#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৩
গাড়িতে যাবে না করতেই তৌসিফ এবার গম্ভীর কণ্ঠে ধমকালো। ড্রাইভার দরজা খুলতেই কাঁধের ব্যাগটা এক প্রকার ছুঁড়ে ভেতরে ফেললো পৌষ। রাগে গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকে আসতেই তৌসিফ নিজে ও ভেতরে ঢুকে ডোর লক করলো। মাঝ খানের সিটটা ফাঁকা পরে রইলো। এ যেন দুই কুলে ডেরা গেড়ে বসলো দুই জামাই বউ। কেউ কারো কাছে আসার তাগিদ দেখালো না। শুধু পৌষ একটু আকটু রেগে বোম হয়ে আছে। রাতে ওর প্রচুর ক্ষুধা লাগে। সারা রাত ঘুম হয় না। পেট মোচরায়। পেটের ভেতর থাকা ইঁদুর গুলো হাহাকার করে বলে,”কিরে পৌষ, কোথায় বিয়ে হইলো তোর? কোন হা ভাতে বড়লোক জামাই পরলো তোর কপালে যে রাতে তোর পেটে কিছু পরে না?”
ইঁদুরের কথার উত্তর খাবার দিয়ে দিতে পারে না পৌষ। হালকা পাতলা নগন্য লজ্জা করে ওর। কি একটা যা তা অবস্থা। পৌষ খাবার পায় না।
বাড়ীতে থাকাকালীন চাচি ওর জন্য রাতে খাবার পর কিছু বানিয়ে রুমে দিয়ে রাখতো। মাঝেমধ্যে যখন পৌষ একা কিচেনে যেতো কোথা থেকে জানি জৈষ্ঠ্য, চৈত্র হাজির হতো। অবাক করা বিষয় ইনি, মিনি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে রান্না ঘরে এসে দুই ভাইয়ের কোলে উঠে বসতো। এরা যে সজাগ পেতো কিভাবে পৌষ জানে না। শেষ রক্ষা অবশ্য হতো না। হেমন্ত ও হাজির হতো। পিহা ছোট ছোট হাতে আপা’কে সাহায্য করতো। ইন্সটেন্ট নুডলস চার পাঁচটা একবারে রেঁধে ওরা গুটিগুটি পায়ে সব ঢুকতো হেমন্তর রুমে। কাড়াকাড়ি মা’রামারি লাগতো ডিম নিয়ে। আহা। পারতো না র’ক্তারক্তি হয়ে যেতো। হেমন্ত ধমক না দিলে সেই মা’রামারির অন্ত থাকতো না। খেতে খেতে অবশ্য ইনি, মিনি ঘুমিয়ে যেতো। কত রাত পর্যন্ত জেগে জেগে গল্প করতো। হেমন্ত ওর ড্রয়ার ভরা পাপড়, চিপস রেখে যেতো। টানা কোন কালই ঘুমাতে পারতো না পৌষ।
খাবারের অভাবে হতাশার শ্বাস ফেলে পৌষ।
তৌসিফে’র কানে গেলো সেটুকু শ্বাস তবে বুঝলো না এর পেছনে থাকা কারণ।
তৌসিফে’র ধৈর্য কুলালো না। ও জানে ড্রাইভারের বুকের পাটা অতটাও বড় না যে পিছনে তাকাবে। লম্বা হাত বাড়িয়ে এক টানে পৌষ’র ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো ও। ঘটনা ঘটলো আলোর বেগে যা বাস্তবে সম্ভব নয়। পৌষ বরাবর ফিজিক্সে দূর্বল। তাই বুঝে উঠলো পারলো না এটা কি আদৌ ও আলোর বেগ ছিলো না অন্য কিছু। মানে হকচকাতে ও তো সময় লাগে মানুষের যা তৌসিফ ওকে দিলো না। হাত বাড়িয়ে পেছন থেকে কুশন নিয়ে দু’জনে র মাঝখানে একটা আরেকটা পৌষ’র পিঠের পেছন দিয়ে বললো,
— বুঝলাম না এত কমফোর্টেবল কারে তুমি এতটা ছটফট করছো?
পৌষ দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো। আপাতত ক্ষুধায় ওর জান আপ ডাউন করছে। এনার্জি লো হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এতসব সমস্যা’র কারণে তৌসিফের সাথে চাপা নাড়াতে পারলো না। এতে ও আফসোস হলো কিছুটা।
ভ্রুঁ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো তৌসিফ। ওর জানা চেনার মধ্যে পৌষ এতটা শান্ত ধাঁচের না। আজ সকালে ও তেঁজে টাইটুম্বুর ছিলো। হঠাৎ মুখে ব্রেক কষলো কেন তৌসিফ বুঝলো না। মেয়েটার শ্যামলা মুখটা একটু খানি হয়ে আছে। তৌসিফ একটু বুঝলো হয়তো বেশি ক্ষুধা লেগেছে।
ডান হাত দিয়ে পৌষ’র হাতটা মুখ থেকে নামিয়ে দিলো। মুখে বললো,
— দাঁত দিয়ে নখ কাটে না পৌষরাত।
ক্লান্ত গলায় ই পৌষ বললো,
— একশত বার কাটব। হাজার বার কাটব। ম’রে গেলেও মুখে হাত দিয়ে ম’রব।
তৌসিফ আড় চোখে তাকিয়ে বললো,
— দাঁত পরে গেলো কিন্তু কথা থামলো না।
পৌষ মুখ ভেঙালো। গাড়িটা থামতেই তৌসিফ বের হলো। পৌষ’র দিকে দরজা খুলে দিতেই ও কোনমতে বের হতে গিয়েই মাথা ঘুরে উঠলো। এটা স্বাভাবিক সময় তেও হয়। আজ এত সময় না খেয়ে থাকাতে একটু বেশি হচ্ছে। আয়রন ডেফিসিয়েন্সি থাকার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেও এমন মাথা ঘুরায়। তৌসিফ ওর বাহু চেপে ধরে কিছুটা উদিগ্ন গলায় বললো,
— কি হলো? পৌষরাত? আর ইউ ফিলিং লো?
মাথা নেড়ে নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিলো ও। গাড়ি থেকে তৌসিফ পৌষ’র ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
— চলো।
এত হাই ফাই জায়গাতে পৌষ সচরাচর আসে না। বছরে হয়তো তিন চার বার আসা হয়। হেমন্ত ঘুরাতে নিয়ে আসে। বাট ব্রেকফাস্ট করতে এত ঢং ওরা করে না। পৌষ মিনমিন করে বললো,
— পটাতে চায় আমাকে শা’লা।
“শালা” শব্দ টা অবশ্য শুনলো তৌসিফ। ভাবলো এই মেয়ে একটা চিজ। এ ভাঙলেও মোচকায় না সহজে। মুখে তার খই ফুটতে থাকে অল দ্যা টাইম।
বুক্ড করা এক রাউন্ড টেবিলে বসলো ওরা। ওয়েটার আসতেই তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,
— অর্ডার করো পৌষরাত।
— ঘি দিয়ে পরটা আর দুধ চা। চায়ে দুধ বেশি দিবেন।
ওয়েটার একটু তব্দা খেলো। তৌসিফ ইশারায় সাইডে যেতে বললেই ওয়েটার বিনয়ের সাথে বললো,
— ওকে ম্যাম। এনিথিং এল্স?
— নো ভাইয়া। ধন্যবাদ।
পৌষ’র মুখটা হাসি হাসি দেখালো। তৌফিক চমকালো। ওর বউ দেখি হাসে। তাও এই ওয়েটারকে দেখে। এর চাকরি না খেয়ে দিবে তৌসিফ? পৌষ নিজ থেকেই আবার বললো,
— গতবারের মতো আবার চা ফেলে দিয়েন না।
একটু লজ্জা পেলো বেচারা। এর আগে একবার চা ফেলে দিয়েছিলো ও। ম্যানেজার ধমকে ধামকে দেয়ার আগেই পৌষ বলেছিলো, “ওটা কোন ব্যাপার না। যে কারো হাত থেকে পরতে পারে।”
তৌসিফ বুঝলো পৌষ হয়তো আগে থেকে চিনে। তাই ছেলেটার চাকরি খাওয়ার কথা বাদ দিলো। আপাতত নাস্তা ই খাবে।
ওয়েটার যাওয়ার পরপর ই তৌসিফ ও উঠে গেলো। ওয়েটারের দিকে সোজা তাকিয়ে বললো,
— গরুর বটি আর এক্সটা ডিম সাথে একটা ফ্রুট সালাদ আর ফ্রেশ জুস দিয়ে যাও। চা লাস্টে এনো।
ছেলেটা মাথা নেড়ে চলে গেল। তৌসিফ আসতে ই দেখলো পাশের সুইমিং পুলে গোটা গোটা চোখে তাকিয়ে আছে পৌষ। পুলে কয়েকজন শর্টস পরে পানিতে নেমেছে। আর ওদের দিকে ই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওর বউ। মানে এতটা হাবলা’র মতো তাকানোর কি আছে বুঝে আসে না ওর। কই তৌসিফ’কে তো দেখে না।
আচমকা ব্যাগ হাতে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
— ঐ দিকে চলো।
— কেন?
কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো পৌষ। তৌসিফ চেয়ে ও আসল ঘটনা বলতে পারলো না। তাই মিথ্যা টাই বললো,
— এদিকে রোদ চলে আসবে পৌষরাত। কাম ফাস্ট।
কপাল কুঁচকে পৌষ গেলো ওর পিছু পিছু। সস্তির শ্বাস ফেললো তৌসিফ তবে অতি গোপনে।
খাবার এলো মিনিট পনেরো পর। চোখ উল্টে একবার তৌসিফ’কে দেখতেই তৌসিফ ঠান্ডা গলায় বললো,
— জুস শেষ না করলে চা আসবে না।
— না আসলো।
এই মেয়ে যে জন্মের বাঁকা তা জানে তৌসিফ। কিন্তু জুসটা খেলো পৌষ। গরুর বটি দিয়ে পরটা ও মুখে দিলো। তৌসিফ দেখলো পৌষ অনেকটা আগ্রহ নিয়ে বটি খাচ্ছে। হয়তো পছন্দ হয়েছে। নিজের প্লেটে থাকা বটিগুলো পৌষ’কে দিতে দিতে বললো,
— সকালে বটি ভালো লাগছে না। তুমি নাও। আমি ডিম খাচ্ছি।
পৌষ মনে মনে খুশি ই হলো। তৌসিফের প্লেটে থাকা ঝোল টুকু ও নিজের পরটা দিয়ে মুছে নিয়ে নিলো। ভাবখানা এমন যে, “দিবি যখন সব দে। ঝোল ও কেন বাকি থাকবে?”
ডিম একটা পৌষ’কে দিতে নিলেই ও না করলো। জানালো,
— পেট ভরে গেছে। খাব না আর। চা আসবে কখন?
— ডিম খতম হলেই আসবে।
— না খেলাম।
এবার সত্যি সত্যি ই খেলো না। তৌসিফ নিজেই ডিমটা খেয়ে নিলো। চা আসতেই পৌষ ওয়েটার’কে বললো,
— একস্ট্রা সুগার লাগবে ব্রাউনটা।
ছেলেটা মাথা নেড়ে দুই প্যাকেট এনে দিলো। পৌষ দুই প্যাকেট নিজের ব্যাগে ভরে বাকি দুটো চায়ে মিক্স করলো। তৌসিফ হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— এটা কি ছিলো?
— কোনটা?
— ওগুলো ব্যাগে নিলে কেন পৌষরাত?
— কেন নিব না? জানেন এই চায়ের দাম কত? পুরো চারশত টাকা। ভ্যাট পনেরো পারসেন্ট। আমি আমি তো শুধু চিনি নিলাম।
বলতে বলতে টিস্যু ও ব্যাগে পুরে নিলো। তৌসিফ এবার ধমকে উঠলো চাপা স্বরে,
— স্টপ ইট পৌষরাত। মাথা খারাপ তোমার? কি করছো?
পৌষ বুঝি পাত্তা দেয়? সে দেখলো তৌসিফ সুগার ছাড়া চা খাচ্ছে। তৌসিফের ট্রে থেকে ও দুটো সুগার নিজের ব্যাগে ভরে চায়ে চুমুক দিলো। তৌসিফ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। বললো,
— প্লিজ হানি, ওগুলো রেখে দাও এখানে। বাসায় অনেক আছে। এর থেকেও ভালো ব্যান্ড আছে। কেউ দেখলে কি ভাববে?
খেয়ে দেয়ে চাঙ্গা এখন পৌষ। একটা ছোট খাট ঢেকুর তুলে বললো,
— শুনুন। আজ একটা গোপন কথা বলি আপনাকে। এই যে আমরা যা যা খেলাম এর মধ্যে ই এসবের টাকা উসুল করে রাখা হয়। এমনকি ওয়াশরুম যাওয়ার টাকা ও আগেই রেখে দেয় এনারা। কথা হলো ব্যবহার করলেও পে করতে হবে না করলেও। তাহলে আমার টাকায় কেনা জিনিস আমার ব্যাগে ভরলে সমস্যা টা কোথায়?
যুক্তিতে ভুল থাকলে বলুন।
পৌষ’র যুক্তি শুনে তৌসিফ আপাতত কিছু বললো না। মান ইজ্জত আজ পকেটে ভরে যেতে হবে ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দিলো ও।
.
পৌষ’র ভার্সিটির গেটে এসে গাড়ি থামলো। তৌসিফ মানি ব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার কচকচা কিছু নোট পৌষ’কে দিয়ে বললো,
— এটা রাখো।
— কেন?
— হাত খরচ তোমার।
— লাগবে না।
— লাগবে। রাখো।
— বললাম তো লাগবে না। হেমু ভাই দিবে।
ভ্রুঁ উঁচু করলো তৌসিফ। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আমার বউ তুমি এখন পৌষরাত। তোমার চাচাতো ভাই কেন হাত খরচ দিবে?
— কারণ সারাবছর সে ই দিয়েছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তৌসিফ বললো,
— বাট ইটস নট দ্যা সেইম টাইম না? বুঝো। রাখো এটা।
কিছু একটা ভেবে ওখান থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট টান দিয়ে নিলো পৌষ। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বললো,
— এত লাগে না আমার। যাই।
তৌসিফ’কে বলার সুযোগ না দিয়ে পৌষ চলে গেলো। হাতে থাকা সাড়ে চার হাজার টাকার দিকে তাকিয়ে রইলো তৌসিফ।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। তৌসিফে’র মনে পরলো সে রোজ পাঁচ হাজার হাত খরচ দিয়ে ও পোষাতে পারতো না। প্রতি মাসে গোল্ড গিফট করে ও ঠিকঠাক সেই নারীটির হাসি মুখ দেখতে পেতো না। সর্বোচ্চ যখন ডায়মন্ড গিফট দিতো তখন গদগদ হয়ে তিন, চার রাত সে তৌসিফে’র বুকে ঘুমাতো। তাকে আদর যত্ন করতো এরপর যা তাই। তৌসিফ তাকে সবটুকু সুখ দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। টাকা,পয়সা,দেশ, বিদেশ সব। কিচ্ছু বাকি রাখে নি। কিচ্ছু না। দিন শেষে সে শুন্য। ভালোবাসার কাঙ্গাল কাঙ্গাল ই হয়ে গিয়েছিলো।
_____________________
ভার্সিটিতে ভাগ্য ক্রমে আদিত্য’র সাথে দেখা হয় নি পৌষ’র। তবে আদিত্য’র বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। সিনিয়র হওয়ার সুবাদে সালাম পর্যন্ত এক সম্পর্কে আবদ্ধ তারা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র হচ্ছে রিহাব নামে একজন। সে পৌষ’কে ডেকে নিলো সাইডে। জিজ্ঞেস করলো,
— ক্লাস কখন?
— মাত্র একটা শেষ হলো ভাইয়া। আরেকটা আধ ঘন্টা পর।
— কিছু জানানোর ছিলো তোমাকে আদিত্য’র ব্যাপারে।
পৌষ ভদ্র ভাবে উত্তর করলো,
— আমি এখন ম্যারিড ভাইয়া। তার সাথে যোগাযোগ নেই। জেনে কি হবে?
— তবুও জানা উচিত তোমার পৌষ।
পৌষ কথা বললো না। রিহাব নিজেই চোখে থাকা চশমাটা ঠেলে দিয়ে বললো,
— হি জাস্ট ওয়ান টু টেইক ইউ টু হিজ বেড পৌষ। ও বেট ধরে করেছে সব।
— জানি।
বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বললো পৌষ। রিহাব হাসলো। বললো,
— তৌসিফ স্যার’কে প্রমান গুলো আমি ই দিয়েছিলাম। তবে আরো কিছু দেই নি এতে আদি ঝামেলায় পরতো।
— আমাকে কেন জানাচ্ছেন?
— কারণ একটাই পৌষ। তৌসিফ স্যার ভালো মানুষ। মুভ অন করো। দ্যাট উইল বি বেটার ফর ইউ।
— ঐ বেটে আপনিও শামিল ছিলেন। এটা ও জানি আমি।
রিহাব আচমকা এটা শুনে ঘাবড়ালো। পৌষ বাঁকা হাসলো। বললো,
— তৌসিফ তালুকদার শুধু আপনার প্রমানের ভিত্তিতে চলে না। আপনার উপরের প্রমান ও আছে তার কাছে। আমার থেকে দূরে থাকুন ভাইয়া।
— লাইফে প্রথম বার ছিলো ওটা।
— যততম বার ই হোক না কেন ভাইয়া। পৌষরাত’কে কারো বিছানাতে নেয়া এতটা সহজ না। আমার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না। ভালো লাগা ছিলো। আমার প্রথম ভালোলাগা ছিলো আদিত্য। আবার বলছি ছিলো। এর মানে এখন নেই। কোনদিন প্রেমিকার দাবি করি নি। সে প্রেমিক হতে চেয়েছিলো। প্রেম হতো আমাদের মধ্যে যদি না সেদিন চাচা ধরে ফেলতো। তবে হ্যাঁ। অপেক্ষা ছিলো। তীব্র অপেক্ষা ছিলো আমার তার জন্য। কারণ একটাই আমার প্রথম ভালোলাগা ছিলো সে যা এখন নেই।
কথাগুলো বলে গটগট পায়ে ক্লাসে ঢুকে পরলো পৌষ। আপাতত বিরক্ত লাগে এসব তার।
.
ক্লাস শেষ হলো বিকেল পাঁচটা নাগাদ। ওকে অবাক করে দিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির কাজিনদের দলবল। ইনি,মিনি আর পিহা দৌড়ে এলো। আপা আপা ডাকতে ডাকতে মুখে ফ্যানা তুললো তিনজন। ইনি,মিনি’কে কোলে তুলে জড়িয়ে ধরলো ও। বলা হয় বড় বোন হলো মায়ের মতো। ইনি,মিনি আর পিহা’র ক্ষেত্রে ও তা। তিনটা হিচকি তুলে কাঁদছে তাদের কলিজার আপা’কে পেয়ে। ছোট ছোট ঝুঁটি করা মাথাটা নাড়িয়ে বললো,
— আপা তুমি নাই কেন?
— এই যে আছি তো আপা।
— বাথায় তলো না আপা।
— চলব তো সোনারা। তোরা এখানে কেন?
চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য মাথা নিচু করে এগিয়ে এলো। ইনি,মিনি লাফিয়ে ওদের কোলে যেতেই দুই ভাইয়ের হাত জড়িয়ে ধরে পৌষ। ছেলে গুলো পারলে কেঁদে দিতো। দূরে দাঁড়িয়ে আছে হেমন্ত। দেখেও না দেখার ভান ধরলো পৌষ। ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো হেমন্ত। পৌষ ধরা গলায় ডাকলো,
— হেমু ভাই?
— বল।
— কান্না পাচ্ছে।
— কেঁদে ফেল।
— সত্যি তো।
ওর মাথায় হাত রাখলো হেমন্ত। পৌষ হাসলো। পৌষদের হাসি ছাড়া কান্না মানায় না৷ সারাক্ষণ ছটফট করে গভীর কষ্ট চাপা দিয়ে হাসার মানুষ ই তো পৌষ। আজ ও ব্যাতিক্রম ঘটলো না।
পৌষ’র উস্কানিতে সবগুলো গেলো টিএসসি। মমো থেকে নিয়ে বুট কিছু বাদ রাখলো না। বুট খেতেই ইনি,মিনি হু হা শুরু করেছে। ওদের পানি খায়িয়ে ঠান্ডা করলো চৈত্র। উঁচু সিঁড়িগুলো তে বসে একসাথে মালটার চা খেলো ওরা। এটা অবশ্য ইনি,মিনিকে দেয়া হলো না। সারাটা সন্ধ্যা কাটলো ওদের সাথে। পাঁচটা কাজিনের মুখে শুধু “আপা” ডাক। পৌষ’র খাঁ খাঁ করা কলিজা প্রশান্তি পেলো। এই ভাই-বোন গুলো যে ওর প্রাণ। হেমন্তর দিকে তাকিয়ে পৌষ বললো,
— মাসের শেষ দিক চলে। আমার পকেট মানি দাও।
মানি ব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার দুটো নোট দিলো হেমন্ত। বাকিদের পাঁচশ করে। শুধু ইনি,মিনি আর পিহা এখনও পকেট মানি পায় না৷
পৌষ’কে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে ওরা চলে গেল। পৌষ’র মনটা পুণরায় খারাপ হলো। কলিং বেল বাজাতেই মিনু খুলে দিলো। পৌষ’কে দেখে মুখটা চোখা করে চলে যেতেই পৌষ শ্বাস ফেললো। আপাতত এখন মুড খারাপ করার সময় নেই ওর।
____________________
— দিন কেমন কাটলো পৌষরাত?
পৌষ আকাশে থাকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— অনেক ভালো।
— আমাকে জিজ্ঞেস করলে না?
— বলার হলে নিজেই বলবেন।
— অনেক স্ট্রেস ছিলো আজ হানি। শিপিং ডিলে হলো। জাহাজে মাল এসেছে। লিগ্যাল ডকুমেন্টস সব আমার তবুও পুলিশ আটকে রেখেছে। যখন এসআই কে কল দিলাম তখন ছেড়ে দিলো। এরা চিনে শুধু টাকা। বুঝলে?
পৌষ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এসব তাকে কেন বলা হচ্ছে? সে কি বুঝে?
পৌষ গিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। তৌসিফ ও গুড নাইট জানিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো। ঘড়ির কাটা ঘন্টা পেরুলো। একদম সোজা হয়ে আছে। পৌষ’র পেট মোচরালো। এদিক ওদিক করে এবার উঠে বসলো। ক্ষুধায় পেট চু চু করছে ওর যদিও খেয়েছে দশটা নাগাদ। অভ্যস বলে কথা। টিকতে না পেরে কিচেনে গেলো ও। এদিক ওদিক খুঁজে ও যখন পেলো না হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলা শুনে চমকে তাকালো। তৌসিফ টাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে বললো,
— কি খাবে?
— জানি না৷ ক্ষুধা লেগেছে।
তৌসিফ ফ্রোজেন পিৎজা বের করে ওভেনে দিলো। ওটা গরম হতে হতে জিজ্ঞেস করলো,
— রাতে ক্ষুধা লাগে?
— হু।
— এতদিন ও লেগেছিলো অবশ্য ই।
— স্বাভাবিক।
— বলো নি কেন?
পৌষ চুপ রইলো। তৌসিফ নিজেই বললো,
— লজ্জা? আচ্ছা আর পেয়ো না। বাসায় খাবার থাকে। তোমার বাসা। যা মন চাইবে খাবে। ফেলবে।কেউ কিছু বলবে না। কে আছে আমার বলো? তুমি আর আমি।
“তুমি আর আমি” কথাটা অদ্ভুত ভাবে পৌষ’র পেটে প্রজাপতি উড়ালো। পিৎজা গরম হতেই ওরা কিচেনেই উঁচু জায়গাতে উঠে বসে খেলো। টুকটাক কথা হলো দু’জনের। ঘুমাতে এলো রাত দুটোর দিকে।
.
রাত প্রায় তিনটার দিকে ওয়াশরুমে যেতে উঠে পৌষ। পাশে তৌসিফ নেই। ওয়াশরুম থেকে এসেও দেখলো নেই। কি মনে করে বাইরে তাকাতেই দেখলো সোহা’র রুম থেকে বের হলো তৌসিফ। রাত তিনটা বাজে সোহা’র রুমে কেন গিয়েছিলো তৌসিফ এটার উত্তর জানা নেই পৌষ’র। তবে এত বছর ধরে শুনা কথাগুলো মনে পরলো ওর। কাজের মেয়ে’র সাথে সম্পর্ক তৌসিফে’র। নিশ্চিত এত রাতে ভালো উদ্দেশ্যে ওখানে যায় নি তৌসিফ।
চুপ করে নিজের পাশে শুয়ে পরলো পৌষ। জানে না কেন কিন্তু পৌষ’র মতো মেয়ের চোখ ভিজে উঠেছে যদিও সেই পানি গড়িয়ে পরলো না। দহন সৃষ্টি হলো যদিও তা কাউকে পুড়ালো না। নিজেকে সান্ত্বনা দিলো পৌষ,”তোর ভাগ্য এটা পৌষ। মেনে নে।”
#চলবে…..
[২৩৬৩ শব্দ]
(যারা পড়েছেন প্লিজ সবাই রিএক্ট করুন এবং কমেন্ট করুন। পেজের রিচ একদম ডাউন।)
আমার লিখা সকল ই-বুকের লিংক কমেন্টে।