#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪
ঠ্যাটার মতো রুমের এক কোণায় বসে আছে পৌষ। গতরাত থেকেই কিছুটা ভয়ে ভয়ে আছে ও। ভয়ংকর এক বাসর রাত কাটিয়ে উঠলেও এখনও স্মৃতিগুলো ভুলতে পারে নি। ভাবতেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠে যেন৷
গতরাতে যখন তৌসিফ তালুকদার ওর আঁচলে হাত দিলো তখনই পৌষ ভেবে নিয়েছিলো তার ব্যাচেলর জীবনের ইতি বুঝি ঘটলো ঘটলো। না ভাবার কোন কারণ ও ছিলো না। তৌসিফ বিয়ের পরই পৌষ’র কোমড়ে চেপে ধরেছিলো৷ তার হাতের ছোঁয়াগুলো পৌষ মানতে পারে নি। না কোনদিন পারবে। নোংরা এক পুরুষ এই তৌসিফ তালুকদার। গতরাতে নোংরামি করা তার নিয়ত আছে কি নেই তা বুঝবে কিভাবে পৌষ? সে কি থেকেছে বা কাছাকাছি কোন খবর জানে? ভাসা ভাসা খবর পুরো এলাকাবাসী জানে তৌফিক তালুকদার কেমন। কাজের মেয়ের সাথে এর সম্পর্ক আছে কথাটা ভাবতেই ঘৃণায় গা রি রি করে উঠে পৌষ’র। এমন জঘন্য, চরিত্রহীন এক পুরুষের বউ সে। তিন কবুল বলে নিজের জীবনে তাকে জড়িয়েছে পৌষ। হোক রাগ করে, অভিমান করে কিন্তু বিয়েটা তো সত্যি। জীবনের সব চাইতে বড়তম সত্যি। এই সত্যি ললাট থেকে পৌষ কোনদিন মুছতে পারবে না। আমৃত্যু সকলে জানবে তৌফিক তালুকদারের বউ পৌষরাত হক পৌষ।
এমন একজন পুরুষের বউ ও যে কি না তার ঐ নোংরা হাতে কত নারীরে ছুঁয়েছে ইয়াত্বা নেই এর। আগের বউ নিশ্চিত এসব কারণেই ছেড়ে চলে গিয়েছে। এছাড়া ও কোন কারণ পৌষ দেখে না। রুচিহীন পুরুষ।
গতরাতে আঁচলে হাত দিয়ে বেহায়ার মতো কতটা স্বাভাবিক ভাবে বললো,
— আমি সাহায্য করি পিন ছুটাতে। একা পারবে না।
ক্যান রে ভাই? পৌষ কি বলেছে তোকে নলার মতো ওকে সাহায্য করতে? পৌষ’র কি হাত নেই? তুই ক্যান চাইবি সাহায্য করতে? যা তোর কাজের মেয়ে’কে সাহায্য কর পিন ছুটাতে।
কথাগুলো মনে মনে বলে পৌষ সরে দাঁড়ালো। তৌসিফে’র মোটেও ভালো লাগলো না ব্যাপারটা। সে বিয়ে করে বউ এনেছে। বউয়ের প্রয়োজন তো সব তাকেই দেখতে হবে। এক ভুল মানুষ কতবার করে? পৌষ’কে হাত ছাড়া কোনদিন ই করবে না সে। ভালোবাসা এখনও জন্ম নেয় নি পৌষ’র প্রতি। কোন অনুভূতি ও এখনও জাগ্রত হয় নি। এটাই স্বাভাবিক। মানসিক টান এত তারাতাড়ি তো আর এসে যায় না৷ মানুষের সময় লাগে। সে সময় নিবে। মানুষ বলে এক দেখায় প্রেম হয়েছে। তৌসিফের কাছে এটা মিথ্যা মনে হয়। এক দেখায় প্রেম হয় না। এক দেখায় হয় চাহিদা। আকাঙ্খা। তীব্র ভাবে কাছে টানার অদম্য এক উচ্ছাস। সেটা ভালোবাসা নয়৷ ভালোবাসতে হলে আগে মানুষটাকে জানতে হবে। তাকে চিনতে হবে। পছন্দ অপছন্দ, চেনাজানা, কিছুটা মেলামেশা, কিছুটা সময় তাকে একাকী মনে করা। অতঃপর ই প্রেম, ভালোবাসা৷ এই ভালোবাসা থেকেও গভীর ভালোবাসা তৌসিফ তালুকদার বেসেছিলো। সেই ভালোবাসা তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে গিয়েছে।
নাম মাত্র স্বামী বলেই তৌসিফ চেয়েছিলো পৌষ’কে সাহায্য করতে। কিন্তু পৌষ ভেবেছিলো ভিন্ন কিছু। ও নিজের আঁচল টেনে সরিয়ে ভীতু অথচ রাগী গলায় বলেছিলো,
— আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনার ছোঁয়া আমার ঘৃণা লাগে।
ব্যাস তৌসিফ তালুকদার ক্ষেপে যাওয়ার জন্য এই দুটো লাইন ই যথেষ্ট ছিলো। লাল দুটো চোখ দিয়ে যখন তাকালো পৌষ’র দিকে তখন যেন পৌষ’র প্রাণ পাখি উড়ে পালালো যেন৷ তৌসিফ ক্ষিপ্ত হাতে পৌষ’র আঁচলটা টেনে এক হাতে পেঁচিয়ে নিলো। চোয়াল শক্ত করে বলেছিলো,
— স্বামী’র ছোঁয়া ভালো লাগে না তাহলে কারটা লাগে? ঐ বখাটে প্রেমিকের টা?
হতবাক, অবাক পৌষ বলদের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু বলার মতো ছিলো না তার। এই সুঠাম দেহের মানুষটার সামনে নিছক দূর্বল এক প্রাণী সে। নিজেকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হওয়ার আগেই তৌসিফ দক্ষ হাতে একে একে সব পিন ছাড়িয়ে দিলো। কুচির পিনটা ও সে খুলে সবগুলো ড্রেসিং টেবিলে রেখে যেই না পিছু ঘুরলো ওমনিই দেখলো পৌষ শুয়ে পরেছে। মেয়েটা যে ভয়ে তখনও কাঁপছে তা টের পেয়েছিলো তৌসিফ। সে শুধু চেয়েছিলো পৌষ যাতে ফ্রেশ হয়। রিল্যাক্স হয়। তাহলে আরাম পেতো কিন্তু না এই মেয়ে একটা ত্যাড়া। তাকে সামাল দিতে তৌসিফের ঘন পল্লবে আবিষ্ট চোখ ই যথেষ্ট।
কথাগুলো ভাবতেই বুকটা এখনও ধুক ধুক করে উঠলো। তৌসিফের ঘুম এখনও ভাঙে নি। পৌষ পা টিপে বারান্দায় গেলো। বিশাল বড় বারান্দায় দেখা মিললো কিছু কমন আনকমন ফুলের চারা’র। হয়তো এমনি সময় এসব পৌষ’র নজর কাড়তো তবে আজ কাড়লো না। বিষাদে টাইটুম্বুর তার বুকটা ছটফট করে উঠলো কারো জন্য। মানুষটা কি তার পুষি’কে এখন মনে করছে না? সে কি ভালো আছে? তার হৃদয় পুড়া গন্ধটা ঠিক কেমন? পৌষ আর ভাবলো না৷ বাইরে তাকাতেই দেখলো রোডের টং দোকানটাতে দাঁড়িয়ে হেমন্ত। এক ধ্যানে সে দেখছে পৌষ’কে। চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো তার বুকে। সিগারেট হাতে সকাল সকাল এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছে হেমু ভাই তা বুঝলো না পৌষ। বুঝতে চাইলো না। শুধু তীব্র অভিমানে মুখ ফুলিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। হেমন্ত তখন আধ খাওয়া সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে রইলো। তাদের পৌষ টা এভাবে এলোমেলো হয়ে আছে কেন? তাকে কি রাতে কেউ নতুন পোশাক ও দেয় নি? মুখটা এত মলিন কেন? কেউ বুঝি জানে না তাদের পৌষ সারারাত একটু একটু খায়। কেউ কি জানে ওর যে আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি আছে? ওর যে মাথা ঘুরায় একটু পর পরই।
___________________
তৌফিক উঠলো সকাল দশটা নাগাদ। আড়মোড়া ভেঙে পাশে উঠে বসতেই গলায় চুলকালো হঠাৎ। হাতে করে একটা লম্বা চুল আসতেই মনে পরলো আজ অনেক বছর পর কারো চুল এভাবে তার শরীরে পাওয়া গেলো। নিশ্চিত পৌষ’র চুল এটা। ওর খোঁজে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো পৌষ এক কোণায় গুটিয়ে বসে আছে। হঠাৎ এভাবে ওকে দেখে মায়া হলো তৌসিফে’র৷ শুকনো মুখটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খায় না অনেক ঘন্টা ধরে। মাথাটা কাত হয়ে থাকাতে বুঝা গেলো না ঘুম না সজাগ। তৌসিফ এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াতেই দেখলো চোখ বুজে আছে পৌষ। এক গালে হাত দিয়ে ডাকলো তৌসিফ,
— পৌষরাত।
কিছুটা লাফিয়ে উঠলো পৌষ। নিজের এতটা কাছে অর্ধ উন্মুক্ত তৌসিফ তালুকদারকে দেখে চমকালেও ওকে ভরকানোর সুযোগ দিলো না শরীর। দাঁড়িয়ে থাকা পৌষ ধপ করে বসে পরতেই তৌসিফ বাহু চেপে ধরলো। কপালে চিন্তার ভাজ দেখা দিলো। চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
— পৌষরাত? কি হয়েছে? আর ইউ ওকে? এই তাকাও আমার দিকে।
খালি পেটে মাথা ঘুরে উঠছে পৌষ’র। মনে হচ্ছে বমি এসে পরলো গলায়। ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমে ঢুকলো ও। পিছনে হাজির তৌসিফ ও। পৌষ’র লজ্জা লাগলো অচেনা এই লোকের সামনে বমি করতে। কে বলেছে পিছু পিছু আসতে? এখন কি বিয়ের পর বমি করেও শান্তি পাবে না পৌষ?
তৌসিফ নিজেই পৌষ’কে ধরে রুমে আনলো। দূর্বল পৌষ চাইলেও হাতটা ছাড়াতে পারলো না। এই লোকের ছোঁয়া তার সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,
— বিয়ের শাড়ীটা অনেক পছন্দ হয়েছে তোমার বুঝেছি। তাই এখনও পড়ে আছো। ইজেন্ট ইট আনকমফরটেবল?
লজ্জা পেলো পৌষ তবুও কথা বললো না। তৌসিফ আলমারির এক পার্ট খুলে বললো,
— তোমার জন্য এখানে কাপড় রাখা আছে। চেঞ্জ করো। আমি আসছি।
বলেই তৌসিফ বের হলো। পৌষ দেখলো আলমারি ভরা কাপড়। হাতের কাছের এক সেট কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকেই দুটো গালি দিয়ে পৌষ। কাপড়ের ভাজে গোপন কাপড় রাখা! হায় তওবা! সাইজ ও খাপে খাপ মাইনকার বাপ! কিভাবে জানলো এটা? কে বললো? চাচি বাদে তো কেউ জানে না। চাচিই কিনে দেয় এসব। এই লম্পট লোক কি তাহলে চাচিকে জিজ্ঞেস করলো এসবের সাইজ?
#চলবে….