হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১১
_________
আয়াশকে ইশার ক্লাসের ছেলেদের ভয় পাওয়ার মেইন কারণ হচ্ছে ইশা। কেননা ইশা ওর ক্লাসের একটা ছেলে একদিন ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বলে ক্লাসের সব ছেলেগুলোকে সেদিন ডেকে বলেছিলো।
” দেখো, তোমরা সবাই আমার ভাইয়ের মতো। প্লিজ তোমাদের ভালোর জন্য আমি একটা কথা বলছি। দয়া করে তোমরা কেউ আমার সাথে অতিরিক্ত ভাব জমাতে কিংবা কথা বলতে এসোনা। আবার ভেবোনা যে আমি অহংকারী কিংবা দেমাগি। আসলে কথাটা এই জন্য বলছি যে আমি তোমাদের কারো ক্ষতি চায় না। তোমরা তো ভালো করেই চেনো আমার ভাইয়াকে, আই মিন আমার বড় আব্বুর ছেলেকে। ও চাই না আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলি। আর আমার আম্মুও চাই না সেটা। আর আমি জানি, আমি তোমাদের সাথে কথা বলি কিংবা তোমরা আমার সাথে কথা বলো,, দোষটা কিন্তু তোমাদের উপরেই পড়বে। আর তোমরা জানোই ভাইয়া কেমন। সিনিয়র ভাইয়াদের থেকে নিশ্চয় শুনেছো ভাইয়ার সম্পর্কে, যেমনটা আমি শুনেছি। তাই প্লিজ, তোমরা যদি নিজেদের ভালো চাও; তাহলে আমার সাথে কথা বলতে এসোনা। দয়া করে আমাকে ভুল বুঝোনা কেউ। তোমাদের সবার ভালো চাই বলেই আমি এমনটা বলছি। আই হোপ তোমরা আমার কথা রাখবে। ”
সেদিনের পর থেকে ইশার ক্লাসের কোনো ছেলে আর ইশার সাথে কথা বলেনা। তবে ইশার প্রতি কারো খারাপ ধারণাও জন্মায়নি। বরং ইশা ওদেরকে আয়াশের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে বলে সবাই ইশাকে থ্যাংকস জানিয়েছিলো। আর বলেছিলো যদি কখনো কোনো বিপদে পড়ে, তাহলে এই ভাই গুলোকে সবসময় তার পাশে পাবে। এমন নয় যে ইশাকে সবাই বোনের দৃষ্টিতে দেখতো। বরং ওর ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলেই ওকে ভালোবাসতো। কিন্তু ইশার কথাগুলো শুনে তারা ভালোবাসার মানুষের স্থান ত্যাগ করে ভাইয়ের স্থান দখল করেছে। এর কারণ একটাই, ইশার কথাগুলো শুনে ওদের বুঝতে এক মিনিটও সময় লাগেনি যে আয়াশ ইশাকে ভালোবাসে। কেননা আয়াশ যে অহংকারী নয়, সেটা ইশার ক্লাসের সবাই জানে। আয়াশ কেন? ইশার ফ্যামিলির কেউ-ই যে অহংকারী নয়, সেটা সবার অজানা নয়। আর আয়াশ যেহেতু বলেছে, শুধু ছেলেদের সাথে কথা না বলতে। মেয়েদের সাথে কথা বলতে তো বারণ করেনি, তার মানে তো এটাই যে আয়াশ ইশাকে ভালোবাসে। ছেলেগুলোর মধ্য থেকে একজন ছেলে আমতা আমতা করে বলে উঠলো।
” ভ ভ ভাইয়া আপনি?? ”
আয়াশ হেসে বললো— ” হ্যাঁ আমি। আর তোমরা এতো ভয় পেয়ে আছো কেন?? জাস্ট চিল ভ্রু। আমি কোনো বাঘ কিংবা ভল্লুক নয় যে, তোমাদের আমাকে এতো ভয় পেতে হবে। বাই দা ওয়ে, আমার যেই কারণে এখানে আসা। এক্সুয়েলি ইশার নাকি গত এক মাসের নোটস কালেক্ট করা হয়নি। এখন আমাকে বলো তো, তোমাদের মধ্য থেকে কারো কাছে কি গত এক মাসের নোটস গুলো সব আছে?? ”
আয়াশের কথা শুনে সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। এতক্ষণ তো ভয়ে একেক জনের দম আঁটকে আসছিলো। তবে এখন আর ভয় লাগছেনা। বরং সবাই সাহস করে হেসে বললো।
” আরে ভাইয়া! সামান্য নোটসের জন্য আপনি কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন?? ইশা কাউকে দিয়ে আমাদের কাছে নোটস গুলো চেয়ে নিলেই তো আমরা দিয়ে দিতাম। না ইশার আমাদের সাথে কথা বলতে হতো। আর না আপনার কষ্ট করে এখানে আসতে হতো। ”
ছেলেগুলোর কথা শুনে আয়াশ একটু অবাক হলো। হয়তো একটু অবাক হয়েছে বললে ভুল হবে,, ছেলেগুলোর কথা শুনে আয়াশ বেশ অবাক হয়েছে। আর অবাক হবে নাই বা কেন?? আয়াশ তো ছোট মা’কে দিয়ে কথাটা শুধু ইশাকে বলেছিলো। সে নিজে এসে কখনো কলেজের কোনো ছেলেকে তো বলেনি ইশার সাথে কথা না বলতে। তাহলে? তবে প্রশ্ন গুলো মাথায় আসলেও আয়াশ মুখে সেটা প্রকাশ করলোনা। বরং মুখের ভাব স্বাভাবিক রেখে বললো।
” আরে না না, আমার কোনো কষ্ট হয়নি। তোমরা আমাকে নিয়ে ভেবোনা। তোমাদের নিশ্চয় ক্লাস টাইম হয়ে এসছে। তোমরা নুহাকে দিয়ে নোটস গুলো ইশার কাছে পৌঁছে দিও। ঠিক আছে?? ”
আয়াশের কথায় ছেলেগুলো একসাথে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সম্মতি জানালো।
” ওকে তাহলে। আসছি আমি। সবাই মন দিয়ে পড়বে। কেমন?? ”
সবাই আবারও ঘাড় বাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। আয়াশ উঠে চলে আসলো সেখান থেকে। তারপর ইশার সাথে কথা বলে বেরিয়ে এসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আজ আর যেহেতু অফিস যেতে হবেনা; তাই একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে ব্যাপারটা মন্দ হয়না। ব্যাস, যেই ভাবা সেই কাজ। আয়াশ একে একে ফাহাদ, রাফি, রায়ান, জীবন, এবং সুজন সবাইকে কল দিয়ে বলে দিলো যেন ওদের আগের আড্ডার সেই জায়গাটাতে চলে আসে। আয়াশের বলতে দেরি হলো; কিন্তু কারো আসতে দেরি হলোনা। আসলে বন্ধুমহল গুলো এমনই হয়। সবসময় অপেক্ষা করে থাকে কখন বন্ধুদের মধ্য থেকে কেউ একজন কল দিয়ে বলবে, চল আজ সারাদিন আবারও আগের সেই দিনগুলোর মতো জমিয়ে আড্ডা দিই। যে যতো ব্যস্তই হোক; সবাই যেন একটা ফোন পেলে পৃথিবীর সব কাজ ছেড়ে আসতে বাধ্য। পৃথিবীতে সবকিছুই আসলে পুরাতন হয়। তবে যেই জিনিসটা পুরনো হয়না; সেটা হলো বন্ধুত্ব। আয়াশ সবার সাথে ঘন্টা তিনেকের মতো আড্ডা দিয়ে আবারও গাড়ি নিয়ে ইশার কলেজে গেলো। আর ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে আজ ইশাকে আনতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ও নিজে গিয়েই নিয়ে আসবে। ইশার সবে কলেজ ছুটি হয়েছে। তাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে নুহার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে গেইটের দিকে যেতে লাগলো। নুহা হলো ইশার জানের জিগার দোস্ত। এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড। নুহাদের তেমন অডেল টাকা পয়সা নেই। আবার গরীবও নয়। দুটোর মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। পরিবারে তেমন বেশি লোকও নেই। নুহা, নুহার একটা ছোট ভাই, আর বাবা-মা, এই কয়জন মিলেই নুহার পরিবার। ইশার ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরাই বড়লোক। যার দরুন মেয়েরা কেউ-ই নুহার সাথে মিশতে চায় না। কারণ ঐ যে নুহাদের অডেল টাকা পয়সা নেই। ক্লাসের অধিকাংশ মেয়ের তো দেমাগে পা-ই পড়েনা। আর তাই ইশার নিজের ক্লাসের একটা মেয়েকেও ভালো লাগেনা। সবার সাথে ততটুকুই কথা বলে, যতটুকু না বললেই নয়। তবে সবার মাঝখান থেকে যাকে ইশার বন্ধু হিসেবে ভালো লাগে সে হচ্ছে নুহা। নুহা মেয়েটা অনেক ভালো। আর মিশুকও বটে। ইশা যদি এই কলেজের কাউকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে সে হচ্ছে নুহা। যাকে বলতে সে অজ্ঞান। নুহাও ইশা বলতে পাগল। আর হবে নাই বা কেন? যেখানে আজকালকার মডার্ন দুনিয়াতে মানুষ বড়লোকদের দেখলেই শুধু কথা বলে,, সেখানে নুহার মতো মধ্যবিত্ত ঘরের একটা মেয়ের সাথে ইশা বন্ধুত্ব করেছে। এটাই বা কয়জন করে। তাই ইশা যেমন নুহাকে আপন ভাবে। ঠিক তেমনি নুহাও ইশাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস আর ভরসা করে। ইশা আর নুহা দুজনেই পাশাপাশি হাঁটছে আর কিছু একটা নিয়ে কথা বলতে বলতে হাসছে। নোটস গুলো নিতে পারাই আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে ইশার। কারণ নোটস গুলো নিতে না পারলে নির্ঘাত এক্সামে ডাব্বা মারতো। আর ইশা জানে, বাড়ির সবাই ওকে যতোই আদর করুক। এক্সামে খারাপ করলে সবাই বকবে। এমনকি যেই বড় আব্বু ওকে নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। এক্সামে খারাপ করলে উনিই সবার থেকে বেশি কষ্ট পাবেন। আর ইশা কখনোই বড় আব্বুর মনে কষ্ট দিতে চায় না।
” কি রে..? আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে মনে হচ্ছে?? কি ব্যাপার? হুমমমম??
নুহার কথা শুনে ইশা হেসে বললো—-
” আরে তেমন কিছু না। আসলে নোটস গুলো নিতে পারাই একটু আনন্দ লাগছে। ”
” তাই বল। আমি তো ভেবেছিলাম আজ আয়াশ ভাইয়া নিজে এসে কলেজে দিয়ে গেছে বলে খুশি খুশি লাগছে। আচ্ছা বাই এনি চান্স, আমার কাছে আসল কথাটা বলতে চাইছিস না তো??
” আরে তুইও যে কিসব বলিস না। তেমন কিছুই না।
” ইশা! তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?? না মানে তুই যদি কিছু না মনে করিস তো।
” একটা থাপ্পড় দিবো। তুই আবার আমার কাছে অনুমতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করলি কবে থেকে??
” ধরে নে আজ থেকে। হিহিহি।
” ফাজলামো না করে বল কি বলবি।
” তুই কি আয়াশ ভাইয়াকেে ভালোবাসিস??
” হ্যাঁ, বাসি তো। আয়াশ ভাইয়া আমার বড় ভাই হয়। আর বোন হিসেবে ভাইকে তো ভালোবাসাই উচিত।
” ইশা! আমি কিন্তু মজা করছিনা, একদম সিরিয়াসলি বলছি। আর আশা করবো তুইও আমাকে সিরিয়াসলি উত্তর দিবি। ”
সাথে সাথে ইশা হাঁটা থামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ইশাকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে নুহাও থেমে গেলো। তবে মুখে প্রশ্নের উত্তর জানার সেই অধীর আগ্রহটা রেখেই তাকিয়ে রইলো ইশার মুখ পানে। ইশা অবাক কণ্ঠে বললো—-
” মানে….?
” মানে হলো, তুই কি আয়াশ ভাইয়াকে ভালোবাসিস?? আর তুই অতোটাও ছোট নয় যে আমি কোন ভালোবাসার কথা বলছি সেটা বুঝবিনা। আশা করি, তুই বুঝতে পেরেছিস আমি কি জানতে চাইছি??
” জানাটা কি খুব জরুরি??
” যদি বলি তাই!!
” তাহলে বলবো সব প্রশ্নের উত্তর জানতে নেই। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো। সময় হলে তুই নিজেই জানতে পারবি। ”
এই বলে ইশা আবারও হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। ইশাকে অনুসরণ করে নুহাও ইশার সাথে পা ফেলতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে নুহা বললো—-
” তাহলে কি ধরে নিবো তুই আয়াশ ভাইয়াকে ভালোবাসিস??
” সেটা তোর ইচ্ছা। আমি তো আর কারো ইচ্ছা পোষণে বাঁধা দিতে পারিনা।
” ইশা তোকে একটা কথা বলবো??
” না বলিস না।
” তুই না করলেও বলবো।
” তাহলে অনুমতি নেওয়ার কি দরকার ছিলো??
” আয়াশ ভাইয়া কিন্তু তোকে ভালোবাসে। ”
ইশা সাথে সাথে নুহার দিকে তাকালো। খুশি হওয়ার ভান করে বললো—-
” সত্যি…??
” মজা করিসনা।
” আরে মজা কোথায় করলাম?? আমি তো সত্যিই জানতাম না আয়াশ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। আচ্ছা তুই কি করে জানলি রে?? বাই এনি সুযোগ, ভাইয়া কি তোকে বলেছে যে ও আমাকে ভালোবাসে??
” আরে ভাইয়া কেন আমাকে বলতে যাবে?? তোর প্রতি ভাইয়ার কেয়ার দেখলে যে কেউ-ই বলতে পারবে আয়াশ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।
” তাই? তাহলে এক কাজ করিস, কলেজের সব মেয়েদের খবরটা জানিয়ে দিস। পারবিনা??
” তার মানে তুইও ভাইয়াকে ভালোবাসিস, রাইট?? আর এই জন্যই সব মেয়েদের জানাতে বলছিস যেন ওরা আর আয়াশ ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে না থাকে। ইউ আর জেলাস… রাইট??
” তোর মাথাতেই শুধু এসব আঝাইরা কথাগুলো আসতে পারে। চল জলদি। ড্রাইভার আঙ্কেল এসে বসে থাকবে আবার। ”
কথা বলতে বলতে ইশা আর নুহা গেইট পেরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো আয়াশ এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে। আয়াশকে দেখে ইশার নিজের অজান্তেই মুখের হাসিটা আরও প্রশস্ত হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে আয়াশকে এখানে দেখবে সেটা কল্পনাও করেনি ইশা। ইশা উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো।
” এ কি? আজ ভাইয়া আসলো যে??
” কেন? তোকে নিতে এসেছে।
” আরে সে তো আমি জানি। কিন্তু প্রতিদিন তো ড্রাইভার আঙ্কেল আসে। আজ ভাইয়া আসতে গেলো কেন??
” কি ব্যাপার! খুশি হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে আয়াশ ভাইয়াকে দেখে!
” আরে ধুর, তুইও না…! চল তো।
” হ্যাঁ, চল।
এরপর দুজনে গাড়ির কাছে গেলো। ওদেরকে যেতে দেখে আয়াশ এবার মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
” আরে নুহা যে, কেমন আছো??
” জি ভাইয়া ভালো। আপনি…??
” এই তো ভালো। আঙ্কেল আন্টি ভালো আছেন তো??
” জি আলহামদুলিল্লাহ।
” আচ্ছা আচ্ছা। তো এখন নিশ্চয় বাড়িতে যাচ্ছো??
” জি, ভাইয়া!
” তাহলে তো আমাদের সাথে চলে যেতে পারবে। চলো। যাওয়ার পথে নাহয় তোমাকে নামিয়ে দিলাম।
” না ভাইয়া! আপনারা যান। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
” আরে না করছিস কেন? একই রাস্তা দিয়েই তো যাবো। চল না আমাদের সাথে।
” নাহ রে,, তোরা যা। আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাবো। আফটার অল দুজন লাভ বার্ডস একসাথে যাচ্ছিস বলে কথা। প্রাইভেসি তো বানতাহে। আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না। জাস্ট চিল দোস্ত। ”
লাস্ট কথাগুলো নুহা ইশার কানে কানেই বললো। তারপর ইশাকে ঠেলে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে উঠিয়ে দিলো। নুহার কাজ দেখে ইশা হেসে বললো—-
” তুইও না…! আচ্ছা রাতে হোয়াটস অ্যাপ করিস তাহলে। কথা আছে।
” ঠিক হে।
আয়াশও আর কিছু বললোনা। নুহাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো। গাড়ির সাথে সাথে এবার ইশার বকবকানিও শুরু হয়ে গেলো।
” আচ্ছা ভাইয়া! আজ ড্রাইভার আঙ্কেল না এসে তুই আসলি যে?? ড্রাইভার আঙ্কেল ছুটিতে গেছে? নাকি তোর কোনো কাজ ছিলোনা বলে এসেছিস? কোনটা??
” নোটস গুলো পেয়েছিস??
” আরে কাম অন ভাইয়া! তোর মতো লিজেন্ড একটা ছেলে এটাও জানে না যে প্রশ্নের উত্তর কখনো প্রশ্ন হয়না?? আমি তোকে একটা প্রশ্ন করেছি। আর তুই তার উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করছিস??
” তোর প্রশ্ন গুলো সব আঝাইরা। তাই আমি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। এখন বল, নোটস গুলো পেয়েছিস??
” হুমমমমম। তুই বলেছিস, আর আমি নোটস পাবোনা। সেটা কি হয়??
” তাই তো বলি, ম্যাডামকে আজ এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?? তার মানে, নোটস পেয়ে এতো খুশি??
” অফ কোর্স।
” আচ্ছা ইশা! আমাকে একটা কথা বল তো।
” আরে একটা কেন?? হাজারটা বল। আমি শুনছি। তুই কথা বলবি, আর আমি শুনবোনা তা কি হয়??
” আমাকে কি কথাটা বলতে দিবি? নাকি তুই নিজেই বকবক করবি??
” আরে না না। বল তুই।
কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে আয়াশ বললো—
” আচ্ছা তোর ক্লাসের ছেলেগুলো তোর সাথে কথা বলেনা?? ”
” হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?? আর তুই-ই তো বলছিলি যেন আমি কোনো ছেলের সাথে কথা না বলি। ”
ইশা এতক্ষণ আয়াশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো। হঠাৎ আচমকা গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পেরে সামনের দিকে তাকালো ইশা। হ্যাঁ, সত্যিই তো গাড়ি থেমে আছে। ইশা অবাক হয়ে আয়াশের দিকে তাকালো।
” কি হলো? গাড়ি থামিয়ে দিলি কেন??
” তুই আগে আমাকে এইটা বল যে, আমি কখন বলেছি তোকে ছেলেদের সাথে কথা না বলতে?? আমার যতোটুকু মনে আছে আমি কখনো তোকে এমন কথা বলিনি।
” তাহলে কি কাল থেকে কলেজের সব ছেলেদের সাথে কথা বলা শুরু করবো??
” মারবো টেনে এক চড়। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফালতু কথা বলছিস কেন?? ডেম ইট। আমি যেটা বলেছি তার উত্তর দে।
” আচ্ছা তোমার কি আমাকে দেখে কোনো রকম কচি খোকি মনে হয়??
” মানে??
” মানে হলো, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আম্মু যেদিন আমাকে বলেছিলো, আমি যেন কোনো ছেলের সাথে কথা না বলি। সেদিন-ই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কথাটা আম্মুর মুখের কথা নয়। কথাগুলো অন্য কেউ আম্মুর কাছে ট্রানজেকশন করেছে। আর সেই অন্য কেউটা যে, তুই ছাড়া অন্য কেউ নয় আমি সেটা ভালো করে জানতাম। কারণ স্কুলে থাকতে আম্মু কখনো এই কথাটা বলেনি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরদিনই বলেছে। তার মানে তো এটাই দাঁড়ায় যে, আমি এখন আর ছোট নেই। আমি বড় হয়ে গেছি। বেশ বড়। তাই একদিন ক্লাসের একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে, আমি সবাইকে ডেকে তোর কথা বলি। অর্থাৎ বলি যে, তুই আমাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছিস। ব্যাস, তোর কথা যখন শুনেছে সবাই তো আমাকে বোন ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। এখন কি ক্লিয়ার হলো?? নাকি ভেজাল আছে?? ”
ইশার কথাগুলো শুনে আয়াশ তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। আয়াশের যেন বিশ্বাস-ই হচ্ছে না যে কথাগুলো ইশা বলেছে। ওর ইশা এতোটা ম্যাচিউট হয়ে গেছে?? যেটা ওর অজানাই রয়ে গেছে।
চলবে……..
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি