় পাচ্ছে তা চেহারার স্পষ্ট। তাদের এত আতঙ্ক বুঝে আসলো না পৌষ’র। মেজাজ ওর কিছুটা ফুরফুরা হলো। সেই ফুরফুরা মেজাজটাকে ঝুরঝুর’রা করতে হাজির হলো সোহা। এসেই নাক চেপে ধরে বলে উঠলো,
— এসব কি রান্না হচ্ছে এখানে? সকাল সকাল এত ভারী খাবার কেউ খায় না এখানে।
— এখন খাবে।
পৌষ তীক্ষ্ণ গলায় বললো। সোহা সরল চোখে তাকিয়ে বললো,
— এসব এখানে খাওয়া হয় না।
— বললাম তো এখন খাবে।
— আনহেলদি খাবার তুমি খাবে খাও। বাকিদের জোর করছো কেন?
পৌষ দাঁত কটমটালো। চোখ রাঙিয়ে তাকালো এহেন ভাবে যেন সোহা সহ ওর মাথা ফাটিয়ে দিবে। সোহা অতটুকু মেয়ের এইরুপ চাহনি দেখে চমকালো। ভরকালো। পৌষ দাঁত চেপে বললো,
— কাজের মেয়ে কাজের মেয়ে’র মতো থাকার চেষ্টা করবেন। আমার উপর কথা বলবেন না৷ আমার যা মন চাইবে রান্না করব। মন চাইলে থাকবেন নাহয় অন্য কোথাও চাকরি দেখুন৷ এই বাড়ীতে কাজ করতে হবে না। এমনিতে গতকাল রেস্ট নিয়েছেন কিছু বলি নি আজ থেকে কাজে হাত লাগান। যত কাজ শরীর তত চাঙ্গা। আর একটা কথা ঐ রংঢং এর নাইটি পরে সকাল সকাল রুম থেকে বের হবেন না। কুরুচিপূর্ণ লাগে।
সোহা এতটাই শক্ড হলো যে বাক্য হারিয়ে ফেললো। কোন কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না। ওখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতেই পৌষ এবার যথেষ্ট উঁচু গলায় বললো,
— কি হলো? বের হন!
সোহা বের হলো ঠিক ই তবে নিজের রুমে গেলো না। ও সোজা ঠুকলো তৌসিফের রুমে। তৌসিফ মাত্র ই বের হচ্ছিলো। সোহা’কে দেখেই দাঁড়ালো। বিরক্ত গলায় বললো,
— রাতে না কথা হলো। এখানে কি করছো?
সোহা’র চোখ ভর্তি পানি। তৌসিফে’র দিকে তাকালো ও। তৌসিফ ওর চোখে পানি দেখে ও তেমন কিছু বললো না। বের হতে নিলেই সোহা বললো,
— আপনার এই বউ আমাকে পদে পদে অপমান করে যাচ্ছে। আমি নাকি কাজের বুয়া। আমাকে বলছে কাজ করতে। আমার পোশাক নিয়ে ও কথা বলেছে। এমনকি আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।
তৌসিফে’র গলা বড়ই শান্ত শুনালো,
— অভিযোগ করার সুযোগ দিচ্ছো কেন?
— আপনি…….
— সু। গো নাও সোহা।
সোহা দুই পা এগিয়ে আসলো। তৌসিফ ওকে সাইড কেটে বেরিয়ে এলো। সোহা’র চোখ দিয়ে পানির বিন্দু কণা গড়ালো। আঙুলের সাহায্য তা মুছে ফেললো সোহা। মিনমিন করে বললো,”এই দুই পয়সার মেয়ে’কে আমি দেখে নিব”।
.
তৌসিফ রুম থেকে বেরুতেই ঘ্রাণে ওর পেট ভরে গেলো যেন। একবার গলা উঁচু করে ডাক ও দিলো,
— পৌষরাত?
পৌষ অবশ্য উত্তর দিলো না। খনিক পরই হাতে প্লেট নিয়ে এগিয়ে এলো। পৌষ’র নাকটা ঘামা ঘামা। মেয়েটা রান্না ঘরে গিয়ে ঘেমে উঠেছে। ওকে বলার সুযোগ না দিয়েই তৌসিফ ডাকলো বুয়া’কে।
ভয়ে ভয়ে বুয়া ছুটে আসতেই তৌসিফ ধমকে উঠলো,
— তুমি থাকতে পৌষরাত কেন কিচেনে বুয়া? এত টাকা বেতন কেন দিচ্ছি? যদি আমার বউ ই রান্না করে তো তোমরা কি করো?
তৌসিফে’র ধমক খেয়ে বুয়া মাথাটা নামিয়ে নিতে না নিতেই পৌষ ফোঁস করে উঠলো যেন সর্বদা ই প্রস্তুত সে লড়াই করার জন্য।
— কি সমস্যা আপনার? ওনাকে কেন ধমকাচ্ছেন? আমি একবার ও বলেছি উনি আমাকে ওখানে যেতে বলেছে? যাকে ধমকানোর তাকে তো টু শব্দ ও বলেন না। দূর্বলের প্রতি ই অবিচার করে যাবেন আপনি।
কাঠখোট্টা গলায় কথাগুলো বলে হাতে থাকা কাঁচের প্লেট’টা সজোরে টেবিলে রেখে পৌষ রুমে চলে গেলো। তৌসিফ দেখলো সেখানে গরম গরম পরটা রাখা। ঘ্রাণে ই লোভ জেগে উঠলো ওর।
চাইলে ও খেতে পারলো না তৌসিফ। বউ রেগে আছে। উঠে রুমে যেতেই দেখলো পৌষ ব্যাগ গোছাচ্ছে। তৌসিফ ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
— চলো খাবে।
— খাব না।
— পৌষরাত।
পৌষ ঘুরে দাঁড়ালো। দাঁত খিটমিট করে বললো,
— কি পৌষরাত পৌষরাত সারাদিন? রাত হলে তো ঐ ছেড়ীর কথাই মনে পরে আপনার। যান ওর কাছে। কি মনে করেছেন দেখি নি একটু আগেও যে আমার নামে বিচার দিতে এসেছিলো। একটা কাজের মেয়ে হয়ে মালিকের বেড রুমে যখন তখন ঢুকে যায় এরমানে কি? নোংরামো তো মানুষ ঘরের বাইরে করে অথচ এই প্রথম দেখলাম মানুষ ঘরের মধ্যে দিন দাহারে, রাতের অন্ধকারে নিজ ঘরে নোংরামি করে।
তৌসিফ বরাবরই রাগ সামাল দিতে ব্যার্থ হচ্ছে। পৌষ’র মুখটা আচমকা চেপে ধরে বললো,
— বেশি বলছো।
পৌষ নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। বরাবরই ছটফট করা ওর স্বভাব। এবারেও ব্যাতিক্রম ঘটলো না। তৌসিফের হাসি পেলো নিজের উপর। পৌষ’র মুখটা আলতো করে ধরলো এবার। দুই গালে হাত রেখে বললো,
— তুমি আমাকে কতটা রাগিয়ে দাও হানি।
পৌষ তাচ্ছিল্য করে বললো,
— কাপুরুষের মতো রাগ হলে বউ’কে সিগারেটের ছেঁকা দিবেন। সমস্যা তো নেই।
— সেদিন দোষ টা কার ছিলো?
পৌষ’র ঠোঁটে তাচ্ছিল্য’র গাঢ় হাসি দেখা গেলো। তৌসিফ চট জলদি ওর হাত দুটো ধরে চোখে চোখ রেখে বললো,
— আজ পর্যন্ত এই তৌসিফ তালুকদার এতটা অপমান হয়নি যতটা তুমি করছো। রোজ করছো।এখন ও বুয়াদের সামনে করলে। আমি কিন্তু রাগ করছি না।
— ওমা সে কেন? কোথায় আপনার সিগারেট? দিন লাইটার জ্বালিয়ে দেই। আমাকে ছেঁকা দিন। পৌষ’র তো শরীর মাংসে গড়া না। আমার কোন ব্যাথা লাগে না।
বলেই তৌসিফের পকেটে হাত দিলো সিগারেটের খোঁজে। তৌসিফ হাতদুটো ধরে থামালো। গাঢ় কণ্ঠে বললো,
— আর হবে না।
— আপনি না সকালে বললেন আমি যা ভাবি তা ভুল। তাহলে আমাকে বিশ্বাস করাতে সোহা আর মিনুকে বাসা থেকে বের করে দিন।
তৌসিফ কথা বললো না। একটু সময় নিয়ে বললো,
— আমি ওয়াদাবদ্ধ পৌষরাত।
পৌষ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তৌসিফ’কে ধাক্কা দিয়ে বললো,
— আপনি যে একটা বুদবুইদা শয়তান তা আমি আগেই জানি।
— হোয়াট! এসব কেমন শব্দ পৌষরাত?
— বুদবুইদা মানে আপনি। যার ভেতরে ভেতরে, রগে রগে শয়তানি। মেয়েবাজ লোক। ঐ **** হচ্ছে বড় খারাপ। শা’লী’কে ধরে টাকলা বানিয়ে দিতে মন চায়। চুলে ফ্লিপ মা’রে আমার সামনে।
তৌফিক ওর মুখটা হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলে,
— এসব গালি কে শিখায় তোমাকে? হোয়াট ইজ দিস পৌষরাত? তুমি গালি দাও কেন?
পৌষ নিজের মুখটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— ওহ ওই *** আকাম কুকাম করবে তা দোষ না। পৌষ গালি দিলে দোষ। এখন ওর সামনে গিয়ে গালি দিব।
বলেই বের হতে নিলো পৌষ। তৌসিফ ক্লান্ত হলো। সকাল থেকে এই মেয়ে আজ জোশে আছে। কোন দুঃখে যে গতরাতে ঐ রুমে গেলো? নিজের কপালটা দেয়ালে ঠুকতে মন চাইছে এখন৷ পৌষ’কে বহু কষ্টে আটকে শান্ত স্বরে বললো,
— জান আমার,প্লিজ। এখন থামো। চলো খাব এখন। তোমার শক্তি হবে তাহলে। শক্তি পেলে আরো ভালো মতো চুল ছিড়তে পারবে।
পৌষ থামলো বটে। টেবিলে খেতে বসলেই পৌষ তৌসিফের প্লেটে গরুর বট ভুনা আর গরম ঘিয়ে ভাজা পরটা তুলে দিতেই সোহা বললো,
— এসব খেয়ে পরে পেটে সমস্যা হবে। আনহেলদি খাবার।
পৌষ রসিয়ে বললো,
— ওরে সোনা, তোমার এই আউলা প্রেমে’র বাউলা বাতাস অন্য বেটাকে করো যাও। এই ব্যাটা’কে বাতাস করার জন্য আমি আছি।
তৌসিফ শুনেও শুনলো না কিছু। এই গরম পরটা আর বট ভুনা আজ বহু বছর পর খেলো ও। আগে মা খাওয়াতো। তিন ভাই বোন একসাথে গোল হয়ে বসে খেতো। এখন খাওয়া হয় না৷ কুরবানিতে এত এত গরু কুরবানী করার পরও বট খাওয়া হতো না। বুয়ারাই খায়। আজ খেয়ে অনেক ভালোলাগা কাজ করলো। একসাথে পাঁচটা পরটা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো তৌসিফ। পৌষ একটাই এখনও শেষ করতে পারে নি। তৌফিক ভাবলো এই মেয়ে তো ততটা খায় ও না অথচ তেঁজ দেখো যেন সবাইকে চিরে ফেলবে। পারলে কখন জানি তৌসিফ’কেই খেয়ে নেয়।
#চলবে…..
আমার ই-বুক গুলোর লিংক কমেন্টে। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।