মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ #১৩তম_পর্ব

0
136

#মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
#১৩তম_পর্ব

“প্রিয় মা জননী,
তোমার জেদে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারিবো না। আমি পালাইলাম আমার প্রেমিকের সহিত। যদি মমতা জীবিত থাকে তবেই আমাকে খুঁজিও

ইতি তোমার আমড়া কাঠের ঢেকি কন্যা,
ঐন্দ্রিলা”

বিয়েবাড়ির আনন্দ, জলসা, উচ্ছ্বাস সবকিছুই উবে গেলো এই তিন লাইনের চিঠির ধারে। সালাম সাহেব চিঠি হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন। সাবেরা ধপ করে বসে পড়লো। তার মাথাটা হুট করেই ঘুরে উঠলো বোধ হয়। নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল ঘরে। সবচেয়ে বেশি নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলো অভ্র। যেন কিছুই হয় নি। বিল্লাল আড়চোখে তাকালো অভ্রের দিকে। তার চোয়াল শক্ত। দৃষ্টি শুন্য। শুন্য দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে চিঠিটার দিকে। শাহানা বেগম ভাতিজীর এমন কাজে বেশ ধাক্কা খেলেন। অন্যদিকে কানন বেগম যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। ঐন্দ্রিলার মত শান্ত মেয়ে এমন সাংঘাতিক কাজ করতে পারে এতো অকল্পনীয়। নিজের ছেলের দিকে তাকালেন। কত কষ্টে বিয়ের জন্য রাজী করেছিলেন এখন যেনো সব পরিকল্পনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিলো কেউ। আউওয়াল সাহেবের পৌঢ় আত্মমর্যাদায় নাতবউ একেবারে গোবর লেপলো যেন। তিনি মেয়েটিকে অনেক পছন্দ করেছিলেন। একেবারে অভ্রের উপযুক্ত ছিলো সে। অথচ মানুষ চিনতে এতো ভুল কি করে হলো ভেবে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে শুধু হাসিখুশি দেখালো ইদ্রিস সাহেবকে। কিন্তু তা উনি প্রকাশ করতে পারলেন না। ছেলেকে হারতে দেখে তার একটুও সমবেদনা হচ্ছে না। কারণ তিনি জানেন বাজি জিতলে ছেলে ভয়ানক কোনো দাবি নিয়ে হাজির হবে। হ্যাপি কালক্ষণ ভুলে বলে উঠলো,
“ভাবি, ঐন্দ্রিলা তো ভেগে গেছে এখন?”

বোনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন। হ্যাপি তাতে দমলো না। কারণ সে তো মিথ্যে বলছে না। বরং বেশ বুক ফুলিয়ে বললো,
“আমি তো জানতাম এমন কিছুই হবে। মেয়ে যে সেদিন ঘরে ভাঙ্গচুর করেছিলো আমি বুঝেছিলা ও খুশী না। তোমরা এতো জোর না করলেই পারতে”
“হ্যাপি চুপ করবি?”
“চেতেন ক্যান ভাইজান? ভাবটা এমন যেনো মেয়ের আমার কেউ না। সে আমারো ভাতিজী। চিন্তা আমারও হয়। তবে কাজটা ও ভালো করে নাই ভাইজান। এটা তোমাদের অতিরিক্ত আদরের ফল। জেদি করে ফেলছো মেয়েকে। এখন তো উড়াল দিলো পাখি”

এবার সালাম সাহেব হুংকার ছাড়লেন,
“ঐন্দ্রিলার নামে আমি বাজে কথা শুনতে চাই না হ্যাপি”
“আমি কি বাজে কথা বললাম ভাইজান? এখন শাড়ি গয়না পরে ঐন্দ্রিলাতো আর অলিম্পিকে যায় নি”
“ও অলিম্পিকে যাক না জাহান্নামে তোর কি সমস্যা? ওহ তোর স্বভাব এটাকে আজকের শিরোনাম বানানো। যা আমি বাদশাহকে বলছি ওর তোর মোবাইলে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ ওয়াস্তে চুপ কর। নয়ত আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না”

হ্যাপি হুংকারে চুপসে গেলো। এর মাঝে আউওয়াল সাহেব রুদ্রকন্ঠে বললেন,
“এটা কি ফাজলামি সালাম। তোমার মেয়ের প্রেমিক ছিলো তোমরা জানতে না। মনে চাইলো আর মেয়ে ভেগে গেলো, এটা কোন ধরণের অসভ্যতা”
“আমার মেয়ে যদি পালিয়ে খুশি হয় আমার আপত্তি নেই”

কঠিন স্বরে বললেন সালাম সাহেব। সাবেরা এখনো নিশ্চুপ। হ্যাপি চুপ হলেও আশেপাশের মানুষের কানাগোসা থামলো না। তারা বিরতিহীন গুজগুজ ফুসফুস করছে। ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে নানাবিধ আলোচনা সমালোচনায় যখন সবাই মগ্ন তখন অবশেষে নিজের নীরবতা ভাঙ্গলো অভ্র। কঠিন স্বরে বিল্লালকে বললো,
“ঐন্দ্রিলার কোনো প্রেমিক ফ্রেমিক নেই। ও বিয়ে না করার পায়তারা করেছে। বিল্লাল তুই কাজীর তোষামোদ কর। আমি আমার বউ আনতে যাচ্ছি”
“তুমি কিভাবে জানলে ওর প্রেমিক নেই। এখানে তো লেখা সে প্রেমিকের সাথে ভেগেছে”

হ্যাপির কথায় মাংসপেশি ফুলে উঠলো অভ্রের। এতো সময়ের নিস্তব্ধ অভ্র হুট করেই হিংস্র হয়ে উঠলো। চিৎকার করে বললো,
“আরেহ যেখানে আমি নিজে ওর প্রেমিককে মে*রে ভাগিয়েছি সেখানে ওর প্রেমিক কি নতুন করে পয়দা হয়েছে নাকি?”

অভ্রের রুদ্রবানীর বিপরীত বিল্লাল ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভাষা, ভাষা। সংযম কর”

কিন্তু বিল্লালের হুশিয়ারি বানীকে দু আনা মূল্য দিলো না ছেলেটি। তার রাগে গা কাঁপছে। এর মধ্যে সালাম সাহেব বলে উঠলেন,
“তুমি আমার মেয়ের প্রেমিককে মেরে খেদিয়েছো?”

অভ্র নিজের ক্রোধ সংযম করে বললো,
“শ্বশুর আব্বা, আপনার মেয়ের ভেড়া আমদানী করার বাতিক আছে। সে শুধু খুঁজে খুঁজে না শুকে শুকে ভেড়া বাছাই করে। চিন্তা করেন যে ছেলে মাত্র দুটো থাপ্পড় খেয়ে বিচ্ছেদের ঘন্টি বাজায় সে ঠিক কেমন প্রেমিক?”
“দু থাপ্পড়ে কাইত”
“আজ্ঞে, আমি তো শুধু সামান্য পরীক্ষা করেছি। ভেড়াটা পরীক্ষায় ফেইল করেছে। এখন আপনি যদি ওই ভেড়াকে জামাই করতে চান আমার আপত্তি নেই”

সালাম সাহেব কথা বাড়ালো না। এরমাঝে সাবেরা একেবারে শান্ত। মেয়ের জেদ সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো। কিন্তু এমন কদম নিবে সেটা বুঝতে পারেন নি। হয়ত বুঝেছিলেন কিন্তু গুরুত্ব দেয় নি। মেয়েটাকে কি একটু বেশি মানসিক চাপ দিয়ে ফেললেন? এর মাঝেই আউওয়াল সাহেব বললেন,
“সবাই বাড়ি চলো। বিয়ে ক্যান্সেল”
“কেউ কোথাও যাবে না। বিয়ে হবে আজ ই হবে। আজ যদি বিয়ে না হয় আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না”

আউওয়াল সাহেব নাতীর এমন অহেতুক, অনাবশ্যক বাড়াবাড়িতে বিরক্ত হলেন তীব্রভাবে। ক্রোধিত স্বরে বললো,
“এটা কি ফাজলামি নাকি? সে তোমাকে পছন্দ করে না। তুমি জোর করে ওকে বিয়ে করবে? যেখানে সে পালিয়ে গেছে বিয়ে করবে না বলে”

অভ্র রহস্য ভরে হাসলো। দাদার দিকে চেয়ে বলল,
“জোর হলে জোর সই, ফাজলামি হলে ফাজলামি সই। আজ আমার বিয়ে হবে এটাই শেষ কথা”

পাহাড়ের মত দৃঢ় বাক্য অভ্রের। এর মাঝে সবচেয়ে ভয়ে আছে পিউ। কারণ পালানোর নীল নকশাটা তার মাথা থেকেই বের হয়েছে। সে চুপিচুপি নীলাদ্রির লম্বা দেহের পেছনে নিজেকে আড়াল করলো। নীলাদ্রি বুঝলো যেন। পিউ বললো,
“পৃথিবী উলটে গেলেও আপনি খাম্বার মত দাঁড়িয়ে থাকবেন নীলাদ্রি ভাই”

********

আজ চাঁদহীন কালকে আকাশ। কেউ যেন তার কালির দোয়াতটা খুব অবহেলায় ফেলে দিয়েছে আকাশের বুকে। রাস্তার হলদে লাইটগুলোর আলোর রেশ বেশি না। সেই আলোতে রাস্তার উপর উচু হিল পড়ে শাড়ির কুঁচি ধরে হাটছে মেয়ে। কড়া কমলা শাড়ি। মুখে এক প্রস্তর মেকাপ। সেই মেকাপের ফাঁকে উজ্জ্বল মুখ। প্রাণোবন্ত হাসি। ভালোবাসায় বুঝি এতোটা শান্তি। পাঁচ বছর পর এই শান্তি অনুভূত হলো ঐন্দ্রিলার। তার প্রথম প্রেমের গল্পটা আজ পূর্ণতা পাবে। নিজের কাজটা ঘৃণ্য। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে না একেবারেই। লেকে অল্প আলো। মানুষের আনাগোনা এখন নেই। টলমলে পানির পাশে সারি সারি বেঞ্চ। সেই বেঞ্চে কালো টিশার্ট পরিহিত যুবক বসে আছে প্রতীক্ষায়। প্রতীক্ষা জয়ের। প্রতীক্ষিত জয়। যা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো পাঁচ বছর আগে। গেট ঠেলে কমলা শাড়ির বধুবেশে মেয়েটি ছুটে আসছে যুবকের দিকে। কি সুন্দর দৃশ্য। যেন পটু কোনো সিনেমার ডিরেক্টরের সৃজনী। ঐন্দ্রিলা একটু কাছে আসতেই সৌরভের নির্মল হাসিটা দাম্ভিক হয়ে গেলো। উঠে দাঁড়ালো। ঐন্দ্রিলা ছুটে এসে দাঁড়ালো তার সামনে। হাপিয়ে হাপিয়ে বললো,
“আমি এসেছি সৌরভ”

সৌরভ তার হাসি প্রসস্থ করে বলল,
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ঐন্দ্রিলা। তুমি সত্যি এসেছো? আমাকে তুমি জিতিয়ে দিলে। একটা ছবি তুলি। এই মুহূর্তটাকে আমার স্মরণীয় করে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে”

ঐন্দ্রিলা নিষ্পাপ গলায় বললো,
“তুলো”

সৌরভ নিজের মোবাইলটা বের করে সেলফি তুললো। তার চোখে মুখে অদ্ভুত চাকচিক্য। এই চাকচিক্যে সেই নির্মলতা নেই। আছে কেমন দাম্ভিকতা, প্রলোভন।

*********

অভ্রের শানিত দৃষ্টি পিউয়ের দিকে। সে নিলাদ্রির বিশাল দেহের পেছনে আশ্রয় নিয়েছে। আর নিলাদ্রি খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছে তার এবং অভ্রের মধ্যিখানে। অভ্র শিরশিরে স্বরে বলল,
“নিলাদ্রি ভাই, সরে দাঁড়ান”
“না, আপনি সরবেন না। ও আমাকে মারবে। ও খুব মারামারি করে, পঁচা ছেলে”

নিলাদ্রি একচুল নড়লো না। অভ্র গাল ফুলিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেললো। রাগ কমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। শীতল স্বরে বললো,
“পিউ, ভালোয় ভালোয় বলো আমার বউ কোথায়”
“বলবো না আমি। তুমি শুধু ওকে কাঁদাও। আমার বান্ধবীটা তোমার জন্য অনেক কেঁদেছে। এরা কেউ জানে না। আমি জানি। আমি বলবো না তোমাকে”
“আমি ওকে আর কাঁদাবো না। এবার বলো”
“নাহ, আমি বিশ্বাস করি না। বলবো না আমি। এখনো তুমি মাথা চাপড়াও। ওই চুল টেনে ছিড়ে ফেললেও ঐন্দ্রিলা কোথায় আমি বলবো না”

অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাবার যোগাড় হলো। সে পিউ এর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই নীলাদ্রি হাত দিয়ে আগলে রাখলো পিউকে। নিজের শান্ত স্বভাবকে সম্পূর্ণ ঝাড়া দিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
“ও তোমাকে বলতে চাইছে না অভ্র। পিউকে জোর করার কোনো অধিকার নেই তোমার। অন্তত আমার সামনে অন্যায় কিছু করো না”

নীলাদ্রির সাথে চোখাচোখি হলো অভ্রের। সেই দৃষ্টিবিনিময়ে হয়ে গেলো শান্ত একটা যুদ্ধ যা কেউ টের পেলো না। বিল্লাল অভ্রকে টেনে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল,
“বউ এর ভাইয়ের সাথে ঝামেলা করিস না। আমরা বরং ঐন্দ্রিলাকে খুঁজতে যাই”

বিল্লালের কথায় হাত ঝাড়া দিলো অভ্র। ঠিক তখন ই ফোনটা বাজলো হালকা। ক্ষণসময়ের আওয়াজে দৃষ্টি সেদিকে গেলো। ফোনের লক খুলতেই অভ্রের মুখবিবর কঠিন থেকে কঠিন হলো। সালাম সাহেবকে বললো,
“আধা ঘন্টা পর পুলিশ নিয়ে লেকের ধারে আসেন”

******

ঐন্দ্রিলা বেঞ্চে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। সৌরভ তার সম্মুখে। আনন্দ ধরছে না মুখে। প্রায় দশমিনিট হয়েছে তারা মুখোমুখি বসে আছে। সৌরভ কাদের কাদের সাথে কথা বললো। এরপর এখন ফোন পকেটে রেখে ঐন্দ্রিলার হাতটা ধরলো। গাঢ় স্বরে বললো,
“তুমি জানো না আজ আমি কতটা খুশি। মানুষ তো বিশ্বাস করতেই চাইছে না। তুমি আমার জন্য বিয়ে ফেলে এসেছে। আবারো ধন্যবাদ”

ঐন্দ্রিলার হুট করেই কেমন যেন লাগলো। হাতটা ছাড়িয়ে বলল,
“কেউ বিশ্বাস করছে না মানে?”

সৌরভ হাসলো। কেমন দূর্বোধ্য ঠেকলো সেই হাসি। নিষ্কলুষ নয়, নির্মল নয়। হাসি অক্ষত রেখে বলল,
“বাহ রে! পৃথিবীকে জানাতে হবে না। আমি জিতে গেছি। আমাকে ঐন্দ্রিলা জিতিয়ে দিয়েছে। অভ্রকে হারিয়ে দিয়েছে। তুমি সত্যি খুব ভালো মেয়ে। অবশ্য একটু বোকাও আছো”

সৌরভের কথাটা শুনতে মোটেই ভালো লাগলো না। ঐন্দ্রিলার ভালোবাসার যে স্নিগ্ধ অনুভূতি কেমন যেন নড়ে উঠলো। সৌরভ তার মুখখানা আগলে ধরে বললো,
“থ্যাংক ইউ সো মাচ ঐন্দ্রিলা। আমাকে এবার উঠতে হবে”
“আমরা কাজী অফিসে যাচ্ছি না?”

ঐন্দ্রিলার অবাক প্রশ্নে বিদ্রুপ ভরে হাসলো সৌরভ,
“বোকা মেয়ে। কাজী অফিস যাব কেনো? সরি ঐন্দ্রিলা আমি তো বিয়ে করতে পারবো না। আমি তো বিবাহিত”

সৌরভের কথায় ঐন্দ্রিলা স্তব্ধ হয়ে গেলো। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মস্তিষ্ককোষগুলো হুট করেই অসাড় হয়ে গেলো যেন। শুন্যতা ঘিরে ধরলো পৃথিবীকে। কান কি ঠিক শুনলো? না না, এটা কোনো মজা হয়তো। ঐন্দ্রিলা বোকার মত প্রশ্ন করলো,
“তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?”

সৌরভ এবার শব্দ করে হাসলো। সেই হাসিতে ভেঙ্গে চৌচির হলো নিস্তব্ধতার দেওয়াল। মেকি অনুতাপী স্বরে বলল,
“আমার না খুব খারাপ লাগছে। এতো ভালো মেয়েটাকে এভাবে ব্যাবহার করলাম। কিন্তু কথায় আছে, এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। আমি তোমাকে ভালোবাসি না ঐন্দ্রিলা। আমি নাটক করেছি তোমার সাথে। আর তুমি আমার নাটকে সব ছেড়ে ছুড়ে এসেছো। ইশ! সত্যি খারাপ লাগছে গো। এতোটা ভালোবাসতে তুমি আমাকে। অবশ্য এই দোষ আমার নয়। দোষটা সম্পূর্ণ অভ্রের। এই সবকিছু হয়েছে ওর জন্য। কেনো ওর এতো জনপ্রিয় হতে হবে? কি আছে ওর? কিচ্ছু না, না ম্যানারস, না লেখাপড়া, না চেহারা। শুধু মারপিট করতো আর বন্ধুদের পেছনে টাকা উড়াতো। টাকা উড়ালেই জনপ্রিয় হওয়া যায়? আমিও বললাম আমার বাবা ধনী। আমি দেখতে ভালো, লেখাপড়ায় ভালো, সবাই জানলো আমার বাবার অঢেল আছে। ব্যাস আমার জনপ্রিয়তা বাড়লো। কিন্তু শালার সহ্য হলো না। সেই কাঠি করতে হলো। আমার সব সাজানো পরিকল্পনায় আলকাতরা লেপে দিলো। আমাকে কলেজ ছাড়তে হলো। ও ভাবলো ও জিতেছে। কিন্তু না আমি জিতেছি। শেষ হাসিটা আমার। উফ”

ঐন্দ্রিলা তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে। বুকের ভেতর কিছু একটা ধারালো কিছু আঘাত করছে। তার নিঃশ্বাস আটকে আছে। সবকিছু যেনো ভাসমান মনে হচ্ছে। এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে। সৌরভের কথাগুলো এতো রোষপূর্ণ কেনো। এই সবকিছু মিথ্যে? এই ভালোবাসা, এই প্রতীক্ষা, সব মিথ্যে? সামান্য প্রতিশোধ? হার জিতের প্রতিশোধ। ভালোবাসা এতো ঠুংকো? ঐন্দ্রিলা ধরা গলায় খুব কষ্টে বলল,
“সব মিথ্যে? তাহলে পাঁচ বছর আগে যা বলেছিলে সেগুলো?”
“সেগুলোও মিথ্যে ঐন্দ্রিলা”

নির্লজ্জভাবে হাসলো সৌরভ। একটু থেমে বললো,
“আমি অভ্রকে তখনই হারিয়ে দিতাম। তোমার আমার প্রতি আগ্রহ, কৌতুহল দেখে আমার খুব মজা লাগছিলো। অভ্রের কাতর, পুড়তে থাকা হৃদয়ের গন্ধ কি মুখরোচক তোমার ধারণা নেই। আমার সাথে তোমার বন্ধুত্ব ওকে জ্বালাতো, বিরক্ত করতো। বুঝলাম অভ্রকে হারানোর একমাত্র মাধ্যম তুমি। আমি তো চেয়েছিলাম অভ্রকে দেখিয়ে দিতে দেখ তোর পুতুল এখন আমার। কিন্তু হলো না। আমাকে ওয়ার্নিং দিলো যেন তোমার থেকে দূরে থাকি। আমিও হার মানলাম না। তোমাকে ভালোবাসার কথা বললাম। আর অভ্র আমার সব মিথ্যেকে ফাঁস করে দিলো। সবাই জেনে গেলো আমার বাবা ধনী নয়, আমি আসলে গরীব। এতোদিন আমার যে বন্ধুমহল ছিলো আমাকে মিথ্যুক বললো। আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে গেলো। আমি তাও হার মানি নি। কারণ তুমি তো আমার প্রেমে অন্ধ। গরীব, মিথ্যুক তাতে কি! ঐন্দ্রিলা আমার গার্লফ্রেন্ড আর কি লাগে? আমি তোমাকে মিথ্যে বললাম। আমাদের নিয়ে কোনো রটনা রটে নি। আমি রটিয়েছিলাম। যেন তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান না করতে পারো। কিন্তু এর মধ্যেও শুয়োরটাকে ঢুকতে হলো। সোজা আমার মালিককে জানিয়ে দিলো আমি চুরি করেছি। বাধ্য হয়ে আমাকে শহর, কলেজ ছাড়তে হলো। ভাগ্যিস চুরির টাকা আগেই সরিয়ে ফেলেছিলাম। নয়তো তো পুলিশে ধরে নিত। উফ। আমার তোমার উপরও রাগ হয়েছিলো। আজ শান্তি লাগছে। এক তীরে দুই পাখি। তুমি অভ্র দুজন ই ঘায়েল। অভ্র মানুষের বাচ্চা হলে তোমাকে বিয়ে করবে না। তোমার সারাজীবন পালানোর ট্যাগ নিয়ে ঘুরতে………”

কথাটা শেষ হবার আগেই সজোরে ঘুষির আঘাতে ছিটকে পড়লো সৌরভ। আকস্মিক ঘটনায় আপনাআপনি দুহাতে মুখ আটকে ধরলো ঐন্দ্রিলা। সৌরভের নাক থেকে গলগল করে রক্ত পড়লো। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো রুদ্রমূর্তি হয়ে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here